Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
ওই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছিলাম খুব আমি। ঘুম ভাঙল যখন সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। রাকা মরার মতন ঘুমোচ্ছে। ছেলেটাও ঘুমোচ্ছে। আমি উঠে এ সি টা অফ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বসলাম বাইরের সোফা তে। মন টা তেঁতো হয়ে আছে একেবারে। সেদিনের অপমান আর গতকালের বিয়ে। কোন মিল ই নেই। ভাবছিলাম, ভুল করলাম না তো? ভারী হয়ে আছে মন টা। কেন যে মরতে শুতে এলাম দুপুরে। ওই সব কথা আমার মনে পড়ত না। নাহ আমাকে রাকার সাথে কথা বলতে হবে। সেদিনের অপমান টা মন থেকে না গেলে আমি হয়ত ওর সাথে আর থাকতেই পারব না কোনদিন। আবার ভাবলাম, ছেলেটা ওই একটা দিন ছাড়া কোন দিন ও আমাকে সামান্য ও কষ্ট দেয় নি। মনে পরছিল ওর সব কিছু দিয়ে আমাকে বাঁচানোর দিন গুলো। হয়ত এই সব ভেবেই মনের তিক্ত তা আমাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সময় লাগবে আমি বুঝতে পারছি, নিজের সাথে লড়াই আবার শুরু হবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

যাই হোক, জীবন থেমে থাকবে না, আমাকে একবার বেরোতে হবে। যাই কিছু কেনাকাটি করে নিয়ে আসি। বুঝে গেছি, রাকা এখন এ বাড়িতেই থাকবে, যতদিন না আমার থাকার উপযুক্ত ও বাড়িতে একটা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। ছেলেটা ঘুমোচ্ছে ঘুমোক। ওর বাপ তো আছে ঘরে। তাও আন্টি কে বলে যাই একবার। ঘরে গেলাম ড্রেস বদলাতে। কিন্তু সমস্যা হলো, রাকা ঘুমোচ্ছিল। ভাবলাম ঘুমোচ্ছে তো। ইচ্ছে ছিল স্কার্ট আর টপ পরে যাব। কিন্তু জানি এখন সে সব পরলেই মা বকাবকি করবে। আমার শাশুড়ি কিছু বলবে না, আমার মা বকবে আমাকে। দরকার নেই। রাকা ঘুমোচ্ছে, তাই ঘরেই ছেড়ে নিলাম শাড়ি টা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল টা আঁচড়াচ্ছি, আয়নায় দেখলাম রাকা উঠল। আমাকে তৈরি হতে দেখে বলল,
-     কোথায় চললি?

সাড়া দিলাম না আমি। চেষ্টা করি আমি। কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে গেলেই এতো কিছু মাথায় ভীড় করে মনে হয় চুপ থাকাই ভালো। রাকা উঠে বসে পরল, বলল,
-     এক কাপ চিনি ছাড়া লাল চা হলে ভাল হত। এ বাড়ির চা টা খুব ভালো। কি রে? বললি না কোথায় চললি?

চা খাবি তো আমাকে বলার কি আছে? নীচে চলে যা। মনে হলো ইচ্ছে করেই আমাকে বলল, যাতে আমি এনে দি। দেখলাম সেই আমাকেই নিয়ে আসতে হবে চা। ওর কথার উত্তর না দিয়ে নীচে চলে এলাম। এসে দেখলাম, সবাই নীচে আছে। নীচে নামতেই, বাপ ব্যাটা আর আমার দুপুরে ঘুম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। আলোচনা চলছিলই। আমি নীচে যাওয়াতে আরো বেড়ে গেলো সেটা। পারি না আর শুনতে। এতো লজ্জা আর রাগ লাগে যে কি বলব। একসাথে শুলে আমার মনে ভিতরে কি চলে সেটা জানলে কেউ আর হাসাহাসি করবে না। আবার এটাও বুঝি বা জানি এই করতে করতেই একদিন লজ্জা কাটবে আমার।  একদিন ঘুমোলাম, তাও খাটাখাটনি হলো বলে। তাও এদের কথার মজা শেষ হয় না। জানি তো আমরা মা ব্যাটা তে ঘুমোলে এতো কথা হতো না। রাকা ও আছে, তাই এতো কথা। আমি কোন কথা না বলে, রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল নিলাম। কাউকে জিজ্ঞাসা করলাম না খাবে কিনা। জিজ্ঞাসা করলেই বলবে, চা কীসের জন্য বানাচ্ছি আমি। বলতে হবে রাকা খাবে। এক প্রস্থ হাসাহাসি হবে। আমার মা আমাকে তির্যক ভাবে দেখবে। বুঝবে তো না কত বিপাকে পরে আমি নিজে করতে এলাম চা।
ততক্ষনে মা এলো রান্না ঘরে। আমাকে চা করতে দেখেই বলল,
-     রাকা খাবে বলল নাকি?

রাগ আমার কম ধরছে না এমনিতেই। তারপরে মায়ের এই সব আমাকে ইচ্ছে করে পিঞ্চ করা। মায়ের দিকে তাকিয়েই বুঝিয়ে দিলাম, তোমার জন্যেই আমার এই হাল হলো। শেষে আমাকে বিয়ে করতে হলো, আর ওই ফালতু ছেলেটার দাসি বাঁদি হয়ে থাকতে হচ্ছে। কট্মট করে মায়ের দিকে তাকাতেই, মা হেসে চলে গেল। ওই হাসে বলেই আমার মটকা গরম হয়। যেমন হচ্চে সেটা মেনে নিলেই তো আমার রাগ ধরে না। আমাকে দিয়ে জোর করে করাবে কাজ মা, আর আমি সেটা নিজে করতে গেলেই হাসাহাসি করবে। যাক কি আর করব। নীচে সবাই বসে, আর লজ্জার মাথা খেয়ে, রাগ টা গিলে নিয়ে, আমি চা নিয়ে উপরে চলে এলাম। আবার প্লেট দিতে হবে মহারাজ কে। না হলে তার শাশুড়ির রাগ হবে। ঘরে ঢুকে দেখলাম, পাজামা পাঞ্জাবি পরে বসে আছে কুত্তা টা। মনে হলো বলি,
-     আ তু তু তু তু, এই নে চা।

কিন্তু এই খবর নীচে মায়ের কানে গেলে, আমার রক্ষা নেই। দাঁড়া তোর মজা দেখাচ্ছি আমি। ওকে চা টা দিলাম। শয়তান বিছানা থেকে নামবে না। আমাকেই হাতে হাতে চায়ের প্লেট টা দিতে হবে। উফ সাপের পাঁচ পা দেখার আল্টিমেট জায়গায় চলে গেছে। চা টা দিয়েই বললাম,
-     ছেলে ঘুমোচ্ছে। এখন ঘুমোবে। যতক্ষণ ঘুমবে, এই ঘর থেকে যেন কোথাও না যাওয়া হয়। এই আমি বলে গেলাম।

কোন বিকার নেই। সকালে মতন আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে চা এ চুমুক দিচ্ছে। আমি চুল টা একটু ঠিক করে নিয়ে, খামচা টা লাগিয়ে নিলাম। শাড়ির প্লিট গুলো একবার দেখে নিয়ে, পার্স টা হাতে নিয়েছি আর রাকা বলল,
-     আরে কোথায় যাচ্ছিস বলে তো যা।

সাড়া দিলাম না। ওর সাথে ফালতু কথা বলার ইচ্ছে টাই আমার চলে গেছিল। মনে মনে ভাবলাম, শালা যবন। কাল থেকে একটাই জাঙ্গিয়া পরে আছিস। যাক দেরি হয়ে গেছে অনেক। আমি যাই। বেরোতে যাব আর রাকা বেশ গম্ভীর হয়ে বলল
-     কোথায় যাচ্ছিস, তখন থেকে জিজ্ঞাসা করছি না?

কি সাহস!!! আমার উপরে এমন টোনে কথা? আমি সপাটে ঘুরে কিছু একটা মারাত্মক রকম বলব, কিন্তু… কি বলব খুঁজে পেলাম না আমি। হাতের পার্স টা ছিল, সেটাই হাতে করে ধরলাম উঁচিয়ে। যেন ওটা ছুঁড়ে দেব এবারে ওর দিকে। ও আমাকে দেখে, একেবারে, গুঁটিয়ে গিয়ে বলল,
-     না মানে আমি পৌঁছে দিতে পারি।

শালা ফাট্টু। আমি শুধু বলে এলাম,
-     ছেলে ঘুম থেকে ওঠা অব্দি এখানে যেন থাকা হয়, বলে গেলাম আমি।

গজগজ করতে করতে আমি নীচে এলাম। সবাই আমাকে দেখছে। আমি কাউকে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে এলাম স্কুটি টা নিয়ে। কোথায় যাচ্ছিস, বলে যাবি তো, কত কথা পিছন থেকে ভেসে এলো। আমি কি বলতাম? কুকুরের জন্য জাঙ্গিয়া কিনতে যাচ্ছি? সবাই মিলে হাসাহাসি করত না?

মল এ গিয়ে পরলাম আর এক সমস্যায়। আমি তো সাইজ জানি না। কি করব এবারে? রাকার ফোন নাম্বার ও নেই আমার কাছে। আর থাকলেও ওকে তো জিজ্ঞাসা করা যায় না। ওর হাইট আমার থেকে ইঞ্চি তিনেক বেশি। সেই অনুসারে মাপ হবে কি? না না তারপরে ভুল নিয়ে গিয়ে হাজির করলে আরেক সমস্যা হবে। আন্টি কে জিজ্ঞাসা করব? বা আমার মা কে? আরে ধুর ওরা কি ভাবে জানবে? আর জানলেও সে এক বিব্রত কর অবস্থা হবে। বাড়ি গিয়ে ঢূকলেই আমাকে দেখে মিটি মিটি হাসবে দুজন ই। ধুর বাবা এমনি ভাবে রাগ করে সংসার করা যায় নাকি? আমি তো চাইনি। আমার মা আর আন্টি যত নষ্টের গোঁড়া।

যাক, ছেলের জন্য কিছু কিনে নি। ছেলের জন্য দুটো জিন ফেডেড জিন্স নিলাম। ব্ল্যাক শার্ট বা টি শার্টের সাথে ছেলেকে আমার রাজপুত্র লাগে। বেরিয়ে আসব কিনে কেটে তারপরে মনে পরল, রনি কে জিজ্ঞাসা করলে হয় তো। ও রাকা কে জিজ্ঞাসা করে নেবে। লাগিয়ে দিলাম ফোন রনি কে। ও মনে হয় ওর বউ কে নিয়ে ছিল কোথাও। ধরল ওর বউ ফোন টা।
-     হ্যাঁ শিব দি বল?   
-     ও তুই? রনি কোথায় রে।  
-     এই তো পাশে , কিছু বলব? ওকে আশীর্ব্বাদ করছে আমার মাসী।
যাহ , এই সময়ে আমি ফোন করে ওকে রাকার জাঙ্গিয়ার মাপ জিজ্ঞাসা করতে বলব? হতাশ হয়ে বললাম
-     ও আচ্ছা । ঠিক আছে তবে পরে করব আবার।
-     আরে না না দাঁড়াও। দিচ্ছি
রনি ফোন টা ধরে বলল,
-     হ্যাঁ বল রে।
-     ভাই একটা উপকার কর না!!
-     অ্যাঁ, যার জন্য কিছু করতে গত বেশ কয়েক বছর পিছনে পিছনে ঘুরেছি, সেই আজকে উপকার চাইছে? বলুন বলুন মালকায়ে রুদ্রপুর। কি করতে পারি আপনার জন্য।

এতো নাটক করতে পারে এই ছেলেটা! বললাম
-     নাটক মারাস না। শোন! একটু তোর বন্ধু কে জিজ্ঞাসা করে ওর জাঙ্গিয়া আর জুতোর মাপ টা জিজ্ঞাসা করে বলবি আমাকে?
-     অ্যাঁ?
-     কি অ্যাঁ? যা বলছি কর।


আমি শুনতে পাচ্ছি, ও হয়ত উল্টো দিকে আরেক টা ফোন থেকে রাকা কে কল করেছে। আর এমন খচ্চর সবার সামনেই জিজ্ঞাসা করছে,- তোর জাঙ্গিয়ার মাপ বল তোর বউ জিজ্ঞাসা করছে। আর রনির বউ হেসে গড়িয়ে পরছে ওখানেই। আমি শুনতে পাচ্ছি, হাসির শব্দ।  ৮৫ সেন্টিমিটার আর ১০ নম্বর পায়ের মাপ জেনেই ফোন টা কেটে দিয়েছিলাম আমি। আমারি ভুল রাকা কেই জিজ্ঞাসা করতে হতো আমাকে। শালা পা তো না, যেন ভুতের পা। নাহ আমাকে ওর সাথে প্রথম পুরুষে কথা বলা শুরু করতে হবে। কিন্তু ওকে - তুমি তো মরে গেলেও বলতে পারব না আমি। তুই বলব? মা জানলে যদি রাগ করে? কি যে করব বুঝতেই পারছি না আমি। ও তো এখন আমার বর হলো। না না কি যেন, স্বামী হল। কিন্তু অনেক আগে থেকেই তো আমার বন্ধু নাকি? ধুর আগে সোজাসুজি কথা তো বলতে শুরু করি। তারপরে দেখা যাবে।
[+] 14 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - শিবের শিব প্রাপ্তি- অধ্যায় চার- নতুন পর্ব ২৪ - by nandanadasnandana - 23-02-2022, 12:54 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)