20-02-2022, 01:20 PM
আগের পর্বের কিছু অংশ......
মেয়েকে তুলে দেয় ছেলেটার হাতে? আমার কোন চাওয়া নেই? মানে না চাইলেও ওর হাতে থাকতে হবে আমাকে? আমার ঘর টা সুদ্দু রাকার হয়ে গেল? ও চাইলেই আমাকে আর ছেলেকে যেখানে চাইবে নিয়ে যেতে পারে? জোর করলেও মা কিছু বলবে না আমার হয়ে? আমি তো কিছু বলতে পারব না আর। ছেলের সামনে রাকা কে কিছু বলব না কথা দিয়েছি আমি। এ কেমন নিয়ম রে বাবা। মেয়েদের এতো ঝামেলা থাকে? উফফ কেন যে বিয়ে টা করতে রাজী হলাম মরতে।
পর্ব ২৩
মায়ের ভাবনা আর রাকার ভাবনা যদি একি দিকে যায়? যে আমি ওর হয়ে গেলাম? আমার সব কিছু ওর হয়ে গেল? ওরে বাবা ও তো তবে ওই সব ও করতে চাইবে। মানে শারীরিক ব্যাপার স্যাপার!!!! মাইরি বলছি খুব ঘেন্না পাচ্ছি এবারে আমি ওই সব ভেবে। নিজেকে প্রবোধ দিলাম, না না সেটা হবে না। সেদিনে রাতে ছাদে ওর চোখ যা বলেছিল, আর মা যা চাইছে, দুটো এক না। কিন্তু স্বামী কেন? হাসব্যান্ড বলা যায় না? বা বর। স্বামী টা শুনলেই কেমন মনে হয় সাদা কালো একটা সময়। স্ত্রী পদসেবা করছে, আর স্বামী স্ত্রীর সেবা ভোগ করছে। ইশ। না আমি ফেমিনিস্ট নই, কিন্তু এটা বাড়াবাড়ি। আমার মা তো আধুনিকা। তাতেও মা এমন ভাবে। গরু কে জিজ্ঞাসা করব একবার। ও কি ভাবে, সেটা জানব। বলতে চাইছি সবাই যদি একই রকম ভাবে, আমাকেও সেই ভাবেই মানতে হবে। আলাদা হতে চাইনি বলেই তো,মেয়ে হয়েছিলাম। আলাদা হয়ে, টিভি তে ইন্টারভিউ দেবার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
খুট! আওয়াজ টা পেয়েই দেখি, রাকা ঢুকল ঘরে। মনের মধ্যে চলছে, মায়ের কথা গুলো। এই শুয়োর নাকি আমার স্বামী। না মানে আমার বর। দেখলাম, ধুতি পাঞ্জাবী ছাড়ে নি তখনো ও। ঘরে নাইট ল্যাম্প জ্বলছিল। ছেলে ঘুমিয়ে গেছে। লাইট তো আর জ্বালব না আমি। ও বাইরে আলোর থেকে এসে কিছুই বুঝতে পারছে না। সোজা আমার দিকে হেঁটে আস্তে লাগল। আরে! ধাক্কা লেগে যাবে তো। রাতকানা নাকি? আজব ঢ্যামনা। গালি টা আমি ওর থেকেই শিখেছিলাম। আমি আটকালাম ওকে।
- ব্যস এখানেই থামলে ভাল হয়।
ও থেমে গেলো। আমাকে বলল
- ও তুই এখনো ঘুমোস নি?
উত্তর দিলাম না কথার। ওর সাথে ওই সব খেজুরে গল্প করার ইচ্ছে বহুকাল আগেই আমার শেষ হয়ে গেছে। লাইট টা জ্বেলেই দিলাম। উফ আবার হাঁ করে চেয়ে রইল আমার দিকে। আমি চুপ করে ছিলাম, ওকে পাত্তা না দেবার ভঙ্গী তে। ওর বুদ্ধি নেই, গান্ডু টা ভাবল জেগে আছি মানে ওর খিদমৎ করতেই জেগে আছি আমি। টিপিক্যাল ছেলে মনস্ক। বলল,
- এই রে বাড়ি গেলাম আর কিছু আনলাম না। রাতে এই পরে তো শুতে পারব না!
আরো রেগে গেলাম। বলা ভাল, মনে হলো ফাঁদে পরে গেলাম আমি। কি করব আর, আমি চোখের ইশারা তে বিছানায় রাখা ওর রাতের পোশাক টা দেখিয়ে দিলাম। ও বুঝল না, বলল,
- কি??
ধুর বাবা, মানে আমাকেই বলতে হবে, এই তোর রাতে পরার পোশাক। বলবই না বাল। আমি আবার ইশারা করে দিলাম ওকে। কথা বলব না বলব না করে বলেই দিলাম,
- মা দিয়ে গেছে। এই টা পরে রাতে শোয়া যেতে পারে।
ও প্যাকেট টা খুলে দেখল আর খুশী হয়ে গেলো। ঘরে মায়ের উপস্থিতি কল্পনা করে বলল মনে হলো,
- ওয়াও, লাভ ইউ আন্টি।
কুত্তা টা ওখানেই সব খুলে চেঞ্জ করতে যাচ্ছিল। আমি রুখে গেলাম একেবারে। কোন সেন্স নেই। আমার সামনে সব খুলে এই গুলো পরবে? রে রে করে তেড়ে গেলাম আমি,
- না না না না না না,এখানে না – তারপরে হাত দিয়ে ইশারা করে দিয়ে বললাম – চেঞ্জ টা বাইরে।
ও থেমে গিয়ে আমাকে দেখে, প্যাকেট টা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। ও তখন দরজার কাছেই। আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,
- আন-সিভিলাইজড একটা।
ও তাকিয়েও কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আমি ততক্ষনে ছেলেকে মাঝ খানে শোয়ালাম। এসি টা কে ২৬ এ করে দিলাম। ফ্যান টা হালকা চালিয়ে দিলাম। ওকে মাঝে দিয়ে, আমি দেওয়ালের দিকে শোব আর রাকা মেঝের দিকে। ছেলের যে দিকে রাকা শোবে, সেদিকে পাশ বালিশ টা দিয়ে দিয়েছি। আমার শুতে বেশী জায়গা লাগে না। ছেলেকে আমার দিকে টেনে নিয়ে এলাম একটু। অনেক টা জায়গা আছে ওদিকে। একটাই তো রাত, ম্যানেজ করে নেব আমি। সমস্যা একটাই ছেলে চক্কর খায় সারা রাত। ততক্ষনে ঢুকল রাকা।
ছ্যাঃ, যা পছন্দ করি না আমি, সেই ভাবেই ঢুকল, খালি গায়ে, প্রায় পুরো থাই টা বের করে ঢুকল। সারা গায়ে জল। তোয়ালে দিয়ে মুছছিল ঘরে এসেও। মনে হলো ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এল। মা যে কেন এতো ছোট শর্টস কিনল কে জানে। এ তো এক চুল এদিক ওদিক হলেই ওর সব বেরিয়ে আসবে!!!!!
আমি তো কথা বলছি না। ও ঘরে ঢুকতেই আমি নেমে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। জল নিতে ভুলে গেছিলাম। নীচে থেকে জল নিয়ে আসি। বাইরে বেরিয়ে অবস্থা দেখে আমার রাগে সাড়া শরীর জ্বলে গেলো একেবারে। দেখলাম, পাঞ্জাবী টা উপরের ডাইনিং এর সোফা তে প্রায় ছুঁড়ে ফেলা। পাঞ্জাবীর বডি টা সোফার উপরে আর হাত দুটো উল্টো করে নীচে ঝুলছে। ধুতি টা রেডিমেড। সেটা সোফার সামনের কার্পেটে জাস্ট ছেড়ে রাখা।সেখানে জড়ো হয়ে আছে সেটা। সাদা গেঞ্জি টা মনে হয় ছুঁড়েই দিয়েছিল, সেটা সোফার কোনে জাস্ট ঝুলছে। ঘামে ভেজা ,সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।এই সব দেখে, নিজেই নিজের হাত দুটো কে শক্ত করে মুঠো করে ধরে রাগ কমাচ্ছি। আর সেই সময়েই মা দুটো বোতলে জল নিয়ে এলো উপরে। এসেই আমাকে বলল,
- যাক তুই আছিস বাইরেই। ভালই হল। জল আনিস নি তো। দিতে এলাম। ঘরে রাকা আছে, হুশ করে তো আর ঘরে ঢুকে যেতে পারি না। ধর ধর। গল্প করছিলাম নীচে।
মা কে দেখে আমার মধ্যে রাগ টা কেটে গিয়ে, একটা অসহায় ভাব এলো। মুখ টা কাঁদা আর রাগের মিশিয়ে, হাত দিয়ে ইশারা করে, ডাইনিং এ ছড়িয়ে থাকা মায়ের দেওয়া দামী ধুতি পাঞ্জাবির হাল দেখালাম মা কে। মা দেখল, কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিল না। বলল,
- গুছিয়ে রেখে দে। গেঞ্জি টা কে জল কাচ করে দে শুধু। ঘেমে ভিজে গেছে একেবারে।
- মানে? আমি করব? আমি গুছিয়ে রাখব? এই রকম ইতর ছেলের সাথে কেউ থাকতে পারে না একসাথে। তুমি ব্যস ওকে কাল থেকে ওবাড়িতে থাকতে বলবে।
মা খুব ক্যাজুয়েলি বলল,
- হ্যাঁ আর কে করবে, তোর বর আর ছেলের জিনিস পত্র তোকেই গুছিয়ে রাখতে হবে। আর কে রাখবে? না হলে রাকা কে শেখা। এতো রাতে তো আর হবে না। একদিনে এই সব হয় ও না।
বলতে বলতে মায়ের মুখ টা আবার অবজ্ঞা থেকে রাগের দিকে চলে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমাকে,
- আমার মরন নেই আমি ওকে বলব ওবাড়িতে থাকতে? আমার জামাই যতদিন খুশী আমার বাড়িতে থাকবে।
কি আর বলব, নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। নোংরা একদম বরদাস্ত হয় না আমার। মা ওকে যেতেও বলবে না আর আমাকেই এই সব করে যেতে হবে। আমার ঘরে প্রতিটা জিনিস একেবারে ঠিক ঠাক গোছানো থাকে। আমার ছেলেকেও আমি সেভাবেই শেখাচ্ছি। আমার কাজ নাকি অতো বড় একটা ছেলেকে এই সব শেখানো? দামড়া বুড়ো একটা। মাথায় হাত চলে গেছিল আমার। মা যেন পাত্তাও দিলো না আমার এই অসহায়তা কে, বিরক্ত হয়ে বলল,
- আরে ধর ধর জলের বোতল দুটো। আমার আর ভাল লাগছে না। রাকার মায়ের সাথে গল্প করছিলাম একটু শান্তি তে, তাও এই মেয়ের জ্বলনে হবে না। ধর!!!!!
বলে আমি যেখানে বসে ছিলাম সোফা তে মাথায় হাত দিয়ে, তার পাশে বোতল দুটো রেখে দিয়ে প্রায় দৌড় দিল মা। বলে উঠলাম আমি,
- ছেলের জল টা?
সিঁড়ি থেকেই মা জবাব দিলো,
- আগেই রেখে এসেছিলাম। ডিভানের পায়ার কাছে আছে। খুজে নে।
কি আর করব? একটা বড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে পড়লাম। ধুতি টা কে গোছালাম। পাঞ্জাবী টা ভিজে ছিল ঘামে। কেমন একটা টক টক গন্ধ, এখনি মেলে না দিলে সকালে খুব বাজে গন্ধ বেরোবে। ঘেন্না নিয়েই, মিলে দিলাম সেটা ব্যাল্কনি তে। গেঞ্জি টা এতো ভিজে ছিল মনে হলো, নিংড়ে দিলে জল বেরোবে। বাঁ হাতে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে বালতি তে দিয়ে জলের কল খুলে দিলাম। মাথার উপরে দেখলাম, একটা সাদা জাঙ্গিয়া টাঙান। ইইহহহহহহহ। ছিঃ। এটাকেও কাচেনি ও? মানে ও যে শর্টস টা পরে আছে, সেটার তলায় কিছু নেই? উফ আর পারছি না। এই রকম যবনের সাথে থাকাও সমস্যার।ভাবলাম গেঞ্জি টা কাচব কিন্তু জাঙ্গিয়া কাচতে পারব না আমি। অঞ্জনা কি কেচে দিতো? ঘেন্না লাগত না ওর? কি জানি বাবা।
জল কাচ করে দিলাম গেঞ্জি টা। নিংড়ে মেলে দিলাম ব্যাল্কনি তে। হাত মুখ মুছে ঘরে এলাম। ঘরের গন্ধ টাই বদলে গেছে। এসি চললে একটা গন্ধ থাকে। আমার ছেলের জামা কাপড়, গায়ের একটা মিষ্টি গন্ধ থাকে। আজকে গোলাপের একটা মিষ্টি গন্ধ রয়েছে। সাথে ছেলেদের পারফিউমের সাথে মেশানো হালকা ঝাঁঝালো ঘামের গন্ধ যেন ঘরে। ঘরে ঢুকতেই গন্ধ টা ধরল আমাকে যেন। ঝিম ধরে গেল মাথায় গন্ধ টা তে একটা। না এমন না যে অসহ্য কিছু। কিন্তু নতুন গন্ধ। একটু কেমন কেমন লাগছিল। কিন্তু শ্বাস নিলে ঝিম ধরা ছাড়া আর কোন ফিলিং আসছিল না আমার।
দেখলাম শুয়ে পরেছে রাকা। ঘুমোয় নি। আমাকে দেখেই বলল,
- কি রে এত দেরী হল যে তোর। রাত হয়েছে ঘুমো এবারে।
শালা খচ্চর কোথাকার। বাইরে টা একেবারে নরক করে রেখে এসেছিল। নিজের বালিশ টা ঠিক করতে করতে ভাবলাম, আমি ঘুমই কি না ঘুমোই তোকে দেখতে হবে না। সাড়া দিলাম না যথারীতি। ছেলেকে ঢাকা দিলাম। শুতে গিয়ে ভাবলাম, খালি গায়ে শুয়ে আছে রাকা। এ সি চলছে। ঠান্ডা লেগে গেলে? সামনেই মায়ানমারের সাথে খেলা আছে বলছিল না? না না আমার কিছু না। কিন্তু খেলা আছে বলছিল তাই আরকি। আচ্ছা, ও কি ওমনি ই? নাকি অঞ্জনা ওর এই সবের খেয়াল রাখত? ভিজে গায়ে এল ঘরে, মুছেই এ সি র তলায় শুয়ে পড়ল। বলব ওকে টি শার্ট টা পরে নিতে? উফ!! সেই প্রতি পদে পদে আমি বউ এর মতন ভাবছি। মা আমার কনফিডেন্স টা একেবারে শেষ করে দিয়ে গেল। কি যে সব বলে গেল তখন, আমার ছেলে আর বর কে আমার হাতযশেই ভাল রাখতে হবে, গোছের কিছু একটা বলেছিল। আবার ভাবলাম বউ কীসের? আমি যদি ছেলেও থাকতাম, ওকে তো বলতাম যে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে। কত বার আমি আমার বাড়ি থেকে পড়ে টরে রাতে বেরোনর সময়ে আমার মাফলার ওকে দিয়েছি। ও মাথায় জড়িয়ে পরে বাড়ি গেছে। না না এটা বললে বউ হয়ে যায় না কেউ। টি শার্ট টা মাথার কাছে রেখে ও উল্টো দিকে ফিরে শুয়েছিল। বলেই দিলাম,
- এ সি চলছে, টি শার্ট টা পরে নেওয়াই ভাল।
ও আমার আওয়াজে সটান ঘুরে গেল আমার দিকে। বলল,
- অ্যাঁ।
আবার টেলিগ্রাফিক ভাষায় বললাম আমি নিজের আঙ্গুল টা এসি র দিকে দেখিয়ে,
- এ সি… শার্ট মাস্ট পুট অন।
খানিক চেয়ে রইল আমার দিকে পানকৌড়ির মতন, মুখ টা উঁচিয়ে। তারপরে একেবারে পাত্তা না দেবার ভঙ্গী তে মুখ টা বেঁকিয়ে বলল
- ও, কিসু, হবে না , চিন্তা নেই।
তারপরে যেমন এদিকে ঘুরে গেছিল, তার থেকেও তাড়াতাড়ি ও দিকে ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল।বাল, কে তোর চিন্তা করছে? কিন্তু আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এতো কিছুর পরেও ও আমাকে অবজ্ঞা করে উল্টো দিকে শুয়ে পড়ল। এতো সাহস পায় কোথা থেকে? হেড মিস্ট্রেস আমি। এই রকম অবাধ্য ছেলেদের মনে হয় কান ধরে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখি। জাস্ট দাঁত কিড়মিড় করছিলাম আমি আর স্থির ভাবে ওর দিকে চেয়েছিলাম। কি জানি ও হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিল। আবার সেই রকম স্প্রিং এর মতন ঘুরে গিয়ে দেখল আমি চেয়ে আছি ওর দিকে রেগে। কোন কথা না বলে, টি শার্ট টা হাতে নিয়ে পরতে পরতে, নিচু গলায় বলল,
- পরছি তো, অতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।
টি শার্ট পরে নিয়েই উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল আগের মতন। মনে হলো যেন শুনতে পেলাম
- বদলায় নি একটু ও। হিটলার ই আছে।
আমিও আর কিছু বললাম না। খামচা টা চুল থেকে খুলে ড্রেসিং টেবিল এ রেখে দিলাম, আর খোলা চুল টা বালিশের পিছনে করে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হাত বাড়িয়ে লাইট টা অফ করে দিলাম আমি বেড সুইচ দিয়ে। ছেলেকে বুকে টেনে নিলাম আমি।
ভাবলাম, কালকে ও নিজের বাড়ি গেলে বাঁচি। এখানে থাকলে সারা সময় টা এই সব বাঁদরামো করবে আর আমাকে কই কই করে ছুটে বেড়াতে হবে বাপ ছেলের পিছনে। ছেলের টা আমি খুশী মনেই করি, কিন্তু ওই বাঁদরের জন্য এই সব করার ইচ্ছে আমার নেই। এই ভাবে প্রতি মুহুর্তে ওকে নিয়ে বাঁচা সম্ভব নাকি? মেয়ে হওয়া তো সত্যি খুব কঠিন! তার থেকেও কঠিন বউ হওয়া। আর তার থেকেও কঠিন এই রকম একটা বাঁদর ছেলের পাল্লায় পরা। বেচারী অঞ্জনা কি করত কে জানে ওকে নিয়ে? কিছুই কি নিজে করতে পারে না? শুধু খেলা ছাড়া কিছুই শেখে নি যেন। ওর খাওয়ার খেয়াল রাখা, ওর শোওয়ার খেয়াল রাখা, ওর জামা কাপড়ের খেয়াল রাখা, ওর হাইজিনের খেয়াল রাখা, সব করতে হবে? তা না তো কি, জাঙ্গিয়া টাও কাচতে পারে না নিজে? ভেবেছিলাম ওকে হাড়ে হাড়ে আমি চিনি, থাকতে পারব। আজকে বুঝলাম, ভালবাসা কাউকে, আর তাকে নিয়ে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। একসাথে থাকলে তার যাবতীয় দোষ কেও ভালো বাসতে হয়। তাও আবার আমার মতন ছেলে থেকে মেয়ে হওয়া একটা মেয়ের জন্য, এটা যে কত বড় প্রবলেম, সেটা আমাকে এসে কেউ জিজ্ঞাসা করুক। নাহ আমার ছেলেকে এই সব কিছু শেখাব আমি। যেন ওর বউ বিপদে না পরে। ওর বউ যেন আমার মতন না ভাবে কোন দিন ওকে নিয়ে। জড়িয়ে ধরলাম আরো ছেলেকে বুকের কাছে। কপালে চুমু খেয়ে, ছেলেকে মনে মনে বললাম,
- তোর জন্য না হয় এটাও মেনে নেব আমি।
কিন্তু ও যদি বলে আমাকেও নিয়ে যাবে তাহলে? আর ওখানে গেলে তো ওর সাথেই শুতে হবে আমাকে। ওরে বাবা!! ওই বাড়িতে যে বিছানা টা আছে সেটা তো ছোট আরো। শুনতে পাচ্ছি ওর নিঃশ্বাসের শব্দ। কেমন একটা উত্তেজনা হচ্ছে আমার। খুব বেশী দিন তো নয়, দশ বছর আগেও আমি আর ও বিছানা ছাড়া সব ই শেয়ার করেছি। মাঝের ছ টা বছর এতো দূরে হয়ে গেলাম একে অপরের যে ওর উপস্থিতি টাও আমি মানতে পারছি না। আমাকে মা আর গরুর সাথে কথা বলতে হবে। দরকারে আন্টির সাথেও কথা বলব। বিয়ে যখন করলাম, তখন এগিয়ে যাবার রাস্তা আমাকেই খুঁজতে হবে। ওই কুত্তা টার কোন কিছু যায় আসবে না। ও জানে আমি শিভ কে ছেড়ে থাকতে পারব না। কাজেই ওর তরফে আমার মতন করে চলার কোন চেষ্টা থাকবে না আমি শিওর। ওকে মানিয়ে নিতে আমাকেই চেষ্টা করতে হবে ছেলের মুখের দিকে চেয়ে। জানিনা কালকে সকাল থেকে কত বাধ্যতা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
রাতে আর ভাবার অবকাশ ও ছিল না। সব চিন্তা সব ভাবনা তখনকার মতন আমার মিটে গেছিল। ছেলে আমার এখন। ঘুমিয়ে গেলাম একেবারে মরার মতন। ঘুম ভাঙল একেবারে সকাল সাত টায়। ধড়মড় মরে উঠে বসলাম আমি। ইশ এসি টা বন্ধ করিনি। ছেলের ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ছেলের মুখ দেখলাম, আমার দিকে ফিরে ঘুমোচ্ছে নিশ্চিন্তে। রাকার দিকে চোখ গেল, উল্টো দিকে ফিরে ঘুমোচ্ছে। নিশ্চিন্তেই ঘুমোবে আরকি। সারা রাত কি এক ভাবেই শুয়ে আছে নাকি? যাই হোক উঠে এ সি টা বন্ধ করে দিলাম। ফ্রেশ হতে গেলাম বাথরুমে। দাঁত মেজে মুখ ধুতে গিয়ে বাথরুমের আয়নায় দেখি, ঘুমের ঘোরে, হাত দিয়ে মনে হয় মাথার সিঁদুর টা কে টেনে দিয়েছি, একেবারে নাক অব্দি চলে এসেছে সেটা। কপালেও ভর্তি। নিজেকে তাকিয়ে দেখলাম। বেশ মিষ্টি লাগছে তো আমাকে! এক কালে ছেলে ছিলাম তো! তাই মেয়ে আমি টা কে এই ভাবে দেখে বেশ লাগল আমার। ভাবলাম রাকার দোষ নেই বিশেষ। যাই হোক ভালো করে সাবান দিয়ে মুখ টা ধুয়ে, মুখ থেকে কপাল থেকে সিঁদুর টা তুলে দিলাম। সিঁথির কাছ টা রইল। আমার চুল এত ঘন যে, সিঁথিও সরু। কোন রকমে ব্যাপার টা ম্যানেজ করে ঘরে এসে চুলে খামচা টা লাগিয়ে নীচে এলাম আমি। দেখলাম দুই মা উঠে পরেছে। গরুও উঠে পরেছে। আমি সাধারণত আসি না ছেলেকে একা শুইয়ে নীচে। কিন্তু রাকা শুয়ে আছে পাশে। তাই এলাম। গরুও তাই এসেছে। বাপি ভাই ঘুমোচ্ছে এখনো। শুনলাম এসে, অঞ্জনার ড্যাডি সবাই কে নিয়ে চলে গেছেন। মাকে বললাম,
- আমাকে ডাকলে না? ওনারা চলে গেলেন।
মা বলল,
- আমি ডাকতেই চাইছিলাম। কিন্তু স্মিতা দি বলল, থাক ঘুমোচ্ছে। ফোন করবে তোকে পরে।
- উম্ম বেশ। চা দেবে মা?
- আজকে গ্রীন ট খাবি না?
- না তোমাদের চা ই দাও খাই।
সবাই মিলে বসে চা খেলাম। গল্প হচ্ছিল গত কালের। আমাকে কত সুন্দর লাগছিল। খালি ওদের এই সব কথা। এই ছাড়া যেন আর কোন কথা নেই আমার মা আর আন্টি আর গরুর। ওরা বলছিল আমি শুনছিলাম। আমার ছেলে আর গরুর মেয়ের কথাও হচ্ছিল। কালকে আমার হাতে গরুর মেয়ে দুপুরে খেল, সেই নিয়েও এদের কথা শুরু হলো। গরু টাও এই সব ঘটনার, ঘন সমাপতনে কাল অব্দি কিছু টা ভেবলে ছিল। সকাল থেকে দেখলাম ফ্রেশ। আমার সাথে গায়ে গা লাগিয়েই কথা বলছে। কখনো ফিস ফিস করে আবার কখন আদর করে সবার সামনেই।
জানিনা আজকে সকালে মনে হল, আমি যে ওর দিদি এই ব্যাপার টা কে ও গর্বিত। মজার কথা, ওর শশুর বাড়িতে আমাকে কোন দিন ও নিজের মুখে যেতে বলে নি। আবদার করে নি যে দিদি প্লিস চল। ভাই কে ভাই ফোঁটায় নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে বলেনি কোনদিন, দিদি তুই ও চলে আয়, আমরা দুই বোনে একসাথে ভাই কে ফোঁটা দেব। ভাই খুব সকালে আমার থেকে ফোঁটা নিয়ে বোনের বাড়ি গেছে। বা আগের দিনে বোনের বাড়ি গিয়ে সকালে ফোঁটা নিয়ে এসে আমার কাছে নিয়েছে। আমি কিছু মনে করতাম না, কিন্তু আমার মা কাঁদত। যদিও মা বা আমি কোন দিন ই গরু কে বুঝতে দিই নি আমাদের কষ্ট টা। ভেবেছিলাম, ওই বুঝবে একদিন। বিশ্বাসে ছিলাম, এক ই মায়ের থেকে এসেছি আমরা। আমার মায়ের মন দুজনের ভিতরে। ওর একটু সময় লাগে বুঝতে। গরু যে!!
কিন্তু আজকে ক্ষনে ক্ষনে আমাকে জড়িয়ে ধরা দেখে বুঝলাম, ওর মনের মধ্যে যে ময়লা টা ছিল সেটা হয়ত বা সাফ হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবলাম, ছেলেকে এবারে তুলে নিয়ে আসি। খাইয়ে দি। তারপরে একটু পড়াতে বসাব। বালের বিয়ে তার জন্য মা আমাকে ছুটি নেওয়া করাল সাত দিন। রাকা ও যাবে প্রি ট্যুর ক্যাম্প এ। কবে যাবে কে জানে। সকালে উঠে তো আর দৌড়োয় না মনে হচ্ছে। প্রায় আট টা বাজে ওঠার নাম গন্ধ নেই কারোর। রাকা, শমিত, বাপি ভাই, আঙ্কল সবাই ঘুমোচ্ছে। তুলে দিতে হবে তো। কতক্ষন ঘুমোবে? মা কে বললাম
- ও মা শিভের আর স্বাতীর খাবার টা করে দেবে?
স্বাতী আমার বোনের মেয়ের ডাক নাম। মাকে জিজ্ঞাসা করেই বোন কে বললাম,
- তুই তুলবি তো মেয়েকে?
একসাথে দুটো জবাব এলো। মা আর বোন। মা বলল- হ্যাঁ বানাচ্ছি, আর বোন বলল,
- প্লিস দিদি, তুই খাইয়ে দিস। আমি আর দুদিন ওই দিকে যাব না। বড্ড জ্বালাচ্ছে খেতে গিয়ে ও। কালকে দুপুরে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।
আমি হাসলাম। বললাম,
- আমিই খাইয়ে দেব। তুই দুদিন এসেছিস রেস্ট নে।তুই শুধু ওকে তুলে নিয়ে আয়। শমিত আছে ঘরে না হলে আমি তুলে নিয়ে চলে আসতাম।
এই বলে উপরে এলাম। ঘরে ঢুকে দেখি, ছেলে আমার খোঁজে সরে এসেছে যেখানে আমি শুয়ে ছিলাম। দেখেই মন টা ভাল হয়ে গেল। ঘুমন্ত ছেলেকে আদুরে গলায় বললাম,
- আর মায়ের কাছে সরে এসে শুতে হবে না। আটটা বাজে, এখনো ঘুম? ওঠ সোনা।
ওর জামা কাপড় রাখার কাবার্ড থেকে জামা কাপড় বের করে ওর পাশে শুয়ে পরলাম। মাথায় হাত বোলালে জেগে যায়। আর ঘুমোনর সময়ে মাথায় পিঠে হাত বোলালে ঘুমিয়ে যায়। খানিক বাদেই পিটপিট করে চাইতে লাগল আমার দিকে। চোখ খুলে আমাকে দেখে একবার জড়িয়ে ধরা হয়ে গেল। আমি ওকে তুলে বাথ রুমে নিয়ে এসে, হিসু করিয়ে দিলাম। দাঁত মাজিয়ে ভালো করে ফ্রেশ করিয়ে ঘরে এনে, নাইট ড্রেস ছাড়িয়ে, বের করা ড্রেস পরিয়ে দিলাম। তারপরে কোলে তুলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখি বোন ও মেয়েকে কোলে নিয়ে নীচে যাচ্ছে।দুটো কে খাইয়ে দিলাম আমি। তারপরে আন্টি কে জিজ্ঞাসা করলাম,
- আন্টি তোমার ছেলে কখন ঘুম থেকে ওঠে গো। আগে তো উঠে পরত খুব সকালে। এখন এতো দেরী অব্দি ঘুমায়? সাড়ে আট টা বাজছে তো।
দেখলাম কোন সাড়া নেই আন্টির। রান্না ঘরে মায়ের সাথে কি যে করছে? আমি আবার বললাম
- ও আন্টি!!!!!! সাড়া দাও না গো!!
মা হাসি মুখে বেরিয়ে এলো আমার আওয়াজে। বলল
- ধিঙ্গী মেয়ে, জানিস না, মা বলতে হয় শাশুড়ি কে?
কি করে বলব? দুটো মা এখন। একজন কে ডাকলে দুজনেই সাড়া দেবে না? আমি এত্তো বড় জিব কেটে সোজা রান্না ঘরে। দেখলাম আন্টি হাসছেন। আমাকে দেখে একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন। মানে মা আর আন্টি মিলে যুক্তি করেই এটা করল। আমি পাত্তা দিলাম না। আমি সোজা জড়িয়ে ধরলাম আন্টি কে। আগেও ধরেছি, কিন্তু আজকে যেন কোন বাধা নেই আর। বললাম,
- দুজনে মিলে আমাকে লজ্জা দেওয়া না?
আন্টি আমার দিকে ফিরে আমার চিবুক ধরে হামি খেয়ে বললেন
- আমাকে মা বলতে পারবি না?
জড়িয়ে ধরলাম আন্টি কে। বললাম
- তোমাকে না বললেও, তুমি কি আমার মা নউ? এক দুদিন সময় লাগবে, ব্যস আর কিছু না। ক্ষমা করে দিও ততদিন আমাকে প্লিস!!! আচ্ছা বেশ শোনো, আচ্ছা মা তোমার ছেলে কখন ঘুম থেকে ওঠে?
- হাহাহাহাহাহাহা
আন্টি আর মা হেসে গড়িয়ে পড়ল ওখানেই। আমিও কম আনন্দ পাই নি, আন্টি কে মা বলে। আসলে আমার এতে কোন সমস্যা ছিল না। শশুর শাশুড়ি ছেলে শ্বশুরবাড়ি সব আমার কাছে খুব মনের মতন। সেখানে আমি একদম বউ হতেই চেয়েছি। কারন কাজ কর্ম, ভালবাসা, মমতা এই সবে তো আমার আপত্তি ছিলই না। আপত্তি ছিল, রাকা তে। সেটা একটা জায়গায় আটকে গেছে। রাকা কে দেখলেই, সব পুরোন কথা মনে পরে আমার। খারাপ গুলোই শুধু না এখন ভালো গুলো ও মনে পরে। আর সেগুলো মনে পরলেই মনে হয় ছিঃ ছিঃ, রাকা আমাকে মেয়ে হিসাবে মানতেই পারবে না। ওর কাছে তাই আমার এই মেয়েলি ব্যাপার গুলো এড়িয়ে চলতে চাইতাম। ততক্ষনে মা একটা দুটো কাপ প্লেটে চা করে রেডি করল। গরু দেখলাম ঢুকে, একটা কাপ প্লেট নিয়ে চলে গেল। আর বাকি কাপ প্লেট টা দেখিয়ে মা আমাকে বলল,
- যা দিয়ে আয়।
- কাকে? আরেক টা দাও। বাপি আর ভাই একসাথে শুয়েছে তো। একজন কে দিলে আরেক জন ও তো চাইবে।
- আরে কি মেয়ে রে বাবা, এটা রাকার জন্য। তোর বাপি ভাই কে আমি দিয়ে আসব।
- অ্যাঁ? সে তো ঘুমোচ্ছে।
- বেড টি খাবে ও, হলো? তারপরে আবার পারলে একটু ঘুমোবে। যা যা, তাড়াতাড়ি নিয়ে যা। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চা।
সামনে আন্টি আছেন। চেচাতেও পারছি না আমি মায়ের উপরে। দুজনের দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে দেখলাম, দুজনে বেশ মুড নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। উপায় নেই। কাপ প্লেট টা হাতে নিয়ে বেরোনর সময়ে বললাম
- এই সব কন্সপিরেসি তোমাদের দুজনের , আমি জানি সেটা।
বেরিয়ে আসার মুখে মা বলল আমাকে,
- ওকে তুলে, চা দিয়ে নীচে আসবি। তার আগে আলমারি থেকে একটা সাদা পাঞ্জাবী আছে আর পাজামা আছে সেটা দিবি ওকে। আর নীচে ডিম সেদ্দ করা আছে সেটা নিয়ে যাবি। দেরী করিস না।
উপরে যেতে যেতে ভাবলাম, ডিম সেদ্দ কেন আবার? গান্ডু টা দারুন খাতির পাচ্ছে তো? আর খাতির টা মা আমাকে দিয়েই করাচ্ছে। একেবারে রাজা গজা হয়ে গেছে যেন এ বাড়ির। আর আমি যেন দাসী বাঁদি। আবার গা টা জ্বলে উঠল আমার। এখানে ও থেকেছে আগে অনেক অনেক। তখন বেশী গুরুত্ব আমি পেতাম।ইভেন পরশু অব্দি পেয়েছি। মা তখন মানে ছোট বেলায় রাকাকে পছন্দ করত, কিন্তু সেটাই হতো যেটা আমি চাইতাম। পড়াশোনা করত না বলে মা কত বকেওছে ওকে। আমার ঘরে ঢুকে পরেছিল বলে, মা রেগেও গেছিল দু একবার। বা পরীক্ষার সময়ে আমাকে নিয়ে খেলতে চলে গেছিল বলে ও মা ওকে বকে ছিল। রাকা কিছু মনে করে নি, কিন্তু মা ওকে বেশ বকাবকি করত। মানে শাসন করত। আজকে এতো খাতির? আমার ই ঘর টাই ওর হয়ে গেল। চা নিয়ে ঢুকলাম ঘরে আমি। দেখলাম প্রায় উদোম হয়ে ঘুমোচ্ছে। এসি টা বন্ধ করে দিয়েছিলাম সকালেই। তাই টি শার্ট টা খুলে দিয়েছে। আর সেই ল্যাঙট এর মতন শর্টস টা যেন জাস্ট লেগে আছে ওর শরীরে। আমি চা টা টেবিল এ রেখেই, পাশে খোলা চাদর টা ঢেকে দিলাম ওর কোমরের নীচে টা। ইশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ওর পেনিস টা। কই কালকে রাতে তো বুঝতে পারিনি। এখন যেন কেমন বেশ বড় লাগছে আর মোটা। গুগলে সার্চ করা ছবি গুলোর সাইজ যেন। নজরে চলে এলে আমি কি করব? তাড়াতাড়ি আলমারি খুলে দেখলাম, একটা সাদা পাজামা পাঞ্জাবী আছে।কখন যে মা এই কেনাকাটি গুলো করল কে জানে? কপাল চাপড়াতে চাপড়াত, প্যাকেট টা বের করে বিছানায় রেখে দিলাম আমি সেটা।
মেয়েকে তুলে দেয় ছেলেটার হাতে? আমার কোন চাওয়া নেই? মানে না চাইলেও ওর হাতে থাকতে হবে আমাকে? আমার ঘর টা সুদ্দু রাকার হয়ে গেল? ও চাইলেই আমাকে আর ছেলেকে যেখানে চাইবে নিয়ে যেতে পারে? জোর করলেও মা কিছু বলবে না আমার হয়ে? আমি তো কিছু বলতে পারব না আর। ছেলের সামনে রাকা কে কিছু বলব না কথা দিয়েছি আমি। এ কেমন নিয়ম রে বাবা। মেয়েদের এতো ঝামেলা থাকে? উফফ কেন যে বিয়ে টা করতে রাজী হলাম মরতে।
পর্ব ২৩
