Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
-যে জন্য তোমাদের ডেকেছি। নিরঞ্জনদা আমি আর এখন কিছু তোমার কাছে গোপন করছিনা, এই ব্যাপারগুলোর ডিসিসন তুমি দেবে, এরা সবাই শ্রোতা, প্রয়োজনে বিরোধিতা করবে।
-বাবা তুই যে গুরু দায়িত্ব দিলি।
-এককথায় তাই বলতে পারো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ও বাড়িতে গিয়ে একটু চায়ের কথা বলে আয় না।
-আমি একা যাবো।
-কেনো ভয় করবে।
হেসে ফেললো।
-ওইখানে কি করে থাকলি।
-তুই ছিলিতো।
-ঠিক আছে তোকে ইসলাম ভাই ওই বাড়ির দালান পযর্ন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে আসবে। হবে।
-হ্যাঁ।
ইসলাম ভাই উঠে দাঁড়ালো। ওরা দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
-তুমি তখন কিছু মনে করো নি তো।
-নারে। দিদি আমাকে সব বলেছে।
-সমস্যাটা এখনো রয়েছে, তার ওপর সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানো, আমাকে কেউ কিছু বললে, ও একবারে সহ্য করতে পারছে না, উল্টে রি-এ্যাকসন আমার ওপর।
ইসলাম ভাই ঘরে ঢুকলো।
-কি হলো।
-ওকে নিয়ে চলা খুব টাফরে অনি।
-হ্যাঁ। কি করবো বলো চলতে হবে। আমার সঙ্গে বড়মা ছোটোমা আছে।
-আমার থেকেও ওর সবচেয়ে বেশি আব্দার ছোটোর কাছে। বড়মা বললো।
-সেই দিনকার পর থেকে ও কেমন যে ছেলেমানুষ হয়ে গেছে। সেই দিনটা তুই যদি দেখতিস মুন্না, ভয় পেয়ে যেতিস, অনির ধৈর্য্য দেখেছিলাম সেদিন। ছোটোমা বললো।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
-ওকে ডাক্তার দেখাচ্ছিস।
-তোর দাদার বন্ধু সামন্ত ডাক্তার আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে। বড়মা বললো।
-বাবা ও তো এশিয়ার নামকরা ফিগার। নিরঞ্জনদা বললো।
-ওইতো দেখছে, অনির এখানে নিয়ে আসতে বললো, ওর খালি এখন চেঞ্জের দরকার। মনটা একেবারে বিষিয়ে গেছে রে।
ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে।
-বুবুন টেস্ট করলাম, দারুণ
-আমাদের চায়ের কথা বলেছিস।
-এই যা ভুলে গেছি, দাঁড়া সুরমাসিকে বলছি।
ফোনটা কেটে দিলো। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে।
-মিত্রা, তরকারি টেস্ট করলো তাই জানালো।
সবাই হাসলো।
-কি বলছিলি তুই মুন্না।
-বলছি সেই দিনগুলো তুই দেখিস নি, ওর ওপর কি ভীষণ মেন্টাল টর্চার করেছে ওরা, মিঃ ব্যানার্জী, মল আরো অনেকে অনি কিছুটা জানে। সম্পত্তি বুঝলি। ওরা মেয়েটাকে মেরেই ফেলতো হয়তো। যদি অনি না এসে পরতো।
-কি বলছো ইসলাম ভাই!
-সত্যি বলছি নিরঞ্জনদা, আজ ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়, আমি যাই কলকাতায়। ওর অনেক সম্পত্তি ওরা বেনামে ভোগ করছে। ওর বাবা খুব ভালো লোক ছিলেন, মা টা ভালো নয়।
-থাক ও সব কথা। যা বলছিলাম শোনো।
-হ্যাঁ , বল।
-আমার কতকগুলো স্বপ্ন আছে। আমি তোমাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। এই মুহূর্তে তোমাদের তিনটে বিষয়ে বলছি।
এক- আমাদের এই তল্লাটে কোনো রাইস মিল নেই, আমি চিকনাকে দিয়ে একটা ছোটো খাটো মিনি রাইস মিল চালু করেছি, কিছুদিন হলোএটাকে বড় করবো। এতে আমি মিত্রা চিকনা আর নীপাকে রেখেছি।
দুই- বাজারে একটা জায়গা দেখেছি, ইসলাম ভাই দেখে এসেছে। ওর পছন্দ। আমি একটা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চাই। এতে থাকবে তুমি, মিত্রা, ছোটোমা, বড়োমা, দাদা, মল্লিকদা, ইসলাম ভাই
তিন- তুমি আমাকে এইখানে বাস রাস্তার ধারে ৩০০ একর জমি জোগাড় করে দেবে, পয়সা যা লাগবে দেওয়া যাবে। সেখানে একটা কৃষিখামার তৈরি করবো সেখানেও তোমরা সাতজনে থাকবে। বলো এবারে তোমাদের বক্তব্য।
-তুই থাকবি না কেনো। বড়মা বললো।
-বেশ কথা বললে, আমি খাতা কলমে নেই কিন্তু আমি তো থাকছিই।
-তোর কথা বুঝি না।
নিরঞ্জনদা হাসলো। ইসলাম ভাই হাসছে।
-তুই অনেক বড় খেলা খলতে চাইছিস। ইসলাম ভাই বললো।
নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই-এর কথায় সায় দিলো।
মিত্রা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই বড়মাকে জড়িয়ে ধরলো।
-আজকের রাতের মেনুগুলো দুর্দান্ত বুঝলে, আমি কিন্তু তোমার পাশে এখন থেকে বলে রেখছি।
বড়মা ওর দিকে তাকালো, হেসে ফেললো। অনি কোথায় যাবে।
-ও ছোটোমার পাশে।
-ঠিক আছে তুই বোস এখন।
নীপা চা নিয়ে এসেছে। মিত্রা ওর কাছে গিয়ে বললো
-তুই ঢেলে দে আমি দিয়ে দিচ্ছি। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মাছের বড়া তোর ভাগের একটা আসার সময় খেয়ে নিয়েছি।
আমি হাসলাম, মাছের বড়া দিয়ে চাটা বেশ ভালো জমলো। মিত্রা বললো
-বুবুন তোরা কথা বলনা আমি ওই বাড়িতে যাই।
আমি ওর দিকে তাকালাম, যা বেশি খাস না শরীর খারাপ করবে।
-কই খেলাম বলতো, বিকেল থেকে কিছু খাই নি।
-ঠিক আছে খা সহ্য করতে পারলে ভালো।
ও নীপা বেরিয়ে গেলো।
নিরঞ্জনদা চায়ে চুমুক দিলো।
-টাকা পাবি কোথায়।
-ভূতে জোগাবে। নিরঞ্জনদা হাসলো।
-ওই তোর এক কথা। বড়মা বললো।
-টাকা না থাকলে কি আমি এগুলো চিন্তা করি।
-বেশ তুই থাকবি না কেনো।
-আমি দাদাকে কলকাতায় রাখতে চাই না। দাদা মাসে সাতদিন কলকাতায় থাকবে, আর বাকি কটা দিন এখানে থাকবে। তুমি আর কিছু বলবে। দাদাকে সরাতে পারলে তোমরাও চলে আসবে।
-কেনো সরাতে চাইছিস।
-দাদা মানসিক ভাবে ক্লান্ত, মুখে কিছু বলে না।
বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-বলতে পারো কাজের ফাঁকে এটা রেস্টের জায়গা।
-৩০০ একর জায়গায় কি করবি।
-বলতে পারো একটা আধুনিক গ্রাম বানাবো, সেখানে গোয়াল ঘর থাকবে পোলট্রি থাকবে আধুনিক রেস্তোরাঁও থাকবে। আমার ৩০০ একর জায়গার মধ্যে ১০০ একর জল থাকবে।
-আমি বুঝতে পারছি তুই কি করতে চাইছিস। কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কনসেপ্টটা?
-এখানকার সুদখোরগুলোর পেটে লাথি মারবো বলতে পারো।
নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো।
-গ্রামের রাজনীতি তো বুঝিস।
-পাবলিক পাশে থাকলে কে আসবে বলোতো।
-সেটা ঠিক।
-তোর ব্যাঙ্কে কে এ্যাকাউন্ট খুলবে এই গ্রামের লোক, এরা দিন আনে দিন খায়।
-আমি প্রথমে লোন দেবো, যাদের লোন দেবো তারাই এ্যাকাউন্ট খুলবে। দেখো মান্থলি ফাইভ পার্সেন্ট সুদের থেকে তো কম পাবে। তাছাড়া প্রথম প্রথম ছোট ছোট লোন দাও এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার পযর্ন্ত তারপর রিকভার হলে বড় লোন। তোমাদের সরকার কৃষি লোন কতো দেয়। তার হেপা কতো বলোতো। যে ছেলেগুলো এই গ্রামে পরে পরে নষ্ট হচ্ছে তাদের কাজে লাগাতে পারবো তো।
-তুই অনেক বড়ো স্কিম করেছিস।
-তা বলতে পারো। আমি ইমপ্লিমেন্ট করবো, তোমরা সামলাবে।
-আমি পার্টি ছেড়ে কি করে সময় দেবো বলতো।
-তুমি চাওনা এখান থেকে তোমার সিট বারুক।
-তা চাই।
-তাহলে তোমায় কাজ করতে হবে। এটা একটা হাতিয়ার হিসাবে ধরো না। এখনো তিনবছর বাকি আছে। আমি তোমায় বলছি, দাঁড় করিয়ে দেবো। তুমি অন্যান্য জায়গায় ব্রাঞ্চ ওপেন করো তারপর একটা সমবায় আন্দোলন করো, কেউ দাঁত ফোটাতে পারবে না। আমি তারপর একদিন কাগজে গল্পটা লিখে দেবো। দেখবে সেন্ট্রাল থেকে তুমি অনেক সাহায্য পাবে।
নিরঞ্জনদা হাসছে।
-তোর মাথায় আর কি কি আছে বলোতো।
