19-03-2022, 07:41 PM
(This post was last modified: 19-03-2022, 08:11 PM by Anuradha Sinha Roy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ১৩
ওনাকে দেখে দীপা যা অনুমান করল, তাতে পাণ্ডে-জির বয়স প্রায় সত্তর ছুঁইছুঁই। ওনার মাথা ভর্তি সাদা সাদা ঝাঁকড়া চুল থাকলেও, চেহারা বেশ বড়সড়ও ছিল ওনার। একসময় যে উনি খুবই শক্তসমর্থ ছিলেন, সেটা ওনাকে দেখে বেশ বুঝতে পারল দীপা। তবে ওনার সেই সব শারীরিক বৈশিষ্ট্যটা দেখে, দূর থেকে অনেকটা আলবার্ট আইনস্টাইনের মতো মনে হলেও, কাছ থেকে তাঁর বাঁ গালের লম্বা কাটা দাগটা পরে স্পষ্ট দেখতে পেল দীপা| পাণ্ডে-জি যেখানে বসেছিলেন, তার পেছনে একটা বিরাট কাঁচের জানালা দেখতে পেল দীপা, আর সে এটাও বুঝল যে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে বুলেটপ্রুফ | সেই কাঁচের জানালার মধ্যে দিয়ে বাইরের গোটা কলকাতা শহরটাকে পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছিল। সেই দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর, আস্তে আস্তে নিজের নজরটা বাকি ঘরের দিকে দিতেই দীপা দেখল যে, সেই ঘরের ডানদিকের দেওয়াল জুড়ে বড়ো টিভি স্ক্রিনের মতন কি সব জিনিস লাগানো। কিছুক্ষণ সেই দিকে...সেই ডিসপ্লে স্ক্রিনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতেই দুটো জায়গা চিনতে পারল দীপা, এক নীচে বিল্ডিংএ ঢোকার গেটটা আর দুই, সেই ঘরটা যেখানে তিস্তা একটু আগে তাকে উলঙ্গ করে স্ট্রিপ সার্চ করছিল |
পাণ্ডে-জির সামনের ডেস্কের উপরে একটা ল্যাপটপ রাখাছিল আর তার পাশেই ছিল একটা হাই স্পীড মডেম, যেটা এই সময়ে পাওয়া খুবই দুস্কর। দীপা নিঃশব্দে সমস্তটাই গিলতে লাগল, এমন সময় তার নজর পড়লো পাণ্ডে-জির চেয়ারের ওপর। তবে পাণ্ডে-জি যে চেয়ারে বসে ছিলেন সেটা কোন চেয়ার নয় আসলে একটা মটোরাইজড হুইল চেয়ার! আর সাথে সাথেই যেন সব কিছু দীপার কাছে জলের মতন পরিস্কার হয়ে গেল...
'ওহঃ উনি এই জন্যেই বুঝি আমাকে পাঠিয়ে ছিলেন বরাকারে, সেই জিনিসটা রিট্রিভ করে আনতে। আর এই জন্যেই হয়তো বেশি কেউ পাণ্ডে-জিকে সচক্ষে দেখেনি' দীপা নিজের মনে বলে উঠল।
"বরাকর থেকে ওই প্যাকেটটা নিয়ে আসার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই, দীপা " হঠাৎ করে বলে উঠলেন পাণ্ডে-জি। নিজের জীবনে এই প্রথমবার পাণ্ডে-জির কণ্ঠস্বর শুনে প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও, পরে নিজেকে সামলে নিয়ে দীপা বললঃ
"না...না পাণ্ডে-জি, ধন্যবাদ আপনাকে আমার উপর ভরসা করার জন্য, বিশ্বাস করার জন্য আর বিশেষত এই শহর থেকে বাইরে বেরোনোর আমাকে একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য" বলতে বলতে নিজের ব্যাগের চেন খুলে সেই ক্যাপসুলের মতো সিলিন্ডারটা বের করে পাণ্ডে-জির হাতে তুলে দিলো দীপা আর সেই সাথে সেই রুমের চাবিটাও হস্তান্তর করল।
"থ্যাংক ইউ ডিয়ার, কিন্তু...তোমার কি এই শহরে থাকতে ভাল লাগে না? এই সিটি অফ জয়তে থাকতে ভালো লাগেনা তোমার? অবশ্য এই শহরে জয় ব্যাপারটাই শেষ হয়ে গেছে, তাই না? " মখমলের মতন মসৃণ কণ্ঠে বলে উঠলেন পাণ্ডে-জি।
এরই মধ্যে উনি দীপার দেওয়া সেই সিলিন্ডারটা নিজের হাতে নিয়ে এদিক ওদিক করে খোলার চেষ্টা করতে লাগলেন। ওইদিকে পাণ্ডে-জির সেই গতিবিধির ওপর চোখ রাখতে রাখতে দীপা বলল, "না সেরকম কিছু না, আসলে কলকাতার বাইরের জগতটাকে এতদিন পর দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগলো আমার। থ্যাংকস টু ইউ পাণ্ডে-জি "
"ওঃ মাই প্লেসার" তবে তিনি নিজের কথা শেষ করতে না করতেই, সেই সিলিন্ডারের উপরের ক্যাপটা খুলে ছিটকে ওপরের দিকে উড়ে গেল আর ওনার হাতে থাকা অবশিষ্ট অংশ থেকে পাণ্ডে-জি সাবধানে আরেকটা স্টিল আর সেরামিকের সিলিন্ডার বের করলেন যার সঙ্গে আবার একটা তার লাগানো ছিল।
"তিস্তা...এইবার আমাদের শুধু এই জিনিসটাকে কি ভাবে অপারেট করতে হয় সেটা জানতে হবে, অ্যান্ড দেন, এভের্যথিং উইল বি অল রাইট " তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন পাণ্ডে-জি। উনি যে সেই জিনিসটা নিজের হাতে পেয়ে খুবই খুশী ছিলেন সেটা তাঁর কণ্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারল দীপা। পাণ্ডে-জিকে এত খুশী হতে দেখে, নিজের কৌতূহল সামলাতে না পেড়ে, দীপা এইবার সেই প্রশ্নটা করেই বসলঃ
"পাণ্ডে-জি, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড...আমি কি জানতে পারি ওই জিনিসটা কি, বা কি কাজ ওটার ?"
দীপার সেই প্রশ্ন শুনেই, তরিতবেগে নিজের বসের দিকে তাকাল তিস্তা। সে যে দীপাকে তাদের সেই গোপন প্ল্যানের ব্যাপারে জানাতে দ্বিধা বোধ করছিল সেটা বেশ বুঝতে পারলেন পাণ্ডে-জি। তাই তিস্তার জিজ্ঞাসু চোখ দুটো দেখে নিজের মাথা নাড়িয়ে সেই ব্যাপারে সায় জানালেন। সেই দেখে তিস্তা বলে উঠল, "পাণ্ডে-জি কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের একটি ব্যাংকে একটা অ্যাকাউন্ট ওপেন করেছেন আর তিনি চান সেই একাউন্টটা ইন্টারনেটের থ্রু দিয়ে অপারেট করতে।"
"মানে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতন ?" দীপা বলে উঠল।
"হ্যাঁ...অনেকটা, তবে এটা আরও সিকিউর | সাধারণ পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি, এই সেরামিক সিলিন্ডারটা, পাণ্ডে-জির শরীরের ডিএনএ স্ক্যান করে ইম্প্রিন্ট গ্রহণ করলে তবেই সেই পাসওয়ার্ড কাজে লাগবে...মানে এক হাতে তালি বাজবে না"
"মানে....ওই একাউন্টটা শুধুমাত্র পাণ্ডে-জিই ব্যবহার করতে পারবেন, তাই তো? মাই গড, এটা তো হাই টেক!" অবাক কণ্ঠে বলে উঠল দীপা। সে নিজে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হলেও, এইরকম ব্যাংকিং ফ্যাসিলিটি যে বাস্তব জীবনে সত্যি করেই মওজুদ আছে, সেটা ওর জানা ছিল না।
"ইয়া কাইন্ড অফ, আর...আপনি হলেন এই ভারতবর্ষের মধ্যে চতুর্থ নম্বর ব্যক্তি, যে এই ডিভাইসটার ব্যাপারে আর এটার কাজ করার ব্যাপারে জানেন " তিস্তা বলে উঠল।
"মাই গড!!" এতক্ষণে সেই জিনিসটার আসল গুরুত্বটা বুঝতে পেড়ে দীপা বলে উঠল।
"বাই দা ওএ, আর ইউ অলরাইট মাই ডিয়ার? মানে এখানে আসতে কোন প্রবলেম হয়নি তো তোমার" পাণ্ডে-জি বলে উঠলেন।
"নো স্যার! অ্যান্ড আই অ্যাম অ্যাবসোলিউটলি ফাইন, তবে এটা আমার কাছে একটা বড়োই সম্মান আর গর্বের বিষয় যে আপনি এই জিনিসটা আমার দায়িত্বে দিয়েছিলেন"
"ওহ! তুমি স্পেশাল দীপা, খুবই স্পেশাল...আর সেই জন্যই আমি তোমার উপর এতটা ভরসা করি...আই ট্রাষ্ট ইয়উ আলোট..." পাণ্ডে-জি বলে উঠলেন।
