21-03-2022, 10:35 AM
লেখক - অলোক রায়।
*সম্পর্ক/সম্বন্ধ*
চোদ্দ বছর বয়েস হ'ল মেয়ের । এখন আর সৎ বাবার কাছে তাকে ফেলে রাখা ঠিক না । মনে দ্বিধা, মেয়ে চিনতে পারবে তো বাবাকে ? মেয়ের সাত বছর বয়েসে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল বাবা মা'র । বছরখানিকের মধ্যে আবার বিয়ে করেছিলো অতসী । তারপর কাকে না কাকে বাবা বলতে শিখিয়েছিলো মেয়েকে, খোঁজ রাখতে যায়নি রজত । কিন্তু খবরটা পাবার পর আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না সে ।
গতকাল ভূতপূর্ব শালা এসে সংবাদটা শুনিয়ে বললো, 'বাবা বলেছেন মেয়েটাকে আর কায়স্থ ঘরে ফেলে রাখা ঠিক না । আপনি গিয়ে তাকে নিয়ে আসুন ।'
রজত পথে নেমেও সাহস পেলো না মেয়ের সামনে একা গিয়ে দাঁড়াবার । যদি অমান্য করে তার পিতৃত্বকে ? ভুলে যাওয়াই তো স্বাভাবিক । সাতটা বছর তো কম নয় ।
ট্যাক্সিওয়ালাকে আগে বলেছিলো টালিগঞ্জে যেতে । এখন বললো, 'আগে একটু বেহালা যাবো । একজনকে নিয়ে তারপরে টালিগঞ্জে ফিরে আসবো ।'
সাত বছরের উপর এদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই । এখানেও যেতে সংকোচ । তবে নিজে থেকেই যখন এঁরা যোগাযোগ করেছেন গতকাল, তখন নিশ্চয় অভ্যর্থনা না করলেও অপমান করবেন না আজ তাকে ।
রজতের শ্বশুরমশাই বললেন, 'বলছো যখন যাচ্ছি । কিন্তু আমাকেই কি চিনতে পারবে সেই মেয়ে ? কোনদিন তো যাইনি তাদের খবর নিতে । তবে চলো, অবিনাশকে দুটো ধমক দেবার সাধ আমার অনেকদিনের ।'
দুই ভীতচিত্ত ব্যক্তি একটি কিশোরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । বৃদ্ধ বললেন, 'অবিনাশকে ডেকে দাও !'
'না বাবাকে ডাকবো না । মা মারা যাবার পর বাবা একেবারে ভেঙে পড়েছেন । আপনারা কে ? যা বলার আমাকে বলুন ।'
রজত অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছে । তার সামনে মেয়ে অন্য একজনকে বাবা সম্বোধন করছে । কি পরিচয় দেবে সে নিজের ?
বৃদ্ধ বিরক্ত হয়ে বললেন, 'কাকে বাবা বাবা করছো ? সে তোমার কেউ নয় । ইনি তোমার আসল বাবা । আর আমি তোমার দাদু । মায়ের বাবা ।'
মেয়েটি হাতজোড় করে বললো, 'ও আচ্ছা ! পরিচয় হোলো ! ভালো লাগলো । এবার আপনারা আসুন ।' আপদ বিদায় করে দরজা বন্ধ করতে চাইলো সেই মেয়ে ।
দরজার ফাঁকে তাড়াতাড়ি পা গলিয়ে দিয়ে রজত বললো, 'আমরা তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি । পরের বাড়িতে আর তোমাকে ফেলে রাখবো না ।'
ঐটুকু মেয়ের বাঁকা ঠোঁটে ব্যঙ্গের হাসি । ঘৃণার উচ্চারণ । 'কষ্টের দাগ ছোটবেলাতেই মনে আঁচড় কেটে বসে যায় । মা সেখানে প্রত্যেক রাতে আমাকে বুকে চেপে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতো । সেটা নাকি আমার নিজের বাড়ি আর যে আমার মায়ের জন্যে সমানে কাঁদছে তার বাড়িটা নাকি আমার পরের বাড়ি ? বাবার শরীরটা ভালো নেই । বিরক্ত করবেন না । আপনারা যান ।'
'কার সঙ্গে এতো কথা বলছিস মা ?' বেরিয়ে এলো অবিনাশ । চমকে উঠলো । 'এ কি ! বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস কেন ? এঁরা তোর আপন জন লতা । আসুন বাবা ভিতরে আসুন ।'
'তোমার শরীরটা হঠাৎ এমন ভেঙে গেল কেন অবিনাশ ?'