-সাতদিন পরে বোলবো। কলকাতায় যাই পরশুদিন। ওখানে আমার ছেলেপুলেগুলোর সঙ্গে একটু কথা বলি তারপর বলবো
-আমি কবে যাবো। ইসলাম ভাই বললো।
-তোমাকে যেদিন যেতে বলবো সেদিন যাবে
-ওরে আমার কিছু কাজকর্ম আছে।
-মাথাতো অনেক খাটিয়েছো, এখান থেকে অপারেট করতে পারছো না।
-করছি তো।
-আরো কয়েকদিন করো। আমি গিয়ে একটু হাওয়া বুঝি।
-তোর মিঃ মুখার্জী সুবিধার লোক নয়।
-দেখো ইসলাম ভাই আমি বেড়ালকে রান্নাঘর দেখাই আবার রান্না খাবারে বিষ মিশিয়ে রাখতে পারি বেড়াল জানতেও পারবে না।
-অনি! ছোটোমা বললো।
আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম
-ভাবছো অনি কি বস্তু। আমি ধর্মনীতি রাজনীতি দুটোই করি। গীতা পরো সব বুঝতে পারবে।
বড়মা আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছে।
-জানিস আমি ভাবছি ঘন্টা খানেক আগের অনি আর এই এখনকার অনির মধ্যে কত পার্থক্য।
-ঠিক বলেছো নিরঞ্জনদা, তুমি ঘন্টা খানেক আগে ভেতরের অনি দেখেছো, এখন তুমি বাইরের অনিকে দেখছো। আমি ভীতর আর বাইর দুটো সত্বাকে কখনই এক হতে দিই না। বলতে পারো এ শিক্ষাটা দাদার কাছ থেকে পাওয়া।
-তুই তো কালকে আমার যাওয়া বন্ধ করে দিলি। ভেবেছিলাম কালকে সকালে পালাবো। এখন দেখছি পালানো যাবে না।
-ঝেঁটা মারি তোর মুখে লজ্জা করে না তোর, কয়েক ঘন্টাক জন্য তোকে কে আসতে বলেছে।
সবাই হেসে ফেললো।
-তুমি বুঝছো না দিদি।
-ঢং রাখ, ছেলেটা কথা বলছে তার উত্তর দে।
-আমি কি উত্তর দেবো। ও সব প্ল্যান প্রোগ্রাম করে রেখেছে, আমি না বললেও ও করবে হ্যাঁ বললেও করবে। ওর এ্যাডামেন্টটা লক্ষ করেছো।
আমি মুখ নীচু করে আছি। ইসলাম ভাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-তোর কাছে রেডি ক্যাশ আছে। নিরঞ্জনদা বললো।
-কতো।
-লাখ দশেক টাকা।
-এখুনি হবে না, কালকের দিনটা সময় দাও পরশুদিন অফিস থেকে নিয়ে চলে আসবো।
-একটা কথা বলবো অনি। ইসলাম ভাই বললো।
-বলো।
-টাকাটা যদি আমি দিয়ে দিই।
-তুমি কি এতো টাকা ক্যারি করছো নাকি।
-জানিনা তবে মনে হয় রতন এর বেশিই আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওকে তো বলি নি কোথায় যাবো। খালি বললো ফোন করে দেবে পৌঁছে দেবো। তা এখানে এসে যা দেখছি রতনের সাধ্য নেই পৌঁছায়, আর এখানে খরচ করার জায়গাই বা কোথায়, জিলিপি খেতে গেলাম পয়সা লাগলো না।
-তোমার পরিচয় ওরা জানে নি তো।
-না এখনো গোপন আছে, তবে জানিনা জেনে ফেলবে হয়তো।
-নীপা।
-না। যদি মিত্রা বলে না থাকে।
-ওটা মিত্রা করবে না। এসব দিকে ওর মাথাটা একটু বেশি কাজ করে, আরে বাবা ব্লাডটা আছে তো। তাহলে ওই সময় ও তিনশো ষাট ডিগ্রী ঘুরে যেতো না। ওর জেদ প্রচন্ড বোঝো না। এমনি ঠিক আছে, খেপে গেলে ডেঞ্জার, নীপা দেখেছে সেই বারে।
-ও তোর জিনিষ তুই বুঝবি।
-সে তো বলবেই কাজ গুছিয়ে নিয়েছো না প্ল্যান করে।
ছোটোমা আমার কানটা ধরে নেড়ে দিলো।
-আঃ লাগবেরে ছোটো।
-দেখলি মুন্না, নিজে ধরলে কিছু না আমি ধরলে লাগবে।
নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই হাসছে।
চল খাওয়া দাওয়া করি কাল সকালে দেখা যাবে, বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা পরছে।
কি হলো বলবি তো। বড়মা বললো।
অনি যা বললো তাই হবে।
তোর দাদাকে ফোন করে জানা।
আরে বাবা জানাবো খোন। এখনো অনেক সময় আছে, নিরঞ্জনদা ঘড়ির দিকে তাকালো, বাবাঃ সাড়ে দশটা বাজে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওরা সবাই উঠলো। একসঙ্গে এ বাড়িতে এলাম।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 22-02-2022, 09:40 PM



Users browsing this thread: