29-03-2022, 11:51 PM
আমি চা বানিয়ে নিয়ে পটে ঢাললাম। ট্রের ওপর কাপ ডিস সাজিয়ে বিস্কুটের কৌটো নিলাম। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম। দাদা মল্লিকদা কথা বলছে।
-ছেলেটাকে ওরা একেবারে মেরে দেবে রে।
-তুমি কি করবে বলো। ওর কপাল।
-এরকম জানলে ওকে না বলতাম।
-মেয়েটার দিকে একবার তাকাও।
-সেই জন্য কিছু বলতে পারছিনা।
-কি করবে। আর এই ব্যাপার তুমি আমি ট্যাকেল করতে পারতাম!
-কোনোদিনই পারতাম না।
-কথা কম বলো এখুনি অনি ওপরে আসবে। শুনতে পাবে।
আমি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পরলাম।
-কি করে চুপ থাকি বল। বড় যা বললো তাতে তো আমার বুক হিম হয়ে যাচ্ছে।
-দাদা, মিত্রার কোনো সম্পত্তি নেই সব মিঃ ব্যানার্জী নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। হিমাংশু বললো।
-বলো কি! সব।
-আধঘন্টা আগে এলে দেখতে পেতেন। এরকম মার জন্মে দেখিনি। আজ দেখলাম। মিঃ ব্যানার্জীকেও দিয়েছে। এখানেই যদি ওই অবস্থা করে, ওদের ডেরায় নিয়ে গিয়ে কি করবে ভাবতে পারছিনা।
-খুব মেরেছে! নিরঞ্জনদার গলা পেলাম।
-ওইযে মেয়েটা বসে আছে অবতার না কে তাকে এক লাথি মেরে মুখ ফাটিয়ে দিলো।
-তোমরা থামবে এখুনি অনি এসে পরবে। মল্লিকদা চেঁচিয়ে উঠলো।
-আচ্ছা আচ্ছা।
আমি মিনিট দুয়েক পর বারান্দায় এলাম। প্রথমে নিজের ঘরে এলাম। দেখলাম রতন আর কবিতা বসে কথা বলছে।
-তুমি আমাদের জন্য চা করতে গেছিলে।
-হ্যাঁ। তোরা আমার গেস্ট।
কবিতা এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে ট্রেটা নিলো।
-তুমি আমাকে বলবে তো।
-ধর, আমি দাদাদের ডেকে আনি।
আমি ছোটমার ঘরের দিকে গেলাম। তিনজনে খাটে। হিমাংশু আর ওর ছেলেদুটো নিচে বসে আছে। আমাকে দেখে দাদা বললো, কিরে।
-এসো ওই ঘরে চা নিয়ে এসেছি।
ওরা সবাই এই ঘরে এলো।
কবিতা আমার টেবিলে কাপ সাজিয়ে চা ঢালছে। রতন দাদাদের দেখে উঠে দাঁড়ালো।
-রতন দাদাকে দেখেছিস আগে?
-আজ সকালে অফিসে ঢোকার সময় দেখেছি। এগিয়ে গিয়ে দাদাকে প্রণাম করলো। তারপর মল্লিকদাকে, নিরঞ্জনদাকে।
-দাদা এটা রতন। ইসলাম ভাই-এর পর ও সব কিছু দেখে। সকালে ওর সঙ্গেই ফোনে কথা হচ্ছিল।
-অনিদা তোমার ফোন বন্ধ। ইসলাম ভাই ফোন করে পাচ্ছে না।
আমি ফোনটা পকেট থেকে বার করলাম। দেখি সত্যি সত্যি বন্ধ। অন করলাম।
কবিতা সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
-কবিতা, দাদা।
আমার কথা বলার আগেই ঠকাস করে তিনজনকে প্রণাম করলো।
-একে চিনতে পারলাম না।
-আমি দাদার বোন। আগে দাদাকে ভাই ফোঁটা দিতাম। রাখি বাঁধতাম। আমার ছেলে হওয়ার বছর থেকে দাদা আমার কাছে যায় না।
-কোথায় থাকো?
-বাড়ি সুন্দরবন সোনাখালি এখন থাকি নুঙ্গিতে। আর কিছু জানতে চেওনা।
-কি হলো। বলবিতো। আমার দিকে তাকিয়ে দাদা বললো।
-দাঁড়াও আগে ইসলাম ভাইকে ফোন করি।
আমি ডায়াল করলাম মিত্রার ফোনে। মিত্রা ধরলো।
-তুই আজকে ওটাকে শেষ করে দিতে পারলিনা। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
-ইসলাম ভাইকে দে।
-আমরা সব শুনেছি।
-তোরা সব শুনেছিস মানে!
-রতন আমাদের সব শুনিয়েছে। তুই ওটাকে শেষ করলিনা কেনো। আগে বল।
আমি রতনের দিকে তাকালাম। রতন মাথা নীচু করে আছে। আমার ভয়েজ অন করা আছে। সবাই শুনছে।
ইসলাম ভাই ফোনে বললো ডাক্তারকে মেরে দিলি না কেন?
-দাদার হুকুম কি করবো বলো।
-সেই জন্য তুই তখন বারান্দায় চলে গেলি।
-হ্যাঁ।
-তুই রাগ করিসনা। আমার শোনার দরকার ছিলো। আমারও কিছু কাজ আছে। সব তুই একা করলে চলবে কি করে। তুই এদের ওপরটা দেখেছিস। ভেতরটা দেখিসনি।
-বড়মা কোথায়?
-সামনে বসে আছে।
-দাও।
-সব শুনেছে।
-ওইরকম গালাগালি খেস্তা খিস্তি সব শোনালে।
-আমি অফ করে দিয়েছি মাঝে মাঝে বিশ্বাস কর।
-তোমায় বার বার বলেছি।
-আমি খামারে চলে গেছিলাম। মামনি আমাকে জোর করে ধরে এনেছে। ওর ইনটারেস্ট বেশি।
-ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারতে।
-কোথায় যাবো। সব তোর বাড়ির তলায়। কোথাও গিয়ে শান্তি নেই। ধরা পরে গেছি।
-অনাদিরা সবাই শুনেছে। এখনো ওরা বসে আছে তোর ঘরে। তোর গলা না শোনা পর্যন্ত কেউ যাবেনা।
-ভালো কাজ করেছো।
-কবিতা কোথায়?
-আমার পাশে বসে আছে।
-কবিতা?
-দাদা তুমি আমাকে না কোরোনা।
-আমাকে ফিরে যেতে দে।
-রতনদা তাই বললো।
-ওদের পেটে আরো অনেক কিছু আছে। আমাকে বার করতে দে।
-তুমি যা বলবে তাই হবে।
-দামিনী বুড়ীকে আমি ফোন করেছিলাম। তুই পারলে ওকে গিয়ে আজ সামলা। ও আমার কথা কিছুই শুনছেনা।
-কি বলবো বলো।
-আমার থেকেও অনি, মামনির গায়ে হাত পরবে বুড়ী কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা। দশ মিনিট আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।
-রতন?
-বলো দাদা।
-তুই কবিতার সঙ্গে যা। ওখানে সব স্পটাররা বসে আছে। ওদের হাত থেকে এই তিনজন ছাড়া পাবেনা।
-দাওনা শেষ করে। কবিতা বললো।
-অনি চায়না। আমাদের ব্যাপার আলাদা অনির ব্যাপার আলাদা।
-তোর সঙ্গে যে অনির আলাপ আছে আজ জানলাম। অবতারকে যে ও কোনো এক সময় বাঁচিয়েছে আজ জানলাম। বিশ্বাস কর।
-তুমি জানতে না। দাদাই তো দামিনী মাসিকে বলে আমাকে বাঁচিয়েছে। আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। আমাকে বিয়ে দিয়েছে।
-আমি কিছুই জানিনা।
-বাজে বোকো না। আমি বললাম।
-সত্যি কথা বললে বাজে বকা হয় তাইনা। ছোটমার গলা।
-তোমরা সবাই ঠিক আছো।
-বহাল তবিয়তে আছি।
-শুনে ভালো লাগলো।
-তুই ওদের ছেড়ে দে। কাল সকালে তোর কাজ গোছা। বাকিটা আমি দেখবো। তোকে ভাবতে হবে না। ইসলাম ভাই বললো।
-ঠিক আছে।
-রতন।
-বলো দাদা।
-ডাক্তারের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দে। আজ থেকে ওখানে চব্বিশ ঘন্টা পোস্টিং। কারা আসছে কারা যাচ্ছে। সব হিসাব করে রাখ।
-আচ্ছা দাদা।
-কবিতা তোকে যা বললাম তাই কর। আমি ফিরে যাই। তারপর দেখছি।
-আচ্ছা দাদা।
-আমি কাল রাতে যাবো না হলে পরশু সকালে। আমি বললাম।
-ঠিক আছে।
ফোনটা রাখলাম। দাদা, নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে।
-তোরা এতরাতে যাবি কি করে।
-গাড়ি আছে। তোমায় চিন্তা করতে হবেনা।
-ঠিক আছে যা। হিমাংশুদাদের একটু নামিয়ে দিবি।
-নিশ্চয়ই।
-না না ওরা যাক আমি ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবো।
-কেনো দাদা।
-তোমাদের আগে যেখানে যেতে বললো সেখানে যাও। ওটা আগে।
-ঠিক আছে। চলুন আপনাকে ট্যাক্সি ধরে দিচ্ছি।
-চলো।
হিমাংশু আমার দিকে তাকালো।
-আমার যা প্রয়োজন নিয়ে নিয়েছি। আরও কাগজ আছে তুই ঘাঁট।
-ঠিক আছে।
ওদের নিচ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে এলাম। দাদারা আমার পেছন পেছন নিচে এলো। ফিরে এসে দেখলাম তিনজনে নিচে সোফায় বসে কথা বলছে।
-রেডি হয়ে নাও। আমি খাবার গরম করে নিই।
-তুই এখানে এসে বোস।
-অনেক রাত হয়েছে। খেতে খেতে কথা হবে।
-একটু চা খাওয়া।
-সেই তুমি দেরি করবে।
আমি রান্নাঘরে গেলাম। চারজনের জন্য চায়ের জল বসালাম।
দাদারা তিনজনে খুব নীচু স্বরে কথা বলছে। খাবারের প্যাকেটটা খুললাম। দেখলাম তড়কা আর রুটি কিনে এনেছে। প্যাকেট থেকে খুলে সব পাত্রে রাখলাম। মাইক্রো ওভেনের ভেতরে রেখে চা ছেঁকে নিয়ে চলে এলাম। সবাইকে চা দিয়ে নিজে নিয়ে বসলাম।