01-04-2022, 01:35 PM
ফোনটা বেজে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকালাম। আড়াইটে বাজে। মিত্রার ফোন। হ্যালো বলতেই ভেসে এলো
-কিরে তুই ঘুমোসনি।
-সময় পাই নি।
-তার মানে।
-কাজ করছি। তুই ঘুমোসনি কেনো।
-ঘুম আসছেনা।
-কোথায় শুয়েছিস।
-তোর ঘরে।
-আর কে আছে।
-নীপা, আমি।
-তুই কোথায়।
-বারান্দায়। নীপা ঘুমোচ্ছে।
-ঠিক দেখেছিস না মটকা মেরে পরে আছে।
-ঘুমোচ্ছে। তুই কি করছিস।
-তোর বরের বাক্স ঘাঁটছি।
-ঘুমিয়ে পর ওটা একটা বাস্টার্ড।
-কাজটা গোছাই তারপর সব হিসাব করবো। তোর ভয় করছেনা।
-একদম না। ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছিস।
-পাচ্ছি।
-চাঁদের আলোটা দারুন লাগছে।
-তুই দেখ। তোর চোখ দিয়ে আমি দেখি।
-পারবিনা। তোর দেখা আমার দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। তোর কথা বার বার মনে পড়ছে।
-আমারও। তোকে একদিন দেখিনি। মনে হচ্ছে তোকে কতদিন দেখিনি।
-আমার জন্য তোর কত কষ্ট।
-কষ্ট ঠিক নয়। ভেতরটা যন্ত্রণা করছে। আবার কি ভাবছি জানিস।
-কি।
-তুই না থাকলে জীবনের এই দিকটা দেখা হতোনা।
চুপচাপ।
-কিরে কাঁদছিস কেনো।
-তুই এসব ছেড়েদে। যা হয় হোক।
-এসব ইমোশনের কথা।
-শুয়োরটাকে তুই ছেড়ে দিলি কেনো।
-ছাড়লাম কোথায়। রেখে দিয়েছি। যতদিন না আমার কাজ গোছানো হচ্ছে ততদিন বাঁচিয়ে রাখবো।
-আজকেই মেরে দিতে পারতিস।
-মহাভারত দেখেছিস। কৃষ্ণ শিশুপাল ছাড়া কাউকে বধ করেনি। সবাইকে কথার ভয় দেখিয়েছে। রাজনীতির বেড়াজালে সবাইকে বন্দী করেছে। বড় বড় রথী মহারথীদের দিয়ে নিজের কাজ গুছিয়ে নিয়েছে।
-তোর কথা আমি বুঝি না।
-বুঝতে হবেনা। তুই তোর মতো থাক।
-তোর ওপর বড়মা রেগে গেছিলো।
-কেনো।
-তুই মিউ মিউ করছিলি। তারপর আবিদ আর রতন যখন ধরে মারলো তখন বড়মা বলে উঠলো শরীর জুড়ালো। ছোটমা কি বললো জানিস।
-কি।
-মুন্না ওটা যেন আর বেঁচে না থাকে।
হাসলাম।
-তুই বিশ্বাস করবিনা। চিকনাদের চেহারা দেখলে তুই ভয় পেয়ে যেতিস। ওরা যেনো এখুনি পেলে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতো।
-তুই কি করছিলি তখন।
-আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল। ছয় বছর একটা বিভিষীকাময় জীবন কাটিয়েছি।
-তোর ডিভোর্সের সার্টিফিকেটটা কোথায়।
-আমার কাছে।
-তুই সঙ্গে ছিলি না ডাক্তার তোকে এনে দিয়েছিলো।
-আমি নিজে কোর্টে দাঁড়িয়ে সাইন করে নিয়েছি। কেনোরে।
-তের বিয়ের সার্টিফিকেটটা পেলাম।
-এখনো রেখে দিয়েছে। তুই ওকে মেরে ফেল।
-একটা মানুষকে মেরে কি হবে বল। বরং তাকে জীবনমৃত করে রাখাই ভালো।
-তোর দামিনী মাসির গলা আজ শুনলাম।
-কোথায় শুনলি।