মায়ের ভাবনা আর রাকার ভাবনা যদি একি দিকে যায়? যে আমি ওর হয়ে গেলাম? আমার সব কিছু ওর হয়ে গেল? ওরে বাবা ও তো তবে ওই সব ও করতে চাইবে। মানে শারীরিক ব্যাপার স্যাপার!!!! মাইরি বলছি খুব ঘেন্না পাচ্ছি এবারে আমি ওই সব ভেবে। নিজেকে প্রবোধ দিলাম, না না সেটা হবে না। সেদিনে রাতে ছাদে ওর চোখ যা বলেছিল, আর মা যা চাইছে, দুটো এক না। কিন্তু স্বামী কেন? হাসব্যান্ড বলা যায় না? বা বর। স্বামী টা শুনলেই কেমন মনে হয় সাদা কালো একটা সময়। স্ত্রী পদসেবা করছে, আর স্বামী স্ত্রীর সেবা ভোগ করছে। ইশ। না আমি ফেমিনিস্ট নই, কিন্তু এটা বাড়াবাড়ি। আমার মা তো আধুনিকা। তাতেও মা এমন ভাবে। গরু কে জিজ্ঞাসা করব একবার। ও কি ভাবে, সেটা জানব। বলতে চাইছি সবাই যদি একই রকম ভাবে, আমাকেও সেই ভাবেই মানতে হবে। আলাদা হতে চাইনি বলেই তো,মেয়ে হয়েছিলাম। আলাদা হয়ে, টিভি তে ইন্টারভিউ দেবার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
খুট! আওয়াজ টা পেয়েই দেখি, রাকা ঢুকল ঘরে। মনের মধ্যে চলছে, মায়ের কথা গুলো। এই শুয়োর নাকি আমার স্বামী। না মানে আমার বর। দেখলাম, ধুতি পাঞ্জাবী ছাড়ে নি তখনো ও। ঘরে নাইট ল্যাম্প জ্বলছিল। ছেলে ঘুমিয়ে গেছে। লাইট তো আর জ্বালব না আমি। ও বাইরে আলোর থেকে এসে কিছুই বুঝতে পারছে না। সোজা আমার দিকে হেঁটে আস্তে লাগল। আরে! ধাক্কা লেগে যাবে তো। রাতকানা নাকি? আজব ঢ্যামনা। গালি টা আমি ওর থেকেই শিখেছিলাম। আমি আটকালাম ওকে।
- ব্যস এখানেই থামলে ভাল হয়।
ও থেমে গেলো। আমাকে বলল
- ও তুই এখনো ঘুমোস নি?
উত্তর দিলাম না কথার। ওর সাথে ওই সব খেজুরে গল্প করার ইচ্ছে বহুকাল আগেই আমার শেষ হয়ে গেছে। লাইট টা জ্বেলেই দিলাম। উফ আবার হাঁ করে চেয়ে রইল আমার দিকে। আমি চুপ করে ছিলাম, ওকে পাত্তা না দেবার ভঙ্গী তে। ওর বুদ্ধি নেই, গান্ডু টা ভাবল জেগে আছি মানে ওর খিদমৎ করতেই জেগে আছি আমি। টিপিক্যাল ছেলে মনস্ক। বলল,
- এই রে বাড়ি গেলাম আর কিছু আনলাম না। রাতে এই পরে তো শুতে পারব না!
আরো রেগে গেলাম। বলা ভাল, মনে হলো ফাঁদে পরে গেলাম আমি। কি করব আর, আমি চোখের ইশারা তে বিছানায় রাখা ওর রাতের পোশাক টা দেখিয়ে দিলাম। ও বুঝল না, বলল,
- কি??
ধুর বাবা, মানে আমাকেই বলতে হবে, এই তোর রাতে পরার পোশাক। বলবই না বাল। আমি আবার ইশারা করে দিলাম ওকে। কথা বলব না বলব না করে বলেই দিলাম,
- মা দিয়ে গেছে। এই টা পরে রাতে শোয়া যেতে পারে।
ও প্যাকেট টা খুলে দেখল আর খুশী হয়ে গেলো। ঘরে মায়ের উপস্থিতি কল্পনা করে বলল মনে হলো,
- ওয়াও, লাভ ইউ আন্টি।
কুত্তা টা ওখানেই সব খুলে চেঞ্জ করতে যাচ্ছিল। আমি রুখে গেলাম একেবারে। কোন সেন্স নেই। আমার সামনে সব খুলে এই গুলো পরবে? রে রে করে তেড়ে গেলাম আমি,
- না না না না না না,এখানে না – তারপরে হাত দিয়ে ইশারা করে দিয়ে বললাম – চেঞ্জ টা বাইরে।
ও থেমে গিয়ে আমাকে দেখে, প্যাকেট টা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। ও তখন দরজার কাছেই। আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,
- আন-সিভিলাইজড একটা।
ও তাকিয়েও কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আমি ততক্ষনে ছেলেকে মাঝ খানে শোয়ালাম। এসি টা কে ২৬ এ করে দিলাম। ফ্যান টা হালকা চালিয়ে দিলাম। ওকে মাঝে দিয়ে, আমি দেওয়ালের দিকে শোব আর রাকা মেঝের দিকে। ছেলের যে দিকে রাকা শোবে, সেদিকে পাশ বালিশ টা দিয়ে দিয়েছি। আমার শুতে বেশী জায়গা লাগে না। ছেলেকে আমার দিকে টেনে নিয়ে এলাম একটু। অনেক টা জায়গা আছে ওদিকে। একটাই তো রাত, ম্যানেজ করে নেব আমি। সমস্যা একটাই ছেলে চক্কর খায় সারা রাত। ততক্ষনে ঢুকল রাকা।
ছ্যাঃ, যা পছন্দ করি না আমি, সেই ভাবেই ঢুকল, খালি গায়ে, প্রায় পুরো থাই টা বের করে ঢুকল। সারা গায়ে জল। তোয়ালে দিয়ে মুছছিল ঘরে এসেও। মনে হলো ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এল। মা যে কেন এতো ছোট শর্টস কিনল কে জানে। এ তো এক চুল এদিক ওদিক হলেই ওর সব বেরিয়ে আসবে!!!!!
আমি তো কথা বলছি না। ও ঘরে ঢুকতেই আমি নেমে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। জল নিতে ভুলে গেছিলাম। নীচে থেকে জল নিয়ে আসি। বাইরে বেরিয়ে অবস্থা দেখে আমার রাগে সাড়া শরীর জ্বলে গেলো একেবারে। দেখলাম, পাঞ্জাবী টা উপরের ডাইনিং এর সোফা তে প্রায় ছুঁড়ে ফেলা। পাঞ্জাবীর বডি টা সোফার উপরে আর হাত দুটো উল্টো করে নীচে ঝুলছে। ধুতি টা রেডিমেড। সেটা সোফার সামনের কার্পেটে জাস্ট ছেড়ে রাখা।সেখানে জড়ো হয়ে আছে সেটা। সাদা গেঞ্জি টা মনে হয় ছুঁড়েই দিয়েছিল, সেটা সোফার কোনে জাস্ট ঝুলছে। ঘামে ভেজা ,সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।এই সব দেখে, নিজেই নিজের হাত দুটো কে শক্ত করে মুঠো করে ধরে রাগ কমাচ্ছি। আর সেই সময়েই মা দুটো বোতলে জল নিয়ে এলো উপরে। এসেই আমাকে বলল,
- যাক তুই আছিস বাইরেই। ভালই হল। জল আনিস নি তো। দিতে এলাম। ঘরে রাকা আছে, হুশ করে তো আর ঘরে ঢুকে যেতে পারি না। ধর ধর। গল্প করছিলাম নীচে।
মা কে দেখে আমার মধ্যে রাগ টা কেটে গিয়ে, একটা অসহায় ভাব এলো। মুখ টা কাঁদা আর রাগের মিশিয়ে, হাত দিয়ে ইশারা করে, ডাইনিং এ ছড়িয়ে থাকা মায়ের দেওয়া দামী ধুতি পাঞ্জাবির হাল দেখালাম মা কে। মা দেখল, কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিল না। বলল,
- গুছিয়ে রেখে দে। গেঞ্জি টা কে জল কাচ করে দে শুধু। ঘেমে ভিজে গেছে একেবারে।
- মানে? আমি করব? আমি গুছিয়ে রাখব? এই রকম ইতর ছেলের সাথে কেউ থাকতে পারে না একসাথে। তুমি ব্যস ওকে কাল থেকে ওবাড়িতে থাকতে বলবে।
মা খুব ক্যাজুয়েলি বলল,
- হ্যাঁ আর কে করবে, তোর বর আর ছেলের জিনিস পত্র তোকেই গুছিয়ে রাখতে হবে। আর কে রাখবে? না হলে রাকা কে শেখা। এতো রাতে তো আর হবে না। একদিনে এই সব হয় ও না।
বলতে বলতে মায়ের মুখ টা আবার অবজ্ঞা থেকে রাগের দিকে চলে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমাকে,
- আমার মরন নেই আমি ওকে বলব ওবাড়িতে থাকতে? আমার জামাই যতদিন খুশী আমার বাড়িতে থাকবে।
কি আর বলব, নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। নোংরা একদম বরদাস্ত হয় না আমার। মা ওকে যেতেও বলবে না আর আমাকেই এই সব করে যেতে হবে। আমার ঘরে প্রতিটা জিনিস একেবারে ঠিক ঠাক গোছানো থাকে। আমার ছেলেকেও আমি সেভাবেই শেখাচ্ছি। আমার কাজ নাকি অতো বড় একটা ছেলেকে এই সব শেখানো? দামড়া বুড়ো একটা। মাথায় হাত চলে গেছিল আমার। মা যেন পাত্তাও দিলো না আমার এই অসহায়তা কে, বিরক্ত হয়ে বলল,
- আরে ধর ধর জলের বোতল দুটো। আমার আর ভাল লাগছে না। রাকার মায়ের সাথে গল্প করছিলাম একটু শান্তি তে, তাও এই মেয়ের জ্বলনে হবে না। ধর!!!!!
বলে আমি যেখানে বসে ছিলাম সোফা তে মাথায় হাত দিয়ে, তার পাশে বোতল দুটো রেখে দিয়ে প্রায় দৌড় দিল মা। বলে উঠলাম আমি,
- ছেলের জল টা?
সিঁড়ি থেকেই মা জবাব দিলো,
- আগেই রেখে এসেছিলাম। ডিভানের পায়ার কাছে আছে। খুজে নে।
কি আর করব? একটা বড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে পড়লাম। ধুতি টা কে গোছালাম। পাঞ্জাবী টা ভিজে ছিল ঘামে। কেমন একটা টক টক গন্ধ, এখনি মেলে না দিলে সকালে খুব বাজে গন্ধ বেরোবে। ঘেন্না নিয়েই, মিলে দিলাম সেটা ব্যাল্কনি তে। গেঞ্জি টা এতো ভিজে ছিল মনে হলো, নিংড়ে দিলে জল বেরোবে। বাঁ হাতে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে বালতি তে দিয়ে জলের কল খুলে দিলাম। মাথার উপরে দেখলাম, একটা সাদা জাঙ্গিয়া টাঙান। ইইহহহহহহহ। ছিঃ। এটাকেও কাচেনি ও? মানে ও যে শর্টস টা পরে আছে, সেটার তলায় কিছু নেই? উফ আর পারছি না। এই রকম যবনের সাথে থাকাও সমস্যার।ভাবলাম গেঞ্জি টা কাচব কিন্তু জাঙ্গিয়া কাচতে পারব না আমি। অঞ্জনা কি কেচে দিতো? ঘেন্না লাগত না ওর? কি জানি বাবা।
জল কাচ করে দিলাম গেঞ্জি টা। নিংড়ে মেলে দিলাম ব্যাল্কনি তে। হাত মুখ মুছে ঘরে এলাম। ঘরের গন্ধ টাই বদলে গেছে। এসি চললে একটা গন্ধ থাকে। আমার ছেলের জামা কাপড়, গায়ের একটা মিষ্টি গন্ধ থাকে। আজকে গোলাপের একটা মিষ্টি গন্ধ রয়েছে। সাথে ছেলেদের পারফিউমের সাথে মেশানো হালকা ঝাঁঝালো ঘামের গন্ধ যেন ঘরে। ঘরে ঢুকতেই গন্ধ টা ধরল আমাকে যেন। ঝিম ধরে গেল মাথায় গন্ধ টা তে একটা। না এমন না যে অসহ্য কিছু। কিন্তু নতুন গন্ধ। একটু কেমন কেমন লাগছিল। কিন্তু শ্বাস নিলে ঝিম ধরা ছাড়া আর কোন ফিলিং আসছিল না আমার।
দেখলাম শুয়ে পরেছে রাকা। ঘুমোয় নি। আমাকে দেখেই বলল,
- কি রে এত দেরী হল যে তোর। রাত হয়েছে ঘুমো এবারে।
শালা খচ্চর কোথাকার। বাইরে টা একেবারে নরক করে রেখে এসেছিল। নিজের বালিশ টা ঠিক করতে করতে ভাবলাম, আমি ঘুমই কি না ঘুমোই তোকে দেখতে হবে না। সাড়া দিলাম না যথারীতি। ছেলেকে ঢাকা দিলাম। শুতে গিয়ে ভাবলাম, খালি গায়ে শুয়ে আছে রাকা। এ সি চলছে। ঠান্ডা লেগে গেলে? সামনেই মায়ানমারের সাথে খেলা আছে বলছিল না? না না আমার কিছু না। কিন্তু খেলা আছে বলছিল তাই আরকি। আচ্ছা, ও কি ওমনি ই? নাকি অঞ্জনা ওর এই সবের খেয়াল রাখত? ভিজে গায়ে এল ঘরে, মুছেই এ সি র তলায় শুয়ে পড়ল। বলব ওকে টি শার্ট টা পরে নিতে? উফ!! সেই প্রতি পদে পদে আমি বউ এর মতন ভাবছি। মা আমার কনফিডেন্স টা একেবারে শেষ করে দিয়ে গেল। কি যে সব বলে গেল তখন, আমার ছেলে আর বর কে আমার হাতযশেই ভাল রাখতে হবে, গোছের কিছু একটা বলেছিল। আবার ভাবলাম বউ কীসের? আমি যদি ছেলেও থাকতাম, ওকে তো বলতাম যে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে। কত বার আমি আমার বাড়ি থেকে পড়ে টরে রাতে বেরোনর সময়ে আমার মাফলার ওকে দিয়েছি। ও মাথায় জড়িয়ে পরে বাড়ি গেছে। না না এটা বললে বউ হয়ে যায় না কেউ। টি শার্ট টা মাথার কাছে রেখে ও উল্টো দিকে ফিরে শুয়েছিল। বলেই দিলাম,
- এ সি চলছে, টি শার্ট টা পরে নেওয়াই ভাল।
ও আমার আওয়াজে সটান ঘুরে গেল আমার দিকে। বলল,
- অ্যাঁ।
আবার টেলিগ্রাফিক ভাষায় বললাম আমি নিজের আঙ্গুল টা এসি র দিকে দেখিয়ে,
- এ সি… শার্ট মাস্ট পুট অন।
খানিক চেয়ে রইল আমার দিকে পানকৌড়ির মতন, মুখ টা উঁচিয়ে। তারপরে একেবারে পাত্তা না দেবার ভঙ্গী তে মুখ টা বেঁকিয়ে বলল
- ও, কিসু, হবে না , চিন্তা নেই।
তারপরে যেমন এদিকে ঘুরে গেছিল, তার থেকেও তাড়াতাড়ি ও দিকে ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল।বাল, কে তোর চিন্তা করছে? কিন্তু আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এতো কিছুর পরেও ও আমাকে অবজ্ঞা করে উল্টো দিকে শুয়ে পড়ল। এতো সাহস পায় কোথা থেকে? হেড মিস্ট্রেস আমি। এই রকম অবাধ্য ছেলেদের মনে হয় কান ধরে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখি। জাস্ট দাঁত কিড়মিড় করছিলাম আমি আর স্থির ভাবে ওর দিকে চেয়েছিলাম। কি জানি ও হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিল। আবার সেই রকম স্প্রিং এর মতন ঘুরে গিয়ে দেখল আমি চেয়ে আছি ওর দিকে রেগে। কোন কথা না বলে, টি শার্ট টা হাতে নিয়ে পরতে পরতে, নিচু গলায় বলল,
- পরছি তো, অতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।
টি শার্ট পরে নিয়েই উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল আগের মতন। মনে হলো যেন শুনতে পেলাম
- বদলায় নি একটু ও। হিটলার ই আছে।
আমিও আর কিছু বললাম না। খামচা টা চুল থেকে খুলে ড্রেসিং টেবিল এ রেখে দিলাম, আর খোলা চুল টা বালিশের পিছনে করে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হাত বাড়িয়ে লাইট টা অফ করে দিলাম আমি বেড সুইচ দিয়ে। ছেলেকে বুকে টেনে নিলাম আমি।
ভাবলাম, কালকে ও নিজের বাড়ি গেলে বাঁচি। এখানে থাকলে সারা সময় টা এই সব বাঁদরামো করবে আর আমাকে কই কই করে ছুটে বেড়াতে হবে বাপ ছেলের পিছনে। ছেলের টা আমি খুশী মনেই করি, কিন্তু ওই বাঁদরের জন্য এই সব করার ইচ্ছে আমার নেই। এই ভাবে প্রতি মুহুর্তে ওকে নিয়ে বাঁচা সম্ভব নাকি? মেয়ে হওয়া তো সত্যি খুব কঠিন! তার থেকেও কঠিন বউ হওয়া। আর তার থেকেও কঠিন এই রকম একটা বাঁদর ছেলের পাল্লায় পরা। বেচারী অঞ্জনা কি করত কে জানে ওকে নিয়ে? কিছুই কি নিজে করতে পারে না? শুধু খেলা ছাড়া কিছুই শেখে নি যেন। ওর খাওয়ার খেয়াল রাখা, ওর শোওয়ার খেয়াল রাখা, ওর জামা কাপড়ের খেয়াল রাখা, ওর হাইজিনের খেয়াল রাখা, সব করতে হবে? তা না তো কি, জাঙ্গিয়া টাও কাচতে পারে না নিজে? ভেবেছিলাম ওকে হাড়ে হাড়ে আমি চিনি, থাকতে পারব। আজকে বুঝলাম, ভালবাসা কাউকে, আর তাকে নিয়ে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। একসাথে থাকলে তার যাবতীয় দোষ কেও ভালো বাসতে হয়। তাও আবার আমার মতন ছেলে থেকে মেয়ে হওয়া একটা মেয়ের জন্য, এটা যে কত বড় প্রবলেম, সেটা আমাকে এসে কেউ জিজ্ঞাসা করুক। নাহ আমার ছেলেকে এই সব কিছু শেখাব আমি। যেন ওর বউ বিপদে না পরে। ওর বউ যেন আমার মতন না ভাবে কোন দিন ওকে নিয়ে। জড়িয়ে ধরলাম আরো ছেলেকে বুকের কাছে। কপালে চুমু খেয়ে, ছেলেকে মনে মনে বললাম,
- তোর জন্য না হয় এটাও মেনে নেব আমি।
কিন্তু ও যদি বলে আমাকেও নিয়ে যাবে তাহলে? আর ওখানে গেলে তো ওর সাথেই শুতে হবে আমাকে। ওরে বাবা!! ওই বাড়িতে যে বিছানা টা আছে সেটা তো ছোট আরো। শুনতে পাচ্ছি ওর নিঃশ্বাসের শব্দ। কেমন একটা উত্তেজনা হচ্ছে আমার। খুব বেশী দিন তো নয়, দশ বছর আগেও আমি আর ও বিছানা ছাড়া সব ই শেয়ার করেছি। মাঝের ছ টা বছর এতো দূরে হয়ে গেলাম একে অপরের যে ওর উপস্থিতি টাও আমি মানতে পারছি না। আমাকে মা আর গরুর সাথে কথা বলতে হবে। দরকারে আন্টির সাথেও কথা বলব। বিয়ে যখন করলাম, তখন এগিয়ে যাবার রাস্তা আমাকেই খুঁজতে হবে। ওই কুত্তা টার কোন কিছু যায় আসবে না। ও জানে আমি শিভ কে ছেড়ে থাকতে পারব না। কাজেই ওর তরফে আমার মতন করে চলার কোন চেষ্টা থাকবে না আমি শিওর। ওকে মানিয়ে নিতে আমাকেই চেষ্টা করতে হবে ছেলের মুখের দিকে চেয়ে। জানিনা কালকে সকাল থেকে কত বাধ্যতা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
রাতে আর ভাবার অবকাশ ও ছিল না। সব চিন্তা সব ভাবনা তখনকার মতন আমার মিটে গেছিল। ছেলে আমার এখন। ঘুমিয়ে গেলাম একেবারে মরার মতন। ঘুম ভাঙল একেবারে সকাল সাত টায়। ধড়মড় মরে উঠে বসলাম আমি। ইশ এসি টা বন্ধ করিনি। ছেলের ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ছেলের মুখ দেখলাম, আমার দিকে ফিরে ঘুমোচ্ছে নিশ্চিন্তে। রাকার দিকে চোখ গেল, উল্টো দিকে ফিরে ঘুমোচ্ছে। নিশ্চিন্তেই ঘুমোবে আরকি। সারা রাত কি এক ভাবেই শুয়ে আছে নাকি? যাই হোক উঠে এ সি টা বন্ধ করে দিলাম। ফ্রেশ হতে গেলাম বাথরুমে। দাঁত মেজে মুখ ধুতে গিয়ে বাথরুমের আয়নায় দেখি, ঘুমের ঘোরে, হাত দিয়ে মনে হয় মাথার সিঁদুর টা কে টেনে দিয়েছি, একেবারে নাক অব্দি চলে এসেছে সেটা। কপালেও ভর্তি। নিজেকে তাকিয়ে দেখলাম। বেশ মিষ্টি লাগছে তো আমাকে! এক কালে ছেলে ছিলাম তো! তাই মেয়ে আমি টা কে এই ভাবে দেখে বেশ লাগল আমার। ভাবলাম রাকার দোষ নেই বিশেষ। যাই হোক ভালো করে সাবান দিয়ে মুখ টা ধুয়ে, মুখ থেকে কপাল থেকে সিঁদুর টা তুলে দিলাম। সিঁথির কাছ টা রইল। আমার চুল এত ঘন যে, সিঁথিও সরু। কোন রকমে ব্যাপার টা ম্যানেজ করে ঘরে এসে চুলে খামচা টা লাগিয়ে নীচে এলাম আমি। দেখলাম দুই মা উঠে পরেছে। গরুও উঠে পরেছে। আমি সাধারণত আসি না ছেলেকে একা শুইয়ে নীচে। কিন্তু রাকা শুয়ে আছে পাশে। তাই এলাম। গরুও তাই এসেছে। বাপি ভাই ঘুমোচ্ছে এখনো। শুনলাম এসে, অঞ্জনার ড্যাডি সবাই কে নিয়ে চলে গেছেন। মাকে বললাম,
- আমাকে ডাকলে না? ওনারা চলে গেলেন।
মা বলল,
- আমি ডাকতেই চাইছিলাম। কিন্তু স্মিতা দি বলল, থাক ঘুমোচ্ছে। ফোন করবে তোকে পরে।
- উম্ম বেশ। চা দেবে মা?
- আজকে গ্রীন ট খাবি না?
- না তোমাদের চা ই দাও খাই।
সবাই মিলে বসে চা খেলাম। গল্প হচ্ছিল গত কালের। আমাকে কত সুন্দর লাগছিল। খালি ওদের এই সব কথা। এই ছাড়া যেন আর কোন কথা নেই আমার মা আর আন্টি আর গরুর। ওরা বলছিল আমি শুনছিলাম। আমার ছেলে আর গরুর মেয়ের কথাও হচ্ছিল। কালকে আমার হাতে গরুর মেয়ে দুপুরে খেল, সেই নিয়েও এদের কথা শুরু হলো। গরু টাও এই সব ঘটনার, ঘন সমাপতনে কাল অব্দি কিছু টা ভেবলে ছিল। সকাল থেকে দেখলাম ফ্রেশ। আমার সাথে গায়ে গা লাগিয়েই কথা বলছে। কখনো ফিস ফিস করে আবার কখন আদর করে সবার সামনেই।
জানিনা আজকে সকালে মনে হল, আমি যে ওর দিদি এই ব্যাপার টা কে ও গর্বিত। মজার কথা, ওর শশুর বাড়িতে আমাকে কোন দিন ও নিজের মুখে যেতে বলে নি। আবদার করে নি যে দিদি প্লিস চল। ভাই কে ভাই ফোঁটায় নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে বলেনি কোনদিন, দিদি তুই ও চলে আয়, আমরা দুই বোনে একসাথে ভাই কে ফোঁটা দেব। ভাই খুব সকালে আমার থেকে ফোঁটা নিয়ে বোনের বাড়ি গেছে। বা আগের দিনে বোনের বাড়ি গিয়ে সকালে ফোঁটা নিয়ে এসে আমার কাছে নিয়েছে। আমি কিছু মনে করতাম না, কিন্তু আমার মা কাঁদত। যদিও মা বা আমি কোন দিন ই গরু কে বুঝতে দিই নি আমাদের কষ্ট টা। ভেবেছিলাম, ওই বুঝবে একদিন। বিশ্বাসে ছিলাম, এক ই মায়ের থেকে এসেছি আমরা। আমার মায়ের মন দুজনের ভিতরে। ওর একটু সময় লাগে বুঝতে। গরু যে!!
কিন্তু আজকে ক্ষনে ক্ষনে আমাকে জড়িয়ে ধরা দেখে বুঝলাম, ওর মনের মধ্যে যে ময়লা টা ছিল সেটা হয়ত বা সাফ হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবলাম, ছেলেকে এবারে তুলে নিয়ে আসি। খাইয়ে দি। তারপরে একটু পড়াতে বসাব। বালের বিয়ে তার জন্য মা আমাকে ছুটি নেওয়া করাল সাত দিন। রাকা ও যাবে প্রি ট্যুর ক্যাম্প এ। কবে যাবে কে জানে। সকালে উঠে তো আর দৌড়োয় না মনে হচ্ছে। প্রায় আট টা বাজে ওঠার নাম গন্ধ নেই কারোর। রাকা, শমিত, বাপি ভাই, আঙ্কল সবাই ঘুমোচ্ছে। তুলে দিতে হবে তো। কতক্ষন ঘুমোবে? মা কে বললাম
- ও মা শিভের আর স্বাতীর খাবার টা করে দেবে?
স্বাতী আমার বোনের মেয়ের ডাক নাম। মাকে জিজ্ঞাসা করেই বোন কে বললাম,
- তুই তুলবি তো মেয়েকে?
একসাথে দুটো জবাব এলো। মা আর বোন। মা বলল- হ্যাঁ বানাচ্ছি, আর বোন বলল,
- প্লিস দিদি, তুই খাইয়ে দিস। আমি আর দুদিন ওই দিকে যাব না। বড্ড জ্বালাচ্ছে খেতে গিয়ে ও। কালকে দুপুরে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।
আমি হাসলাম। বললাম,
- আমিই খাইয়ে দেব। তুই দুদিন এসেছিস রেস্ট নে।তুই শুধু ওকে তুলে নিয়ে আয়। শমিত আছে ঘরে না হলে আমি তুলে নিয়ে চলে আসতাম।
এই বলে উপরে এলাম। ঘরে ঢুকে দেখি, ছেলে আমার খোঁজে সরে এসেছে যেখানে আমি শুয়ে ছিলাম। দেখেই মন টা ভাল হয়ে গেল। ঘুমন্ত ছেলেকে আদুরে গলায় বললাম,
- আর মায়ের কাছে সরে এসে শুতে হবে না। আটটা বাজে, এখনো ঘুম? ওঠ সোনা।
ওর জামা কাপড় রাখার কাবার্ড থেকে জামা কাপড় বের করে ওর পাশে শুয়ে পরলাম। মাথায় হাত বোলালে জেগে যায়। আর ঘুমোনর সময়ে মাথায় পিঠে হাত বোলালে ঘুমিয়ে যায়। খানিক বাদেই পিটপিট করে চাইতে লাগল আমার দিকে। চোখ খুলে আমাকে দেখে একবার জড়িয়ে ধরা হয়ে গেল। আমি ওকে তুলে বাথ রুমে নিয়ে এসে, হিসু করিয়ে দিলাম। দাঁত মাজিয়ে ভালো করে ফ্রেশ করিয়ে ঘরে এনে, নাইট ড্রেস ছাড়িয়ে, বের করা ড্রেস পরিয়ে দিলাম। তারপরে কোলে তুলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দেখি বোন ও মেয়েকে কোলে নিয়ে নীচে যাচ্ছে।দুটো কে খাইয়ে দিলাম আমি। তারপরে আন্টি কে জিজ্ঞাসা করলাম,
- আন্টি তোমার ছেলে কখন ঘুম থেকে ওঠে গো। আগে তো উঠে পরত খুব সকালে। এখন এতো দেরী অব্দি ঘুমায়? সাড়ে আট টা বাজছে তো।
দেখলাম কোন সাড়া নেই আন্টির। রান্না ঘরে মায়ের সাথে কি যে করছে? আমি আবার বললাম
- ও আন্টি!!!!!! সাড়া দাও না গো!!
মা হাসি মুখে বেরিয়ে এলো আমার আওয়াজে। বলল
- ধিঙ্গী মেয়ে, জানিস না, মা বলতে হয় শাশুড়ি কে?
কি করে বলব? দুটো মা এখন। একজন কে ডাকলে দুজনেই সাড়া দেবে না? আমি এত্তো বড় জিব কেটে সোজা রান্না ঘরে। দেখলাম আন্টি হাসছেন। আমাকে দেখে একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন। মানে মা আর আন্টি মিলে যুক্তি করেই এটা করল। আমি পাত্তা দিলাম না। আমি সোজা জড়িয়ে ধরলাম আন্টি কে। আগেও ধরেছি, কিন্তু আজকে যেন কোন বাধা নেই আর। বললাম,
- দুজনে মিলে আমাকে লজ্জা দেওয়া না?
আন্টি আমার দিকে ফিরে আমার চিবুক ধরে হামি খেয়ে বললেন
- আমাকে মা বলতে পারবি না?
জড়িয়ে ধরলাম আন্টি কে। বললাম
- তোমাকে না বললেও, তুমি কি আমার মা নউ? এক দুদিন সময় লাগবে, ব্যস আর কিছু না। ক্ষমা করে দিও ততদিন আমাকে প্লিস!!! আচ্ছা বেশ শোনো, আচ্ছা মা তোমার ছেলে কখন ঘুম থেকে ওঠে?
- হাহাহাহাহাহাহা
আন্টি আর মা হেসে গড়িয়ে পড়ল ওখানেই। আমিও কম আনন্দ পাই নি, আন্টি কে মা বলে। আসলে আমার এতে কোন সমস্যা ছিল না। শশুর শাশুড়ি ছেলে শ্বশুরবাড়ি সব আমার কাছে খুব মনের মতন। সেখানে আমি একদম বউ হতেই চেয়েছি। কারন কাজ কর্ম, ভালবাসা, মমতা এই সবে তো আমার আপত্তি ছিলই না। আপত্তি ছিল, রাকা তে। সেটা একটা জায়গায় আটকে গেছে। রাকা কে দেখলেই, সব পুরোন কথা মনে পরে আমার। খারাপ গুলোই শুধু না এখন ভালো গুলো ও মনে পরে। আর সেগুলো মনে পরলেই মনে হয় ছিঃ ছিঃ, রাকা আমাকে মেয়ে হিসাবে মানতেই পারবে না। ওর কাছে তাই আমার এই মেয়েলি ব্যাপার গুলো এড়িয়ে চলতে চাইতাম। ততক্ষনে মা একটা দুটো কাপ প্লেটে চা করে রেডি করল। গরু দেখলাম ঢুকে, একটা কাপ প্লেট নিয়ে চলে গেল। আর বাকি কাপ প্লেট টা দেখিয়ে মা আমাকে বলল,
- যা দিয়ে আয়।
- কাকে? আরেক টা দাও। বাপি আর ভাই একসাথে শুয়েছে তো। একজন কে দিলে আরেক জন ও তো চাইবে।
- আরে কি মেয়ে রে বাবা, এটা রাকার জন্য। তোর বাপি ভাই কে আমি দিয়ে আসব।
- অ্যাঁ? সে তো ঘুমোচ্ছে।
- বেড টি খাবে ও, হলো? তারপরে আবার পারলে একটু ঘুমোবে। যা যা, তাড়াতাড়ি নিয়ে যা। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চা।
সামনে আন্টি আছেন। চেচাতেও পারছি না আমি মায়ের উপরে। দুজনের দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে দেখলাম, দুজনে বেশ মুড নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। উপায় নেই। কাপ প্লেট টা হাতে নিয়ে বেরোনর সময়ে বললাম
- এই সব কন্সপিরেসি তোমাদের দুজনের , আমি জানি সেটা।
বেরিয়ে আসার মুখে মা বলল আমাকে,
- ওকে তুলে, চা দিয়ে নীচে আসবি। তার আগে আলমারি থেকে একটা সাদা পাঞ্জাবী আছে আর পাজামা আছে সেটা দিবি ওকে। আর নীচে ডিম সেদ্দ করা আছে সেটা নিয়ে যাবি। দেরী করিস না।
উপরে যেতে যেতে ভাবলাম, ডিম সেদ্দ কেন আবার? গান্ডু টা দারুন খাতির পাচ্ছে তো? আর খাতির টা মা আমাকে দিয়েই করাচ্ছে। একেবারে রাজা গজা হয়ে গেছে যেন এ বাড়ির। আর আমি যেন দাসী বাঁদি। আবার গা টা জ্বলে উঠল আমার। এখানে ও থেকেছে আগে অনেক অনেক। তখন বেশী গুরুত্ব আমি পেতাম।ইভেন পরশু অব্দি পেয়েছি। মা তখন মানে ছোট বেলায় রাকাকে পছন্দ করত, কিন্তু সেটাই হতো যেটা আমি চাইতাম। পড়াশোনা করত না বলে মা কত বকেওছে ওকে। আমার ঘরে ঢুকে পরেছিল বলে, মা রেগেও গেছিল দু একবার। বা পরীক্ষার সময়ে আমাকে নিয়ে খেলতে চলে গেছিল বলে ও মা ওকে বকে ছিল। রাকা কিছু মনে করে নি, কিন্তু মা ওকে বেশ বকাবকি করত। মানে শাসন করত। আজকে এতো খাতির? আমার ই ঘর টাই ওর হয়ে গেল। চা নিয়ে ঢুকলাম ঘরে আমি। দেখলাম প্রায় উদোম হয়ে ঘুমোচ্ছে। এসি টা বন্ধ করে দিয়েছিলাম সকালেই। তাই টি শার্ট টা খুলে দিয়েছে। আর সেই ল্যাঙট এর মতন শর্টস টা যেন জাস্ট লেগে আছে ওর শরীরে। আমি চা টা টেবিল এ রেখেই, পাশে খোলা চাদর টা ঢেকে দিলাম ওর কোমরের নীচে টা। ইশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ওর পেনিস টা। কই কালকে রাতে তো বুঝতে পারিনি। এখন যেন কেমন বেশ বড় লাগছে আর মোটা। গুগলে সার্চ করা ছবি গুলোর সাইজ যেন। নজরে চলে এলে আমি কি করব? তাড়াতাড়ি আলমারি খুলে দেখলাম, একটা সাদা পাজামা পাঞ্জাবী আছে।কখন যে মা এই কেনাকাটি গুলো করল কে জানে? কপাল চাপড়াতে চাপড়াত, প্যাকেট টা বের করে বিছানায় রেখে দিলাম আমি সেটা।