Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......

কারন রেজিস্ট্রী পেপার এ রাকা চ্যাটার্জী ই ছিল। ও বুঝতে পেরেছিল সেটা। কারন সাইন করার আগে আমি দেখছিলাম পড়ে ওর নাম টা। সাইন করার পড়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।গা টা জ্বলে গেছিল আমার। নাটক যত! ও সাইন করল কি না করল আর দেখিনি আমি। ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম ওই ঘর থেকে।

 
                                                                           পর্ব বাইশ
যাই হোক রনির রেস্টুরেন্ট এর খাবার আমি আর ছেলেকে খাওয়াই নি। নিজেই রেঁধেছিলাম ছেলের জন্য। ওর স্যুপ টা করেছিলাম। আর দোকানের খাবার থেকে পম্ফ্রেটের একটা পিস তুলে নিয়েছিলাম ছেলের জন্য। ওকে ভালো করে স্নান করিয়ে, একটা লাল ধুতি, আর কালো পাঞ্জাবী পরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার জন্য আনা মালা টা নিজের গলায় পড়ে ঘুরে বেরাচ্ছিল দুষ্টু টা। রাকাও সেম কালারের ধুতি আর পাঞ্জাবী পরেছিল। আমার মায়ের প্ল্যান ছিল এটা। অনুষ্ঠান করিনি বলে এমনি তেই রেগে ছিল, এই টা মানা করে দিলে ক্ষেপে যেত একেবারে মা। দুপুরে ছেলেকে খাওয়ালাম। এখন ওকে নিজে হাতে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। খানিক ফ্যালে ছড়ায়। আজকে অনেক লোক বাড়িতে, তাই নিজেই খাইয়ে দিলাম। বাড়িতে তিন তিনটে দাদু কে পেয়ে  সাপের পাঁচ পা দেখেছে একেবারে। আমি পিছন পিছন দৌড়চ্ছি ওর আর ও এঘর সে ঘর করে বেড়াচ্ছে। গরুর মেয়েটা খেয়ে নিত গরুর ভয়ে, সেও আজকে দাদা ভাই কে দেখে দৌড়তে শুরু করেছে। ঘন্টা খানেক যুদ্ধ করে খাওয়া দাওয়া হলে, ওকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে এলাম ঘরে। রাতে অনেক লোক খাবে, কতক্ষন ছেলে আমার ঘুমোতে পারবে না কে জানে? ভাবলাম দুপুরে একটু ঘুম পাড়িয়ে দি।

ছেলেকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বাইরে একটা চেঁচামেচি শুনলাম আমি। ছেলেটা উঠে পড়ল। ওকে ধরে শোয়াতে যাব, ঠিক তখনি অঞ্জনার ড্যাডি আর মা ঘরে ঢুকলেন। বলা ভাল অঞ্জনার ড্যাডি মানে আঙ্কল অঞ্জনার মা কে হাত ধরে টেনে নিয়ে ঘরে এলেন। আমি শুধু অবাক ই হলাম না, মারাত্মক ভয় ও পেলাম। পিছনে আমার মা, বাপি, আমার বোন এর মুখ ও দেখলাম। চুল টা খোলা ছিল আমার, শুয়ে থাকা ছেলের গায়ে পরছিল, বলে পাশেই ড্রেসিং টেবিল থেকে গার্ডার টা নিয়ে চুল টা বেঁধে ফেললাম কোনরকমে। মা একদিন বলেছিল, ছেলের গায়ে মায়ের চুল লাগতে নেই। আমি চুল টা বেঁধেই ভয়ে ময়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুঝতে পারছি, অপমান করবে অঞ্জনার মা। ওনার দুজনে এসেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষন। আমি আমার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি ভয়ে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এই তো কিছুদিন আগেই আঙ্কল এসেছিলেন আমাকে কত কথা বলে গেলেন, আশির্ব্বাদ করে গেলেন। কি হলো আজকে আবার। অপমানের ভয়ে বসে পরলাম আমার বিছানায়। নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারছিলাম না আমি।কাঁপছিল আমার হাঁটু। ঠিক তখনি, রাকা ঢুকে এলো ঘরে। একেবারে আমার সামনে দাঁড়ালো রাকা, বলা যায় আমাকে গার্ড করে। আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। এই সময়ে ওকেই দরকার ছিল আমার। আমরা মা ব্যাটা তে একেবারে রাকার পিছনে বিছানায় বসে রইলাম। রাকা কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে অঞ্জনার ড্যাডি কে, তার আগেই আঙ্কল বলে উঠলেন আন্টি কে,

-     দেখ চেয়ে। এই নাতি তোমার। রাতে কাকে তোমার নাতি জড়িয়ে ধরে ঘুমায়? শিব কে। আর তোমার মেয়ে কোথায় এখন? পার্লার এ। যার বিয়ে সে তোমার নাতি কে নিয়ে শুইয়ে ঘুম পারাচ্ছে। কেন? রাতে দেরী হলে যাতে কষ্ট না পায় তোমার নাতি। তোমার মেয়ে, মানে যার সাথে তুমি রাকার বিয়ে দিতে চাইছিলে, সে এখন কোন সিনেই নেই। ধরে নিলাম, সে দুঃখে আছে। কিন্তু তোমার নাতি কে একবার ও দেখল ও না সে?  আর দেখবেই বা কি করে সে তো তোমার মেয়েকে সহ্যই করতে পারে না।

