Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
অফিসের গেটে গাড়িটা থামতেই সিকুউরিটির ছেলেটা এগিয়ে এলো। দরজা খুলে স্যালুট করে পাশে দাঁড়ালো। আমি ভাবলেশহীন মুখে একবার চারদিকটা দেখে নিলাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন গাড়ি থেকে নামলো।
-গাড়িটা ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করে দাও।
-হ্যাঁ, স্যার।
আমি দরজা খুলে রিসেপশনিস্ট কাউন্টারের সামনে আসতেই সেই ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়িয়ে মর্নিং স্যার বলে উঠলেন। আমি খুব গম্ভীর হয়ে লিফ্ট বক্সের সামনে দাঁড়ালাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছনে। আমাকে মেপে চলেছে। লিফ্ট ওপরে ছিলো বোতামে হাত দিতে নিচে নেমে এলো। আমি ওপরে উঠলাম।
-নিরঞ্জনদা তুমি দাদার ঘরে বোসো। চেনোতো ঘরটা।
-না।
-এসো।
নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন এলো আমাকে দেখেই হরিদা বলে উঠলো। ছোটোবাবু কখন ফিরলে।
-এইতো এখুনি। দাদা ভেতরে।
-হ্যাঁ।
আমি দরজা খুলতেই দাদা আমার দিকে তাকালেন। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম যাও ভেতরে গিয়ে বসো। আমি আসছি।
নিরঞ্জনদা ভেতরে গেলো।
-তুই আসবি না।
-আমি ওপর থেকে আসছি।
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। সোজা চলে এলাম সনাতন বাবুর ঘরে। সনাতন বাবু আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোটোবাবু সব ঠিক আছে।
-হ্যাঁ।
-আমার কাজ সব হয়েছে।
-রেডি আছে। এখন দেবো।
-না। ফোন করলে দাদার ঘরে চলে আসবেন।
আমি সনাতনবাবুর ঘর থেকে নিউজরুমে চলে এলাম।
আমার টেবিলটার সামনে দেখলাম তিন-চারটে ছেলে বসে আছে। চিনতে পারলাম না। নিউজরুমে ঢুকতে মল্লিকদা আমায় দেখেছে। আমি একবার দেখলাম তারপর নিজের টেবিলের সামনে গেলাম। ছেলেগুলো প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারপর মল্লিকদার ইশারায় যে যার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আস্তে আস্তে নিজের জায়গায় চলে গেলো।
আমি টেবিলে বসলাম। নিজের চিঠিপত্রের বান্ডিলটা একবার দেখলাম। দেখলাম ঝিমলি আর তনুর চিঠি আছে। বাকিগুলো সব লেখার ওপর আর ইনভাইটেশন কার্ড। মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন।
-বল।
-তুই কি অফিসে পৌঁছে গেছিস।
-এতোক্ষণে খবর চলে যাওয়ার কথা।
-তোর কি হয়েছে বলনা।
-কিছু না।
-যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে গেলি।
-আমি ঠিক আছি।
-বড়মা মন খারাপ করছে।
-দোষ করেছে ফল ভোগ করতে হবে। এখন রাখ কথা বলতে ভালো লাগছে না।
-আচ্ছা।
মল্লিকদা কাছে এলো।
-শরীর খারাপ।
-না।
-মন খারাপ।
-না।
-তাহলে কেমন কেমন যেন লাগছে।
মল্লিকদার টেবিলের ফোনটা বেজে উঠলো।
-যাও তোমার ফোন এসেছে।
আমি ঝিমলির চিঠিটা খুলে পরলাম। ফোন না করার জন্য অনেক কথা লিখেছে। অনেক মান অভিমান। ডাক্তারীতে চান্স পেয়েছে। আমি খুব লাকি। আগামী সপ্তাহে ভাইজ্যাগ যাবে আমাকে একবার সময় দিতে হবে।
মল্লিকদা কাছে এসে বললো। দাদা তোকে একবার ডাকছে।
-তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
মল্লিকদা চলে গেলো।
আমি তনুর চিঠিটা পড়লাম। তনু অনেক কথা লিখেছে। বিবিসির একটা ভালো পোস্ট হোল্ড করছে। আমি মালিক হয়েছি সেই খবরটা কেনো জানাইনি তার জন্য তলব করেছে। পারলে একবার লন্ডন যাওয়ার অনুরোধ করেছে।
আমি নিউজ রুম থেকে সোজা চলে এলাম দাদার ঘরে। দেখলাম তিনজনে বসে কথা বলছে।
-কিরে তোর নাকি মেজাজ বিগড়ে গেছে।
আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললাম। এ খবরটা আবার তোমায় কে দিলো।
-তোর বড়মা বললো।
-একটু চা খাওয়াবে।
-সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস।
-না।
-কি খাবি বল।
-ডিম টোস্ট বলো। নিরঞ্জনদাও কিছু খায় নি।
দাদা বেলে হাত দিতেই হরিদা ঘরে এলো।
-হরি চারটে ডিম টোস্ট বানিয়ে নিয়ে আয়তো।
হরিদা বেরিয়ে গেলো।
-তুমি ওরকম ভেটকি মাছের মতো মুখ করে বসে আছো কেনো। দাদাকে বলেছো।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকালো। বলেছি।
-দাদা কি বললো।
-তুই চুপ কর। তোর জন্য সব গন্ডগোল।
হেসে ফেললাম।
ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম মিঃ ব্যানার্জীর ফোন। প্রথমে ভাবলাম রিসিভ করবো না। তারপর ঠিক করলাম রিসিভ করি।
-হ্যাঁ দাদা বলুন।
-অনি বাবু খবর কি।
-খুব ভালো আপনার প্রাক্তন স্ত্রীকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করলাম। আপনার কথা রেখেছি। খুশি তো।
মিঃ ব্যানার্জী চুপ করে গেলেন। কোনো কথা বললেন না।
-কি হলো কথা বলছেন না কেনো। আপনি খুশী নন।
দেখলাম সবার মুখ চোখের চেহারা বদলে গেলো।
-আপনার সঙ্গে একটু দরকার ছিলো।
-আমি জানি।
-কবে সময় হবে।
-দিন সাতেকের আগে হবে না।
-আমার একটু তাড়া ছিলো।
-আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে নিন। আপনার এখনো বেশ কিছু কাজ বাকি আছে।
-আজই একটা সময় দিন। খুব দরকার।
-হবে না। আমি কলকাতায় কয়েক ঘন্টার জন্য এসেছি। আবার ফিরে যাবো। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে?
-না।
-রাখি।
-একটু সময় পাওয়া যাবে না।
-যাবে সাতদিন পর। ওই যে আপনার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম।
ফোনটা কেটে দিলাম।
আমার চোখে মুখের চেহারা যে বদলে গেছে দাদা সেটা বুঝতে পেরেছে।
আমি দাদার টেবিলের ফোনটা চেয়ে নিলাম। সনাতনবাবুকে ফোনে ধরে বললাম আমাদের কমপিউটার ডিভিশনের চিফ ম্যানেজারকে একটু ডেকে আনুন তো।
দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা গম্ভীর। নিরঞ্জনদা ফ্যাকাশে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। হরিদা প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঢুকলো।
আমি একটা প্লেট টেনে নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে আরম্ভ করলাম।
-কিরে ওই ভাবে খাচ্ছিস!
-দরকার আছে।
-কোথায় যাবি আবার।
-দেখোনা রগরটা।
ওরা তখনো খাবারে হাত দেয়নি। আমার খাওয়া হয়ে গেলো। ঢক ঢক করে জলটা গিলে নিলাম।
-আর এক প্লেট আনাই।
-না।
-তুই আমারটা খা। মল্লিকদা বললো।
-উঃ তোমরা বড়ো বিরক্ত করো।
ওরা অবাক হয়ে আমার কীর্তিকলাপ দেখছে।
সনাতনবাবু ঘরে ঢুকলেন। পেছন পেছন সেই ব্যক্তি। উনি হয়তো আমায় দেখেছেন আমি এখনো পর্যন্ত ওনাকে দেখি নি। আলাপও হয়নি।
-বসুন।
ভদ্রলোক বসলেন।
-আপনার নাম।
-দিগন্ত চৌধুরী।
-আমি অনি ব্যানার্জী।
-আমি জানি।
-আজ আপনার সঙ্গে পরিচিত হলাম।
আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।
হরিদা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমিতাভদা আমাকে গোগ্রাসে গিলছে। মল্লিকদা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সনাতন বাবু ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছেন।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিগন্ত বাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমার একটা উপকার করতে পারবেন।
-বলুন।
-দশটা থেকে দশটা পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত আমাদের হাউস থেকে আউট গোয়িং কলের একটা লিস্ট আমাকে একটু বের করে দিতে পারবেন।
-হ্যাঁ। এইটুকু কাজ?
-খুব সামান্য। কিন্তু কনফিডেন্সিয়াল। আশা রাখি আপনি সেটুকু বজায় রাখবেন।
-অবশ্যই। এখুনি যাই।
-চাটা খেয়ে নিন। আর একটা কথা আপনি এটা নিজে হাতে করবেন কাউকে দিয়ে নয়।
-ঠিক আছে।
উনি চা খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি সনাতনবাবুর দিকে তাকালাম।
-সুনিতদার চিঠিটা রিসিভ হয়ে এসেছে।
-এসেছে।
-কিংশুকের।
-এসেছে।
-টাকার কথা কি বললো।
-দিতে পারবে না।
-ঠিক আছে। আমার কাগজগুলো নিয়ে আসুন।
সুনিতবাবু বেরিয়ে গেলেন।
-আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। দাদাকে যাওয়ার ব্যাপারটা বলেছো।
-না।
-কেনো।
-তুই বলবি।
-বাঃ আমি কলা ছাড়িয়ে দেবো তুমি খালি খাবে।
-তুই আর কত অপমান করবি।
-দেখছো দাদা নিরঞ্জনদা কি বলছে।
-আমি শুনলাম ওর মুখ থেকে। অনিমেষ কি বলছে।
-কেনো সব নিরঞ্জনদাকে শুনিয়েছি। কিছু গোপন করিনি।
-কিরে নিরঞ্জন তুই এটা বলিসনি তো।
-এমনকি বড়মার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছি।
-তুই কথা বলিসনি কেনো।
-একটু কষ্ট পাক না হলে শক্ত হবেনা।
-আমাকে অন্ততঃ ছ’বার ফোন করেছে।
-তোমার আনন্দ হচ্ছেনা।
-কেনো।
-তোমাকে কোনোদিন বড়মা এইভাবে ছ’বার ফোন করেছে।
দাদা হো হো করে হেসে ফেললো।
মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছে।
-ভায়ের উপকার করতে যাবে একটু কষ্ট পাবে না তা হয়।
-আমি ফোন করি।
-সে তুমি করতে পারো আমি কথা বলবো না।
আবার হাসি। কিরে নিরঞ্জন বুঝতে পারছিস।
নিরঞ্জনদা মাথা নীচু করে বসে আছে।
-দাদাকে আর সব খোলাখুলি বলেছো না পেটে রেখে দিয়েছো।
-সব বলেছি।
-ওখান থেকে ফোন এসেছিলো। টাইম ওভার হয়ে গেছে।
-না ফোন আসে নি।
-তাহলে বুঝতে পারছো। কাজ শুরু হয়ে গেছে।
নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকালো।
-তাকিয়ে লাভ নেই। এটাই অনির গর্ব। মুখে যা বলে তা করে। দিদিকে ফোন করেছো।
-না।
-কেনো।
চুপচাপ।
তোমার জন্যই কিন্তু মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। একদিকে অনি আর একদিকে নিরঞ্জন। না পারছে ওগড়াতে না পারছে গিলতে। উভয় সংকট।
নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফেললো।
দিগন্তবাবু দরজা ঠেলে মুখটা ঢুকিয়ে বললো আসতে পারি।
-আসুন।
ভদ্রলোক আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। আমাকে লিস্টটা দিয়ে বললো।
-আর কিছু আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
-না। অনেক ধন্যবাদ। আজ আপনার সঙ্গে ঠিক জমিয়ে গল্প করতে পারছিনা। হাতের কাজ সেরে বসে আপনার সঙ্গে কথা বলবো।
ঠিক আছে। আমি আসি।
আসুন।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 17-03-2022, 07:08 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)