08-03-2022, 12:01 PM
কথায় বলে বেশী ভয় মানুষ কে সাহসী করে তোলে।ভয় এমন জিনিস, ও নিয়ে বেশী নাড়াঘাঁটা করলে কমতে থাকে। হাতিমারার জঙ্গলে ঢোকা ইস্তক এমন ভয়ের ব্যাপার অনবরত ঘটে চলেছে , যে কাশীর ভয় খানা হালকা হয়ে এসেছে খানিক। যা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল , ধরনী বুঝি ডোবে ডোবে। ফসস করে সেটাও থেমে গেল। এমন ভৌতিক আর অতি-অসাধারন ব্যাপার স্যাপার একসাথে ঘটলে, ভয় বাবাজী পিছু হটবেন সেটাই স্বাভাবিক। কাশী পরিষ্কার দেখলো , রাজহাঁসের ডিমের আকারের বড় একটা পাথর, যেটার থেকে ঝিম ধরা এই মিষ্টি আলো টা বেরচ্ছে। আসতে আসতে এগোতে লাগলো কাশী। কি জিনিস না দেখা অব্দি ওর যেন শান্তি আসছে না।
- আমি বলতেচি কাকা তুমি ওই সব্বনেশে জিনিসে হাত দিও নে কো।
- আরে থাম তো। আর কী হবে আমাদের বলতে পারিস? হয় মরব না হয় ভাল কিচু এক খানা হবেই তুই দ্যাখ।
এই বলে বুকের ভয় খানা মাটিতে ফেলে, হামাগুড়ি দিয়ে কাছে এসে পাথর টা হাতে নিতেই, আলো টা আরো জোর হয়েই হুশ করে কমে গেলো। ডিমিডিমি করে জ্বলতে লাগলো কাশীর হাতে। আগের মতন আলো না থাকলেও, এখন কার আলোটা ও কম না। বেশ খানিক টা জায়গা আলোকিত করে রেখেছে পাথর টা থেকে বেড়িয়ে আসা গোলাপী আলো। তিন চার হাত দূরের জিনিস ও বেশ ভালো মতন নজরে আসছে কাশীর। হাতে একটা শীতল ভাব। মন জুড়ে যেন একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাশীর। “এটা কী? কোন জাদু পাথর নাকি রে বাবা?”। মনে মনে ভাবতে লাগলো কাশী। “ নিচ্চয় জাদু, না হলে হাতে নিতেই, মন খানা এমন কেমন কেমন করে কেনো?”
ঠিক সেই সময়ে একটা বাজখাই আওয়াজে প্রায় পরেই যাচ্ছিল পাথর টা হাত থেকে।
- এই যে মানিক, পাথর খানা এই দিকে চালান করো দেখি?
কাশী চেয়ে দেখল সামনে আলো-আঁধারি তে দানবের মতন দাঁড়িয়ে আছে একজন। এ জঙ্গলে দানব, রুদ্রভৈরব ছাড়া কি আর কেউ আছে? পা দুখানা এমন কাঁপতে শুরু করল যে ডান আর বাঁ পায়ের মধ্যে , কে কোন দিকে কাঁপবে সেই নিয়ে বেশ বড় রকমের ঝগড়া ঝাঁটির সম্ভাবনা টের পেল কাশী। ভয়ে ঢোঁক গিলতে গিয়ে বুঝল সামান্য ভিজে ভাব ও অবশিষ্ট নেই গলার ভিতরে। শুধু মাত্র ঢোঁক গেলার মুদ্রা করেই ক্ষান্ত হতে হলো তাকে। ভয়ে কাশীর আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে যাবে যাবে করছে, সেই সময়ে মহেশের গলা পেল কাশী,
- কাকা ও জিনিস তুমি ফেলে দাও, ফেলে দাও কাকা।
- না আ আ আ
একী ? এ কি করছে কাশী? কাশী নিজেও ভয়ানক রকম দ্বন্দে। না বলে দিলো ওমন এক খানা ডাকাতের মুখের ওপরে ?
