Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
দাদা আমার দিকে তাকিয়ে। কিছু বলতে চায়আমিই বললাম।
-কিছু বলবে।
-কি করলি বলবি তো।
-কিছুই করিনি। সব শুনলে তো।
-কই শুনলাম তোর বড়মা ওখান থেকে গালাগালি করলো। সন্দীপকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে এলাম।
-সন্দীপকে আজ বলেছি।
-সন্দীপ বলছিলো। মল্লিকদা বললো।
-ওকে আস্তে আস্তে দায়িত্ব দাও। দেখবে ঠিক পারবে।
-তুই তখন ওদের ধরলি কি করে বলতো।
-সে অনেক কথা।
-এইতো বাইপাস করে যাচ্ছিস। মল্লিকদা বললো।
হাসলাম।
-জেনে কি করবে।
-শিখবো।
-তোমার থার্ড সেন্স তৈরি করতে হবে।
-সোজা কথাটা বলনা।
-সকালবেলা আসার সময় আমতলার ওখানে ইসলাম ভাই-এর লোকের গাড়ি ফলো করতে দেখলাম। নিরঞ্জনদা টের পেয়েছো।
-একবারে না।
-তখনই বুঝলাম স্কিম একটা হয়েছে। মিঃ ব্যানার্জী হন্যে হয়ে আমাকে খুঁজছে। এবং কলকাতায় আসলেই আমাকে কিছু একটা করতে চাইবে। এটা আরো সহজ আমার অফিস থেকে খবর পাওয়া। আমার অফিসের এখনো অনেকে মিঃ ব্যানার্জীকে মালিক বলে মানে। তাদের পেছনে মিঃ ব্যানার্জী পয়সাও ঢালে।
-তুই কি এসব ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখিস।
-আমার জায়গায় তুমি থাকলে তুমিও জানতে পারতে।
দাদা থম মেরে বসে গেলো।
-আমি প্রথমে সনাতন বাবুর ঘরে গেছিলাম। সেখান থেকেই খবর লিক হয়েছে। কারণ সনাতন বাবু ছাড়া আর কেউ তখনও পর্যন্ত জানেনা আমি অফিসে। রিসেপসনিস্ট দিদিমনি সনাতন বাবুকে আমার আসার কথা প্রথমে বলে। তাছাড়া গলিতে ঢোকার মুখে রাস্তার অপজিটে রতনকে দেখেছি। তখনই সব বুঝে গেলাম। সনাতন বাবুর ঘরে যাওয়াটা আমার টোপ। সনাতনবাবু গিললো।
-তারপর মিঃ ব্যানার্জীর ফোন এলো।
-আমার ধারণাটা কতটা ঠিক সেটা কি করে বুঝবো। কল লিস্ট চাইলাম। দেখলেনা মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটের কল লিস্ট চেয়েছিলাম। সনাতনবাবু ওখানে বসে কিন্তু উনি ব্যাপারটা ধরতে পারেন নি। তখন তোমায় সেই জন্য বললাম দাঁড়াও অনেক কাজ, তাড়াতাড়ি গিলে নিই। তুমি রাগ করলে।
-আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও রাগ করতিস।
-তারপরের ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পেলেতবে রতন খুব ভালো কাজ করেছে। ইসলাম ভাইও ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলো। চলো এবার খেয়ে নিই। আমি ওভেনে খাবার গরম করতে বসাচ্ছি।
-ঠিক আছে।
খেতে বসে খুব একটা কথা হলো না। অনিমেষদার বাড়ির ঘটনা নিয়ে কথা হলো। দাদা জানতেন না অনিমেষদার সঙ্গে আমার এরকম ফ্যামিলি রিলেশন আছে। অনিমেষদার বাড়ির আড্ডাটা আজ দাদার মনে ভীষণ দাগ কেটেছে।
কথায় কথায় দাদা এও বললেন তোর জন্য নিরঞ্জনের ব্যাপারটা দেখবে বলেছে। কেননা তুই কোনোদিন বাজে কাজ করবিনা। তুই যাইই করিস একটা পরিকল্পনা মাফিক করিস। নিরঞ্জনকে খুব বকাবকি করেছে। আপনি অনির পরিচিত হয়ে এই সব কাজ করেছেন কেনো। তারপর আমার কাছ থেকে যখন শুনলো রাগটা একটু থামলো। এও বললো আপনি না হয়ে অন্য কেউ হলে অনি আমাকে রিকোয়েস্ট করতো না।
আমার কাজের ব্যাপার নিয়েও অনিমেষদা বলেছেন। ও কাজের মানুষ। ওকে আটকে রাখবেন না। ওর যখনি অসুবিধে হয় আমার কাছে আসে। দুজনের মধ্যে যুক্তি তক্ক চলে ওর বৌদি, ছাত্রী দুজনে সেই যুক্তি তক্কে অংশগ্রহণ করে তবে ও ডিসিসন নেয়। আমার সঙ্গে আলোচনা না করে ও কোনো কাজ করে না। আমি অন্ততঃ ওর ব্যাপারটা সব জানি। ওকে ওর মতো চলতে দিন।
নিরঞ্জনদাকে একপ্রকার হুকুম দিয়েছেন আমাকে সবরকম সাহায্য করার জন্য।
আমি ওদের তিনজনের মুখ থেকে সব শুনলাম। হুঁ হাঁ করে উত্তর দিলাম।
খাওয়া শেষ হতে আমি সব গুছিয়ে রেখে ওপরে চলে এলাম। মল্লিকদার ঘর থেকে কাগজ ভর্তি স্যুটকেস নিয়ে আমার ঘরে এলাম। খাটে সব ছড়িয়ে বসলাম। মল্লিকদা ওপরে উঠে এসে আমার ঘরে এলো।
-কিরে ঘুমোবি না।
-কাজ শেষ করে নিই।
-বুঝেছি। আজ সারা রাত।
-না। দেখি কি বস্তু আছে। আবিদ পুরো আলমারি পরিষ্কার করে নিয়ে চলে এসেছে।
-সাহায্য করবো।
-না। নিরঞ্জনদা কোথায় শুলো।
-দাদার কাছে। বেচারার সারাদিনটা আজ খুব খারাপ গেলো।
-নিরঞ্জনদার গাড়ি।
-এমএলএ হোস্টেলে।
-যাও শুয়ে পরো।
-তুই বললে তোর সঙ্গে লেগে পরতাম।
-না।
-যাই তাহলে।
-যাও।
মল্লিকদা চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করলাম।
 
