Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
HORROR ভৌতিক সংকলন ২- গোলাপী মনি - সংগৃহীত- লেখনী - অনাহুত- সম্পূর্ণ
#21
কাশীর মনের অবস্থা তার থেকেও আশঙ্কাজনক। কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। মুর্তিমান যম ছুটে আসছে লাঠির রূপ নিয়ে আর সে এড়িয়ে যাচ্ছেসামান্য ভয়  লাগছে নাআবার  আবার সেই রকম বীর ভাব আসছে তার মধ্যে। সে দেখল ভৈরব বিশাল বপু নিয়ে একটু পিছনে চলে গেল। বুঝল ওর পরবর্তী মারের প্রস্তুতি এটা। কিন্তু পিছনে ওটা কে। একীমহিলার ঘাড় ধরে  কে দাঁড়িয়েবড্ড অসভ্য তোকাশী এগিয়ে গেল একটু।
পাষণ্ড , মা বোনের গায়ে হাতছেড়ে দাও এনাকে।
 
বলে সরলার দিকে ইশারা করল কাশী। মঙ্গলএক মুখ দাত বের করে হাস্তে শুরু করল। যেন এই সব শোনার বা পালন করার কোন ইচ্ছেই তার নেই। কিন্তু সেই অবস্থা তার চিরস্থায়ী হল। অসভ্যের মতন দাত বের করতেইকাশী ডান হাতে পাথর টা বাগিয়ে নিয়ে , বাঁ হাতে যেটা মঙ্গলের গালে বসালসেটা কে শুধুই থাবড়া বলা উচিৎ কিনা সেটা চিন্তা যোগ্য ব্যাপার। মঙ্গল সেই অবস্থাতেই , নিমেষে সাত সমুদ্র দর্শন করে দড়াম করে পড়ে গেল ভেজা মাটিতে। সরলা ভুত দেখার মতন সড়াৎ করে পিছনে চলে গিয়েকেতো গনার একটা কে জড়িয়ে ধরে মহা ভয়ে রাম নাম জপ্তে লাগলো। ঠিক সেই সময়ে আবার ভোমরার ডাক শুনতে পেল। মনে হল মাথার ডান দিক থেকে গজ খানেক দুরেই ডাকছে ভোমরা গুনো। পলকে পাথর খানা বাম হাতে চালান করে দিয়ে ঢালের মতন ডান হাত টা সামনে রাখলো কাশী। ডান হাতের কনুইএর নীচের পেশীগুলো কে ইঞ্চি খানেক দাবিয়ে দিয়ে পিছলে বেড়িয়ে গেল ভৈরবের লাঠি গাছা।
কি ব্যাপার বলত কাকাতোমাদের পরিবারে কেউ লড়ুয়ে ছিল নাকি?
অবনীর কথার ঠেস গায়ে নিলো না হারান। সত্যি  তো। অমন থাবড়া খেলে ভীমের  চিন্তা হতো। ভৈরবের চেলা টার হাল ভেবে বেশ পুলকিত হলো হারান।
কিন্তু ওকে এক খান লাঠি দে বাপ আমার। ছেলেটা যে শুধু মার আটকাতেই পারছে। মারতে তো পারছে না।
হুম কথাটা মন্দ বলো নি খুড়ো। কিন্তু ভৈরবের লাঠির আঘাত নেওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার না। সেই রকম লাঠি এই তল্লাটে নেই গো খুড়ো।
তুই নে আয় নাতারপরে দেখ আমার কামাল। পুন্য কম কামাই নি আমিকিন্তু এই ভৈরবের চক্করে আমার অপঘাতে প্রান টা যায়। আজকে যা করব তাতে দশ বিশের উপকার হবে বই তো নাতুই নে আয় বাপ
 
পরক্ষনেই অবনী কোথা থেকে একটা মোটা লাঠি গাছা এনে সামনে রাখলো হারানের।
কোথায় পেলি এটাকে
এটা তোমার বাড়ির লাঠি খুড়ো। তুমি মারা যাবার আগে এটা কেবড় ঘরের চালে তুলে রেখেছিলে। কেউ দেখেনি।
আহ ভালো করেছিস বাপ।
 
এই বলে সুড়ুত করে পাকা বাশের লাঠির ভিতরে ঢুকে পড়ল হারান। ভিতর থেকে ক্ষীন আওয়াজ ভেসে এল।
লাঠি খানা সামনে ফেলে দে ঘোষাল...
 
কাশীর পেশীর সাথে আঘাতে ভৈরবের লাঠিগাছা পিছলে যেতেই ভৈরব সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। কাশী কিন্তু সরে এলআঘাত করল না ওকে। ওই লাঠির আঘাত পেশী তে নেবার পরে হাড় অব্দি ঝনঝন করছে কাশীর। ঠিক সেই সময়ে দেখল গাছ থেকে মাটিতে পড়ল একটা লাঠি। ততক্ষনে রুদ্র ফের আঘাতের জন্য জায়গা নিয়ে নিয়েছে। মনে ক্রোধ এবং বিতৃষ্ণা বাড়ছে ভয়াল রূপ নিয়ে রুদ্রভৈরবের। কাশী পাথর খানা নিজের কোঁচরে শক্ত করে বেধে নিলো। ধুতি খানা সাপুটে পরে নিলোকাছা মেরে। তড়াক করে লাফিয়ে লাঠির কাছে গিয়ে তুলে নিলো পড়ে থাকা লাঠি গাছা।
এরপরে জাদু দেখল হাতিমারার জঙ্গল। যেন দুই মহারথীর লড়াই হচ্ছে। শুধুই লাঠির ঠকাঠক আওয়াজ আর ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ। মনে হচ্ছে সহস্র অযুত ভোমরা মহাক্রোধে ছুটে বেড়াচ্ছে বনময়। একে অপরের মরনমার থেকে বাঁচছেআবার আক্রমনে যাচ্ছে। কাশী অবাক হচ্ছিল বার বারযে সঠিক নিশানায় যাচ্ছে লাঠি গাছা। হাতে ঘুরছে যেন লাঠি গাছা পোষ্য। যেখানে ভৈরবের মতন দানব  পাত্তা করছে পারছে না কাশীর গতি আর শিক্ষার কাছে। ভৈরবের মরন আঘাত কাশী কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আর যাবার সময়ে নিজের আঘাত করতে ভুলছে না। বনবন করে লাঠি ঘুরিয়ে একে অপর কে শেষ করে দেবার অঙ্গীকারে বদ্ধ দুপক্ষই। চারিপাশের ভুত যক্ষ দেবদেবী গাছ গাছালী রা দেখল লাঠি খেলা শুধু বনবনিয়ে লাঠি ঘোরানোকেই বলে না। মার দেবার আর মার নেবার ক্ষমতাও থাকা চাই। এক একটা প্রহার আর লাঠির সাথে লাঠির আঘাত যেন বাজ পড়ছে।
 
অতিদীর্ঘ সময় ব্যাপী চলাভাল  মন্দের মধ্যে চলা এই দ্বন্দ একসময়ে থামল। থেথাম হলো ভোমরার ক্রোধ। মানুষপ্রেতপিশাচদেব দেবীজঙ্গল পাখী সবাই দেখলকাশী হাত জোর করে দাঁড়িয়ে কোন অজানার উদ্দেশ্যে আর ভৈরব রক্তাক্ত হয়ে পরে রয়েছে মাটিতে।
 
চারিদিকে ভীষণ শান্তি। আশেপাশের দশ টা গ্রাম যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। ভৈরবের তাণ্ডব থেকে রেহাই পেয়ে সবাই বেশ উৎফুল্ল। সে বছর দুর্গাপুজো হলো বেশ ঘটা করে। পুজোর পরেই বিয়ে করল সরলা আর কাশী। একটু বেমানান হলেও মহেশ কে নিতবর হতে হলো। তা খেল বটে প্রায় হাজার তিনেক লোক। সরলা বেজায় খুশী হয়ে কাশীর সাথে নিজের বাগান আর জমিজমা দেখাশোনা করে। কেতো , গনালক্ষী সরস্বতী আর  গোটা চারেক গরু কে নিয়ে সরলার সংসার যেন ভরে উঠলো। দশ গাঁয়ে কাশীর সুনাম রটল বটে। আর মহেশের ঠিকানা পরিপক্ক ভাবে কাশীর বাড়ি হলো সেটা বলাই বাহুল্য। আর বাইরে থেকে আসা লোকজন জানতেই পারল না গ্রামের এক কোনে কয়েক বিঘা জমি চাষ করে দিন নির্বাহ করে যে লোক টা তার নাম রুদ্রভৈরব।
 
-----------------------------------------------------------------------------------
চার মাস পরে........................
কি , এবারে খুশী তো?
হ্যাঁ রে পুঁটিযাক নাতি টার গতি হলো।
হ্যাঁ আর আমার দাদা মেয়েটার ও।
আবার কি এবারে চলো চলে যাইডাক এয়েচে ওপার থেকে। আর এই ভুত হয়ে থাকতে ভাল লাগচে নে কো। বামুনের পো তো চলে গেচে।
হ্যাঁ ঠিক বলেচিস তুই। আমার তো ইচ্ছে আমি আবার জন্ম নি আমারি নাতির ঘরে
কি অলপ্পেয়ে বাবা তুমিযেমনি আমার ইচ্ছে হলো আর তোমার  ইচ্ছে হলো না?
যাহ বাবাআমি কি করে জানব তোর  ওই এক  ইচ্ছেআমি তো আমার নাতির ছেলে হবোই
এহ আমি হবো ওদের মেয়ে
না আমি
দ্যাখ তোমাকে আমি এই শেষ বলচিআমি হবো
এহ ভারি এলো , আমার নাতির ঘর আমি যাবো
হ্যাঁ তবে ঘরেই জন্ম নাওবলি এক খানা পেট তো চাই নাকিআমার দাদার মেয়ের পেট। অতএব আমি যাবো।
এহ ইল্লী আর কিপেট হলেই হলোওরে পেটে গিয়ে খেতে তো হবে নাকিসেটা তো আমার নাতি  জোগাড় করবে। হে হে  তবে!! কে জিতলআমি। অতএব আমি যাবো।
আহা একটা ঘরে ছেলে মেয়ে দুই তো হতে পারে নাকি?
বেশ তবে তাই হোক। আমরা দাদা বোনে ফের দাদা বোন হই। এক্কেরে মায়ের পেটের।
                          সমাপ্ত...........................
[+] 4 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক সংকলন ২- গোলাপী মনি - সংগৃহীত- লেখনী - অনাহুত - by nandanadasnandana - 08-03-2022, 12:02 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)