Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
HORROR ভৌতিক সংকলন ২- গোলাপী মনি - সংগৃহীত- লেখনী - অনাহুত- সম্পূর্ণ
#19
এই হেন ভৈরব খবর পেয়েছে, এই জঙ্গলে, এই বিশেষ দিনে একটি আংটির মধ্যে খচিত মনি উদ্ভুত হয়। সেটি অসীম শক্তি বহন করে। সেটি তার চাই। গত কয়েক দিন ধরেই থানা গেড়েছে সে এই জঙ্গলে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও কোন জায়গার সন্ধান করতে পারে নি সে। বছর দশেক আগে এক বৃদ্ধ সাধু কে লুঠ করে হত্যা করেছিল সে এই জঙ্গলেই সেই মনির আশায়। কিন্তু সেদিন সে সেই মনি পায় নি। গত দশ বছর ধরে এই জঙ্গলে এই বিশেষ সময়ে সে আসে কিন্তু প্রতিবারেই অসফলতা তার সঙ্গী হয়েছে। কিন্তু এবারে বড়ই মরিয়া সে। হয় এসপার না হলে উসপার। হাতের লাঠি টা ডান হাতে বাগিয়ে ধরে মুখ খান নামিয়ে বসেছিল সে। সেই সময়ে মশালের আলোয় চেয়ে দেখল, একটা যুবতী কে ধরে নিয়ে আসছে মঙ্গল।

- এই উজবুক এটা কাকে নিয়ে এলি?
- আজ্ঞে সর্দার, এই মেয়েছেলে টা কে পেলাম , পুরোন শিব মন্দিরের চারিদিকে সাইকেল নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মেয়েটাকে ভুলোয় পেয়েছিলো।
 
এদিকে সরলা বেশ খানিকটা ভেবলে গেছে। সামনেই কালান্তক যম কে দেখে কার বা মাথার ঠিক থাকে? নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেস্টা করেই চলেছে আর সাথে কান্না কাটি চলছে অবিশ্রান্ত। ভৈরবের মনে হচ্ছে লাঠির এক ঘায়ে ওই মেয়েটার মুড়ো টা ফটাশ করে ফাটিয়ে দিতে।এত্তো কাঁদে মেয়ে গুনো
 
ঠিক সেই সময়ে, মাইল টাক দূরে এক খানা তীব্র আলোর স্তম্ভ সহসা আবির্ভুত হয়ে ফের মিলিয়ে গেল। বাপরে, কেমন নীল সাদায় মেশানো আলো টা আকাশ ফুঁড়ে চলে গেল কোন অজানা শূন্যে। সব কিছু থেথাম করে দিয়ে ভুস করে নিভেও গেলো আলো টা। আর সাথে শুরু হলো অঝোরে বৃস্টি। যেন আলোর অপেক্ষাতেই ছিল মেঘ গুলো। সিগন্যাল পেয়েই ব্যস শুরু। আর সে কী বৃষ্টি। এত বড় বড় ফোঁটা। সোজা এসে বিঁধছে গায়ে।
 
শিব মন্দিরের লাগোয়া মশাল টা জলের ছাঁটে নিভে গেল ফস করে। মন্দিরের গর্ভ গৃহে জ্বলছে শুধু মাত্র একখান মশাল। মুষল্ধারে বৃষ্টির মাঝে মহাশিবের জায়গা খানা কেমন একটা রহস্যময় লাগছে। গোল লেগে গেলো ভৈরবের মাথায়। হুংকার দিয়ে হাক পারলো সে,
 
- লিয়ে আয় ওই বেটি কে। এই লাঠির ঘায়ে চুর্ণ করে দি মাথা খানা। আহা, রক্ত ! রক্ত!! ইশ কত দিন দেকিনি আমি। আহা সব ধুয়ে যাবে গো জলে! তা যাক। ধুয়েই যাক। তাও লিয়ে আয় , লিয়ে আয়।
 
 
 
ভৈরবের মুহুর্মুহু হুঙ্কারে জঙ্গলে যেন গোল লেগে গেল। বৃস্টি ভেদ করে সেই হুংকার যেন ছড়িয়ে পড়ল জঙ্গলময়। কোন অজানা ভয়ে কাল বৈশাখীর দামাল পনা থেমে গেলো। না জানি কীসের দুঃখে বৃস্টির জোর গেলো বেড়ে।
- কাকা নেমো নি বলচি আমি তোমাকে। কাকা গো আমার কতা শোন একবাট্টি। হেই কাকা গো !
- থাম দিনি তুই। দেকচিস নে আমার কেতো গনা ভয় পেয়েচে! আহা কেতো গনা আমি আজকে মেরিচি। পাচিত্তির করতে হবে নে কো? থাম। চেঁচাস নে। ওরে আমার সব সহ্য হয়, আমার গরু আর গাছ গুলোর কস্ট সইতে পারিনা বুজলি?
 
নিজের ভয় কে উপেক্ষা করেও গরু দুটোর জন্যে নেমে এলো গরুর গাড়ী থেকে কাশী। ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক চাইতে লাগলো। এতক্ষনে অন্ধকারে চোখ সয়ে এসেছে কাশীর। গুমোট অন্ধকারে জমিতে চোখ রেখে, ভীষণ ভয়ে, ভয়ের কারন খুঁজতে লাগলো কাশী। দেখাদেখি মহেশ নেবে এসেছে। কি খুঁজছে কেউ জানে না তবুও মাথা নীচু করে মাটি পানে চেয়ে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে জাচ্ছে দুজনেই। ঠিক সেই সময়ে , কাশীর থেকে এক হাত দুরেই, একটা তেজালো আলোর স্তম্ভ ভুস করে মাটি ফুঁড়ে গাছ গাছালি ভেদ করে উপরে উঠে গেল। আর পরক্ষণেই ফুস করে নিভে গেলো।
-বাপ
 
একটা অশুভ রকমেরবাপশব্দ করে কাশী ভয়ে ময়ে ঘুরতে গিয়ে, পিছনেই থাকা মহেশের সাথে ধাক্কা লেগে দড়াম করে পরে গেল মাটিতে। সাথে সাথেই আলোটা নিভে গিয়ে , বেয়ারা রকমের বৃষ্টি শুরু হল। সে কী তোড়! মনে হচ্ছিল উপরে গাছের ডালপালা ভেদ করে ধনুকের ছিলা থেকে বেড়িয়ে আসা তির। কোন রকমে উঠে কাশী আর মহেশ সোজা আশ্রয় নিলো গরুর গাড়ীর তলায়।
 
- কী বিস্টি রে বাবা, মাথা খানা ফুটো করে দেবে রে ময়েশ!
 
নিজেদের গুটিয়ে পাটিয়ে থিতু হয়ে বসার জন্য যেই না ঘুরেছে, দেখল ঘন বৃষ্টির মধ্যেই ঝাপসা গোলাপী আলোর একটা আভাস।হ্যাচোর প্যাঁচর করে হাত খানেক কাছে যেতেই কাশী টের পেল বেশ বড় একটা হাঁসের ডিমের আকারের কিছু একটা রয়েছে, যেটার থেকে ওমনি মোহময়ী, মাথা ঝিমঝিমানি একটা মিস্টি আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।
 
 
 
- তা হ্যাঁ রে বামুনের পো , পুঁটি টা কোথায় ঠাওর করতে পারলি বাপ?
আলোর ধাক্কায় , যেমন সুনামী তে বড় বড় পাথর জলের মধ্যেই ভেসে চলে যায় বহুদূরে, ঠিক তেমনি হারান , অবনী আর পুঁটি উড়ে গেছিল কয়েক যোজন দূরে। হারান বহু পুরোনো এই তল্লাটের। তারপরে যৌবন কালে বক্সিং লড়েছে সাহেব সুবো দের সাথে। তাকে কায়দা করা বড় সহজ কাজ না। ধাক্কার শুরুতেই নিউটনের প্রথম গতিসুত্র ভাল মতন মেনে চলতে বাধ্য হয়েছিল হারান। কিন্তু কিছু দূর ভেসে যাবার পরেই সম্বিত ফিরে পেয়ে ফের উল্টো স্রোতে নিজেকে নিয়ে এসে হাতিমারার কাছাকাছি চলে এসেছে বটে। কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেল ঝড় তুলে অবনী আসছে। অবনী কে দেখেই প্রশ্ন টা করল হারান।
- হুম,দশ যোজন দূরের দুন্দুভির জঙ্গলের সব থেকে বড় বট গাছের মগডালে কাটা ঘুড়ির মতন এটকে ছিল সে। জ্ঞান হারিয়েছিল। তুলে দিয়ে এসেচি খুড়ো। খুব ঘেবড়ে গেচে। আসচে আস্তে আস্তে।
 
- এহ এট্টুকুও জোর নেই গা?
 