-ইসলাম ভাইকে ফোন করেছিলো।
-ইসলাম ভাইকে ফোন করলো তুই শুনলি কি করে।
-আমার সিম খুলে ইসলাম ভাই-এর সিম ঢোকানো ছিলো। আমার ফোনটা ইসলাম ভাই-এর কাছে। ইসলাম ভাই-এর ফোনটা আমার কাছে। সঞ্জীবকে আজ ইসলাম ভাই টাকা দিয়েছে। একটা ফোন আনার জন্য।
-এই জন্য তুই দামিনী মাসির গলা শুনেছিস।
-কি বাজখাঁই গলা রে। ইসলাম ভাইতো কাঁপছিলো। শুরু করলো যা দিয়ে না কানে তুলো গুঁজতে হয়।
-কেনোরে।
-তোকে মারবে বলেছে।
-তারপর।
-ইসলাম ভাইতো হাঁ হুঁ করে যাচ্ছে। ওই কবিতা মেয়েটা কি ডেঞ্জার রে।
-পেটের তাগিদে বুঝলি। আমার তখন কোনো ক্ষমতা ছিলোনা।
-তোর কি ভ্যারাইটি কালেকসন।
হাসলাম।
-ইসলাম ভাই বার বার বলছিলো অনি সত্যি ভগবান। আমি এদের একসময় আমার এন্টি মনে করতাম। এখন দেখছি এরা আমাকে বাঁচায়।
-ঠিক কথা বলেছে ইসলাম ভাই।
-দামিনী বুড়ী ইসলাম ভাইকে চব্বিশ ঘন্টা সময় দিয়েছে। বলেছে অনির শরীরে হাত পরলে ইসলাম ভাইকে পর্যন্ত মেরে দেবে।
-দামিনীর সে ক্ষমতা আছে।
-ইসলাম ভাইও তাই বলছিলো। দামিনী কথায় কথায় খালি তোর নাম বলছে। বলেকি ও আমার ছেলের থেকেও বেশি।
-হ্যাঁ। আমরা এদের কত নামে ডাকি বলতো। দিনের বেলা এদের দেহপসারিনী বলি। আর রাতে এদের দেহ পাওয়ার জন্য বলি ঘরের বউ। প্রেমিকা।
-পরে ভজুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো। কি গালাগালটাই না ভজুকে দিলো। কেনো তুই অনিকে ছেড়ে গেছিস।
-বড়মা কি বলে।
-বড়মা এইসব দেখেশুনে থ। বলে কিনা আর কোনোদিন ভজুকে নিয়ে আসবেনা।
-কাল দামিনী মাসির কাছে আমি যাবো।
-আমাকে একবার নিয়ে যাবি। বুড়ীর কথা শুনে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-তোকে নিয়ে গেলে আমাকে গালাগাল করবে।
-কেনো।
-তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা।
-ইসলাম ভাইকে বললো অনিকে একবারে ফোন করবিনা। ওকে ওর মতো কাজ করতে দে। আর আমরা আমাদের মতো কাজ করবো। আবতার আর সাগিরকে মনে হয় দামিনীর কাছে নিয়ে গিয়ে রেখেছে।
-তোরা টপ টু বটম সব শুনেছিস।
-শুনবো কিরে রেকর্ডিং হয়েছে। একদিকে ফোন চার্জ হচ্ছে একদিকে রেকর্ডিং হচ্ছে।
-ওখানে চার্জ কি করে হলো।
-সঞ্জীব সব ব্যবস্থা করেছে। ইসলাম ভাই-এর পরিচয় আজ ওরা জানতে পেরেছে। ওদের সে কি আনন্দ চোখ মুখ দেখলে বুঝতে পারতিস।
-ছোটমা বড়মা ঠিক আছে।
-বড়মা প্রথমে ভড়কে গেছিলো। দাদাকে ফোন করে দেড়েমুশে গালাগাল দিলো। বলে কিনা কাগজের অফিসে বসে সব মশকরা করছো। ছেলেটা সব বাঘ ভাল্লুকের সঙ্গে একা একা যুদ্ধ করছে।
-নিরঞ্জনদার খবর শুনে কি বললো।
-মরুক ওটা যেমন যোচ্চরি করেছে তেমন ফল ভুগুক। অনিকে এবার আমি না বলে দেবো।
-এ যাত্রায় মনে হয় বেঁচে যাবে।
