Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
আমি ঘরে এলাম। ঘরের আবহাওয়া বলছে বেশ জটিল আলোচনা চলছে। সবার মুখ-চোখ তাই বলছে। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
-আসুন স্যার।
-এইভাবে বললে আর আসবোনা।
-তোকে আসতে হবেই। তোর থেকে আমার ক্ষমতা বেশি।
-দরকার নেই ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যাবো।
-পারতিস। যদি বাঁধা না পরতিস।
-একথা বলছো কেনো।
-দাদার মুখ থেকে সব শুনলাম বলে।
-ও শোনা হয়ে গেছে।
-দেখ, আমি বলিনি অনিমেষ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো তাই বললাম।
-তোমার দ্বারা কিছু হবেনা। তুমি খোঁচাও দেখি কিছু পাও কিনা।
-অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-চলো টেবিলে বসে গল্প হবে। ওদিকে সব রেডি।
ওরা সবাই উঠে এলো। বেসিনে হাত ধুয়ে সবাই টেবিলে বসলো। বৌদি একে একে সবাইকে খেতে দিলেন। আমার পাশের চেয়ারে বৌদি বসেছেন। কাজের মেয়েটিকে বললেন আমি সব দিয়ে দিয়ে দিচ্ছি তারপর যার যা লাগবে তুই দিস।
মেয়েটি ঘার নেড়ে পাশে দাঁড়ালো।
আমরা খাওয়া শুরু করলাম।
-বুঝলে মঞ্জু অনিবাবু বিয়ে করেছেন। অনিমেষদা বললো।
-আঁ। বৌদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। কিরে তুই যে এখুনি বললি আমার কপালে কি ওই সব লেখা আছে।
-তারপর কি বলিনি- তোমায় সময় করে সব বলবো।
-তোর দাদার মতো এখানেও রাজনীতি।
দাদা মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছেন। নিরঞ্জনদা গম্ভীর।
-আরো আছে। বাবু আরো অনেক কীর্তি করেছেন। পরে তোমায় বলবো। এখানে এসে মাস দেড়েক আগে তোমায় বলেছিলো না বৌদি এবার আমার অনেক কাজ। বাবু সেগুলো সেরে ফেলেছেন। আমার কাছে জাস্ট পারমিশন নিতে এসেছেন। সঙ্গে তিন সাক্ষী।
-কিরে তোর পেটে পেটে এতো। তুই তো সাংঘাতিক। তুইতো তোর দাদার থেকেও এককাঁটা ওপরে।
-এককাঁটা কম বললে দশকাঁটা ওপরে।
-একেবারে হ্যাঁ বলবেনা।
-সেখানে আবার একটা প্যাঁচ মেরে রেখেছে। আমার পার্টির স্বার্থ লুকিয়ে আছে। না বলতে পারবোনা।
-উরি বাবা।
-তবে অনির দম আছে। একা লড়ছে। সংঘবদ্ধ ভাবে নয়। ওর একার ক্ষমতা। জীবনটা অনেক বেশি দেখেছে কিনা।
-আমি শোনার পর হ্যাঁ বলবে। আগে ওর বৌকে নিয়ে আসবে তারপর।
-বৌতো ওর মালকিন।
-মিত্রা!
-হ্যাঁ।
-তাহলে ঠিক আছে।
-ব্যাস গলে গেলে।
-যাঃ ওই ভাবে বলোনা। ওতো বলেছিলো।
দাদা মল্লিকদার দিকে চোরাচাহুনি মেরে তাকালাম। দুজনেই খুব মজা পাচ্ছে। একজন অন্ততঃ পক্ষে আছে যে অনিকে চমকাতে পারে।
অনিমেষদার ফোন এলো। ধরে বললেন মিটিং ৪ টের সময় আমি তার পনেরো মিনিট আগে পৌঁছে যাবো।
-কিরে তুই কিছু নিবিনা।
-না পেট ভরে গেছে
-কেনো।
-এত কথা শুনলাম দাঁড়াও আগে হজম করি।
-তাহলে যে বড় বড় কথা বলিস। গ্রামের ছেলে বিড়াল ডিঙবে না।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
বাইরে বেল বেজে উঠলো। কাজের মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো।
সুরঞ্জনা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা কোনো প্রকারে রেখেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
-অনিদা ফার্স্ট ক্লাস কেউ রুখতে পারবেনা।
-সত্যি!
-তোমার নোট।
-তাই।
-ডঃ রায় কি বললো জানো। দশ বছর আগে এইরকম নোট পরেছিলাম।
-তুই বলিসনি তো।
-পাগল। তাহলে আমার দর কমে যাবেনা।
-দেখ কিরকম গুরু মারা বিদ্যে শিখেছে। বৌদি বললো।
-তোমার কথা ডঃ রায় এখনো আমাদের বলেন। গত দশ বছরে কলেজ থেকে একটাও ফার্স্ট ক্লাস বেরোয়নি।
-তুই পেয়ে দেখিয়ে দে।
-পাবই। তোমার সব নোট জলবত তরলং।
বৌদি অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোমার কাগজে একটা লেখার সুযোগ দেবে।
-ওই যে এডিটর সাহেব বসে আছেন।
-উনি অমিতাভ চক্রবর্তী!
সুরঞ্জনা ছুটে গিয়ে দাদাকে প্রণাম করলো মল্লিকদাকে, নিরঞ্জনদাকে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
-বাবা হাসছে কেনোগো অনিদা।
-বাবাকে জিজ্ঞাসা কর।
-দাঁড়াওনা আগে তোমার মতো হই। তারপর বাবার পার্টির পর্দা ফাঁস করবো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
অনিমেষদা হাসতে হাসতে বলে উঠলো
-অনি তাহলে একটা চেলা তৈরি করলো।
-একটা কিগো অনিমেষ, অফিসেও দুটো চেলা তৈরি করেছে। একবারে জমপেশ। দাদা বললো।
-তাই নাকি।
-আর বলো কেনো।
-অনিদা তুমি আমাকে তৈরি করোতো।
-ঠিক আছে কালকে থেকে লেগে পর।
-অমিতাভ জেঠুতো পাত্তাই দিলো না।
-ঠিক আছে মালিক হুকুম করবে এডিটরকে। তোর লেখা ছাপা হবেই।
আবার সবাই হেসে উঠলো।
-কলি আমার ভাতের থালা নিয়ে আয়। মা তুমি সরে বসো। আমি অনিদার পাশে বসবো।
সুরঞ্জনা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার পাশে বসলো।
-আজ আমার পাত ফাঁকা।
-তোর অনিদা বিয়ে করেছে। বৌদি বললো।
-উঁ হুঁ হুঁ অনিদা এটা কি করলে।
-তুই বিশ্বাস কর।
-ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে জমপেশ করে সেজে বরযাত্রী যাবো।
-আচ্ছা আমি বিয়ে করবো তুই জানতে পারবিনা তা হয়।
-মা বললো যে।
-মিথ্যে কথা। তুই বিশ্বাস করিস।
-তোর মিত্রাদিকে।
-কিগো।
-আবার পাগলামো করে।
-মিত্রাদি এখন কোথায় গো।
-লুকিয়ে রেখেছি।
-কেনো!
-বাবাকে জিজ্ঞাসা কর।
-বাবা আমার সঙ্গে কথাই বলেনা।
-তুই এককাজ কর বাবাকে নিয়ে একটা আর্টিকেল লেখ আমি এডিট করে তোর আমার জয়েন্ট নামে লিখবো।
-বুঝেছি তুমি আমাকে টুকছো।
-এইতো ভালো কথা বললাম ওমনি টোকা হয়ে গেলো।
-কলি, মাছের ঝোল দে।
-উঃ কানে তালা ধরিয়ে দিলি।
আমি বৌদির পাতের দিকে জুল জুল করে তাকালাম।
-মায়ের পাতের দিকে তাকাবেনা। ওটা আমার।
-কতদিন বাদে এলাম তুই এরকম করিসনা।
-না একবারে না।
-ঠিক আছে বাকি নোটগুলো মাইনাস।
-হাফ হাফ।
-ভাগ কর।
অনিমেষদা একবার মুখ তুলে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো। খাওয়া শেষের পথে।
অনিমেষদা একটা ঢেঁকুর তুলে বললো
-তাহলে মঞ্জু হ্যাঁ বলে দিই।
আমি অনিমেষদার দিকে মুখ তুলে তাকালাম। মুচকি মুচকি হাসছি।
-বলে দাও এই শেষবার। আর নয়। এরপর বৌকে নিয়ে এলে কাজ হবে। নাহলে হবে না।
-কি গো আনিদা মা কি কথা বললো।
-উঃ ওটা মায়ের কথা। আমি তোকে পাকা কথা বলেছি। তোর জমপেশ করে সাজার ব্যবস্থা করছি। একটু অপেক্ষা কর।
-মনে থাকে যেনো।
দাদারা সকলে উঠলেন। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-একবার আয় তোর সঙ্গে একটু কথা আছে।
-যাও যাচ্ছি।
-আবার কবে আসবি।
-দিন পনেরোর মধ্যে হবেনা। বড়মারা ওখানে আছে। এদিকটা একটু সামলে নিই তারপর।
-তুই কতদিন পর এলি মনে আছে।
-হ্যাঁ। মাস দুয়েক পর।
খাওয়ার পর্ব সাঙ্গ হলো। বেসিনে মুখ ধুয়ে ঘরে এলাম। দাদা আমাকে দেখে বললেন ওই ঘরে যা আমি যাচ্ছি। আমি দাদার বেডরুমে চলে এলাম। সুরঞ্জনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। বেশ দেখতে হয়েছে সুরঞ্জনাকে। সেই ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে ওদের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু তখন ও ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। আজ অনার্স ফাইন্যাল ইয়ার। যেনো মনে হচ্ছে এই সেদিনের কথা।
-অনিদা।
-বল।
-মিত্রাদিকে দেখতে এখন কেমন হয়েছে?
-যেমন ছিলো তেমনি আছে।
-একটুও বদলায়নি!
-না। সেরকম দেখছি নাতো।
-মামনি, বাইরে যা অনির সঙ্গে একটু কথা বলি।
সুরঞ্জনা আলমারির সামনে থেকে সরে গিয়ে বাইরে চলে গেলো। মুখে ব্যাজার ভাব।
অনিমেষদা আমার পাশে এসে বসলেন। তোর কথা অমিতাভদার মুখ থেকে শুনলাম।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
-তুই নিরঞ্জনকে মন্ত্রী বানাতে চাস।
আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি
-বলনা তোর মনের কথা।
-তুমি যা বললে তা ভাবিনি বললে মিথ্যে বলা হবে।
-ও অনেক গন্ডগোল করে বসে আছে।
-জানি।
-পার্টিতে ওর কিছু খারাপ দিকের কাগজপত্র জমা পরেছে।
-তাহলে।
-আমি ওকে কথা দিইনি তবে চেষ্টা করবো বলেছি। বিধানের সঙ্গে কথা বলি আগে।
-আমি যেগুলো ওখানে করতে চাই শুনেছো।
-এতো তোর বহুদিনকার স্বপ্ন। কর। সবরকম সাহায্য পাবি। জমির ব্যাপারটা নিরঞ্জনকে বলেছি। ওদের জেলার মিটিংয়ে কথা বলে আমাকে জানাতে।
-তুমি আমাকে মাস ছয়েক সময় দাও আমি শুধরে দেবো।
-জানিসতো সব। নতুন করে তোকে কি বলবো। ওর অপনেন্টরা হা করে বসেছিলো এতোদিন। এখন বিধানের কাছে প্রত্যেকদিন ফোন করছে।
-আমি তাহলে একটা আর্টিক্যাল ঝেড়ে দিই।
-আবার কি আছে তোর কাছে!
-যারা বেশি বাড়াবাড়ি করছে তাদের।
-তুই এখন থাম একটা আগে সামলে নিই তারপর। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
-বলো।
-তোদের জেলায় বাই ইলেকসন আছে পাঁচটা সিটে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে হবে।
-আমায় কি করতে হবে।
-ইসলামকে একবার আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দে। বিধান সব আমার ঘাড়ে ঠেলে দিচ্ছে। সেদিন বললো তোমার সঙ্গে অনির ভালো রিলেশন। অনিকে বলো।
-আমাকে দিন সাতেক সময় দাও।
-সে তুই সময় নে। কাজটা করতে হবে।
-আর।
-কিছু টাকা পাঠা। ইলেকশনের খরচ বাবদ।
-কতো বলো?
-তোর যা মন চায়।
-ইসলাম ভাইকে বলি ওই পাঁচটা ও কভার করে দিক
-একা পারবে।
-পারবে। আমি ওর দম জানি।
-দেখ হলে ভালো হয়। আমাকে একটু জানাস।
-পরশু রাতে তোমায় ফোন করবো।
-ঠিক আছে।
-মিঃ ব্যানার্জীকে কি করবো?
-যা ডিসিসন নিয়েছিস এতে আমার বলার কিছু নেই। সাবধানে পা ফেলিস। কোথাও কোনো ফাঁক রাখিস না।
-সে বিদ্যেটা তোমার কাছ থেকে রপ্ত করে নিয়েছি।
-তোর বৌদির তোকে নিয়ে বড্ড ভয়। বারে বারে আমায় বলে বয়সটা কম। তুমি ওকে বারণ করো।
-আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমার জন্য তোমার মাথা হেঁট হবেনা।
-আব্দুলকে আমি বলে রাখছি তোর জমির ব্যাপারে। দপ্তরটা ওর।
-তুমি বলো প্রয়োজনে আমি দেখা করবো।
-টাকা পাবি কোথায়।
-প্রোজেক্ট রেডি করতে করতে বছর তিনেক লাগবে। তোমাদের ইলেকসন চলে আসবে। সেই সময় কাজে লাগাবো।
-ছকটা ভালো কষেছিস।
হাসলাম।
চল আমার আবার মিটিং আছে যেতে হবে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 22-03-2022, 07:42 AM



Users browsing this thread: