Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
গাড়ি এসে বাজারে থামলো। আমি নামলাম। নিরঞ্জনদাও নামলো। আমি বড়মার গাড়ির কাছে গেলাম। রবিন দরজা খুলছে। বড়মা আমায় দেখে মুখটা গম্ভীর করলো।
-বাবাঃ গালটা ফুলে গেছে মনে হচ্ছে।
-একবারে কথা বলবিনা।
-পারবে অনির সঙ্গে কথা না বলে।
-ওই জন্যই ……
আমি বড়মাকে জাপ্টে ধরলাম। চা খাবে।
-কোথায়?
-তোমাকে ভাবতে হবেনা। বাসু।
বাসু পেছনেই ছিলো। কাছে এলো।
-আমার বাড়িতে চল। বড়মা আর এদিকে আসবে কিনা।
-কিগো যাবে।
-কতোক্ষণ লাগবে।
-এই দু’মিনিট।
-তোর দু’মিনিট মানে আধঘন্টা।
-ওঃ বড়মা এতোক্ষণ বাদে তুমি একটা সলিড কথা বললে। মন ভরে গেলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-তোকে যেতে হবে না। তুই বাসুর দোকানে বোস। আমি বড়মা……
-তোকেই বাদ দিয়ে দেবো।
-তাহলেতো খুব ভালো।
-চল অনাদি আমরা বাসুর দোকানে বসি।
বড়মা হাসছে। তোদের কি বয়স হবেনা।
-তোমার, দাদার তো বয়স হয়েছে।
বড়মা হেসে ফেললো। তোর সঙ্গে পারবোনা।
নিরঞ্জনদাকে বললাম এখানে থাকতে থাকতে আমার কাজ সেরে নাও। চা খাওয়ার মধ্যে যেনো চলে আসে। তুমি ব্যবস্থা করে এসো।
নিরঞ্জনদা জিভ বার করে ফেললো। সত্যি অনি ভুলে গেছিলাম।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকালো।
-চলো আমরা এগোই।
কথা বলতে বলতে আমরা বাসুর বাড়িতে এলাম। এই প্রথম বাসুর বাড়িতে আসছি। সত্যিকারের মিনিট দুয়েকের পথ। গেটের মুখে লতা দাঁড়িয়ে ছিলো। এগিয়ে এলো। বাসুর বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো। লাইট আছে। শহুরে একটা বাড়ির ক্ষেত্রে যা যা থাকা দরকার তা আছে। লতা বড়মা, ছোটমা, মিত্রা এমনকি ইসলাম ভাইকেও প্রণাম করলো। ইসলাম ভাই-এর কাছে গিয়ে বাধা পেলো। আমি হাসলাম।
 
বাড়িতে ঢুকেই মিত্রা লতাকে নিয়ে সটকে গেলো। বুঝলাম বাথরুমে গেলো। আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বড়মা ইশারায় বললো যাবে। আমি বললাম যাও। বড়মা, ছোটমাও গেলো। আমি বাসুর বাড়িটা ঘুরে ফিরে দেখলাম। চিকনা বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ালো।
-গুরু চারিদিক মেপে নিচ্ছ।
-হ্যাঁ। তুই কোথায় গেছিলি।
-এইযে বিস্কুট নিয়ে এলাম।
-অনাদি কোথায়।
-নিরঞ্জনদা কোথায় পাঠালো।
-আসবেনা।
-নিরঞ্জনদার সঙ্গে আসছে। নিরঞ্জনদার চেলুয়ারা এসেছে।
-তারা আবার কোথায় ছিলো।
-তোর বাড়িতে বসেছিলো। তারপর শুনলো এখানে এসেছে। চলে এলো।
-কোথায় বসেছে।
-বাসুর দোকানে।
-ওদের চা দিতে হবে।
-রাখতো তুই সব ধর্মাবতার।
হাসলাম।
চিকনা ভেতরে গেলো। আবার বেরিয়ে এলো। চল একটু অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাই।
-না। ভালো লাগছে না।
-তাহলে থাক।
-চিকনা পর্শুদিন সকালে রেজিস্ট্রি অফিসে যাবি নীপাকে সঙ্গে নিয়ে। ওই দিন কোনো কাজ রাখবি না।
চিকনা মাথা নীচু করে আছে।
-সত্যি তুই যা বলছিস তাই হবে।
-আমি কি মিথ্যে বলছি বলে মনে হয়।
-না ঈশ্বর আমার দিকে এমন ভাবে মুখ তুলে তাকাবে ভাবিনি।
চিকনার গলাটা ভারি হয়ে এলো।
-কেনো অনির ওপর বিশ্বাস নেই।
-না তুই এভাবে বলিসনা।
চিকনা চোখ মুছছে। আমি চিকনার দুই কাঁধে হাত রাখলাম।
-চিকনা এটা একটা নতুন জীবন। অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা আসবে। তাকে ওভারকাম করতে হবে। লক্ষ্য স্থির রাখবি। তুই আমার কাছে চেয়েছিলি। আমি সময় নিয়েছিলাম।
-তুই পাশে থাকলে আমি লড়ে যাবো। তুই খালি বলে দিবি এই এইভাবে কাজ কর। দেখবি একেবারে ফেল হবে না।
-আমি তো আছি।
-কোথায়? তুই ম্যাডামকে আর নীপাকে রেখেছিস।
-না এটায় আমি আছি।
-সত্যি।
-হ্যাঁ।
-অনাদি বললো আমি নীপা আর ম্যাডাম।
-না অনাদি জানেনা। এবার মেশিনগুলোর ব্যবস্থা কর। কাল আমি কলকাতা যাচ্ছি।
-কবে আসবি ?
-পর্শুদিন আসবো। সঞ্জুকে বলে এদিককার ব্যবস্থা পাকা কর।
-ঠিক আছে।
-যার যা পাওনা মিটিয়ে দিয়েছিস।
-হ্যাঁ।
-কতো আছে।
-নীপা জানে। নীপার কাছে আছে।
-লিখিয়ে নিয়েছিস।
-হ্যাঁ। নীপা খাতায় লিখিয়ে নিয়েছে।
-এবার জোড় কদমে লেগে পর।
-কালকেই একশো মন ধান উঠবে।
-রাখার ব্যবস্থা করছিস।
-তোর বাড়িতে যতটা ধরে ধরাচ্ছি। তারপর স্যারকে বলেছি। স্যার অনুমতি দিয়েছে।
-দু’টো বড় হামার ঘর তৈরির ব্যবস্থা কর।
-পাঁচুকে বলেছি। ও সব ব্যবস্থা করছে। তোর হামার ঘরটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওটাকে একটু সারিয়ে নিয়েছি। একটা কথা বলবো।
-বল।
-অনাদি ওর পার্টির কয়েকটা ছেলেকে নিতে বলছে।
-অনাদি বললোনা কেনো।
-লজ্জা পাচ্ছে। তুই যদি কিছু মনে করিস।
-তোর দরকার পরলে নে।
-লাগবে। এবার রাতে শোয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।
-অনি। বড়মার গলা।
-যাচ্ছি।
দেখলাম মিত্রা গেটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি এগিয়ে গেলাম।
-তুই অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলি।
-তোকে দেখছিলাম।
-চল বড়মা তোকে আচ্ছা করে দেবে।
আমি ওর কাছে এসে মুচকি হাসলাম।
-ওমা দেখছি সাগরেদ আছে।
-সাগরেদ নয় তোর বিজনেস পার্টনার।
-খালি বক বক। দিলো আমার কোমরে চিমটি।
-বড়মা আমাকে মারলে তুই খুব আনন্দ পাস। তাইনা।
মিত্রা মাথা দুলিয়ে বললো, হ্যাঁ।
মিত্রার মুখটা দেখলাম। এখন অনেকটা ফ্রেশ।
ভেতরে এলাম। বড়মার পাশে বসলাম। ছোটমা ইসলাম ভাই নীপা খাটে ভজু নিচে বড়মার পাশে। চিকনা খাটে বসলো। বাসু খাটের এক কোনে।
-তুই খাটে যা।
-কেনো।
-তুই সবসময় বড়মার পাসে বসবি কেনো।
-ঠিক আছে আজ থেকে ছোটমা আমার তোকে বড়মাকে দিয়ে দিলাম।
-ইঃ কতো খাতির। একটাও তোর নয়।
আমি ছোটমার পাশে গিয়ে বসলামবড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। সব খবর নেওয়া হলো।
-কার।
-বাসুর।
-তুই কি করে জানলি।
-জানলাম।
-বিজ্ঞের মতো কথা বলিসনা। মিত্রা তোকে কুচুর কুচুর করে বলেছে।
-নাগো বড়মা আমি বলিনি ও মিথ্যে কথা বলছে।
আমি হাসছি। চা হলো।
-হয়ে গেছে। বাসু বললো।
লতা ঘরে ঢুকলো।
একবারে শহুরে ঢঙে লতা সব নিয়ে এলো। চা, চায়ের সঙ্গে পাঁপর ভাজা। বেশ ভালো লাগলো। পেছনে একটা কাজের মেয়ে। হয়তো পাশেই থাকে।
চা নিলাম।
বাইরে বাইকের আওয়াজ পেলাম। অনাদির গলা পেলাম। বুঝলাম নিরঞ্জনদা এলো। দুজনে ঘরে ঢুকলো। বাসু উঠে দাঁড়ালো। পাশের ঘর থেকে একটা চেয়ার নিরঞ্জনদার জন্য এনে দিলো। নিরঞ্জনদা এসেই আমাকে দলিলটা দিয়ে বললো।
-এইনে তোর কাজ করে দিলাম। এবার আমার বৈতরিণীটা উতরে দে। এরি মধ্যে দুবার ফোন হয়ে গেলো।
হাসলাম। চায়ে চুমুক দিলাম।
বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোটমা ইসলাম ভাই-এর একই অবস্থা। ওরা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারেনি। নিরঞ্জনদা হঠাৎ এই ভাবে কথা বলার কারন কি।
-খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে মনে হয়।
-কি করে জানলি।
-তোমার কথার ভাঁজে।
-সত্যি অনি তুই একটা ছেলে বটে। তুই কি আমার ফোনেও আড়ি পেতেছিস।
ইসলাম ভাই ফিক করে হাসতে গিয়ে গায়ে চা ফেললো।
ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো।
আমি গম্ভীর।
-মিত্রা তুই গিয়ে একটু খাটে বসতো। ওকে এখানে পাঠা।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে সুর সুর করে চলে গিয়ে বড়মার পাশে বসলাম। বড়মার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিনা। চা খেয়ে যাচ্ছি। বুঝছি বড়মা এবার আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। না জানতে পারলে পেট ফুলে যাচ্ছে।
-কিরে নিরঞ্জন কি কথা বলে।
-জিজ্ঞাসা করো।
-ওতো বললো। তুই চুপ করে আছিস কেনো। ওর পেছনে আবার লেগেছিস নাকি।
-যাঃ তোমার ভাই বলে কথা। নিরঞ্জনদার সামনে বলছি। জিজ্ঞাসা করো।
-কিরে নিরঞ্জন কি হয়েছে রে।
-না কিছু হয়নি। একটা সমস্য হয়েছে। অনি সমাধান করতে পারবে তাই তেল দিচ্ছি।
এইবার ছোটমা হেসে ফেললো। তুমিও অনিকে তেল লাগাচ্ছ।
-আর বলিস না। হাতি যখন কাদায়………
-উঁহুঁ তুমি হাতি নও। আমি চামচিকে নই। তুমি একথা বলতে পারোনা। তোমাকে তখনো বলেছি। এখনো বলছি। বড়মা দাদা যদি না থাকতো আমি কি করতাম তাও তোমায় বলেছি।
-কি হয়েছে রে নিরঞ্জন, তুই আমাকে বলতো দিই ওর কানটা ছিঁড়ে।
-তুমি মুখে বলছো কেনো তোমার হাত নেই। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়মা আমার পিঠে হাত রাখলো।
-কানটা ধরো কানটা।
আমি হাসছি।
-কি হয়েছে রে দুজনে গাড়িতে একসঙ্গে এলি। তুই হাসতে হাসতে নামলি। নিরঞ্জনের মুখটা কেমন কেমন যেনো দেখলাম।
-বাবা তোমার চোখ আছে। অন্ধকারেও তুমি নিরঞ্জনদার মুখটা দেখতে পেলে।
-কথা ঘোরাসনা সত্যি কথা বল।
-নিরঞ্জনদা বলবে আমি বলবোনা।
-ঠিক আছে।
-আমি কাল সকাল বেলা কলকাতা যাব। পর্শুদিন দাদাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসবো।
-কি মজা।
-থাম তুই। মজা দেখছিস। ও কি পাকিয়ে রেখেছে দেখ।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন চায়ে চুমুক দিয়ে চলেছে। ইসলাম ভাই ভাল করে মাপছে দুজনকে। ও ধরতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে।
-চলো এবার উঠি কালকে আবার ভোর ভোর বেরোতে হবে। দাদার সঙ্গে তোমার কথা হয়েছে।
-কেনো তোর সঙ্গে হয় নি।
-সকালের পর হয়নি।
-আমাকে যে বললো।
-পকেট থেকে ফোনটা বার করতেই বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো।
-নিরঞ্জনদা কাল তোমার গাড়িতে যাবো। অসুবিধে নেইতো।
নিরঞ্জনদা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে।
-আরে বাবা আমি যাবো বললাম তো।
নিরঞ্জনদা ঠায় আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। নিরঞ্জনদার কাছে এগিয়ে গেলাম। চলো।
-আমি যাবো। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
-তুই দাদার হলে যে ভাবে ইনিসিয়েটিভ নিস আমার জন্য নিচ্ছিস না।
-তোমার থেকে দাদাকে বেশি ভালোবাসি। তাই। তুমি চাপ নিয়োনা। হেসে ফেললাম।
সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। ট্রলিতে আমি আলাদা বসতে চাইছিলাম। বড়মা বললো তুই আমার ট্রলিতে আয়। অনেকভাবে আমার কাছে জানতে চাইলো। আমি চুপচাপ। বললাম তুমি নিরঞ্জনদার কাছ থেকে জেনে নেবে। শেষে ছোটমা বললো দিদি তুমি থামো কলকাতা থেকে ফিরে এসে তোমায় সব বলবে। ও আগে ওর কাজ সারুক। তাই হলো। যেতে যেতে বিশেষ কথা আর হলো না। সবাই চলে এলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 13-03-2022, 09:37 PM



Users browsing this thread: