24-02-2022, 11:36 AM
আগের পর্বের কিছু অংশ.........
শালা পা তো না, যেন ভুতের পা। নাহ আমাকে ওর সাথে প্রথম পুরুষে কথা বলা শুরু করতে হবে। কিন্তু ওকে - তুমি তো মরে গেলেও বলতে পারব না আমি। তুই বলব? মা জানলে যদি রাগ করে? কি যে করব বুঝতেই পারছি না আমি। ও তো এখন আমার বর হলো। না না কি যেন, স্বামী হল। কিন্তু অনেক আগে থেকেই তো আমার বন্ধু নাকি? ধুর আগে সোজাসুজি কথা তো বলতে শুরু করি। তারপরে দেখা যাবে।
পর্ব ছাব্বিশ
বাড়ি যখন ঢুকলাম তখন ভাগ্যিস কেউ আমাকে অতো টা খেয়াল করে নি। ছেলের ড্রেস গুলো কাউকে দেখালাম না। কিন্তু রাকার আন্ডির কালার ভালো পেলাম না। কিছু পিঙ্ক আর অরেঞ্জ খোঁজ করলাম, ছেলেটা কেমন বোকার মতন চেয়েছিল আমার দিকে। ছেলেদের কি পিঙ্ক হয় না নাকি? আসলে আমিও পরেছি ক্লাস নাইন অব্দি। কিন্তু তখন তো ফুল জাঙ্গিয়া পরতাম না আমি। কাটা জাঙ্গিয়া পরতাম। মানে মা ই কিনে আনত। কিন্তু তখন তো লাল বা আকাশী আমি পরেছি। রাকার জন্য পেলাম না। কালো, ছাই রঙের ই নিলাম। আর কোন কালার পছন্দ হলো না। যা দাম, পাঁচ টা নিতেই অনেক টাকা চলে গেলো। আর ছেলের টা তো দামী হবেই একটু। ছোট ছেলের ড্রেস তো আর কম দামী নিতে পারি না। আমার ও কিছু ব্রা কিনলাম। কিছু প্যান্টি ও। তোয়ালে কিনলাম রাকার। এখানে থাকবে তো এখন কুত্তা টা। আমার তোয়ালে নিলেই রাগ ধরবে আমার। আর ছেলের তোয়ালে নিলে তো ওকে আমি খুন করে ফেলব।
ঘরে এসে দেখলাম বাপ ব্যাটা তে খেলা চলছে। আমার ভাই ঘরে রয়েছে। মা মনে হয় এই ঘরেই খেতে দিয়েছিল ওকে। টেবিলে রাকা খালি প্লেট টা। ছেলে আমাকে দেখেই বাপের গায়ের উপর থেকে লাফিয়ে একেবারে আমাকে কোলে। ওকে কোলে নিয়েই আমি জিনিস গুলো সব আলমারি তে রেখে দিলাম। ভাই বলল,
- দিদি, ছেলে সামলা, দুজনে মিলে ওকে রাখতে পারছিলাম না। বল খেলল হলো না। টিভি তেও হলো না। স্বাতীর সাথেও খেলল না। শেষে রাকা দার উপরে খানিক ধামসে চুপ হলো। রাকা দা তো ঠিক ই করছিল, দশ মিনিটে তুই না এলে শিভ কে নিয়ে বেরোবে।
আমি ছেলেকে দেখে, বেশ করে আদর করে নিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম,
- খেয়েছিস সোনা? আমি তো ভাবলাম , আমার শিভ ঘুমোচ্ছে। আমি একটু কেনাকাটি করে আসি।
ছেলেকে বিছানায় রেখে আমি ফ্রেশ হয়ে এলাম ঘরে। ততক্ষন ভাই হাওয়া হয়ে গেছে। রাকা বিছানায় বসে। ছেলে বাপের ঘাড়ে উঠে একেবারে অতিস্ট করছে বাপ কে।রাকা চুপ করে অত্যাচার সহ্য করছে। দেখেই হাসি পেয়ে গেল আমার। আমাকে দেখেই ছেলে আবার আমার কোলে। আমি প্যাকেট টা খুলে, জাঙ্গিয়ার প্যাকেট টা, তোয়ালে টা ওকে দিলাম। আর চপ্পল টা বিছানার নীচে রেখে দিলাম।
ও অবাক হয়ে গেল। বলল,
- কি এগুলো?
উফ কি ভাবে যে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলি আমি? টেবিলে রাখা ওর খাওয়া প্লেট টা হাতে নিয়ে উল্টো দিকে মুখ করে বললাম,
- কিছু আন্ডি আছে। আমি দাম দিয়েই কিনেছি। পুরোন টা ছেড়ে পরে নি…………স। আর তোয়ালে টা এখানে থাকলে ইউস করি……স। আর চপ্পল টা বের করে দিলাম।
যা পছন্দ করতাম না, তাই করতে হলো। আজ থেকে কিছু বছর আগেও আমি এই গুলো রাকার সাথে করতে পছন্দ করতাম। আমি চাইতাম, আমি যেমন বলব ও তেমন ভাবেই চলুক। কিন্তু এই রকম ভাবে, ও আমার বর বলে আমাকেই ওর সব টা দেখতে হবে এটা ভাবিনি। মানে ওর ভাল মন্দ টা আমাকেই দেখতে হবে। ও এই গুলো পেয়ে অবাক হয়ে চেয়ে রইল আমার দিকে। মুখে তীব্র বিরক্তির আভাসে, আমি ওর খাওয়া প্লেট টা নিয়ে বেরিয়ে আসব, আমাকে তখন বলল,
- জানি তোর অসুবিধা হচ্ছে। সরি। আমি চলে যাব আজকে। আসলে ছেলে কে কাছে পেয়ে মাথায় ছিল না আমার। আজকে সকালেও তোর এই রাগ টা আমি এনজয় করছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তোকে আমি বিব্রত করছি। হয়ত তুই বিরক্ত হচ্ছিস।
বাহ, ভালো। জানি ও ছেলের সাথে এতো মিশত না যেটা এখন মিশছে। সারাদিন খেলা গায়ে গা লাগিয়ে থাকা।আমার ও ভালো লাগছে সেটা। ছেলে বাবা কে না পেলে সেটা মায়ের খামতি। বাবা যে কত বড় একটা মানুষের সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। কিন্তু , কালকে সত্যি করেই আমি বিরক্ত ছিলাম। কিন্তু আজকে তো নই। আর সেটা হলেও, আমাকে সময় দিতে হবে না? আমি তো মেনে নিচ্ছি সব কিছু ধীরে ধীরে। এখন রাকা নিজে আমাকে সাপোর্ট না করলে আমি কি করব?রেগে গেলাম ওর উপরে আবার। সব আমার উপরে দায় চাপালে আমি কি করি? ওর বোঝা উচিৎ আমি সাধারন মেয়ে নই। রেগেই বললাম ওকে,
- বুঝতে পেরেছিস?
- হ্যাঁ
- খুব ভালো।
আমি বেশী চেচালাম না আর। ছেলেকে কোলে নিয়ে চলে এলাম। আমি রান্না ঘরে মা এর সাথে কাজ করতে লাগলাম ছেলেকে কোলে নিয়েই। বাইরে ভাই ছেলেকে ডাকতেই চলে গেল ভাই আর স্বাতির সাথে খেলতে। আন্টি ছিল রান্না ঘরে। তরকারি টা কষছিল। আমি আটা নিয়ে জল দিয়ে মাখতে শুরু করলাম। জানি রাকাও রুটি খাবে আজকে। পর পর দুদিন ভাত খেল। আর ওকে ভাত দেওয়া যাবে না। সামনে খেলা আছে। কিন্তু আমার কানে রাকার কথা বাজছে- ছেলেকে কাছে পেয়ে মাথায় ছিল না তুই বিরক্ত হচ্ছিস । কথাটা একেবারে আমাকে মরমে মেরে ফেলছিল। সেই অনুতাপ ঢাকতে আমি তাড়াতাড়ি হাত চালাচ্ছিলাম, আটা মাখাতে। কিছু পরেই বাইরে মনে হলো মা বলছে রাকা কে
- একি? কোথায় চললে তুমি?
রাকা কথা বলল
- না কাকিমা, আবার কি? এবারে ও বাড়ি যাই। বাড়ি টা বানাতে হবে তো আপনার মেয়ের জন্য? রনি কে ডেকেছি। প্ল্যান আছে অনেক।
মাকে যতই বোঝানোর চেষ্টা ও করুক হাসি মুখে থেকে, বা হেসে হেসে কথা বলে, জানি আমার জন্যেই চলে যাচ্ছে ও। না হলে রনি কে এখানে ডাকা যেত না? আহা রে, ছেলেকে নিয়ে তো ভালই ছিল শয়তান টা। আমি যে কি না? কেন ওকে বলতে পারলাম না, আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না? বলতে পারব ও না আর। এতো দিন হয়ে গেলো। ১৬ বছর। এখনো আমাকে না বুঝলে, আবার কবে বুঝবে ও? চোখে জলে ভরে এলো আমার। আন্টি কাছেই ছিলেন। আমার মুখ টা তুলে ধরলেন আন্টি। চোখে জল দেখে বুঝে গেলেন, আমি চাইছি না ও যাক। বা বুঝলেন হয়ত, আমার কোন কথায় ও কষ্ট পেয়ে চলে যেতে চাইলেও, আমি চাইছি না ও চলে যাক। হয়ত আমার কান্নায় আন্টি আমার অনুতাপ দেখলেন। ওদিকে মা বলে চলেছে,
- কোন মতেই যাওয়া হবে না এখন তোমার। সে, তোমার বউ ছেলে, যেখানে খুশী নিয়ে যাও ওদের। কিন্তু এখন কিছুদিন তোমার কোথাও যাওয়া হবে না আমি বলে দিলাম।
রাকা চুপ রইল। তারপরে বলল মা কে,
- কাকিমা, আপনি বুঝতে পারছেন না। শিব কে সময় দিতে হবে তো একটু। ও বেচারী একটু বিব্রত। আসলে ও একলা থাকে। শিভের থাকা আর আমার থাকার মধ্যে অনেক ফারাক কাকিমা। ও একটু সামলে নিক, তারপরে তো আসব। আপনার জামাই আমি। যাব আর কোথায়? আর আমার ছেলে বউ তো এখানেই আছে।
ইশ, আমাকে সময় দেবে? সময় দিবি তো থাক, কে মানা করেছে? থেকে সময় দে আমাকে। আমি ঝগড়া করব সেগুলো শোন!! ছয় বছর আমাকে কষ্ট দিয়েছিস? এতো সহজেই কি পেয়ে যাবি নাকি আমার মন। অহংকারী একটা। আমি কি বলে এলাম নাকি তোকে উপরে, যে তুই চলে যা! এই সব নিজেই ভাববে উদ্গান্ডু টা, আর এর পরে আমি মায়ের কাছে বকা খাব, না!!!!! ছেলের সাথে ভালই তো আছিস এখানে। নাটক যত!!!! আমি ওই ভাবেই কাঁদতে কাঁদতে আন্টি কে জড়িয়ে ধরে ঘাড় নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম, আমি চাই না ও চলে যাক। আন্টির মনে হয় আমার এই স্বীকারোক্তি টাই দরকার ছিল জানার। পাশেই খুন্তী টা ছিল রাখা। হাতে সেটা নিয়ে বেরিয়ে পরলেন উনি রান্না ঘর থেকে।
রাকাকে বললেন,
- এই জানোয়ার, যাদের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়, তাদের বউ দের কে সময় দেয় রে? বেশী বুঝিস, না? চুপচাপ উপরে যাবি। কি লাগবে বল শিব গিয়ে দিয়ে আসবে। আর কোথাও বেরোলে দশ টার মধ্যে বাড়ি ঢুকবি।
আমি উঁকি মেরে দেখছি ওকে রান্না ঘর থেকে। দুই মায়ের রণং দেহী মুর্তি কে পিছিয়ে সিঁড়ি তে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখান দিয়েই উঠে গেল উপরে। যাবার সময়ে ভাই কে ডাক দিয়ে গেল ও। এক চোখ জল নিয়েও হাসি পেয়ে গেল আমার ওকে দেখে। ভাবলাম, মা দের ঠেস একা তুই পাবি নাকি? এই যুযুধান লড়াই এ আমিও কিন্তু মজা পাচ্ছি বেশ।
রাতে খেয়ে দেয়ে আমি রূপচর্চা করছি। ছেলে ঘুমোয় নি। যা ঘুমিয়েছে আজকে দুপুরে, ওকে ঘুম পারাতে আমার কালঘাম ছুটে যাবে আজকে। একদম সিঁড়ির কাছের ঘরে রাকা আর ছেলে খেলছে। বিছানায় ধুপধাপ আওয়াজ পাচ্ছি আমি। রনি এসেছিল। রাকা বাড়ি টা বানাবে আবার। আন্টি কে আমি বুঝিয়েছিলাম। আর ছেলের উপরে রাগ করে থেকে কি হবে। সব হারিয়ে, আবার তো ও নিজেকে গোছাচ্ছে। এখন আমরা ওর পাশে না থাকলে কে থাকবে? রনি আর রাকা কথা বলছিল। শুনলাম অনেক টাকার ধাক্কা। আমার কি? লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। বাস আমার ইচ্ছে, বাড়ী টা আন্টির ইচ্ছে মতন তৈরি হোক। যেমন আন্টি চাইবেন। রাকার ইচ্ছে মতন মডিউলার হোম না। মানুষ দুটো, এর পরের জীবন টা নিজেদের ইচ্ছে মতন বাঁচুন।
চুল টা এখন আর বেঁধে শুই না। শুধু খেয়াল রাখি ছেলের গায়ে যেন না লাগে। চুল আঁচড়ানো হয়ে গেলে বিছানা টা পরিষ্কার করলাম। শোবার চাদর পেতে, বালিশ গুলো সজিয়ে দিলাম। মশা থাকে না তাও, মশার লিক্যুইড টা চালিয়ে দিলাম। এ সি টা শুরুতে একটু কমে দিয়ে ঘর টা ঠান্ডা করতে দিয়েছিলাম। এখন আবার ২৬ এ দিয়ে দিলাম। সেই সময়েই ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে এলো। এই প্রথম ছেলে আমার কাঁদল, আমার কাছে এসে। দেখেই আমার বুক টা উড়ে গেছিল একেবারে। আমি ছুটে গেলাম,
- কি হয়েছে সোনা?
কোলে তুলে নিলাম ছেলেকে। জানিনা কি হয়েছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ও কাঁদলেই বুক কাঁপে আমার। একেবারে বুকে নিয়ে বললাম,
- কি হয়েছে আমার বুক জুড়ানীর? ও সোনা। কি গো? কি হলো? কোথাও ব্যাথা পেলে নাকি? দেখি দেখি দেখি? কোথায় লেগেছে?
আমি পাগলের মতন ওর হাত পা, গলা কাঁধ দেখছি, কোথাও আঘাতের চিহ্ন আছে নাকি। ভাবছি ওর বাপ তো ছিলো সাথে। কি করে লাগল? তখন ছেলে আমাকে বলল
- পাপা বলেছে আমাদের কাছে শুতে আসবে না।
- অ্যাঁ?
মনে মনে ভাবলাম, ভালই তো। নিজে থেকেই আপদ বিদেয় হবে তো ভাবিনি আমি। না মানে ঠিক আপদ না। তাও অন্য ঘরে শুলে তো ভালই। উৎসাহিত হয়ে, ছেলেকে বললাম,
- তাতে কি , মা আর শিভ শোবে।
আবার ছেলের ভ্যা করে কান্না শুরু হলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম
- ও আচ্ছা আচ্ছা, পাপার কাছে শোবে শিব?
আরো জোরে কান্না শুরু করল ছেলে আমার। কি হলো ছেলের? বললাম
- ও আমার শিভ, পাপা আর মা দুজনের সাথে শোবে?
