Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......

শুরুর দিকে ও যখন আমাকে কল করা কম করেছিল, আমি ভাবতাম অনেক বেশী ও হয়ত ক্লান্ত থাকছে। আমি ডিস্টার্ব করতাম না। কিন্তু এই নিয়ে তিন চার বার হলো যখন আমি দেখলাম ওর ফোন ব্যস্ত অতো রাতেও। কাউকে কিছু বলিনি আমি। আবার ভাবলাম, আমার সেদিনের ব্যবহারে ও হয়ত কষ্ট পেয়েছে। বা বুঝেছে আমাকে এড়িয়ে চলাই ভাল। মন টা খারাপ হয়ে গেল আমার। বা ও কি কাউকে প্রেম করছে আমাকে না পেয়ে?
  
                                                                                পর্ব ২৫
লীগের তখন শেষ দিক। আমি বুঝতে পারছিলাম, রাকা ক্লান্ত খুব। আর সেই টাইট ভাব টা নেই ওর মধ্যে। সেই ট্রেড মার্ক বডি ফেইন্ট, চকিত দৌড়, সময়ে বল ছাড়া এই ব্যাপার গুলো কমে যাচ্ছে ওর খেলা থেকে। ও কি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত কোন ভাবে? কিন্তু কেন? চেন্নাই এর সাথে এটিকে ড্র করল। কিন্তু আমি ভাবলাম ওকে আজকে আমি ফোন করব। ওকে শাসন করা দরকার। কার সাথে রাতে ওর ফোন ব্যস্ত থাকে আমাকে জানতেই হবে। ও রাতে না ঘুমোলে ক্লান্ত তো হবেই। এই প্রিমিয়াম লেভেলের খেলা তে ও বুঝতে পারছে না ওকে কতখানি শারীরিক ভাবে ফিট থাকতে হবে? ভয় ধরে গেল বুকে আমার। এ কীসের পাল্লায় পড়ল ও? সব দোষ আমার। আমি ছাড়া ওকে কেউ কন্ট্রোলে রাখতে পারে না। কেন যে মরতে এতো ভাবতে গেলাম সেদিনে? এখন তো সেই ওর পায়ে পরতে চাইছি আমি। সেদিনেই সব কিছু ইগো ছেড়ে সাবমিটেড হয়ে যেতাম আমি ওর কাছে। মনের, শরীরের ইচ্ছে মিটিয়ে নিত ও। ও তো অন্য কাউকে খুঁজত না আর। উফ ভাবতে পারছি না। সাড়ে দশ টার সময়ে কল করলাম ওকে আমি।খুব অসহায় লাগছে আমার। ফোন ই তো ধরে না এখন আর। অনেক পরে ধরে। ধরলেও আগের মতন হয়ে আর কথা বলে না। যাক ধরেছে। বলল খুব সাধারন ভাবে আমাকে,
-     হ্যাঁ বল

আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। বললাম
-     কি রে? আজকে এতো বাজে খেললি কেন?
-     কি করব? গার্ড এ রেখেছিল আমাকে?

মিথ্যা বলতে শিখেছে। ও কি ভাবে আমি খেলা বুঝি না? গার্ডে তো রাখবেই। ভাবলাম, এই রকম গার্ডে তুই লক্ষ্য থেকেছিস। সেই খান থেকে বেরোন জলভাত তোর কাছে। প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম আমি,
-     বাজে কথা কেন বলছিস তুই? তুই ক্লান্ত আছিস। তোকে ফিট লাগছে না রাকা।

আবার ঠাণ্ডা স্বরে বলল আমাকে,
-     তাহলে, তুই তো জানিস আমি ক্লান্ত। পেঁয়াজি করছিস কেন তবে আমার সাথে? ফোন রাখ। ঘুমাবো আমি। ষোল টা ম্যাচ খেললাম আমি। টায়ার্ড হয়ে যাওয়া টা স্বাভাবিক তাই না?

থ হয়ে গেলাম আমি কথা শুনে। আমাকে বাজে কথা, গালি, খিস্তী অনেক মেরেছে ও। কিন্তু এই রকম ইগনোর আমাকে কোন দিন ও করে নি। মাথা ঠান্ডা রাখলাম আমি, বললাম,
-     রাকা তুই সবে একুশ। এখন এক মাসে আঠেরো টা ম্যাচ খেললেও তুই ক্লান্ত হবি না। কেন আমাকে ফালতু বোঝাচ্ছিস? এই ক্লান্তি টা ম্যাচ খেলার নয়। তুই রাতে ঘুমোচ্ছিস না। কি হয়েছে তোর?

সত্যি টা সামনে চলে আসায় মনে হল উল্টো দিকে বেশ অস্বস্তি। কিন্তু সেটা কে কাউন্টার করল ও ভয়ঙ্কর বাজে ভাবে। বলল,
-     বাজে বকিস না তো। কোন ছোট বেলায় চারটে ম্যাচ খেলে সর্বজ্ঞ হয়ে গেছিস নাকি? রাখ আমি ঘুমাবো এখন।

কেমন অস্থির লাগছিল ওর কথা শুনে। বুঝলাম, আমাকে দমিয়ে দিতে চাইছে ও। সত্যি টা বাইরে আসতে দিতে চাইছে না একদম। সমস্যা নেই, ও আমাকে অপমান করুক। আমাকে অবহেলা করুক।আর এই রাকাই একদিন আমার মুখে কেমন খেলেছি না শুনলে পাগল করে দিত, সে আমাকে এই কথা বলল? ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আমি খেলিনি তাই ওর জায়গায় পৌঁছোই নি। আর ওর থেকে খেলা টা আমি কম বুঝি না। এতোক্ষন ভাবছিলাম ও আমাকে অপমান করুক। আমি তো সাবমিটেড হতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু এবারে অপমান টা ও আমাকে করল না, করল আমার বুদ্ধি কে আমার শিক্ষা কে। আমার মেইল ইগো টা একেবারে সদর্পে আমার মাথায় চেপে বসল যেন। মারাত্মক রেগে গেলাম আমি। ভাবলাম ও আমাকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলুক, কিন্তু নিজের কেরিয়ার টার কথা ও ভাববে না একবার? সেই ছোট বেলার মতন হয়ে গেলাম আমি। চেঁচিয়ে বললাম ওকে আমি
-     ঘুমোবি, নাকি ফোনে কথা বলবি অন্য কারোর সাথে?

বাস ওদিক থেকে একেবারে আওয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেল। পরক্ষনেই চেঁচিয়ে বলল ও আমাকে
-     বেশ করব কথা বলব অন্য কারোর সাথে। তাতে তোর কি? তোর সাথে বলছি না বলে তোর হিংসে হচ্ছে নাকি।
-     শাট আপ। জানোয়ার ছেলে। এতো রাতে আমি মরে গেলেও তোর সাথে কথা বলতাম না। আমি আর যাই হোক অমানুষ নই। তোর খেলার থেকে আর তোর থেকে ইম্পর্ট্যান্ট আমার জীবনে কিছু ছিল না , না থাকবে কোন দিন।

ফুঁসছি আমি কথা গুলো বলে। ওদিকে আবার চুপ। আমি থামলাম না, বললাম প্রচন্ড চেঁচিয়ে,

-     খবর্দার রাকা, রাত জেগে কথা বলবি না। আই এম লিস্ট বদারড, হুম ইউ আর টকিং উইথ। আই এম বদারড এবাউট টাইমিং ওনলি। তুই টাইম বদলা। তুই সন্ধ্যে বেলায় কিম্বা দুপুরে কথা বল। যার সাথে ইচ্ছে কথা বল তুই। কিন্তু রাত টা কেন বেছে নিয়েছিস তুই? লজ্জা করে না তোর? তোর কেরিয়ারের জন্য তোর বাবা মা কত স্যাক্রিফাইস করেছে! পুরো রুদ্রপুর কত আনন্দ, কত গর্ব করে তোকে নিয়ে, আর তুই এই সামান্য কারনে রাত জেগে থেকে নিজের খেলা নষ্ট করছিস?
-     থাম তো। জ্ঞান দিস না। নিজের চরকায় তেল দে।

আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না উল্টো দিকে রাকা আছে। আগের মতন হাসি মজা করে আমাকে রাগানোর জন্য বলছে না ও। দুজনাই রেগে আমরা। আর ও কথা গুলো বলছে আমাকে ভয়ঙ্কর ইগনোর করে। আমি বুঝতে পারছি ভাব টা। মানে আমার কল কেটে গেলেই ও বেঁচে যায়। আর একটা সময় ছিলো যখন, আমি না ও কে আগে কাটবে কল টা সেই নিয়ে ঝামেলা হয়ে আরো আধ ঘন্টা কথা যেত আমাদের। যখন বুঝলাম ও সত্যি রেগে আছে, তখন ঠাণ্ডা হলাম আমি। আমি তো সাবমিটেড হতে চেয়েছিলাম। এখন ঝগড়া করছি কেন? ভাবলাম ক্ষমা চেয়ে নি যদি কথা শোনে। বললাম,
-     আচ্ছা আচ্ছা সরি। ভুল হয়ে গেছে আমার। কিন্তু বল রাত জেগে কথা বলবি না আর। আচ্ছা বেশ আমার ফোন পছন্দ করিস না আর করব না ফোন, কিন্তু কথা দে, রাত জেগে আর কথা বলবি না। প্লিইইইইইইইইইইইজ।

শেষ কথা টা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললাম আমি। জলের ধারা চোখ থেকে গড়িয়ে গালে নেমে এসেছে আমার। বললাম
-     কই রে? বল কিছু। ওই !!!

কেটে গেলো ফোন টা ওর। কেটেই দিলো হয়ত। মারাত্মক ভয় পেয়ে গেলাম আমি। কীসের ভয় নিজেই বুঝতে পারছি না আমি। ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়, নাকি ওর কেরিয়ারের ভয়? ভিতরের পুরুষ টা বেগতিক দেখে পালিয়েছে। এখানে ওর কাজ তো ছিলই না। শুধু মুদু আমাকে ভরকি দিয়ে চলে গেল সে। কি করব আমি? এবারে মতন তো লীগ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ও যার সাথেই কথা বলুক তাকে বিয়ে করে নিক। এই রাত জেগে কথা বলে পরের দিন খেলবে কেমন করে? সেই বা কেমন মেয়ে? আমি রাকা কে জীবনে রাতে জাগিয়ে রাখি নি। আর ও কেমন ভালোবাসে রাকা কে যে অন্য সময়ে কথা বলতে পারে না। বা তিনটে মাস তার অপেক্ষা করার সময় নেই? না মেয়ে ভালো না। কবে যে আসবে ও? কার সাথে কথা বলব আমি এখন? আন্টির সাথে কথা বলব? কিন্তু আন্টি আমাকে ভালো বাসেন। আমি বললে আন্টি হয়ত আমাকে কিছু বলতে পারবেন না, কিন্তু মনে মনে তো চাইবেন যাতে আমার সাথে রাকার সম্পর্ক টা না হয়।

দুটো দিন আমি কাটালাম মারাত্মক মনো কষ্টে। মা কেও কিছু বলতে পারছি না আমি। বললেই তো রাকার সাথে আমার সম্পর্ক সামনে চলে আসবে। নাহ থাক। রনি কে বলি দেখি ও কি বলে।রনি কে ফোন করলাম আমি। রনি কে বললাম রাকার সাথে আমার ফোন কলের ব্যাপার টা। ও বেচারী ব্যস্ত আছে ওর একটা স্টল নিয়ে। কিন্তু আমাকে সময় দিল। বলল,
-     হুম জানতাম এমন টা হবে।
-     কেন কি জানতিস?
-     দ্যাখ কানা ঘুষো খবর আসছে, রাকা আর অঞ্জনা প্রেম করছে।

বুক টা ধড়াস করে উঠল আমার। হয়ত আমার পছন্দ মত হলো না ব্যাপার টা। কিন্তু আমি তো আসলে এটাই চেয়েছিলাম, ও একটা প্রপার মেয়ের সাথে প্রেম করুক। কিন্তু আমার কেন এতো বাজে লাগছে এবারে। রনি কে বললাম
-     তুই ঠিক জানিস?
-     না ঠিক তো জানিনা, তবে খবর তো আসেই রে উড়ে উড়ে।

চুপ করে গেলাম আমি। কি যে বলি এখন। সে বেশ করছিস প্রেম করছিস। কিন্তু তুই ভালো খেলিস বলেই তো তোর ছোট বেলার ক্রাশ অঞ্জনা কে পেয়েছিস। সেই খেলা টা কে ইগনোর করছিস কেন? রনি কে বললাম
-     সে ঠিক আছে, কিন্তু রাত জেগে কথা বললে খেলবে কি করে বলত?

রনি কিছুক্ষন চুপ করে রইল ফোনে। তারপরে বলল
-     দ্যাখ, সব ই বুঝতে পারছি আমি। কিন্তু কি জানিস, ও এখন বাধন ছাড়া হয়ে গেছে। এই তীব্র সাফল্য তারপরে পুরোন ক্রাশ।

আমি বললাম,
-     না না সে ও ওকেই জীবনে নিয়ে চলুক, কিন্তু খেলা টা কে বিসর্জন দিয়ে?
-     কি করবি? ও তো আর তোর হাতে নেই আগের মতন। দোষ তো তোর ই বল? তখন কত করে তোকে বললাম, তোর এই সব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে ওকে বল তুই ওকেই ভালোবাসিস। দ্যাখ এখনো সময় চলে যায় নি। আমি উড়ো শুনেছি, সত্যি না ও হতে পারে। তুই ও একটু দেরী তে বুঝিস। এই তো এলো আগের সপ্তাহে, একদিন ই ছিল। তুই বলে দিতে পারতিস।

ওর আগের কথা গুলো ভাবার কোন অবকাশ পেলাম না আমি। কিন্তু আগের সপ্তাহে এসেছিল মানে? আমি উড়িয়েই দিলাম ওর কথা,
-     ধুর কি বলছিস আগের সপ্তাহে এসেছিল কোথায় ও। ও চারমাস রুদ্রপুরে আসে নি।
-     সে কি? তোর সাথে দেখা করেনি? আমি তো তোকে ফোন করিনি এই ভেবে তুই থাকবি ওর সাথে , সময় কাটাবি তাই।
-     কি বলছিস তুই? তুই কি ভাবে জানলি?
-     আমাকে ফোন করেছিল, বাগডোগরা থেকে একটা গাড়ীর জন্য।আমি করে দিয়েছিলাম ওকে গাড়ী। ফেরার গাড়ী ও করে দিয়েছিলাম। 

বুকটা খালি খালি লাগছিল আমার খুব। এটা কি ভাবে সম্ভব? ও এলো আমাকে জানালো না? আগে দশ দিন আগে থাকতে বলত আমাকে। গ্র্যান্ড ওয়েলকাম করতাম আমি ওর। ও সেটা পছন্দ করত খুব। ও চিরকাল ই চাইত আমি ওর কাছে নুয়ে থাকি। বিশেষ করে মেয়ে হবার পর থেকে। আমার আপত্তি ছিল তাতে। কিন্তু ওর আসার দিনে আর যাবার দিনে আমি নুয়েই থাকতাম ওর কাছে। ও যেমন ভাবে চাইত আমি থাকতাম। যা বলত করতাম। ওর কথা মতন ওর বাড়িতে থেকে রান্না বান্না ও করতাম আমি। খোলা চুলে থাকতাম, যেমন টা ও চাইত। ও সেটা এনজয় করত। আর আমার ওতেই আনন্দ ছিল। কিন্তু এটা কেমন হলো যে ও একবার আমাকে জানালো না ও রুদ্রপুরে আসছে? চুপ করে গেলাম আমি একেবারে। মনে তুফান আমার। রনি একেবারে চুপ করে ছিল। চোখ দুটো জলে একেবারে ভরে গেছে আমার। গলার কান্না আটকে। কথা বলতে গেলেই কেঁদে ফেলব আমি। আন্টিও আমাকে খবর দিলো না একবার ও? বুঝেছি, আন্টি ও চান না আমার সাথে রাকার কোন রকম সম্পর্ক। আমি আন্টি কে বলে দিয়ে আসব যে আমার তেমন কোন ইচ্ছে নেই। মানে ইচ্ছে নেই আন্টি তোমার ঘরে রাকার বউ হিসাবে আসার। ব্যস ও যেন বন্ধুত্ব টা নষ্ট না করে। আমি হাতে পায়ে ধরে নেব আন্টির। ও আমার থেকে দূরে চলে গেলে, আমি যে তাহলে শেষ হয়ে যাব একেবারে।

