22-02-2022, 01:59 PM
সামনেই পরীক্ষা ছিল আমার। তাও মায়ের কাছ থেকে হাজার চারেক টাকা নিয়ে পার্লার এ গেলাম, রাকা আসার দিন তিনেক আগে। চুল টা লম্বা হয়ে গেছিল আমার। স্টেপ করে কাটালাম আমি। সামান্য ছোট করলাম চুল টা। নিজেকে দেখেই দারুন লাগছিল আমার। মনে হলো, এতে কেউ না পটলে তার জন্য স্বর্গের অপ্সরা লাগবে। হরমোনাল ইফেক্ট এ স্কিনের গ্লেজ মারাত্মক সুন্দর ছিল আমার। ওরা অনেক খুজেও হাতে আর পায়ে সামান্য লোম পেল না আমার। নেইল আর্ট পছন্দ করতাম তাই হাতে আর পায়ের নেইল আর্ট করে বাড়ি ফিরেছিলাম আমি। মা আমাকে দেখে আঙ্গুল কেটে আর শেষ করতে পারছে না।
রনি কে বলেছিলাম কথা টা। রনি আনন্দের সাথেই বলেছিল আমাকে, ও যাবে আমার সাথে। আমিও রাজী হয়ে গেছিলাম। ওর সামনেই না হয় আমি আর রাকা একসাথে জীবন কাটানোর প্রতিজ্ঞা নেব। রনি সেই সময়ে পাশে থাকলে আমার খুব ভাল লাগবে। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। তিন জনে চলে যাব আমরা পিছনে আমাদের আড্ডার জায়গায়। ওখানে গিয়ে রাকার পায়ে ধরে নেবই যাতে ও আমাকে ক্ষমা করে দেয়। এখানে আমি অঞ্জনার থেকে একটু হলেও প্রিভিলেজ পাব। আমরা এতোদিনের পুরোন বন্ধু। আর এর পর থেকে ও যা চায় তাই দেব আমি ওকে। কনফিডেন্ট ছিলাম আমি, রাকা আমাকে একটা চান্স দেবেই। আর ওটাই দরকার আমার। নিজের যা আছে আমি সব ওর জন্য সঁপে দেব। শুধু ও যেন ভালো ভাবে আমাকে মেনে নেয়। আর ভালো ভাবে খেলা টা চালিয়ে যায়।
এই সব ভেবে, নিজেকে কনফিডেন্ট লাগল আমার বেশ। যেদিনে আমার যাবার কথা ছিল, আন্টি কাজে যাননি। আমাকে ফোন করে দিয়েছিলেন সকালে। আমি নিজেই শাড়ি পরেছিলাম সেদিন। খারাপ পরিনি। আমার মা কে পরিয়ে দিতে বললে শত প্রশ্ন করত মা। রাকার সাথে গত কয়েক দিনের টানাপোড়েন মা আন্দাজ করেছিল। আমার মন খারাপ করে থাকা হয়ত মায়ের ও নজরে এসেছিল। কিন্তু আজকে সকাল থেকে আমার মন ছিল ভাল। স্নান করে, নিজেকে একেবারে শেষ অব্দি পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম আমি। একবার ছেড়ে দুবার শাম্প্যু করেছিলাম মাথায় সকালেই। যাতে আমার চুল শুকিয়ে যায় যাবার আগে। কানের পরেছিলাম প্রথমবার আমার কানের ফুটো হবার পরে। ছোট একটা হনুমানের গদার আকারে কানের ছিল আমার। ভালো লাগত আমার সেটা। নর্ম্যাল আমেরিকান ডায়মন্ড দিয়ে সাজানো দুটো বালা পরেছিলাম দু হাতে। কপালে টিপ পরেছিলাম একটা ছোট্ট হলুদ রঙের। কারন শাড়ি টা হলুদ শিফনের পরেছিলাম আমি।
মা আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলেছিল বাপির স্কুটি টা নিয়ে যেতে। জানত মা রাকা আসবে। আমার কোন সাজের কি মানে সেটা মা দেখলেই বলে দিতে পারত। মা কে প্রণাম করেই বেড়িয়েছিলাম আমি। ভাবছি ঠাকুর আজকে এই আশির্ব্বাদ টা কোর আমাকে। রাকা যেন আমাকে গ্রহন করে। দেরী না হয়ে যায় আমার জীবনে। আমি আর রনি যখন পৌছুলাম, দেখলাম রাকা বাড়িতেই। বাব্বাহ সেই পাঁচ মাস বাদে দেখলাম ছেলেটা কে। ঘরে ছিল, বেরিয়ে এলো বাইরে। আন্টি ও আমার দিকে চেয়ে আছেন প্রশংসার চোখে। রাকাও দেখছে। দুজনের নজরেই অনেক অনেক ভালোলাগা ছিল। লজ্জা পেলাম এবারে। কিন্তু রাকা কে দেখেই তেড়ে গেলাম আমি স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গী তে।
- কি রে জানোয়ার, বাঁদর, সেদিনে ফোনে আমাকে যা নয় তাই বললি। ক্ষমা চাইলাম, তাও ফোন কেটে দিলি। কি ভেবেছিস কি তুই? আমাকে এই ভাবে তুই কষ্ট দিবি?
এই বলে দুমাদুম কিল মারতে লাগলাম আন্টির সামনেই। থামছিলাম না আমি। আন্টি চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন। রনি গাড়ি টা বাইরে রেখে ততক্ষন ভিতরে এলো। আমি কথা বলতে বলতেই কিল পারছিলাম ওর বুকে হাতে
- যা খুশি কর আমাকে, অপমান কর, মার,খারাপ কথা বল, কিন্তু কথা বলছিস না কেন? কি রে উত্তর দে?
রাকা চুপ করে রইল। না তো আমাকে আটকালো। না আমাকে একটা কথা বলল। উত্তর পেলাম আমি সেই সময়েই, যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এলো অঞ্জনা, অঞ্জনার মা, স্মিতা আন্টি আর অঞ্জনার বোন। সেটা দেখেই আমার হাঁটু কেঁপে গেল। বুকের মধ্যে হাজার দামামা বাজতে শুরু করল। মনে হলো আমার আশা নেই আর কোন ভাবেই। এই পরিস্থিতি তে পরব আমি ভাবিনি কোন দিন। আন্টি আমাকে আজকে কেন ডাকলেন? আমি কেমন জানিনা, ভয় পেয়েই একটু সরে গেলাম আন্টির কাছে। রাকাকে মারছিলাম আমি আমার অধিকারেই। রাকা কিছু বলছিল না, এমন আদরে ভরা মার ও অনেক খেয়েছে। কিন্তু এটা অঞ্জনার সহ্য হল না। ফুঁসছিল ও রাগে। আমাকে একবার দেখে নিয়ে, ওর মা কে বলল,
- দ্যাখ মা কত বড় নির্লজ্জ। আন্টির সামনেই তার ছেলেকে এই ভাবে মারছে। রাকার ব্যাথার কোন পরোয়া ও করে নাকি?
অঞ্জনা সামনে আসতেই রাকা একটু সাবধানী হয়ে গেল। আমাকে ভালো লাগা টা ওর চোখে আর রইল না। আমি তখন আন্টির কাছে। আমার কাছে এটা অবাক করার ব্যাপার। আন্টির সামনেই আমি রাকার ঘাড়ে চেপে ঘুরে বেড়াতাম। হ্যাঁ আমার মা রাগ করত কিন্তু আন্টি কোনদিন রাগ করেনি। একটু হলেও আমি সামলে নিলাম। আন্টি চুপ করে আছেন আমাকে ধরে। আর রাকা অনেক টা মাথা নিচু করে তাকিয়ে। অঞ্জনা কে বললাম,
- অঞ্জনা!! আমি ওকে লাগার মতন করে মারি না রে!
বলতে পারলাম না অঞ্জনা কে, রাকার এক সূচ্যাগ্র কষ্ট আমার কাছে শত শত হাতুরির আঘাতের সমান। আজকে ও আমাকে বলছে রাকার ব্যাথার কথা? কথা টা বললাম বটে, কিন্তু বলতে গিয়ে কান্না গলায় চলে এল আমার। রাকা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে রইল। কিন্তু অঞ্জনা রাগে ফেটে পড়ল একেবারে। বলল,
- সে আমি দেখেছি কেমন করে মারছিস তুই। যতই তুই মেয়ে হয়ে সেজে ঘুরে বেড়াস, তুই তো ছেলেই ত্র্যম্বক? তোর হাতে মারলে রাকার ব্যাথা লাগবে না এই কথা আর যে বিশ্বাস করুক, আমি করব না। তুই কি ভেবেছিলি, সুন্দরী সেজে ঘুরে বেরিয়ে রাকা কে ফাঁসিয়ে ফেলবি? তুই সত্যি কারের মেয়ে হলে এই কাজ টা করতে পারতিস না। এখন যা এখান থেকে, রাকার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
যেতেই তো চাইছি এখান থেকে। পালাতেই ত চাইছি, এই খান ছেড়ে। পারছি কই। নাম টা ভুলতে বসেছিলাম আমি। আমার জীবনের সব থেকে বাজে সময়ের একটা পরিচিতি আমি চাইছিলাম না সামনে আসুক। যেমন ঘা, হলে তাকে ব্যাথা দিয়ে আরো ব্যাথা পেতে ইচ্ছে করে, তেমন ই আমার পা দুটো স্থানু হয়ে গেল আরো ব্যাথা পাবার আশায়। অঞ্জনা সেই ঘা টা আরো বেশি করে খুঁড়ে দিল আমার। আন্টি চুপ করে আছেন। বড় কঠিন চোখ। আগুন ঝড়ছে আন্টির চোখ থেকে। রাকা মনে হয় কি করবে বুঝতে পারছে না। ঘেন্না লাগছে আমার নিজেকে এবারে। আমি স্বপ্নে ভাবিনি এমন পরিস্থিতি তে আমাকে পরতে হবে। রনির দিকে তাকিয়ে দেখি ও বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে অঞ্জনার দিকে। আমি কেঁদে ফেললাম এবারে। রাকা চুপ করে আছে। ও কেন বলছে না অঞ্জনা কে, যে তুই কেন শিব কে চলে যেতে বলছিস? ও আমার কতখানি তুই জানিস না? ব্যস এই টুকু বলে দিলে, আমি সারা জীবন কাটিয়ে ফেলব। এই টুকুই তো চাই এখন। এর বেশী আর কিচ্ছু চাই না। হ্যাঁ আন্টির কথায় আমি ভেবেছিলাম, রাকা আমাকে গ্রহন করবে, আরেক টা চান্স দেবে। কিন্তু এখন আর সেই বিশ্বাস নেই আমার। আমি একবার রাকার দিকে তাকিয়ে আছি আর একবার আন্টির দিকে তাকাচ্ছি। আন্টি আমাকে ধরে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু রাকা? ও কেন বলছে না শিব তুই থাক যাবি না কোথাও। রনি বলল এবারে কথা,
- কেন শিব কেন যাবে? শিব তো আজকে বলে না, গত আট বছর এ বাড়িতে যাতায়াত করে। গত এগারো বছর ওর রাকার সাথে বন্ধুত্ব। তুই রাকার সাথে কথা বল, কে মানা করেছে। ওকে যেতে বলছিস কেন?
রনির কথায় এবারে আন্টি মুখ খুললেন। রাকা কে বললেন,
- রাকা তুই ওদের নিয়ে ঘরে যা। শিব কে নিয়ে ভাবতে হবে না।
আন্টি আমাকে নিয়ে রান্না ঘরে দিকে যাবেন সেই সময়ে অঞ্জনা বলল কথা। অঞ্জনার মা আর বোন দুজনাই চুপ এখন। কিন্তু অঞ্জনা বলল,
- তবু তোর লজ্জা নেই না ত্র্যম্বক? এখন দাঁড়িয়ে আছিস এখানে। কি ভাবছিস? আন্টি ভদ্রতা করে বললেন, সেটাও বুঝলি না?
আমি যাচ্ছিলাম আন্টির সাথে রান্না ঘরে। কিন্তু কথা টা শুনে দাঁড়িয়ে পরলাম। সত্যি কি আন্টি ভদ্রতা করলেন? তাকালাম আন্টির দিকে। দেখলাম আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বড় মিষ্টি করে হাসলেন। ভরসা দিলেন আমাকে। তারপরে পিছন ঘুরে অঞ্জনা নয় রাকা কে বললেন,
- রাকা, অঞ্জনা প্রথমবার আমাকে দেখল।আর শিব কে নিয়ে আমি গত আট বছর আছি। তুই ও আছিস। কাজেই আমার চরিত্র অঞ্জনার জানার কথা নয়, আর ও জানেও না। আমার কাছে মুখে এক আর মনে এক, ব্যাপার টা নেই। এটা ওর জানার কথা নয়। কিন্তু তুই তো জানিস। ওকে মানা কর, আমার আর শিবের কথা ভাবতে। ওনারা তোর গেস্ট। আমার ছেলের গেস্ট। আমার কাছে বড় আদরের। মানা কর, আমার আর শিবের ব্যাপারে কথা বলতে। শেষ বার বললাম ।
আর অপেক্ষা না করে আন্টি প্রায় আমাকে টানতে টানতে রান্না ঘরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন। পিছন থেকে শুনলাম রাকা অঞ্জনা কে বলছে,
- আরে তুমি চুপ কর। আমার মা কে কিছু বোল না। আমার মা এক আলাদা মানুষ।
অঞ্জনা হয়ত শুনল কথা টা। কিন্তু স্মিতা আন্টি বলে উঠলেন এবারে।
- এত কথা হচ্ছে ওকে নিয়েই। এতো গুলো মানুষ চাইছে না ওকে। তবু লজ্জা নেই হিজড়ে টার।
আন্টি থেমে গেলেন। কেন শুনতে পেলাম আমি এই কথা টা। বহুকাল শুনিনি। ভিতরের সর্বস্ব মনে হল আমার জ্বলছে। আমার মনুষত্ব, আমার ভিতরে মেয়েটা দাউ দাউ করে জ্বলছে এই কথা টা শুনে। কিন্তু বলার কি আছে আর। রাকা এখনো কিছু বলল না আন্টি কে। মানে সেও মেনে নিলো। আন্টি মারাত্মক রেগে গেছেন। কিন্তু আন্টি কিছু বলার আগেই, চিৎকার করে রনি মার মুর্তি নিয়ে তেড়ে গেল স্মিতা আন্টির দিকে। এবারে রাকা এগিয়ে এল। হাতাহাতি হলো দুজনের। রনি কে ছিটকে দিল রাকা। চেঁচিয়ে উঠল রনির উপরে রাকা,
- বাস্টার্ড! তোর সাহস কি ভাবে হয় আন্টির দিকে তেড়ে আসার এই ভাবে? সান অফ অ্যা বিচ।
ওরা চারজন ছাড়া আমরা আরো তিনজন ছিলাম বাড়িতে। আমরা তিনজন থম মেরে গেলাম। আন্টি বলতে গেলে থরথর করে কাঁপছেন। রাগে। আমার রাগ শেষ। নিজের উপরে করুনা হচ্ছে। রনির ও মনে হয় রাগ শেষের দিকে। বুঝে গেছে আমার মতই, যে কার উপরে রাগ করছে ও! আমার খারাপ লাগছে রনির জন্য। বেচারীর উপরেই রাকা আমার উপরে রাগ টা ঝেড়ে দিল। ইংরাজি তে ওই গালি টার মানে করলে কি দাঁড়ায়, রাকা আমাকে বলেছিল এক কালে। রাকা বলল রনি কে এই কথা টা? রনি কিছুক্ষন রেগেই তাকিয়ে রইল। গালি টা শুনে বেচারি একেবারে নিথর হয়ে গেছে। হয়ত ভাবছে আন্টির সামনে রাকা কেন ওকে এই গালি টা দিলো। রনি হেসে উঠল জোরে। আমি ভাবছি ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি? বলল,
- আমারি ভুল জানিস রাকা। তোর জন্য যে নিজের জমানো সব কিছু, ইভেন নিজের মন ও উজার করে দিয়েছে, তুই তাকে হিজড়ে বললি, আর আমাকে ছেড়ে দিবি, এটা আমিও ভাবিনি। কিন্তু তাই বলে ওই গাল টা দিলি? রাকা আমার বাড়িতে তুই গেছিস অনেক বার। আমার মায়ের হাতে তৈরী খাবার ও খেয়েছিস। কি করে বললি রে আমাকে? ছিঃ। যাই হোক তুই এই সবের উর্ধে চলে গেছিস আমি বুঝে গেছি। ভাবিস না তোকে আমি ছেড়ে দিলাম, কিছু বললাম না এর কারন আমি কিছু করতে পারব না। কিন্তু কি জানিস, আমি আন্টি কে আমার মা ছাড়া আর কিছু মনে করিনি।
বলতে বলতে রনির চোখে জল চলে এল। রাকা হয়ত ওই সময়ে বলে ফেলেছে কথাটা। রনি কে ওই ভাবে রিয়াক্ট করতে দেখে হয়ত একটু হলেও খারাপ লাগছিল। রনি কিন্তু ও থামছে না।
- হ্যাঁ ঠিক করেছিস তুই। শিব কে ছেড়ে দিয়েছিস। কারন আজকে আমি বুঝে গেছি, তুই শিবের যোগ্য নোস। কোন ভাবেই নোস। তুই আজকে যাই হয়ে যাস না কেন, যত বড় কেউ কেটা হোস না কেন, তার জন্য শিব আর একমাত্র শিব দায়ী। সত্যি বলতে তুই একটা বিগ জিরো।
আমি রনি কে থামাচ্ছি এবারে।
- রনি থাম তুই। তুই কেন বন্ধুত্ব নষ্ট করছিস?
রনি আমার দিকে চেয়ে এবারে রাগে ফেটে পরল। ছেলে গুনো এমন ই হয়, যত রাগ মেয়েদের উপরে। আমাকে বলল
- তুই থাম! সব দোষ তোর। কে তোকে ওকে ছাড়তে বলেছিল? সেদিনেই কানের নীচে থাবড়ে ওকে সিধে করে দিতে পারতিস। যাই হোক শোন শিব, আজকে এখানে এসেছিলাম, তোদের মিলন দেখব বলে। আমাকে বহু মেয়ে রিজেক্ট করেছে জীবনে। আমিও কুত্তা, পিছনে পিছনে ঘুরে বেরিয়েছি তাদের। এতো কষ্ট পাইনি, যা আজকে পেলাম।আমি নিজের চোখে দেখেছি, ওকে খেলতে পাঠানো, সেই টাকা জোগার করা, ওর পরীক্ষায় পাশ করানো। জানিনা তুই কত খানি কষ্ট পেয়েছিস এখন।কিন্তু আমি আর পারছি না থাকতে, বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তোর এই অপমানের পালা শেষ হলে বলিস তোকে বাড়ি পৌঁছে দেব আমি।
আমি রনি কে চুপ করতে বলছি। ভাবছি, ওরে চুপ কর তুই, আমার কাছে ওর ঋণের থেকে ওর আছে আমার ঋণ অনেক অনেক বেশি। কেন পুরোন কথা তুলছিস। বন্ধু আমি ওর, ভালোবাসি ওকে নিজের থেকেও বেশি। রাকা মনে হয় রনির কথা গুলো হজম করতে পারল না। মাথায় নিজের ইগো চড়ে বসেছে ওর। তাই, আমি রনি কে কিছু বলার আগেই, রাকা বলল বেশ টোন্ডিং এর সুরে,
- ভালই তো হলো তোর রনি। আমি মাঝে নেই আর, হিজড়ে টা কে তুই বিয়ে করে নে। ও তো মেয়ে হয়েছে, আমাকেই পাবে বলে। একটা ছেলে তো লাগবে ওর নাকি? তোর ও সাহসের পরীক্ষা হয়ে যাবে। কেমন হিজড়ে কে বিয়ে করতে পারিস দেখব।
ইশ ছিঃ ছিঃ ছিঃ। কি বলছে রাকা এগুলো? শেষে তুই ও আমাকে হিজড়ে বললি রাকা? এতোক্ষন মনে জোর ধরে ছিলাম, তুই নিজের মুখে বলিস নি আমাকে কথা টা। সেটাও বলে দিলি? আর দাড়িয়েই থাকতে পারলাম না আমি। হাঁটু মুড়ে বসে পরলাম ওখানেই। দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছি। কি জানি অঞ্জনা আর অঞ্জনার পরিবার হয়ত মজা নিচ্ছে। নাহ এটা থামানো দরকার। না হলে আরো কত রক্তাক্ত হতে হবে কে জানে? আমাকে ওরা দুজনে কিছু বলতেই দিচ্ছে না। আমি আন্টির দিকে চেয়ে বললাম কাঁদতে কাঁদতেই,
- আন্টি ওদের থামাও।
কিন্তু তার আগেই আমাকে হিজড়ে বলার জন্য, রনি রাকার কলার ধরে নিলো নিজের হাতে। ডান হাত টা তুলে রাকাকে মারতে যাবে তখনি আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,
- রনি !!!!!!!! নাআআআ!!!!! ওর খেলা আছে সামনে ইন্ডিয়ার। মারিস না ওকেএএএ
রনি থেমে তো গেল, কিন্তু রনির একশনের রিয়াকশন এ রাকার পাঞ্চ টা রনির ঠোঁটে পরল। জোর ছিল না বেশী। কিন্তু আমি দেখলাম কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করল রনির ঠোট দিয়ে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, কি হচ্ছে এসব। এই রকম নোংরা ব্যাপার সিনেমাতেও দেখায় না। আমি রনির কাছে ছুটে গেলাম। দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ঠোঁটের কষে রক্ত। আমাকে দেখে জামার কলারে রক্ত টা একবার মুছে নিল। রাকা ভাবল রনি কে ও কাবু করে ফেলেছে। আবার টোন্ড করল ও,
- বাহ ও বলল আর থেমেও গেলি। কি প্রেম বাবা। আগেই বলতে পারতিস ওকে। ও তাহলে আমার পিছনে ঘুরত না।
আমি আর কিছু বলার মতন পরিস্থিতি তে নেই। এই সব কথার উত্তর তো হয়না। রনি এবারে রাগল না যেন আর। রাকার দিকে তাকিয়ে বলল
- সে সৌভাগ্য আমার নেই রে। হবেও না। আজকে যা কষ্ট যা যন্ত্রনা তুই ওকে দিলি, ও জীবনে আর কাউকে ভালবাসতে পারবে বলে আমি মনে করি না। না হলে অমন একটা মেয়ের ভালবাসা পাবার জন্য আমি জন্ম জন্ম অপেক্ষা করতে রাজী। যাই হোক, তোর চোখে এখন পট্টি আছে। আমি জানি একদিন তুই বুঝবি। সেদিনে দেরি না হয়ে যায় তোর।
তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে আর আন্টি কে দেখে বলল
- আমি এলাম রে শিব। আন্টি এলাম।
বেরিয়ে গেলো ও। হাঁ করে তাকিয়েছিলাম আমি ওর দিকে। কি হয়ে গেল? এটা কি সত্যি হচ্ছে? নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি। মাথা ঘুরছে আমার। রাকা আমার সামনেই ছিল দাঁড়িয়ে। আমাকে বলল,
- সব শুনে নিয়েছিস তুই? এবারে চলে যা আমাদের বাড়ি থেকে। আর যেন তোর মুখ দেখতে না হয় আমার।
মাথা নিচু করে রইলাম আমি। আর কি বাকি রইল অপমানের, তাই হিসাব করছিলাম আমি। আন্টি সেখানে দাঁড়িয়ে নেই যেখানে আগে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাবার আগে আন্টি কে চাইছিলাম আমি খুব আমার কাছে। রাকা যখন খেলতে যেত, চার মাস ছয় মাস আসত না, আমি আসতাম আন্টির কাছে। জিজ্ঞাসা করে নি, আর আসব কিনা রাকা না থাকলে। রাকা আমাকে তাড়া দিচ্ছে। সাথে অঞ্জনা আর অঞ্জনার মা। নিজেদের মধ্যে বলা বলি করছে। এখনো বিদায় হবে না? বাবাহ কি মধু কে জানে এই বাড়িতে। এতো ছোট লাগল নিজেকে যে মনে হচ্ছিল, আজকেই জীবন টা আমার শেষ হয়ে গেল না কেন? এখানেই আমার হার্ট ফেইল করছে না কেন? এতো দুঃখ, অপমান নিতে পারে আমার হৃদয়? নিজেও জানতাম না আমি। আমি কি বুঝতে পারছি না অপমান টা? কীসের আশায় দাঁড়িয়ে আমি এখনো এখানে। অঞ্জনার মা তাড়া দিলেন আমাকে,
- কি হলো, এবারে তো যা। বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে এক্ষুনি। আর কোন দিন ও যেন না দেখি রাকার আশে পাশে তোকে।
তারপরে রাকার দিকে ফিরে বললেন,
- রাকা চলো, আমাদের আলোচনা টা সেরে ফেলি।
সব ই কানে আসছিল। কিন্তু ভালবাসায় মানুষ কুকুরের থেকেও অধম হয়ে যায়। তাই কি? হ্যাঁ তাই, না হলে আমি চলে যেতে পারছি না কেন? কীসের আশায় এখানে আছি। জানিনা, আমার পা সরছে না। মনে হচ্ছে পা নড়ালেই আমি ধড়াস করে মাটিতে পরে যাব। বসে পরলাম ওখানেই আমি। তখনি আমার মাথার উপর দিয়ে কিছু একটা ভারী জিনিস উড়ে গেল দরজার দিকে। ভয়ে মাথা টা নামিয়ে নিতেই আওয়াজ টা পেলাম।
ধরাম!!!!
আওয়াজ টা পেয়ে তাকিয়ে দেখি, রাকার একটা দামী এয়ার ব্যাগ উঠনে, একেবারে সদর দরজার কাছে একেবারে ছড়িয়ে পরে রয়েছে।গতবারেও আমি এই ব্যাগ টা গুছিয়ে দিয়েছিলাম। ধরাম করে পরে, ব্যাগের হ্যান্ডেল টা ভেঙ্গে গেল। একটা চাকা ভেঙ্গে গড়িয়ে গেল কলতলার দিকে। বুঝলাম, আন্টি রাকার ব্যাগ টা বাইরে বের করে ছুঁড়ে দিলেন সজোরে। ভিতরের বেশ কিছু জামা প্যান্ট, এবডোমেন গার্ড আরো অনেক কিছু ছড়িয়ে এদিকে ওদিক হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখলাম আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন সামনে আমার। আমার হাত ধরে তুললেন আন্টি কে। চোখে এতো রাগ থাকতে পারে একটা মানুষের আমি জানতাম না। কেঁদে কেঁদে চোখ টা লাল হয়েই ছিল আন্টির। এখন আবার রাগে আরো রাঙ্গা হয়ে গেছে সেটা। বুকে ভয় ধরানোর জন্য যথেষ্ট। আমাকে তুলে ধরে নিজের হাত টা দরজার দিকে পয়েন্ট করে বললেন রাকা কে,
- ব্যাগ বের করে দিয়েছি, এনাদের সবাই কে নিয়ে এক্ষুনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।
আমি চমকে গেলাম একেবারে।কি করছেন আন্টি, আমার জন্যে নিজের ছেলের সাথে এ কি ব্যবহার করছেন? আন্টি কে কিছু বলতে যেতেই আমার দিকে চুপ করতে ইশারা করলেন। ওই রাগের মুর্তি আমি সহ্য করতে পারলাম না। চোখ বুঝে ফেললাম। আন্টি মনে হয় পাগল হয়ে গেছেন রাগে। পাশেই দরজার হুড়কো টা ছিল। তুলে এগিয়ে গেলেন রাকার দিকে। ঠান্ডা স্বরে বললেন
- কি রে? শুনতে পেলি না? আমি কিন্তু এই হুড়কো টা মাথায় মেরে মাথা একেবারে চেলিয়ে দেব বলে দিলাম।বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে আমার। দু মিনিট সময় দিলাম তোকে। যা আছে নিয়ে পালা, বাঁচতে চাইলে। উপায় নেই আমার না হলে তোর টাকায় তৈরি করা বাড়ি আমি ত্যাগ দিতাম। আমি নিজের পয়সা করে তোর এই বাড়ি ভেঙ্গে নিজের কুঁড়ে বানিয়ে তবে আমার শান্তি হবে। আর তোর স্পর্ধা কি ভাবে হয় আমাকে না জানিয়ে তোর প্রেমিকা কে বাড়িতে নিয়ে আসার? জানিস না এ বাড়িতে আমি ছাড়া কারোর অধিকার নেই কিছু নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার? ছ্যাঃ। যা যা বেরিয়ে যা এখনি।
আন্টি কিন্তু রেগে বললেন না কথা গুলো । খুব ঠাণ্ডা মাথায় বললেন। মানে ড্যাম সিরিয়াস উনি। অঞ্জনার মা এগিয়ে এলো এবারে, কিছু বলার আগেই আন্টি হাত জোর করলেন অঞ্জনার মায়ের কাছে, বললেন,
- এটা আমার বাড়ি। এই বাড়িতে আমি ছাড়া কেউ কথা বলে না। আমি সেই অধিকার কাউকে দিই নি। এই বাড়িতে শিব এর তত খানি জায়গা যত টা রাকার। রাকার জায়গা শেষ। কাজেই এর পরে শিব এর উপরে প্রতিটা কথা আপনি ভেবে চিনতে বলবেন এই আশা রাখব। না হলে আমার বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে অপমান করার জন্য আপনার কোন সম্মান রাখতে পারব না। ভালো হবে যদি আপনি কোন কথা না বলেন। দরজা ওই দিকে। আপনারা আসতে পারেন এবারে।
রাকা মনে ভাবেও নি ব্যাপার টা এই দিকে চলে যাবে। ও প্রায় কাতর হয়ে আন্টি কে বলল,
- মা!!!!!
আন্টি ততধিক গর্জে উঠলেন
- কে তোর মা? আমি যত টুকু বুঝলাম,তোর তো পুরোন কাউকে স্বীকার করতেই সমস্যা। যে বন্ধু না থাকলে , তুই আজকেও হয়ত এই রুদ্রপুরে মারামারি করতিস কোন বস্তি তে। যে না থাকলে আজকে যে মেয়ে তোকে মাথায় তুলেছে সে তোকে চেয়েও দেখত না। যে মেয়ে নিজের ছোটবেলার জমানো সব কিছু দিয়ে তোকে একটা সঠিক রাস্তা দিলো , তুই তার অপমান করলি, তোর থেকে আমি কি আশা করব? ভেবে দেখিস তো রাকা,শিব না থাকলে, শিব তোকে জোর করে কলকাতা না পাঠালে আজকে তোর কি হতো? যেদিনে এখানে আমার কাছে এসে বলেছিল আন্টি হাজার পঞ্চাশ তুমি জোগার কর, বাকি টা আমি বুঝব, সেদিনেই ও আমার মেয়ে হয়ে গেছিল। আমি তো ভাবিও নি, মেয়েটা তোকে এতোখানি ভালবাসে। সে তুই ওকে তোর মনের মতন মেয়ে নাই ভাবতে পারিস, কিন্তু ওকে অপমান করার স্পর্ধা তোর হয় কি করে? আর রনি কে তুই মারলি? ভুলে যাস না ছেলেটা নিজের জমানো টাকা থেকে তোকে টাকা দিয়ে কলকাতা পাঠিয়েছিল। ওর টাকা টা দেখিস না রাকা, হিসাব করলে ওর ভালোবাসার ঋণ তোর উপরে পাহাড়ের মতন হয়ে আছে। আর তুই ছেলেটা কে আজকে কাঁদালি? তোকে বলে রাখি, এখনকার পর থেকে তোর উপরে সামান্য আশা ও করি না। কিছু মনে করিস না বাবা, তোকে আমি মানুষ করতে পারিনি। শিব আমাকে আটকাতো, বলত আন্টি ওকে বোক না, ওর খেলা আছে আজকে, খেলতে পারবে না।ভুল করেছিলাম আমি। সেদিনেই তোকে জন্ম না দেওয়া উচিৎ ছিল যেদিন তুই আমার পেটে এসেছিলি। কি করব, সবার আশা পুরন হয় না। তুই একটা জানোয়ার হয়ে বড় হলি। তুই কি ওকে মেনে নিবি না, আমি কোন দিন ওকে তোর হাতে দিতাম না। তুই ওর যোগ্য কোন ভাবেই নোস।
তারপরে অঞ্জনার মায়ের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন,
- ওই যে তোর নতুন মা আছেন। ওনাদের নিয়ে এ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা বাবা। আমাদের কথা ভাবতে হবে না তোকে।আমরা আমাদের চালিয়ে নেব। কি ভেবেছিলি? এদের কে অপমান করে তাড়াবি, আর মা কে একটা বাড়ি, একটু সুখ স্বাছন্দ্য দিবি আর তোর মা গলে যাবে? তুই তোর মা কে এই রকম ভাবিস? তোর মা সম্মানের জন্য অতো বড় বাড়ি, জমি, সম্পত্তি ছেড়ে এক কথায় তোর বাবার হাত ধরে এই দরিদ্রের জীবন যাপন করে। যাই হোক, ভাবনা চিন্তা সব তুই পুড়িয়ে ফেলেছিস আমি সেটা বুঝে গেছি। যা যা দাঁড়িয়ে থাকিস না, রাগ উঠে যাচ্ছে। যা আ আ আ আ রাকা। অনেক আশীর্বাদ রইল। ভালো থাকিস।
রাকা মনে হয় কেঁদে ফেলল। নিজের মা এমন ভাবে তাড়িয়ে দেবে ভাবতেও পারছে না ও। পাশেই আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। মায়ের উপরে রাগ টা আমার উপরে নিল এসে আমার গাল টা চেপে ধরে। আমার খোলা চুল টা মুঠি করে ধরে, আর গাল টা নিজের হাতে চেপে ধরে আমাকে বাড়ির দেওয়ালে ঠেসে ধরল। উহহহ লাগে রাকা আমার। হিজড়ে হলেও আমার উপরে দীর্ঘ দিন ইস্ট্রোজেন চলেছে রাকা। আমি এখন তোর সাথে যুঝতে পারি না আর। এই সব ভাবতে ভাবতেই আমার চোখে আবার জল চলে এল। আমি ওর হাত টা ধরে সরানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ওর গায়ের জোরের কাছে পারব কেন? ও আমাকে ওই ভাবেই গাল টা নিজের হাতে চেপে ধরে বলল,
- শান্তি পেলি এবারে? আমার মা কে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে? তুই মেয়ে হতেই পারিস না। অঞ্জনার মা তোকে ঠিক ই বলেছে তুই হিজড়ে। তুই …তুই… একটা বোঝা। নোংরা নর্দমার পোকা আমার জন্য।
আমি ব্যাথা পাচ্ছি। কিন্তু ওর কথা শুনে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না আমি। পাই ব্যাথা। ওই তো দিতে চাইছে! ছোট থেকে আমাকে বাঁচিয়ে ওই এসেছে।এখন দিক ব্যাথা ও। ব্যাথা দিয়ে যদি ওর মনের রাগ একটু কমে। আমার ব্যাথায় যদি আমার উপরে ওর ঋণ কিছু কমে। উফ, মা গো মনে হচ্ছে গাল টা কেটে যাচ্ছে এবারে। রাকা আরো আমাকে কষ্ট দে তুই। এতোক্ষন মানসিক যন্ত্রনা দিচ্ছিলি, এবারে একটা কাজ কর, তোর ওই শক্তিশালী পা দিয়ে আমাকে পিষে ফ্যাল। মার আমাকে তুই মার। বাঁচতে তো চাইছি না আর। তড়পাস না আমাকে আর। প্লিজজজজজজ।
সে যাক, কিন্তু ও প্রতি ক্ষেত্রে আমাকে ভুল বুঝছে কেন? আমি কি করেছি? আমি শুধু তো তোকে ভালোবেসেছি।মনে মনে বলছি ওকে, তুই তো শুনলি ও না আমার কথা রাকা! একবার শুনলে আজকের এই ধুন্ধুমার ব্যাপার টা হতো না। কাঁদছি হাউ হাউ করে। আর ও ধরে আছে গাল টা আমার চেপে। আর ওর বাঁ হাত টা আমার ঘাড়ের কাছে চুল টা শক্ত করে ধরে রেখে দিয়েছে। ওই ভাবেই চেঁচিয়ে উঠলাম আমি,
- হ্যাঁ মেরে ফেল আমাকে। শেষ করে দে। কথা দিচ্ছি কেউ তোকে কিছু বলবে না। আমার কি দোষ বল? আমি তোকে বলেছিলাম কোনদিন, আমি তোকে ভালবাসি? আমি কোন দিন তোকে চেয়েছি আমার বয়ফ্রেন্ড হিসাবে। তুই!!! রাকা তুই!!! তুই আমাকে প্রপোজ করেছিলি, আমি না!!!
ততক্ষনে ও আমার গাল টা ছেড়ে দিয়েছে। আমার চুল এর মুঠি টাও ছেড়ে দিয়েছে। আমি দেওয়াল থেকে সামনে এগিয়ে এসেছি কথা বলতে বলতে। কাঁদছি ফুঁপিয়ে আমি। বললাম,
- কি ক্ষতি করেছি আমি তোর? কি কষ্ট দিয়েছি তোকে আমি আজ পর্যন্ত? কি চেয়েছি আমি তোর থেকে?
কাঁদছিলাম আমি কথা গুলো বলতে বলতে। আমি থামলাম না, বললাম,
- না জানি তুই কত কি করেছিস আমাকে। আমি এখানে বলতেও পারব না আর বলতেও চাইছি না।কিঞ্চু আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেন তুই?
রাকা এতোক্ষন চুপ ছিল কিন্তু এবারে আমাকে আর বলতে দিল না রাকা। আমাকে থামিয়ে দিল চিৎকার করে।
- চোওওপ!! আর একটা কথা বলবি না তুই। হিজড়ে শালা!
তারপরে অঞ্জনা আর অঞ্জনার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
- হ্যাঁ আমি তোকে চুমু খেয়েছি। হ্যাঁ খেয়েছি। ভুল করেছিলাম। কি ভেবেছিলি, এই টা বলে তুই অঞ্জনার থেকে আমাকে দূরে করে দিবি? কিন্তু ঘেন্না পাই সেটা ভাবলে এখন আমি। এই নে!! বিচ!!!!!!!!
বলে এক দলা থুতু উঠনে ফেলে দিল রাকা। আমি চেয়ে রইলাম সেদিকে। নিথর হয়ে। এর থেকে ভগবান আমাকে মেরে ফেলল না কেন? কিন্তু ভগবান থাকেন না সামনে। অন্য কেউ থাকেন, কৃষ্ণ হয়ে বস্ত্র হরন রুখতে। আমার সর্বস্ব হরন রুখতেই মনে হয়, আন্টি তেড়ে এলেন এবারে রাকার দিকে দরজার হুড়কো টা নিয়ে। আমি সেটা দেখতে পেয়ে ছুটে গিয়ে আন্টি কে জড়িয়ে ধরলাম। আন্টি ছুঁড়ে দিলেন হুড়কো টা রাকার দিকে। রাকা কোন রকমে সেটা এড়িয়ে গেল। মনে মনে ভাবছি, আন্টি ওর খেলা আছে। ওকে কিছু কোর না। ওকে কিছু কোর না।
রাকা ব্যাগ টা এক লাথি তে কোথায় পাঠিয়ে দিল কে জানে। আমি আন্টি কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি ডুকরে ডুকরে। আন্টিও তাই। কাঁদতে কাঁদতেই দেখছি, ওরা বেরিয়ে গেল ধীর পায়ে বাড়ি থেকে এক এক করে। তীব্র চিৎকার করে উঠলাম আমি,
- রাকা দাঁড়া!!!!!! রাকা চলে যাস না!!! আমি কোন দিন আসবো না তোর কাছে!!!! রাকা আ আ আ আ আ আ আ আ আ আ আ!!!!!!!!!!!
রনি কে বলেছিলাম কথা টা। রনি আনন্দের সাথেই বলেছিল আমাকে, ও যাবে আমার সাথে। আমিও রাজী হয়ে গেছিলাম। ওর সামনেই না হয় আমি আর রাকা একসাথে জীবন কাটানোর প্রতিজ্ঞা নেব। রনি সেই সময়ে পাশে থাকলে আমার খুব ভাল লাগবে। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। তিন জনে চলে যাব আমরা পিছনে আমাদের আড্ডার জায়গায়। ওখানে গিয়ে রাকার পায়ে ধরে নেবই যাতে ও আমাকে ক্ষমা করে দেয়। এখানে আমি অঞ্জনার থেকে একটু হলেও প্রিভিলেজ পাব। আমরা এতোদিনের পুরোন বন্ধু। আর এর পর থেকে ও যা চায় তাই দেব আমি ওকে। কনফিডেন্ট ছিলাম আমি, রাকা আমাকে একটা চান্স দেবেই। আর ওটাই দরকার আমার। নিজের যা আছে আমি সব ওর জন্য সঁপে দেব। শুধু ও যেন ভালো ভাবে আমাকে মেনে নেয়। আর ভালো ভাবে খেলা টা চালিয়ে যায়।
এই সব ভেবে, নিজেকে কনফিডেন্ট লাগল আমার বেশ। যেদিনে আমার যাবার কথা ছিল, আন্টি কাজে যাননি। আমাকে ফোন করে দিয়েছিলেন সকালে। আমি নিজেই শাড়ি পরেছিলাম সেদিন। খারাপ পরিনি। আমার মা কে পরিয়ে দিতে বললে শত প্রশ্ন করত মা। রাকার সাথে গত কয়েক দিনের টানাপোড়েন মা আন্দাজ করেছিল। আমার মন খারাপ করে থাকা হয়ত মায়ের ও নজরে এসেছিল। কিন্তু আজকে সকাল থেকে আমার মন ছিল ভাল। স্নান করে, নিজেকে একেবারে শেষ অব্দি পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম আমি। একবার ছেড়ে দুবার শাম্প্যু করেছিলাম মাথায় সকালেই। যাতে আমার চুল শুকিয়ে যায় যাবার আগে। কানের পরেছিলাম প্রথমবার আমার কানের ফুটো হবার পরে। ছোট একটা হনুমানের গদার আকারে কানের ছিল আমার। ভালো লাগত আমার সেটা। নর্ম্যাল আমেরিকান ডায়মন্ড দিয়ে সাজানো দুটো বালা পরেছিলাম দু হাতে। কপালে টিপ পরেছিলাম একটা ছোট্ট হলুদ রঙের। কারন শাড়ি টা হলুদ শিফনের পরেছিলাম আমি।
মা আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলেছিল বাপির স্কুটি টা নিয়ে যেতে। জানত মা রাকা আসবে। আমার কোন সাজের কি মানে সেটা মা দেখলেই বলে দিতে পারত। মা কে প্রণাম করেই বেড়িয়েছিলাম আমি। ভাবছি ঠাকুর আজকে এই আশির্ব্বাদ টা কোর আমাকে। রাকা যেন আমাকে গ্রহন করে। দেরী না হয়ে যায় আমার জীবনে। আমি আর রনি যখন পৌছুলাম, দেখলাম রাকা বাড়িতেই। বাব্বাহ সেই পাঁচ মাস বাদে দেখলাম ছেলেটা কে। ঘরে ছিল, বেরিয়ে এলো বাইরে। আন্টি ও আমার দিকে চেয়ে আছেন প্রশংসার চোখে। রাকাও দেখছে। দুজনের নজরেই অনেক অনেক ভালোলাগা ছিল। লজ্জা পেলাম এবারে। কিন্তু রাকা কে দেখেই তেড়ে গেলাম আমি স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গী তে।
- কি রে জানোয়ার, বাঁদর, সেদিনে ফোনে আমাকে যা নয় তাই বললি। ক্ষমা চাইলাম, তাও ফোন কেটে দিলি। কি ভেবেছিস কি তুই? আমাকে এই ভাবে তুই কষ্ট দিবি?
এই বলে দুমাদুম কিল মারতে লাগলাম আন্টির সামনেই। থামছিলাম না আমি। আন্টি চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন। রনি গাড়ি টা বাইরে রেখে ততক্ষন ভিতরে এলো। আমি কথা বলতে বলতেই কিল পারছিলাম ওর বুকে হাতে
- যা খুশি কর আমাকে, অপমান কর, মার,খারাপ কথা বল, কিন্তু কথা বলছিস না কেন? কি রে উত্তর দে?
রাকা চুপ করে রইল। না তো আমাকে আটকালো। না আমাকে একটা কথা বলল। উত্তর পেলাম আমি সেই সময়েই, যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এলো অঞ্জনা, অঞ্জনার মা, স্মিতা আন্টি আর অঞ্জনার বোন। সেটা দেখেই আমার হাঁটু কেঁপে গেল। বুকের মধ্যে হাজার দামামা বাজতে শুরু করল। মনে হলো আমার আশা নেই আর কোন ভাবেই। এই পরিস্থিতি তে পরব আমি ভাবিনি কোন দিন। আন্টি আমাকে আজকে কেন ডাকলেন? আমি কেমন জানিনা, ভয় পেয়েই একটু সরে গেলাম আন্টির কাছে। রাকাকে মারছিলাম আমি আমার অধিকারেই। রাকা কিছু বলছিল না, এমন আদরে ভরা মার ও অনেক খেয়েছে। কিন্তু এটা অঞ্জনার সহ্য হল না। ফুঁসছিল ও রাগে। আমাকে একবার দেখে নিয়ে, ওর মা কে বলল,
- দ্যাখ মা কত বড় নির্লজ্জ। আন্টির সামনেই তার ছেলেকে এই ভাবে মারছে। রাকার ব্যাথার কোন পরোয়া ও করে নাকি?
অঞ্জনা সামনে আসতেই রাকা একটু সাবধানী হয়ে গেল। আমাকে ভালো লাগা টা ওর চোখে আর রইল না। আমি তখন আন্টির কাছে। আমার কাছে এটা অবাক করার ব্যাপার। আন্টির সামনেই আমি রাকার ঘাড়ে চেপে ঘুরে বেড়াতাম। হ্যাঁ আমার মা রাগ করত কিন্তু আন্টি কোনদিন রাগ করেনি। একটু হলেও আমি সামলে নিলাম। আন্টি চুপ করে আছেন আমাকে ধরে। আর রাকা অনেক টা মাথা নিচু করে তাকিয়ে। অঞ্জনা কে বললাম,
- অঞ্জনা!! আমি ওকে লাগার মতন করে মারি না রে!
বলতে পারলাম না অঞ্জনা কে, রাকার এক সূচ্যাগ্র কষ্ট আমার কাছে শত শত হাতুরির আঘাতের সমান। আজকে ও আমাকে বলছে রাকার ব্যাথার কথা? কথা টা বললাম বটে, কিন্তু বলতে গিয়ে কান্না গলায় চলে এল আমার। রাকা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে রইল। কিন্তু অঞ্জনা রাগে ফেটে পড়ল একেবারে। বলল,
- সে আমি দেখেছি কেমন করে মারছিস তুই। যতই তুই মেয়ে হয়ে সেজে ঘুরে বেড়াস, তুই তো ছেলেই ত্র্যম্বক? তোর হাতে মারলে রাকার ব্যাথা লাগবে না এই কথা আর যে বিশ্বাস করুক, আমি করব না। তুই কি ভেবেছিলি, সুন্দরী সেজে ঘুরে বেরিয়ে রাকা কে ফাঁসিয়ে ফেলবি? তুই সত্যি কারের মেয়ে হলে এই কাজ টা করতে পারতিস না। এখন যা এখান থেকে, রাকার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
যেতেই তো চাইছি এখান থেকে। পালাতেই ত চাইছি, এই খান ছেড়ে। পারছি কই। নাম টা ভুলতে বসেছিলাম আমি। আমার জীবনের সব থেকে বাজে সময়ের একটা পরিচিতি আমি চাইছিলাম না সামনে আসুক। যেমন ঘা, হলে তাকে ব্যাথা দিয়ে আরো ব্যাথা পেতে ইচ্ছে করে, তেমন ই আমার পা দুটো স্থানু হয়ে গেল আরো ব্যাথা পাবার আশায়। অঞ্জনা সেই ঘা টা আরো বেশি করে খুঁড়ে দিল আমার। আন্টি চুপ করে আছেন। বড় কঠিন চোখ। আগুন ঝড়ছে আন্টির চোখ থেকে। রাকা মনে হয় কি করবে বুঝতে পারছে না। ঘেন্না লাগছে আমার নিজেকে এবারে। আমি স্বপ্নে ভাবিনি এমন পরিস্থিতি তে আমাকে পরতে হবে। রনির দিকে তাকিয়ে দেখি ও বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে অঞ্জনার দিকে। আমি কেঁদে ফেললাম এবারে। রাকা চুপ করে আছে। ও কেন বলছে না অঞ্জনা কে, যে তুই কেন শিব কে চলে যেতে বলছিস? ও আমার কতখানি তুই জানিস না? ব্যস এই টুকু বলে দিলে, আমি সারা জীবন কাটিয়ে ফেলব। এই টুকুই তো চাই এখন। এর বেশী আর কিচ্ছু চাই না। হ্যাঁ আন্টির কথায় আমি ভেবেছিলাম, রাকা আমাকে গ্রহন করবে, আরেক টা চান্স দেবে। কিন্তু এখন আর সেই বিশ্বাস নেই আমার। আমি একবার রাকার দিকে তাকিয়ে আছি আর একবার আন্টির দিকে তাকাচ্ছি। আন্টি আমাকে ধরে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু রাকা? ও কেন বলছে না শিব তুই থাক যাবি না কোথাও। রনি বলল এবারে কথা,
- কেন শিব কেন যাবে? শিব তো আজকে বলে না, গত আট বছর এ বাড়িতে যাতায়াত করে। গত এগারো বছর ওর রাকার সাথে বন্ধুত্ব। তুই রাকার সাথে কথা বল, কে মানা করেছে। ওকে যেতে বলছিস কেন?