-দাদা তাই বললো। নিরঞ্জনদা একবারও বড়মার সঙ্গে কথা বলেনি।
-কালকের নিরঞ্জনদার সঙ্গে আজকের নিরঞ্জনদার আকাশ পাতাল তফাৎ।
-কাল আমি ওইজন্য বলেছিলাম আমি বুবুনকে বলতে পারবোনা।
-ভালো করেছিলি। বড়মার একটু বোঝার দরকার ছিলো।
-তোর সঙ্গে আনিমেষদার এতটা গভীর রিলেসন আগে বলিসনিতো।
-এটা কি বলার মতো কথা।
-ইসলাম ভাই ঠিক এই কথা বললো। মামনি তুই ওকে জিজ্ঞাসা করিস তোকে এই কথা বলবে।
হাসলাম।
-হাসিসনা। আমি এখনো তোর সব কথা শোনার যোগ্যতা অর্জন করিনি তাই না।
-মন খারাপ করছিস।
-একবারে না। কলেজ লাইফের পর তোকে দেখছি। তুই নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছিস। আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমাকে ছেড়ে যাসনা। তাহলে মিত্রা মরে যাবে।
-তুই মালকিন বলে কথা।
-ঠাট্টা করছিস।
-তোর সঙ্গে ঠাট্টা করবো। তুই কারুর মামনি কারুর ম্যাডাম কারুর দিদি।
-সব তোর জন্য।
-আমি ফাউ।
-পীরবাবার থানে যা ঘটালি ওটাও ফাউ।
-না। ওই একটা জায়গায় আমি ঠিক আছি।
-আমার উত্তর পাওয়া হয়ে গেছে।
-এবার ঘুমিয়ে পর।
-ভালো লাগছে না।
-তোর সঙ্গে বক বক করতে গেলে আমার কাজ শেষ হবে না।
-কাল আসবি।
-পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক করে দেবে। তবে মল্লিকদা দাদা নিরঞ্জনদা যাবে। পর্শুদিন রেজিস্ট্রি আছে।
-পূব আকাশটায় আলো দেখা যাচ্ছে।
-দীঘা আড়ি চলে যা।
-তুই না থাকলে মজা হয়না। কালকে তোর কলেজে গেছিলাম। ওরা মজা করলো। আমি পারলামনা।
-তুই যে তখন গাইড।
-নারে তোর কথাবলা আর আমার কথা বলার মধ্যে পার্থক্য আছে।
-কি করে বুঝলি।
-বড়মা খালি বলছিলো মিত্রা তুই ঠিক বলতে পারছিস না। অনির সঙ্গে একবার আসতে হবে।
-ঠিক আছে। এবার ঘুমো।
-তুই সারারাত জাগবি। আমি ঘুমোবো। কেমন করে হয়।
-তাহলে জেগে জেগে তুই বক বক কর আমি কাজ করি।
-আজ সকালে গরমভাতে সরষের তেল মেখে খেয়েছি। তোর মতো চিংড়ি মাছের মোলা দিয়ে।
-আমার জন্য রেখেছিস।
-তোর নাম মনে করে করে খেলাম।
-ব্যাস আমার খাওয়া হয়ে গেলো।
মিত্রা হো হো করো হেসে ফেললো।
-তখন আমি সনাতনবাবুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি।
-দাদা বললো। বড়মা তখন খুব কাঁদছিলো।
-তোদের কান্না ছাড়া কি কিছু নেই।
-তুই বুঝবিনা। তুই কাজ করিস আমরা টেনসনে ভুগি।
-আমি কি টেনসনটা ক্রিয়েট করি।
-না।
-তবে।
-ক্রিয়েট হয় তুই সমাধান করিস।
-তাহলে অবুঝপনা করিস কেনো।
-তোকে বোঝাতে পারবো না।
-আমি রাখছি।
-আর একটু আর একটু। তুই এরকম করিস কেনো।
-তোদের নিয়ে মহা মুস্কিলে পরেছি।
-আমরাও তোকে নিয়ে মুস্কিলে পরেছি।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-তুই যাবার সময় বলে গেছিলি ওখানে গিয়ে এই সব কীর্তি করবি।
