22-02-2022, 11:08 PM
(This post was last modified: 22-02-2022, 11:09 PM by Iesha. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
Update 3
হতভম্বের মত তিনি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন তা বুঝতে পড়লেন না, অনেকক্ষণ পর security officer Station এর একটি রুম এ অভিজিৎ বাবু আর তার বোন বসে আছে। অভিজিৎ বাবু তার মেয়েকে একটি lady Officer er কাছে দিয়ে এসেছেন। তার বোন এখনও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে। কারও মুখে কোনো কথা ছিল না। অভিজিৎ বাবু তার বোনকে সান্তনা দেওয়ার জন্য এবং মন হালকা করার জন্য তার বোনকে আলিঙ্গন এ জড়িয়ে ধরলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন- চুপ কর আর কাঁদিস না। কিচ্ছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। কাঁদিস না পূজা।
পূজা, অভিজিৎ বাবুর বোন। অবশ্য পূজা তার নিজের মায়ের কোলের মেয়ে নয়, তার জন্মদাত্রী এখনও জীবিত তা একমাত্র ভগবানই জানেন। অভিজিৎ বাবুর বয়স তখন 7 বছর আর পূজা 2 বছর, তিনি প্রথমে কিছুতেই পূজাকে তার বোন মানতে রাজি ছিলেন না, শুধু তাই নয় সে তাকে রীতিমত ঘৃণার চোখে দেখত। পূজা যতই কাছে আসতে চাইতো অভিজিৎ বাবু ততই দূরে ঠেলে দিত, কিন্তু সেই নিষ্পাপ ভালোবাসার কাছে তিনি হেরে গেলেন। সেই একটা ঘটনা তার সব ঘৃণা সব রাগ স্নেহ ভালোবাসায় বদলে দিলো। সেই দিনের পর থেকেই তাদের সম্পর্ক একটু একটু করে ভালোবাসায়, খুনসুটিতে গভীর হয়ে গিয়েছে যা আজও একটুও কমেনি।
পূজা তার দাদা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। এখনও তার ভয় কাটেনি। অভিজিৎ বাবু অনুভব করলেন তার বোন এখনও কাঁপছে। পূজা কাঁপা কাঁপা গলায় তার দাদাকে বললো: আমায় ছেড়ে যাস না দাদা। Please দাদা আমায় তোর সাথে নিয়ে চল।
Abhi: চুপ কর, আমি আছি তো তোর কাছে, বাবা আছে বাড়িতে, ভয় পাস না।
বাবা এর কথা শুনে পূজার আলিঙ্গন আলগা হয়ে গেলো। অভিজিৎ বাবু বুঝতে পেরে তার বোনের দিকে জিজ্ঞাস্যু দৃষ্টিতে তাকালেন। পূজা আবার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো: ওরা... ওরা... বাবাকে....মে..রে... কথা শেষ করতে পারলো না, আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো অভিজিৎ বাবুর বোন।
দিনের তৃতীয় ঝটকা লাগলো অভিজিৎ বাবুর। তার বোন কথা শেষ না করতে পারলেও তিনি বুঝতে পারলেন তার বোন কি বলতে চাইছে। মনে হলো তার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। তিনি কি করবেন বা কি বলবেন তা তিনি নিজেও জানেন না। তিনি প্রাণ হীন মানুষের মত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন, কতক্ষণ? বলা কঠিন, মনে হলো সময় যেনো এগোচ্ছে না। একদিকে অভিজিৎ বাবু মূর্তি স্বরূপ দাঁড়িয়ে রয়েছেন অন্য দিকে পূজা কেঁদে চলেছে। ঘরের মধ্যে যেন তন্দ্রা ছেয়ে গেছে, তন্দ্রা কাটলো ঘরের দরজায় টোকা পড়ার শব্দে। দরজা খুলে এক Officer বললেন যে Embassy থেকে officers এসেছেন তার বোনকে দেখা করতে হবে। পূজা যেতে কিছুতেই রাজি হল না অভিজিৎ বাবুর হাত জড়িয়ে ধরে রাখলেন। অভিজিৎ বাবু তার বোনকে বোঝাতে লাগলেন, কিন্তু কোনো লাভ হল না, পূজা তার কাছ ছাড়া হতে নারাজ। উপায় না দেখে অভিজিৎ বাবু নিজে তার বোনকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন Officer এর কাছে।