পরের দিন ই আন্টির বাড়ি গেলাম আমি। আমাকে দেখেই আন্টি বেড়িয়ে এলেন। সন্ধ্যে দিকে গেছিলাম আমি। আমাকে ঘরে বসতে বললেন আন্টি। বললেন রান্না ঘর সেরে আসছেন। আঙ্কল ফেরেন নি এখনো। আমার মন ভালো নেই। রনি র সাথে কথা হবার পর থেকেই আমি কাঁদছি প্রতি মুহুর্তে। পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে আমার। আন্টি ঘরে এলেন আঁচলে হাত মুছতে মুছতে। আমাকে বললেন,
-     কত দিন আসিস নি কেন রে? রাকা নেই বলে আসতে নেই আমাদের কাছে?

আমি আন্টি কে দেখলাম। ভাবলাম, আন্টি তুমি তো চাও না আমি আসি। তাই তো রাকা এলো আর আমাকে খবর ও দিলে না। ভাবলাম, আমি আর ত্র্যম্বক নেই। আমি এখন শিবানী। আগের মতন ইগো নিয়ে থাকলে চলবে না। আন্টি ভালো খারাপ যাই বলুন, আমাকে ব্যাপার টা খুব ট্যাক্ট ফুলি পার করতে হবে। আন্টির সামনে কোন রকম ইগো ,রাগ রিশ দেখালে হবে না। আন্টি কাছে আসতেই আন্টি কে জড়িয়ে ধরলাম আমি। আঁকড়ে ধরা যাকে বলে। দু হাতে জাপটে একেবারে। চোখে জল এলো একেবারে ছাপিয়ে আমার।  আন্টি কিছু বললেন না প্রথমে আমাকে। একটু পরেই দেখলাম দুটো হাত আমার পিঠে দিলেন। তারপরে একটা মাথায়। চুলে বোলাতে লাগলেন। ততক্ষনে আমি আন্টি কে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লেগেছি। ডুকরে ডুকরে কান্না বেরিয়ে আসবে আমার এবারে। আন্টি বুঝতে তো পারছেন কিছু হয়েছে আমার। কিন্তু কি হয়েছে সেটা বুঝতে না পেরে আমাকে ওই ভাবে জড়িয়ে ধরে বললেন বড় আদর করে,
-     শিবানী!!! ও শিব! কি হয়েছে মা? কান্না কীসের? আন্টি কোন ভাবে শিব কে কষ্ট দিলো নাকি? ও মা শিব। মা রে! দ্যাখ আমাকে! কি হয়েছে আমাকে বলতো।

আমি কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম একেবারে। আন্টি কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম
-     ও আন্টি, আমি কোন ভুল করেছি তোমার কাছে? আমাকে তুমি এত দূরে করে দিয়েছ কেন?

আন্টি চমকে উঠলেন মনে হলো। আমি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলাম হয়ত বা বুঝতে পারেন নি, বললেন
-     কি বলছিস তুই পাগলী? তুই কি ভুল করেছিস? আর আমি তোকে দূরে সরিয়ে দেবো? কি হয়েছে বল তো আমাকে।

আমি ওই ভাবেই কাঁদতে কাঁদতে বললাম আন্টি কে,
-     রাকা এসেছিল আমার সাথে দেখা করে নি জানো? তুমিও আমাকে বলনি কেন, ও এসেছে? প্লিস আন্টি, আমি ওর জীবনে কোন ভাবে থাকব না। কিন্তু ও আমার থেকে দূরে চলে গেলে আমি মরে যাব আন্টি। কিছু তো চাই না বল? শুধু ওর সাথে আগের মতন বন্ধুত্ব রাখতে চাই আমি। জানি কোন ভাবেই আমি ওর যোগ্য নই। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পার। আমি কোন দিন ও ওর জীবনে আসতে চাইব না। এই তোমার পা ছুঁয়ে আমি কথা দিলাম।

