21-02-2022, 04:41 PM
(This post was last modified: 21-02-2022, 05:05 PM by bourses. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দেখ কেমন লাগে - ২
দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে দিনগুলো কেটে গেলো, মঙ্গলবার এসেও গেলো… আমি এর মধ্যে আরো কিছু কাজ সেরে ফেলেছিলাম, বস্তা আর দড়ি ক্লাস রুমে রেখে আসা ছাড়াও… তা হলো একটা ওয়াকম্যান জোগাড় করে ফেলেছিলাম… জোগাড় বলতে এর মধ্যে বেরিয়ে কিনে নিয়ে এসেছিলাম মেট্রো গলি থেকে… জাপানী মডেল… বেশ ভালো সাউন্ড… দোকানদার আমায় দেখিয়ে দিয়েছিল, ওয়াকম্যানটার ইনবিল্ড অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যাপারটা… যাতে প্রয়োজনে সেটা হেড ফোন না লাগিয়েও শোনা যায়… বেশ ভালো আওয়াজ… মোটামুটি রাতে এটা ব্যবহার করবো, তাই একবার চালিয়ে যে আওয়াজটা শুনেছিলাম, তাতে বুঝেছিলাম যে আমার কাজ হয়ে যাবে এটা দিয়ে… এর পর সেই দোকান থেকে একটা খালি ক্যাসেটে কিনে নিয়েছিলাম… পরে ঘরে এসে নিভৃতে আর একটা টেপ রেকর্ডার চালিয়ে কিছু ভৌতিক সাউন্ড রেকর্ড করে রেখেছিলাম ওই ক্যাসেটের মধ্যে… আর সেই সাথে ব্যাক গ্রাউন্ড সাউন্ডের সাথে কিছু কথা… নাঁকি সুরে… “আঁয় আঁয় নিঁরা… আঁমার কাঁছে আঁয়… সুঁমিইইই… আঁয় নাঁ আঁয়… আঁমার কাঁছে আঁয়… দেঁখ… তোঁদের দুঁজনের জঁন্য কিঁ কিঁ এঁনেছি… আঁয়… এঁদিকে আঁয়…” এই কথাগুলোকেই প্রায় বার তিন চারেক রিপিট করিয়ে দিয়েছিলাম ক্যাসেটের মধ্যে… যাতে চালালে এটা বাজতেই থাকে… এই সব কিছু সম্ভব হয়েছিল সুচরিতা আর সুজাতার জন্য অবস্যই… কারন এত কিছু কেনার মত টাকা আমার হাতে সেই সময় ছিল না… ওরাই এগিয়ে এসেছিল… বলেছিল, এখন দিচ্ছি তোকে ধার হিসাবে, পরে আস্তে আস্তে শোধ করে দিস না হয়…
সেই দিন বিকালে ক্লাস শেষ হয়ে যাবার পরেও আমি ইচ্ছা করেই কিছু নোট লেখার আছিলায় থেকে যাই রুমের মধ্যে… খুব ধীরে ধীরে লিখতে থাকি… আমাদের আর একটা ক্লাস মেট, সুনন্দ যাবার সময় আমায় দেখে আমার কাছে এগিয়ে আসে… “একি রে? তুই যাবি না?”
আমি খুব মনযোগ দিয়ে লিখতে লিখতে বলি, “এই তো… হয়ে এসেছে… তোর হয়ে গেছে?”
সুনন্দ উত্তর দেয়, “হ্যা… সে তো অনেকক্ষন… চল… সবাই তো এগিয়ে গেছে…”
আমি মুখ তুলি না খাতার থেকে… উত্তর দিই… “তুই যা… আমি একটু পরেই বেরোচ্ছি…” বলি বটে শান্ত গলায়… কিন্তু ততক্ষনে সত্যিই আমার বুকের মধ্যেটা ঢিব ঢিব করছে… লিখছি, সেটা দেখাবার চেষ্টা করলেও, কি যে লিখছিলাম, সেটাই বুঝতে পারছিলাম না… শুধু হাতই নড়ছিল যেন… আর বারে বারে আড় চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম দেওয়াল ঘেসে রাখা কঙ্কালটার দিকে…
সুনন্দ কাঁধ ঝাঁকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলে আমি তাও চুপ করে বসে থাকি আরো কিছুক্ষন… জানি এর পরেই রামশরণ আসবে… আমাদের এই ফ্লোরের পিওন… ঘরের সব পরিষ্কার করতে…
আর হলও ঠিক তাই… একটু পরেই রাম শরণ সত্যিই এসে হাজির… আমায় তখনও বসে থাকতে দেখে একটু অবাকই হয় সে… “একি… তুমি যাও নি? ক্লাস তো শেষ হয়ে গেছে…”
আমি ওর কথায় ঘাড় নাড়ি সামান্য… ওকেও দেখাবার চেষ্টা করি যে আমি কতটা ব্যস্ত নিজের লেখা নিয়ে… “এই তো রামশরণদা… একটু টাইম লাগবে গো… তুই তোমার কাজ কর না…”
“ধুস… তা আবার হয় নাকি? আমি ঝাড় দিতে শুরু করলে কত ধূলো উড়বে জানো?” তারপর কি ভেবে একটু থেমে বলে উঠল, “তোমার কি অনেক টাইম লাগবে?”
আমি ইচ্ছা করেই কোন উত্তর দিই না রামশরণের কথার… যেন অনেকটাই ডুবে রয়েছি নিজের লেখায়, সেই মতই দেখাবার চেষ্টা করি তাকে…
ও আরো কাছে এগিয়ে আসে আমার… প্রায় আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে ফের, “তোমার কি অনেক টাইম লাগবে?”
আমি রামশরণের প্রশ্ন ইচ্ছা করেই মাথা তুলি না… মাথা নামিয়ে লিখতে লিখতেই উত্তর দিই কোনরকমে যেন… “হ্যা… গো… তা… একটু তো… টাইম লাগবেই…” তারপর মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলি, “তুমি কতক্ষন আছো?”
আমার কথায় যেন মুখটা ব্যাজার হয়ে যায় রামশরণের… একটু কি ভেবে বলে, “তাহলে এক কাজ করো… তুমি এখন লেখো… আমি বরং কাল সকালেই এই ঘরটা পরিষ্কার করে দেবো’খন…”
শুনে যেন আমার মনে একটু শান্তি হলো… তাও আমি ভাবলেশ হীন মুখে প্রশ্ন করলাম, “তোমার এই তলে, অন্য ক্লাসগুলোর কাজ হয়ে গেছে?”
“হ্যা… হ্যা… সেতো সেই ক-অ-অ-খন…” উত্তর দেয় রামশরণ… তারপর বলে ওঠে, “তাহলে সেই ভালো… তুমি তোমার কাজ শেষ করো… আমি কাল এসেই না হয় পরিষ্কার করে দিয়ে যাবো’খন… আজকে আর এই রুমটা লক করছি না… থাক… কে আর জানতে পারবে…”
আমিও ওর কথায় ঢকঢক করে ঘাড় নাড়ি… “হ্যা রামশরণদা… সেই ভালো… আমিও কাউকে কিছু বলবো না… তুমি চলেই যাও বরং…”
আমার কথায় যেন একটু খুশিই হয় রামশরণ… অন্তত একটু আগে তার ছুটিটা হয়ে যাবে ভেবে হয়তো… তাই আর একবার রুমের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে… আমি কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করি ওর মিলিয়ে যাওয়া পায়ের আওয়াজ… বাইরে তখন সন্ধ্যের অন্ধকার নামতে শুরু করে দিয়েছে… আস্তে আস্তে আঁধার ঘনিয়ে আসছে…
রামশরণ নীচে নেমে যেতেই ঘরে ঢোকে সুজাতা… একেবারে আমাদের প্ল্যান মাফিক… আমিই ওকে বলে দিয়েছিলাম, তুই আর সুচরিতা নীচে মেন গেটের সামনেটায় আড্ডা দিবি… রামশরণকে বেরিয়ে যেতে দেখলেই সুচরিতা চলে যাবে বিল্ডিংএর পেছনে, দারোয়ানদের পরিতক্ত বাথরুমটার কাছে, আর সুজাতা উঠে আসবে আমাদের ক্লাসরুমে…
আমি সুজাতা আসতেই চট করে উঠে ক্লাসের আলমারীর আড়ালে আমার রাখা বস্তা আর দড়িগুলো বের করে নিয়ে আসি… সুজাতা গিয়ে দাঁড়ায় দরজার কাছে, পাহারা দেবার জন্য… যদি কেউ এসে পড়ে… ও তাহলে আমায় ইশারা করে দিতে পারবে…
আমি কঙ্কালটা নিয়ে বস্তায় পুরে ফেলি চটপট… তারপর সেটাকে দড়ি দিয়ে ভালো করে বেঁধে, আর একটা লম্বা দড়ির মাথায় বস্তাটাকে আটকে নিয়ে যাই খোলা জানলাটা কাছে… একবার উঁকি মেরে দেখে নিই সুচরিতাকে… ও আমার মুখ দেখতে পেয়ে ইশারায় জানায় যে সব পরিষ্কার… কেউ নেই আশে পাশে… আমি জানলা দিয়ে বস্তাটাকে টপকে বাইরে বের করে দড়ি ছাড়তে থাকি ধীরে ধীরে… সুজাতা একবার তাকায় আমার দিকে, আর একবার বাইরের পানে…
আসতে আসতে আমাদের বস্তা নেমে যায় বাথরুমের চালার উপরে… সুচরিতা এগিয়ে এসে কোন রকমে চালার উপরে উঠে দড়ি খুলে দেয়… আমি সেই দড়িটাকে জানলার বাইরে কপাট লাগাবার হুকের সাথে আটকে বেঁধে দিই… পরের দিনের সকালে ওটার সাহায্যেই আবার বস্তাটাকে উপরে তোলার জন্য… তারপর ব্যাগ বই গুছিয়ে বেরিয়ে আসি ক্লাস থেকে… সুজাতা আর আমি নেমে যাই নিচে…
নীচে নেমে চারদিক একবার দেখে নিই… মোটামুটি ক্যাম্পাস ততক্ষনে ফাঁকাই প্রায় বলতে গেলে… দুই একজন যাও বা এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে… ওদের গতিবিধি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কিছুক্ষনের মধ্যেই তারাও পাতলা হয়ে যাবে… আমরা দুজনে খুব নর্মাল ভাবে হেলতে দুলতে বিল্ডিংএর পেছন দিকে এগিয়ে যাই… যাতে কেউ দেখলেও যাতে কোন সন্দেহের উদ্রেক না হয়…
ওখানে পৌছাতে দেখি ইতিমধ্যেই সুচরিতা বস্তাটাকে চালের উপর থেকে নামিয়ে মাটিতে শুইয়ে রেখেছে… আমরা আর একটু দাঁড়াই ওখানে… তারপর যখন দেখি যে কেউ কোথাও নেই সেই ভাবে… তিনজনে মিলে ধরা ধরি করে বস্তাটাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে হাঁটা লাগাই হোস্টেলের দিকে…
হোস্টেলে তো পৌছাই… কিন্তু ছাদ অবধি নিয়ে যাবো কি করে? সেটো ভাবি নি আমরা কেউই…
কোন রকমে সেটাকে হোস্টেলের পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে একটা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে রেখে ফিরে আসি নিজদের ঘরে… তারপর ভাবতে থাকি…
শেষ বুদ্ধিটা সুজাতাই দেয়… “দেখ… ওটা যেখানে আছে থাক… ওটাকে দরকার নেই ওপরে তোলার… বরং আর একটা দড়ি জোগার করি আমরা… তারপর দড়িটাকে তুই নীচে কার্নিশে নেমে গেলে ঝুলিয়ে দিবি… আমি আর সুচরিতা নীচে থাকবো, ছাদে থাকার বদলে, তোর দড়িতে বেঁধে দিলে তুই ওটাকে টেনে উপরে তুলে নিবি… তারপর কাজ হয়ে গেলে ফের নামিয়ে দিবি, আমরা আবার ওটাকে ঝোঁপের আড়ালে ঢুকিয়ে দেবো… তারপর কাল একেবারে ভোর থাকতে ফের ফিরিয়ে দিয়ে আসবো ক্লাসরুমে…”
আমি তো আনন্দ প্রায় জড়িয়েই ধরি সুজাতাকে… “উফফফফ… এই না হলে দোস্ত? একেবারে ঠিক বলেছিস মাইরি…”
আমার কথায় দাঁত বেরিয়ে যায় সুজাতার… বলে, “কি করবো… তোর মত ঢ্যেমনি সাথে থাকলে তো এই সব বদ বুদ্ধি মাথা থেকে বেরোবেই… শালি ঢ্যেমনি চুদি…”
আমি সুজাতাকে জড়িয়ে একটা লম্বা চুমু খেয়ে নিই ওর ঠোঁটে… ওকে চুমু খেতে দেখে পাশ থেকে ফোঁস করে ওঠে সুচরিতা… “ও… আমিও তো রয়েছি প্ল্যানে… ওকে চুমু খাচ্ছিস… আর আমি বাদ?”
আমি সুচরিতার কথায় হেসে ফেলি… এগিয়ে গিয়ে ওর ঠোঁটে নয়… মুখ নামিয়ে ওর পরণের কামিজের উপর দিয়েই চুমু খাই ওর টাইট মাইয়ের উপরে… হাত ফিরিয়ে টিপে দিই ওর সুগঠিত পাছার দাবনা ধরে… “উমমমম…” শিসকার দিয়ে ওঠে আদুরে গলায় সুচরিতা…
আমরা যে যার মত জামা কাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে পরিষ্কার হয়ে যাই… এখন আমাদের আর কোন কাজ নেই… যা হবে সেই রাতে… তার আগে আমাদের আরো দড়ির ব্যবস্থা করার প্রয়োজন… সেই করতেই লেগে পড়ি আমরা তিনজনে…
.
.
.
মোটামুটি এগারোটা নাগাদ আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসি… ততক্ষনে প্রায় সব ঘরেই দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে… করিডোর একেবারে শুনশান… ওপরে ছাদে কোন দরজা নেই, সেটা জানতাম, তাই আমি সুচরিতাকে নিয়ে উঠে যাই ছাদের দিকে… সাথে নিয়ে নিই জোগাড় করা দড়িগুলো… এগুলো ওরা রান্না ঘর থেকে নিয়ে এসেছে রাধুনির নজর বাঁচিয়ে… বেশ অনেকগুলোই এনেছে… সেই গুলো দিয়ে আমি দুটো লম্বা দড়ি বেঁধে বেঁধে তৈরী করে নিয়েছি… তার একটা আমার কোমরে বেঁধে নিয়েছি… আর অপরটা হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে উঠে এসেছি ছাদে… সুজাতাকে পাঠিয়েছি নীচে, বিল্ডিংএর পেছন দিকে… আমরা তিনজনেই হাতে পায়ে ভালো করে ওডোমস্ মেখে নিয়েছি… কারন কারুরই ম্যালেরিয়া ধরানোর ইচ্ছা নেই…
ওরা যে যার মত সালোয়ার কামিজ চড়িয়েছে গায়ে… কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই একটা কালো চাপা প্যান্ট আর টি-শার্ট পরেছি… এখানে আসার পর থেকে আমি আর প্যান্ট ট্যান্ট পরতাম না… কারন এখানে প্রায় কোন মেয়েই এই ধরণের পোশাক পরে না দেখেছি… তাই শুধু শুধু ওদের কাছে নিজের দূরত্ব বাড়ানোর কোন ইচ্ছাই ছিল না আমার… সেই কারনেই এদের মতই আমি সালোয়ার কামিজই পড়ি… কিন্তু আজকে ওই রকম ঢিলা পোশাক পড়লে অসুবিধা হবে, তাই ব্যাগ থেকে প্যান্ট আর টি-শার্ট বের করে গলিয়ে নিয়েছিলাম… মাথার চুলটাকে তুলে একটা গার্ডার দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম পেছন দিকে… আমায় এই ভাবে ড্রেস করতে দেখে এগিয়ে এসেছিল সুচরিতা… সরু চোখে তাকিয়ে বলে উঠেছিল, “আজকে যদি না এটা করতে হতো… তাহলে এতক্ষনে বোধহয় তোকে কামড়ে চুষে খেয়েই ফেলতাম মাইরি… উফফফ… যা লাগছে তোকে দেখতে না… একেবারে ঝাক্কাস্”
আমি ওর কথায় হেসে ফেলেছিলাম… “ওটা তুলে রাখ… যদি এই মিশনে সাক্সেসফুল হই… তাহলে আমরা কাল তিনজনে মিলে সারা রাত মস্তি করবো… পাক্কা…”
পরণের টি-শার্টটাকে গুঁজে নিয়েছিলাম প্যান্টের মধ্যে টান করে… আর হাতের ওয়াকম্যানটাকে চালান করে দিয়েছিলাম সেই টি-শার্টের মধ্যে… যাতে ওটাকে সাথে নিয়েই নামতে পারি পাইপ বেয়ে…
