06-03-2022, 09:28 AM
ছোটোমা দরজা দিয়ে উঁকি মারলো।
-অনি শোন।
-হ্যাঁ গো ছোটো, ওদের খেজুর রস দিলে না।
-হ্যাঁ দাদা, ভেতরে নিয়ে গিয়ে দিচ্ছি।
-খেয়ে দেখ অনি নদীর ধারের গাছের রস কি মিষ্টি। তাও ব্যাটা পুরো আনতে পারেনি। কোন ব্যাটা চুরি করে খেয়ে নিয়েছে। হাঁউ হাঁউ করছিলো এসে, আমি ভাগিয়ে দিয়েছি।
আমি দরজার ভেতরে আসতেই ছোটোমা আমার কান ধরতে গেলো আমি কান সরিয়ে নিয়ে ছোটো মাকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরলাম।
-ওরে ছাড় ছাড় লাগছে।
-লাগলে হবে না আগে বলো কি হয়েছে।
-দিদি ডাকছে।
-নিশ্চই মিত্রা রিপোর্ট পেশ করেছে।
ভেতরে এলাম।
-তুমি কান ধরো নি। ধরো ধরো, কান ধরো।
আমি ছোটোমাকে ছেড়ে বড়মার কাছে সেঁটে গেলাম।
-সব বলেছিস তো।
-হ্যাঁ।
-তোর পটির কথা।
-না।
-ওটা আমি বলি।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কিরে মিত্রা এতোক্ষণ তুই ওর নামে বদনাম করছিলি এখন।
-তুমি বিশ্বাস করো বড়মা আমি এখনো ওই জায়গাটায় আসি নি।
-তুই কোন জায়গায় এসেছিস। আমি বললাম।
-পদ্মপুকুরে ফুলতোলা পযর্ন্ত।
-তার মানে তোর পোর্সানটা গায়েব।
-শয়তান! মিত্রা আমার থাইতে একটা চিমটি কাটলো।
বড়মা আমার পিঠে হাত রাখলো।
নীপা চা দিয়ে গেলো, দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে মিত্রাকে বললো
-আরো জোরে দাও না। এখনো ছোটোটি আছেন।
আমি মাথা নীচু করে চায়ে চুমুক দিলাম। সবাই হাসছে।
-হ্যাঁরে, ওই রাতে তুই গাছে উঠলি কি করে। বড়মা বললো।
-ওকে তুমি জানো না বড়মা, ও কি জিনিষ সেদিন কাকা কয়েকটা বলেছে, আজ একটা শুনলে, সব বললে তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। অনাদি বললো।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-জানিস তোর জন্য আমি নিরঞ্জনদার কাছে সকালে বকা খেলাম
-কেনো রে।
-শশধর কাকা নিরঞ্জনদার কাছে এসে রিপোর্ট করলো তার রস চুরি হয়ে গেছে।
-তুই চোর ধর। আমি বললাম।
-চোর তো ঘরের মধ্যে।
-প্রমাণ করতে পারবি।
-আমি আছি রাজসাক্ষী। মিত্রা বললো।
-নেমক হারাম।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-জানো ও যখনই পেঁপে পাতাটা ভাঙলো আমার কেমন যেন একটা সন্দেহ হলো। এই কানা রাতে ও পেঁপে পাতা ছিঁড়লো কেনো? তারপর ওই পটি করা রাস্তা ভূত তলা।
-তুই ওকে নিয়ে ভূততলার মধ্যে দিয়ে গেছিস! অনাদি বললো।
-হ্যাঁ।
-জানো বড়মা আমরা দিনের বেলা ওই পথে যাই না, রাস্তাটা খারাপ বলে। ঘুরপথ হলেও অন্য রাস্তায় যাই, আর ও ম্যাডামকে নিয়ে ওই রাস্তায়! তুই পারিস। অনাদি বললো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কিরে তোকে ভূত দেখাই নি।
-দেখাতে চেয়েছিলি দেখতে পাই নি।
-কাকীমা পান্তার জাম বার করো, আর মিত্রা কিছু খাবে না, সকাল থেকে দুবার হয়ে গেছে।
-নাগো আমার একবারও হয় নি, আমাকেও দাও।
সবাই হাসছে, ছোটোমা এসে পাশে বসলো
-তোর কি এখনো চুরি করার শখ আছে।
-সে যে কি আনন্দ তোমায় বুঝিয়ে বলতে পারবো না। ওকে তার একটু স্বাদ দিয়েছি।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কিরে বল ছোটোমাকে।
-বলেছি, আমার পেটটা খল খল করছিল না বলা পযর্ন্ত। তোর মতো নয়।
-ওই জন্যই তো সহ্য হয় নি।
-জানো বড়মা আমায় বলেছে কুত্তার পেটে ঘি সয় না।
হ্যাঁরে, অনি বলেছিস! বড়মা আমার দিকে গম্ভীর কিন্তু হাসি হাসি মুখ করে বললো।
-বলেছি।
-কেন।
-কেন বলেছি, কোন পজিসনে বলেছি সেটা জিজ্ঞাসা করো। আর সেই সময় এই কথাটা কেমন প্রযোজ্য সেটাও জিজ্ঞাসা করো।
-কিরে মিত্রা।
-তুমি খালি ওকে সাপোর্ট করো আমাকে একটুও করো না।
সবাই হাসছে, ছোটোমা বললো
-ও যা বললো তুই মিথ্যে প্রমাণিত কর।
-সে হয় নাকি, অতোটা রস গেলালো ওই মাঝরাতে প্রায় এক লিটার।
ইসলাম ভাই হাঁসতে হাঁসতে উল্টে পরে যায়, সুরমাসি কাকীমা মুখে কাপড় চাপা দিয়েছে, নীপা হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরেছে, নিরঞ্জনদা এসে যোগ দিলো, বড়মা বললো
-নিরঞ্জন বোস শুনে যা এদের কীর্তি।
নিরঞ্জনদা নিশব্দে বসে পরলো। নীপা একটা আসন এগিয়ে দিলো।
-তারপর কি হলো বল মিত্রা। বড়মা বললো।
-তারপর আর কি, যা হবার হলো। তাও হতো না, আমাকে বললো একটু নেচে নে দেখবি নিচে নেমে যাবে অসুবিধে হবে না।
-তুই নাচলি।
-হ্যাঁ, আমি বাঁধের ওপর একটু নেচে নিলাম। ব্যাস মিনিট তিনেকের মধ্যে আর থাকতে পারলাম না, সোজা নদীর বুকে নেমে গেলাম।
-অনি তখন কোথায়।
-বাঁধের ওপর বসে ঢিল ছুঁড়ছিলো।
-চারদিক অন্ধকার, মাথার ওপর শীতল চাঁদের আলো, নদীর ঝির ঝিরে বাতাস, কুল কুল শব্দ, এতো সুন্দর আবহাওয়া তোর বাড়ির ফার্নিশড বাথরুমে আছে, তুই বল?
সবাই হেসে গড়িয়ে পরছে। বড়মা আমার কানটা ধরলো
-তোর কি আর বয়স হবে না, তুই আধ দামড়া মেয়টাকে বাঁধের ওপর নাচালি।
-দাও দাও আরো জোরে নাড়িয়ে দাও, মিত্রা উঠে এসে আমার পিঠে গুম গুম করে দিলো।
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-নাচালাম কোথায়। ওর অসুবিধে হচ্ছিল আমি বললাম নেচে নে। তা ও যদি ধেই তা ধেই করে নাচে, আমার কি।
হাসতে হাসতে আমার কান থেকে বড়মার হাত খসে পরল, নিরঞ্জনদা হাসছে, সবাই হাসছে ছোটোমা কাপড় দিয়ে চোখ মুছছে।
-ও নিরঞ্জন।
-বলো।
-তোর চোর হচ্ছে এই দুটো।
-বলো কি!
-হ্যাঁরে। তারই গল্প হচ্ছে। পেঁপে ডাঁটা দিয়ে।
নিরঞ্জনদার হাসি আর বন্ধ হয় না।
ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে কেশে ফেললো, ভজু ইসলাম ভাই-এর মাথা চাপরে দিচ্ছে।
-কাকীমা পান্তা। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো, আমার খিদে পেয়েছে।
ছোটোমা বললো
-হ্যাঁরে একলিটার জল খেয়ে কিছু হয় নি।
-সব বেরিয়ে গেছে।
ছোটোমা হাসতে হাসতে বললো তুই থাম।
-কিরে, তোর পেটে ডন বৈঠকি মারছে না। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বলছে।
-মারছে।
মিত্রাদি, বড়মা চিংড়িমাছ দিয়ে ফ্রায়েড রাইস করেছে। নীপা বললো।
-দে, দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। দাঁড়া।
আমার দিকে তাকালো।
-কিরে তুই কি খাবি।
-দেখি।
-দেখি মানে। এখন খাবি না।
-বড়মা খেয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করেছিস।
-বড়মা পূজো করে নি। এত বেলা করে পদ্মফুল নিয়ে এলি বড়মা পূজো করুক তারপর খাবে। ও বড়মা বলো না দিতে।
-নীপা দেতো মা ওকে।
-ওদের খাওয়া হয়ে গেছে?
-কারুর হয় নি। তোরা আসিসনি বলে কেউ খায় নি।
-তোর জন্য বুঝলি, তোর জন্য। কখন থেকে বলছি চল চল বেলা হলো।
-বাঁশি বাজা।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-বড়মা ও যদি পান্তা খায়, আমি ফ্রাইড রাইস, পান্তা দুটো খাবো।
বড়মা হাসছে, নিরঞ্জন দেখতে পাচ্ছিস।
-পাচ্ছি।
আমি ইসলাম ভাই-এর কাছে বসলাম কাল ঘুম ভালো হয়েছে।
-না হবার জো আছে, যা আয়োজন ছিল আরিব্বাস।
-অনিদা আমি বাথরুমে যাই নি ওই বনে গেছিলাম। ভজু বললো আর সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
আসন পাতা হয়েছে। সবার। অনাদি বাসুরও আছে। আমরা যে যার মতো বসে পরলাম, খালি বড়মা বসলো না ছোটোমাকে মাঝখানে রেখে আমরা দুজনে দুপাশে। বড়মা পরিবেশন করলো, মাঝে চিংড়িমাছ নিয়ে মিত্রা আমার সঙ্গে ঝগড়া করলো, ওকে চিংড়িমাছ দেয় নি বড়মা, আমাকে বেশি ভালবাসে তাই আমাকে দেওয়া হয়েছে। বড়মা হাসতে হাসতে ওকে চিংড়িমাছ বেছে বেছে দিয়ে গেলো। হাসাহাসি চলছেই। নিরঞ্জনদা মাঝে বললো মিত্রা আমরা কিন্তু পান্তা পেলাম না, তোর জন্য স্পেশাল হলো। মিত্রা নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। খাওয়া শেষ হতে আমি বললাম, আজ কি এবাড়িতে রান্না বন্ধ।
বড়মা বললো হ্যাঁ তোর বাড়ির বাঁশ বাগানে হচ্ছে।
-এ্যাইল। মিত্রা একহাত জিভ বার করলো।
-তুই আবার কালী ঠাকুর হলি কেনো।
-বড়মা তুমি আগে বলো নি কেনো।
-কি বলবো।
-আজকের মেনু ও বাড়িতে তাহলে পান্তাটা খেতাম না।
ছোটোমাকে টপকে দিল আমার থাইতে একটা চিমটি।
-শয়তান খাওয়ার শেষে মনে করিয়ে দেওয়া।
সবাই হো হো করে হাসছে।
-আমি কি করলাম।
-আমি কি করলাম! ও বাড়িতে আজ বিরিয়ানী আছে, তুই জানতিস না, এক পেট খেয়ে ওটা টেস্ট করতে পারবো?
-একটু বাঁশ বাগানে নেচে নিবি।
-এটা কি রস খেলাম, যে নেচে নিলে নেমে যাবে।
বড়মা হাসতে হাসতে মাটিতে থেবড়ে বসে পরলো।
সবাই হো হো করে হাসছে আমি উঠে দে ছুট পুকুর ঘাটে।
হাসির রোল এখনো চলছে মিত্রাকে নিয়ে।