এক কথায় কান্না বন্ধ হয়ে গেল ছেলের আমার। ভারী ঝামেলায় পরলাম তো আমি। এখন আমাকেই হাতে পায়ে ধরে আনতে হবে? আবার বলতেও হবে, মা আর ছেলেকে নিয়ে শুতে। কেন সবাই বোঝে না। আমি নিজেই একশ। কাউকে লাগবে না আমাকে সুরক্ষা দিতে। একসাথে থাকার সামাজিক মানে তো এটাই, তাই না? মা দুর্বল তাই বাপ, মা আর ছোট ছেলেকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ভারি আমার শক্তিশালী মরদ রে! যাই কি আর করব!! মরদ কে নিয়ে আসি। ছেলেকে কোলে নিয়েই গেলাম ও ঘরে। দেখলাম চিৎপাত হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। মাথায় বালিশ নেই।
কি যে করব। রাগে আমি ফেটে পরছি একেবারে। তাও যতটা সম্ভব বউ এর আচরণ ধরে রেখে রাকাকে বললাম,
- ছেলে কাঁদছে তো? ও ঘরে চল।
আমার দিকে তাকিয়ে একেবারে পাত্তা না দিয়েই বলল,
- আমি আর ওঘরে শোব না। তুই বিব্রত হোস। বিরক্ত হোস। এমন ভাবে ওই দিকে সরে শুয়ে থাকিস যেন আমি অছ্যুত। নিজের বউ এর সামনে জামা কাপড় ছাড়ব, তাও আমাকে শুনতে হয় আমি আন-সিভিলাইজড।
বোঝ! সেটা আমি কখন মিন করলাম তাই? আমি ছেলেকে নিয়ে সরে গেছিলাম, কারন আমাদের জায়গা কম লাগে। তুই হাত পা ছড়িয়ে শুতে পারবি তাই তো গেছিলাম! আর আন- সিভিলাইজড কেন বলব না ওকে? কাউকে মানে না, উদোম হয়ে চেঞ্জ করতে যাচ্ছিল, তাকে আর কি বলা যেতে পারে। আমার পারমিশন নেবার ও প্রয়োজন বোধ করল না। এত কিছু ওকে বললাম না।
বললাম,
- ঠিক আছে। আজকে ছেলেকে তোর দিকে গুঁজে শোয়াব। আর ছেলের সামনে চেঞ্জ এর কথা কেন বলছিস তুই? আমি তোর সামনে চেঞ্জ করেছি? তুই তো আমার প্রথম বর। তোর মতন তো দ্বিতীয় নয় আমার। আমার বাজে লেগেছিল তাই বলেছিলাম। আর বলব না। উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াস এবার থেকে।এখন চল ও ঘরে।
- না যাব না। আমি তো তোকে ডিস্টার্ব করতে চাইছি না। আর আমি তো মানা করিনি আমার সামনে তোকে চেঞ্জ করতে। আমি কি উলঙ্গ হয়েছিলাম নাকি? যে আমাকে ওমনি করে ঠেস দিয়ে কথা বলছিস?
রেগে গেলাম এবারে। পার্ভার্ট একটা। মা যাতে শুনতে না পায় সেই ভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম
- এই হিজড়ে টাও চাইছে না তোকে ডিস্টার্ব করতে। ওকে? ভাল হচ্ছে না কিন্তু রাকা! মা শুনতে পেলে কিন্তু আমাকেই বকবে বলে দিলাম। কাল থেকে অনেকবার জাস্ট মার খেতে খেতে আমি বেঁচেছি। আর এতো পার্ভার্ট কেন তুই? হিজড়ে কেও ছাড়বি না? তার চেঞ্জ করা দেখবি?
আমার দিকে তাকিয়ে রইল রাকা। বলল
- ঠিক আছে আমি কাকিমা কে বলে দেব। তোকে আর বকবে না। আর জানিনা তুই কি বলছিস। নিজের বউ চেঞ্জ করা না দেখার কিছু নেই। লোকের বউ এর তো দেখছি না।
খেঁকিয়ে গেলাম। কিন্তু গলা নামিয়েই খেঁকালাম
- তোকে ভাবতে হবে না সেটা। পার্ভার্ট কোথাকার। তুই চল এখন। ছেলে কাঁদছে কিন্তু রাকা। ও তোর কাছেও শোবে না একলা। দুজন কেই চাই ওর। না হলে আমার মরন ছিল না, তোকে এসে পায়ে ধরে নিয়ে যেতে।
ও একবার আমাকে দেখল, একবার ছেলেকে দেখল, মুখে যেন হাসি এলো ওর।
- যার জন্যেই হোক। ধরছিস তো!!!
শালা খচ্চর। শুয়োর। কুত্তা। হারামী। আরো ছিল গালি, আমাকে ওই শিখিয়েছিল। গান্ডু, বাঞ্চোত, ঢ্যামনা। সব গুলো গালি ওকে মনে মনে দিলাম আমি। ছেলের ফোঁপানি থামছে না। কি বাপ সত্যি বাবা। ছেলের কেঁদে সর্দি লেগে যাবে, এ টুকুও বুঝতে পারছে না? আমার ই দায়। আবার বললাম রাকা কে আমি করুন হয়ে। ছেলের কান্না আর দেখতে পারছি না আমি।
- তুই চল কিন্তু এবারে। ছেলে কাঁদছে। প্লিস।
- একটা শর্তে।
- এখানে আবার শর্ত কি? তোর ছেলে নয় নাকি? ছেলে তো আমাকে একা চাইছে না। তোকেও চাইছে। এখানে শর্ত কীসের?
- আছে। মানলে যাব। না মানলে তুই বুঝে কর।
অদ্ভুত তো! এদিকে ছেলে এবারে নাকের জল মুছতে শুরু করেছে। আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম একবার। মনে হচ্ছে এবারে মাথায় আগ্নেয়গিরি ফাটবে। ছেলের উপরেও রাগ ধরছে। এতো দিন বাপ ছাড়া চলছিল ওনার। আর আজকেই ওনার বাপ কে দরকার ঘরে। বদমাশ। যেমন বাপ জ্বালিয়েছে আমাকে সারা জীবন। তেমন ছেলেও তো করবে! কিন্তু চোখ লাল করে ফেলেছে কেঁদে। বাধ্য হয়ে বললাম,
- আচ্ছা বল। কি শর্ত।
- সেটা ও ঘরে বলব।
- না !!!
বলতে যাচ্ছিলাম, না এইখানেই বল। ও ঘরে গিয়ে উল্টো পালটা চাইলেই তো হলো না। কিন্তু জোর করে না বলা টা আমার মা শুনল। কারন মা উপরে আসছিল, ছেলেকে দেখতে, শুতে যাবার আগে। পিছনে দেখলাম, আন্টিও আছে। আমার না টা মা শুনতে পেয়েছে। কিন্তু আগের কথা গুল তো আমি আস্তে আস্তে বলছিলাম, সেটা মা শোনে নি। আমার বড় করে না টাই মা শুনল আর যথারীতি আমার উপরে চড়ে গেল।
- কীসের না?
আমি কি করে মা কে বলি, কীসের না? জানি এদিক ওদিক কিছু শুনলেই আমাকেই বকবে মা। কোলে শিভ আর তার চোখে জল। ছেলের চোখে জল দেখে মা বলল আমাকে,
- কি হলো ছেলে কাঁদছে কেন? নিশ্চই ঝগড়া করছিস রাকার সাথে। ছেলে তো কাঁদবেই। ইরেস্পন্সিবল মেয়ে কোথাকার। কি হয়েছে রাকা?
আমি বলে উঠলাম,
- আরে আমি কি করলাম তাই?
রাকা বলল,
- না আমি বলছিলাম, তুই তো আমার বউ নাকি? তার উত্তরে ও না বলল। আর ছেলে কাঁদল।
মা অবাক হয়ে গেল একেবারে। আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল,
- সে কী? কি রে তুই এ কথা বলেছিস?
- না মা , মানে আমি…কেন……বলব…
শুনলোই না মা আর আমার কথা ছেলেকে নিজের কোলে নিতে গেল। ছেলে যাবে না আমার কোল থেকে। আমি ছেলেকে কানে কানে বললাম
- তুমি যাও দিদুনের সাথে আমি পাপা কে নিয়ে আসছি।
- প্রমিস?
কপালে চুমু খেয়ে বললাম ছেলেকে,
- উম্মমাআহহ প্রমিস।
মা ছেলেকে কোলে নিয়ে বলল
- আগে নিজেদের ঝগড়া মেটা, তার পরে ছেলে মানুষ করার কথা ভাববি।
ছেলেকে নিয়ে দুই মা, হাসতে হাসতে আমার ঘরের দিকে চলে গেল। আমি রাকার দিকে তাকিয়ে রইলাম রেগে। রাকা ও হাসছিল ইতরের মতন। দেখছিলাম ওকে। কখন যে আমার মন ভিজে যায় কে জানে। রাগ টা ফিরে এলো আবার। আমাকে দেখেই বলল
- দ্যাখ তুই এখনো রেগে আছিস।
রুখে গেলাম আমি একেবারে,
- তুই মা কে মিথ্যা বললি কেন?
- তুই শর্তে রাজী হচ্ছিস না কেন?
- আরে কি শর্ত সেটা তো বল?
- সেটা ও ঘরে বলব।
অদ্ভুত হারামী ছেলে। সামনে তো আর গালি দিতে পারব না। মনে মনেই দি। হার মানলাম আমি। ওর দিকে কট্মট করে চেয়ে বললাম
- ঠিক আছে ও ঘরেই বলিস, এখন ঘরে চল। কিন্তু মাথায় রাখিস এটা আমি ছেলের জন্যেই কিন্তু শুনলাম। আর তুই আমাকে প্রতিটা ক্ষেত্রে ছেলের আড়ালে থেকে আমাকে নুইয়ে দিচ্ছিস। কাপুরুষ কোথাকার!!!
- ও আমি কাপুরুষ?
- কোন সন্দেহ আছে তোর?
খানিক চুপ করে থাকল। আমার দিকে তাকাল একবার। তারপর আবার চিত হয়ে শুয়ে পরে বলল
- আমি যাব না। তুই চলে যা।
এতো আচ্ছা ঝামেলায় পরলাম আমি। আমার ছেলের থেকেও বাচ্চা হয়ে গেছে। ছেলেকে চুমু খেয়ে বললাম, ও কান্না থামাল। আর একে দেখো? আর পারছি না আমি এর সাথে। বললাম,
- প্লিস চল না। কেন আমাকে এই ভাবে জ্বালাচ্ছিস? মা কিন্তু আমাকেই বকবে।
উঠে বসে বলল,
- আমি কাপুরুষ?
কি আর বলি? বললাম,
- আচ্ছা নোস। চল
- আমি পার্ভার্ট?
- না চল এবারে?
- বউ এর চেঞ্জ দেখা পার্ভার্টনেস এর মধ্যে বিলং করে?
- দ্যাখ আর ভালো লাগছে না কিন্তু। আচ্ছা , না বিলং করে না।
ভাল লাগে না, সব সময়ে আমাকে হার মানিয়েই ওর শান্তি হয়। জানি এটা ও ইচ্ছে করে করছে। কারন বলার সময়ে ওর মুখ টা হাসি হাসি ছিল। সব থেকে বড় কথা ও জানত আমি রাজী হব। কারন ও জানে ওকে আমি ভালোবাসি আর শিভ ছাড়া আমি কিছু বুঝি না। যখন ই তর্কে হেরে যায় আমাকে এই ভাবেই কাবু করে ও। জানে ওর ভালবাসার জন্য আমি সব মেনে নেব। আমার তখন ও আমার ভালবাসার সুযোগ নিত। এখন তো ছেলেও সাথে এসে জুটেছে। তখন কোন ভাবেই আমার অসুবিধা হতো না। এখন নিজের ইগো এতো বেড়ে গেছে যে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেইল গুলো কে নাটক মনে হয়। কিন্তু কিছু করার থাকে না আমার। আমার হার মানাতে খুশী হয়ে বলল
- চল।
আমি ওকে ইশারা করে ঘরে আসতে বললাম, ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে। নিজের ঘরে ফিরে আসতে আসতে মনে হলো,কি জানি মনের মধ্যে থেকে একটা বোঝা ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে আমার। ঘরে ঢুকে দেখলাম, দুই মা মিলে ছেলেকে ঘুম পারানোর চেস্টায় আছে। কিন্তু ছেলে আমাকে দেখেই হেসে একেবারে আমার কাছে চলে এল। বলল
- পাপা কই?
পিছন থেকে রাকা এসে ঢুকল। ছেলেকে বলল,
- এই যে পাপা এসে গেছে। চল আমরা শুয়ে পরি কেমন?
ছেলে এড়িয়ে গেল। বলল,
- না আমি মা এর কাছে শোব। কিন্তু তুমিও শউ আমাদের কাছে।
সবাই হেসে উঠল ওর কথায়। দুই মা, বুঝে গেল, আমরা দুজন ভালই জব্দ হয়েছি। আর সত্যি তো, আমি তো মারাত্মক জব্দ হয়েছি। বুঝে গেলাম, ছেলের এমন অনেক জেদ আসবে এর পরে। বেশ কিছু জেদ হবে যে গুলো গঠন মূলক। সেগুলোর জন্য আমাকেও তৈরি থাকতে হবে। রাকার কিছু যায় আসবে না। কারন আমার সাথে থাকা বা আমাকে ভোগ করা ও অনেক দিন আগেই মেনে নিয়েছিল। অনেক কিছু করেও ছিলো ও আমাকে। সে গুলো আমি মানতে পারিনি। কিন্তু আজকে আমাকে মানতে হবে। ও যদি আমাকে চায়, আমাকেও এগোতে হবে। না হলে ওর সাথে থাকতে আমি পারব না। সামান্য রাতে শোয়া নিয়ে ছেলে আজকে যে ঝামেলা টা করল, কিছু দিন পরে আমরা একসাথে বেশ কিছু দিন না থাকলে ছেলে কাঁদতেও পারে ওর পাপার জন্য।
যাই হোক আমি ছেলেকে শুইয়ে দিলাম। মায়ে রা চলে গেল। রাকা শুয়ে পড়ল অর্ধ উলঙ্গ হয়ে। আগের দিনের শর্টস টা পরে। আমি ছেলেকে মাঝে দিয়ে ঘুম পারাতে শুরু করলাম। পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি ওর। রাকাও ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝেই আমার হাতের সাথে রাকার হাত স্পর্শ হচ্ছে। আমি হাত সরিয়ে নিচ্ছি। আর আমি সরিয়ে নিলেই ছেলে উঠে পড়ছে। আর আমাকে বলছে,
- মা !! দাও না
- হ্যাঁ বাবা দিচ্ছি।
আবার আমি হাত বোলাচ্ছি। আবার রাকা হাত নিয়ে আসছে। এমনি করে কিছু বার হবার পরে, আমি মুখ তুলে দেখলাম ও এদিকে ফিরে শুয়ে আছে। নাইট ল্যাম্প টা জ্বলছিল। মুখ টা তুলে আমি হাত বোলাতে মানা করলাম। কিন্তু আবার কিছুক্ষন পরে সেই এক ই ঝামেলা শুরু করল। বুঝলাম, ছেলেকে পিঠে হাত বুলিয়ে দেওয়া নয়, আমার হাতে হাত দেওয়াই ওর উদ্দ্যেশ্য। কিছু বললাম না শুয়োর টা কে। ভাবলাম ছেলে ঘুমিয়ে যাক তারপরে দেখছি ওকে আমি।
উফ কি যে জ্বালালো ছেলে। প্রায় মিনিট চল্লিশ পর ঘুমোল ও। মাঝে মাঝেই উঠে বসে, বাপের সাথে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করছে। আবার আমার রাগী মুখ দেখে বালিশে মাথা গুঁজে দিচ্ছে। আবার মুখ টা একেবারে আমার বুকে গুঁজে দিচ্ছে আমার জড়িয়ে ধরে। আবার উঠে আমার পেটের উপরে গা এলিয়ে শুয়ে পরছে।জানি দুপুরে ঘুমিয়েছে, ছেলের ঘুম আসছে না। পুরো সময় টাই ওকে আমি ধৈর্য্য ধরে আদর করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম। আর সেই সময়ে সারাক্ষন আমার হাত টা রাকা ইচ্ছে মতন স্পর্শ করল। আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলল। কিছুই বলিনি আমি ওকে আর। ছেলেকে ঘুম পারিয়ে আমি বাথরুম যাব বলে উঠলাম, আর রাকা আমাকে উঠতে দেখে উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পরল। আমি বাথরুম থেকে ফিরে ছেলেকে ভালো করে ঢাকা দিয়ে দিলাম। উঠে না পরে। আমাকে রাকার সাথে কথা বলতে হবে। জানিনা বুঝবে কিনা। আমার ভাগ্যেই এই আবাল জুটেছে। জুটতে তো পারত বয়স্ক একটা লোক, যাকে এই সব বোঝাতে হতো না। ছেলে কে সামান্য দেওয়ালের দিকে সরিয়ে দিলাম। নিজে মাঝে এসে রাকার মাথার কাছে বসলাম। রাকাকে বললাম,
- কি ব্যাপার কি তোর? বার বার হাতে হাত দিচ্ছিলি কেন? তোর মনে হচ্ছে না, তুই এবারে বেশী চাইছিস আমার কাছে। আমি কেন এই গুলো মেনে নেব তুই আমাকে বল?
শালা পা তো না, যেন ভুতের পা। নাহ আমাকে ওর সাথে প্রথম পুরুষে কথা বলা শুরু করতে হবে। কিন্তু ওকে - তুমি তো মরে গেলেও বলতে পারব না আমি। তুই বলব? মা জানলে যদি রাগ করে? কি যে করব বুঝতেই পারছি না আমি। ও তো এখন আমার বর হলো। না না কি যেন, স্বামী হল। কিন্তু অনেক আগে থেকেই তো আমার বন্ধু নাকি? ধুর আগে সোজাসুজি কথা তো বলতে শুরু করি। তারপরে দেখা যাবে।
পর্ব ছাব্বিশ
বাড়ি যখন ঢুকলাম তখন ভাগ্যিস কেউ আমাকে অতো টা খেয়াল করে নি। ছেলের ড্রেস গুলো কাউকে দেখালাম না। কিন্তু রাকার আন্ডির কালার ভালো পেলাম না। কিছু পিঙ্ক আর অরেঞ্জ খোঁজ করলাম, ছেলেটা কেমন বোকার মতন চেয়েছিল আমার দিকে। ছেলেদের কি পিঙ্ক হয় না নাকি? আসলে আমিও পরেছি ক্লাস নাইন অব্দি। কিন্তু তখন তো ফুল জাঙ্গিয়া পরতাম না আমি। কাটা জাঙ্গিয়া পরতাম। মানে মা ই কিনে আনত। কিন্তু তখন তো লাল বা আকাশী আমি পরেছি। রাকার জন্য পেলাম না। কালো, ছাই রঙের ই নিলাম। আর কোন কালার পছন্দ হলো না। যা দাম, পাঁচ টা নিতেই অনেক টাকা চলে গেলো। আর ছেলের টা তো দামী হবেই একটু। ছোট ছেলের ড্রেস তো আর কম দামী নিতে পারি না। আমার ও কিছু ব্রা কিনলাম। কিছু প্যান্টি ও। তোয়ালে কিনলাম রাকার। এখানে থাকবে তো এখন কুত্তা টা। আমার তোয়ালে নিলেই রাগ ধরবে আমার। আর ছেলের তোয়ালে নিলে তো ওকে আমি খুন করে ফেলব।
ঘরে এসে দেখলাম বাপ ব্যাটা তে খেলা চলছে। আমার ভাই ঘরে রয়েছে। মা মনে হয় এই ঘরেই খেতে দিয়েছিল ওকে। টেবিলে রাকা খালি প্লেট টা। ছেলে আমাকে দেখেই বাপের গায়ের উপর থেকে লাফিয়ে একেবারে আমাকে কোলে। ওকে কোলে নিয়েই আমি জিনিস গুলো সব আলমারি তে রেখে দিলাম। ভাই বলল,
- দিদি, ছেলে সামলা, দুজনে মিলে ওকে রাখতে পারছিলাম না। বল খেলল হলো না। টিভি তেও হলো না। স্বাতীর সাথেও খেলল না। শেষে রাকা দার উপরে খানিক ধামসে চুপ হলো। রাকা দা তো ঠিক ই করছিল, দশ মিনিটে তুই না এলে শিভ কে নিয়ে বেরোবে।
আমি ছেলেকে দেখে, বেশ করে আদর করে নিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম,
- খেয়েছিস সোনা? আমি তো ভাবলাম , আমার শিভ ঘুমোচ্ছে। আমি একটু কেনাকাটি করে আসি।
ছেলেকে বিছানায় রেখে আমি ফ্রেশ হয়ে এলাম ঘরে। ততক্ষন ভাই হাওয়া হয়ে গেছে। রাকা বিছানায় বসে। ছেলে বাপের ঘাড়ে উঠে একেবারে অতিস্ট করছে বাপ কে।রাকা চুপ করে অত্যাচার সহ্য করছে। দেখেই হাসি পেয়ে গেল আমার। আমাকে দেখেই ছেলে আবার আমার কোলে। আমি প্যাকেট টা খুলে, জাঙ্গিয়ার প্যাকেট টা, তোয়ালে টা ওকে দিলাম। আর চপ্পল টা বিছানার নীচে রেখে দিলাম।
ও অবাক হয়ে গেল। বলল,
- কি এগুলো?
উফ কি ভাবে যে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলি আমি? টেবিলে রাখা ওর খাওয়া প্লেট টা হাতে নিয়ে উল্টো দিকে মুখ করে বললাম,
- কিছু আন্ডি আছে। আমি দাম দিয়েই কিনেছি। পুরোন টা ছেড়ে পরে নি…………স। আর তোয়ালে টা এখানে থাকলে ইউস করি……স। আর চপ্পল টা বের করে দিলাম।
যা পছন্দ করতাম না, তাই করতে হলো। আজ থেকে কিছু বছর আগেও আমি এই গুলো রাকার সাথে করতে পছন্দ করতাম। আমি চাইতাম, আমি যেমন বলব ও তেমন ভাবেই চলুক। কিন্তু এই রকম ভাবে, ও আমার বর বলে আমাকেই ওর সব টা দেখতে হবে এটা ভাবিনি। মানে ওর ভাল মন্দ টা আমাকেই দেখতে হবে। ও এই গুলো পেয়ে অবাক হয়ে চেয়ে রইল আমার দিকে। মুখে তীব্র বিরক্তির আভাসে, আমি ওর খাওয়া প্লেট টা নিয়ে বেরিয়ে আসব, আমাকে তখন বলল,
- জানি তোর অসুবিধা হচ্ছে। সরি। আমি চলে যাব আজকে। আসলে ছেলে কে কাছে পেয়ে মাথায় ছিল না আমার। আজকে সকালেও তোর এই রাগ টা আমি এনজয় করছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তোকে আমি বিব্রত করছি। হয়ত তুই বিরক্ত হচ্ছিস।
বাহ, ভালো। জানি ও ছেলের সাথে এতো মিশত না যেটা এখন মিশছে। সারাদিন খেলা গায়ে গা লাগিয়ে থাকা।আমার ও ভালো লাগছে সেটা। ছেলে বাবা কে না পেলে সেটা মায়ের খামতি। বাবা যে কত বড় একটা মানুষের সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। কিন্তু , কালকে সত্যি করেই আমি বিরক্ত ছিলাম। কিন্তু আজকে তো নই। আর সেটা হলেও, আমাকে সময় দিতে হবে না? আমি তো মেনে নিচ্ছি সব কিছু ধীরে ধীরে। এখন রাকা নিজে আমাকে সাপোর্ট না করলে আমি কি করব?রেগে গেলাম ওর উপরে আবার। সব আমার উপরে দায় চাপালে আমি কি করি? ওর বোঝা উচিৎ আমি সাধারন মেয়ে নই। রেগেই বললাম ওকে,
- বুঝতে পেরেছিস?
- হ্যাঁ
- খুব ভালো।
আমি বেশী চেচালাম না আর। ছেলেকে কোলে নিয়ে চলে এলাম। আমি রান্না ঘরে মা এর সাথে কাজ করতে লাগলাম ছেলেকে কোলে নিয়েই। বাইরে ভাই ছেলেকে ডাকতেই চলে গেল ভাই আর স্বাতির সাথে খেলতে। আন্টি ছিল রান্না ঘরে। তরকারি টা কষছিল। আমি আটা নিয়ে জল দিয়ে মাখতে শুরু করলাম। জানি রাকাও রুটি খাবে আজকে। পর পর দুদিন ভাত খেল। আর ওকে ভাত দেওয়া যাবে না। সামনে খেলা আছে। কিন্তু আমার কানে রাকার কথা বাজছে- ছেলেকে কাছে পেয়ে মাথায় ছিল না তুই বিরক্ত হচ্ছিস । কথাটা একেবারে আমাকে মরমে মেরে ফেলছিল। সেই অনুতাপ ঢাকতে আমি তাড়াতাড়ি হাত চালাচ্ছিলাম, আটা মাখাতে। কিছু পরেই বাইরে মনে হলো মা বলছে রাকা কে
- একি? কোথায় চললে তুমি?
রাকা কথা বলল
- না কাকিমা, আবার কি? এবারে ও বাড়ি যাই। বাড়ি টা বানাতে হবে তো আপনার মেয়ের জন্য? রনি কে ডেকেছি। প্ল্যান আছে অনেক।
মাকে যতই বোঝানোর চেষ্টা ও করুক হাসি মুখে থেকে, বা হেসে হেসে কথা বলে, জানি আমার জন্যেই চলে যাচ্ছে ও। না হলে রনি কে এখানে ডাকা যেত না? আহা রে, ছেলেকে নিয়ে তো ভালই ছিল শয়তান টা। আমি যে কি না? কেন ওকে বলতে পারলাম না, আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না? বলতে পারব ও না আর। এতো দিন হয়ে গেলো। ১৬ বছর। এখনো আমাকে না বুঝলে, আবার কবে বুঝবে ও? চোখে জলে ভরে এলো আমার। আন্টি কাছেই ছিলেন। আমার মুখ টা তুলে ধরলেন আন্টি। চোখে জল দেখে বুঝে গেলেন, আমি চাইছি না ও যাক। বা বুঝলেন হয়ত, আমার কোন কথায় ও কষ্ট পেয়ে চলে যেতে চাইলেও, আমি চাইছি না ও চলে যাক। হয়ত আমার কান্নায় আন্টি আমার অনুতাপ দেখলেন। ওদিকে মা বলে চলেছে,
- কোন মতেই যাওয়া হবে না এখন তোমার। সে, তোমার বউ ছেলে, যেখানে খুশী নিয়ে যাও ওদের। কিন্তু এখন কিছুদিন তোমার কোথাও যাওয়া হবে না আমি বলে দিলাম।
রাকা চুপ রইল। তারপরে বলল মা কে,
- কাকিমা, আপনি বুঝতে পারছেন না। শিব কে সময় দিতে হবে তো একটু। ও বেচারী একটু বিব্রত। আসলে ও একলা থাকে। শিভের থাকা আর আমার থাকার মধ্যে অনেক ফারাক কাকিমা। ও একটু সামলে নিক, তারপরে তো আসব। আপনার জামাই আমি। যাব আর কোথায়? আর আমার ছেলে বউ তো এখানেই আছে।
ইশ, আমাকে সময় দেবে? সময় দিবি তো থাক, কে মানা করেছে? থেকে সময় দে আমাকে। আমি ঝগড়া করব সেগুলো শোন!! ছয় বছর আমাকে কষ্ট দিয়েছিস? এতো সহজেই কি পেয়ে যাবি নাকি আমার মন। অহংকারী একটা। আমি কি বলে এলাম নাকি তোকে উপরে, যে তুই চলে যা! এই সব নিজেই ভাববে উদ্গান্ডু টা, আর এর পরে আমি মায়ের কাছে বকা খাব, না!!!!! ছেলের সাথে ভালই তো আছিস এখানে। নাটক যত!!!! আমি ওই ভাবেই কাঁদতে কাঁদতে আন্টি কে জড়িয়ে ধরে ঘাড় নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম, আমি চাই না ও চলে যাক। আন্টির মনে হয় আমার এই স্বীকারোক্তি টাই দরকার ছিল জানার। পাশেই খুন্তী টা ছিল রাখা। হাতে সেটা নিয়ে বেরিয়ে পরলেন উনি রান্না ঘর থেকে।
রাকাকে বললেন,
- এই জানোয়ার, যাদের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়, তাদের বউ দের কে সময় দেয় রে? বেশী বুঝিস, না? চুপচাপ উপরে যাবি। কি লাগবে বল শিব গিয়ে দিয়ে আসবে। আর কোথাও বেরোলে দশ টার মধ্যে বাড়ি ঢুকবি।
আমি উঁকি মেরে দেখছি ওকে রান্না ঘর থেকে। দুই মায়ের রণং দেহী মুর্তি কে পিছিয়ে সিঁড়ি তে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখান দিয়েই উঠে গেল উপরে। যাবার সময়ে ভাই কে ডাক দিয়ে গেল ও। এক চোখ জল নিয়েও হাসি পেয়ে গেল আমার ওকে দেখে। ভাবলাম, মা দের ঠেস একা তুই পাবি নাকি? এই যুযুধান লড়াই এ আমিও কিন্তু মজা পাচ্ছি বেশ।
রাতে খেয়ে দেয়ে আমি রূপচর্চা করছি। ছেলে ঘুমোয় নি। যা ঘুমিয়েছে আজকে দুপুরে, ওকে ঘুম পারাতে আমার কালঘাম ছুটে যাবে আজকে। একদম সিঁড়ির কাছের ঘরে রাকা আর ছেলে খেলছে। বিছানায় ধুপধাপ আওয়াজ পাচ্ছি আমি। রনি এসেছিল। রাকা বাড়ি টা বানাবে আবার। আন্টি কে আমি বুঝিয়েছিলাম। আর ছেলের উপরে রাগ করে থেকে কি হবে। সব হারিয়ে, আবার তো ও নিজেকে গোছাচ্ছে। এখন আমরা ওর পাশে না থাকলে কে থাকবে? রনি আর রাকা কথা বলছিল। শুনলাম অনেক টাকার ধাক্কা। আমার কি? লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। বাস আমার ইচ্ছে, বাড়ী টা আন্টির ইচ্ছে মতন তৈরি হোক। যেমন আন্টি চাইবেন। রাকার ইচ্ছে মতন মডিউলার হোম না। মানুষ দুটো, এর পরের জীবন টা নিজেদের ইচ্ছে মতন বাঁচুন।
চুল টা এখন আর বেঁধে শুই না। শুধু খেয়াল রাখি ছেলের গায়ে যেন না লাগে। চুল আঁচড়ানো হয়ে গেলে বিছানা টা পরিষ্কার করলাম। শোবার চাদর পেতে, বালিশ গুলো সজিয়ে দিলাম। মশা থাকে না তাও, মশার লিক্যুইড টা চালিয়ে দিলাম। এ সি টা শুরুতে একটু কমে দিয়ে ঘর টা ঠান্ডা করতে দিয়েছিলাম। এখন আবার ২৬ এ দিয়ে দিলাম। সেই সময়েই ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে এলো। এই প্রথম ছেলে আমার কাঁদল, আমার কাছে এসে। দেখেই আমার বুক টা উড়ে গেছিল একেবারে। আমি ছুটে গেলাম,
- কি হয়েছে সোনা?
কোলে তুলে নিলাম ছেলেকে। জানিনা কি হয়েছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ও কাঁদলেই বুক কাঁপে আমার। একেবারে বুকে নিয়ে বললাম,
- কি হয়েছে আমার বুক জুড়ানীর? ও সোনা। কি গো? কি হলো? কোথাও ব্যাথা পেলে নাকি? দেখি দেখি দেখি? কোথায় লেগেছে?
আমি পাগলের মতন ওর হাত পা, গলা কাঁধ দেখছি, কোথাও আঘাতের চিহ্ন আছে নাকি। ভাবছি ওর বাপ তো ছিলো সাথে। কি করে লাগল? তখন ছেলে আমাকে বলল
- পাপা বলেছে আমাদের কাছে শুতে আসবে না।
- অ্যাঁ?
মনে মনে ভাবলাম, ভালই তো। নিজে থেকেই আপদ বিদেয় হবে তো ভাবিনি আমি। না মানে ঠিক আপদ না। তাও অন্য ঘরে শুলে তো ভালই। উৎসাহিত হয়ে, ছেলেকে বললাম,
- তাতে কি , মা আর শিভ শোবে।
আবার ছেলের ভ্যা করে কান্না শুরু হলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম
- ও আচ্ছা আচ্ছা, পাপার কাছে শোবে শিব?
আরো জোরে কান্না শুরু করল ছেলে আমার। কি হলো ছেলের? বললাম
- ও আমার শিভ, পাপা আর মা দুজনের সাথে শোবে?
এক কথায় কান্না বন্ধ হয়ে গেল ছেলের আমার। ভারী ঝামেলায় পরলাম তো আমি। এখন আমাকেই হাতে পায়ে ধরে আনতে হবে? আবার বলতেও হবে, মা আর ছেলেকে নিয়ে শুতে। কেন সবাই বোঝে না। আমি নিজেই একশ। কাউকে লাগবে না আমাকে সুরক্ষা দিতে। একসাথে থাকার সামাজিক মানে তো এটাই, তাই না? মা দুর্বল তাই বাপ, মা আর ছোট ছেলেকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ভারি আমার শক্তিশালী মরদ রে! যাই কি আর করব!! মরদ কে নিয়ে আসি। ছেলেকে কোলে নিয়েই গেলাম ও ঘরে। দেখলাম চিৎপাত হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। মাথায় বালিশ নেই।
কি যে করব। রাগে আমি ফেটে পরছি একেবারে। তাও যতটা সম্ভব বউ এর আচরণ ধরে রেখে রাকাকে বললাম,
- ছেলে কাঁদছে তো? ও ঘরে চল।
আমার দিকে তাকিয়ে একেবারে পাত্তা না দিয়েই বলল,
- আমি আর ওঘরে শোব না। তুই বিব্রত হোস। বিরক্ত হোস। এমন ভাবে ওই দিকে সরে শুয়ে থাকিস যেন আমি অছ্যুত। নিজের বউ এর সামনে জামা কাপড় ছাড়ব, তাও আমাকে শুনতে হয় আমি আন-সিভিলাইজড।
বোঝ! সেটা আমি কখন মিন করলাম তাই? আমি ছেলেকে নিয়ে সরে গেছিলাম, কারন আমাদের জায়গা কম লাগে। তুই হাত পা ছড়িয়ে শুতে পারবি তাই তো গেছিলাম! আর আন- সিভিলাইজড কেন বলব না ওকে? কাউকে মানে না, উদোম হয়ে চেঞ্জ করতে যাচ্ছিল, তাকে আর কি বলা যেতে পারে। আমার পারমিশন নেবার ও প্রয়োজন বোধ করল না। এত কিছু ওকে বললাম না।
বললাম,
- ঠিক আছে। আজকে ছেলেকে তোর দিকে গুঁজে শোয়াব। আর ছেলের সামনে চেঞ্জ এর কথা কেন বলছিস তুই? আমি তোর সামনে চেঞ্জ করেছি? তুই তো আমার প্রথম বর। তোর মতন তো দ্বিতীয় নয় আমার। আমার বাজে লেগেছিল তাই বলেছিলাম। আর বলব না। উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াস এবার থেকে।এখন চল ও ঘরে।
- না যাব না। আমি তো তোকে ডিস্টার্ব করতে চাইছি না। আর আমি তো মানা করিনি আমার সামনে তোকে চেঞ্জ করতে। আমি কি উলঙ্গ হয়েছিলাম নাকি? যে আমাকে ওমনি করে ঠেস দিয়ে কথা বলছিস?
রেগে গেলাম এবারে। পার্ভার্ট একটা। মা যাতে শুনতে না পায় সেই ভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম
- এই হিজড়ে টাও চাইছে না তোকে ডিস্টার্ব করতে। ওকে? ভাল হচ্ছে না কিন্তু রাকা! মা শুনতে পেলে কিন্তু আমাকেই বকবে বলে দিলাম। কাল থেকে অনেকবার জাস্ট মার খেতে খেতে আমি বেঁচেছি। আর এতো পার্ভার্ট কেন তুই? হিজড়ে কেও ছাড়বি না? তার চেঞ্জ করা দেখবি?
আমার দিকে তাকিয়ে রইল রাকা। বলল
- ঠিক আছে আমি কাকিমা কে বলে দেব। তোকে আর বকবে না। আর জানিনা তুই কি বলছিস। নিজের বউ চেঞ্জ করা না দেখার কিছু নেই। লোকের বউ এর তো দেখছি না।
খেঁকিয়ে গেলাম। কিন্তু গলা নামিয়েই খেঁকালাম
- তোকে ভাবতে হবে না সেটা। পার্ভার্ট কোথাকার। তুই চল এখন। ছেলে কাঁদছে কিন্তু রাকা। ও তোর কাছেও শোবে না একলা। দুজন কেই চাই ওর। না হলে আমার মরন ছিল না, তোকে এসে পায়ে ধরে নিয়ে যেতে।
ও একবার আমাকে দেখল, একবার ছেলেকে দেখল, মুখে যেন হাসি এলো ওর।
- যার জন্যেই হোক। ধরছিস তো!!!
শালা খচ্চর। শুয়োর। কুত্তা। হারামী। আরো ছিল গালি, আমাকে ওই শিখিয়েছিল। গান্ডু, বাঞ্চোত, ঢ্যামনা। সব গুলো গালি ওকে মনে মনে দিলাম আমি। ছেলের ফোঁপানি থামছে না। কি বাপ সত্যি বাবা। ছেলের কেঁদে সর্দি লেগে যাবে, এ টুকুও বুঝতে পারছে না? আমার ই দায়। আবার বললাম রাকা কে আমি করুন হয়ে। ছেলের কান্না আর দেখতে পারছি না আমি।
- তুই চল কিন্তু এবারে। ছেলে কাঁদছে। প্লিস।
- একটা শর্তে।
- এখানে আবার শর্ত কি? তোর ছেলে নয় নাকি? ছেলে তো আমাকে একা চাইছে না। তোকেও চাইছে। এখানে শর্ত কীসের?
- আছে। মানলে যাব। না মানলে তুই বুঝে কর।
অদ্ভুত তো! এদিকে ছেলে এবারে নাকের জল মুছতে শুরু করেছে। আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম একবার। মনে হচ্ছে এবারে মাথায় আগ্নেয়গিরি ফাটবে। ছেলের উপরেও রাগ ধরছে। এতো দিন বাপ ছাড়া চলছিল ওনার। আর আজকেই ওনার বাপ কে দরকার ঘরে। বদমাশ। যেমন বাপ জ্বালিয়েছে আমাকে সারা জীবন। তেমন ছেলেও তো করবে! কিন্তু চোখ লাল করে ফেলেছে কেঁদে। বাধ্য হয়ে বললাম,
- আচ্ছা বল। কি শর্ত।
- সেটা ও ঘরে বলব।
- না !!!
বলতে যাচ্ছিলাম, না এইখানেই বল। ও ঘরে গিয়ে উল্টো পালটা চাইলেই তো হলো না। কিন্তু জোর করে না বলা টা আমার মা শুনল। কারন মা উপরে আসছিল, ছেলেকে দেখতে, শুতে যাবার আগে। পিছনে দেখলাম, আন্টিও আছে। আমার না টা মা শুনতে পেয়েছে। কিন্তু আগের কথা গুল তো আমি আস্তে আস্তে বলছিলাম, সেটা মা শোনে নি। আমার বড় করে না টাই মা শুনল আর যথারীতি আমার উপরে চড়ে গেল।
- কীসের না?
আমি কি করে মা কে বলি, কীসের না? জানি এদিক ওদিক কিছু শুনলেই আমাকেই বকবে মা। কোলে শিভ আর তার চোখে জল। ছেলের চোখে জল দেখে মা বলল আমাকে,
- কি হলো ছেলে কাঁদছে কেন? নিশ্চই ঝগড়া করছিস রাকার সাথে। ছেলে তো কাঁদবেই। ইরেস্পন্সিবল মেয়ে কোথাকার। কি হয়েছে রাকা?
আমি বলে উঠলাম,
- আরে আমি কি করলাম তাই?
রাকা বলল,
- না আমি বলছিলাম, তুই তো আমার বউ নাকি? তার উত্তরে ও না বলল। আর ছেলে কাঁদল।
মা অবাক হয়ে গেল একেবারে। আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল,
- সে কী? কি রে তুই এ কথা বলেছিস?
- না মা , মানে আমি…কেন……বলব…
শুনলোই না মা আর আমার কথা ছেলেকে নিজের কোলে নিতে গেল। ছেলে যাবে না আমার কোল থেকে। আমি ছেলেকে কানে কানে বললাম
- তুমি যাও দিদুনের সাথে আমি পাপা কে নিয়ে আসছি।
- প্রমিস?
কপালে চুমু খেয়ে বললাম ছেলেকে,
- উম্মমাআহহ প্রমিস।
মা ছেলেকে কোলে নিয়ে বলল
- আগে নিজেদের ঝগড়া মেটা, তার পরে ছেলে মানুষ করার কথা ভাববি।
ছেলেকে নিয়ে দুই মা, হাসতে হাসতে আমার ঘরের দিকে চলে গেল। আমি রাকার দিকে তাকিয়ে রইলাম রেগে। রাকা ও হাসছিল ইতরের মতন। দেখছিলাম ওকে। কখন যে আমার মন ভিজে যায় কে জানে। রাগ টা ফিরে এলো আবার। আমাকে দেখেই বলল
- দ্যাখ তুই এখনো রেগে আছিস।
রুখে গেলাম আমি একেবারে,
- তুই মা কে মিথ্যা বললি কেন?
- তুই শর্তে রাজী হচ্ছিস না কেন?