রনির কথায় এবারে আন্টি মুখ খুললেন। রাকা কে বললেন,
- রাকা তুই ওদের নিয়ে ঘরে যা। শিব কে নিয়ে ভাবতে হবে না।
আন্টি আমাকে নিয়ে রান্না ঘরে দিকে যাবেন সেই সময়ে অঞ্জনা বলল কথা। অঞ্জনার মা আর বোন দুজনাই চুপ এখন। কিন্তু অঞ্জনা বলল,
- তবু তোর লজ্জা নেই না ত্র্যম্বক? এখন দাঁড়িয়ে আছিস এখানে। কি ভাবছিস? আন্টি ভদ্রতা করে বললেন, সেটাও বুঝলি না?
আমি যাচ্ছিলাম আন্টির সাথে রান্না ঘরে। কিন্তু কথা টা শুনে দাঁড়িয়ে পরলাম। সত্যি কি আন্টি ভদ্রতা করলেন? তাকালাম আন্টির দিকে। দেখলাম আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বড় মিষ্টি করে হাসলেন। ভরসা দিলেন আমাকে। তারপরে পিছন ঘুরে অঞ্জনা নয় রাকা কে বললেন,
- রাকা, অঞ্জনা প্রথমবার আমাকে দেখল।আর শিব কে নিয়ে আমি গত আট বছর আছি। তুই ও আছিস। কাজেই আমার চরিত্র অঞ্জনার জানার কথা নয়, আর ও জানেও না। আমার কাছে মুখে এক আর মনে এক, ব্যাপার টা নেই। এটা ওর জানার কথা নয়। কিন্তু তুই তো জানিস। ওকে মানা কর, আমার আর শিবের কথা ভাবতে। ওনারা তোর গেস্ট। আমার ছেলের গেস্ট। আমার কাছে বড় আদরের। মানা কর, আমার আর শিবের ব্যাপারে কথা বলতে। শেষ বার বললাম ।
আর অপেক্ষা না করে আন্টি প্রায় আমাকে টানতে টানতে রান্না ঘরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন। পিছন থেকে শুনলাম রাকা অঞ্জনা কে বলছে,
- আরে তুমি চুপ কর। আমার মা কে কিছু বোল না। আমার মা এক আলাদা মানুষ।
অঞ্জনা হয়ত শুনল কথা টা। কিন্তু স্মিতা আন্টি বলে উঠলেন এবারে।
- এত কথা হচ্ছে ওকে নিয়েই। এতো গুলো মানুষ চাইছে না ওকে। তবু লজ্জা নেই হিজড়ে টার।
আন্টি থেমে গেলেন। কেন শুনতে পেলাম আমি এই কথা টা। বহুকাল শুনিনি। ভিতরের সর্বস্ব মনে হল আমার জ্বলছে। আমার মনুষত্ব, আমার ভিতরে মেয়েটা দাউ দাউ করে জ্বলছে এই কথা টা শুনে। কিন্তু বলার কি আছে আর। রাকা এখনো কিছু বলল না আন্টি কে। মানে সেও মেনে নিলো। আন্টি মারাত্মক রেগে গেছেন। কিন্তু আন্টি কিছু বলার আগেই, চিৎকার করে রনি মার মুর্তি নিয়ে তেড়ে গেল স্মিতা আন্টির দিকে। এবারে রাকা এগিয়ে এল। হাতাহাতি হলো দুজনের। রনি কে ছিটকে দিল রাকা। চেঁচিয়ে উঠল রনির উপরে রাকা,
- বাস্টার্ড! তোর সাহস কি ভাবে হয় আন্টির দিকে তেড়ে আসার এই ভাবে? সান অফ অ্যা বিচ।
ওরা চারজন ছাড়া আমরা আরো তিনজন ছিলাম বাড়িতে। আমরা তিনজন থম মেরে গেলাম। আন্টি বলতে গেলে থরথর করে কাঁপছেন। রাগে। আমার রাগ শেষ। নিজের উপরে করুনা হচ্ছে। রনির ও মনে হয় রাগ শেষের দিকে। বুঝে গেছে আমার মতই, যে কার উপরে রাগ করছে ও! আমার খারাপ লাগছে রনির জন্য। বেচারীর উপরেই রাকা আমার উপরে রাগ টা ঝেড়ে দিল। ইংরাজি তে ওই গালি টার মানে করলে কি দাঁড়ায়, রাকা আমাকে বলেছিল এক কালে। রাকা বলল রনি কে এই কথা টা? রনি কিছুক্ষন রেগেই তাকিয়ে রইল। গালি টা শুনে বেচারি একেবারে নিথর হয়ে গেছে। হয়ত ভাবছে আন্টির সামনে রাকা কেন ওকে এই গালি টা দিলো। রনি হেসে উঠল জোরে। আমি ভাবছি ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি? বলল,
- আমারি ভুল জানিস রাকা। তোর জন্য যে নিজের জমানো সব কিছু, ইভেন নিজের মন ও উজার করে দিয়েছে, তুই তাকে হিজড়ে বললি, আর আমাকে ছেড়ে দিবি, এটা আমিও ভাবিনি। কিন্তু তাই বলে ওই গাল টা দিলি? রাকা আমার বাড়িতে তুই গেছিস অনেক বার। আমার মায়ের হাতে তৈরী খাবার ও খেয়েছিস। কি করে বললি রে আমাকে? ছিঃ। যাই হোক তুই এই সবের উর্ধে চলে গেছিস আমি বুঝে গেছি। ভাবিস না তোকে আমি ছেড়ে দিলাম, কিছু বললাম না এর কারন আমি কিছু করতে পারব না। কিন্তু কি জানিস, আমি আন্টি কে আমার মা ছাড়া আর কিছু মনে করিনি।
বলতে বলতে রনির চোখে জল চলে এল। রাকা হয়ত ওই সময়ে বলে ফেলেছে কথাটা। রনি কে ওই ভাবে রিয়াক্ট করতে দেখে হয়ত একটু হলেও খারাপ লাগছিল। রনি কিন্তু ও থামছে না।
- হ্যাঁ ঠিক করেছিস তুই। শিব কে ছেড়ে দিয়েছিস। কারন আজকে আমি বুঝে গেছি, তুই শিবের যোগ্য নোস। কোন ভাবেই নোস। তুই আজকে যাই হয়ে যাস না কেন, যত বড় কেউ কেটা হোস না কেন, তার জন্য শিব আর একমাত্র শিব দায়ী। সত্যি বলতে তুই একটা বিগ জিরো।
আমি রনি কে থামাচ্ছি এবারে।
- রনি থাম তুই। তুই কেন বন্ধুত্ব নষ্ট করছিস?
রনি আমার দিকে চেয়ে এবারে রাগে ফেটে পরল। ছেলে গুনো এমন ই হয়, যত রাগ মেয়েদের উপরে। আমাকে বলল
- তুই থাম! সব দোষ তোর। কে তোকে ওকে ছাড়তে বলেছিল? সেদিনেই কানের নীচে থাবড়ে ওকে সিধে করে দিতে পারতিস। যাই হোক শোন শিব, আজকে এখানে এসেছিলাম, তোদের মিলন দেখব বলে। আমাকে বহু মেয়ে রিজেক্ট করেছে জীবনে। আমিও কুত্তা, পিছনে পিছনে ঘুরে বেরিয়েছি তাদের। এতো কষ্ট পাইনি, যা আজকে পেলাম।আমি নিজের চোখে দেখেছি, ওকে খেলতে পাঠানো, সেই টাকা জোগার করা, ওর পরীক্ষায় পাশ করানো। জানিনা তুই কত খানি কষ্ট পেয়েছিস এখন।কিন্তু আমি আর পারছি না থাকতে, বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তোর এই অপমানের পালা শেষ হলে বলিস তোকে বাড়ি পৌঁছে দেব আমি।
আমি রনি কে চুপ করতে বলছি। ভাবছি, ওরে চুপ কর তুই, আমার কাছে ওর ঋণের থেকে ওর আছে আমার ঋণ অনেক অনেক বেশি। কেন পুরোন কথা তুলছিস। বন্ধু আমি ওর, ভালোবাসি ওকে নিজের থেকেও বেশি। রাকা মনে হয় রনির কথা গুলো হজম করতে পারল না। মাথায় নিজের ইগো চড়ে বসেছে ওর। তাই, আমি রনি কে কিছু বলার আগেই, রাকা বলল বেশ টোন্ডিং এর সুরে,
- ভালই তো হলো তোর রনি। আমি মাঝে নেই আর, হিজড়ে টা কে তুই বিয়ে করে নে। ও তো মেয়ে হয়েছে, আমাকেই পাবে বলে। একটা ছেলে তো লাগবে ওর নাকি? তোর ও সাহসের পরীক্ষা হয়ে যাবে। কেমন হিজড়ে কে বিয়ে করতে পারিস দেখব।
ইশ ছিঃ ছিঃ ছিঃ। কি বলছে রাকা এগুলো? শেষে তুই ও আমাকে হিজড়ে বললি রাকা? এতোক্ষন মনে জোর ধরে ছিলাম, তুই নিজের মুখে বলিস নি আমাকে কথা টা। সেটাও বলে দিলি? আর দাড়িয়েই থাকতে পারলাম না আমি। হাঁটু মুড়ে বসে পরলাম ওখানেই। দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছি। কি জানি অঞ্জনা আর অঞ্জনার পরিবার হয়ত মজা নিচ্ছে। নাহ এটা থামানো দরকার। না হলে আরো কত রক্তাক্ত হতে হবে কে জানে? আমাকে ওরা দুজনে কিছু বলতেই দিচ্ছে না। আমি আন্টির দিকে চেয়ে বললাম কাঁদতে কাঁদতেই,
- আন্টি ওদের থামাও।
কিন্তু তার আগেই আমাকে হিজড়ে বলার জন্য, রনি রাকার কলার ধরে নিলো নিজের হাতে। ডান হাত টা তুলে রাকাকে মারতে যাবে তখনি আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,
- রনি !!!!!!!! নাআআআ!!!!! ওর খেলা আছে সামনে ইন্ডিয়ার। মারিস না ওকেএএএ
রনি থেমে তো গেল, কিন্তু রনির একশনের রিয়াকশন এ রাকার পাঞ্চ টা রনির ঠোঁটে পরল। জোর ছিল না বেশী। কিন্তু আমি দেখলাম কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করল রনির ঠোট দিয়ে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, কি হচ্ছে এসব। এই রকম নোংরা ব্যাপার সিনেমাতেও দেখায় না। আমি রনির কাছে ছুটে গেলাম। দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ঠোঁটের কষে রক্ত। আমাকে দেখে জামার কলারে রক্ত টা একবার মুছে নিল। রাকা ভাবল রনি কে ও কাবু করে ফেলেছে। আবার টোন্ড করল ও,
- বাহ ও বলল আর থেমেও গেলি। কি প্রেম বাবা। আগেই বলতে পারতিস ওকে। ও তাহলে আমার পিছনে ঘুরত না।
আমি আর কিছু বলার মতন পরিস্থিতি তে নেই। এই সব কথার উত্তর তো হয়না। রনি এবারে রাগল না যেন আর। রাকার দিকে তাকিয়ে বলল
- সে সৌভাগ্য আমার নেই রে। হবেও না। আজকে যা কষ্ট যা যন্ত্রনা তুই ওকে দিলি, ও জীবনে আর কাউকে ভালবাসতে পারবে বলে আমি মনে করি না। না হলে অমন একটা মেয়ের ভালবাসা পাবার জন্য আমি জন্ম জন্ম অপেক্ষা করতে রাজী। যাই হোক, তোর চোখে এখন পট্টি আছে। আমি জানি একদিন তুই বুঝবি। সেদিনে দেরি না হয়ে যায় তোর।
তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে আর আন্টি কে দেখে বলল
- আমি এলাম রে শিব। আন্টি এলাম।
বেরিয়ে গেলো ও। হাঁ করে তাকিয়েছিলাম আমি ওর দিকে। কি হয়ে গেল? এটা কি সত্যি হচ্ছে? নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি। মাথা ঘুরছে আমার। রাকা আমার সামনেই ছিল দাঁড়িয়ে। আমাকে বলল,
- সব শুনে নিয়েছিস তুই? এবারে চলে যা আমাদের বাড়ি থেকে। আর যেন তোর মুখ দেখতে না হয় আমার।
মাথা নিচু করে রইলাম আমি। আর কি বাকি রইল অপমানের, তাই হিসাব করছিলাম আমি। আন্টি সেখানে দাঁড়িয়ে নেই যেখানে আগে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাবার আগে আন্টি কে চাইছিলাম আমি খুব আমার কাছে। রাকা যখন খেলতে যেত, চার মাস ছয় মাস আসত না, আমি আসতাম আন্টির কাছে। জিজ্ঞাসা করে নি, আর আসব কিনা রাকা না থাকলে। রাকা আমাকে তাড়া দিচ্ছে। সাথে অঞ্জনা আর অঞ্জনার মা। নিজেদের মধ্যে বলা বলি করছে। এখনো বিদায় হবে না? বাবাহ কি মধু কে জানে এই বাড়িতে। এতো ছোট লাগল নিজেকে যে মনে হচ্ছিল, আজকেই জীবন টা আমার শেষ হয়ে গেল না কেন? এখানেই আমার হার্ট ফেইল করছে না কেন? এতো দুঃখ, অপমান নিতে পারে আমার হৃদয়? নিজেও জানতাম না আমি। আমি কি বুঝতে পারছি না অপমান টা? কীসের আশায় দাঁড়িয়ে আমি এখনো এখানে। অঞ্জনার মা তাড়া দিলেন আমাকে,
- কি হলো, এবারে তো যা। বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে এক্ষুনি। আর কোন দিন ও যেন না দেখি রাকার আশে পাশে তোকে।
তারপরে রাকার দিকে ফিরে বললেন,
- রাকা চলো, আমাদের আলোচনা টা সেরে ফেলি।
সব ই কানে আসছিল। কিন্তু ভালবাসায় মানুষ কুকুরের থেকেও অধম হয়ে যায়। তাই কি? হ্যাঁ তাই, না হলে আমি চলে যেতে পারছি না কেন? কীসের আশায় এখানে আছি। জানিনা, আমার পা সরছে না। মনে হচ্ছে পা নড়ালেই আমি ধড়াস করে মাটিতে পরে যাব। বসে পরলাম ওখানেই আমি। তখনি আমার মাথার উপর দিয়ে কিছু একটা ভারী জিনিস উড়ে গেল দরজার দিকে। ভয়ে মাথা টা নামিয়ে নিতেই আওয়াজ টা পেলাম।
ধরাম!!!!
আওয়াজ টা পেয়ে তাকিয়ে দেখি, রাকার একটা দামী এয়ার ব্যাগ উঠনে, একেবারে সদর দরজার কাছে একেবারে ছড়িয়ে পরে রয়েছে।গতবারেও আমি এই ব্যাগ টা গুছিয়ে দিয়েছিলাম। ধরাম করে পরে, ব্যাগের হ্যান্ডেল টা ভেঙ্গে গেল। একটা চাকা ভেঙ্গে গড়িয়ে গেল কলতলার দিকে। বুঝলাম, আন্টি রাকার ব্যাগ টা বাইরে বের করে ছুঁড়ে দিলেন সজোরে। ভিতরের বেশ কিছু জামা প্যান্ট, এবডোমেন গার্ড আরো অনেক কিছু ছড়িয়ে এদিকে ওদিক হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখলাম আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন সামনে আমার। আমার হাত ধরে তুললেন আন্টি কে। চোখে এতো রাগ থাকতে পারে একটা মানুষের আমি জানতাম না। কেঁদে কেঁদে চোখ টা লাল হয়েই ছিল আন্টির। এখন আবার রাগে আরো রাঙ্গা হয়ে গেছে সেটা। বুকে ভয় ধরানোর জন্য যথেষ্ট। আমাকে তুলে ধরে নিজের হাত টা দরজার দিকে পয়েন্ট করে বললেন রাকা কে,
- ব্যাগ বের করে দিয়েছি, এনাদের সবাই কে নিয়ে এক্ষুনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।
আমি চমকে গেলাম একেবারে।কি করছেন আন্টি, আমার জন্যে নিজের ছেলের সাথে এ কি ব্যবহার করছেন? আন্টি কে কিছু বলতে যেতেই আমার দিকে চুপ করতে ইশারা করলেন। ওই রাগের মুর্তি আমি সহ্য করতে পারলাম না। চোখ বুঝে ফেললাম। আন্টি মনে হয় পাগল হয়ে গেছেন রাগে। পাশেই দরজার হুড়কো টা ছিল। তুলে এগিয়ে গেলেন রাকার দিকে। ঠান্ডা স্বরে বললেন
- কি রে? শুনতে পেলি না? আমি কিন্তু এই হুড়কো টা মাথায় মেরে মাথা একেবারে চেলিয়ে দেব বলে দিলাম।বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে আমার। দু মিনিট সময় দিলাম তোকে। যা আছে নিয়ে পালা, বাঁচতে চাইলে। উপায় নেই আমার না হলে তোর টাকায় তৈরি করা বাড়ি আমি ত্যাগ দিতাম। আমি নিজের পয়সা করে তোর এই বাড়ি ভেঙ্গে নিজের কুঁড়ে বানিয়ে তবে আমার শান্তি হবে। আর তোর স্পর্ধা কি ভাবে হয় আমাকে না জানিয়ে তোর প্রেমিকা কে বাড়িতে নিয়ে আসার? জানিস না এ বাড়িতে আমি ছাড়া কারোর অধিকার নেই কিছু নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার? ছ্যাঃ। যা যা বেরিয়ে যা এখনি।
আন্টি কিন্তু রেগে বললেন না কথা গুলো । খুব ঠাণ্ডা মাথায় বললেন। মানে ড্যাম সিরিয়াস উনি। অঞ্জনার মা এগিয়ে এলো এবারে, কিছু বলার আগেই আন্টি হাত জোর করলেন অঞ্জনার মায়ের কাছে, বললেন,
- এটা আমার বাড়ি। এই বাড়িতে আমি ছাড়া কেউ কথা বলে না। আমি সেই অধিকার কাউকে দিই নি। এই বাড়িতে শিব এর তত খানি জায়গা যত টা রাকার। রাকার জায়গা শেষ। কাজেই এর পরে শিব এর উপরে প্রতিটা কথা আপনি ভেবে চিনতে বলবেন এই আশা রাখব। না হলে আমার বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে অপমান করার জন্য আপনার কোন সম্মান রাখতে পারব না। ভালো হবে যদি আপনি কোন কথা না বলেন। দরজা ওই দিকে। আপনারা আসতে পারেন এবারে।
রাকা মনে ভাবেও নি ব্যাপার টা এই দিকে চলে যাবে। ও প্রায় কাতর হয়ে আন্টি কে বলল,
- মা!!!!!
আন্টি ততধিক গর্জে উঠলেন
- কে তোর মা? আমি যত টুকু বুঝলাম,তোর তো পুরোন কাউকে স্বীকার করতেই সমস্যা। যে বন্ধু না থাকলে , তুই আজকেও হয়ত এই রুদ্রপুরে মারামারি করতিস কোন বস্তি তে। যে না থাকলে আজকে যে মেয়ে তোকে মাথায় তুলেছে সে তোকে চেয়েও দেখত না। যে মেয়ে নিজের ছোটবেলার জমানো সব কিছু দিয়ে তোকে একটা সঠিক রাস্তা দিলো , তুই তার অপমান করলি, তোর থেকে আমি কি আশা করব? ভেবে দেখিস তো রাকা,শিব না থাকলে, শিব তোকে জোর করে কলকাতা না পাঠালে আজকে তোর কি হতো? যেদিনে এখানে আমার কাছে এসে বলেছিল আন্টি হাজার পঞ্চাশ তুমি জোগার কর, বাকি টা আমি বুঝব, সেদিনেই ও আমার মেয়ে হয়ে গেছিল। আমি তো ভাবিও নি, মেয়েটা তোকে এতোখানি ভালবাসে। সে তুই ওকে তোর মনের মতন মেয়ে নাই ভাবতে পারিস, কিন্তু ওকে অপমান করার স্পর্ধা তোর হয় কি করে? আর রনি কে তুই মারলি? ভুলে যাস না ছেলেটা নিজের জমানো টাকা থেকে তোকে টাকা দিয়ে কলকাতা পাঠিয়েছিল। ওর টাকা টা দেখিস না রাকা, হিসাব করলে ওর ভালোবাসার ঋণ তোর উপরে পাহাড়ের মতন হয়ে আছে। আর তুই ছেলেটা কে আজকে কাঁদালি? তোকে বলে রাখি, এখনকার পর থেকে তোর উপরে সামান্য আশা ও করি না। কিছু মনে করিস না বাবা, তোকে আমি মানুষ করতে পারিনি। শিব আমাকে আটকাতো, বলত আন্টি ওকে বোক না, ওর খেলা আছে আজকে, খেলতে পারবে না।ভুল করেছিলাম আমি। সেদিনেই তোকে জন্ম না দেওয়া উচিৎ ছিল যেদিন তুই আমার পেটে এসেছিলি। কি করব, সবার আশা পুরন হয় না। তুই একটা জানোয়ার হয়ে বড় হলি। তুই কি ওকে মেনে নিবি না, আমি কোন দিন ওকে তোর হাতে দিতাম না। তুই ওর যোগ্য কোন ভাবেই নোস।
তারপরে অঞ্জনার মায়ের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন,
- ওই যে তোর নতুন মা আছেন। ওনাদের নিয়ে এ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা বাবা। আমাদের কথা ভাবতে হবে না তোকে।আমরা আমাদের চালিয়ে নেব। কি ভেবেছিলি? এদের কে অপমান করে তাড়াবি, আর মা কে একটা বাড়ি, একটু সুখ স্বাছন্দ্য দিবি আর তোর মা গলে যাবে? তুই তোর মা কে এই রকম ভাবিস? তোর মা সম্মানের জন্য অতো বড় বাড়ি, জমি, সম্পত্তি ছেড়ে এক কথায় তোর বাবার হাত ধরে এই দরিদ্রের জীবন যাপন করে। যাই হোক, ভাবনা চিন্তা সব তুই পুড়িয়ে ফেলেছিস আমি সেটা বুঝে গেছি। যা যা দাঁড়িয়ে থাকিস না, রাগ উঠে যাচ্ছে। যা আ আ আ আ রাকা। অনেক আশীর্বাদ রইল। ভালো থাকিস।
রাকা মনে হয় কেঁদে ফেলল। নিজের মা এমন ভাবে তাড়িয়ে দেবে ভাবতেও পারছে না ও। পাশেই আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। মায়ের উপরে রাগ টা আমার উপরে নিল এসে আমার গাল টা চেপে ধরে। আমার খোলা চুল টা মুঠি করে ধরে, আর গাল টা নিজের হাতে চেপে ধরে আমাকে বাড়ির দেওয়ালে ঠেসে ধরল। উহহহ লাগে রাকা আমার। হিজড়ে হলেও আমার উপরে দীর্ঘ দিন ইস্ট্রোজেন চলেছে রাকা। আমি এখন তোর সাথে যুঝতে পারি না আর। এই সব ভাবতে ভাবতেই আমার চোখে আবার জল চলে এল। আমি ওর হাত টা ধরে সরানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ওর গায়ের জোরের কাছে পারব কেন? ও আমাকে ওই ভাবেই গাল টা নিজের হাতে চেপে ধরে বলল,
- শান্তি পেলি এবারে? আমার মা কে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে? তুই মেয়ে হতেই পারিস না। অঞ্জনার মা তোকে ঠিক ই বলেছে তুই হিজড়ে। তুই …তুই… একটা বোঝা। নোংরা নর্দমার পোকা আমার জন্য।
আমি ব্যাথা পাচ্ছি। কিন্তু ওর কথা শুনে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না আমি। পাই ব্যাথা। ওই তো দিতে চাইছে! ছোট থেকে আমাকে বাঁচিয়ে ওই এসেছে।এখন দিক ব্যাথা ও। ব্যাথা দিয়ে যদি ওর মনের রাগ একটু কমে। আমার ব্যাথায় যদি আমার উপরে ওর ঋণ কিছু কমে। উফ, মা গো মনে হচ্ছে গাল টা কেটে যাচ্ছে এবারে। রাকা আরো আমাকে কষ্ট দে তুই। এতোক্ষন মানসিক যন্ত্রনা দিচ্ছিলি, এবারে একটা কাজ কর, তোর ওই শক্তিশালী পা দিয়ে আমাকে পিষে ফ্যাল। মার আমাকে তুই মার। বাঁচতে তো চাইছি না আর। তড়পাস না আমাকে আর। প্লিজজজজজজ।
সে যাক, কিন্তু ও প্রতি ক্ষেত্রে আমাকে ভুল বুঝছে কেন? আমি কি করেছি? আমি শুধু তো তোকে ভালোবেসেছি।মনে মনে বলছি ওকে, তুই তো শুনলি ও না আমার কথা রাকা! একবার শুনলে আজকের এই ধুন্ধুমার ব্যাপার টা হতো না। কাঁদছি হাউ হাউ করে। আর ও ধরে আছে গাল টা আমার চেপে। আর ওর বাঁ হাত টা আমার ঘাড়ের কাছে চুল টা শক্ত করে ধরে রেখে দিয়েছে। ওই ভাবেই চেঁচিয়ে উঠলাম আমি,
- হ্যাঁ মেরে ফেল আমাকে। শেষ করে দে। কথা দিচ্ছি কেউ তোকে কিছু বলবে না। আমার কি দোষ বল? আমি তোকে বলেছিলাম কোনদিন, আমি তোকে ভালবাসি? আমি কোন দিন তোকে চেয়েছি আমার বয়ফ্রেন্ড হিসাবে। তুই!!! রাকা তুই!!! তুই আমাকে প্রপোজ করেছিলি, আমি না!!!
ততক্ষনে ও আমার গাল টা ছেড়ে দিয়েছে। আমার চুল এর মুঠি টাও ছেড়ে দিয়েছে। আমি দেওয়াল থেকে সামনে এগিয়ে এসেছি কথা বলতে বলতে। কাঁদছি ফুঁপিয়ে আমি। বললাম,
- কি ক্ষতি করেছি আমি তোর? কি কষ্ট দিয়েছি তোকে আমি আজ পর্যন্ত? কি চেয়েছি আমি তোর থেকে?
কাঁদছিলাম আমি কথা গুলো বলতে বলতে। আমি থামলাম না, বললাম,
- না জানি তুই কত কি করেছিস আমাকে। আমি এখানে বলতেও পারব না আর বলতেও চাইছি না।কিঞ্চু আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেন তুই?
রাকা এতোক্ষন চুপ ছিল কিন্তু এবারে আমাকে আর বলতে দিল না রাকা। আমাকে থামিয়ে দিল চিৎকার করে।
- চোওওপ!! আর একটা কথা বলবি না তুই। হিজড়ে শালা!
তারপরে অঞ্জনা আর অঞ্জনার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
- হ্যাঁ আমি তোকে চুমু খেয়েছি। হ্যাঁ খেয়েছি। ভুল করেছিলাম। কি ভেবেছিলি, এই টা বলে তুই অঞ্জনার থেকে আমাকে দূরে করে দিবি? কিন্তু ঘেন্না পাই সেটা ভাবলে এখন আমি। এই নে!! বিচ!!!!!!!!
বলে এক দলা থুতু উঠনে ফেলে দিল রাকা। আমি চেয়ে রইলাম সেদিকে। নিথর হয়ে। এর থেকে ভগবান আমাকে মেরে ফেলল না কেন? কিন্তু ভগবান থাকেন না সামনে। অন্য কেউ থাকেন, কৃষ্ণ হয়ে বস্ত্র হরন রুখতে। আমার সর্বস্ব হরন রুখতেই মনে হয়, আন্টি তেড়ে এলেন এবারে রাকার দিকে দরজার হুড়কো টা নিয়ে। আমি সেটা দেখতে পেয়ে ছুটে গিয়ে আন্টি কে জড়িয়ে ধরলাম। আন্টি ছুঁড়ে দিলেন হুড়কো টা রাকার দিকে। রাকা কোন রকমে সেটা এড়িয়ে গেল। মনে মনে ভাবছি, আন্টি ওর খেলা আছে। ওকে কিছু কোর না। ওকে কিছু কোর না।
রাকা ব্যাগ টা এক লাথি তে কোথায় পাঠিয়ে দিল কে জানে। আমি আন্টি কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি ডুকরে ডুকরে। আন্টিও তাই। কাঁদতে কাঁদতেই দেখছি, ওরা বেরিয়ে গেল ধীর পায়ে বাড়ি থেকে এক এক করে। তীব্র চিৎকার করে উঠলাম আমি,
- রাকা দাঁড়া!!!!!! রাকা চলে যাস না!!! আমি কোন দিন আসবো না তোর কাছে!!!! রাকা আ আ আ আ আ আ আ আ আ আ আ!!!!!!!!!!!