ক্লান্ত একটু হাসলো অবিনাশ । উত্তর দিলো না ।
'তুমি ভিতরে যাও বাবা । আমি আমার আপনজনদের সামলাচ্ছি ।'
ক্ষেপে গেলেন বৃদ্ধ, 'ডি.এন.এ. টেস্ট করালে প্রমাণ হয়ে যাবে কে তোর আসল বাবা । যেতে না চাইলে কোর্টের অর্ডারে তখন তোকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে পারি এখান থেকে, তা জানিস?'
প্রত্যেককে চমকে দিয়ে কি অদ্ভুত রকমের হাসি হাসলো ঐটুকু একটা মেয়ে, 'ডি.এন.এ. টেস্ট ? শরীরের মিলের খবর দেবে কিন্তু মনের অমিলের খবর দিতে পারবে ?'
লতার দাদু খুব রেগে গেছেন । 'তোমার পাপের ভয় নেই অবিনাশ ? ', ঘরের মেয়েটাকে তোমার কায়েত ঘরে ধরে রাখবে ?'
অবিনাশ ভেঙে পড়েছে । ঝগড়া করার শক্তি নেই তার । থেমে থেমে বললো, 'ধরে কি রাখা যায় ? অতসীকে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম । পারলাম ? মেয়ে যদি চলে যেতে চায়, যাবে । মা গিয়ে অর্ধেক মেরে রেখে গেছে । মেয়ে গেলে পুরো মেরে রেখে যাবে ।'
ছোট্ট মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে বাবার মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে তার অবিন্যস্ত চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে পরম মমতায় উচ্চারণ করলো, 'আমি কোত্থাও যাবো না বাবা ।'
'মাগো !' মেয়েকে কাছে টেনে শেষ আশ্রয়টুকু আঁকড়ে ধরলো অবিনাশ ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রজত বললো, 'ফিরে চলুন বাবা !' বুঝতে পেরেছে সে, সম্পর্ক ডি.এন.এ. দিয়ে হতে পারে । সম্বন্ধ হয় ভালোবাসা দিয়ে ।
*সম্পর্ক/সম্বন্ধ*
চোদ্দ বছর বয়েস হ'ল মেয়ের । এখন আর সৎ বাবার কাছে তাকে ফেলে রাখা ঠিক না । মনে দ্বিধা, মেয়ে চিনতে পারবে তো বাবাকে ? মেয়ের সাত বছর বয়েসে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল বাবা মা'র । বছরখানিকের মধ্যে আবার বিয়ে করেছিলো অতসী । তারপর কাকে না কাকে বাবা বলতে শিখিয়েছিলো মেয়েকে, খোঁজ রাখতে যায়নি রজত । কিন্তু খবরটা পাবার পর আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না সে ।
গতকাল ভূতপূর্ব শালা এসে সংবাদটা শুনিয়ে বললো, 'বাবা বলেছেন মেয়েটাকে আর কায়স্থ ঘরে ফেলে রাখা ঠিক না । আপনি গিয়ে তাকে নিয়ে আসুন ।'
রজত পথে নেমেও সাহস পেলো না মেয়ের সামনে একা গিয়ে দাঁড়াবার । যদি অমান্য করে তার পিতৃত্বকে ? ভুলে যাওয়াই তো স্বাভাবিক । সাতটা বছর তো কম নয় ।
ট্যাক্সিওয়ালাকে আগে বলেছিলো টালিগঞ্জে যেতে । এখন বললো, 'আগে একটু বেহালা যাবো । একজনকে নিয়ে তারপরে টালিগঞ্জে ফিরে আসবো ।'
সাত বছরের উপর এদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই । এখানেও যেতে সংকোচ । তবে নিজে থেকেই যখন এঁরা যোগাযোগ করেছেন গতকাল, তখন নিশ্চয় অভ্যর্থনা না করলেও অপমান করবেন না আজ তাকে ।
রজতের শ্বশুরমশাই বললেন, 'বলছো যখন যাচ্ছি । কিন্তু আমাকেই কি চিনতে পারবে সেই মেয়ে ? কোনদিন তো যাইনি তাদের খবর নিতে । তবে চলো, অবিনাশকে দুটো ধমক দেবার সাধ আমার অনেকদিনের ।'
দুই ভীতচিত্ত ব্যক্তি একটি কিশোরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । বৃদ্ধ বললেন, 'অবিনাশকে ডেকে দাও !'
'না বাবাকে ডাকবো না । মা মারা যাবার পর বাবা একেবারে ভেঙে পড়েছেন । আপনারা কে ? যা বলার আমাকে বলুন ।'
রজত অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছে । তার সামনে মেয়ে অন্য একজনকে বাবা সম্বোধন করছে । কি পরিচয় দেবে সে নিজের ?
বৃদ্ধ বিরক্ত হয়ে বললেন, 'কাকে বাবা বাবা করছো ? সে তোমার কেউ নয় । ইনি তোমার আসল বাবা । আর আমি তোমার দাদু । মায়ের বাবা ।'
মেয়েটি হাতজোড় করে বললো, 'ও আচ্ছা ! পরিচয় হোলো ! ভালো লাগলো । এবার আপনারা আসুন ।' আপদ বিদায় করে দরজা বন্ধ করতে চাইলো সেই মেয়ে ।
দরজার ফাঁকে তাড়াতাড়ি পা গলিয়ে দিয়ে রজত বললো, 'আমরা তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি । পরের বাড়িতে আর তোমাকে ফেলে রাখবো না ।'
ঐটুকু মেয়ের বাঁকা ঠোঁটে ব্যঙ্গের হাসি । ঘৃণার উচ্চারণ । 'কষ্টের দাগ ছোটবেলাতেই মনে আঁচড় কেটে বসে যায় । মা সেখানে প্রত্যেক রাতে আমাকে বুকে চেপে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতো । সেটা নাকি আমার নিজের বাড়ি আর যে আমার মায়ের জন্যে সমানে কাঁদছে তার বাড়িটা নাকি আমার পরের বাড়ি ? বাবার শরীরটা ভালো নেই । বিরক্ত করবেন না । আপনারা যান ।'
'কার সঙ্গে এতো কথা বলছিস মা ?' বেরিয়ে এলো অবিনাশ । চমকে উঠলো । 'এ কি ! বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস কেন ? এঁরা তোর আপন জন লতা । আসুন বাবা ভিতরে আসুন ।'
'তোমার শরীরটা হঠাৎ এমন ভেঙে গেল কেন অবিনাশ ?'
ক্লান্ত একটু হাসলো অবিনাশ । উত্তর দিলো না ।
'তুমি ভিতরে যাও বাবা । আমি আমার আপনজনদের সামলাচ্ছি ।'
ক্ষেপে গেলেন বৃদ্ধ, 'ডি.এন.এ. টেস্ট করালে প্রমাণ হয়ে যাবে কে তোর আসল বাবা । যেতে না চাইলে কোর্টের অর্ডারে তখন তোকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে পারি এখান থেকে, তা জানিস?'
প্রত্যেককে চমকে দিয়ে কি অদ্ভুত রকমের হাসি হাসলো ঐটুকু একটা মেয়ে, 'ডি.এন.এ. টেস্ট ? শরীরের মিলের খবর দেবে কিন্তু মনের অমিলের খবর দিতে পারবে ?'
লতার দাদু খুব রেগে গেছেন । 'তোমার পাপের ভয় নেই অবিনাশ ? ', ঘরের মেয়েটাকে তোমার কায়েত ঘরে ধরে রাখবে ?'
অবিনাশ ভেঙে পড়েছে । ঝগড়া করার শক্তি নেই তার । থেমে থেমে বললো, 'ধরে কি রাখা যায় ? অতসীকে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম । পারলাম ? মেয়ে যদি চলে যেতে চায়, যাবে । মা গিয়ে অর্ধেক মেরে রেখে গেছে । মেয়ে গেলে পুরো মেরে রেখে যাবে ।'
ছোট্ট মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে বাবার মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে তার অবিন্যস্ত চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে পরম মমতায় উচ্চারণ করলো, 'আমি কোত্থাও যাবো না বাবা ।'
'মাগো !' মেয়েকে কাছে টেনে শেষ আশ্রয়টুকু আঁকড়ে ধরলো অবিনাশ ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রজত বললো, 'ফিরে চলুন বাবা !' বুঝতে পেরেছে সে, সম্পর্ক ডি.এন.এ. দিয়ে হতে পারে । সম্বন্ধ হয় ভালোবাসা দিয়ে ।