"থাঙ্ক ইয়উ স্যার, বাট আমি নিজেকে কখনই স্পেশাল বলে মনে করি না " হ্যাঁ, নিজেকে স্পেশাল কখনই মনে করত না দীপা। ও নিজে সাধারণ, ওর স্বভাবও সাধারণ।
"নো নো, আই ডিসআগ্রি। যে মহিলা ভোলার মত নৃশংস গুণ্ডাকে এক নিঃশ্বাসে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে, সে স্পেশাল ছাড়া কি হবে? অন্তত আমি পার্সোনালই সেই ব্যক্তিকে খুবই স্পেশাল বলে মনে করি " মুখে একটা স্মলান হাসি নিয়ে দীপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন পাণ্ডে-জি।
"মানে! আপনি কি করে জানলেন সেই ব্যাপারে ?" দীপা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল কারণ, ভোলাকে যে সে নিজেই গুলি করে মেরেছিল সেটা কেবল মাত্র সে আর রুদ্র জানতো!
দীপার সেই প্রশ্ন শুনে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাণ্ডে- জি বলে উঠলেন, "ওই হারামিটার একজন সঙ্গী কয়েক ঘণ্টার জন্য বেঁচে ছিল। তাকে আমরা এখানে নিয়ে এসেছিলাম জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আর তার কাছে থেকেই আমরা জেনেছিলাম কীভাবে... এক দেবী পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন ওই অসুরটাকে হত্যা করবার জন্য..."
"হ্যাঁ, অ্যান্ড অলসো পাণ্ডে-জি টাফ মহিলাদের বেশি পছন্দ করেন!" পাশ থেকে হঠাৎ করে বলে উঠল তিস্তা।
সেই শুনে দীপা বলল, "হ্যাঁ, সেটা আমি বেশ ভাল করেই বুঝতে পেরেছি" বলে তিস্তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল দীপা । তিস্তাও ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল |
"ইয়েস, অ্যান্ড টাফ মহিলারাই ভালো, আর এই সময়ে টাফ হওয়াটাই প্রয়োজন", বলে দীপার দিকে তাকালেন পাণ্ডে-জি, "তবে এই টাফ মহিলা কি পারবে আমার আরেকটা সাহায্য করতে? এই...এই জিনিসটাকে আমার কম্পিউটারের সাথে কনফিগার করে দিতে?" হাতের ওই জিনিসটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন পাণ্ডে-জি।
"আই এম এক্সট্রিমলি সরি পাণ্ডে-জি, বাট আমি ওইসবের কিচ্ছু বুঝি না, তবে আপনি চাইলে আমার ভাগ্নে রুদ্রর হেল্প নিতে পারেন " দীপা বলে উঠল।
"তোমার মনে হয় যে সে আমার এই কাজে আমায় সাহায্য করতে পারবে?" নিজের সাদা দুটো ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন পাণ্ডে-জি। তিনি যে একটু হলেও রুদ্রর ক্ষমতাকে সন্দেহ করছিলেন, সেটা বেশ বুঝতে পারল দীপা আর তাই সাথে সাথে বলে উঠলঃ
"পাণ্ডে-জি, রুদ্র একটা জিনিয়াস। ওর সব রকম টেকনোলজির ব্যাপারে অনেক জ্ঞান আছে। ইয়উ ওন্ট বি ডিসএপয়েন্টেড" এই বলে আগের মাসের, সেই রাতের সব ঘটনার কথা ওদের বলতে লাগলো দীপা। কীভাবে সেই সিলিন্ডারটা ইলেক্ট্রোমেগনেট দিয়ে রুদ্র ওর ভেতর থেকে বার করে এনেছিল , "হ্যাঁ পাণ্ডে-জি, ও না থাকলে আপনার ওই সিলিন্ডারটা হয়তো আমার গহ্বরের মধ্যেই হারিয়েই যেত।"
এতক্ষণ ধরে দীপার কাছে রুদ্রর ব্যাপারে সমস্তটা শুনে পাণ্ডে-জি বললেন, "হমমম...তোমার রুদ্র খুব স্মার্ট বলে মনে হচ্ছে" বলে কয়েক মুহূর্তের জন্য চুপ করে, গভীর চিন্তা ভাবনা করতে লাগলেন। একটু পড়ে ওনার মন থেকে ভাবনার সমস্ত মেঘ কেটে যেতেই উনি বললেন, "কালকে...কালকে ওকে তোমার সাথে আনতে পারবে একবার?"
"হ্যাঁ নিশ্চয়ই, কেন আনতে পারবোনা ? " দীপা বলে উঠল।
এইভাবে একের পর এক ব্যাপারে ডিসকাস করতে থাকলেন পাণ্ডে-জি। সব শেষে দীপা নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো।
পাণ্ডে-জিও সেই সাথে নিজের ডেস্কের একটা দেরাজ খুলে, তার ভিতর থেকে একটা বাক্স বের করলেন। তারপর সেই বাক্স খুলে তাই থেকে একটা হাভানা চুরুট বের করলেন। সিগার কাটার দিয়ে চুরুটের মাথাটা কেটে তাতে আগুন ধরিয়ে, সেই কাঁচের জানলার দিকে ঘুরলেন উনি। বাইরের শহরটা তখনও কোলাহলে জর্জরিত| এরই মধ্যে, তিস্তা নিজের বসের পাসে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর কাঁধে নিজের হাত রেখে প্রশ্ন করল "বস, আপনিও কি সেই একই ব্যাপারে ভাবছেন যেটার ব্যাপারে আমি ভাবছি..."
"ইয়েস, অ্যান্ড দিস টাইম উই উইল প্রসিড..."
সেই শুনে তিস্তা নিজের মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে বলল,"ইয়েস বস"।
তিস্তা আর পাণ্ডে-জি যেন একই কয়েনের দুটো দিক আর তাই জন্যেই বোধ হয় পাণ্ডে-জি ওকে তাঁর নিজের আন্ডারে নিয়েছিলেন আর আশ্চর্যের বিষয়, সেই কারণে তাদের মধ্যে যেন একটা মেন্টাল এটাচমেন্ট তৈরি হয়ে উঠেছিল ।
আজ সেই জন্যই দীপার সাথে টি সেন্টারে এসেছিল রুদ্র, তবে আজকের সময়টা একটু আলাদা | পাণ্ডে-জি নিজের লোকদের দিয়ে তাদেরকে খবর পাঠিয়েছিলেন যাতে তারা সেদিন সন্ধেবেলা ছটার সময় টি সেন্টারে উপস্থিত হয়। রুদ্র আর দীপা, সেই টি সেন্টারের একটা ফাঁকা রুমে বসে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিল। তবে, রুমটা ফাঁকা হলেও মাঝেমধ্যেই, ওই সিকিওরিটি গার্ডগুল এসে তাদের খোঁজ নিয়ে যাচ্ছিলো; যদি তাদের চা বা কফি লাগে । তাদের স্ট্যাটাস প্রায় একদিনেই অনেকটা ওপরে উঠে গিয়েছিল।
তবে রুদ্রর মাথায় তখন অন্য একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল , "তোমার কি মনে হয়...তিস্তা আজ আমার বিচিগুলো নিজের হাতে নিয়ে চটকাবে, মানে ওই স্ট্রিপ সার্চ এর জন্য ?" দীপাকে প্রশ্ন করলো রুদ্র।
"কেন? তুই কি ভয় পাচ্ছিস যে ও তোর বিচিতে হাত দিলে, তোর ওইটা খাঁড়া হয়ে যাবে? না কি অলরেডি খাঁড়া হয়ে গেছে সেই ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে ? " বলে রুদ্রর উঁচু হয়ে থাকা প্যান্টের দিকে তাকাল দীপা |
"ধুর, বাইরে বেরিয়ে এইসব কথা কেন বল তুমি? ভালো লাগে না শালা..." কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠল রুদ্র আর সেই সাথে নিজের প্যান্টটা ঠিক করে এডজাস্ট করে নিলো।