আমি আর সুচরিতা ছাদে উঠে এলাম… একেবারে ফাঁকা ছাদ… একটা আলোও লাগানো নেই সেখানে… আর যেহেতু অমাবস্যা, তাই চতুর্দিক ঘুটঘুটে অন্ধকার… আকাশে তখন যেন তারার মেলা বসেছে… আর সেই তারার আলো আর দূরের রাস্তা থেকে আসা আবছায় আলোয় আমাদের দুটো মানুষের ছায়মূর্তি যেন দুটো প্রেতাত্মার মত যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাদের উপরে… যদি কেউ এই সেই সময় হুট করে ছাদে উঠে আসতো… তাহলে নির্ঘাত তার হার্ট অ্যাাটক হতোই…
আমি ছাদের আলসের কাছে এসে তাকাই নীচের পানে… একেবারে নীচে সুজাতাকে দেখা যাচ্ছে… আবছায়ায়… এমনিতে বোঝার উপায় নেই ওর উপস্থিতি… যেহেতু মশার কামড় খেয়ে নড়া চড়া করছে, তাই আমার ছাদের উপর থেকে ওর অবস্থান বুঝতে অসুবিধা হয় না… আমি নীচের দিকে তাকাই…
বিল্ডিংএর প্রতিটা তলা প্রায় আঠেরো ফুটের মত উচ্চতার… আমি মনে মনে একটা হিসাব করে নিই… মানে আমাকে নামতে হবে প্রায় বাইশ থেকে চব্বিশ ফুট… দড়িটাকে খুলে বিছিয়ে দিই ছাদের উপরে… তারপর হাত দিয়ে মাপতে থাকি সেটাকে… এক হাত… দু হাত… তিন হাত… মেপে দেখতে পাই, মোটামুটি ঠিক আছে… আমি এই দড়ি ধরে আরো ফুট ছয়েক নেমে যেতে পারবো… মানে গিয়ে দাঁড়ালো আঠাশ থেকে তিরিশ ফুটের মত…
আমি রেন ওয়াটার পাইপটাকে একবার হাতের চাপে নাড়িয়ে দেখে নিই… নাহ!... টাইট হয়েই বসে আছে দেওয়ালের সাথে… তাও হাতের ধাক্কা দিই বার দুয়েক… যদি আলগা থাকে সেটা… নড়ে না হাতের ধাক্কায়… নিশ্চিন্ত হই এবার… এবার খোলা দড়ির একটা অংশ ওই পাইপের সাথে ভালো করে কষে বেঁধে দিই… আর অন্য প্রান্তটা বাঁধি নিজের কোমরের সাথে… তারপর ফের তাকাই নিচের দিকে… হ্যা… সুজাতার উপস্থিতি বুঝতে পারা যাচ্ছে উপর থেকেই… আমি আর একটু ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করি বিল্ডিংএর জানলা গুলোর দিকে… অনেকগুলো থেকেই ঘরের আলো বাইরে এসে পড়েছে… মোটামুট সব কটা জানলাই খোলা… কিন্তু আমার দেখার চেষ্টা অন্য জানলা নয়… আমার টার্গেট দু-তলার ওই বিশেষ জানলাটার দিকে… সেটাও দেখলাম খোলা… আর ওটার ভেতরে যে এখনও সবাই জেগে রয়েছে, সেটা বোঝা যায় জানলা থেকে বেরিয়ে আসার আলোর আভায়… ওই জানলাটার পাশ দিয়েই এই রেন ওয়াটার পাইপটা নেমে গিয়েছে…
আমি ছাদের আলশেতে ওঠার চেষ্টা করতে যেতেই পেছন থেকে একটা হাত এসে আমার কাঁধের উপরে পড়ে… আমি মুখ ফিরিয়ে তাকাই পেছন পানে… কখন চুপিসাড়ে এসে আমার পেছনে দাঁড়িয়েছে সুচরিতা… “সাবধানে নামিস…” প্রায় ধরা গলায় বলে ওঠে ও…
আমি হাত তুলে ওর গালের উপরে রাখি আলতো করে… ম্লান হেসে বলি, “চিন্তা করিস না… আমার কিছু হবে না…”
বলে আর সময় দিই না ওকে কিছু বলার… কারন তখন আমার বুকের মধ্যেটাও সত্যি বলতে ঢিপঢিপ করছে… উত্তেজনা… একটা চাপা ভয়েও… যদি কিছু ঘটে যায়?
কোমরে বাঁধা দড়িটাকে সুচরিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পায়ের জুতো খুলে ছাদের আলসেতে উঠে পড়ি লাফ দিয়ে… আর একবার নীচের দিকে তাকিয়ে নিই… মনে হয় যেন পাহাড়ের একটা খাড়াইয়ের ধারে এসে দাঁড়িয়েছি… নীচে মরণ গিরিখাদ… বড় করে একটা নিঃশ্বাস টেনে হাতের বেড়ে চেপে ধরলাম পাইপটাকে… তারপর শরীরটাকে ছাদের আলসে থেকে আসতে করে বেঁকিয়ে নামিয়ে দিলাম নিচের পানে… অন্য হাতের চাপে নিজের ভার রেখে পা বাড়ালাম… পা গিয়ে ঠেকলো পাইপে লাগানো লোহার ক্লিপের উপরে… সুচরিতা উপর থেকে একটু একটু করে দড়ির টান আলগা দিতে থাকে আমার নামার সাথে তাল মিলিয়ে…
ছাদের আলসের পাঁচিল ছেড়ে এবার চেপে ধরি পাইপটাকে হাতের চাপে… দম নিই ফের… একবার… দুবার… তারপর আসতে করে একটা হাতের মুটো আলগা করে নামায় নিচের পানে… কোমর বরাবর নামিয়ে পাইপটাকে চেপে ধরি… শরীর ছেড়ে দিয়ে পা নামিয়ে দিই আর একটু… পা পৌছে যায় পাইপে লাগানো পরের লোহার ক্লিপটায়… পায়ের আঙুলের চাপে নিজের শরীরের ভর রাখি… অন্য হাতটাকে নামিয়ে এনে চেপে ধরি পাইপটাকে ফের… এই ভাবে একটু একটু করে নামতে শুরু করে দিই… একবার উপর পানে মুখ তুলে তাকাই… দেখি উৎকন্ঠা নিয়ে ছাদের আলসে থেকে মুখ বাড়িয়ে তাকিয়ে রয়েছে সুচরিতা… ওই অন্ধকারের মধ্যেও দেখতে পাই ওর চোখের মুখের মধ্যে একটা চিন্তাশীলতার স্পষ্ট ছাপ… আমি ম্লান হাসি ওর দিকে তাকিয়ে… তারপর ফের পা নামাই… পরের ক্লিপের সন্ধানে…
এত বছরের পুরানো লোহার পাইপ… নামতে নামতে হাতের তেলোয় অনুভব করি তার জায়গায় জায়গায় জং ধরে মরচে পড়ে মুচমুচে হয়ে যাওয়ার… আরে সেই সাথে নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে পুরো পাইপটাই শাওলায় মেখে যেন হড়হড়ে হয়ে রয়েছে… কিন্ত এখন আর আমার পক্ষে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়… জং পড়া লোহার পাইপের খোঁচায় ছড়ে যেতে থাকে আমার হাতের বেশ কয়েক জায়গা… আমি গুরুত্ব দিই না তাতে…
পরের ক্লিপটায় পা দিতেই সেটা আমার দেহের ওজন বোধহয় নিতে পারে না… পায়ের চাপ পড়তেই দেওয়াল থেকে খুলে বেরিয়ে আসে সেটা… ছিটকে পড়ে যায় নীচের দিকে… একটা টং করে ধাতব আওয়াজ আসে নীচ থেকে… আমি আমার শরীরটাকে ফের উপর দিকে তুলে নিয়ে নীচের পানে তাকাই… দেখি উদ্গ্রীব হয়ে উপর দিকে তাকিয়ে রয়েছে সুজাতা… ওর ঠিক পাশেই গিয়ে পড়েছে ওই ক্লিপটা… আমায় তাকাতে দেখে ইশারায় সাবধান করার চেষ্টা করে ও… আমি মাথা নাড়ি… তারপর হাটের চাপে আগের ক্লিপটা ধরেই ঝুলিয়ে দিই শরীরটাকে… প্রায় খানিকটা হড়কে নেমে যাই পাইপ বেয়ে… পা পৌছে যায় তার পরবর্তি ক্লিপটায়… থেমে যাই আমি… পা-টাকে ওটার উপরে রেখে ফের দম নিই টেনে টেনে… এই টুকু সময়ের মধ্যেই যেন আমার গলা শুকিয়ে উঠেছে বলে মনে হয়…
তিনতলার জানলার কার্নিশের কাছে এসে পৌছাই… আরো একবার তাকিয়ে নিই নীচের পানে… এখনও আমায় প্রায় ফুট আঠারো নামতে হবে… পা বাড়িয়ে রাখি তিনতলার কার্নিশটার উপরে… তারপর হাতের চাপে নিজের শরীরটাকে প্রায় ঠেলে দিয়ে চড়ে পড়ি কার্নিশের উপরে… পা তখনই যেন ধরে আসার জোগাড়… বেলাডাঙায় গাছে চড়েছি ঠিকই… কিন্তু গাছে চড়া আর এই রকম পুরানো পাইপ বেয়ে নামার মধ্যে আকাশ জমিন ফারাক… আমি সেটা আগেই যে বুঝি নি তা নয়… কিন্তু সুচরিতা বা সুজাতাদের সামনে প্রকাশ্যে আসতে দিতে চাইনি… তখন আমার মাথার মধ্যে জেদটাই প্রাধান্য পেয়েছিল… পরণে প্যান্ট পরা থাকলেও, বুঝতে অসুবিধা হয় না, হাঁটু বা থাইয়ের জায়গায় জায়গায় বেশ ছড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই… হাতের পেছনটাও বেশ জ্বালা করছে যেন… অন্ধকারে কতটা ঘষেছে, সেটা বোঝার উপায় নেই… আর উপায় থাকলেও… এখন আরো অনেকটা নামা বাকি… তাই ও সব দেখে শুধু শুধু নিজের মনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পক্ষপাতী নই আমি কোন মতেই…
সময় নষ্ট করার মত সময় আমার হাতে তখন নেই… আর এটা বুঝতে পারছি… যত বেশিক্ষন আমি থেমে দম নেবার কথা ভাবতে যাবো… ততই নিজের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসতে থাকবো… মনের মধ্যের দ্বিধা বেশি করে চেপে বসবে… তাই সেটাকে সরিয়ে ফের হাত বাড়াই সামনে থাকা দেওয়াল ঘেঁসে নেমে যাওয়া রেন ওয়াটার পাইপটার দিকে… প্রথমে একটা হাত… তারপর আর একটা… দুই হাতের চাপে পাইপটাকে ধরে বাঁ-পাটাকে বাড়িয়ে দিই পাইপের গায়ে লেগে থাকা ক্লিপটার উপরে… পায়ের আঙুল ঠিক মত বসে গেলে হাতের টানে নিজের শরীরটাকে বের করে নিয়ে আসি তিনতলার ঘরের কার্নিশের উপর থেকে… মুখ তুলে তাকাই ফের উপর দিকে… সুচরিতার আবছায়া মুখটা যেন একটা প্রেতাত্মার ছায়ামুর্তির মত দেখায়… উপর থেকে নামা দড়িটাকে হাতের মধ্যে দিয়ে গলিয়ে পেঁচিয়ে ধরি… তারপর ফের নামতে থাকি… শরীরটাকে হড়কে নামিয়ে দিয়ে নীচের পানে… পরের ক্লিপের উপরে পা ঠেঁকে…
এখন আমি তিনতলার জানলার প্রায় আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছি… ভেতর থেকে আলো এসে পড়েছে বাইরে… যদি কেউ এখন জানলায় এসে দাঁড়ায়, তাহলে আমায় নির্ঘাত দেখে ফেলবে… সেটা হতে দেওয়া যাবে না… হয়তো প্রথমেই চোর চোর করে চিৎকার জুড়ে দেবে… তাতে সব মাটি হয়ে যাবে আমাদের পরিকল্পনা… মনের মধ্যে একটা ইচ্ছা জাগে, ভেতরে উঁকি মেরে দেখার… এটা গার্লস হোস্টেল… ভেতরে যে মেয়েই থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক… কিন্তু তারা এই মুহুর্তে ঘরের মধ্যে কি করছে, বা কি ভাবে আছে, সেটা অন্য সময় হলে হয়তো সে সুযোগ ছাড়তাম না আমি কোন মতেই… কিন্তু এখন সে সব বাহ্য… ওটা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে…
একটু একটু করে নেমে যেতে থাকি আরো নিচে… পেরিয়ে যাই তিনতলার জানলাটাও… ততক্ষনে আমার সারা শরীর ঘামে জবজবে হয়ে উঠেছে… ভিজে গিয়েছে আমার হাত, বুক, পীঠ, পা, থাই… স-অ-অ-ব… আর যত ঘামছে... তত যেন কঠিন হয়ে পড়ছে আমার হাতের চাপে নীচের শরীরটাকে পাইপের সাথে ঝুলিয়ে রাখার…
