23-03-2022, 10:27 AM
(This post was last modified: 23-03-2022, 10:28 AM by MNHabib. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। বৌদির মনটা একটু খারাপ হলো। আসার সময় বললাম
-আমায় সাতদিন সময় দাও আবার আসছি।
নিচে নেমে এসে দাদাকে বললাম
-তোমরা অফিসে যাও। আমি একটু কাজ সেরে যাচ্ছি। রাতে তাড়াতাড়ি ফিরবে। সেইভাবে কাজ গোছাও। আমার মোবাইল বন্ধ থাকবে, ফোন করবে না।
দাদা আমার দিকে তাকালো। দাদারা একটা ট্যাক্সি ধরে অফিসের দিকে গেলো। আমি একটা ট্যাক্সি ধরে ফ্ল্যাটের দিকে চললাম। ঝিমলিকে ফোন করলাম।
-অনিদা! কোথায় তুমি।
-তোমার চিঠি আজ পরলাম।
-তোমায় অনেকদিন আগে লিখেছি।
-জানি। কলকাতায় ছিলাম না। তুমি কোথায়?
-চ্যাট করছি।
-আসতে পারবে?
-তুমি ডাকলে যাবোনা তা হয়।
-আমার ফ্ল্যাটে চলে এসো। ঘন্টা দুয়েক তোমায় সময় দিতে পারবো।
-ঠিক আছে চলে আসছি।
-এসো।
ফোনটা কেটে দিলাম। ফ্ল্যাটে যখন পৌঁছলাম তখন মোবাইলের ঘড়িতে পৌনে চারটে বাজে। রতনকে একটা ফোন করলাম।
-বলো দাদা।
-খবর কি?
-সব ঠিক আছে।
-বসের সঙ্গে কথা বলেছিস?
-মিনিট পনেরো আগে কথা হয়েছে।
-ওদিককার খবর?
-মালটা হোটেলে শুয়ে আছে।
-ঠিক আছে। তোকে আমি ছটার সময় ফোন করবো। তুই এখন কোথায়?
-চায়ের দোকানে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
ফ্ল্যাটের দরজা খুললাম।
একটা ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এসে লাগলো। অনেকদিন আসা হয়নি। জানলা-দরজা খুললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গন্ধটা চলে গেলো। ঝিমলি আমার এই ফ্ল্যাটে কখনো আসেনি। প্রথম আসবে। ঘরটা দেখে নিজেরই খারাপ লাগলো। খাটটা একটু গুছিয়ে নিলাম। একটা পরিষ্কার চাদর আলমারি থেকে বার করে পাতলাম। হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম।
-বল।
-রেডি করেছিস?
-করছি।
-শোন এক ট্রাঙ্ক কাগজ নিয়ে এসেছে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
-কি করবি?
-সব স্টাম্প পেপারে সাইন করিয়ে ছেড়ে দে। তারপর নিজের মতো করে গুছিয়ে নেবো।
-না এতটা অসৎ হবোনা আমার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু নেবো।
-তাহলে সতী হ।
-সে তুই যা বলিস। তুই বরং ড্রাফটগুলো সব রেডি করে নে। ল্যাপটপ আর প্রিন্টারটা নিয়ে নে। রেজিস্ট্রার ম্যাডামকে ডেকে নিবি। আমার বাড়িতে সব কাজ হবে।
-ঠিক আছে তাই হবে।
-আমি বাড়িতে গিয়ে তোকে ফোন করবো। তুই তোর স্টাফেদের নিয়ে সাতটা নাগাদ চলে আয়।
-আচ্ছা।
প্যান্ট-গেঞ্জি খুলে একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম। বাথরুমে সর্বাঙ্গে জল ঢেলে ভালো করে ফ্রেশ হলাম। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। জানলার পাল্লাগুলো বন্ধ করলাম। আলমারি খুলে তন্ত্রের বইটা বার করলাম। সুরঞ্জনার নোটগুলো বার করে একটা ব্যাগের মধ্যে ঢোকালাম। আমার এ্যালবামটা ঢোকালাম। বেলটা বেজে উঠলো। দরজার লক খুলতেই ঝিমলি ফিক করে হেসে ফেললো।
ঝিমলি খুব সাধারণ কিন্তু আসাধারণ লুক। একঝলক তাকিয়েই একটু সরে দাঁড়ালাম।
-আসতে আসুবিধে হয়নি?
-সেলিব্রিটিদের খুঁজতে অসুবিধে হয়না।
ঝিমলি ভেতরে এলো। একটা মেরুন কালারের সর্ট শালোয়ার পরেছে। দুমাস আগের দেখা ঝিমলির সঙ্গে কোন পার্থক্য খুঁজে পেলাম না। বরং একটু স্লিম হয়েছে মনে হচ্ছে।
দরজা লক করলাম।
-ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার অসুবিধে হলে বলবে।
-বাবাঃ যেনো অপরিচিত কেউ।
-এই ফ্ল্যাটে অপরিচিত।
-তোমার সঙ্গে পারবো না।
-চা না কফি?