এতো গুলো কথা বলে আঙ্কল চারিপাশ টা দেখে নিলেন একবার। আমি এখনো বুঝছি না ব্যাপার টা। রাকার পিছনে ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেই আছি। মাঝে মাঝে মুখ বাড়িয়ে দেখছি আঙ্কল কে আর আন্টি কে। আন্টি একেবারে থম হয়ে আছেন। তা করতে করতেই, শমিত, আর রাকার বাবা মা আর রনি এসে উপস্থিত হলো। আঙ্কল আবার শুরু করলেন,

-     শোন, তোমার ছোট মেয়ে রাকার খ্যাতি আর যশ এ বিয়ে করতে চাইছিল। আমি আগের দিনে এসে শিবের মা আর শিবের সাথে কথা বলেছি। শিব তো চায় ও নি, রাকা কে বিয়ে করতে। ও শুধু শিভ কে চেয়েছে। আর তোমার মেয়ে তোমার নাতি কে না , তোমার জামাই কে চেয়েছে। আমি তো রাকার দোষ দেখছি না এখানে, যে ও শিব কে পছন্দ করেছে বেশী তোমার ছোট মেয়ের থেকে। ও ওর ছেলেকে ভালোবাসে, তাই ওর জন্য সব থেকে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া ওর কাছে জরুরী ছিল। আর ও ঠিক সেটাই করেছে। ঠিক যেমন তুমি তোমার মেয়ের জন্য রাকা কে চাইছ। ভেবে দেখ, তুমি ঠিক হলে রাকা তোমার থেকে হাজার গুন বেশী ঠিক।

আঙ্কল আবার থামলেন। বয়েসের কারনে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন আঙ্কল। আর আঙ্কল এর কথা গুলো শুনে , আমি ধীরে ধীরে রাকার পিছন থেকে বেরিয়ে আসছি। আন্টি একেবারে চুপ। মুখ টা মেঝের দিকে করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন শুধু আন্টি। সবার সামনে এই কথা গুলো, আঙ্কল বলে দেবেন মনে হয় ভাবতেও পারেন নি উনি। বুঝতে পারলাম, আঙ্কল আন্টির মধ্যে হয়ত কথা কাটাকাটি হচ্ছিল ঘরে। আন্টি হয়ত আমাকে আর রাকা কে দোষারোপ করছিলেন। আঙ্কল তাই ধরে নিয়ে এসেছেন আন্টি কে আমার ঘরে। পিছনে আমার বাপি, মা, গরু, গরুর বর শমিত, রনি , রাকার বাবা মা সবাই থম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাই ও এসে দাড়িয়েছে পিছনে এখন। কেউ ভাবে নি ব্যাপার টা এই দিকে গড়াবে। সবাই ভেবেছিল, আমাকে অপমান করতে আসছেন আন্টি আর আঙ্কল। কিন্তু এই ভাবে মোড় বদলে, সবাই একটু ভেবলে গেছে। আর রাকা এসেই আমার সামনে বসে পরেছিল। ডান হাত টা পিছনে করে আমাকে সেই হাতের আড়ালে রেখে যেন বলছিল আমাকে,
-     থাক তুই আমার পিছনে। আমি আছি।

ঘটনার অগ্রগতি তে রাকাও হাত টা আস্তে আস্তে সরিয়ে নিল। বুঝে গেল আমার অপমান করতে এরা আসে নি এই মুহুর্তে। জানোয়ার টা সেদিনে যদি এমনি ভাবে আমাকে ভরসা দিত, আমার এই দুর্গতি হতো না। কাজেই ওর উপরে ভালোলাগার বদলে, পুরোন রাগ টা বেড়েই গেল। এদিকে আঙ্কল বলে চলেছেন,