এত কিছু হওয়ার পরেও হয়তো ভাগ্য কিছুটা সহায় ছিল অভিজিৎ বাবুর। কারণ Embassy থেকে যে Officer এসেছেন তিনি অভিজিৎ বাবুর পরিচিত একজন মানুষ Mr. R Chauhan, তার কলেজের বন্ধুর বাবা। অভিজিৎ বাবু তাঁকে প্রণাম করে কিছু সাধারণ পারিবারিক বিষয়ে কথা বার্তা করলেন, অবশ্য বেশিরভাগ টা তিনি শুনলেন তার বলার মত সেইরকম অবস্থা বা পরিবার দুটোর কোনোটাই নেই যেটুকু আছে সেটুকু তার সঙ্গেই আছে। সে যাই হোক কিছুক্ষণ সাধারণ কথাবার্তার পর অভিজিৎ বাবু তাঁকে তার বোনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং বর্তমান পরিস্থিতির কথা খুলে বললেন। আইন মতে তার বোনকে ফিরতে হবে সেটা তিনিও জানেন কিন্তু তার বোনকে একা ফেরত পাঠাতে তার মন সায় দিচ্ছিল না, তার আরো একটা কারণ ওখানে নিজের আপন বলতে তো আর কেউ নেই। তাই অভিজিৎ বাবু অনুরোধ করলেন যেনো তার বোনকে তার সাথে 2-4 দিনের জন্য থাকার ব্যবস্থা বা অনুমতি দেয়। অনেকক্ষণ ভেবে এবং discuss করার পর আর কিছু phone calls করার পর তিনি 5 দিন থাকার permission দিলেন আর কিছু Paper Work এর জন্য Embassy তে Monday আসতে বললেন যাতে India ফিরতে কোনো অসুবিধা না হয়।
অভিজিৎ বাবু তাকে ধন্যবাদ দিয়ে তার বোন কে নিয়ে বেরিয়ে এসে তার মেয়ের কাছে গেলেন। গিয়ে দেখলেন তার মেয়ে security officer Officer এর সাথে খেলছে আর খোস গল্প জুড়েছে। কিছুক্ষণ দেখার পর তিনি তার মেয়ের কাছে গেলেন। বাবাকে কাছে দেখতে পেয়েই সে যেনো ঝাঁপিয়ে পড়লো তার কোলে। তার মেয়ের গালে চুমু দিয়ে বললেন:
বাড়ি যাবে নাকি এখানেই খেলবে! তার মেয়েও বললো:
আমি এখানেই ওই madam টার সাথে খেলব!
-তাহলে ওনার কাজ কে করে দেবে তুমি যদি ওনার সাথে খেলো?
-তুমি হি হি হি!!
-খুব পাকা হয়ে গেছো তুমি। আর আমি তো বাড়ি চলে যাচ্ছি, তোমার পিসিমনি এসেছে তাকেও নিয়ে চলে যাচ্ছি তুমি থাকো একা একা, আর উনিও কাজ করতে চলে যাবেন, তারপর কে তোমার সাথে খেলে দেখব।
-কোথায় পিসিমনি? এই বলে সে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো।
-কেন? তুমি জেনে কি করবে? তুমি তো এখানে খেলবে! তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
-না আমিও যাব।
-তাহলে তোমার খেলার কি হবে?
-না আমি বাড়ি যাব! পিসিমণি কোথায় বলো না।
-আচ্ছা তাহলে ma'am কে Thanks বলো।
বাচ্চাটা security officer Officer এর দিকে ঘুরে তাকে Thank You madam বললো। অভিজিৎ বাবুও Officer কে ধন্যবাদ দিলেন
-Thank you ma'am for taking care of her.
security officer- You're welcome. Your daughter is very sweet.
অভিজিৎ বাবু হালকা হাসি দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন, তার বোনের দিকে দেখিয়ে বললেন
-ওই যে তোমার পিসিমণি... এই বলে পূজার কাছে তিনি এগিয়ে গেলেন, পূজা কে দেখে মিনাক্ষীর আর আনন্দের সীমা রইলো না। যদিও সে কোনোদিন পূজা কে সামনে থেকে দেখেনি তবুও তার সেই স্ফূর্তি যেনো তাদের সবার শরীরের ক্লান্তি দুঃখ দূরে সরিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট। এই হয়তো নিষ্পাপ শিশুর নিষ্পাপ ভালবাসা। বাচ্চা মেয়েটা পূজার দিকে দুই হাত ছড়িয়ে দিলো। হয়তো এই ইঙ্গিত এর অর্থ কাউকেই আলাদা করে বলে দিতে হয় না। পূজা তাকে কোলে নিয়ে অভিজিৎ বাবুর দিকে তাকালো কারণ সে জানে না এই বাচ্চা মেয়েটি কে আর তার সাথে বা অভিজিৎ বাবুর সাথে কিসের সম্পর্ক। অভিজিৎ বাবু বুঝতে পেরে বললেন- মিনাক্ষী; আমার মেয়ে!
পূজা অবাক হয়ে বললো- মানে? কিভাবে?
অভিজিৎ বাবু বললেন- বাড়ি চল আগে, সব বলব চল এখন। এই বলে তারা তিনজন security officer Station ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
সকাল পেরিয়ে প্রায় দুপুর যখন তারা বাড়ি পৌঁছলেন। অবশ্য ফেরার পথে তারা একটি restaurant এ তাদের breakfast সেরে নিয়েছেন এবং তার বোন এর জন্য কিছু পোষাকও কিনে নিয়েছেন।
বাড়ি দেখে পূজার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। না সেটা কোনো Penthouse বা কোনো Royal Palace নয়। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ যেরকম বাড়ির স্বপ্ন দেখে বা কোনো রূপকথার গল্পে যেরকম বাড়ির বর্ননা হয় ঠিক সেইরকম। সাদা রঙ করা দোতলা বাড়ি 1st floor এ বড় balcony glass railing দিয়ে ঘেরা সেখানে নানা রং এর ফুল গাছে ভরা। বাড়ির সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে সবুজের খেলা সেখানেও অনেক ধরণের ছোটো বড়ো গাছ তার মাঝে সুন্দর পরিষ্কার একটি পথ। গাড়ি থেকে নেমে সে বিস্মিত চোখে চারিদিক দেখতে লাগলো মন্ত্রমুগ্ধ এর মত। যেনো সে কোনো রূপকথার গল্পের মধ্যে চলে এসেছে। হাতে হাল্কা টান পড়তে সে ঘোর কাটিয়ে দেখলো যে মিনা তার হাত ধরে টানছে, হ্যাঁ বাচ্চাটা এর মধ্যেই তার সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে যেনো দুজন দুজনকে কত দিন ধরে চেনে! এতে পূজা এর মনটা একটু হালকা হলো আর এত বড় ঝড় বয়ে যাওয়ার পরেও সে একটু হালকা অনুভব করলো।
-ও পিসিমণি ভেতরে আসো। বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি।
সে একরকম তার ছোট্ট হাত দিয়ে টানতে টানতে তাকে ঘরের ভেতর নিয়ে যেতে লাগলো।
-আরে দাঁড়াও ব্যাগ গুলো নিয়ে নিই।
-ও কেউ নেবে না তুমি আসো।
অভিজিৎ বাবু নিজের মেয়ের কান্ড কারখানা দেখে নিজেই হেসে ফেললেন, বললেন- তোরা চল আমি আসছি সব নিয়ে, সামলা এবার তুই এটাকে পূজা।
মিনাক্ষী পূজার হাত ধরে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো। পূজাও বাড়ির সৌন্দর্য দেখতে লাগলো। সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো বাড়ি। বাড়ির দেওয়ালে সবার ছবি লাগানো আছে। পূজা আরও অবাক হলো যে মিনাক্ষী কোনটা কে সেটাও জানে, সে ছবির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলছে- এটা তুমি, এটা বাবা, এটা দাদু, এটা ঠাম্মি, এটা আমি, আর এটা আমার মা। পূজা এবার অবাক হলো এটা দেখে যে এই মেয়েটা তার বৌদিকে মা বলছে। এসবের মানে কী? এ কি সত্যিই তার দাদার আর বৌদির নিজের মেয়ে? কিন্তু কিভাবে সম্ভব? তাও যদি হয় এ মেয়ে এখানে এলো কিভাবে? আর যদি তাই হয় তাহলে তারা দাদা তাকে বা তার বাবা কে এই ব্যাপারে কিছু বলে নি কেন? অনেক প্রশ্ন তার মাথায় ঘোরাঘুরি করতে লাগলো।
মিনাক্ষী এর home tour দেওয়া শেষ হলে পরে অভিজিৎ বাবু তার মেয়েকে বললেন- আবার পরে দেখাবে মনি, পিসিমনির শরীর খারাপ আগে একটু বিশ্রাম নিতে দাও, তারপর আবার হবে এসব আর তুমিও চলো স্নান করে fresh হয়ে নেবে। পিসিমনি কোন ঘরে থাকবে দেখিয়েছ?
সে কিছু না বলেই পূজার হাত ধরে দোতলার একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বললো- এটা তোমার রুম আর পাশেরটা আমি আর বাবা থাকি।
পূজা- wow তোমাদের বাড়ি টা তো খুব সুন্দর।
মণি- তোমার ভালো লেগেছে আমাদের বাড়ি পিসিমনি?
পূজা- হ্যাঁ, খুব পছন্দ হয়েছে, আর তোমার মতো ফুটফুটে বাচ্চা যে বাড়িতে থাকবে সে বাড়ি কার পছন্দ হবে না শুনি।
একথা শুনে মণি হাসলেও কিছুক্ষণ এর মধ্যেই সেই হাসি মিলিয়ে গেলো, সেটা পূজাও খেয়াল করলো। পূজা তার সামনে বসে তাকে জিজ্ঞেস করলো- কি হলো সোনা! রাগ করলে পিসিমনির ওপর!
বাচ্চা টি মাথা নাড়ল না সূচক ভাবে।
-তাহলে কি হলো, এরকম হয়ে গেলে কেনো বলো আমায়। আমি কি কিছু ভুল বলে ফেলেছি নাকি বলো।
-তুমি আমায় সত্যিই ভালোবাসো পিসিমনি নাকি মিছি মিছি বলছো?
পূজা বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে তার দুই গালে চুমু দিয়ে বললো-
আস্ত পাগলি একটা, তোমার মতো মেয়েকে কে ভালবাসবে না শুনি একটু, তার নাকে নাক ঘষে বললো খুব ভালবাসি তোমায়, হয়েছে এবার।
-কিন্তু আমার মা আমাকে তো ভালোবাসে না, কোনোদিন আমার সাথে দেখা করতে আসেনি, বাবার সাথে নাকি মা আড়ি করে চলে গেছে কিন্তু আমাকেও একবারের জন্যে দেখতে আসেনি, কথাও বলে নি। মা আমাকে একটুও ভালোবাসে না। এই সব কথা বলতে বলতে বাচ্চা মেয়েটির চোখে জল চলে এলো, সে পূজার কাঁধে মাথা রেখে ফোঁপাতে লাগল। এই সব দেখে শুনে পূজা ও হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, সে কি বলবে, কি করবে অথবা কি বলা বা কি করা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারলো না।
...