-কে করবে?
-আমি।
-তুমি!
-হ্যাঁ। বিশ্বাস হচ্ছেনা।
-তুমি পারো?
-অফকোর্স।
ঝিমলি খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে গ্যাস জ্বালালাম। মিল্কমেডের কৌটাটা খুলে আগে গন্ধ শুঁকলাম, ভালো আছে কিনা। লাস্ট তনুকে কফি করে খাইয়েছিলাম। তারপর ফ্ল্যাটে এলেও রান্নাঘরে ঢোকা হয়নি। দেখলাম ঠিক আছে। কফির শিশি দেখলাম। একটু জমে জমে এসেছে। ও ঠিক আছে গরম দুধে গুললে গলে যাবে। কপাল ভালো দেখলাম দুটো চিপসের প্যাকেট ইনট্যাক্ট পরে আছে। আমি সব রেডি করতে আরম্ভ করলাম।
ঝিমলি এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ালো।
-বসো যাচ্ছি।
-এখানে দাঁড়ালে অসুবিধে আছে?
-একটুও না। ভাইজ্যাক কবে যাচ্ছ?
-আগামী সপ্তাহে।
-কি নিয়ে স্টাডি করবে চিন্তা করেছো?
-পেড্রিয়েটিক।
-শুনেছি সার্জারি ডাক্তারদের দাম বেশি পয়সাও প্রচুর।
-আমার পয়সার দরকার নেই, শিশুদের মনস্তত্ব ভীষণ জটিল। আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে। পেয়ে গেলাম। তাই অন্যদিকে আর তাকালামনা।
আমি দুধ গুললাম।
-তোমার লেখা পড়লাম। চারিদিকে হই হই ফেলে দিয়েছো।
-কিরকম?
-যেখানেই যাচ্ছি তোমার লেখা নিয়ে আলোচনা। বন্ধু-বান্ধবদের তোমার কথা বললেই কেমন বাঁকা চোখে দেখে।
হাসলাম।
-সত্যি। সবাই ভাবে আমি গুল মারছি।
কফি রেডি করে ফেললাম। ট্রের ওপর রাখা দুটো কাপে কফি ঢাললাম।
-দাও আমি নিয়ে যাই।
-তুমি চিপসের প্যাকেট দুটো নাও।
ঝিমলি চিপসের প্যাকেট দুটো নিয়ে আমার পেছন পেছন এলো। কফির ট্রেটা মাঝখানে রেখে দুজনে দুপাশে বসলাম। চিপসের প্যাকেট ছিঁড়ে কফি খেতে শুরু করলাম।
-তোমাকে কতদিন পর দেখলাম। একবার ফোন করতে পারতে। এ্যাটলিস্ট একটা ম্যাসেজ।
-ভাইজ্যাক থেকে ফেরার পর আমার ওপর দিয়ে একটা ঝড় চলছে। এখনো সেই ঝড় থামেনি।
-আমি কিছু কিছু জানি মায়ের মুখ থেকে শুনেছি।
-কি শুনেছো?
-তুমি কাগজের মালিক হয়েছো।
-ভুল শুনেছো।
-আমাকে অন্ততঃ মিথ্যে কথা বলোনা।
হাসলাম।
-যা শুনেছি সত্যি?
আমি মাথা নীচু করলাম।
ঝিমলি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে আমাকে জাপ্টে ধরলো। বিছানায় শুইয়ে ফেলে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
-আরে ছাড়ো ছাড়ো।
-কেনো আমাকে মিথ্যে কথা বললে। বলো।
-এটা কি একটা বলার বিষয়।
-তোমার কাছে কোনটা বলার বিষয় বলোতো।
-কফির কাপ উল্টে পরে যাবে।
-যাক। কতদিন তোমার ঠোঁটদুটো চুষিনি। উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ।
আমি কোনো প্রকারে ঠোঁট সরিয়ে বললাম
-কফিটা খেয়ে নাও আগে।
-পরে খাবো।
-তাহলে সরিয়ে রাখো এটলিস্ট।
-কাপে আছে নাকি।
-যতটুকু আছে।
-তুমি একবারে উঠবেনা।
হাসলাম।
ঝিমলি উঠে কফির ট্রেটা নিচে নামিয়ে রাখলো। তারপর আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
-উরিবাবা আমার বুক ফেটে যাবে।
-ফাটুক।
আমি ঝিমলির চোখের দিকে চোখ রাখলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম কাগজের মালিক হওয়ার খবর যদি রাখে তাহলে নিশ্চই মিত্রার খবর রাখবে। ওর মা তথ্য জনসংযোগ দপ্তরের অধিকর্তা। এই খবরগুলো তাদের কাছে আগাম পৌঁছে যায়।