এই বলে আমি হাঁটু মুড়ে, ঝুঁকে আন্টির পা ধরে নিলাম। আন্টি থ হয়ে আছেন একেবারে। রেগে গেছেন নিশ্চয়ই খুব। আমি সেটা দেখে পা দুটো কে আঁকার করে ধরলাম একেবারে। আমার স্থির বিশ্বাস ছিল আন্টি আমার উপস্থিতি মানতে পারছেন না রাকার জীবনে। না কোন মা ই মানতে পারবে না। কিন্তু আমি তো রাকা কে আটকে দিয়েছি। তারপরেও কেন আন্টি আমাকে এই শাস্তি দিচ্ছেন?  আন্টির মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-     এই তোমার পা ছুঁয়ে আমি বলছি, আমি ওর জীবনে ঢোকার কোন ভাবেই চেষ্টা করব না গো আন্টি। কিন্তু তুমি ওকে আমার সাথে বন্ধুত্ব টা রাখতে বোল প্লিস আন্টি প্লিস!!! আমাকে এই ভাবে ওর থেকে দূরে করে দিও না গো।

আর পারলাম না। কাঁদতে লাগলাম আমি একেবারে বাচ্চাদের মতন। নিজেকে রুখতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম আমার কান্না দেখে আন্টি যদি একটু সদয় হন। আন্টি একেবারে থ হয়ে আছেন। মুখে একটা অদ্ভুত কাঠিন্য। আমার হাত ধরে তুললেন। আমাকে বিছানায় বসালেন। ভীষণ ঠাণ্ডা গলা মনে হলো আন্টির। বললেন
-     কি বললি? রাকা এসেছিল? কবে?

চমকে উঠলাম। আন্টির দিকে চেয়ে দেখলাম রীতিমত রাগে ফুঁসছেন আন্টি। রাগুন উনি। আমাকে জানতেই হবে কেন আন্টি আমাকে খবর দেন নি। বললাম ওই রকম কাঁদতে কাঁদতেই,
-     গত সপ্তাহে। রনির কাছে গাড়ী নিয়েছিল বাগডোগরা থেকে আসবে বলে।
-     সে কী? আমি জানি না সেটা?
-     মানে? তোমাকেও বলেনি ও?
-     কি বলবে?

আমিও থ হয়ে গেলাম এবারে। এতো রেগে গেলে কেউ অভিনয় করতে পারে কি? আন্টি জানেন না রাকা এসেছিল? কি হচ্ছে ব্যাপার টা? আন্টি আমাকে লোকাচ্ছেন না। আন্টি জানেন না ও এসেছে। আমাকে বলে নি ও এসেছে। ও তবে এলো কোথায়? অঞ্জনার বাড়িতে? নাহ এটা আন্টি কে বললে হবে না। আমি তো এই কথা টা বলেই কেলো করে দিলাম। রাকা ঝাড় খাবে এখন। ইশ ছিঃ ছিঃ কি কি সব বলে ফেললাম আমি আন্টি কে। যেগুলো আন্টি জানত না, এখন সেগুলো ও জেনে গেল। একেবারে চুপ করে গেলাম আমি। কি দরকার ছিলো ওর আন্টি কে না জানিয়ে রুদ্রপুরে আসার? অথচ রনি কে বলল। এতো বোকা তো ও নয়, যে রনি জানবে আর ও ভাববে আমি জানতে পারব না। তার মানে আমাকে জানাতেই ও রনি কে বলেছিল। ওর রোজগার এখন কোটি তে। বাগডোগরা থেকে যেকোন গাড়ি করে এখানে আসতে ওর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স কমে যেত না। তার মানে ও আরে ঠারে আমাকে বোঝাচ্ছে? সেটাই আশ্চর্য্য লাগছে যে এই ভাবে বোঝাচ্ছে কেন আমাকে। সোজাসুজি কথা বলার ছেলে ও। আমি মেয়ে হবার পরেও কত মেয়ে দেখত আমার সামনে। এখন এতো ঘুর পথ নিচ্ছে কেন? আন্টির কথায় চমক ভাঙল আমার,
-     কি রে কি বলবে বল?

আমতা আমতা করলাম আমি। চোখের জল মুছে বললাম
-     তোমাকেও কেন লোকালো ও?
-     সেটাই তো ভাবছি রে। তুই আর কিছু জানিস মনে হচ্ছে। কি লোকাচ্ছিস শিব আমাকে বল!!

আমি ভাবছি বলব কিনা। নাহ বলে দেওয়াই ভাল। যদি ঠিক না হয়? কিন্তু আমার যুক্তি বলছে এটা বেঠিক না হওয়ার কোন কারন নেই। বুক টা দম ধরে এলো আমার। হতে পারে মেয়েটা অঞ্জনা নয়।কিন্তু এই কারনেই ও রুদ্রপুরে এসেছিল। আর আমাকে বুঝিয়েছে রনি কে বলে। কিন্তু যেই হোক সে ভালো মেয়ে না। সে রাকাকে নয়, রাকার ফুটবল না, রাকার নাম যশ কে ভালবেসেছে। সেটা আমি মানতে পারছি না। আন্টি আমাকে ঝাঁকালেন,
-     কি রে বল!!!
-     না মানে আমি শুনলাম, ছোট থেকে ও যে মেয়েকে ভালবাসত , অঞ্জনা, ওরা দুজনে প্রেম করছে এখন।

আন্টি পাত্তা দিলেন না কথা টা। বললেন
-     দুত্তেরি! ওই কথা কে জিজ্ঞাসা করেছে। তোর সাথে কি হয়েছে বল। ও প্রেম করতেই পারে, কিন্তু যে ছেলে, মায়ের কাছে মার খেলে তোকে গিয়ে বলত, সে এতো বড় খবর তোকে দেয় নি কেন? আর কি বলছিলি তখন? আমার ছেলের জীবনে ঢুকবি না। কি বলছিলি ওসব। তোকে কে বলল, তুই আমার ছেলের জীবনে আছিস বলে আমি কষ্টে আছি?? না না, পরিষ্কার করে বলত কি হয়েছে তোদের?

আমি প্রমাদ গুনলাম এবারে। আমি আন্টির কাছে এসে আন্টি কে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। সত্যি আমি ভেবেছিলাম, আন্টি চান না আমি রাকার জীবনে থাকি। রাকা তো মা কে ভয় পায় খুব। তাই হয়ত আমাকে এভোয়েড করছে। কিন্তু রাকা বাড়িতেও বলে নি ও এসেছে, আর সেটা আন্টি কে কষ্ট দিল আমি নিশ্চিত। আন্টি এবারে বললেন কিন্তু বেশ রেগে। আমার কাঁধ দুটো কে ধরে বললেন,
-     ব অ অ ল। কি হয়েছে? আমাকে অনেক কথাই বলে না। কিন্তু তোকে বলেনি, এটা ভালো না। আমি ওর মা। অনেক কিছু লোকাবে আমার থেকে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোর কাছে লোকাচ্ছে মানে, ব্যাপার টা ঠিক না। কি হয়েছে তোর সাথে আগে সেটা আমাকে বল।তোকে কেন লোকাচ্ছে ও।  না বললে, শিব আমি কোন ভাবে সাহায্য করতে পারব না। চুপ থাকিস না আর।

আমি চুপ রইলাম। বলা কি ঠিক হবে আন্টি কে? নাহ বলেই দি। আর এটাও তো বলে দেব আমি ওর জীবনে থাকব না। আন্টির তো রাগ হবার কথা নয়। বলে দিলাম আন্টি কে।
-     আসলে আন্টি, যেবারে সিনেমা দেখতে গেলাম, তখন আমাকে ও প্রপোজ করেছিল

আন্টি চুপ করে গেলেন। কিছুক্ষন পর বললেন
-     হুম, তারপরে? তুই কি বলেছিলি।
-     না না আন্টি আমি না বলেছিলাম। আমি রাজী হইনি।

আমাকে অবাক করে আন্টি আমাকে বললেন
-     কেন না করলি কেন?

চুপ রইলাম আমি। আন্টির সামনে বলতে পারছি না একদম ব্যাপার টা। আন্টি নাছোর বান্দা। আমাকে আবার নক করলেন আন্টি
-     কি রে না করলি কেন তুই? ওকে ভালোবাসিস না? আমি তো জানি তোর থেকে ভালো আমার ছেলেকে আর কেউ বাসে না।

অবাক হয়ে তাকালাম আন্টির দিকে আমি। আন্টি কি ভাবে জানলেন এই কথা? চুপ রইলাম আমি। কি করে বলি আমার মনের দোলাচল? তাও বললাম আন্টি কে
-     আমি যে ওর যোগ্যা নই আন্টি
-     কেন?

অনেকক্ষণ চুপ থাকলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কি ভাবে বলব। তাও লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই দিলাম,
-     সম্পর্ক এগোলে, এক সাথে থাকার জেদ করত ও। আর আমি কোন দিন ও মা হতে পারতাম না। এই সব জেনে কি ভাবে ওর প্রস্তাবে রাজী হই বলো? ভালো তো বাসি ওকেই। ওর পরবর্তী জীবন টা নিজের স্বার্থের জন্য নষ্ট হতে দিতে পারি না।

আন্টি বিছানায় আমার পাশে বসে পরলেন। চুপ করে রইলেন অনেকক্ষণ। বললেন
-     বড্ড বেশী ভাবিস। আমাকে বলবি না একবার ও এই কথা গুলো। আমি হাসপাতালে চাকরি করি। কতো লোকে সারোগেসি করায়। কত রাস্তা আছে। দুজনের দুজন কে ভালো লাগলে, একবার তো কথা বলবি আমার সাথে কিম্বা তোর মায়ের সাথে? তোর মা জানে?

মাথা নেড়ে বললাম, জানে না। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন আন্টি
-     এখন আর কেঁদে কি হবে? হাত থেকে তির তো বেরিয়ে গেছে। ছেলেরা ওমনি  হয় রে। ছুট দিয়েছ কি সব শেষ করে দেবে এক মুহুর্তে। নাহ ওকে না বলে দেওয়া তোর উচিৎ হয় নি।
-     কি করব বলো? আমি কি করে জানব, আমি না বলতেই ও অঞ্জনার দিকে ঝুঁকবে? আর তাতে আমার এখনো আপত্তি নেই। কিন্তু ও কথা বন্ধ করে দিলো কেন? আমাকে রীতিমত অপমান করেছে ও সেদিনে ফোনে। সেই জোর টাই আমার আর নেই ওর উপরে।
-     সেটাই স্বাভাবিক তাই নয় কি? তুই বল, তুই অঞ্জনার জায়গায় থাকলে, ওকে দিতিস তোর মতন এমন সুন্দরী, আর এমন একটা বন্ধুর সাথে মিশতে?

ঘাড় নেড়ে, এবারেও না বললাম আমি। আন্টি দেখে বললেন
-     তবে? অঞ্জনার তো দোষ নেই। দোষ রাকার। আর দোষ তোর। রাকার দোষ কারন ও বোঝেই না তোর ভালোবাসা টা, আর তোর দোষ তুই ওকে ছেড়ে দিলি। ধরে রাখলি না নিজের কাছে। বলতে পারতিস, তুই ভালো করে খেলে আয়, আমি অপেক্ষা করব। ও জানোয়ার ঠিক এসে হাজির হতো। এই সব ইতরামো গুলো করত না।

আমি যেন অধৈর্য্য হয়ে উঠলাম একেবারে। সত্যি ভাবিনি এই কথা। মনে হয়েছিল, আমি তো ওকে ভালোবাসি। ওকে ট্রিক করে আটকে রাখতে তো চাই নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা করলেই ভাল হতো। মাথা নিচু করে বসেছিলাম আমি আন্টির পাশেই। আন্টি বললেন,
-     শোন, পরের সপ্তাহে ও আসবে। তোকে ফোন করে দেব। সেজেগুজে আসবি। একেবারে লাখে একটা হয়ে। সেদিনে ওকে বলবি তুই রাজি । বুঝলি? কি রে রাজী তো নাকি?
-     হ্যাঁ একেবারে।
-     আর কোন মনের ধারনা নেই তো?
-     না না আর কিচ্ছু নেই। যে ভাবে বলবে ও সেই ভাবেই আমি রাজী।

আন্টি মাথায় হাত দিলেন। মুখে হাসি। বললেন
-     কোথায় একটা সুন্দরী মেয়ে, ছেলেরা নাচবে তোর ইশারায়। তা না নিজেই নেচে মরছিস।

লজ্জা পেলাম আন্টির কথায়। বললাম চেননা তো নিজের ছেলেকে তাই বলছ। দরকার নেই বাবা ওকে নাচিয়ে। কেরিয়ার খারাপ হয়ে যাবে ওর। তার থেকে নিজেই নাচি। ও ঠিক থাক।
[+] 6 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - শিবের শিব প্রাপ্তি অধ্যায় চার- নতুন পর্ব ২৪ - by nandanadasnandana - 22-02-2022, 01:59 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)