-জানলি কি করে।
-তোর কলেজে গিয়ে ইসলাম ভাই খালি উসখুস করছে। নীচু গলায় ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার তোর নাম করছে। চিকনা ব্যাপারটা প্রথম বুঝতে পারে।
-চিকনা শেয়ানা ছেলে।
-আমাকে এসে ফিস ফিস করে বললো। মুন্নাভাই কার সঙ্গে কথা বলছে। বার বার বলছে অনি যেনো বুঝতে না পারে। আমি চেপে ধরলাম। হেঁপি মেরে উড়িয়ে দেয়।
-হা হা হা।
-হাঁসিস না শোন না।
-বল।
-ছোটমা বললো। কিছুতেই বলে না। বড়মা যেই বললো তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল। তখন আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঝেড়ে কাশলো।
-তারপর।
-সেটা আবার সেই বকুল গাছের জঙ্গলের মধ্যে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পাঁচু শুনে অনাদিকে রিলে করেছে। তখন থেকে ওরা সব এই বাড়িতে এঁটুলে পোকার মতো লেগে রয়েছে।
-ওরা এখন কোথায়।
-দুজন ও বাড়িতে দুজন এই বাড়িতে নিচে শুয়ে আছে।
-এ বাড়িতে কে আছে।
-চিকনা আছে আর একটা ছেলে। চিনি না।
-ও বাড়িতে পাঁচু পচা।
-হ্যাঁ।
-তোর সব কথা চিকনা শুনছে।
-যাঃ।
-তুই জানিসনা ওরা কুকুরের মতো চোখ বন্ধ করে পরে থাকে। ঘুমোয় না।
-বাজে বকিস না।
-কাল মিলিয়ে নিস আমার কথা।
-ঠিক আছে। তোর কেমন স্পেকুলেসন দেখবো।
-মিলিয়ে নিস। ভজুরামের খবর কি।
-মায়ের কাছে গালাগাল খেয়ে বলে কিনা এখুনি অনিদার কাছে যাবো। ইসলাম ভাই আমাকে নিয়ে চলো। তার কি রাগ।
-ভজুরামের রাগ। হো হো হো।
-হাসিসনা শোন না।
-বল।
-কেউ ওকে বাগে আনতে পারেনা। শেষে আমি গিয়ে বলি ভজু তুই যাবো বললেই যাওয়া যায়। বলে কিনা অনিদার যদি কিছু হয় মা মেরে ফেলবে। আমি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠান্ডা করি। মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানিস।
-কি।
-পরের জন্মে আমি অনি হয়ে জন্মাবো তুই মিত্রা হয়ে জন্মাবি। তুই আমাকে বুবুন বলবি আমি তোকে মিত্রা বলবো।
-কালকে থেকে তাই কর।
-ধ্যাত হয় নাকি।
-এবার ছাড়।
-পূব আকাশটা কমলা রংয়ের হয়ে গেছে।
-সূর্য উঠবে।
-তুই আজ রাতে আসবি তাই তো।
-দেখি।
-দেখি না। আসবি।
-ঠিক আছে।
আমি একবার জানলার দিকে তাকালাম। সত্যি সত্যি বাইরেটা আলো ফুটে উঠেছে। কোথা থেকে ভোর হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি করে বাক্স থেকে বাকি কাগজ বার করে গোছালাম। আলাদা আলাদা খামে ভোরে রাখলাম। সন্দীপকে একটা ফোন করলাম। ফোনটা প্রথমে বেজে গেলো। কেউ ধরলো না। বুঝলাম বেটা এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি।