09-03-2022, 06:29 PM
মিত্রা চলে গেলো। আমি বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম। বসো।
বড়মা সোফায় বসলো।
-দাদা ফোন করেছিলো?
-তোকেও তো করেছিলো।
-জানি। তবু তোমায় জিজ্ঞাসা করছি কেনো বুঝতে পারছো না।
-না। আমার মাথাটা তোর মাথার মতো নয়।
হাসলাম।
-হাসিসনা। তোর হাসিটা সব সময় একটা অর্থ বহন করে নিয়ে আসে। তার চেয়ে পরিষ্কার করে বল কি জানতে চাইছিস।
-আমার কাছে দাদার এক্সপ্রেসন আর তোমার কাছে দাদার এক্সপ্রেসন দুটো একেবারে আলাদা। এটা বোঝার মতো বুদ্ধি লাগে নাকি।
-তোর লাগে। আমার লাগে না।
-আমি তোমার কাছ থেকে দাদা, নিরঞ্জনদা, ইসলাম ভাই-এর এক্সপ্রেসন জানতে চাইছি। ওরা তোমাকে কে কি বললো।
-তোর দাদা খুব ইমপ্রেসড তোর প্রতি। তোর কাজের প্রতি তোর দাদার পূর্ণ সমর্থন আছে।
-কালকের ব্যাপারগুলো দাদাকে বলেছো।
-বলেছি।
-কি বললো।
-তোর দাদা প্রথমে একটু আপত্তি করেছিলো। তারপর বললো ও যখন করছে, ভেবেচিন্তেই করছে। ওকে বাধা দিও না।
-ইসলাম ভাই?
-তুই এখন যা বলবি ও সেই ভাবে কাজ করবে।
-নিরঞ্জনদা?
-ওতো তোর চালচলন দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পার্টি করছে বললো এরকম ছেলে ও দেখে নি।
-বাড়িয়ে বলছো।
-একটুও না।
-আমাকে একটু বেশি ভালবাসো তাই আমার দোষগুলো বলতে চাইছো না।
-তোর দোষ দেখলে নিশ্চই প্রতিবাদ করবো।
-করবে তো। না চুপ কর থাকবে।
-তাহলে তোর ক্ষতি। সে ক্ষতি মন থেকে চাইবো না।
ছোটমা নীপা মিত্রা ঘরে ঢুকলো
-তুমি এখন চা খাবে স্নান করবে কখন?
-করছি।
মিত্রা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
-কিরে বড়মাকে দিলি না।
-বড়মা তোর মতন নাকি খালি চা খাবে।
হাসলাম।
-হাসবিনা। সব সময় একটা প্ল্যান ভাজিস মাথায়।
-ঠিক আছে বোস। নীপা, একবার ইসলাম ভাই আর নিরঞ্জনদাকে ডেকে দাও।
নীপা বুঝলো কিছু একটা আলোচনা করবো। ও দাঁড়াল না চলে গেলো।
ছোটমা বড়মার পাশে সোফায় বসলো।
-কি দেখছ অমন করে।
-তোকে দেখছি। তুই যে কখন নিজেকে হঠাৎ হঠাৎ বদলে ফেলিস। আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনা।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
-তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো। সত্যি করে বলবি।
ও আমার চোখে চোখ রাখলো। বুঝতে পারলো। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
-বল। মাথা নিচু করে নিলো।
-মিঃ ব্যানার্জীকে তুই ভালবাসিস।
ও আমার দিকে তাকালো। চোখে চোখ রাখলো। চোখদুটো মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেলো। এক একটা চোখ যেনো গনগনে আগুনের কয়লার টুকরো।
-তুই কি বলতে চাস। গলার স্বরটা কর্কশ।
-আমি একটা স্টেপ নিতে যাচ্ছি। তোর অনুমতি নিতে চাই। বড়মা ছোটমার কাছ থেকেও অনুমতি নেবো। জায়গাটা খুব সেনসিটিভ।
-তুই যা খুশি করতে পারিস আমার কোন আপত্তি নেই।
-ঠিক আছে তার আগে তোর কাছে আমি কিছু জানতে চাই তুই বলবি।
-বল।
-তুই কোনো ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প পেপারে সই করেছিস। বিগত তিন বছরে।
-করেছি। আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে।
-বেশ।
-মিঃ ব্যানার্জীর ছেলে এখন কোথায়।
ও আমার দিকে তাকালো।
-তুই জানলি কি করে।
-উনি তোকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
ছোটমা বড়মার চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
-পাস্ট ইজ পাস্ট তুই ওগুলো নিয়ে ভাববি না। ওর এই গলার স্বর বড়মা ছোটমার পরিচিত নয়।
-একটা জট পেকে আছে, তোকে খুলতে হবে।
-কিচ্ছু জট নয়। সবকটাকে লাথি মেরে দূর করে দেবো। তুই কি আমাকে বাঁজা মেয়ে পেয়েছিস।
ছোটমা বড়মা মিত্রার এই রূপ দেখে নি। ওদের চোখের ভাষা বদলে গেলো। এ মিত্রা সেই মিত্রা নয়। যাকে ওরা হাসি খুশি দেখেছে।
আমি মিত্রার মুখটা তুলে ধরলাম।
-তুই আমাকে ভালবাসিস?
ও আমার চোখে চোখ রাখলো। চোখের আগুন এখন কমে নি। সামান্য জল টল টল করছে। চোখের পাতা পরলো। গাল বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।
-তুই ছোটমাকে ভালবাসিস?
চোখের ভাষায় আমাকে বুঝিয়ে দিলো।
-তুই বড়মাকে ভালবাসিস?
ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
বড়মা উঠে আসতে চাইছিল, আমি ইশারায় না বললাম।
-শোন না, আমার কথা শোন। রাগ করলে হবে না। খুব বুঝে কাজ করতে হবে। ওরা তোর অনেক ক্ষতি করেছে। আমি তোর সাহায্য ছাড়া কিছু করতে পারব না।
-তুই বড়মা ছোটমাকে চলে যেতে বল। আমার এই কথা বড়মা ছোটমা জানলে আমাকে নোংরা মেয়ে বলবে।
-এতদিনে বড়মা ছোটমাকে এই চিনলি। কই আমার দিকে তাকা।
-বড়মা ছোটমাকে আমি সব বলিনি।
-ঠিক আছে বলিসনি কি হয়েছে। আজ না হয় কাল বড়মা সব জানবে। বড়মা কাল আমাদের সামনে কনফেস করেছে। করেছে কিনা বল।
ও বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে মাথা দোলাচ্ছে।
-দেখ তোর মতো ছোটমার একটা দুঃখ আছে। তুই সেটা বহুবার বলেছিস। আমি তোকে কি বলেছি। বল।
ও আমার বুকের থেকে কিছুতেই মুখ তুলছে না।
-তুই যা বলবি আমি তাই করবো।
-আমি মিঃ ব্যানার্জীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাই। তুই পারমিশন দে।
-পারবি। মিত্রা আমার বুক থেকে মুখ তুললো। সেদিন মিত্রার চেয়ে খুশি পৃথিবীতে আর কেউ হবে না।
বড়মা ছোটমা অবাক।
ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মুখাবয়ব থেকে ও কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে। আমি ওর কাপালে হাত রাখলাম। চোখের কোলে জল শুকিয়ে গেছে। আমি বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম। ও আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। কাঁধে মাথা রাখলো।
-সকালের সব গল্প বড়মাকে বলা হয়ে গেছে।
মিত্রা মাথা দোলালো।
-আমার কলেজের গল্প।
ও আবার চোখ তুললো। একটুখানি বলেছি। বড়মা বলেছে যাবে।
-তুই নিয়ে যেতে পারবি।
-হ্যাঁ।
-খাবার টেস্ট করা হয়ে গেছে।
-না।
-যা একটু নিয়ে আয় না। খাই।
-অনাদি দিচ্ছে না।
-ঠিক আছে বল আমি চাইছি।
-দাঁড়া যাচ্ছি।
-চোখে মুখে একটু জল দিয়ে নে।
-না থাক।
মিত্রা ছুটে চলে গেলো। আমার বুকের মধ্যে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। সিঁড়িতে আওয়াজ হলো। -আরে দিদিমনি আস্তে আস্তে। কোথায় পরে যাবে, লেগে যাবে। ইসলাম ভাই-এর গলা।
ছোটমা বড়মার দিকে তাকালাম। ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি বুঝলে।
-একথা তুই জানলি কোথা থেকে।
ইসলাম ভাই ঘরে ঢুকলো। সরি অনি, স্নান করছিলাম দেরি হয়ে গেলো। ঘরের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। নিশ্চয়ই কিছু একটা গম্ভীর আলোচনা হচ্ছে।
-বসো। নিরঞ্জনদা কোথায় গেলো।
-স্নান করছে এখুনি এসে পরবে।
ইসলাম ভাই আমার পাশে এসে বসলো।
-সকাল থেকে মিত্রাকে বেশ ফুরফুরে লাগছিলো। এখন ওর চোখ দুটো ছলছল করছে মনে হলো।
-হ্যাঁ। ওকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম।
-নিশ্চয়ই মিঃ ব্যানার্জীর কথা বলেছিস।
ছোটমা বড়মা আমার আর ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালো। ওরা বুঝতে পারলো ইসলাম ভাই কোন স্তরের লোক।
-তোকে ওটা নিয়ে ভাবতে হবে না। তুই কি ভাবছিস ইসলাম ভাই এখানে এমনি এমনি বসে আছে। রতনকে বলে দিয়েছি। সব ব্যবস্থা করে রাখবে। তুই যা চাইবি তাই হবে। চব্বিশ ঘন্টা ওর পেছনে লোক রয়েছে। তোকে বলেছি না এবার ইসলাম ভাই-এর খেলা দেখ।
-মুন্না মেয়টার এখুনি কান্না দেখলি না। কি রেগে গেলো। এই প্রথম ওর রাগ দেখলাম।
-জানিস দিদি মিত্রা এমন একটা পাথর আঘাতে আঘাতে ও টুকরো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। আর অনি টুকরো টুকরো হয় নি। তাই ওকে আমরা সবাই শিব বলছি, নারায়ণ বলছি।
বড়মা ইসলাম ভাই-এর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-ওকে ওরা ছিবড়ে করে দিয়েছে। আমি তার কিছুটা দেখেছি। অনি দেখেনি, কানে শুনেছে। তাতেই অনির এই অবস্থা দেখলে কি করতো বুঝতে পারছিস।
ছোটমা মাথা নীচু করে বসে আছে।
-তোকে, দিদিকে সব কথা বলা যাবে না। বললে তোদেরও অবস্থা অনির মতো হবে।
আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
-তুই কি ভাবছিস বল।
-এখনো কিছু ভাবি নি। কাল একবার কলকাতা যাবো।
-আমার যাওয়ার ব্যবস্থা কর।
-এখানকার কাজগুলো সেরে নিই। তোমাকে দরকার।
-তোর তিনশো একর ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
-কথা হয়েছে।
-হ্যাঁ নিরঞ্জনদার কাছে লোক এসেছে। খেয়ে দেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা।
-ঠিক আছে চলো। তুমি এখন কতো নিয়ে এসেছো।
-মনে হয় রতন কুড়িটা বান্ডিল ঢুকিয়ে দিয়েছে। লাগলে আরো পাঠিয়ে দেবে। তোকে ভাবতে হবে না।
-না আমি সে নিয়ে ভাবছিনা হিমাংশুর সাথে বসতে হবে। ডিডগুলো বানাতে হবে। আমি বুধবার ফিরে আসবো।
-মিত্রাকে সামলাবে কে। বড়মা বললো।
-কিছু হবেনা দেখবে। ও সব সময় অতীতটা ভুলে থাকতে চায়।
বড়মা আমার দিকে তাকালো।
নিরঞ্জনদা এলো। একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো।
-খুব জোর মিটিং চলছে মনে হচ্ছে।
নিচে গলা পেলাম মিত্রা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। তুই এটা ধর আমি ওটা ধরছি।
আমি বড়মার দিকে তাকালম। কিছু বুঝছো।
বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যল করে তাকিয়ে আছে।
মিত্রা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলো।
এমা আরো দুজন এসে গেছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে, তোকে বললাম।
-কে বাইরে। আমি বললাম।
-কাঞ্চন। কিছুতেই আসবে না। জোড় করে নিয়ে এলাম।
বড়মা মিত্রার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই কিছুক্ষণ আগের মিত্রার সঙ্গে এই মিত্রার আকাশ পাতাল পার্থক্য।
-বুঝলি বুবুন ইসলাম ভাই-এর ইনস্ট্রাকসনে যা বানিয়েছে না এরা দারুন।
ও ইসলাম ভাই-এর কাছে এগিয়ে এসে বললো।
-তোলো তোলো।
বড়মাকে একটা প্লেট দিলো, আর ছোটোমাকে একটা প্লেট দিলো।
আমার দিকে ফিরে বললো। তুই স্নান করিস নি। পাবি না। তোরটা নিরঞ্জনদাকে দিলাম।
-আমি বড়মার কাছ থেকে নেবো।
-না। সরি। আমি বড়মার কাছ থেকে একটা নেবো ছোটমার কাছ থেকে একটা নেবো।
-তাহলে আমি ইসলাম ভাই-এর কাছ থেকে একটা নিই।
আমি একটা মুরগীর ঠ্যাং ইসলাম ভাই-এর পাত থেকে তুলে নিলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-যাবি নাকি? পুকুরে সাঁতার কাটবো।
-এখন। ঠিক আছে তুই যা আমি যাচ্ছি।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম। বড়মা হাসছে।