Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
HORROR ভৌতিক সংকলন ২- গোলাপী মনি - সংগৃহীত- লেখনী - অনাহুত- সম্পূর্ণ
#18
ঠিক হাতিমারার জঙ্গলের সামনে এসেই মহেশের মন টা কু গাইল যেন। সামনে চেয়ে দেখে জঙ্গলের মহাবৃক্ষ গুলো নিজেদের মাথা দুলিয়ে যেন না না করছে। যেন বলতে চাইছে তফাত যা , তফাত যা। সে বলে উঠলো কাশী কে।

- না গো কাকা আর যাওয়া ঠিক হবেনে।
- ক্যানে রে?
- দেখতেচ না, হাতিমারার জঙ্গলের নম্বা নম্বা গাচ গুনো কেমন , ক্ষেপার মতন মাতা দুলিয়েআসবিনে আসবিনেকরতেচে?
- কালবোশেখীর নেত্য বাড়বে ময়েশ, চল এই বেলা আমরা গরু ছোটাই।আমরা তো জঙ্গলের ভেতরে ঢুকবো নে কো, পাশ কাটিয়ে বেইরে যাব।
- তাও বলচি , জঙ্গল টা ভালো না কাকা, বলি কি চল এই সামনেই পরান তাঁতির বাড়ি, আমরা ওকেনে থাকি আজ রাত টা।
- তুই কি পাগল হলি? জানিস বাড়িতে আমার সারু, কমলা, ফুলটুসি রা আচে। আমি না গেলে ওরা খাবেই না। আমাকে যেতেই হবে রে।
- হে হে কাকা , তোমারে কবে থেকে কইচি, এবারে একখান কাকীর দরকার। কাকী থাকলে এতোক্কনে তোমার সারু কমলা ফুলটুসি দুটি জাবনা পেত।
- ফুঃ, পাকা পাকা কতা বলিস না দিকি। জানিস বে করার কত্ত ঝামেলা?
- হে হে কি করে জানবো? আমি কি বে করেচি নাকি?
- তবে মুখ টা বন্দ কর তুই, সামনেই জঙ্গল।
- আচ্চা কাকা, আমি শুনেচি তোমার বে হয়েছেল, তোমার বাবা কামরাঙ্গা ইস্কুলে মাস্টার ছেল। তোমার এক খানা ছেলেও ছিল।
- হুম ঠিক শুনেচিস তুই। এমনি এক রাতে সব কেড়ে নেয় ঠাকুর আমার কাচ থেকে।
- কি হয়েচেল?
- রুদ্র ভৈরবের নাম শুনেচিস?
- নাহ
- রুদ্র ভৈরব এই তালুকের সব চে নৃশংস ডাকাত। সেই রাতে আমি ছিলুম না। গেসলুম আমার শউরবাড়িতে। পুজোর তত্ত্ব দিতে। এসে দেকি, যা ছেল সব নিয়ে গেচে আর কাউরে বাঁচিয়ে রাকে নি কো। সে ডাকাত বড় ভয়ানক রে। শুনেচি কতায় কতায় মাতা গুঁড়ো করে। বাচ্চা টা কেও আমার ছাড়লেনে কো সে।
বলে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলো কাশী। অমন জোয়ানের বেমক্কা কান্নায়, মহেশ ব্যোমকে গেল একটু। একটা খটাশ কালবোশেখের ভয়ে গুটিয়ে ছিল ঝোপে পাশেই। বাজখাই কান্নায় ভড়কে গিয়ে হুড়ুৎ করে রাস্তা কেটে পালালো উল্টো দিকে। আশে পাশের গাছ গাছালী তে বাসা বেঁধে থাকা পাখী গুলো মরার উপরে খাঁড়ার ঘা খেয়ে সমবেত স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। আর কালবোশেখী তান্ডব শুরু হলো বটে এবার।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
ওরে চুপ কর হতভাগার দল, একদম আওয়াজ করিসনে জঙ্গলে ঢোকার মুখেই একটা বিশাল বট গাছের একেবারে মগডালে বসে থাকা হারান ককিয়ে উঠলো একেবারে।
আর বলেই বা কি হবে? শুনতে পেলে তো?”
- ক্যা র্যাা?
পিছনে মুখ ঘুরিয়ে হারান দেখল, পুঁটি ভাসতে ভাসতে এসে এক মগডালে এসে বসলো। হারান আবার প্রায় ককিয়ে উঠল।
- আহা করিস কি? ডাল খানা ভেঙ্গে যাবে যে
- আর হারান দা, আমরা কি আর মনিষ্যি আচি গো, যে আমাদের ভারে গাচ ভাঙবে? এই তো সুক্ষ্ম শরীল খান। আজকে জমবে ভাল বুজলে দাদা!
- ক্যানে?
- যে আসতেচে, যেই একানে আসবে, পুটুস করে ডাল খানা ভেঙ্গে পড়লেই কেল্লা ফতে।
- চুপ কর!
দাবড়ে উঠলো হারান।
- কে জানিস?
- কে শুনি?
- আমার নাতি, বংশের শেষ সলতে।
পুঁটি কেমন ঘাবড়ে গেলো নাতির কথা শুনে। কিন্তু ঝড় জলে জঙ্গলে সেদুলে বিপদ তো ওঁত পেতেই থাকবে নাকি। সেই কথাটা ইনিয়ে বিনিয়ে হারান কে বলতেই হারান বলে উঠলো।
- সেটাই তো চিন্তার রে পুঁটি।
- ক্যানে? চিন্তার কি আছে? এমনি তো কতই হয়েচে। কেউ বাজ পরে অক্কা পেল, কেউ বা খুন হলো, কারোর ঘাড়ে মোটা ডাল ভেঙ্গে পড়ল। সে তোমার নাতি বলে তুমি বলছ, না হলে আমাদের তো মজাই বল দাদা?
- হ্যাঁ এবারে যেটা বলব তোকে, মজা টা সোজা বুকে লাগবে, অবিশ্যি যদি তোর হিদয় বলে কিচু থাকে তবেই।
- ক্যানে, কি এমন বলবে ?
- তোর দাদার বেটী কে দেকলুম, জঙ্গলের রাস্তায় পথ হারিয়েচে। ইস্কুলে পড়ায় না?
- হ্যাঁ
পুঁটির গলায় ভয়ানক উদ্বেগের সুরের মাঝে হারান বলেই চলে
- ইশকুল থেকে ফেরার পথে, জঙ্গলে ঢুকেই কালবোশেখের গুঁতোয় পথ হাইরে, ভৈরবের ঠাই এর দিকে যেছে।
 
শশব্যস্ত হয়ে উঠলো পুঁটি। চোখ গুলো হয়ত বড় বড় করেছিল, কিন্তু সে দুখানার বদলে মুণ্ডু খানাই লকপক করতে করতে বিলাপ বাঁধিয়ে দিল।
- হেই হারান দা, আমার মা মরা বেটি টা। কিচু কর দাদা।
- এহ চুপ কর দেকি। ভাবতে দে। এদিকে আমার নাতিটাও তো জঙ্গলে সেঁদুলো।
- কই কই দুটোর মদ্যে কোন টে তোমার নাতি?
- ওই তো , যে গরু গাড়ি টা চালায় সেই।
- উঃ, এমন বলচ যেন উড়োজাহাজ চালাচ্ছে।
- , তালে যা নিজেই কিচু কোরগে যা। ভৈরব মহাশিবের থানে ঠাই নিয়েচে। না আমি না তুই, কেউ ওকানে যেতে পারব না।
- দাদাগো কি হবে গো, আমার মা মরা বেটি টা গোও
- এহ চুপ করতো, আর নাকি কান্না কাঁদিস নে। চল এখনি।
- কোতায়?
- অবনী ঘোষালের কাছে
- এহ, সে তো বামুন গো
- আহ বামুন ,তাতে কি হয়েচে। ভুত তো বটে নাকি!!!! দেকি।
 
এই বলে দুজনায় মগডাল ছেড়ে হাওয়ায় ভেসে পাড়ি দিল আরো গভীর জঙ্গলের দিকে। এদিকে পুঁটি বলেই চলে,
- না মানে বামুন ভুত গুনো সুবিদের হয় না বুজলে?
- ক্যানে?
- না মানে ওই ঘোষাল টা কেমন একটা করে আমার দিকে তাকায় জান দাদা?
- চুপ কর। পেত্নী কে আবার কেমন করে তাকায়? এখন শিরে সংক্রান্তি, আর তোর এই নাকি কান্না, যত্ত সব। অনেক কাজ আচে। ছেলেটাকে আর মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে আজকে। তবে আমার ভুত, আজকে শান্তি পাবে।
 
 
 
- কাকা কী হলো বলত? বাইরে ঝড়ের দাপাদাপি আর ভেতরে এত্ত শান্তি ক্যানে? এক খান পাতাও তো নড়চে না কাকা।
- তাইতো রে! বাইরে দেকলুম, হালকা আলো আচে। কিন্তু ভেতরে তো নিজ্জস আঁধার রে ময়েশ! আর কি গরম। এতো গরম!! তাও জঙ্গলের মদ্যে? আগুন লাগলো নাকি রে?
- কাকা তুমি মনে হচ্চে ঘেবড়ে গেচ বুজলে? আগুন লাগলে দেকতে পাবো নে কো?
- হ্যাঁ তাইত ! আহ কেতো গনা আবার ডারালো ক্যানে? হেই চল বাপ। হেই হেই।
 
শত লেজ মুচড়ে , সন্তান তুল্য বলদ দুটো কে হাতের পাঁচনের দু বাড়ি দিয়েও যখন কাজ হলো না, তখন মহেশ বলে উঠল,
- কাকা ওরা ভয় পেয়েছে দেখতেচ নে? সামনে আগাতে ভয় পেয়েচে ওরা।
- সে কী রে? সাপ খোপ দেকলো নাকি?
 
এই বলে হাতের পাঁচন খানা বাগিয়ে নামতে যেতেই , মহেশ হাত ধরে বলল
- কাকা নেমো নে। গতিক ভালো না। সাপ নয়, অন্য কিচু।
- অন্য কিচু? বলিস কি রে? ওরে আমার কাচে নয় নয় করেও হাজার পঞ্চাশ আচে যে রে!
- ওহ কাকা চুপ কর চুপ কর। কি যে কর তুমি? ওসব বলার দরকার নেই। সে ডাকাত আসলে পরে কাকা ভাইপো তে যা করার করবো। তোমারে ছেড়ে তো পালাবো নি। কিন্তু ভয় টা ডাকাতের নয় কো। দেখতেচ না , কেমন থম মেরে আচে চারিদিক? এক খানা ফেউ ডাকতেছে না। তেনাদের ব্যাপার।
 
 
 
- এহ দাদা তোমার ভাইপো তো উঁচু দরের ভীতু গো।
 
পুটীর কথার ঠেস টা গায়ে মাখল না হারান। মুশকিল টা হলো এতক্ষণ দিব্যি দেখতে পাচ্ছিল গাড়ি সমেত দুটো ছেলেকে, ফস করে কোথায় যে হারিয়ে গেল কে জানে? ভারী চিন্তা হচ্ছে এবারে। বংশের অবশিষ্টাংশ বলে কতা।
- দাদা ওরা গেলো কোতায়?
- হুম , সেটাই তো ভাবচি রে। ঘোষাল টা তো এখনো এলো না। তোর দাদার বেটির খবর পেলি?
- হ্যাঁ দেকে এলুম তো। পুরনো মন্দিরের চার পাশে সাইকেল নিয়ে বন বন করে ঘুরেই চলেচে। ওর পিচনে, ভুলো টা কে লেলিয়ে দিয়েচি। ভৈরবের থানের উল্টো দিকে ওরে নিয়ে ভুলো খেলা করতেচে।
- বেশ করেচিস। কিন্তু এই ছোড়া দুটো কোতায় গেল বল দেকি?
- চল না একটু এগিয়ে দেকি আমরা।
 
কথা টা শেষ হয় নি , পিছন থেকে আরেক টা গলা বলে উঠলো,
- ওদিকে আর যেতে পারবে না তোমরা।
- তুই এসেচিস অবনী। বল দেকি বাপ , কি হলো
- আজকে কৌশিকি অমাবস্যা, ভুললে নাকি খুড়ো।
- না কিন্তু তাতে কি?
- আজ থেকে দশ বছর আগে এই জঙ্গলে ওই জায়গায় সেই মহা সাধু প্রান ত্যাগ করেছিলেন। আজকে সেই তিথি সেই বার সেই সময়। ওই জায়গা এখন মহা পুণ্য স্থান। তাই আমি তুমি ওই খানে ঢুকতে কোনদিন পারব না।
- তার মানে ওরা কি ওই খানে ঢুকে পরেচে।
- হ্যাঁ। সরলা কে রুদ্র ভৈরব এর চেলা মঙ্গল এই মাত্র ধরে নিয়ে গেল আমি দেখলাম। চেষ্টা করলাম বাঁচাতে কিন্তু রুদ্রর চেলার গায়ে মহাশিবের লকেট দেখে ভয়ে চলে এসেছি।
- দাদাগো কি হবে গো, আমার মা মরা বেটি গো।
- এই চুপ কর তো।
- কাকা এই দিকে কিছুই দেখা যাবে না, আমরা বরং ভৈরবের কাছে যাই, দেখি যদি মেয়েটা কে বাঁচাতে পারি।
 
এক ভয়ানক মানুষ। মানুষ কি? নাহ রাক্ষস বললেও কম বলা হয় ভৈরব কে। মানুষ হত্যা তার নেশা। অন্যেরা অভাবে ডাকাত হয় , আর ভৈরব স্বভাবে ডাকাত হয়েছে। ডাকাতি করে ধনরত্ন লুঠ করা যত না ওর কাছে আনন্দের ছিল, তার থেকেও আনন্দের ছিল, নিজের তেল মাখানো , তামার অঙ্গুরীয় পরানো, গিটকিরি দেওয়া সাত ফুট লাঠির আঘাতে মানুষের খুলি ফাটিয়ে দেওয়া। লাঠির আঘাতে , খুলি ফাটার আওয়াজ না শুনলে ভৈরবের রাতে ঘুম আসত না। শরীরে অসম্ভব শক্তি এই ভৈরবের। পূর্ণ যৌবনের বাঘ কে কাদায় ফেলে গলা টিপে হত্যা করেছিল। বাপ দাদার ডাকাতির ধারা কে কয়েক কদম নৃশংসতায় এগিয়ে নিয়ে গেছে ভৈরব, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক সংকলন ২- গোলাপী মনি - সংগৃহীত- লেখনী - অনাহুত - by nandanadasnandana - 08-03-2022, 11:54 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)