20-03-2022, 06:31 AM
ফোনটা কেটেই রতনকে ফোন করলাম।
-হ্যাঁ, দাদা।
-ডাক্তারের ওখানে কে আছে?
-আবিদ।
-বাবাঃ তোর বুদ্ধি দেখছি এই কদিনে একেবারে পেকে আমসত্ব হয়ে গেছে।
-সব তোমার আর্শীবাদ।
-আবিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সব ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবু তুই ওকে একবার মনিটরিং কর।
-ঠিক আছে দাদা।
-কাজ হয়ে গেলে আমাকে ফোন করবি।
-আচ্ছা।
-অবতারকে কোথায় রেখেছিস?
-আমাদের খাস ডেরায়।
-ওর সঙ্গে রাতে বসবো। ফোন সুইচ অফ করবি না।
-ঠিক আছে।
-বস ফোন করেছিলো?
-হ্যাঁ। তুমি বেরিয়ে আসার পর।
-ঠিক আছে পরে কথা হবে।
-আচ্ছা দাদা।
আমি ফোনটায় সব রেকর্ডিং সেভ করলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে বারোটা বাজে। বেরোতে হবে। ঘরে পিন পরলে শব্দ শোনা যাবে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। দাদার চোখ দুটো লাল ডগডগে। মল্লিকদা থম মেরে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম একটু চা খাওয়াবে।
দাদা সঙ্গে সঙ্গে বেলে হাত দিলো।
-তুমি এদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে বলো!
-দূর করে দে।
-এদের কাছে আমার ফোন নম্বর ছিলো না! একটা কেউ ফোন করতে পারেনি। এটলিস্ট তোমাকে জানাতে পারতো।
-কিরে চম্পক, কবে থেকে এই ঘটনা চলছে।
-মলের কেশটা যেদিন ঘটলো সেদিন থেকে।
-আমাকে জানাসনি কেনো।
-জানাতে এসেছিলাম হরিদা ঢুকতে দেয়নি।
-ফোন ছিলোনা।
-যদি ট্যাপ হয়। আমাদের হাউসে এখন এর ফোন সে শোনে।
-সনাতন বাবু?
-আমার ভুল হয়ে গেছে।
-আপনাদের?
সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
-তুমি আবার এদের হয়ে আমাকে বলো।
-আজ প্রতিজ্ঞা করছি আর কোনোদিন বলবো না।
-তুমি এদের মানুষ করতে পারবেনা। এরা সবাই মনুষ্যত্বহীন। বুঝতে পারছো কাগজটাকে এরা কোথায় নামিয়ে নিয়ে গেছে। একটা মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কি না করেছে এরা।
-ম্যাডাম?
ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করলেন।
-আমার ফোন নম্বর আপনার কাছে আছে।
-না স্যার।
-নিয়ে নিন। আপনার নম্বরটা বলুন।
উনি বললেন আমি ওনার মোবাইলে ডায়াল করলাম।
-সেভ করে নিন। কাউকে দেবেন না। আপনি মেয়ে মানুষ। পথে ঘাটে যেখানেই কোনো সমস্যায় পরবেন একবার ডায়াল করবেন। আশা রাখি আপনার কোনোদিন সমস্যা হবেনা।
-আচ্ছা স্যার।
-আর একটা কথা সবার সামনে বললে আপনি অপমানিত বোধ করবেন না।
-না স্যার।
-নিজেক সংশোধন করুন। আপনার অনেক মাইনাস পয়েন্ট আছে। আমি জানি। সবার সামনে বলছিনা। নিজেকে বড্ডবেশি আল্গা করে ফেলেছেন।
ম্যাডাম কেঁদে ফেললেন।
-কেঁদে কোনো লাভ নেই। অন্য জায়গা হলে আজকে আপনাদের সকলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিত। আমি তা করছিনা। লাস্ট চান্স দিলাম।
উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললেন। আমায় ক্ষমা করুন।
-একি করছেন আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। আমি ক্ষমা করার কে। দাদার কাছে ক্ষমা চান। উনি আপনাদের রক্ষা করছেন। চম্পকদা?
-আমি কিছু বলবোনা তুই যা শাস্তি দিবি মাথা পেতে নেবো।
-এই নিয়ে কবার হলো।
-জানি।
-সনাতন বাবু?
-চম্পক যা বললো আমারও তাই মত।
-যান আপনারা। আপনাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
-ছোটো বাবু বিশ্বাস করো আমরা কলুর বলদ হয়ে গেছি। কি করবো। সুনিতের ঘটনার পর সবাই তোমাকে দেখে তটস্থ।
-তার মানে! আপনারা সবাই দোষী। তাই অনির ভয়ে তটস্থ। সুনিতদার মতো কটা লোক এই হাউসে আছে।
-জানাবো?
-নামগুলো দিন আমাকে। দেখি তার বুকের খাঁচাটা কতো ইঞ্চি।
-চম্পক না করলেও আমি তার লিস্ট তোমাকে দেবো।
-দিন। তারপর দেখছি। আমি এখন বেরোবো। ঠিক ছটার মধ্যে ঢুকবো।
-আচ্ছা।
সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
দাদাকে বললাম হরিদা চা দিলোনা?
দাদা বেল বাজাতেই হরিদা মুখ দেখালো।
-ঢালছি।
-নিয়ে আয়।
হরিদা একে একে চা নিয়ে এলো। তিনজনেই থম মেরে বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন। ভয়েজ অন করলাম।
-বল।
-সত্যি অনি তুই আমার গুরু। ইসলাম ভাই বলে উঠলো
-মিত্রার ফোন থেকে ফোন করছো।
-আমারটায় ভয়েজ নেই তাই।
-পেছনে লোক লাগিয়েছিলে কেনো?
-হো হো করে হেসে ফেললো। ফোনটা যেন ফেটে যাবে।
-সত্যি তোর চোখ।
-অনেক কষ্টে বানাতে হয়েছে। মনে রাখবে যেদিন অনির চোখটা নষ্ট হয়ে যাবে সেদিন অনি মরে গেছে।
-তুই এই কথা বলিসনা। আমরা তাহলে কোথায় যাবো।
-তোমার গাড়ির নম্বর কোথা থেকে ফলো করছিলো বলবো।
-না। আমি জানি।
-সত্যি কথা বলো।
-সকালে তুই যখন রতনের ফোনটা জোড় করে চাইলি তখনই বুঝেছি তুই আজকে কিছু একটা খেলা খেলবি। তোর নেক্সট টার্গেট আমার জানা ছিলো। তাই ঘুটি সাজালাম। অন্যায় করেছি বল।
-না।
-আমি বড়দিদের সব বলেছি।
-কেনো?
-বড়দি মাথায় হাত রেখে বললো বল অনি কেনো আমার সঙ্গে কথা বললো না।
-তখন সব গড় গড় করে বলে দিলে।
-কি করবো বল।
-হার্টবিটটা দেখেছিলে। ওখানে দশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ডাক্তার নেই।
-কিছু হবেনা। ইসলাম ভাই মরে যায়নি। আল্লা কসম।
-রতনের সঙ্গে কথা হয়েছে।
-আবিদ রওনা দিয়ে দিয়েছে।
-তুমি মনিটরিং করো। অবতারকে এখন কিছু কোরোনা।
-তুই না বলা পর্যন্ত কিছু করবো না।
-তোমরা এখন কোথায়।
-তোর ঘরে।
-আর কে আছে।
-আমরা তিনজন।
-ও। স্নান খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে?
-না। সবাই তোর শেষ রেজাল্টটা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে।
-মিত্রার হার্টবিটটা ছোটমাকে দেখতে বলো। ফিক করে হাসির আওয়াজ হলো।
-কে হাসলো?
-মিত্রা।
-বাবা।
-আমরা সবাই টেনসড ও একবারে নর্মাল। তুই এতদিনে ওর মনের মতো কাজ করছিস।
-শেষ রেজাল্ট কাল সকালে জানতে পারবে।
-কেনো লেট করছিস।
-এখন অনিমেষদার ওখানে যাবো সবার লাঞ্চের নেমন্তন্ন।
-তুই নিরঞ্জনদাকে বাঁচিয়ে দিলি।
-ওকে মারার ইচ্ছে ছিলো। বড়মার জন্য এ যাত্রায় রক্ষা পেলো।
-এভাবে বলিসনা। তুই এখন কোথায় ?
-দাদার ঘরে। তোমার কথা সবাই শুনছে।
-বড়দির সঙ্গে কথা বল।
-দাও।
-কিরে এখনো রাগ করবি।
-আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই।
চুপচাপ।
-চুপ করে রইলে কেনো।
-তুই এভাবে বললি কেনো বড়মা কাঁদছে। মিত্রার গলা।
-কাঁদতে দে।
-এভাবে বলিসনা।
-তাহলে কিভাবে বলবো।
-মিত্রা সব বলেছে। আর কোনোদিন হবে না। আমি তিন সত্যি করছি। বড়মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
-দাদার সঙ্গে কথা বলো।
-দে।
দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। হরিদা পেছন থেকে ডাকলো।
-ছোটো বাবু।
-কিগো হরিদা।
-হিমাংশু সাহেব অনেকক্ষণ এসেছে। দিদিমনির ঘরে বসিয়ে রেখেছি।
-এমা আমাকে আগে বলবে তো।
-তুমি ঘরের মধ্যে যা শুরু করেছিলে। দুবার গিয়ে ফিরে এসেছি।
-চা দিয়েছো।
-হ্যাঁ।