দু-তলার কার্নিশের প্রায় কাছাকাছি এসে আবার সেই আগের সমস্যার সন্মুখিন হলাম… আগের বার পায়ের চাপে পাইপের ক্লিপটা খুলে পড়ে গিয়েছিল… আর এবারে পা বাড়িয়ে কিছুতেই কোন ক্লিপ খুঁজে পাই না… বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেও যখন পেলাম না… তখন বুঝতে পারলাম যে ক্লিপটা নেইই… অনেক আগেই সেটা খুলে পড়ে গিয়েছে নিশ্চয়… কিন্তু তখন আমি আর মাত্র ফুট কয়েক দূরে… আমার অভিষ্ট গন্তব্য থেকে… তাই… একটা জেদের বশেই… যা থাকে কপালে বলে পাইপটা ছেড়ে হাত দুটো সামনে বাড়িয়ে রেখে একটা লাফ দিলাম আমার ডান পাশে… প্রায় জমি থেকে চব্বিশ পঁচিশ ফুট উঁচুতে… হাতের তেলোতে খরখরে সিমেন্টের স্পর্শ পেতেই খামচে ধরলাম শরীরের যথা শক্তি প্রয়োগ করে… দু-তলার কার্নিশের কানা তখন আমার হাতের মধ্যে… শরীর ঝুলছে শূণ্যে…
ওই ভাবেই শরীরটাকে খানিক ঝুলিয়ে রাখলাম… তারপর আস্তে আস্তে হাতের চাপে নিজের দেহটাকে তুলে নিতে লাগলাম কার্নিশের উপরে… কার্নিশের কানায় ভাঙা সিমেন্টে ঘষা খেয়ে ছড়ে গেলো হাতের চামড়ার আরো বেশ কিছুটা… হাতের তেলো তখন বেশ জ্বালা করছে… কিন্তু সব কিছু অগ্রাহ্য করে নিজের বাহান্ন কেজি ওজনের দেহটাকে টেনে তুলে নিলাম হাতের ভরে কার্নিশের উপরে অবশেষে… এতদিনের যোগাভ্যাস করার ফল… একটা তৃপ্তির শ্বাস পড়ল বুক থেকে বেরিয়ে এসে… আমি ঘাড় বেঁকিয়ে ফের তাকালাম উপর পানে… তখনও সুচরিতা যে উদ্বিগ্ন মুখে আমারই দিকে তাকিয়ে রয়েছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার ওই অন্ধকারের মধ্যেই… আমি হাত তুলে বুড়ো আঙুল দেখাই… জানি না সেটা দেখতে পেলো কি না ও… তারপর কার্নিশ থেকে তাকাই নীচের দিকে… এখন সুজাতাকে বেশ অনেকটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি… ওকেও হাত তুলে বুড়ো আঙুল দেখালাম… ও দেখি প্রত্তুত্তরে হাত তুলে নাড়ালো আমার দিকে তাকিয়ে… তারপর তড়িঘড়ি এগিয়ে গেলো পাশের ঝোঁপের দিকে… আমি উপর থেকে নেমে আসা দড়িটায় দুটো টান দিলাম… সেটাই আমাদের সঙ্কেত ছিল… সুচরিতা উপর থেকে পুরো দড়িটাই ছেড়ে দিল খুলে নিয়ে… আমি তাড়াতাড়ি দড়িটাকে গুটিয়ে তুলে নিলাম কার্নিশের উপরে… তারপর একটা ফাঁস তৈরী করে আগে সেই দড়িটাকে দু-পালটা করে জড়িয়ে দিলাম কার্নিশের চারপাশে বেড় দিয়ে… এটাই এখন আমার এখান থেকে নেমে যেতে সাহায্য করবে একটু পরে, আমার মিশন শেষ হলে… নীচে নেমে একটা দিক ধরে টেনে নিলেই, পুরো দড়িটা যাতে ঘুরে খুলে যায় কার্নিশ থেকে… তাতে আর কোন প্রমাণ থাকবে না আমাদের এখানে আসার… কোমরে পেঁচানো আগের দড়িটা আর এটার আর একটা প্রান্ত, এক সাথে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম নীচে, সুজাতার দিকে… ও ততক্ষন কঙ্কালটাকে বস্থা থেকে বের করে এই দুটো দড়িতে বেঁধে তৈরী করে রাখুক… আমি সময় হলেই ওটাকে যাতে তুলে নিতে পারি উপরে…