- আরে কি শর্ত সেটা তো বল?
- সেটা ও ঘরে বলব।
অদ্ভুত হারামী ছেলে। সামনে তো আর গালি দিতে পারব না। মনে মনেই দি। হার মানলাম আমি। ওর দিকে কট্মট করে চেয়ে বললাম
- ঠিক আছে ও ঘরেই বলিস, এখন ঘরে চল। কিন্তু মাথায় রাখিস এটা আমি ছেলের জন্যেই কিন্তু শুনলাম। আর তুই আমাকে প্রতিটা ক্ষেত্রে ছেলের আড়ালে থেকে আমাকে নুইয়ে দিচ্ছিস। কাপুরুষ কোথাকার!!!
- ও আমি কাপুরুষ?
- কোন সন্দেহ আছে তোর?
খানিক চুপ করে থাকল। আমার দিকে তাকাল একবার। তারপর আবার চিত হয়ে শুয়ে পরে বলল
- আমি যাব না। তুই চলে যা।
এতো আচ্ছা ঝামেলায় পরলাম আমি। আমার ছেলের থেকেও বাচ্চা হয়ে গেছে। ছেলেকে চুমু খেয়ে বললাম, ও কান্না থামাল। আর একে দেখো? আর পারছি না আমি এর সাথে। বললাম,
- প্লিস চল না। কেন আমাকে এই ভাবে জ্বালাচ্ছিস? মা কিন্তু আমাকেই বকবে।
উঠে বসে বলল,
- আমি কাপুরুষ?
কি আর বলি? বললাম,
- আচ্ছা নোস। চল
- আমি পার্ভার্ট?
- না চল এবারে?
- বউ এর চেঞ্জ দেখা পার্ভার্টনেস এর মধ্যে বিলং করে?
- দ্যাখ আর ভালো লাগছে না কিন্তু। আচ্ছা , না বিলং করে না।
ভাল লাগে না, সব সময়ে আমাকে হার মানিয়েই ওর শান্তি হয়। জানি এটা ও ইচ্ছে করে করছে। কারন বলার সময়ে ওর মুখ টা হাসি হাসি ছিল। সব থেকে বড় কথা ও জানত আমি রাজী হব। কারন ও জানে ওকে আমি ভালোবাসি আর শিভ ছাড়া আমি কিছু বুঝি না। যখন ই তর্কে হেরে যায় আমাকে এই ভাবেই কাবু করে ও। জানে ওর ভালবাসার জন্য আমি সব মেনে নেব। আমার তখন ও আমার ভালবাসার সুযোগ নিত। এখন তো ছেলেও সাথে এসে জুটেছে। তখন কোন ভাবেই আমার অসুবিধা হতো না। এখন নিজের ইগো এতো বেড়ে গেছে যে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেইল গুলো কে নাটক মনে হয়। কিন্তু কিছু করার থাকে না আমার। আমার হার মানাতে খুশী হয়ে বলল
- চল।
আমি ওকে ইশারা করে ঘরে আসতে বললাম, ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে। নিজের ঘরে ফিরে আসতে আসতে মনে হলো,কি জানি মনের মধ্যে থেকে একটা বোঝা ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে আমার। ঘরে ঢুকে দেখলাম, দুই মা মিলে ছেলেকে ঘুম পারানোর চেস্টায় আছে। কিন্তু ছেলে আমাকে দেখেই হেসে একেবারে আমার কাছে চলে এল। বলল
- পাপা কই?
পিছন থেকে রাকা এসে ঢুকল। ছেলেকে বলল,
- এই যে পাপা এসে গেছে। চল আমরা শুয়ে পরি কেমন?
ছেলে এড়িয়ে গেল। বলল,
- না আমি মা এর কাছে শোব। কিন্তু তুমিও শউ আমাদের কাছে।
সবাই হেসে উঠল ওর কথায়। দুই মা, বুঝে গেল, আমরা দুজন ভালই জব্দ হয়েছি। আর সত্যি তো, আমি তো মারাত্মক জব্দ হয়েছি। বুঝে গেলাম, ছেলের এমন অনেক জেদ আসবে এর পরে। বেশ কিছু জেদ হবে যে গুলো গঠন মূলক। সেগুলোর জন্য আমাকেও তৈরি থাকতে হবে। রাকার কিছু যায় আসবে না। কারন আমার সাথে থাকা বা আমাকে ভোগ করা ও অনেক দিন আগেই মেনে নিয়েছিল। অনেক কিছু করেও ছিলো ও আমাকে। সে গুলো আমি মানতে পারিনি। কিন্তু আজকে আমাকে মানতে হবে। ও যদি আমাকে চায়, আমাকেও এগোতে হবে। না হলে ওর সাথে থাকতে আমি পারব না। সামান্য রাতে শোয়া নিয়ে ছেলে আজকে যে ঝামেলা টা করল, কিছু দিন পরে আমরা একসাথে বেশ কিছু দিন না থাকলে ছেলে কাঁদতেও পারে ওর পাপার জন্য।
যাই হোক আমি ছেলেকে শুইয়ে দিলাম। মায়ে রা চলে গেল। রাকা শুয়ে পড়ল অর্ধ উলঙ্গ হয়ে। আগের দিনের শর্টস টা পরে। আমি ছেলেকে মাঝে দিয়ে ঘুম পারাতে শুরু করলাম। পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি ওর। রাকাও ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝেই আমার হাতের সাথে রাকার হাত স্পর্শ হচ্ছে। আমি হাত সরিয়ে নিচ্ছি। আর আমি সরিয়ে নিলেই ছেলে উঠে পড়ছে। আর আমাকে বলছে,
- মা !! দাও না
- হ্যাঁ বাবা দিচ্ছি।
আবার আমি হাত বোলাচ্ছি। আবার রাকা হাত নিয়ে আসছে। এমনি করে কিছু বার হবার পরে, আমি মুখ তুলে দেখলাম ও এদিকে ফিরে শুয়ে আছে। নাইট ল্যাম্প টা জ্বলছিল। মুখ টা তুলে আমি হাত বোলাতে মানা করলাম। কিন্তু আবার কিছুক্ষন পরে সেই এক ই ঝামেলা শুরু করল। বুঝলাম, ছেলেকে পিঠে হাত বুলিয়ে দেওয়া নয়, আমার হাতে হাত দেওয়াই ওর উদ্দ্যেশ্য। কিছু বললাম না শুয়োর টা কে। ভাবলাম ছেলে ঘুমিয়ে যাক তারপরে দেখছি ওকে আমি।
উফ কি যে জ্বালালো ছেলে। প্রায় মিনিট চল্লিশ পর ঘুমোল ও। মাঝে মাঝেই উঠে বসে, বাপের সাথে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করছে। আবার আমার রাগী মুখ দেখে বালিশে মাথা গুঁজে দিচ্ছে। আবার মুখ টা একেবারে আমার বুকে গুঁজে দিচ্ছে আমার জড়িয়ে ধরে। আবার উঠে আমার পেটের উপরে গা এলিয়ে শুয়ে পরছে।জানি দুপুরে ঘুমিয়েছে, ছেলের ঘুম আসছে না। পুরো সময় টাই ওকে আমি ধৈর্য্য ধরে আদর করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম। আর সেই সময়ে সারাক্ষন আমার হাত টা রাকা ইচ্ছে মতন স্পর্শ করল। আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলল। কিছুই বলিনি আমি ওকে আর। ছেলেকে ঘুম পারিয়ে আমি বাথরুম যাব বলে উঠলাম, আর রাকা আমাকে উঠতে দেখে উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পরল। আমি বাথরুম থেকে ফিরে ছেলেকে ভালো করে ঢাকা দিয়ে দিলাম। উঠে না পরে। আমাকে রাকার সাথে কথা বলতে হবে। জানিনা বুঝবে কিনা। আমার ভাগ্যেই এই আবাল জুটেছে। জুটতে তো পারত বয়স্ক একটা লোক, যাকে এই সব বোঝাতে হতো না। ছেলে কে সামান্য দেওয়ালের দিকে সরিয়ে দিলাম। নিজে মাঝে এসে রাকার মাথার কাছে বসলাম। রাকাকে বললাম,
- কি ব্যাপার কি তোর? বার বার হাতে হাত দিচ্ছিলি কেন? তোর মনে হচ্ছে না, তুই এবারে বেশী চাইছিস আমার কাছে। আমি কেন এই গুলো মেনে নেব তুই আমাকে বল?