Thread Rating:
  • 90 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
আগের পুরবের কিছু অংশ.........
ভাবলাম, অতো কথা কেন বলব আমি তোর সাথে? ধুত্তেরি!  বাথরুম এ চলে এলাম। এসে দেখলাম জাঙ্গিয়া টা টাঙানো নেই। মানে ওই টাই পরে নিয়েছে। যবন আর কাকে বলে? স্নান করে ও কি ওটাই পরবে নাকি? নাহ কিনে আনতে হবে। কি জানি কীসের জাঙ্গিয়া পরে। নিশ্চয়ই ব্র্যান্ডেড পরবে। কালকে যেটা টাঙানো দেখেছিলাম সেটা তো জকির ড্রয়ার দেওয়া ফুল জাঙ্গিয়া ছিল। অনেক দাম। কি আর করব? কিনে আনতে হবে আমাকেই। দায় তো আমার।

                                                                              পর্ব ২৪
শ্যাম্পু করলাম আজকে। পর পর দু দিন হয়ে গেলো। ঠান্ডা না লেগে যায়। ছেলেটা আছে। রাকাও শুচ্ছে কাছে। যাক কাল পরশু করব না। বেরিয়ে এলাম, শাড়ি পরে একটা। মা দেখলাম অনেক শাড়ি কিনেছে। নরম। জানে আমি পরতে পারি না নরম না হলে। খড়খড়ে শাড়ি পরে নরম করার মতন নিয়মিত শাড়ি আমি পরি না। মাথায় শুকনো একটা সাদা গামছা চুলে জড়িয়ে বেরিয়ে এলাম বাইরে। সময় লাগবে আমার শোকাতে। বড্ড মোটা চুলের গোছা আমার। বেরিয়ে দেখলাম রাকা নেই উপরে। প্লেট টা খালি। খেয়ে নিয়েছে ডিম দুটো। কোথায় গেল? বাড়ি চলে যাবে এমন ভাগ্য আমি করে আসিনি এই পৃথিবী তে। নীচে এসে বাইরের বাগানে, ভেজা সায়া ব্লাউজ শাড়ি টা মিলে দিলাম। তখন ই দেখলাম, সামনের ফাঁকা জায়গায়, স্বাতী আর শিভ কে নিয়ে খেলছে। শমিত মনে হয় নামে নি এখনো। আমাকে দেখেই মা ছুটে এলো হাঁ হাঁ করে। যা বাবা কি করলাম আবার আমি? আন্টিও দেখলাম এলো ছুটে। কি করে ফেললাম?মায়ের আগে আন্টি বলল হেসে,
-     সিঁথি খালি রাখতে নেই রে শিব! আয় দেখি।

ইশ!! খেয়াল ই ছিল না, শ্যাম্পু করার সময়ে সিঁদুর টা সিঁথি থেকে উঠে গেছিল। আন্টি বলল,
-     চুল টা খোল! পরিয়ে দি সিঁদুর টা, তারপরে আবার লাগিয়ে নিস।

খুলে দিলাম গামছা টা চুল থেকে। আমার মা পাশেই ছিল দাঁড়িয়ে। আমাকে বলল,
-     সিঁথির কাছ টা হালকা চিরুনি চালিয়ে নে!

তাই করলাম। আন্টি মানে রাকার মা, একটা লিকুইড সিঁদুর আমার সিঁথি তে। শাঁখা তেও অল্প লাগিয়ে দিলেন আন্টি। এর পরে মা বলল,
-     কোন দিন ই সিঁথি খালি রাখতে নেই বোকা! স্বামী থাকলেই মেয়েদের সিঁথিতে সিঁদুর থাকে। এখন সিঁথি খালি, এর মানে টা মনে করলেই কোন দিন ও ভুলবি না সিঁদুর লাগাতে। এবারে চুল টা গামছায় জড়িয়ে নে। ভিজে গেল ব্লাউজ টা মনে হচ্ছে।

মা জানে, যতই আমি রাকার উপরে রেগে থাকি, সিঁদুর না পরে ওর অমঙ্গল আমি কোন দিন ও চাইব না। আমি কোন কথা বললাম না আর। ভাবলাম, আমার এই সিঁথিতে ওই টুকু সিঁদুরের এতো জোর? দরকার নেই বাবা। থাক সিঁদুর জন্ম জন্ম আমার সিঁথিতে। কেমন যেন একটা কেঁপে উঠলাম আমি মায়ের কথায়। ভাগ্যিস মা দেখল। না হলে কি যে হত? ভুলে গেলাম আমি উচ্চশিক্ষিত। * রা ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ সিঁথিতে সিঁদুর পরে না। ভুলেই গেলাম, বরের কল্যান অকল্যান এই সিঁথির সিঁদুরে লুকিয়ে থাকে না। কিন্তু প্রথা, কালচার, বিশ্বাস এমন ই জিনিস। সিঁথিতে খানিক্ষনের জন্য সিঁদুর ছিল না এটা ভেবেই বুক আমার কেঁপে গেল। মনেও নেই রাকা আমাকে কি ভাবে। আমি শুধু ভাবছিলাম, আমার ভুলের জন্য যেন ওর কোন বিপদ না হয়। আনমনে আমি গামছা টা আবার চুলে জড়িয়ে নিলাম।  

রান্না ঘরে এলাম। এতো জন লোক। মা একলা পারবে না সামলাতে। কিন্তু তখনো কেমন একটা কাঁপুনি তে ছিলাম। আমি তো জানি না, বা ভাবিও নি কোন দিন এই সব ব্যাপারে। বার বার মনে হচ্ছিল, এই যে এই টুকু সময়ে পরে ছিলাম না সিঁদুর এতে কিছু হবে না তো? আমার চুপ থাকা দেখে আন্টি হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিলেন। আর সেটা আমাকে জানেন বলেই বুঝতে পেরেছিলেন। আন্টি বললেন,

-     কি হয়েছে, ওরে কিছু হয় না ওতে। আমার ও ভুল হতো প্রথম দিকে। ভালোবাসা টাই আসল।  

আমি বেশ ভয়েই বললাম আন্টি কে
-     কিছু হবে না বলো মা?

আন্টি কে মা বললাম বলে, নাকি আন্টির ছেলের জন্য ভয় পেলাম বলে জানিনা, আন্টি আমাকে জড়িয়ে ধরল। বললেন,
-     ভয় কীসের? শিব এর থেকে বেশী ভালো আমার ছেলেকে আর কে বাসে?

মা ঢুকল রান্না ঘরে। আমাদের ওই ভাবে দেখে হেসে বলল,
-     ওই খচ্চর মেয়েকে আদর সারা জীবন করতে পারবেন। এখন জলখাবারের প্ল্যান বলুন।

আমি বললাম
-     মা, রনি কে বলি? ডোসা আর ইডলি? দারুন বানায় ওর সাউথ ইন্ডিয়ান সেকশনের রেস্টুরেন্ট টা। আর সকালে খোলাও থাকে।
মা আন্টির দিকে চেয়ে থেকে বলল
-     ভালই হবে কি বলেন বেয়ান
-     হ্যাঁ, না হলে এতো লোকের রান্না করতে করতে আমাদের চার জনের হাল খারাপ হয়ে যাবে।  
আন্টির কথা শেষ হবার আগেই আমি ডাইনিং এ এসে, ফোন লাগিয়ে দিয়েছি রনি কে।
------------------------------------------------------------------------------------------------
কালকে রাতেও ঘুম কম হয়েছিল আমার। আর তাছাড়া পুরো দিনের দৌড় ঝাঁপের একটা প্রভাব ছিল। সকাল থেকে দুপুরের রান্না বান্না তেও কম ধকল যায় নি। বাড়িতে অনেক লোক। কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমি মা আর আন্টি মিলে হয়ে তো যাচ্ছে। আন্টি রা চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মা আর আমি মিলে আটকালাম। ভাল লাগছে ওনারা থাকলে। কোন জ্বলন তো নেই ই বরং আমি বেশ ভালো থাকছি। আমার ছেলে টা সবাই কে একসাথে পেয়ে যেন একেবারে সারাক্ষন উচ্ছ্বল হয়ে থাকছে। দুপুরে খেয়ে দেয়ে তাই একটু শুয়েছিলাম। গরমের দুপুর। রাকাও শুয়েছে। বাইরে গরম তাই ভিতরে এসি তে শুলো এসে, কি বা বলতে পারি আমি। হয়ত ও খুব ক্লান্ত ছিল। শুয়েই মনে হলো ঘুমিয়ে গেল।থাক ঘুমোক। সারা দিনে মা আমাকে অনেক কিছু করিয়েছে ওর জন্য, কিন্তু থাক, সেই নিয়ে আর অনুযোগ করতে পারি না। আমাদের সমাজ টাই তো এমনি। যে যাই বলুক, ওর জন্যে আমাকেই করতে হবে সব কিছু। বুঝতে না পারলেও এটা আমি অনেকটা মানছি। কষ্ট হলেও মানছি। নিজের একটা পুরোন ইগো কে ভাঙছি। আমি ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে ভেজা চুল টা খুলে দিলাম। ভিজে এখনো অল্প ঘাড়ের কাছ টা। শুকিয়ে যাবে এবারে। ছেলে আর আমি একটাই ঢাকা নিয়ে শুয়েছি। রাকা বড় ঢাকা টা নিয়েছে। ও একটু লম্বা মানুষ কালকে ছোট ঢাকায় হয়নি মনে হয়।

ঘুম তো আসছে না। ক্লান্তির থেকেও প্রকট এখন উত্তেজনা আমার কাছে । ছেলেটা আমার, এই ব্যাপার টাই প্রধান। চলে গেলাম ফিরে জীবনের সব থেকে কঠিন সেই সময়ে। বিশ্বাস ই হচ্ছে না রাকার কথা গুলো এই ভাবে সত্যি হবে প্রতি মুহুর্তে। বলে বলেছিল ওর কাছে আমাকে ফিরতে হবেই। হ্যাঁ ফিরলাম আমি। তবে এই বিয়ে টাই প্রথম ফেরা নয় আমার। আগেও ফিরেছিলাম আমি একবার। তবে ঠিক ফিরব বলে ফিরি নি তখন। ফিরেছিলাম, নিজেকে বুঝিয়ে, নিজের উপরে জোর খাটিয়ে। তোল মোল করে দেখেছিলাম অনেক কিছু তারপরে ফিরতে চেয়েছিলাম। যুদ্ধ করেছিলাম নিজের সাথে। হেরে গিয়ে ফিরেছিলাম আমি ওর কাছে। চাইনি ওকে আর কষ্ট দিতে।তাই ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝিনি তত দিনে দেরী করে ফেলেছি আমি। আমার থেকেও বেশী আনন্দের কেউ ওর জীবনে চলে এসেছিল।  

সেই দিন সন্ধ্যে বেলায় ওদের বাড়ির পিছনে পোড় বাড়িতে আমি ওকে কষে একটা চুমু খেয়ে চলে এসেছিলাম। বলে এসেছিলাম আমি ফিরব না ওর কাছে কোন দিন, ও যেমন ভাবে চায় সেই ভাবে। বলে এসেছিলাম, বন্ধু আমি ওর চিরকাল থাকব। ওকেই ভালবাসব চিরকাল। কিন্তু ও আমাকে নিজের করে চায়, সেটা তে না বলে এসেছিলাম। আমি মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছিলাম, যে ওর বিয়ে হবে কোন নর্ম্যাল মেয়ের সাথে। যাকে ভালোবাসি আমি, তার কাছে নিজের জন্য স্বার্থপর হতে আমি পারব না। তাতে ও আমার সাথে সম্পর্ক রাখুক বা না রাখুক। ও বুঝতে পারলে ভালো, আর না পারলে ভুল বুঝেই থাকুক আমার উপরে, রাগ নিয়ে। কিন্তু এই গুলোর কোন টাই আমার কাছে ওর সুখ ,ওর ভালোর থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন ছিল না।  

ও চলে গেছিল খেলতে। ওর আই পি এল ও চলছিল আর সাথে ন্যাশন্যাল টিমের খেলাও চলছিল। কিন্তু সেবারে ওকে নিয়েছিল এ টি কে। মারাত্মক প্যাকেজে এসেছিল ও টিমে। আর পুর্নাংগ রাকা কে আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম সেই লীগ এ শেষ বারের মতন। টোটাল আঠেরো টা ম্যাচ খেলেছিল ও। কিন্তু সেই খেলা ওকে স্পেনেও নিয়ে গিয়েছিল। আর সত্যি তো ওর মতন গেম মেকার ভুভারতে কেন অস্ট্রেলেশিয়া তেও এসেছে কিনা আমার জানা নেই। শুধু বাঁ পায়ের প্লেয়ার ও। ডান পা উইক বটে কিন্তু ততটা না। সময়ে সময়ে ডান পায়েও গোলার মতন শট ও নিতে পারত। কিন্তু বাঁ পা ছিল এমন যে, বাঁ পা কিছু করলে রাকাও বুঝতে পারত না। রাকার অজান্তেই মনে হয় ওর বাঁ পা খেলত। মাঝে মাঝে মনে হতো , রাকার ব্রেইন ওই বাঁ পায়েই আছে। অনেক দিন হয়ে গেছে, কিন্তু ওর চারটে খেলা আমার মনে পরে এখনো। সেই সব রাতে স্টেডিয়াম কেন, সারা ভারত মনে হয় নাচছিল ওর খেলা দেখে। আমার মতই আপামর ভারতবাসী বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, এবারে ভারত বিশ্বকাপ খেলবে।

প্রথম খেলা টা ছিল ওর পুরোন ক্লাব ব্যাঙ্গালুরু র বিপক্ষে। দারুন ব্যালান্সড টিম ছিল ব্যাঙ্গালুরু।ওরা খেলছিল পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে। আসলে ৫ ৩ ২ এ শুরু করল ওরা। কিন্তু দেখলাম, একদম লেফট আর রাইটের ডিফেন্ডার শুধু দুটো উইং ই না, পুরো খেলাটাই কন্ট্রোল করছে। ওরা দরকারে ডিফেন্সে নেমে যাচ্ছে, আর নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে মিডফিল্ডে উঠে আসছে। কাজেই তখন ৫ ৩ ২ টা ৩ ৫ ২ এ কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে। আর কাউন্টার তোলার সময়ে ৩ ৩ ৪ চলে যাচ্ছে। কারন এই উইং দুটোই উপরে গিয়েও সাথ দিচ্ছে দুটো স্ট্রাইকার কে। নাম দেখলাম উইঙ্গার দুটোর, একটা র নাম হোমস,ইংল্যান্ডের আর একটা কার্লোস ব্রাজিল এর। দুটোই হাই পেইড। প্রেসিং ফুটবল টা গুলে খাওয়া একেবারে। মারাত্মক দম। বয়েস দুটোর ই ২৪ ২৫ এর আশে পাশে। মানে টপ টাইমে আছে জীবনের দুজনেই। দুই পায়েই সমান জোর। সবাই তো ধরেই নিয়েছে এবারে ব্যাঙ্গালুরু চ্যাম্পিয়ন হবেই। শুধু এরাই না, সাত্যকি ও জয়েন করেছে ব্যাঙ্গালুরু তে। আমি পছন্দ করি না, কিন্তু সেও দারুন প্লেয়ার। ডান পা আর বাঁ পায়ে সমান দক্ষ। মারাত্মক আন্ডারস্ট্যান্ডিং উইঙ্গার দুটোর সাথে। স্ট্রাইকার এ ভারতের সেরা স্ট্রাইকার সুনীল খেলছে। একেবারে ট্যিপিক্যাল স্ট্রাইকার ও। দম, ক্ষমতা, স্কিল আর এজিলিটি র সাথে অভিজ্ঞতার মিশেল। খেলে ১১ নম্বর জার্সি পরে। দুর্দান্ত স্পিড। দুই পায়েই গোলার মতন শট। আর ডিফেন্সে খেলছে, পরাগ, সার্থক আর আল্যান। এক এক্কে এক সব কটা।

তূলনায়, এ টি কে বেশ নাম হীন দল। ওদের স্পেনের কোচ কিন্তু বিশাল কোচ। শুধু বুঝলাম, এদের খেলা টা মিডফিল্ড নিয়ে। আসলে আমি হাই পাসিং ফুটবল জানতাম কিন্তু সেই কনসেপ্ট ভারতে, ব্যাপার টা হজম হচ্ছিল না। পাসিং ফুটবলে, মারাত্মক হোল্ডিং দরকার পরে। মানে বল রিসিভ করা একটা প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু সেই রিসিভিং এর পরের স্টেজ হলো বল হোল্ডিং। প্রচন্ড সামর্থ্য লাগে আর সাথে একিউরেসি। ভাবছিলাম ভুল হচ্ছে কিছু। ব্যাঙ্গালুরু কিন্তু একেবারে জার্মান মেন্টালিটি নিয়ে খেলে। জেতা ছাড়া কিছু বোঝেই না। অতো স্কিল আর পাসিং যথেস্ট নয় ওদের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচ আজকে, তাই একটু রক্ষা। না হলে ওদের স্ট্রাটেজি মারাত্মক হয়। আর কলকাতা ও তিন বারের চ্যাম্পিয়ন। এখন বুঝে গেলাম, সামনের আধ ঘণ্টা, দুজনাই দুজন কে মাপবে। তাই পাস পাস আর পাস ছাড়া কিছু বুঝতে পারছিলাম না। ৪ ৪ ২ এ খেলছে এটিকে। কমেন্টেটর রা বলল, এটিকের গড় বয়স ২৪। আর তুলনায় ব্যাঙ্গালুরু বেশ অভিজ্ঞ দল, সেখানে ওরা স্কোর করছে ২৮। একেবারে প্রাইম স্কোর। রাকা নিজের জায়গায়। রাইট মিডফিল্ডের পাশে খেলছে ও। ৭ নাম্বার জার্সি পরে। চুল টা এখানেই বেশ লম্বা হয়ে গেছিল। আমিই কত বার ঘেঁটে দিচ্ছিলাম ওর চুল টা এখানে। একলা বসে থাকলে আমার গার্ডার দিয়ে বেঁধে দিয়েছি কতবার। ওর মতই দুর্দান্ত ওর চুল গুল সামনে এসে কপাল ঢেকে দিচ্ছিল ওর। ইশ কি মিস্টি লাগছে দেখ একবার!!!! সেটা লজ্জায় কাউকে বলতে পারলাম না। আমি যে কত বড় প্রেমিকা ওর খেলার ও নিজেও জানে না।

কলকাতার এওয়ে ম্যাচ ছিল। প্রথম কুড়ি মিনিট, শুধু পাস পাস আর পাস। সহজ না ব্যাপার টা। আমরা চেষ্টা করেছিলাম সিকিমের দলের সাথে একবার। জানি এই রকম করতে করতে, প্রেশার আসবে মারাত্মক। ব্যাঙ্গালুরু কি বসে থাকবে নাকি? না কি ওরা ধরাধরি খেলতে এসেছে এখানে?  এটা ইগোর ব্যাপার। কিন্তু এই কুড়ি মিনিট টাই একটা ফ্যাক্টর হয়ে গেল। রেগে গেল ব্যাঙ্গালুরুর প্লেয়ার গুলো। তখন ছোট ছিলাম, বুঝিনি, কিন্তু এখন যে ইন্টেন্সিটি তে ওরা বল ধাওয়া করল তাতে মনে হচ্ছিল ফাউলের পর ফাউল হবে। কিন্তু নাহ, গড় বয়েস কম হলে কি হবে, পুরো দলটাই মনে হচ্ছে ডজার দের নিয়ে বানিয়েছে এটিকে। ডিফেন্ডার গুলো অব্দি, একটা দুটো ডজ পলকেই করে ফেলছে। রাকা তখন ও কিন্তু আন্ডার রেটেড হয়েই খেলছে। অপ্রয়োজনেই, নেমে আসছে নিজেদের ডিপে। আবার উঠে যাচ্ছে উপরে স্ট্রাইকার দের পাশে। কখন দেখছি দুলকি চালে হাটছে, লেফট উইং এ বল থাকলে। কোন প্লেয়ার মার্ক করছে না ব্যাঙ্গালুরু। ওদের জোনাল মার্কিং রয়েছে। জানি বড় দলের একটা সমস্যা। ধার আর ভার বেশি হলে দলের, ওরা কোন একক প্লেয়ার কে নিয়ে মাথা ঘামায় না। জোনাল মার্কিং রাখে। বল বিপক্ষের পায়ে গেলে আশে পাশের স্কোয়ার বা ট্রায়াঙ্গাল পজিশন এ যারা থাকে তারা ছুটে যায় বলের পজেশন নিতে।নিজেদের স্বাভাবিক খেলার উপরে বেশী আস্থা রাখে, বিপক্ষের খেলা বানচাল করার থেকে। ভালো কনসেপ্ট কিন্তু একদিনে আসে না এই সার্বিক ডিফেন্সের ধরন টা। সময় লাগে। তবে বড় দেশের প্লেয়ার, যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ইটালী এই সব দেশের ফুটবল চিন্তা এতোই এগিয়ে গেছে যে পাড়ার খেলাতেও এই গুলো জলভাত হয়ে গেছে। যেমন ভারতে ক্রিকেট টা জলভাত। কাজেই এই সব দেশের প্লেয়ার দের এই গুলো শেখাতে হয় না। ওদের রক্তে অভিযোজিত হয়ে গেছে ব্যাপার গুলো।

বাইশ মিনিটে একটা ব্যাপার হল, বল রাকার পায়ে আসতেই, রাকা নিজের বডি ফেইন্ট এ বোকা বানালো ওদের রাইট উইঙ্গার টা কে। চোখের পলকে হলো ব্যাপার টা। বলটা রাকার কাছে আসতেই ও নিয়ে হালকা চালে এগোচ্ছিল এদিক ওদিক দেখতে দেখতে।  হোমস তীব্র গতি তে রাকার দিকে আসছিল।হোমস মিটার খানেক দূরে থাকতেই, রাকা নিজের কাঁধ টা বাঁ দিকে ঝোঁকাতেই হোমস ও রাকার বাঁ দিকে নিজের গতি ট্রান্সফার করল। আর হোমস এর গতির সাথে  সাথে শরীরের মোমেন্টামও রাকার বাঁদিকে ট্রান্সফার হল হোমসের অজান্তেই। কিন্তু রাকা জানত সেটা। রাকা তাকালো ও না হোমসের দিকে, যেন ও জানত ওই হুমদো টার কি হাল হবে ওই ডজের পরে। ও ডান পায়ের আউট স্টেপ এ বল টা ডান দিকে নিয়ে ছিটকে বের হলো। হোমস বাঁ ডান করতে গিয়ে স্লাইড করে গেল দুই পা ছড়িয়ে। হোমস মনে হয় ভাবতেও পারে নি, একটা ভারতীয় ছেলে এই ভাবে অপমান করে বল টা নিয়ে বেরিয়ে যাবে নাগালের বাইরে। হোমস এর যা চেহারা, তাতে রাকার মতন রোগা একটা ছেলে ঘাবড়ে যাবে এই বিশ্বাসেই হোমস ছিল। হোমস ভুল বুঝতে পারলেও, অনেক দেরী হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবলাম, ওরে ফিরিঙ্গী, ওটা রাকা। ওই একটা বডি ফেইন্ট এ এতো টা জায়গা ওপেন হয়ে গেল বলার না। রাকা অন দ্য বল সোলো স্প্রিন্ট নিল। রাকা যখন অন দ্য বল সোলো রান এ থাকে, সে এক দেখার জিনিস বটে। তীব্র গতির সাথে বডি ফেইন্ট এর কামাল। ওর সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি কোমরের নীচে, তাই ছোট স্টেপ এ দৌড় আর ব্যালান্স। সাথে বডি ফেইন্ট, এই তো ওর উপাদান খেলার। এই তিন টে জিনিস এর সাথে ঐশ্বরিক স্টার্ট। যেনো ছিটকে বের হওয়া।যেটাকে এক্সিলারেশন বলে। সোজা না, সব ফুটবলার দের এই ব্যাপার টা থাকে না। অনেক প্র্যাক্টিসের পরেও আসে না। এটা কিছু টা অ্যানা যায় প্র্যাকটিস করে। কিন্তু অনেকের এই ব্যাপার টা সহজাত। ফিজিক্স এর নিয়মে, খুব কম টাইম এ, মানে ভেরি স্মলডেল্টা টাইম এ একটা বিশাল ফোর্স আপ্লাই করে দেওয়া। সেটা হিউম্যান বিইং এর সাথে হলে বিশাল শক্তিক্ষয় হয়। তার জন্য শক্তি মজুদ রেখে দেওয়া টা জরুরি।

স্পোর্টস সায়েন্সে নিউটন স্যার এর সব কটা ল, চিরকাল পয়লা নাম্বারেই থাকবে। যাই হোক, রাকার সোলো রান টা নেবার সময়েই, এটিকে পলকেই রণ মুর্তি নিল। এতোক্ষন নিজেদের মধ্যে পাস দেওয়া নেওয়া করছিল, যেই রাকার সোল রান টা শুরু হলো, টিম টা ৪ ৪ ২ শেপ থেকে, রাকা কে নিজের জায়গায় ছেড়ে রেখে, তীব্র গতি তে রাকার পাশে এমন ভাবে উঠে এল সব কটা মিডফিল্ডার, যেন মনে হলো একটা কাল্পনিক তীর তীব্র গতিতে এসে বিপক্ষের বক্সের কাছে নিজের শেপ নিচ্ছে। এই হল মজা। বলেছিলাম না, এটিকের কোচ অনেক বড় কোচ। মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে কি করা দরকার এই পরিস্থিতিতে। এটাও বুঝলাম, রাকা ওদের কী প্লেয়ার। ওর সাথে টিম টা কে মারাত্মক প্র্যাকটিস করিয়েছে। এতোক্ষনে সমস্যা টা বুঝতে পারল ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু এখন বুঝে কি হবে? কাকে ছেড়ে কাকে দেখবে? এটিকের সব কটা যম একসাথে উঠেছে । কিন্তু ওদের তো জোনাল মার্কিং। রাকার সোলো রান টা বিপক্ষের দুটো মিডফিল্ডার কে নিয়েই হচ্ছে। ঐ দুটো কে আটকে রেখে দেওয়া বলের সাথে কোন ব্যাপার না ওর কাছে। অনেক পিছনে হোমস। বেচারী ঘাবড়ে গেছে মনে হয়। ততক্ষনে বেঙ্গালুরু, বাকিদের ছেড়ে, রাকা কে ধরল। রাকা ওই গতি তে গেলে আর হয়ত সেকেন্ড দুয়েকেই গোল মুখে ঢুকে যাবে রাকা। এতে করে, মাঠের বাঁ দিকে একটা ফাঁকা স্কোয়ার তৈরি হয়ে গেল।

লাভ ইউ রাকা!! শয়তান একেবারে। ডেভিল। ততক্ষন ডজ করতেই থাকল যতক্ষন না রাকার পাশের মিডফিল্ডার গার্সিয়া, উঠে ডি বক্স এর মধ্যে ঢুকল। বাঁ পা তো নয় ওর, যেন উত্তপ্ত ছুরি চলছে মাখনে। কোন ঢাক ঢোল পেটানো নেই, কিচ্ছু নেই। নিঃশব্দে শেষ করে দিল বেঙ্গালুরুর ডিফেন্স কে। চারটে প্লেয়ার রাকা কে ঘিরে ধরেছিল। কিন্তু ও মাইনাস করছিল না বল টা। উত্তেজনায় কেউ খেয়াল না করলেও, আমি বুঝতে পারছিলাম, ফালতু ডজ করার ছেলে ও নয়। ও অপেক্ষা করছে ফাঁকা জায়গায় কারোর জন্য।কারন এটিকের স্ট্রাইকার দুটো মারাত্মক মার্কিং এ আছে। ততক্ষনে পুরো বেঙ্গালুরু টিম টাই নেমে আসছে ওদের হাফ এ। কিন্তু দেরী হয়ে গেছিল অনেক। ৬ নাম্বার গার্সিয়া বিদ্যুৎ গতি তে বক্স এ ঢুকতেই ও মাইনাস করল বল টা বাঁ পায়ে। ছোট্ট কার্ভ নিয়ে হালকা লিফট করে বলটা বেশ গতিতে এল গার্সিয়ার কাছে। ঠিক সেখানেই এলো বলটা যেখানে দরকার ছিল। খুব ক্যাজুয়ালি ডান পায়ের আউট স্টেপ এ গার্সিয়া রিসিভ করল বলটা। সামনে এগিয়ে গেলো খানিক বলটা। গোলকিপার বিপদ বুঝে এগিয়ে আসার আগেই, গোলকিপারের ডান দিকের জালে জড়িয়ে গেল বলটা। গড়িয়ে যাওয়া বলটা কে বেশ করে দেখে, ধীরে সুস্থে শট টা বাঁ পায়ে নিয়েছিল গার্সিয়া।

আমার ভাই আর বাপি একেবারে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিল ডাইনিং এই। আর আমি লজ্জা লজ্জা মুখ করে বদমাশ টা কে দেখছিলাম, টিভি তে। গার্সিয়া ওকে তুলে নিয়েছে কোলে। ঘামে ভেজা মুখে ভেজা চুল গুলো কপালে নেমে এসেছে ওর। হাত টা মুঠো করে রয়েছে ও। ওদের কোচ টা টাকলা। ওই ঘেমো মাথাতেই চুমু খেল ওদের কোচ। আমি হলে তো ওর ঘেমে যাওয়া শরীর টা কেই বুকে নিয়ে নিতাম। ইশ মিস করছি শয়তান টা কে। বেঙ্গালুরু যেন ব্যোমকে গেছে একেবারে। পাঁচ সেকেন্ডের একটা স্পেল। আর তাতেই উঠে এল ফাইনাল রেজাল্ট।       

বেঙ্গালুরু বিপদ টা বুঝেও বুঝল না। রাকা ওদের দলে ছিল দুই বছর আগে। খেলায় নি ওরা রাকা কে। লিজে  ছেড়ে দিয়েছিল মুম্বই কে। আর এবারে তো ওকে এটিকে রীতিমত অকশন এ তুলেছে। হাত কামড়াচ্ছে নিশ্চয়ই এখন ওদের মালিক। যাই হোক ওরা প্রেসিং ফুটবল টা গুলে খেয়েছে একেবারে। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না আমিও। পজেশন এটিকের কাছে গেলেই ওরা পাস দিচ্ছিল। সে নিজেদের গোল মুখে হলেও আর উপরে উঠলেও। পঁয়ত্রিশ মিনিট পরে বেঙ্গালুরু একটা চান্স পেল। কিন্তু হাফ চান্স। সুনীল হারিয়ে গেল, মারাত্মক পাসিং ফুটবলের কাছে। সেদিনে বেঙ্গালুরু কে দেখে খারাপ লাগছিল আমার। জঙ্গলের রাজা যেদিনে ভেবে রাখেন আজকে শিকার করবে, সেদিনে সবার হাল এক ই হয়।

কখনো স্কোয়ার, কখনো, ট্রায়ঙ্গাল করে, এই ভাবে পাস পাস পাস চলছিল এটিকে র। রাকা আবার আগের মতন। দুলকি চালে হাঁটছে। মাঝে মাঝে হাত তুলে কাউকে কিছু বলছে। সেকেন্ড হাফে, মনে হল স্টেডিয়াম একেবারে ভরে আছে। কলকাতার ও বেশ সমর্থক ওখানে আছে। লাল সাদা জার্সি তে ভরে আছে চারিদিক। তেষট্টি মিনিটে, এটিকের ডিফেন্ডার প্রিতম বল টা আরেক জন ডিফেন্ডার তিরি কে দিল। তিরি থেকে,কার্ল। কার্ল থেকে গার্সিয়া। গার্সিয়া থেকে রাকা হয়ে বল টা আবার শুভাশিসের কাছে গেল। একটা চক্কর খেল বলটা আর গোল পোস্ট থেকে সেন্টার হাফ হয়ে আবার গোল্মুখে ফিরে এলো এটিকের। পুরো টিম টা যেন ধীরে ধীরে নীচে নামছে। বেঙ্গালুরু, অপেক্ষা করছে মনে হলো। আগের ভুল করবে না আর। আমি দেখছি এটিকের সব কটা প্লেয়ার ভীষন ক্যাজুয়াল। দারুন শেপ এ খেলছে। আবার সেই পাস পাস আর পাস। প্রথম খেলা এই মরশুমে এটা এটিকের। কে বলবে সেটা?  রাকার মাপের কোন প্লেয়ার থাকলে সব টিমের ই এমন একটা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হয়ে যায়।আর এটিকের সব কটা প্লেয়ার ই তো দারুন। শুরুতে কাগজে বেঙ্গালুরু কে দারুন লাগছিল, এখন মাঠে এটিকে কে লাগছে।  ব্যাপার হলো, এই রকম পাস পাস পাস করতে করতে, বুঝলাম, টিম টা এখন উপরে উঠছে খুব ধীরে ধীরে। মনে হয় কুড়ি টার উপর টা পাস খেলে ফেলেছে টিম টা, কিন্তু নিট খুব একটা উপরে উঠতে পারে নি। খুব ধীরে উঠছে। আর ডিস্ট্রিবিউট করছে গার্সিয়া। রাকা পায়ে বল রাখছে না। সিঙ্গল টাচ এ বল টা দিয়ে দিচ্ছে কাউকে না কাউকে। কখন কখন দুজনের মধ্যেই ওয়ান টু ওয়ান খেলছে যতক্ষন না কেউ বিপক্ষের এগিয়ে আসছে। বুঝছি, ছক টা বিপক্ষের ভাঙছে ওরা। বেঙ্গালুরু চেষ্টা করছিলো ওদের স্কোয়ার বা ট্রায়াঙ্গল গুলো কে ইন্টাক্ট রেখে জোনাল মার্কিং এ থাকার। কিন্তু এই রকম পাসিং ফুটবল আমাদের দ্রাবিড় এর ব্যাটিং এর মতন। কিন্তু ফুটবল দ্রাবিড়ের বল ছাড়ার থেকে বেশী দৃস্টি নন্দন হয়। বাপি ভাই এর কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠছে খেলা টা। কিন্তু আমার কাছে ইন্টারেস্টিং।

একদম সহজ না এই রকম পাসিং ফুটবল খেলা । একদম না। মারাত্মক বল কন্ট্রোল আর টাইট স্পেসে প্র্যাকটিস না করলে বলের এই রকম বলের হোল্ডিং আর রিলিজিং আসে না। আমি উত্তেজিত হই ওদের খেলা দেখে না, আমি উত্তেজিত হই ওই প্র্যাক্টিস এর কথা ভেবে। সব কটা ফুটবল দেবতা যেন। বলেছিলাম তো, এদের সব কটা ডজার। প্রিতম, শুভাশিস, তিরি এরাও যে এতো ভালো ডজ করে আমি দেখিনি কোন দিন। দেখলাম গত এক মিনিট এরা নিজেদের মধ্যে পাস দেওয়া নেওয়া করছে। বিপক্ষ কে বল নিতেই দেয় নি পায়ে। একটা জায়গা এলো, একেবারে সেন্টার হাফ থেকে বেঙ্গালুরুর দিকে দশ গজ ডিপে। বল দেওয়া টা একটু জোরে হয়ে গেছিল প্রীতমের রাকাকে। রাকা ক্যাজুয়ালি দৌড়চ্ছিল বলের পিছনে।বেঙ্গালুরুর দানিশ রাকার পিছনে। একেবারে ক্রস লাইনের কাছে এসে জাস্ট হয়ত হাফ ফুট গেলেই বিপক্ষ থ্রো ইন পেয়ে যাবে, সেখানেই, রাকা ডানদিক এ বডি ফেইন্ট করে চকিতে বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে বেঙ্গালুরুর কর্নার ফ্ল্যাগ এর দিকে স্প্রিন্ট টানল। দানিশ বেচারা, রাকার মতই ডান দিকে মুভ করতে করতে বাঁ দিকে আসতে গিয়ে পরে গেল মাটিতেই। অতো দ্রুত নিজেকে রাকার গতির সাথে একাস্টম করতে পারল না দানিশ। বলেছিলাম তো, ফেইন্টিং বডি ডিউরিং অ্যা গেইম, ইজ অ্যান আল্টিমেট আর্ট অফ দি মাস্টার। ততক্ষনে রাকা কর্নারের কাছে অর্ধেক রাস্তা পৌঁছে গেছে। রাকার টিম টা উঠে এসেছিল অনেক টা।  আর পায় কে? আমি শুধু টিভি স্ক্রিনের উপরে তাকিয়ে দেখছি হেড টা কে নেবে। রাকা কর্নার এর কাছ থেকে ক্রস টা তুলবে আমি বুঝে গেছি। কারন কোনা কুনি ভাবে রাকাকে কর্নারের কাছে চাপতে তিন জন ছুটে আসছে বেঙ্গালুরুর। বেঙ্গালুরু বুঝতে তো পারছে বিপদ, কিন্তু বড্ড দেরী তে। আর রাকা কে বড্ড হালকা ভাবে নিয়েছিলো ওরা। বরং গার্সিয়া কে বেশী মার্কিং এ রাখছিল। আমি নিশ্চিত, এর পরে রাকা কে সব দল মার্কিং এ রাখবে। কিন্তু আমি শিওর ছিলাম, একজন গেম মেকার এই ভাবেই গেম চেঞ্জ করে। নিঃশব্দে। ভিলেনের মতন ঢুকে পরে বিপক্ষের দূর্গে। তছনছ করে দেয় ওই কয়েক সেকেন্ডেই। ভয় একটাই রাকা কে উইক পা দিয়ে ক্রস টা নিতে হবে। কারন ওর বাঁ পা টা চারটে লোক মিলে গার্ড করে রেখেছে। ডান থেকে বাঁ পায়ে বল নিতে গেলে সময় যাবে কিছু টা। আমি শিওর রাকা এই ভুল টা করবে না। সমস্যা হলো, উইক লেগ ইন্সটেপ ক্রসের ক্ষেত্রে শটের পাওয়ার একটু এদিক ওদিক হলেই ভুল স্যুইং এ বেরিয়ে যাবে বলটা বাইরে। পায়ের ঠিক যেখান দিয়ে বল টা ও হিট করবে ভাবছে, ঠিক সেখান দিয়েই হিট করাতে হবে। আর বলের লিফট বাঁ গতি এদিক ওদিক হলে সঠিক লোকের কাছে যাবে না। আমি হয়ত বুঝতে পারছি না, কিন্তু আমি নিশ্চিত, রাকা  দেখে নিয়েছে কুড়ি গজ ডিপ থেকে কেউ একজন আনমার্কড বিদ্যুৎ গতি তে পজিশন এ আসছে।  চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু, নাহ ছেলেটা একেবারে বসের মতন খেলে। আমি মিথ্যা ওকে নিয়ে ভাবছিলাম। পোঙ্গায় চারটে লোক নিয়েও, ডান পায়ে ও মেপে বল টা রাখল গোলকিপার কে পেরিয়ে এমন একটা জায়গায়, সেখানে শুভাশিস ঢুকছে মারাত্মক গতি তে। বেশী লিফট দিল না ও বলটাকে। সময়ের হেরফের হয়ে যাবে। বিপক্ষের ডিফেন্ডার রা সময় পেয়ে যাবে। ডান পায়ে নেওয়া বল টা ইন্স্যুইং করে ঢুকল বক্স এর সামান্য বাইরে। ততক্ষনে শুভাশিস ঢুকে গেছে সেখানে। লম্বা ছেলে, অনেক টা জাম্প করে, কপালের উপর দিয়ে হালকা লব করে হেড টা নিলো ও। গোলকিপার ওর ফার্স্ট বারে ছিল, সেকেন্ড বারের মাথা দিয়ে বল টা লোপ্পা হয়ে ঢুকে গেল গোলে। বল তাড়া করা বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার গুলো গোলে ঢুকে পড়ল নিজেদের গতি ম্যানেজ করতে না পেরে। জাল ধরে হতাশ হয়ে ওখানেই শুয়ে পড়ল।  

থম মেরে গেল স্টেডিয়াম। তখনো বেঙ্গালুরু আশায় ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় গোল হয়ে যাবার পরে আর আশা রইল না। কলকাতা ও বিশ্বাস করতে পারছে না। ছোট্ট দুটো মোমেন্ট আর দর্শনীয় দুটো গোল। উফ ভাগ্যিস বদমাশ টা কাছে নেই আমার। আজকে আমি নিজেকে রাখতেই পারতাম না ধরে। মনে হচ্ছিল আজকে ও যা চাইত আমি তুলে দিতাম ওর কাছে। এটা ভেবে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। বাপি ভাই যথারীতি নাচা নাচি করছিল খুব। মা এসে খানিক বকে দিতেই দুজনে আবার চুপ করে গেল।

সেইবারে লীগ এ চ্যাম্পিয়ন তো এটিকেই হলো। কিন্তু তিন মাসে আমার জীবনের শেপ টা বদলে গেল। প্রথম দিকে ও রোজ কল করত আমাকে রাতে। নানান কথা হতো। কখনো দুষ্টুমি করত না এমন না। আমার পছন্দ না হলেও ওর সাথ দিতাম আমি। আমি জানি আমার উপরে ওর দুর্বলতা অস্বাভাবিক রকম বেশী। সত্যি বলতে কি, আমি সেটা পছন্দ ও করতে লেগেছিলাম। আসলে ওর খেলা দেখার পরে মনে হতো ও ভগবান। মনে হতো, আমি ওর কাছে তুচ্ছ। সেই তুচ্ছাতিতুচ্ছ কাউকে ও জীবনে চায়। ওর বন্ধুত্বের থেকেও ওর প্রতি এই দুর্বলতা আমাকে একেবারে ভয়ঙ্কর দূর্বল করে দিয়েছিল। সারাদিন মনে হতো ওকে আমি হারিয়ে না ফেলি।

স্থির করতে শুরু করেছিলাম, এবারে এলে ও যা চায় আমি দেব। ও আমাকে ডমিনেট করবে তো? করুক। ওর ইচ্ছে মতন আমাকে নিয়ে চলবে তো? চলুক। আমার কি জোর আছে আর ওর কাছে? সারা জীবন ওর হয়ে থাকতে হবে তো? থাকব। ওর খাওয়া দাওয়া, খেলা, মানে একটা বউ এর যা যা কাজ আমাকে করতে হবে তো? করব। সব লজ্জা, ইগো ত্যাগ দেব আমি। ভয় হতো আমাকে না পেয়ে ওর খেলার যেন কোন ক্ষতি না হয়। এই লেভেলের প্লেয়ার কে ভারত পেয়েছে। ওর যেন এই তীব্রতা না কমে কোন দিন। আমার মেইল ইগো র জন্য ওর মনে যেন কোন দাগ না আসে। ও চায় আমাকে ওর কাছে। ওর হয়ে। ওর মতন করে। সমস্যা কী আমার? কোন সমস্যা নেই। আর ওকে তো ভালোবাসি আমি। ওই রকম একটা প্লেয়ারের কেরিয়ারের কাছে আমার মতন একটা কেরিয়ার জলাঞ্জলী দেওয়া কোন ব্যাপার ই না।

রাকা জেদ করলে ওকেই বিয়ে করতে হবে আমাকে। কিন্তু তারপর? আমার যখন অরগ্যানোপ্লাস্টি হয়েছিল তখন ডক্টর বলেছিলেন, যদি বিয়ে হয় সারোগেসির মাধমে বাচ্চা নেওয়া যেতে পারে। রাকা যদি না ছাড়ে আমাকে, বিয়ে যদি করেই তবে ওই ভাবে বাচ্চা নিতে হবে আমাদের। হতে পারে তাতে আমার যোগদান রইল না কিন্তু, সে তো আমার রাকার ই সন্তান হবে!!! আর আমি মা হবো। আর কিছু চাই না আমি। ওর বংশ এগিয়ে যাবে। আমি তাকে মানুষ করব মা হয়ে। কি সমস্যা তাতে? আর ও যদি চায় আমি আমার কেরিয়ার বানাবো। কিন্তু সেটা ও চাইলেই। না হলে সেও থাক। ও যেন ভালো থাকে ব্যস।
[+] 4 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - শিবের শিব প্রাপ্তি অধ্যায় চার- নতুন পর্ব ২৩ - by nandanadasnandana - 21-02-2022, 11:24 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)