- কী তোর এতো বড় আস্পদ্দা? তুই জানিস ভৈরবের লাঠি যখন যাকে খোঁজে , তার মাথার ঘিলু না নিয়ে ফেরে না?
কথাটা বলেই একবার বনবন করে ঘুরিয়ে নিল লাঠি খানা। বাপরে! চড়কীর মতন সেই লাঠি হাওয়া কেটে কাশীর মাথার চুল খানিক উড়িয়ে দিলো।
“এমনি সময়েই পা দুখানা এমন ভাবে বিশ্বেসঘাতকতা করলি বাপ?” কথাটা ভেবেই কাশী বলতে যাচ্ছিল ভৈরব কে যে,
- হ্যাঁ এই যে দি। নিন পাথর খানা। এতো আপনার ই কত্তা। মিছিমিছি অমন সাজানো গোছানো লাঠি খানা কে কস্ট দেওয়া ক্যানে?
কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল
- সে আমি না। মানে লাঠি যাকে সন্ধান করছে সে আমি না। অমন লাঠি আমি ঢের দেখেছি ভৈরব। এখান থেকে চলে যাও। সুস্থ জীবন যাপন করার চেস্টা কর। অনেক পাপ অনেক অন্যায় করেছ তুমি।
কাশীর কথায় কাশীর থেকেও বেশী অবাক গেল মহেশ। মিনমিনে গলায় কোন রকমে বলতে পারল
- ও কাকা এ কী বলতেচ তুমি। তোমার মাথা খানা কি একেবারে ঘোর লেগে গেল? ফেলে দাও ও জিনিস ফেলে দাও কাকা গো।
বাস্তবিক কাশীর ও ইচ্ছে করছিল ফেলেই দেবে পাথর টা হাত থেকে, কিন্তু কিছু আগেই যেমন , মন কেমন কেমন কেমন করছিল, এখন আবার কেমন একটা অন্য রকম করছে কাশীর। মনে হচ্ছে সে বেশ একজন সাহসী মানুষ। মনের মধ্যে সততা, বীরত্ব ইত্যাদি , ভালো ভালো ব্যাপার গুলো বেশ গিজগিজ করতে শুরু করেছে। পাথর টা ফেলে দেবার ইচ্ছে খানা সমূলে যেন মরেই যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কি আশ্চর্য, এই ফেলে দেবার ইচ্ছে না মরে যাবার আগেই তো , পাথর খানা ফেলে দেবার কাজ টা সেরে নিলে ভাল হতো!
আজব কেলো ! কাশী যত বার ভাবছে পাথর টা ফেলে দিয়ে চম্পট দেবে ততবার ই মনে হচ্ছে , নাহ এটা অন্যের পাথর , কেন দেব? এ কী হচ্ছে রে বাবা। ভয়ে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছহে করছে, কিন্তু কিছু যেন একটা হয়ে গিয়ে মুখ দিয়ে হুংকার বেড়িয়ে আসছে। বিশ্বাস করুন ভেউ ভেউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, চোখের জলে বান ডাকাতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মনের ভিতরে কর্ণার্জুন যুদ্ধ চলছে। কর্ণ বরুনাস্ত্র মারে চোখে বান ডাকাবে বলে, তো অর্জুন বায়বাস্ত্র মেরে সব মেঘ উড়িয়ে দেয়। কর্ণ রোদোনাস্ত্র মারে ভেউ ভেউ করে কাঁদাবে বলে তো অর্জুন হুংকারাস্ত্র ছোঁড়ে , হুঙ্কার দেওয়াবে বলে। ইল্লীর শেষ সীমা অতিক্রম করে, কাশী শেষমেষ হুঙ্কার ছাড়ল বটে একখানা।
- না দেব না। যা পারে করুক।
কাশীর হুংকারে ভৈরব কেমন ভড়কী খেয়ে গেল। গত বিশ বছরে এমনি ভাবে হুংকারে টেক্কা নেবার ক্ষমতাই কেউ ধরেনি তো লাঠিতে টেক্কা নেওয়া অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু লোক টা সত্যি করেই সাহস ধরেছে না কি নাটক করছে বোঝা যায় না যে। দোনামনায় ঠোঁট টা চেটে নিলো একবার ভৈরব। বলদ টার হাতে অমন ভাবে নিজের বহু আকাঙ্ক্ষিত মণি টা দেখে সব দোনামনা দূরে সরিয়ে দিয়ে, নিজের গিটকিরি দেওয়া লাঠি খানা বাগিয়ে এগিয়ে এল সামনের দিকে। ততক্ষনে মঙ্গল চলে এসেছে সেই জায়গায় সরলার ঘাড় ধরে।
- ও অবনী, এবারে কি হবে বাপ, এ যে আমার বংশের শেষ সলতের শেষ টুকু জ্বলছে বাবা। কিছু কর একটা।
হারানের বিলাপ যেন হাহাকার হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। অবনী বিশেষ গা করল না। সে কিন্তু অন্য খেলা দেখে নিয়েছে। যে কাশী এক বছর শোকে উঠতে পারে নি পরিবারের হত্যার পরে, যে কাশী দুঃখ পেলে নিজের গাছগাছালী জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে, যে কাশী ধারের টাকা ফেরত না পেয়ে দীর্ঘস্বাস ফেলা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না সেই কাশী দুম করে ভৈরবের মতন একটা পিশাচের সাথে মুখ লড়াচ্ছে, এটা ভাবতেই কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে অবনীর। নিশ্চয় কিছু ব্যাপার আছে। ওই তো কেমন জ্বলছে ওর চোখ দুটো এই আলো আঁধারি তেও।
এদিকে বিশাল বপু নিয়ে দৌড়ে এসেই নিজের ভয়াল লাঠিগাছা সপাটে চালিয়ে দিল ভৈরব, কাশীর মাথা খানা লক্ষ্য করে। ভয়ে হারান চোখ বুজে ফেলল। কারন ও মরন মার। ওই এক মারেই হারানের প্রাণ টা ও টুপ করে বেড়িয়ে গেছিল। ব্রহ্মতালু টা শিরশিরিয়ে উঠলো হারানের।
- ওহ বাঘের ব্যাটা বটে ।
কথাটা শুনেই চোখ খুলে দেখল, কাশী পাশে সরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভৈরব সামনের দিকে ঝুঁকে পরে যেতে যেতে সামাল দিল।
- আহ খুড়ো দেখলে না তুমি, কি বিদ্যুৎ গতি তে তোমার নাতি মরন কামড় কে ঠেকা দিলো।
- অ্যাঁয় বলিস কি? হায় হায় হায়, ও একবার হয়ে গেছে রে, আবার কি সেই সৌভাগ্য হবে বেঁচে যাবার?
- আহ কেঁদো না , দেক দেক আবার ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতন ছুটে আসছে ভৈরব লাঠি গাছা বাগিয়ে।
বাস্তবিক, আড়াআড়ি ভাবে লাঠি গাছা যে ভাবে চালালো ভৈরব তাতে মাথা টা কানের উপর থেকে ফাঁক হয়ে যাবার কথা। কিন্তু জীবনে ব্যায়াম না করা কাশী, পা দুটো ফাঁক করে নিজের উচ্চতা কমিয়ে নিয়ে মাথা টা ঝুঁকিয়ে , অবলীলায় ওই সহস্র ভোমরার ডাক নিয়ে তেড়ে আসা লাঠির মার কাটিয়ে ফের সোজা হয়ে গেলো। আর ভৈরব ফের ঝুঁকে গেলো। কিন্তু এবারে সে নিজেকে সামলাতে পারলো না বিশেষ। পড়ে গেল , কিন্তু লাঠির উপরে নিজের ভার টা ছড়িয়ে দিয়ে উঠে পড়ল স্প্রীং এর মতন। কিন্তু তার মনে ভয় ঢুকল কি? প্রথমবার এই মহামারন আঘাত কেউ এড়িয়ে গেল। ভৈরবের লাঠি যখন ডাক দিয়ে আঘাত করে , বড় বড় লেঠেল দের ও হাত পা অবশ হয়ে যায়। কিন্তু এ কে? শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না কিন্তু কিন্তু ঠোঁটের কোনে হাসি টা যেন আগে কোথাও সে দেখেছে। বুকের মধ্যে একটা ভয় দুম করে চেপে বসল ভৈরবের।
- আমি বলতেচি কাকা তুমি ওই সব্বনেশে জিনিসে হাত দিও নে কো।
- আরে থাম তো। আর কী হবে আমাদের বলতে পারিস? হয় মরব না হয় ভাল কিচু এক খানা হবেই তুই দ্যাখ।
এই বলে বুকের ভয় খানা মাটিতে ফেলে, হামাগুড়ি দিয়ে কাছে এসে পাথর টা হাতে নিতেই, আলো টা আরো জোর হয়েই হুশ করে কমে গেলো। ডিমিডিমি করে জ্বলতে লাগলো কাশীর হাতে। আগের মতন আলো না থাকলেও, এখন কার আলোটা ও কম না। বেশ খানিক টা জায়গা আলোকিত করে রেখেছে পাথর টা থেকে বেড়িয়ে আসা গোলাপী আলো। তিন চার হাত দূরের জিনিস ও বেশ ভালো মতন নজরে আসছে কাশীর। হাতে একটা শীতল ভাব। মন জুড়ে যেন একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাশীর। “এটা কী? কোন জাদু পাথর নাকি রে বাবা?”। মনে মনে ভাবতে লাগলো কাশী। “ নিচ্চয় জাদু, না হলে হাতে নিতেই, মন খানা এমন কেমন কেমন করে কেনো?”
ঠিক সেই সময়ে একটা বাজখাই আওয়াজে প্রায় পরেই যাচ্ছিল পাথর টা হাত থেকে।
- এই যে মানিক, পাথর খানা এই দিকে চালান করো দেখি?
কাশী চেয়ে দেখল সামনে আলো-আঁধারি তে দানবের মতন দাঁড়িয়ে আছে একজন। এ জঙ্গলে দানব, রুদ্রভৈরব ছাড়া কি আর কেউ আছে? পা দুখানা এমন কাঁপতে শুরু করল যে ডান আর বাঁ পায়ের মধ্যে , কে কোন দিকে কাঁপবে সেই নিয়ে বেশ বড় রকমের ঝগড়া ঝাঁটির সম্ভাবনা টের পেল কাশী। ভয়ে ঢোঁক গিলতে গিয়ে বুঝল সামান্য ভিজে ভাব ও অবশিষ্ট নেই গলার ভিতরে। শুধু মাত্র ঢোঁক গেলার মুদ্রা করেই ক্ষান্ত হতে হলো তাকে। ভয়ে কাশীর আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে যাবে যাবে করছে, সেই সময়ে মহেশের গলা পেল কাশী,
- কাকা ও জিনিস তুমি ফেলে দাও, ফেলে দাও কাকা।
- না আ আ আ
একী ? এ কি করছে কাশী? কাশী নিজেও ভয়ানক রকম দ্বন্দে। না বলে দিলো ওমন এক খানা ডাকাতের মুখের ওপরে ?
- কী তোর এতো বড় আস্পদ্দা? তুই জানিস ভৈরবের লাঠি যখন যাকে খোঁজে , তার মাথার ঘিলু না নিয়ে ফেরে না?
কথাটা বলেই একবার বনবন করে ঘুরিয়ে নিল লাঠি খানা। বাপরে! চড়কীর মতন সেই লাঠি হাওয়া কেটে কাশীর মাথার চুল খানিক উড়িয়ে দিলো।
“এমনি সময়েই পা দুখানা এমন ভাবে বিশ্বেসঘাতকতা করলি বাপ?” কথাটা ভেবেই কাশী বলতে যাচ্ছিল ভৈরব কে যে,
- হ্যাঁ এই যে দি। নিন পাথর খানা। এতো আপনার ই কত্তা। মিছিমিছি অমন সাজানো গোছানো লাঠি খানা কে কস্ট দেওয়া ক্যানে?
কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল
- সে আমি না। মানে লাঠি যাকে সন্ধান করছে সে আমি না। অমন লাঠি আমি ঢের দেখেছি ভৈরব। এখান থেকে চলে যাও। সুস্থ জীবন যাপন করার চেস্টা কর। অনেক পাপ অনেক অন্যায় করেছ তুমি।
কাশীর কথায় কাশীর থেকেও বেশী অবাক গেল মহেশ। মিনমিনে গলায় কোন রকমে বলতে পারল
- ও কাকা এ কী বলতেচ তুমি। তোমার মাথা খানা কি একেবারে ঘোর লেগে গেল? ফেলে দাও ও জিনিস ফেলে দাও কাকা গো।
বাস্তবিক কাশীর ও ইচ্ছে করছিল ফেলেই দেবে পাথর টা হাত থেকে, কিন্তু কিছু আগেই যেমন , মন কেমন কেমন কেমন করছিল, এখন আবার কেমন একটা অন্য রকম করছে কাশীর। মনে হচ্ছে সে বেশ একজন সাহসী মানুষ। মনের মধ্যে সততা, বীরত্ব ইত্যাদি , ভালো ভালো ব্যাপার গুলো বেশ গিজগিজ করতে শুরু করেছে। পাথর টা ফেলে দেবার ইচ্ছে খানা সমূলে যেন মরেই যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কি আশ্চর্য, এই ফেলে দেবার ইচ্ছে না মরে যাবার আগেই তো , পাথর খানা ফেলে দেবার কাজ টা সেরে নিলে ভাল হতো!
আজব কেলো ! কাশী যত বার ভাবছে পাথর টা ফেলে দিয়ে চম্পট দেবে ততবার ই মনে হচ্ছে , নাহ এটা অন্যের পাথর , কেন দেব? এ কী হচ্ছে রে বাবা। ভয়ে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছহে করছে, কিন্তু কিছু যেন একটা হয়ে গিয়ে মুখ দিয়ে হুংকার বেড়িয়ে আসছে। বিশ্বাস করুন ভেউ ভেউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, চোখের জলে বান ডাকাতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মনের ভিতরে কর্ণার্জুন যুদ্ধ চলছে। কর্ণ বরুনাস্ত্র মারে চোখে বান ডাকাবে বলে, তো অর্জুন বায়বাস্ত্র মেরে সব মেঘ উড়িয়ে দেয়। কর্ণ রোদোনাস্ত্র মারে ভেউ ভেউ করে কাঁদাবে বলে তো অর্জুন হুংকারাস্ত্র ছোঁড়ে , হুঙ্কার দেওয়াবে বলে। ইল্লীর শেষ সীমা অতিক্রম করে, কাশী শেষমেষ হুঙ্কার ছাড়ল বটে একখানা।
- না দেব না। যা পারে করুক।
কাশীর হুংকারে ভৈরব কেমন ভড়কী খেয়ে গেল। গত বিশ বছরে এমনি ভাবে হুংকারে টেক্কা নেবার ক্ষমতাই কেউ ধরেনি তো লাঠিতে টেক্কা নেওয়া অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু লোক টা সত্যি করেই সাহস ধরেছে না কি নাটক করছে বোঝা যায় না যে। দোনামনায় ঠোঁট টা চেটে নিলো একবার ভৈরব। বলদ টার হাতে অমন ভাবে নিজের বহু আকাঙ্ক্ষিত মণি টা দেখে সব দোনামনা দূরে সরিয়ে দিয়ে, নিজের গিটকিরি দেওয়া লাঠি খানা বাগিয়ে এগিয়ে এল সামনের দিকে। ততক্ষনে মঙ্গল চলে এসেছে সেই জায়গায় সরলার ঘাড় ধরে।
