Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
সব খেলা তো মনে নেই আমার, কিন্তু কেরালার এর সাথে খেলা টা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। যা মনে হচ্ছে সব কটা ভারতীয় প্লেয়ার যারা এখন এটিকে তে খেলছে, ন্যাশনাল টিম এ ডাক পাবে। কিন্তু সমস্যা হলো, এটিকে পাসিং ফুটবল থেকে তিকিতাকা তে কনভার্ট করে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আর ভারতীয় কোচ এই পাসিং ব্যাপার টা নিয়ে কনফিডেন্ট না হলে এরা ক্লাবে যা খেলছে তার কিছুই ন্যাশনাল টিমের হয়ে খেলতে পারবে না। পাসিং ফুটবল আর তিকিতাকার মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। দুটো ক্ষেত্রেই, পাসিং এর উপরে জোর দেওয়া হয়। পাসিং পাসিং আর পাসিং। পাসিং ফুটবল বলতে দুনিয়া যা বোঝে সেটা হলো, নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে সামনে এগিয়ে যাও। ফুটবলের বেসিক টা একেবারে রুট ধরে ফলো করা। পাসিং ফুটবল মানে কিন্তু বেশী পাস খেলা নয়। পাসিং ফুটবল এ, বল কে মাটিতে রেখে ছোট পাসে বিপক্ষের দূর্গে ঢুকে পরা। ভিতরে ঢুকে আর পাসিং না। সেখানে গোলের চেষ্টা শুধু। কখনো ছোট ছোট লিফট করে বল মাথায় তুলে দেওয়া, বক্সের সামান্য বাইরে থেকে বা অনেক টা বাইরে থেকে উইং থেকে ক্রস তোলা। বেসিক ব্যাপার হলো, বিপক্ষের দূর্গে ঢোকা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট স্কোয়ার বা ট্রায়াঙ্গল বা বেঞ্জিন রিং বানিয়ে।

 আর তিকিতাকা হলো, সার্বিক পজেশন দখলের খেলা।মেইনলি ট্রায়াঙ্গল। তিকিতাকা তে স্কোয়ার ও ফর্ম করানো হয় না। পাসিং এর টাইমিং বেড়ে যাবে বলে। গোলকিপার বাদ দিয়ে স্পেশালিস্ট দরকার পরে না ওতে। ডিফেন্ডার থেকে স্ট্রাইকার অব্দি, সবাই মিডফিল্ডার যেন। দশ টা তাগড়া মিডফিল্ডার। কনসেপ্ট হলো যদি বল পজেশন নিজেদের থাকে, তবে ডিফেন্ড করার কি দরকার? কাজেই নিজেদের কাছে বল রাখ সব সময়ে। একটা ছোট সমস্যা হয় তখন, বিপক্ষের পায়ে বল থাকলে আগ্রেসিভ হয়ে বল টা কাড়ার এজিলিটি টা সবার থাকে না। স্পেনের ছিল বিশ্বকাপ জয়ী দলটার। বার্সেলোনার ছিল ২০০৮ থেকে ২০১৮ অব্দি। কিন্তু এখানে? আর থাকবে কিছু মাস্টার। সব দলেই থাকে দু একজন করে মাস্টার প্লেয়ার। কিন্তু রাকা আর বাকি প্লেয়ার দের মধ্যে ফারাক টা রাকাই বুঝিয়ে দেয় মাঠে। বল পজেশন তো হলো, কিন্তু গোল? গোল করবে এই প্লেয়ার গুলো। যাদের মাস্টার বলছি। বা যে কেউ করতে পারে। বলেছিলাম তো, দশ খানা তাগড়া মিডফিল্ডার। প্রিসিশন সব থেকে বেশি হয় মিডফিল্ডার দের। এই ভাবে পজেশন নিয়ে যখন গোল গুলো হয় তখন মনে হয় স্বয়ং ভগবান এসে খেলছেন। এতো টাইট স্পেসে, হোল্ড আর রিলিজ বলের, ভাবাই যায় না। এদের সব কটা প্লেয়ার এখন সেই উতকর্ষতার সীমায় পৌঁছে গেছে মনে হচ্ছে। প্রতিটা গোল এদের বিপক্ষ কে হিউমিলিয়েট করে হয়। তখন মনে হয় এগারো টা শয়তান, চিতার মতন মাঠে ঘুরছে। মুখ গুলো সব ঠান্ডা খুনীর মতন দেখায়। রাকার মুখ টা সেদিনের মতন লাগে, যেদিন সিনেমা হলে ও আমাকে দেখছিল। কনফিডেন্ট খুব। যেন বুঝতে পারে বিপক্ষ কতটা অসহায়।

কেরালা ভয় পেয়েই ছিল। কিন্তু আগের ম্যাচ গুল স্টাডি করেছিল এটিকের। পাসিং ফুটবলের উল্টো পথ হচ্ছে, হাওয়ায় খেলা। একসময়ে, লাতিন আমেরিকার পাসিং ফুটবল স্কিলের বিপক্ষে, ইউরোপ এই উইং আর লং মাপা পাসের উপরে বেশি ভরসা করত। লাতিন আমেরিকার খেলা স্কিল,সফট মুড়কি, চকিত স্পিড আর ব্যক্তিগত দক্ষতার উপরে দাঁড়িয়ে থাকত। ইউরোপ সেই খেলার বিপক্ষে, দলগত খেলা, টোটাল ফুটবল, মাপা লং পাস, শারীরিক ক্ষমতা, নিয়ে এলো। কাজেই এই রকম তিকিতাকা বা পাসিং ফুটবলের বিপক্ষে, শরীর নির্ভর খেলা কাজে দেয়। যদিও এখন বড় বড় লীগ গুলোর দৌলতে, পুরো দুনিয়াই এক ফুটবল দর্শনে চলে। লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপ ঘরানা বলে আলাদা করে কিছু নেই।

কোন মার্কিং কাজ করে না তিকিতাকার বিপক্ষে। আর কেরালা এমনিতেই ভয়ে ছিল। তবে কেরালা একটা ভাল কাজ করল, ওদের প্রথম টিম টা না নামিয়ে প্রায় ছয় জন আনকোরা নতুন প্লেয়ার নামালো। ব্যপার টা ভালো হলো কারন, পুরোন প্লেয়ার গুলোর মতন এরা অভিজ্ঞ নয়। কাজেই ভয় টা এদের মধ্যে ছিলই না বলতে গেলে। অভিজ্ঞতা যেমন বিপদে কাজে দেয়। তেমন ই অনভিজ্ঞতাও কাজে দেয় ভয়হীন ভাবে খেলতে। এটিকের পাসিং এর কাছে নিজেরা গুটিয়ে থাকল না একদম। বলের দখল পেলেই সব থেকে কম সময়ে গোলে ঢুকছিলো ওরা। ওয়াও। একেই বলে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি।

কিন্তু এটিকে একেবারে শয়তান দল। যেন ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে একটা হরিন। হরিন চাইছে আমাকে মেরে ফেলুক। কিন্তু বাঘ টা আরো ক্লান্ত করতে চাইছে হরিন কে। হরিনের সেই অসহায়তা টা বাঘের ভালো লাগে। তাই ক্লান্ত করে দিচ্ছে হরিন কে। ক্ষিদেও বাড়াচ্ছে। ইদানীং একটা গোল খেয়ে গেলেও এটিকে নিজেদের খেলা থেকে বেরিয়ে আসছিল না। আর সেটাই বাকি দলের কোচেদের ভাবাচ্ছিল বেশী। সেখান থেকেই এটিকে খেলা শেষ করছিল ২-১ বা ৩-১ আরো বেশী ব্যবধানে। প্রথমার্ধে বিশেষ কিছু হলো না। দু দল ই ভাল খেলল। এটিকের বেশ কয়েক টা চান্স এলো, কিন্তু ওরা ম্যাচ্যুওর করাতে পারল না গোলে। সত্তর মিনিট গোল শূন্য রইল। এটিকের স্ট্র্যাটেজির সমালোচনা শুরু হলো। কমেন্টেটর রা বলতে শুরু করলেন, উল্টো টা, যে কেরালা দারুন স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে। এটিকে কে বাহাত্তর মিনিট আটকে রেখেছে। আর সত্যি আমি রাকা কে খুব ফলো করছিলাম। মাঝে মাঝে তো ও স্ক্রিন থেকেও হারিয়ে যাচ্ছিল।

আটাত্তর মিনিটে এটিকের বল পজেশন ছিল প্রায় ৭৫ পারসেন্ট। কিন্তু গোল মুখ খুলতে পারে নি। এই সময়ে ছোট্ট একটা ভুল করল কেরালা ব্লাস্টার্স। রাকা পুরো খেলাটাই দুলকি চালে খেলছিল। পাস দিয়েছে প্রায় একশোর উপরে কিন্তু দুলকি চালে। ও ডান দিকে খেলে। ও মোটামুটি ডান দিকের ক্রস লাইন থেকে দশ গজ ভিতরে কিম্বা লাইনের ধারে কাছেই থাকে। ওর বাঁ পা কাজ করে বলে এই জায়গা টা ও পছন্দ করে বেশী। ব্লাস্টার্সের একটা বাঙ্গালী মিডফিল্ডার আছে আয়ুশ বলে। বাচ্চা ছেলে, ও বলটা ওদের ই আরেক টা মিডফিল্ডার প্রশান্ত কে দিলো। বল টা আড়াআড়ি ভাবে আসছিল শূন্যে আসছিল। কিন্তু বল টার লিফট বেশী হয়ে যাওয়ায় প্রশান্ত বুঝে গেলো বল টা বেরিয়ে যাবে থ্রো ইন হয়ে যাবে। ঠিক এই সময়ে নিজেদের হাফে থাকা রাকা স্টার্ট নিল। ও খুব লম্বা নয়। আমার থেকে ইঞ্চি তিনেক লম্বা ও মাত্র। কিন্তু ও বল টা কে চান্স নিল। জোড়া পা করে দাঁড়িয়ে থাকলে যদি শূন্য ডিগ্রী হয় তবে, ডান পা টা পেডাস্ট করে বাঁ পাটা প্রায় ১৭০ ডিগ্রী তুলে বল টা বুটের একেবারে কোনায় আউট স্টেপ এ রিসিভ করল। বল টা খসে যাওয়া পাতার মতন রাকার সামনে পরার আগেই বাঁ পায়ের থাই দিয়েই একটা গতি দিলো রাকা সামনের দিকে। প্রশান্ত বেচারা নিজের গতি কমিয়ে দিয়েছিল, থ্রোইন হবে বলে। কিন্তু ততক্ষনে রাকা সোলো রান টা নিয়ে নিয়েছে। এটিকে, ক্ষুধার্ত বাঘের মতই, সাঁই সাঁই করে উঠিয়ে নিয়ে এলো নিজেদের। সাথে সাথে ব্লাস্টার্স ও নিজেদের জায়গায় এটিকের সব কটা কে জোনাল মার্কিং এ নিয়ে নিল। রাকা র ধারে কাছে যারা আছে সবার সাথেই ডিফেন্ডার রয়েছে। কাকে দেবে পাস। আমি রাকা কে জানি। ওর কাছে কিছুর ই পরোয়া নেই। যা হবে দেখা যাবে গোছের ওর মেন্টালিটি। ও মনে হয় দেখেনিলো একবার কে কোথায় আছে। তারপরে হলো ইতিহাস। সবাই গার্ডে আছে দেখে, নিজেই বল টা নিয়ে এগোতে থাকল ও। কিন্তু রাস্তা বাছল অন্য রকম। গোলের দিকে সোজা গেল না। স্পাইরাল রাস্তা নিল। যেদিকে লোক কম সেদিকে নিল ও রাস্তা। এক দুজন আসছে, আর ওদের কে বলে পা না দিয়েই শধু শরীরের মুড়কিতেই ডজ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। কখন ও হালকা ইন্সটেপ , আউট স্টেপ এ বলের দিশা আর গতি সামান্য বদলে দিচ্ছে। আর রয়েছে নিজের ট্রেড মার্ক গতি। তিনজন কে ডজ করার পরে ও ব্লাস্টার্স এর বক্সের বাঁদিকে এক দু গজ বাইরে পজিশন পেল। বক্সের ভিতরে লোক গিজ গিজ করছে। শুধু মনে হয় একটু জায়গা ও পেয়েছিল। শট টা বাঁ পায়ে নিল ও। তীব্র গতির সাথে হালকা স্যুইং। ব্লাস্টার্স এর  গোলকিপার ঝাঁপাল, কিন্তু এখনো টুইস্ট বাকি ছিল। বল টা ঝাঁপের ঠিক আগে একবার জাস্ট মাটিকে চুমু খেতেই, নিজে নিজেই একটা লিফট গেইন করল। আর তাতেই ঝাঁপিয়ে পরা গোলকিপারের হাতের উপর দিয়ে তীব্র গতি তে ঢুকল জালে। প্রায় বার কুড়ি দেখাল রাকার এই কেরামতি টা নানা মোশনে। নানান জল্পনা চলল, ওর স্কিল নিয়ে। বল রিসিভিং টা ও শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সেটা বারংবার কমেন্টেটর রা বলছিল।

একে প্রেম করব না তো কাকে করব? জীবন, ইগো, শরীর, সর্বস্ব যাক আমার। সব দিয়েও আমি ওকে পেতে চাই এখন। তারপরে ব্লাস্টার্স আর দাঁড়াতেই পারল না। আটাত্তর মিনিটে এক গোল হলো। খেলা শেষ হবার পরে ৪-০। শেষ দশ মিনিট কি যে মারাত্মক আক্রমন করল এটিকে, বলে বোঝানো যাবে না। উফ সেই রকম আক্রমন আমি দেখেছিলাম, চুরানব্বই সালে, যে বিশ্বকাপে, আমার ভগবান মারাদোনা কে নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনের অপরাধে বের করে দেওয়া হয়েছিল, বের করে দেবার পরে দ্বিতীয় রাউন্ডে রুমানিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার খেলাতে। মারাদোনা নেই, ক্যানিজিয়ার নেতৃত্বে পুরো টিম টা মনে হয় রুমানিয়া কে ছিঁড়ে ফেলেছিল। আর্জেন্টিনা মারাদোনা চলে যাবার ধাক্কা নিতে পারে নি। হেরে গেছিল ম্যাচ টা ২-১ এ। কিন্তু এটিকে ছেড়ে কথা বলল না। আশী মিনিট ধরে রেখে দেওয়ার বদলা নিলো খুব বাজে ভাবেই।  রাকা আরেক টা গোল করল। বাকি দুটো তে আসিস্ট করল। মানে ফাইনাল পাস ওর পা থেকেই এলো। এমনিতেই এই লীগ এ ওর এসিস্ট সব থেকে বেশী। ধারে কাছে কেউ নেই। এই ম্যাচের পরে আরো দুটো এসিস্ট জুড়ে গেলো ওর নামের পাশে। পরের দিনে ওর রেটিং ১০ এ ১০ ছিল।

ভাবছি কি ভুল আমি করলাম। কেন ওকে মানা করলাম আমি। ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে , ভিতরের ছেলে টা কে আমি গলা টিপে মেরে ফেলেছি অনেক আগেই। এবারেই ওকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে দেব। যা করে করুক ও আমাকে নিয়ে। আর ওকে তড়পাব না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় অন্য। সেই সময়ে লীগের শুরু তে আমাকে খুব ফোন করত। আমার ও তখন ফাইনাল ইয়ার চলছিল। পড়াশোনা করতাম খুব, কিন্তু সেটা রাকার সাথে কথা বলা কম্প্রোমাইজ করে নয়। কিন্তু জানিনা কেন একটা সময় এলো বুঝলাম আমি, যখন ওর কল আসা কমে গেল। আগে যেটা রোজ একটা সময়ে ও আমাকে ফোন করতই। কিন্তু মাস দেড়েক দুয়েক পরে সেটা হয়ে গেল তিন চার দিনে একবার। তাও আমি করতাম মাঝে মাঝেই। অনেক সময়ে আমি করলে ফোন ব্যস্ত পেতাম। সেটাও রাত দশ টার পরে। হয়ত আমি সারাদিন পরে ভাবলাম, কি ব্যাপার সারাদিনে তো কল করেনি আমাকে ও। সাথে সাথেই কল করে দেখতাম ফোন টা ব্যস্ত। শুরুর দিকে ও যখন আমাকে কল করা কম করেছিল, আমি ভাবতাম অনেক বেশী ও হয়ত ক্লান্ত থাকছে। আমি ডিস্টার্ব করতাম না। কিন্তু এই নিয়ে তিন চার বার হলো যখন আমি দেখলাম ওর ফোন ব্যস্ত অতো রাতেও। কাউকে কিছু বলিনি আমি। আবার ভাবলাম, আমার সেদিনের ব্যবহারে ও হয়ত কষ্ট পেয়েছে। বা বুঝেছে আমাকে এড়িয়ে চলাই ভাল। মন টা খারাপ হয়ে গেল আমার। বা ও কি কাউকে প্রেম করছে আমাকে না পেয়ে?
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - শিবের শিব প্রাপ্তি অধ্যায় চার- নতুন পর্ব ২৩ - by nandanadasnandana - 21-02-2022, 11:24 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)