-     তোমার শিবানী কে দেখে মায়া হয় না? যদি মেনেও নি শিভ তোমার নাতি, ভেবে দেখ, আজকের দিনেও ও সকালে ওকে নিয়ে আধ ঘন্টা পড়তে বসল।ছেলেকে ডিসিপ্লিন শেখানো দরকার বলে বসল। আর কোন কারন ছিল না। ওকে পড়িয়ে খুব বেশী হলে পনের মিনিটে সেজেগুজে বিয়ের টেবিলে গেল। আমি সব লক্ষ্য করেছি। তারপরে শিভ কে  স্নান করাল, সাজিয়ে দিল সুন্দর করে, খাইয়ে দিল এক ঘন্টা ধরে। এতো টুকু বিরক্তি দেখিনি আমি ওর চোখে মুখে। হাসি মুখে করল এতো গুলো কাজ ও। দুপুরে খাওয়ার আগে খেলে গেঞ্জি টা ভেজাল বলে, একবাড়ি লোকের মধ্যেও, ও মনে করে গেঞ্জি টা ছাড়িয়ে শুকনো গেঞ্জি পরিয়ে দিল। কেন? তোমার নাতির ঠান্ডা লাগবে বলে। আর যাকে তুমি ওর মা বানাতে উৎসাহী, সে কোথায়? সে সেই সকাল থেকে পার্লার এ গেছে, দুপুরে বাইরে খেয়েছে, এখনো ফেরেনি। তুমি ওর ভরসায়, তোমার নাতি কে ছেড়ে দিতে? তোমার ছোট মেয়ে এখনো মানুষ ই হয় নি। মা হওয়া তো ভুলে যাও, একটা মানুষের সাথে থাকার যোগ্যতা ও অর্জন করে নি। শোন, হয় তুমি স্বীকার কর, তুমি তোমার নাতি কে ভালোবাস না , না হলে স্বীকার কর, তোমার নাতির মা শিব ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না।

চোখের জল উপচে এলো আমার। শুধু আমার কেন, সেইখানে উপস্থিত প্রতিটা মহিলার চোখে জল।  সবাই আলাদা আলাদা ইমোশন এ কাঁদছে। আমি কাঁদছি, আমার মাতৃত্বের এতো বড় পরিচয় টা আঙ্কল সবার সামনে তুলে ধরলেন বলে। আমি কাঁদছি আবেগে, নিজের মনের মধ্যে একটা অসামান্য খুশী তে। আমি কাঁদছি আমার শিভ কে জড়িয়ে ধরে। আঙ্কল এর কথা গুলো যেন শিভ কে আমার মন থেকে আমার রক্ত, আমার অনু পরমানু তে শিভের অস্ত্বিত্ব খোদাই করে দিল একেবারে।  আমার মা কাঁদছে আনন্দে তার মেয়ের জীবনে, এত বড় একটা দিনে, যেখান থেকে অপমানের আশঙ্কা ছিল, সেখান থেকেই এই আশীর্ব্বাদ আসায়। অঞ্জনার মা এর মনে এখন দ্বিধা। অনেক দ্বিধা। হয়ত মেয়েকে মনে পরছে। আমার জায়গায় নিজের মেয়েকে দেখছেন। ভুল করছেন বারংবার, অঞ্জনা চলে না গেলে শিভ তো অঞ্জনার কোলেই থাকত। সেই ভাবে কাঁদছেন হয়ত। আসলে মেয়েরা শিয়ালের মতন। একজন কাঁদলে বাকিরাও কাঁদে। সবার কারন আলাদা হয়। কিন্তু ইমোশন টার  তীব্রতা একি থাকে। তাই একজন কাঁদলে, বাকিরাও নিজেকে সেই জায়গায় বসিয়ে কেঁদে নেয় একবার। আঙ্কল মনে হয় আমাদের সকলের কান্না দেখছিলেন। তার পরে খুব ঠান্ডা হয়ে বললেন আন্টি কে,
-     যাও যাও, শিব কে আশীর্ব্বাদ কর, ওর ভয় হয়, তোমার অভিশাপ, ওকে টপকে, শিভ কে আর রাকা কে না গ্রাস করে।

তখন আন্টি তাকালেন আঙ্কল এর দিকে। আমি মাথা নামিয়ে বসে আছি। কারন আগের দিন ই আমি আঙ্কল কে বলেছিলাম কথাটা। যে আমার ভয় হয়। তাই রাকা কে বিয়ে করতে চাই নি আমি। শিভ কে নিয়ে আছি তার থেকেও বড় সমস্যা আন্টির কাছে ছিল, আমি রাকা কে বিয়ে করছি। তাই ভয়ে ছিলাম আমি। আন্টি, রেগে আঙ্কলের দিকে তাকালেন তো ঠিক কথা, কিন্তু এলেন আমার দিকে। বিছানায় বসে, শিভের মাথায় হাত দিয়ে আমার দিকে তাকালেন। চোখে জল বাঁধ মানছে না আন্টির। আমিও কাঁদছি। আমার চিবুক টা ধরে বললেন,
-     না রে , আমি অভিশাপ দিই নি। দেব ও না। ছাড় আমার কথা। তুই আর রাকা যেন ভালো থাকিস। আমি তোকে যা যা বলেছি, যা অন্যায় করেছি, ক্ষমা করে দিস মা।

আমি হাত টা ধরে নিলাম আন্টির। বললাম
-     আন্টি, এই আশীর্ব্বাদ কর, যেন শিভ কে মানুষ করতে পারি, ভালবাসায়, শাসনে। আর ক্ষমা কেন বলছ আন্টি, তুমি কি আমার মায়ের মতন নউ? আর বলবে না ক্ষমার কথা।
-     সে তো করি ই। সেদিনেই বুঝেছিলাম আমি যেদিন তুই রাকার বাড়ি তে গেছিলি আর শিভ তোকে জড়িয়ে ধরেছিল। আজকে বুঝি, অনা ও হয়ত ওপার থেকে এটাই চাইছে।  

আন্টি চোখ টা মুছে নিলেন। বললেন
-     নাহ কাঁদব না। আজ থেকে আমার কাছে তুই ই না হয় অনা হলি?

কি বলি এই কথায় আমি? এর উপরে কথা বলা বাতুলতা। ঘরের সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে। আমি আবার বুঝলাম, এই ঘরের সব কটা মানুষ নিজের কষ্ট দূরে সরিয়ে হাসতে রাজী একটাই কারনে, সেটা হলো আমার শিভ। আমি আন্টি কে জড়িয়ে ধরলাম। আর আমার মনে আমার শিভ আমার শরীরের, মনের থেকে অনেক অনেক গভীরে অভিযোজিত হয়ে যাচ্ছে। আন্টি আমাকে ওই ভাবেই বললেন,
-     কিন্তু ওই বুড়ো কে বলে দিস, আমার নাতি কে আমি ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।

আঙ্কল কে দেখলাম আমি তাকিয়ে। হাসছেন আঙ্কল। ভাব টা এমন, কেমন দিলাম বল দেখি?সবাই চলে গেল। রাকা বসেছিল শুধু। চোখে জল নিয়ে আমি শিভ কে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কি দুষ্টু কি দুষ্টু। ঘুমোনোর আগে আমাকে বলল
-     মা, আমার ঘুম চটকে গেছে।
-     অ্যাঁ?

বেশ করে আদর করে দিলাম বদমাশ টা কে। পেটুতে, বুকে, গলায় নাক মুখ ঢুকিয়ে, চুমু খেয়ে, মিত্তি মিত্তি গায়ের গন্ধ টা নিয়ে একেবারে অস্থির করে তুললাম ওকে আমি। তারপরে কপালের চুল গুলো কে হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বললাম,
-     কি করে চটকালো তোর ঘুম সোনা?
-     ওই যে তোমরা কাঁদছিলে, তারপরে, দাদান, কত কথা বলল, তখন চটকে গেছে।

হাসি পেয়ে গেল। এমন হাসি ও আমাকে দিনের মাথায় একশো বার হাসায়। ওকে বুকে টেনে নিলাম একেবারে। বললাম
-     আয় মায়ের কাছে। দ্যাখ আবার ঘুম পেয়ে যাবে।

ব্যাস ছেলে আমার শান্ত। বুকে নিয়ে খানিক চাপড়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেল কাদার মতন। ঘুম পাড়ানোর সময় দেখছিলাম, রাকা বসে আছে বিছানার নীচের দিকে একটা কোনে। বলতেও পারছি না, এখানে কি দরকার, আমাদের মা ছেলের মাঝে? আমি তাকালাম ই না ওর দিকে আর। যা করছে করুক। বসলে বসুক, চলে গেলে চলে যাক। আমার থেকে কোন সাড়া না পেয়ে, চলে গেলো ও, কিন্তু যাবার আগে ড্রেসিং টেবিলে একটা গয়নার বাক্স রেখে দিয়ে গেল। কখন নিয়ে এসেছিল কে জানে? অঞ্জনার নাকি? তাহলে নেবার কোন প্রশ্নই নেই। আর এমনিতেও নিতাম না ওর দেওয়া কোন জিনিস।

সন্ধ্যে বেলায় মা সাজিয়ে দিলো। খুব সাজা গোজা পছন্দ করি না আমি। তাও পরতে হলো বেনারসী, লাল আর হলুদ রঙের। আর পরলাম কারন, অঞ্জনার বাড়িতে আর কোন দুঃখের ব্যাপার ছিল না। দুপুরের ঘটনা টা না ঘটলে আমি সাজগোজ করতাম না মরে গেলেও। মা মনে হয় সব গয়নাই আমাকে পরিয়ে দিয়েছিল। ইশ এতো গয়না পরে হাঁটব কি করে। কোমরে কোমরবন্ধ। তবে সরু মাঝে মাঝে ঝালরের মতন ঝুলছিল চারিদিকে। আর নাভির ঠিক নীচে একটা লাল রঙের পাথর। কি পাথর কে জানে? সরু দুটো নুপুর। যদিও নুপুর আমি পরি। কিন্তু এই নুপুর টা দারুন। সোনার, কিন্তু জমকালো না। বেশ মিষ্টি দেখতে। চললে হালকা আওয়াজ হচ্ছে। কানের টা মা বড্ড বড় পরালো। ঝোলা কানের। ব্যাথা করছিল। কারন আমি কানের পরতাম না। কানের ফুটো টা ছোট হয়ে গেছিল মনে হয়। হাতে প্রায় অনেক টা অব্দি সোনার বালা পড়িয়ে দিলো মা আমাকে। মা কে বললাম,
-     মা এগুলো কিন্তু সব সোনার, মনে করে নিয়ে নিও রাতে। কোথায় হারিয়ে যাবে তার ঠিক আছে?

মা অবাক হয়ে বলল আমাকে
-     মরন, আমি কেন নিতে যাব? তোর জিনিস তুই কোথায় রাখবি তোর ব্যাপার।
-     মানে? তুমি কি এই গুলো আমাকে দিয়ে দিলে নাকি?
-     হ্যাঁ অর্ধেক গরু কে দিয়েছি, বাকি যা ছিল তোকে পরিয়ে দিলাম।
-     আর তোমার?
-     আমার আর কি হবে? আমার কত বছরের স্বপ্ন তুই পূর্ন করলি। আমার এই গুলো খুব প্রিয়। কিন্তু বিশ্বাস কর, এই গুল তোকে দিয়ে আজকে যা আমি আনন্দ পেলাম, তোর বাবাকে ঘ্যানঘ্যানিয়ে, এই গুলো তৈরি করানোর পরে, নিজের হাতে পেয়েও এতো আনন্দ পাই নি।
-     না, আর তুমি কি পরবে? না, কি সুন্দর লাগে আমার মা টা কে এই গুলো পরলে!! মা একদম এই সব তুমি বলবে না আর।

মা আমার চুপ ঠিক করছিল তখন, বলল
-     তুই কি রে? মেয়েরা গয়না পেলে আনন্দে পাগল হয়ে যায়। আর আমার মেয়েকে দেখ?
-     হিহি, রাকা পস্তাবে দেখবে ঠিক। যখন দেখবে সো কল্ড কোন মেয়েকে ও বিয়ে করে নি।

ততক্ষনে মায়ের চুল বাঁধা হয়ে গেছিল। তারপরে রাকার মা মানে আন্টি এসে আমার ডান হাতের কনুই এর উপরে সোনার কিছু একটা পড়িয়ে দিলেন। আমি জানিনা ওটা কি। মা বলে দিলো ওটা কে বাজুবন্ধ বলে। কি মোটা। চেপে ধরে রইল ওই জায়গা টা। সুমনার মা আন্টি, আমাকে একটা বড় পেট অব্দি সোনার হার পড়িয়ে দিলেন। আমি বেশ লম্বা, সাধারন কোন মেয়ের গলা পরালে কোমরের নীচে নেমে যেত হার টা। চুল টা মা খোপা করে দিয়েছিল। আর সেখানে কিছু ফুল পিন দিয়ে আটকে দিল। মুখে আমি মেক আপ একদম পছন্দ করি না। শুধু হালকা ফাউন্ডেশন লাগালো মা। আর কিছু না। আমি এমনিতেই খুব ফরসা কাজেই বিশেষ কিছুর দরকার ছিল না আর।

আমার সাজার আগেই আমি ছেলেকে, হলুদ ধুতি আর লাল পাঞ্জাবী পড়িয়ে দিয়েছিলাম। ছোট্ট করে কাজলের টিপ কপালের চুল টা তুলে ভিতরে লাগিয়ে দিয়েছিলাম যাতে কেউ দেখতে না পায়। ও তখনি সাজগোজ করে নীচে চলে গেছিল। নিশ্চই বাপ কে পেয়েছে। না হলে তিরিশ বার উপরে আসত আমাকে দেখতে একবার করে। এখন শুধু গরুর হাতে, জামাকাপড়ের একটা ছোট ব্যাগ দিলাম। ঘেমে গেলে এই এতো কিছু পরে উপরে আসা ঝামেলার। তার থেকে নিয়েই যাই নীচে। ঘেমে গেলে ছাড়িয়ে দেব ওকে ধুতি পাঞ্জাবী।

ড্রেসিং টেবিল এ রাখা রাকার গয়নার বাক্স টা খুলে মা, ডায়মন্ডের নাকছাবি টা পড়িয়ে দিল। আমি মানা করলেও মা শুনল না। এতো জোর খাটায় আমার মা টা।মা আর দুই আন্টি আর বোনের সাথে নেমে দেখলাম, নীচে টা ঝলমল করছে আলো তে। আমি যখন উপর সাজছিলাম, সেই সময়েই রনি একটা বসার জায়গা করেছে আমাদের। ইশ আমাকে কি এখন ওখানে বসতে হবে নাকি? ছিঃ ছিঃ ছিঃ। কি যে করে না এরা। আমার ছেলে দেখলাম, ঘুরে বেরাচ্ছিল নিজের মনে, আমাকে দেখেই দৌড়ে এল একেবারে। খানিক দেখে নিল আমাকে। বুঝতে পারছে না বেচারী, ওর মা এতো সেজেগুজে নীচে এলো কেন? আমি গিয়ে বসলাম সেখানে। ছেলে আমার মাঝে মাঝেই আমার কাছে এসে একবার আমাকে আদর করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আর রাকা, খুব বেশি হলে, দশ ফুট দুরেও যাচ্ছে না। নানা অছিলায় বার বার ঘুরে আমাকে দেখছে। কেউ আসলে ছবি তুলছে পাশে দাঁড়িয়ে। আবার সরে যাচ্ছে। আমি রনি কে ডেকে বলে দিলাম বেশ খ্যাঁক খ্যাঁক করে,
-     দ্যাখ এই সব ভুল ভাল আয়োজন, তোর কীর্তি আমি জানি। যা ছবি উঠছে, সম পরিমান ছবি যেন আমার ছেলের ওঠে। ওর খাওয়া, আনমনে থাকা, খেলা সব কিছু, মনে থাকবে? ও সাথে গরুর মেয়েও যেন বাদ না যায়।  