- ও অবনী, এবারে কি হবে বাপ, এ যে আমার বংশের শেষ সলতের শেষ টুকু জ্বলছে বাবা। কিছু কর একটা।
হারানের বিলাপ যেন হাহাকার হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। অবনী বিশেষ গা করল না। সে কিন্তু অন্য খেলা দেখে নিয়েছে। যে কাশী এক বছর শোকে উঠতে পারে নি পরিবারের হত্যার পরে, যে কাশী দুঃখ পেলে নিজের গাছগাছালী জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে, যে কাশী ধারের টাকা ফেরত না পেয়ে দীর্ঘস্বাস ফেলা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না সেই কাশী দুম করে ভৈরবের মতন একটা পিশাচের সাথে মুখ লড়াচ্ছে, এটা ভাবতেই কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে অবনীর। নিশ্চয় কিছু ব্যাপার আছে। ওই তো কেমন জ্বলছে ওর চোখ দুটো এই আলো আঁধারি তেও।
এদিকে বিশাল বপু নিয়ে দৌড়ে এসেই নিজের ভয়াল লাঠিগাছা সপাটে চালিয়ে দিল ভৈরব, কাশীর মাথা খানা লক্ষ্য করে। ভয়ে হারান চোখ বুজে ফেলল। কারন ও মরন মার। ওই এক মারেই হারানের প্রাণ টা ও টুপ করে বেড়িয়ে গেছিল। ব্রহ্মতালু টা শিরশিরিয়ে উঠলো হারানের।
- ওহ বাঘের ব্যাটা বটে ।
কথাটা শুনেই চোখ খুলে দেখল, কাশী পাশে সরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভৈরব সামনের দিকে ঝুঁকে পরে যেতে যেতে সামাল দিল।
- আহ খুড়ো দেখলে না তুমি, কি বিদ্যুৎ গতি তে তোমার নাতি মরন কামড় কে ঠেকা দিলো।
- অ্যাঁয় বলিস কি? হায় হায় হায়, ও একবার হয়ে গেছে রে, আবার কি সেই সৌভাগ্য হবে বেঁচে যাবার?
- আহ কেঁদো না , দেক দেক আবার ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতন ছুটে আসছে ভৈরব লাঠি গাছা বাগিয়ে।
বাস্তবিক, আড়াআড়ি ভাবে লাঠি গাছা যে ভাবে চালালো ভৈরব তাতে মাথা টা কানের উপর থেকে ফাঁক হয়ে যাবার কথা। কিন্তু জীবনে ব্যায়াম না করা কাশী, পা দুটো ফাঁক করে নিজের উচ্চতা কমিয়ে নিয়ে মাথা টা ঝুঁকিয়ে , অবলীলায় ওই সহস্র ভোমরার ডাক নিয়ে তেড়ে আসা লাঠির মার কাটিয়ে ফের সোজা হয়ে গেলো। আর ভৈরব ফের ঝুঁকে গেলো। কিন্তু এবারে সে নিজেকে সামলাতে পারলো না বিশেষ। পড়ে গেল , কিন্তু লাঠির উপরে নিজের ভার টা ছড়িয়ে দিয়ে উঠে পড়ল স্প্রীং এর মতন। কিন্তু তার মনে ভয় ঢুকল কি? প্রথমবার এই মহামারন আঘাত কেউ এড়িয়ে গেল। ভৈরবের লাঠি যখন ডাক দিয়ে আঘাত করে , বড় বড় লেঠেল দের ও হাত পা অবশ হয়ে যায়। কিন্তু এ কে? শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না কিন্তু কিন্তু ঠোঁটের কোনে হাসি টা যেন আগে কোথাও সে দেখেছে। বুকের মধ্যে একটা ভয় দুম করে চেপে বসল ভৈরবের।