07-03-2022, 05:09 PM
পর্ব ৬
সেই রাতের ঘটনার পর কেটে গেছে আরও তিন তিনটে বছর | সেই প্রথম রুদ্র আর দীপা একে ওপরের কে সম্পূর্ণ নগ্ন রূপে দেখেছিলো আর তারপরই পাল্টে গেছিলো তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক, সেইদিন থেকেই ভেঙে গেছিলো তাদের মধ্যে থাকা সেই দুর্ভেদ্য প্রাচীর আর এরপর থেকে অন্যান্য অনেক ঘটনাই ঘটেছে তাদের মধ্যে। কিন্তু আজকে ওই চেকপোস্টের গুণ্ডাগুলোর দীপার মান ইজ্জতে আবার হাত দেয়ার ধান্দা দেখে রুদ্রর রক্ত রাগে ফুটতে আরম্ভ করলো | রুদ্রর ইচ্ছে করছিলো ওই শালাদের মাথায় বারি মেরে মাথা থেঁতো করে দিতে | তবে সে জানতো যে তার তখনকার একমাত্র করণীয় কাজ শুধুই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার।
সেই রাত্রে ঘটে যাওয়া জিনিসগুলো তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত করলেও তার এফেক্ট এসে পড়েছিল কলকাতা শহরের উপর | কলকাতা শহরে এক রকম বিপর্যয় ছড়িয়ে দিয়েছিল ভোলার মৃত্যু। অন্য গ্যাঙের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়াতে চারিদিকে মার দাঙ্গা গোলা-গুলি শুরু গিয়েছিলো| ভোলা ছিল ওই এরিয়ার কন্ট্রোলার আর ওখানকার সব থেকে শক্তিশালী ব্যক্তি| তার অকস্মাৎ হত্যার পর বাকি গুণ্ডারা নিজস্ব গ্যাং তৈরির সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইনি। কিন্তু শেষমেশ পাণ্ডে-জিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি পেরেছিলেন এই গোটা শহরটাকে তার নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আস্তে| এই পাণ্ডে-জিইে, দীপা আর রুদ্রকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করেছিলেন, হয়তো ভোলাকে মেরে এই পুরো শহরটা তাকে উপহার দেওয়ার খুশিতে | দীপা আর রুদ্রকে নিজের সুরক্ষার অধীনে নিয়ে গিয়েছিলেন পাণ্ডে-জিই | সেই পূর্বের জলাভূমিতে কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পর যখন দুজনে সেই কুঁড়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, তখন পাণ্ডে-জিই তাদের জন্য সেফ প্যাসেজ বানিয়ে দিয়েছিলেন| কলকাতায় ফিরে এসে নিজেদের সম্পূর্ণ নিরাপদ তালাবন্ধ অবস্থায় বাড়ি ফিরে পেয়েছিলো ওরা | শুধু দরজার তালাতে ছিল একটা নোট যাতে বলা ছিল যে সেই তালার চাবি শুধুমাত্র পাণ্ডে-জির কাছ থেকে ফেরত পাওয়া যাবে |
পাণ্ডে-জি খারাপ লোক ছিলেন না, তবুও তার আন্ডারে কাজ করার মাশুল বুনতে হতো সবাইকে, অনেক ভাবে, এই যেমন ব্রিজের ওপরে তার দাম দিচ্ছিল দীপা । পাণ্ডে-জি দীপার উপর খুব বিশ্বাস করতেন আর তাই দীপাকেই সেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ পার্সেল নিয়ে আসার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন, কিন্তু যেভাবে চেকপোস্টের গুণ্ডাগুলো তাকে সার্চ করতে আরম্ভ করলো, ওর মনে হতে লাগলো যেন এই বুঝি ধরা পরে গেল!
দীপা ইতিমধ্যে রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে | তার হাতদুটো মাটিতে, মানে ৪পেয়ে জন্তুরা যেমন করে দাঁড়ায় ঠিক সেই ভাবে| ক্যাভিটি চেকের জন্য ওকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিলো ! রাগে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইলো দীপা, ওই রাস্তায় আর ওই গুণ্ডাদের মধ্যে একজন এসে ওর পাছার ফুটোয় আর যোনিতে তার মোটা আঙ্গুল ঢুকিয়ে এইদিক ঐদিক করে চলল| অসম্ভব ব্যথা লাগলেও চুপ করে রইল দীপা। সৌভাগ্যক্রমে, চেক করেও কিছু খুঁজে পেলো না গুণ্ডাগুলো, কারণ কিছু খুঁজে পাওয়ার থেকেও দীপাকে লাঞ্ছিত করায় বেশি আগ্রহী ছিল ওরা| শেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর, কোনও কিছু মূল্যবান না পেয়ে গুণ্ডাগুলো হাল ছেড়ে দিলো ।
"ঠিক আছে ম্যাডাম, এবার আপনি আপনার পাণ্ডে-জির কাছে যেতে পারেন | ওঃ আর হ্যাঁ, আমাদের এই ফুটোয় আঙ্গুল ভরার কথাটাও নিশ্চয়ই শোনাবেন তাকে, তার ছোট্ট বাঁড়াটা চোষার সময়।" বলে সবাই মিলে একসাথে হেসে উঠলো গুণ্ডাগুলো |
ওদেরকে সেই নোংরা ভাবে হাসতে দেখে দীপার সারা শরীর রগে রিরি করে জ্বলতে লাগলো আর একটা পাল্টা কথা দীপা প্রায় বলেই ফেলত কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলো সে, কারণ সে জানতো যে এদের সঙ্গে কথায় পাড়া যাবে না | দীপা নিজের মাথা নিচু করে কোনও কথা ছাড়াই নিজের সালোয়ার কামিজ পড়লো, তারপর নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ফল আর সবজিগুলোকে নিয়ে একটা ব্যাগের ভেতর পুড়ল| তারপর তাড়াতাড়ি ভাঙ্গা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তের দিকে হাঁটা লাগলো।
পূর্ব প্রান্তের চেকপোস্টটে, অন্যটার চাইতে বেশি সম্মান দেখল দীপা, তার কারণ সেটি পাণ্ডে-জি-র গুণ্ডাদের দ্বারা পরিচালিত | তাদেরকে কেবল পাণ্ডে-জির চিঠিটা দেখাতেই ওরা দীপার যাওয়ার রাস্তা ছেড়ে দিলো। কিছুটা দূর যেতেই, দীপার দেখতে পেলো ব্রিজের একটা ভাঙা গার্ডারের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রুদ্র আর তার সাথে তার সাইকেল| এতক্ষণ পর রুদ্রকে দেখতে পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, রুদ্রর সাইকেলে উঠে নিজের ব্যাগটা কোলে নিয়ে বসল দীপা | তারপর বাড়ির দিকে রওনা দিলো ওরা দুজন ।
দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে পরশু আর কালীপূজা মাত্র পনেরো-দিনে। আজ লক্ষ্মীপূজা কিন্তু দেবী লক্ষ্মী যেন সব ছেড়ে-ছুড়ে চলে গেছেন এই শহর থেকে | না আছে কোন সাজ সাজ রব না আছে হৈচৈ, এই শহরটা এখন তার উজ্জ্বল অতীতের থেকে অনেকটাই আলাদা, যেন অন্ধকারে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি সেটা | যেন সব শহর বাসীরা অপেক্ষা করছে পরের দুর্যোগের জন্য। কারও পক্ষে এই কলকাতা শহরের বাইরে বেরোনো খুবই শক্ত কিন্তু বেরিয়ে আবার ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব।
দীপার এমন কি কাজ ছিল যার জন্য সে অসম্ভব কে সম্ভব করে ফিরে এলো.....?
"মাসি, পাণ্ডে-জি যে পার্সেলটার কথা বলেছিলেন ঐটা নিয়ে এসেছ ?" রুদ্র জিজ্ঞাসা করলো দীপাকে।
"হ্যাঁ."
"তবে কি ওই পার্সেলটা... কি এমন স্পেশালিটি আছে ওই জিনিসটার?"
"অরে খুব স্পেশাল জিনিস ওটা, তোকে না দেখিয়ে শুধু নিজের মুখে বললে তুই বিশ্বাস করবিনা যে এইরকম জিনিস পাওয়া যায় আজকাল"
"ওঃ তো জিনিসটা কি একবার বলেই দেখ না, ঠিক বুঝে যাবো আমি"
"না..বুঝবি না! বললাম তো"
"ঠিক আছে যাও...বলতে হবে না আমাকে কিন্তু একটা ব্যাপার, তুমি ওই পার্সেলটা এমন কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে যার জন্য ওই গুণ্ডাগুলো ওটা খুঁজে পেলো না" ?
"হম্মম্ম তবে... তুই কি তোর দীপাকে বোকা ভাবিস নাকি? আমার অনেক ছল বল কৌশল জানা আছে বৎস," বলে হেসে উঠলো দীপা, তবে রুদ্র খেয়াল করলো তার হাসিটা কেমন যেন একটু রহস্যময় শোনালো| যেন অন্য কিছু বোঝাতে চাইলো তার হাসিটা।
"ঘরে চল..বলছি সব কথা।"