আমার দিকে কি রকম একটা ভাবে তাকিয়ে চলে গেল, আর যে ছবি তুলছিল তাকে কিছু একটা বলল। তার পর থেকে সে ছেলের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। যা ভাবে ভাবুক। এই ছবি তোলায় ব্যাপারে আমি রাকার মতন উচ্চবিত্ত নই। ও বিখ্যাত মানুষ। ওর ছবি তুলে লোকে ওকেই টাকা দেয়। আমি আবার নিম্নবিত্ত এই ব্যাপার। টাকা যখন দিচ্ছি, পুচকে দুটোর অনেক গুলো ছবি কেন তুলিয়ে নেব না?

মাঝে একবার সকলের সামনে রাকা আমার হাতে হীরের আংটি পরাল। আর আন্টি মানে রাকার মা, একটা প্ল্যাটিনামের খুব সাধারন বালা আমার হাতে পরিয়ে দিলেন। বুঝলাম, এই গুলো বড়লোকি চাল রাকার। দেখাচ্ছি বড়লোকি আমি। আর বাপি, রাকা কে বেশ একটা মোটা সোনার চেন পরিয়ে দিল। ওটা নাকি জামাই কে দিতে হয়। হায় রে, যখন ছেলে ছিলাম এই খানেই দুজনায় বসে কত পড়াশোনা করেছি। যেখানে আমরা বসে আছি এখন, সেখানেই শতরঞ্জি পেতে দুই জনে বসে ফুটবল খেলার গল্প করতাম। ওকে পড়া দেখিয়ে দিতাম। আর সেই জায়গায় দোলনা পেতে ও আমাকে বিয়ে করছে।

নাহ সন্ধ্যে টা বেশ ভালো কাটল আমার। কারোর মনে কোন খেদ ছিল না। কারোর চোখ দিয়ে অভিশাপ বর্ষিত হচ্ছিল না। সবাই শেষে এক সাথে ছবি তুললাম। রনির বউ ও এসেছিল। সবাই মিলে বেশ মজা করলাম আমরা। অনেক রাত এখন প্রায়। আমি এসে ভালো করে গা ধুয়ে নিলাম একবার। যখন আমার ভ্যাজাইনো প্লাস্টি হয়েছিল, তখন থেকে এই অভ্যেস টা হয়ে গেছে আমার। রাতে শোবার আগে শীত গ্রীষ্ম গা ধোয়া। হাইজিন মেন্টেন করতে হত আমাকে।

 তারপরে সব ধড়াচুড়ো ছেড়ে রাকার মা এর দেওয়া একটা পাতলা সুতির শাড়ি পরেছি। আজকে পরতে হয় নাকি শাশুড়ির দেওয়া শাড়ি। জানিনা এটা আমাদের বাড়ির ই নিয়ম নাকি রাকাদের বাড়ির। নরম বেশ। সাধারনত, নতুন শাড়ি খড়খড়ে হয়। কিন্তু এই শাড়ি টা দেখতেও বেশ ভাল আর খুব নরম ও। ব্লাউজ টাও বেশ ফিট করে গেছে। শুধু ব্রা টা গা ধোয়ার সময়ে খুলে দিয়েছি। অনেকক্ষণ পরে থাকলে যেন মনে হয় চেপে বসে গেছে একেবারে। পরিনি আর। আমি আর ছেলে থাকব তো। আর তো একটা দিন, কাল থেকেই স্কার্ট আর টপ পরে থাকব আমি।

 সব গয়নাই খুলে দিয়েছিলাম আমি। শুধু হাতের একটা লোহা মা পরিয়ে দিয়েছিল। সাথে শাঁখা পলা। ওই গুলো খুলতে মানা করে দিল মা। আমিও জানি এই দুটো খোলা যায় না বিয়ের পরে। আর মা বলল রাকার দেওয়া প্লাটিনামের বালা টা পরে থাকতে। আংটি টা কোন দিন ও  খুলতে মানা করল মা। আর নুপুর টা আমার পছন্দ হয়ে গেছিল, তাই ওটা আমি খুললাম না। একটা ছোট ঝোলা কানের মা পরিয়ে দিল, বিশাল কানের টা খুলিয়ে। থাক আজকে, কালকে খুলে দেব। আমার একটা ছোট সোনার কানের আছে সেটা পরে নেব। আর গলায় সোনার একটা চেন মা পরিয়ে দিল। বলল বারো মাস পরে থাকতে সেটা।

এসব করে আমি ছেলেকে নিয়ে ঘরে চলে এসেছিলাম। এখন ওরা মনে হয় সব ছাদে আছে। আমার বাপি আর মা এতো হুল্লোড় বাজ আমি জানতাম না। আমি যেতেও পারছি না, ছেলেটা ঘুমাচ্ছে আমার কোলে। কিছু পরেই ওরা সব নেমে এল নীচে। আমি বেরিয়ে গেলাম বাইরে। ঘরে এসে হল্লা করলে ছেলের ঘুম ভেঙ্গে যাবে। ছেলেটা পুরো সন্ধ্যে টা যে লেভেলের দৌরাত্ম্য করেছে বলার না।আর গরুর মেয়েকে সাথে পেয়েছে। তাই তো আমার কোলে আসতেই ঘুমিয়ে গেল ছেলে আমার। বাইরে বেরিয়ে দেখি, সবাই উপস্থিত। রনি আর রনির বউ চলে গেছে। ভাবলাম আচ্ছা ছেলে বাপু, একবার বলে গেল না আমাকে। যাক কালকে আসবে।

অঞ্জনার ড্যাড দের আমি যেতে দিলাম না। ওরা ভাই এর ঘর টা তে শুল। গরুর ঘরে গরু আর শমিত। মা বাপির ঘরে ভাই শুয়ে পরবে। আর আমার শশুর শাশুড়ি, মানে রাকার মা বাবা কে নীচের বড় ঘরে বিছানা করে দিতে এলাম আমি আর মা। ওরা সব নীচে ডাইনিং এ ছিল। রাকা কোথায় আমি জানিনা। মনে হয় বাড়ি চলে গেছে। বাঁচা গেছে। ছেলেকে বাপির কোলে দিয়ে বাপিকে বলে এলাম আমার ছেলের কাছে থাকতে, যতক্ষন না আমি নীচ থেকে আসি।
নীচে বিছানা করতে করতে মা কে বললাম,
-     ভালই হলো তবে

নতুন চাদর টা মা খুলছিল আর আমি পুরোনো টা সরিয়ে ভাঁজ করে রেখে দিচ্ছিলাম। মা অবাক হলো, বলল
-     কি ভাল হলো?  
-     সবার জায়গা হয়ে গেল শোবার।
-     হুম। আমি ওপরে যাব। তুই ছেলেকে ধরবি একবার। ওখানে ভাল করে বিছানা করে দিতে হবে। একটা ভাল বিছানার চাদর আছে আমার, সেটা পেতে দেব। আরেক টা বালিশ লাগবে। আর একটা পাশ বালিশ ও লাগবে।

আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। মা ব্যাটার শুতে আর কি লাগে? বললাম,
-     কেন? কিচ্ছু দরকার নেই। আমাদের যা আছে তাতেই হয়ে যাবে। আমরা তো রোজ ই শুচ্ছি মা।

চাদর পাতা হয়ে গেলে মা, বালিশ দুটো কে রাখছিল তখন, আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-     সে তোরা না হয় শুয়ে নিবি, রাকার জন্য তো লাগবে?

আমি তো আকাশ থেকে পরলাম। রাকা কোথা থেকে এলো আবার। না মানে বুঝতেই পারছি না। আমি তো ভাবছিলাম ও বাড়ি চলে গেছে। মাকে বললাম,
-     রাকা? ও কেন শোবে আমার ঘরে? ও বাড়ি যায় নি?

কটমট করে তাকাল মা আমার দিকে। বলল
-     না একদম না। আজকে আমার জামাই আমার বাড়িতেই থাকবে।
-     না না সে কি? ও কেন থাকবে মা এখানে? আমার ঘরে আমি আর আমার ছেলে থাকব। এটাই তো ঠিক ছিল। ও বুঝলাম, তোমরা ওকে অন্য ঘরে ব্যবস্থা করবে? কিন্তু আর ঘর কোথায়?

আমি আকাশ পাতাল ভাবছি। আর কোথায় ঘর? মা হাসি হাসি মুখ করে আমাকে বলল,
-     কেন? আমার জামাই, সেই ঘরেই শোবে, যেটা আমি জামাই এর জন্য ঠিক করে দেব। আর, শোন শিব, তুই শুনে কষ্ট পাবি, ওই ঘর টা আর তোর নেই।

মায়ের মুখ টা কেমন সিনেমার ভিলেন গুলোর মতন লাগছে একেবারে। কত ঠান্ডা মাথায় এই সব কঠিন কথা গুলো দুমাদুম বলে দিচ্ছে। আমি চমকে উঠলাম। প্রায় পরে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করলাম মাকে। এই ব্যাপার টার হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। বললাম,
-     মানে?
-     মানে হলো, গরুর ঘর টা যেমন এখন শমিতের, ঠিক তেমনি তোর ঘর আর তুই, এখন রাকার।আমি  ওই ঘর টা আর তোকে, রাকাকে দিয়ে দিয়েছি। হ্যাঁ তোর শশুরবাড়ি তে হয়ত রাকার সর্বস্ব এখন তোর। কিন্তু এখানে তোর সর্বস্ব আমার জামাই এর।

রাগে মাথা গরম হয়ে গেল আমার। এ আবার কি কথা? আমার বাড়ি আমার ঘর, আর সেটা ওই শুয়োরের হয়ে গেলো? আর আমি ওর হয়ে গেলাম মানে কি? বিয়ে করল বলে কি মাথা কিনে নিল নাকি? না না আমি কাজ করি, যথেস্ট মাইনে পাই। আমার ছেলেকে ল্যাভিশলি আমি মানুষ করতে পারব। মা কে তেড়ে গেলাম আমি,
-     এটা কি রকম হলো? আমার ওর কিচ্ছু দরকার নেই। বাস ওকেও বলে দাও আমার কিছুই ওর না। শুধু ছেলেটা দুজনের ব্যস। আমি তো বলেছিলাম যে বিয়ে টা আমি শিভের জন্য করছি। এই সবের তো কথা ছিল না। আর আমি ওর হয়ে গেলামের কি মানে। তোমাকে বলেছি না এই সব নাটুকে কথা আমার ভাল লাগে না। আমি আমার ছেলের। আর কারোর নই ব্যস।

মা একদম কুল। সব হয়ে গেলে, আমাকে বলল,
-     সব কথা কি বলে কয়ে হয় নাকি? আর নাটুকে কথা কি? আমি নাটক করছি? বহুকাল দু চার ঘা পরে নি না? পরলে মা কে নাটুকে বলতিস না। জানিস না নাকি, বিয়ে হলেই বউ বরের হয়ে যায়।

এতোক্ষন অব্দি ভালভাবে বলছিল, তারপরেই অধৈর্য্য হয়ে বলল,
-      চল চল, তোর সাথে ফালতু কথা বলার টাইম নেই আমার, উপরে গিয়ে বিছানা করতে হবে।

অদ্ভুত তো। প্রায় খেঁকিয়ে গেলাম মা কে।
-     ফালতু কথা মানে? আজকে আমার বিয়ে হলো মানে আমি আর তোমার কেউ নই?

কি জানি কেন ভিলেনি হাসি টা মা ধরে রেখেই দিয়েছে। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হাসি মুখ করে।
-     না… সেটা নয়। কিন্তু আমার থেকে বেশী তুই এখন রাকার। প্লিস ডোন্ট মাইন্ড।
-     তোমার ডোন্ট মাইন্ড এর আমার কোন দরকার নেই। ব্যস তুমি ওকে ওর বাড়ি গিয়ে শুতে বল। আমি ওর সাথে শুতে পারব না, ব্যস। শেষ কথা আমার।
-     আরে! ওর বাড়িতেও ওর জেঠু, জেঠি, দাদা, দাদার বউ আছে। ও ওদের কেই পৌঁছে দিতে গেছে।
-     তাতে কি হলো। ও এলে বলে দাও ও রনি র বাড়িতে যাক। যেখানে খুশী সেখানে যাক। আমাদের কাছে শোয়া হবে না ওর।

মা বেশ ইন্টারেস্ট নিয়ে আমার কাছে এসে বেশ রসিয়ে রসিয়ে বলল,
-     শোন , এটা এখন তোর উপরে নয় আর। ও চাইলে তোদের কে নিয়ে বলতে পারে আজকেই চলে যাবে ওর যেখানে ইচ্ছে। আমি আটকাতেও পারব না।

আমি অবাকের পরে অবাক হচ্ছি। না না মা যদি এই সব আগে বলত, আমি আরো ভাবতাম, বিয়ে করব কিনা। কিন্তু এটা কেমন অত্যাচার, যে আমাকে ওর সাথেই শুতে হবে, আমি আর ছেলে আলাদা শুতে পারব না? মায়ের মুখ টা আবার হাসি হাসি। বুঝলাম মা ইয়ার্কি মারছে আমার সাথে। বিয়ে হয়ে গেলে শুনেছি, মায়েরা মেয়েদের সাথে ইয়ার্কি মারে। অধৈর্য হয়ে পড়ছি এবারে আমি। মা কে বললাম
-     কি গো??? ইয়ার্কি মেরো না তো!! প্লিস মা ওকে বলে দাও না, আসতে হবে না আর এখানে।ও বাড়ি থেকেই ও রনির কাছে চলে যাক।  প্লিস মা।

মা পাত্তাও দিলো না আমাকে। এক গাল হাসি নিয়ে বলল
-     মরন নেই আমার! আমি ওকে বলব, যে তুমি আমার বাড়িতে এস না?  বাপরে বাপ! আমার জামাই ও। তারপরে ও কি যে সে জামাই? আমার ওসব কথা ভাবলেও পাপ হয়।  আমি পারব না ওসব বলতে। বলতে হলে তুই বোলগে যা। আমার কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবি না একদম।

হাসতে হাসতে কথা বলা শুরু করে রেগে যেতে আমার মা ই পারে। লাস্টের কথা টা রেগে বলে মা বেরিয়ে গেল। আমার এতো রাগ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না। মা কে প্রায় চেচিয়েই বললাম
-     মা আমাকে তুমি ফাঁসালে ইচ্ছে করে এ এ এ এ এ এ এ এ।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - শিবের শিব প্রাপ্তি অধ্যায় চার- নতুন পর্ব ২১ - by nandanadasnandana - 19-02-2022, 11:42 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)