হারানের কথার প্রতিবাদ করল অবনী।
- বড় সোজা জিনিস ছিল না খুড়ো। বাপের জম্মে এমন তেজ দেকিনি বাপু।
- ঠিক বলেচিস রে বাপ, মনে হলো পুনর্জম্ম হলো রে। কিন্তু দ্যাখ কিসের আলো বলত?
- তাই তো! চল তো দেকি।
 
এদিকে মরনাপন্ন সরলা পরিত্রাহী চিৎকার করছিল আসন্ন মৃত্যুভয়ে। রুদ্রভৈরবের পিতলের গিটকিরি দেওয়া মোটা লাঠির ভয় কার না আছে? কিন্তু মরন এমন জিনিস, পরিকল্পিত না থাকলে আসার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। যে মুহুর্মুহু হুংকার ভৈরব করছিল সহসা থেমে গেল যেন। সরলা জলে ভরা আয়ত নয়ন দুখানি তুলে দেখল, সবাই ভেবলে গিয়ে তাকিয়ে আছে উল্টো দিকে। ঘাড় ঘুরিয়েই দেখে, একটা মিষ্টি গোলাপী আলো, জঙ্গলের আঁধার আর বৃষ্টির মোটা মোটা ফোঁটা গুলো কে ভেদ করে যেন বেড়িয়ে আস্তে চাইছে। যেন ছোট্ট মিস্টি একখানা সুজ্জি জঙ্গলের কোথাও একটা লুকিয়ে আছে। বিরাট বিরাট গাছের ডালপালা আর পাতার ফাঁক দিয়ে আলো টা চারিদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গোলাপী আলো আর বৃষ্টির তোড়ে নড়তে থাকা পাতার বড় বড় দোদুল্যমান ছায়া যেন জঙ্গল টা রহস্যজনক করে তুলল পুর জঙ্গল টাই যেন ভয়ানক ভড়কি খেয়ে গেছে।
 
সহসা বৃষ্টি থেমে গেল। এমন ভাবেই থামল যেন হচ্ছিলই না। জঙ্গলের মাটিতে জল আর টুপুরটাপুর করে পাতা থেকে পাতায় পরা জলের শব্দ না হলে বোঝাই যেত না যে গত কয়েক লহমায় পুরো এক ঘন্টার বৃস্টি হয়ে গিয়েছে। এতো নতুন নতুন ব্যাপার হচ্ছে যে ভৈরব এর গোল লেগে যাচ্ছিল মাথায়। কিন্তু গোল লাগলেও সে নেশায় ডাকাত। বিশাল মুখের সাথে অসামঞ্জস্যময় কুতকুতে ছোট চোখ দুটো কে আরো ছোট করে গলা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
- মঙ্গল কীসের আলো রে?
- সর্দার মণি টার আলো নয় তো?
- বলিস কি? আহা, বলিস কি? যদি ওটা মণি হয়, মঙ্গল তুই হবি পরের সর্দার। আর আমি মণি নিয়ে তপস্যায় যাবো হিমালয়। হে শিব, মহাশিব, দাও দাও ঠাকুর আজকে আমাকে আমার ইচ্ছে পুরন করে দাও। আহা বলিস কি, বলিস কি?
 
কথা শেষ হতে না হতেই মঙ্গল হাতের লাঠি খানা বাগিয়ে ধরে, এক লাফে সরলা কে ডিঙ্গিয়ে সটান দৌড় দিল আলো যেদিক থেকে আসছিল সেই দিকে। আর লহমায় অদৃশ্য হয়ে গেল নিজের হাতের তালুর মতন চেনা জঙ্গলে ভিতরে। মঙ্গল দেরী করল না আর। সরলার চুল ধরে তাকে সর্দারের পিছন পিছন টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক সংকলন ২- গোলাপী মনি - সংগৃহীত- লেখনী - অনাহুত - by nandanadasnandana - 08-03-2022, 11:59 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)