Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
ঠিক হলো, জুন মাসের ২৫ তারিখে ভালো দিন আছে, সেদিনেই আমাদের রেজিস্ট্রি হবে। আমার মা আর আন্টি চেয়েছিল রাকাদের বাড়িতে একটা ছোট অনুষ্ঠান হবে। আমি সেটা চাইনি। কেমন লাগছিল আমার। মেয়েটা দু মাস ও হয় নি মারা গেছে। আর তার মধ্যেই এই সব। রাকা কে টেক্সট করে দিতে ও হয়ত কথা বলেছিল মা আর আন্টির র সাথে। বন্ধ হয়ে গেছিল।
মাঝে একদিন অঞ্জনার বাবা এসেছিলেন আমাদের বাড়ি। আমি প্রণাম করেছিলাম আঙ্কল কে। ছেলে কে নিয়ে অনেকক্ষণ ছিলেন উনি। খেলা ধুলা করলেন ছেলের সাথে। আমি চা নিয়ে গেছিলাম। মনে হয়েছিল আঙ্কল মনে হয় কিছু বলতে চান আমাকে। আমি চা দিতেই বললেন
-     আয় রে মা। রাকা আমাকে বলেছে বিয়ের ব্যাপারে, অনুমতি নিয়েছে আমার।

আমি কি বলব আর। দাঁড়িয়ে রইলাম চুপ্টি করে। আঙ্কল বললেন
-     ভাল হয়েছে রে। দাদুভাই টা কে দেখে মনে হলো ওর মেন্টাল হেলথ যেটা ডিগ্রেড করেছিল, সেটা খুব ভাল জায়গায় এখন। তোকে থ্যাঙ্কস দিলে তোকে অপমান করা হয় রে মা।

আমি হাঁ হাঁ করে উঠলাম
-     না না আঙ্কল, থ্যাঙ্কস দেবেন কেন? ও যে আমার কাছে কি, আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না।
-     হুম, আমি হয়ত বুঝি। যাই হোক, রাকা বলছিল, তুই নাকি রাজী ছিলিস না বিয়েতে?

চুপ রইলাম আমি। তারপরে বললাম,
-     হ্যাঁ। আমার ওকে বলে না, বিয়ের ই কোন ইচ্ছে ছিল না আঙ্কল। আপনি তো জানেন, কোন ন্যাচুর‍্যাল, গড মেড উওম্যান নই আমি। আমার মন টা মেয়ের ছিল, আমি মেয়ে হয়েছি। তাই বিয়েতে কোন ইন্টারেস্ট নেই বললেই চলে। আজকেও যদি কোন উপায় আসে, শিভ আমার ছেলে হয়ে গেল, তাহলে আমার রাকাকে বিয়ে না করলেও চলে।
-     না রে মা, ভাল করেছিস বিয়েতে রাজী হয়েছিস। রাকার ও কেরিয়ার অনেক টা বাকি এখনো। ওর একজন সঙ্গী দরকার। ওকে যে বুঝবে। ওকে যে ভালোবাসবে। আর আমি যতদুর শুনেছিলাম অনার মুখ থেকে, তোর থেকে রাকা কে ভালো করে কেউই আর চেনে না। যাই হোক, এতো ভাবিস না আর। আমি উঠব রে মা এবারে। মাঝে মাঝে আসব কিন্তু তোকে জ্বালাতে।
-     ওমা সে কী কথা আঙ্কল। একটা ফোন করে নেবেন আমাকে। আমি হয়ত স্কুলে থাকব ওকে নিয়ে। আপনি ব্যস্ত মানুষ, আমাকে বলে দিলেই আমি চলে আসব।
-     ধুর পাগলী , বুড়ো হয়েছি, শিভ টা বড় মায়াবী। তাই দেখতে ইচ্ছে করে। আসলে আমি এই সন্ধ্যের পরেই আসব। চলি রে মা।

তারপরে চলে গেলেন আমাকে আশির্ব্বাদ করে। চোখের জল লোকালাম কোনরকমে। আঙ্কল এর শেষ কথাটা আমাকে কাদিয়েই দিল। আমি হয়ত ওনার কষ্ট টা বুঝতে পারছি না। কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছি, আজকে যে যা কষ্ট লুকিয়ে রাখছে,সেটা সবটা শিভের জন্য। আমি তো নিশ্চিত, অঞ্জনার মা আর বোন আমাদের এই বিয়ে টা  মেনে নেবে না। জানিনা , কোন দিন দেখা হলে আবার কত টা অপমানের জ্বালা বুকে নিতে হবে আমাকে।  
 
রাকা কে বিয়ে করা টা আমার কাছে এক দিক থেকে বাধ্যতা অন্যদিক থেকে প্রয়োজনীয়তা। তাই চেয়েছিলাম হয়ে যাক তাড়াতাড়ি। কিন্তু মনে উত্তেজনার কোন জায়গা ছিল না। আমি তো রাকা কে দেখিনি, দেখেছি শিভ কে। আর শিভ আমার কাছেই ছিল। আমার খুব আশা, যে বিয়ের পরেও বিশেষ কিছু বদলাবে না। আমরা মা ব্যাটা তে থাকব যেমন আছি, আর রাকা থাকবে রাকার মতন। কিন্তু ওই যে বললাম, হিসাবে মানুষ অতো দড় নয়, কারন আমরা পার্থীব ব্যাপারে হিসাব করি, আর উপর ওয়ালা তো, কত জন্মের লার্নিং, পাপ, পূন্য হিসাব করে একটা আরেঞ্জমেন্ট ফিক্স করেন। যাই হোক, বিয়ে টা হয়ে গেল। আমাদের বাড়িতেই বিয়ে টা হলো। আমরাই ছিলাম। রাকাদের পরিবার, আমাদের পরিবার, রনি রনির হবু বউ আর অঞ্জনার ড্যাডি, মা আর বোন। আমার বোন এসেছিল বর আর মেয়ে নিয়ে। অঞ্জনার পরিবারের জন্য মা একটা ঘর ছেড়ে দিয়েছিল। ওনারা আসবেন, থাকবেন পুরো দিন। একটা ঘর তো লাগবেই। তারপরে ওনারা বেশ উচ্চবিত্ত। কাজেই মা এই ব্যবস্থা টা ওনাদের জন্য করেছিলেন। ওনারা যে এসেছেন এই বিয়েতে এটাই অনেক আমার কাছে। শিভের জন্য, ওনাদের আশীর্ব্বাদ দরকার ছিল।

কথা হয়েছে, সন্ধ্যে এবং রাত, রনি এই ক জনের জন্য, এবং রাকার গ্রামের বাড়ি আর আমাদের কিছু প্রতিবেশীর জন্য খাবার এর ব্যবস্থা করবে আমাদের বাড়িতেই। ওই জনা চল্লিশ মানুষের ব্যবস্থা। আমি আর না করতে পারিনি। রনি কে বলেছি টাকা নিতে। জানিনা কি করবে ও। সবাই বিয়ে নিয়ে মত্ত। আমার বিশেষ কিছু উত্তেজনা নেই। একটাই উত্তেজনা, আমি শিভের বৈধ মা এখন থেকে। লোকে বাপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আর আমার তো সারা জীবন ই চাকা উল্টো দিকে ঘোরে। যাই হোক দুপুরের খাওয়াও রনি ব্যবস্থা করেছিল।

একটা কথা চুপি চুপি বলে রাখি, যতই বিয়ে নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা না থাকুক, একটা ব্যাপার নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিল। সেটা হল, কোন রাখহরি র বউ হতে আপত্তি ছিল আমার। রাকার নাম রাখহরি সেটা আমি অনেক আগেই জানতাম। একটা সময় তো এসেছিল জীবনে আমার, যখন আমি ভেবেছিলাম, রাকা আমাকে গ্রহন করেছে। থাক সেসব কথা, কিন্তু সেই সময়েই আমার মনে হতো, ও আমাকে মেনে নিলে ওকে বলব, নাম টা বদলাতে। রাখহরি কারোর নাম হলো? আমি কিছু বলতে পারছিলাম না ওকে। কারন এখন কোন সম্পর্কই ছিল না আর আমাদের। কিন্তু টেনশন এ ছিলাম ব্যাপার টা নিয়ে খুব। তাই যখন সাইন করছিলাম, ম্যারেজ পেপার এ, রাকার নাম টা ভালো করে পড়লাম। দেখলাম, কথা মতন ও রাখহরি টা বদলে, রাকা করে নিয়েছে। কারন রেজিস্ট্রী পেপার এ রাকা চ্যাটার্জী ই ছিল। ও বুঝতে পেরেছিল সেটা। কারন সাইন করার আগে আমি দেখছিলাম পড়ে ওর নাম টা। সাইন করার পড়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।গা টা জ্বলে গেছিল আমার। নাটক যত! ও সাইন করল কি না করল আর দেখিনি আমি। ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম ওই ঘর থেকে।
[+] 13 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - শিবের শিব প্রাপ্তি অধ্যায় তিন- নতুন পর্ব ২০ - by nandanadasnandana - 16-02-2022, 11:42 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)