17-03-2022, 11:52 PM
আমি কল লিস্টের দিকে ভালো করে চোখ বোলালাম। দাদাকে বললাম পেনটা দাও তো। দাদা পেনটা এগিয়ে দিলো। আমি বেশ কয়েকটা নম্বর দাগ দিলাম। ফোনটা তুলে নিয়ে সনাতনবাবুকে রিং করলাম দেখলাম নো রেসপন্স হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে পরেছেন।
আমার কথাই ঠিক মিনিট খানেকের মধ্যে সনাতনবাবু দাদার ঘরে ঢুকলেন। বসলেন। আমাকে কাগজগুলো হাতে দিলেন।
-কি ব্যাপার ছোটবাবু অফিসে সবাই কিরকম তটস্থ তটস্থ মনে হচ্ছে।
-কি করে বলবো। আপনি এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আপনি খোঁজখবর নিন।
কাগজগুলো দেখতে দেখতে হিমাংশুকে একটা ফোন লাগালাম।
-কিরে কোথায়।
-অফিসে। একবার আসবি।
-কেনো।
-একটু দরকার আছে।
-একটু কাজ ছিলো।
-থাক। রেখে চলে যায়। মিনিট দশেকের জন্য।
-আচ্ছা।
-সনাতনবাবু আমাদের রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে একটু ডাকুনতো।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা ঠিক বোধোগম্য হচ্ছেনা। রিসেপসনিস্ট এখানে আসবে ব্যাপারটা কি।
-কি হলো হাঁ করে তাকিয়ে আছেন কেনো। ডাকুন।
এইবার নিরঞ্জনদা একটু নড়ে চড়ে বসলো। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।
সনাতনবাবু ফোন করলেন।
দাদাকে বললাম আর এক রাউন্ড চায়ের কথা বলো হরিদাকে।
-কিছু খাবি।
-না।
কিছুক্ষণ পর ভদ্রমহিলা এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেন। সেই ছলবলিয়া ভাবটা এখনো অক্ষুন্ন। আমিও তাকিয়ে একটু হাসলাম।
-বসুন ম্যাডাম।
-উনি বসলেন।
-ম্যাডাম আপনাকে অনেকে বিরক্ত করছে না।
-একবারেই না।
-আপনার কাজ করতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো।
-না স্যার।
স্যার! মুখ তুলে তাকালাম।
-আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন।
-বলুন।
-কললিস্টটা দেখিয়ে বললাম এই নম্বরগুলো কারা চেয়েছিলো আপনাকে একটু জানাতে হবে। আপনি নিচে কন্ট্রোল করছেন।
এইবার ভদ্রমহিলা যেনো আকাশ থেকে পরলেন।
দাদা মনে হয় আমার চালটা এইবার কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছে। মুখ তাই বলছে। নিরঞ্জনদার চোখ যেনো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সনাতনবাবু আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
-ম্যাডাম আমার সময় কম। মুখ নীচু করে বসে থাকলে চলবেনা।
ভদ্রমহিলা কিছুতেই মুখ তুলছেনা। ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে আরম্ভ করলো।
-কাঁদছেন কেনো। আমি কি আপনাকে কোনো ইনসাল্ট করলাম।
ভদ্রমহিলা মাথা নাড়ছেন।
-না।
-তাহলে আপনার আপত্তি কোথায়।
ভদ্রমহিলা রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন।
-কি গো রনিতা অনি যা বলছে তুমি উত্তর দিচ্ছনা কেনো।
-আমি বলতে পারবো না দাদা।
-কেনো।
-ওরা আমার ক্ষতি করে দেবে।
-কে তারা বলবেতো।
-সনাতনবাবু ওনাকে শোকজ করুন। উত্তর দিতে না পারলে স্যাক করুন।
সনাতনবাবুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
-স্যার আমি বলছি।
-বলুন।
উনি পর পর নাম বলে গেলেন। তার মধ্যে চম্পকদা যেমন আছে সনাতনবাবুর নামটাও আছে। নিউজ ডিপার্টমেন্টের একজন আছে। আর্ট ডিপার্টমেন্টের একজন আছে।
আমি পার্টিকুলার একটা নম্বর টিক দিয়ে বললাম
-এই নম্বরটা কে চেয়েছে বলতে পারবেন।
-এটা সনাতনবাবু চেয়েছিলেন।
-আপনার কাছে নোটিং করা আছে।
-আছে।
-আপনি খাতাটা নিয়ে আসুন।
ভদ্রমহিলা বেরিয়ে গেলেন।
দাদা রাগে ফুলছে। আমি কুল। নিরঞ্জনদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। সনাতনবাবু মাথা নীচু করে বসে আছে।
-কি দাদা এখনো শিক্ষা হলো না।
-বিশ্বাস করো ছোটোবাবু, ওই মেয়েটার মতো আমাকেও প্রেসার করা হয়েছে।
-কে করেছে।
-ডঃ ব্যানার্জী।
-কেনো।
-আপনার সঙ্গে ওনার হিসাব বাকি আছে। না হলে।
-একজন মাস্তান গোছের লোক দিয়ে আপনাকে ফোন করিয়েছে।
-হ্যাঁ।
-সবকটাকে এখানে ডাকুন।
সনাতনবাবু সবাইকে ফোন করে করে ডাকলেন।
সবার মুখ কালি। ঘর ভরে গেছে। চম্পকদা মাথা নীচু করে ঘরে ঢুকলো। আমি চুপচাপ বসে আছি। মল্লিকদা নির্বাক।
আমি রতনকে ফোন করলামভয়েজ অন করে। সবাই শুনুক।
-হ্যাঁ, অনিদা আমি তোমার খুব কাছেই আছি।
-জানি তুই থাকবি।
-দাদার হুকুম।
-ডঃ ব্যানার্জীর ওখানে কে আছে।
-লোক আছে তোমায় চিন্তা করতে হবে না।
-কুত্তাটা কোথায় আছে।
-তোলতাই করে নিয়ে এসেছি। গ্যারেজে।
-ঠিক আছে তুই থাক। সময় হলে ফোন করবো।
-আচ্ছা।
দাদার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি এখুনি পারলে এদের আঁচড়ে কামড়ে ছিঁরে দেবে।
ডঃ ব্যানার্জীকে ফোন করলাম।
-আমি জানতাম তুমি ফোন করবে।
-জানতেন!
-অবশ্যই।
-আরে দাদা আপনার বুদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ কথা নাকি। পাকা মাথা বলে কথা। লাইনে কতদিন আছেন।
-যা বলার পরিষ্কার করে বলো।
-এরকম হিজরেদের ফৌজ বানালে চলে।
-কি বলতে চাও।
-এখনো পরিষ্কার হচ্ছেনা। আপনার সৈন্য সামন্তরা আমার সামনে মাথা নীচু করে বসে আছে।
-তুমি জানো আমি কি করতে পারি।
-মহান ব্যক্তি আপনি, আপনার কত ক্ষমতা। অনি সে জায়গায় চুনোপুঁটি।
-বক বক না করে কাজের কথা বলো।
-যার ওপর আপনি নির্ভর করে এই কীর্তি করছেন সেতো গ্যারেজ।
ডঃ ব্যানার্জী হো হো করে হেসে ফেললেন।
-একবার ফোন করে দেখুন নো রেসপন্স পাবেন।
-আমার সামনে বসে আছে।
-ওটা ডেমি। টাকা কামানোর জন্য।
-কি বলছো।
-আপনার সামনে যখন বসে আছে জিজ্ঞাসা করুন।
-কিরে অবতার, কি বলছে অনি।
-উনি ঠিক কথা বলছেন।
-শুয়োরের বাচ্চা।
-খিস্তি করবেন না। মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো এখুনি।
-তার মানে?
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-ডাক্তার সাহেব এইবার ঝেড়ে কাশুন।
-কি বলতে চাও।
-যদি মনে করি, আপনার ডাক্তারখানা থেকে এখুনি তুলে আনবো। কাকপক্ষী টের পাবেনা। চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম।
চুপচাপ।
-কি প্যান্টে পেচ্ছাপ করে ফেলেছেন।
-তুমি কি বলতে চাও।
-আপনার ডাক্তারি সার্টিফিকেটটা জাল। সেটা আজ এইমাত্র লন্ডন থেকে খবর এলো।
-অসম্ভব।
-আগামীকাল কাগজে একটা গুছিয়ে আর্টিক্যাল লিখি। আপনি কোর্টে প্রমাণ করবেন সত্যি না মিথ্যে। এখনতো কয়েকদিন গ্যারেজ হয়ে যান।
-স্কাউন্ড্রেল।
-রাগ করছেন কেনো। এতোবড়ো খেলা খেলতে নেমেছেন। এই সময় রাগ করলে চলে।
-তুমি কি ভাবছো মিত্রা ছাড়া পাবে।
-ওটা নিয়ে আপনি ভাবছেন কেনো। আপনি আপনারটা ভাবুন।
-অনি তুমি আমার এতো বড় ক্ষতি করোনা।
-হঠাৎ গলার স্বরটা বদলে গেলো মনে হচ্ছে।
চুপচাপ।
-আপনার নামে লন্ডনে আর একজন ডাক্তার প্র্যাক্টিশ করছে। তার নাম এবং সার্টিফিকেট ভাঙিয়ে আপনি চালাচ্ছেন।
-অনি বিশ্বাস করো।
-আমার লোক আপনার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পালাবার চেষ্টা করবেন না।
-আমি এখুনি তোমার কাছে যেতে চাই।
-এতো তাড়াহুড়ো করছেন কেনো।
-প্লিজ।
-আপনার বিশ্বস্ত লোকদের কে ধমকেছে।
-অবতার।
-এরা তার নাম জানতো।
-না।
-কতটাকা দিয়েছেন।
-না মানে…..।
-ত ত করবেন না। আপনার অবস্থা মলের মতো করে ছেড়ে দেবো। বাঁচতে চান না মলের মতো হতে চান।
-বাঁচতে চাই।
-বাবা এত কীর্তি করার পরও বাঁচার শখ আছে।
-আছে।
-মিত্রা ছাড়া কটা মেয়ের সর্বনাশ করেছেন।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-এখানে আমার গুরুজনেরা বসে আছে। নাহলে আপনাকে ধুয়ে দিতাম।
-ইস তুমি এ কি করলে।
-লজ্জাশীলা সতী।
চুপচাপ।
-আপনার বিশ্বস্ত অনুচরদের জন্য কি ম্যাসেজ রাখছেন।
-আর কোনোদিন বিরক্ত করবো না।
-করলে কি হবে।
-যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো। প্লিজ তুমি আমায় বাঁচাও।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-বাবা আপনি যে সিংহ শাবক থেকে একেবারে পোষা কুকুর হয়ে গেলেন।
-তুমি যা বলবে।
-আপনার ওই টমিটাকে আমার কথা শোনাচ্ছেন।
-শোনাচ্ছি।
-দ্যাটস গুড। ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার কার নামে আছে।
-কিসের।
-নার্সিং হোমের।
-ওটা লন্ডনে আছে।
-ফাইন্যালি কালকের কাগজে লেখাটা লিখছি।
-আমার কাছে আছে।
-এইতো লক্ষ্মীছেলের মতো কথা।
-তুমি এভাবে বলোনা।
-বাবা, স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটি করবো না। কার নামে আছে।
অমিতাভদা ফিক করে হেসে ফেললো।
-আমার নামে আছে।
-আপনার না আপনার ছেলের নামে।
-আমার নামে।
-আপনার আর আপনার ছেলের নাম এক।
-না। নামটা ওর আছে সইটা আমার।
-বাঃ আপনার গুণে নুন দেওয়ার জায়গা নেই।
-কজন জানে ব্যাপারটা।
-কেউ জানে না।
-মিত্রার কাছ থেকে কটা স্ট্যাম্প পেপারে ব্ল্যাঙ্ক সই করিয়েছেন।
-সব আছে আমার কাছে।
-এইতো গুড বয়ের মতো ব্যবহার করছেন।
-কালকে সকালে দাদার বাড়িতে চলে আসবেন সব নিয়ে। নাহলে বুঝতে পারছেন।
-হ্যাঁ, সব বুঝতে পারছি।
-কাল পর্যন্ত আপনাকে পাহারা দেওয়ার মতো লোক রেখে দিচ্ছি। কাল কাজ মিটে গেলে তারপর আপনি স্বাধীন। কারুর সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন না। তাহলে সব গড়বড় হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে।
-আজ রাতটা ডিসপেনসারিতে কাটান। কাউকে দিয়ে ফাইলপত্র আনিয়ে নিন। বাইরে বেরোলে আপনার জীবন সংশয় হতে পারে। তার দায়িত্ব আমি নেবো না।
-তুমি যা বলবে, করবো।
-তাহলে আপনার কোন বিশ্বস্ত অনুচরকে সঙ্গে নেবেন বলুন।
-সনাতনবাবু গেলে ভালো হয়।
-আমি যাবো না।
-শুনছেন।
-তাহলে অন্য কাউকে দাও।
-আমরা কেউ যাবোনা। সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো।
-শুনছেন।
-হ্যাঁ।
-তাহলে আমি যাবো।
-তুমি যাবে!
-হ্যাঁ। আপনার অসুবিধে আছে।
-না মানে।
-আপনার ঘরে যে ছেলেটি বসে আছে তাকে দিন।
-নাও।
-দাদা আমি আবিদ।
-তুই! তুই ওখানে কি করছিস।
-রতনদা এখানে ডিউটি দিয়েছে।
-তোকে রতন ওখানে বসিয়ে রেখেছে!
-হ্যাঁ দাদা।
-মালপত্র সঙ্গে আছে না খালি হাতে বসে আছিস।
-সব সাঁটানো আছে।
-বাইরে কারা আছে।
-ও নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। মাছি গলবে না।
-এক কাজ কর। তোদের গাড়ি নিয়ে ডাক্তারকে সঙ্গে করে ওর বাড়িতে যা। কাগজপত্র সব নিয়ে নিবি। ওর পাসপোর্ট পর্যন্ত। সব দেখে নিবি। তারপর তুলে নিয়ে গিয়ে একটা হোটেলে রেখে দে।
-আচ্ছা দাদা।
-ফোনটা কার।
-ফোনটা আমার, সিমটা ডাক্তারের।
-এত বুদ্ধি তোর হলো কি করে বলতো।
-তোমার পাল্লায় পরে।
আবার হো হো করে হেসে ফেললাম।
-তুমি হেসোনা। যা হুকুম দেবে করবো।
-ডাক্তার শুনছে।
-সব রেকর্ডিং করছি।
-এইতো তোদের মাথা খুলেছে।
-রতনদা ফোন করছে।
-ঠিক আছে ডাক্তারকে দে।
-ধরো।
-শুনলেন আমার কথা।
-হ্যাঁ শুনছি।
-তাহলে বুঝতে পারছেন।
-পারছি।
ছটার মধ্যে সব কাগজপত্র নিয়ে অফিসে চলে আসুন। পালাবার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কালকে সকালের সূর্য আর দেখতে পাবেন না। ওটা আমার হাতে নেই সব এখন ওদের হাতে।
তুমি বিশ্বাস করো আমি ঠিক ছ’টার মধ্যে চলে আসবো।
রাখছি।