মোবাইলটা বার করলাম। দেখলাম পৌনে বারোটা। তনু চিঠিতে লিখেছে আমার মেইল বক্সে সব ইমেজ করে এ্যাটাচ করে দিয়েছে। টেবিলের ওপর থেকে ল্যপটপটা নিয়ে এলাম। মানি পার্টস থেক চিপটা বার করলাম। সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে খাটে বাবু হয়ে বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম।
ল্যাপটপটা চালিয়ে প্রথমে নেট কানেকশন করলাম। আমার মেইলবক্স খুললাম। তানিয়ার মেইলগুলো ওপেন করলাম। সত্যি তানিয়া খেটেছে। সমস্ত ডকুমেন্টস স্ক্যান করে ইমেজ ফরমেটে পাঠিয়েছে। প্রায় তিরিশখানা ইমেজ। কি নেই। মিঃ ব্যানার্জীর ফেল করা সার্টিফিকেট থেকে সব কিছু। উনি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেছিলেন সেই ইউনিভার্সিটির সমস্ত ডকুমেন্টস গুছিয়ে পাঠিয়েছে। এমনকি সেই ভদ্রমহিলা এবং ছেলেটির ছবি পর্যন্ত। এবং এও লিখেছে ওই ভদ্রমহিলার বোনকে নিয়ে এখন মিঃ ব্যানার্জী গোয়াতে থাকেন। এখান থেকে ট্যুরিস্টরা গোয়াতে যায়। ওনার পরিচিত হোটেলে ওঠে। গোয়ায় মিঃ ব্যানার্জীর নার্সিং হোমটা ড্রাগ বিক্রির আখড়া এবং ব্লু-ফ্লিমের স্যুটিং হয়। বিশেষ করে দেশি মেয়েদের সঙ্গে বিদেশিদের। টোটাল ব্যাপারটা কনট্রোল করেন মিঃ ব্যানার্জী এবং ওই ভদ্রমহিলাভদ্রমহিলার নাম লিন্ডা।
 
আমি তানিয়াকে থ্যাঙ্কস জানিয়ে একটা মেইল করে দিলাম। বললাম পরে তোমাকে সব বিস্তারিত জানাবো।
এবার বাক্সের কাগজ নিয়ে বসলাম। এক একটা খামে সব গোছানো আছে। হিমাংশু একটাও খোলে নি। সব ইনট্যাক্ট আছে। হিমাংশু ওর প্রয়োজনীয় কাগজ বার করে নিয়েছে।
আমি ঘেঁটে ঘেঁটে সব দেখলাম। এ যেন হিডিন ট্রেজার।
নিজের মতো করে প্রয়োজনীয় কাগজ গোছালাম। প্রত্যেকটার নাম আলাদা আলাদা করে দিলাম। আমার বোঝার মতো করে। মিত্রার সই করা ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্প পেপার পেলাম প্রায় সত্তরটা। সব হাজার টাকা, একশো টাকা, পঞ্চাশ টাকার।
একটা খামে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশনের সার্টিফিকেট পেলাম। মিত্রার ছাড়া আরো চারজনের। মিত্রার ডিভোর্সের সার্টিফিকেট পেলাম না। মনে মনে বললাম শুয়োরের বাচ্চা পাঁচটা বিয়ে করেছে। তার মধ্যে বোম্বাই, গোয়া ভাইজ্যাক, চেন্নাইয়ের চারটে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সার্টিফিকেট পেলাম।
যত বাক্স ঘাঁটছি তত অবাক হচ্ছি। আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবলাম এই রকম একটা ছেলেকে মিত্রার মা তার জামাই হিসাবে বেছে নিলেন কেন?। শুধু কি লোভ না অন্য কিছু!
আমার এই একটা দোষ। সব কিছুতেই পেছনের ইতিহাস খুঁজতে বসি। সত্যি তো বর্তমানে যা ঘটছে তাই নিয়ে চললে কি হয়। মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধে মাঝে মাঝে নিজেই হেসে ফেলি।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 31-03-2022, 08:11 AM



Users browsing this thread: