Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
বাইরে থেকে শুনলাম চিকনা জোরে জোরে কথা বলছে। আমি ভীতরে ঢুকে বললাম
-কিরে কি ঝামেলা?
-নারে ঝামেলা না, ও শালা অনাদি ঢেমনামো করছে।
-আবার শুরু করলি।
চিকনা কান ধরল নাকে খত দিলো, আর হবে না, বিশ্বাস কর। সিগারেটে একটা সুখ টান দিলো।
-কি হয়েছে বল।
-পদিবুড়ো ভিঁজে ধান নিয়ে এসেছে, আমি পাঁচ সের বাদ দিয়েছি, ও গিয়ে অনাদিকে রিপোর্ট করেছে।
-কি করে বুঝলি।
-অনাদিকে জিজ্ঞাসা কর আমি ভজিয়ে দিয়েছি। খামারে শুকনো করে দেখলাম, দশসের কম। আমার পাঁচ সের লস।
অনাদি হো হো করে হাসছে।
-পচা পাঁচুকে মাইনে দিয়েছিস।
-টাকা নাই। বলেছি অনি আসুক, পেয়ে যাবি।
-কিছু ধান বিক্রী করে দিলিনা কেনো।
-যে দামে কিনেছি তার থেকে পাঁচ সাত টাকা বেশি পাবো তাতে কি হয় বলতো।
-ধান থেকে চাল করার ব্যাপারে কি করলি।
-সঞ্জু মেশিন দেখে এসেছে। তুই বললে শুরু করবো। ধান সেদ্ধর জন্য জালন কিনতে হবে, চারপাখা উনুন বানাতে হবে। আরো পাঁচ-সাতজন লাগবে।
-জোগাড় করেছিস।
-সে কতোক্ষণ। বললেই চলে আসবে।
-অনাদি একটা বাজেট করে দেতো। তুই ধরে নিবি তোর হাতে দশলাখ টাকা থাকবে, এইটা ধরে।
-এতটাকা কি হবে।
-কেনো।
-তিন চার লাখ টাকা যথেষ্ট।
-কেন।
-এখানে অতো ধান পাবি কোথায়।
-চারিদিকে বলে রাখ, চকে আর ধান যাবে না, মাঝপথে এখানে সবাই দেবে, প্রয়োজনে চকের দামেই ধান কেনা হবে।
-তাই। তাহলে লাগবে।
-মেসিন–ফেসিন কি কিনতে হবে বললো।
-সে আর কত লাগবে, সঞ্জু। অনাদি বললো।
-লাস্ট যা কোটেসন নিয়েছিলাম হাজার চল্লিশেক বলেছিলো।
-তোর কত থাকবে। আমি বললাম।
-বেশি না হাজার খানেক।
-শালা ঢেমনা আমার কাছ থেকে বিজনেস। চিকনা বললো।
-কেনো তুই আমার নাং।
-উনা মাস্টারের মেয়েকে ভাঙচি দেবো।
-তোর দাঁতগুলো ভাঙে দেবো।
-আবার কার দাঁত ভাঙবে সঞ্জুদা। নীপা চায়ের ট্রে মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
-চিকনার।
-কেনো।
-তোকে বলা যাবে না।
-বাবাঃ গম্ভীর হয়ে গেলে যেনো, মনে থাকে যেনো কথাটা
-নীপা…….. চিকনা হাত তালি দিয়ে উঠলো। বলবো ওকে। পয়সা উসুল হয়ে যাবে।
-কি গো চিকনাদা।
-পরে বলবো, আগে মিষ্টিটা দে, চায়ের কাপটা নিচে রাখ।
সঞ্জু ভ্যাটকা মুখে বসে আছে। আমি বাসু অনাদি হাসছি।
-তোমার কীর্তিকলাপ নিয়ে ও বাড়িতে বিরাট আড্ডা বসেছে। হ্যাঁগো অদিতি কে?
-তুমি কি করে জানলে।
-মিত্রাদি সবাইকে তোমার গুণকীর্তন শোনাচ্ছে সবাই হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
-তুমি চলে এলে।
-এখন ইন্টারভেল, আমি গেলে আবার শুরু হবে।
-তার মানে জব্বর আড্ডা বসেছে বলো।
-অবশ্যই।
-তোমার অনিদা খুব ভালোছেলে ছিলো তো।
-আমার অনিদা কোনোদিন খারাপ ছেলে ছিলো না, আজও নেই।
-অনাদি একটা ছেলে জোগাড় করতো বিয়ে দিয়ে দিই।
-তুই খালি একবার আমাকে মুখে বল, আধঘন্টা সময় নেবো। চিকনা বললো।
-তার মানে!
নীপা চিকনার মাথায় একটা থাপ্পর মারলো
-শয়তান খালি পেটে পেটে বদ বুদ্ধি।
-জল মেশাতে দিবি।
-একবারে না।
-তাহলে রিপোর্ট জমা দেবো।
-দাওনা। কে বারণ করেছে। নীপা নাচতে নাচতে চলে গেলো।
-ঠিক আছে কাল একটা হিসাব করে দেবো তোর। এইবার উঠে পরে লেগে পর। আমি কাগজপত্র সব তৈরি করে নিয়ে এসেছি। দেখ ও বাড়িতে কোনো কাজ কর্ম আছে নাকি।
সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বললাম তুই দেখ লাইটগুলো একবার ঠিকঠাক জ্বলছে নাকি, পারলে একটু হেল্প কর ওদের গিয়ে, আর বড়মার ঘরটা একবার দেখে নিস, রাতে সমস্যা হলে মাথা ভেঙে দেবে
ওরা চলে গেলো। অনাদিকে বললাম
-উনা মাস্টার কি বলতে চায়।
-উনা মাস্টারের ইচ্ছে নেই, মাসিমার ইচ্ছে আছে।
-সঞ্জুতো খারাপ ছেলে নয়।
-শালা নেশা করে।
-বেশি না একটু আধটু।
-ওই আর কি।
-তুই কিছু বলিস না।
-বলি।
-আমি বললে কাজ হবে। তাহলে একবার স্যারের কাছে যাবো।
-তুই গেলে সলভ হয়ে যাবে।
-চল তাহলে এক ফাঁকে তুই আমি আর বাসু চলে যাই।
-তুই ঘটকালি করবি।
-প্রয়োজনে করবো।
বাসু হো হো করে হেসে ফেললো।
-হাসছিস কেনো।
-তোর আর কি কি বাকি রয়েছে।
-অনেক।
-জানিস অনি আজকে খুব ভালো লাগছে।
-কেনো।
প্রথম যেদিন ম্যাডামকে নার্সিং হোমে দেখেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম ম্যাডাম তোর প্রতি ভীষণ দুর্বল, আমি বাসু কতদিন আলোচনা করেছি, বলতে পারিস ভগবানের কাছে প্রার্থনাও করেছিলাম, তোর সঙ্গে ম্যাডামের মিল করিয়ে দিক, ভগবান সেই কথা শুনেছে।
আমি চুপ করে রইলাম।
-ম্যাডামের শরীর খারাপের দিন আরো বেশি করে বুঝলাম, তোকে বার বার খুঁজছে, ছোটোমা বসে আছে, তবু তোকে চাই। আমি বাসু আলোচনা করতে করতে সেদিন ফিরেছিলাম। বাসু লতাকে বলেছে, আমি কাঞ্চনকে বলেছি। ওরাও চেয়েছিলো, আজ শোনার পর ওদের কি আনন্দ তুই না দেখলে বিশ্বাস করবি না।
-তোরা একবার আমার কথাটা ভাব।
-ভাবি, তোর কতো দায়িত্ব, তার ওপর আর একটা দায়িত্ব বাড়লো।
আমি চুপ করে রইলাম।
-তোর মুন্নাভাই খুব ডেঞ্জার লোকরে।
-কেনো।
-পকেটে দুলাখ টাকা নিয়ে ঘুরছে।
-কি করে বুঝলি।
বাসুর দোকানে জামাকাপড় কিনলো, তারপর বাসুকে বান্ডিলটা দিয়ে বললো, তোমার যা হয়েছে, এখান থেকে হিসেব করে বার করে নাও। বাসুর হাত কাঁপা দেখিস নি। অত টাকা বাসু কোনোদিন দেখেছে, তাও আবার সব হাজার টাকার নোট। লোকটা কি করে।
-তিনটে জাহাজ আছে, মিডিল ইস্ট থেকে তেল নিয়ে আসে।
-আরি ব্যাস। তোর সঙ্গে কি করে আলাপ।
-কাজের মাধ্যমেই। ওকে দিয়ে এখানে কিছু ইনভেস্টমেন্ট করাবো।
-কি করবি।
-দেখি, নিরঞ্জনদার সঙ্গে আলোচনা করি।
-যাক মনে হচ্ছে আমরা এবার আলোর পথ দেখবো। কি আছে বলতো আমাদের, বর্ষা হলেই বন্যা ধান নষ্ট। সেই হাহাকার।
-দেখি কি করা যায়।
সিড়িতে হুরুম দুরুম আওয়াজ হচ্ছে, বুঝলাম সব দঙ্গল আসছে। বলতে বলতে মিত্রা এসে ঘরে ঢুকলো।
-বুঝলি বুবুন তিনটে টেস্ট করলাম, সুপার্ব, আরো তিনটে বাকি আছে, হলেই বসে যাবো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
ওর পাশ দিয়ে বড়মা ছোটোমা ঢুকলো, পেছন পেছন ইসলাম ভাই নিরঞ্জনদা। অনাদি বাসু উঠো দাঁড়ালো।
-বাঃ তোর ঘরটা বেশ ভালো। ছিম ছাম।
মিত্রা নিরঞ্জনদার কাছে এগিয়ে গেলো।
-এই হাতটা দেখেছো। মিত্রা নিজের হাত দেখালো
-হ্যাঁ দেখছি তো।
-এই হাতটার জন্য, বুবুন স্বীকার করবে, জিজ্ঞাসা করো।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-সত্যি মিত্রা ও তোর শত্রু না।
মিত্রা গম্ভীর হয়ে গেলো।
-নাগো ও না থাকলে হয়তো ভেসে যেতাম এতোদিনে।
মুখটা নীচু করে ফেললো। সবাই কেমন যেনো থমকে গেলো। নিস্তব্ধ।
আমি উঠে গেলাম, বড়মা ছোটোমা খাটে বসেছে, আমি মিত্রাকে নিয়ে বড়মার পাশে বসালাম, আমার দিকে তাকালো, চোখটা ছল ছল করছে। অনাদি বাসুকে ইশারা করলাম, ওরা বেরিয়ে গেলো।
-তুই আমাকে নিয়ে ওবাড়িতে কি কেরিকেচার করছিলি।
ও আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
-বিশ্বাস কর কিছু না।
-তাহলে আমি লুকিয়ে গিয়ে যে দেখে এলাম। সেটা ভুল। অদিতিকে এরা চিনলো কি করে।
-দেখছো ছোটোমা দেখছো, তোমরা শুনতে চাইলে তাই বলেছি।
-এই বার তোরটা বলি এদের সামনে।
-প্লীজ প্লীজ ও রকম করিস না। ওটাতো শুধু তোর আর আমার।
-ঠিক আছে আমি ছোটোমাকে ফুস মন্ত্রণা দেবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই সব লক্ষ্য করছিলো বুঝতে পারছিলাম।
-তুই বোস, সব শুনে যা কিছু বলার থাকে বলবি।
-মিত্রা ওইটা বার কর। বড়মা বললেন।
-ওই যা ভুলে গেছি, দাঁড়াও।
তড়াক করে উঠে আলমারির মাথা থেকে চাবিটা নিয়ে আলমারিটা খুলে ফেললো, ইসলাম ভাই দেখছে, একবার আমার দিকে তাকালো। একটা ফাইল বার করে বড়মার হাতে দিলো। আলমারিটা বন্ধ করে, আবার নিজের জায়গায় এসে বসলো।
-এটা তোর মল্লিকদা আর দাদা তোকে দিয়েছে। আজকের দিনটা উপলক্ষ্য করে। বড়মা আমার হাতে ফাইলটা দিলেন।
আমি ফাইলটা খুললাম, ১৯৬৯ সালের দুটো কাগজ। লাল হয়ে গেছে। আমি খুললাম, দাদার জীবনের প্রথম লেখা এই কাগজে, মল্লিকদারটাও তাই। হেসে ফেললাম।
-হাসছিস কেনো। বড়মা বললেন।
-এর অর্থ কি বুঝতে পারছো।
-কেমন করে বুঝবো। ওটা তোদের ব্যাপার।
-জানো বড়মা এতদিন এইদুটোর জেরক্স কপি আমার কাছে ছিলো, আজ অরিজিন্যাল পেলাম। এর সঙ্গে মিত্রাকে।
ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ময়ে। আমি আস্তে আস্তে কাগজগুলো ভাঁজ করে ফাইলের মধ্যে ঢোকালাম, ফিতেটা গিঁট দিয়ে। মিত্রাকে বললাম রাখ। পরে তোর কাছ থেকে চেয়ে নেবো, আমার জীবনের অমূল্য সম্পদের মধ্যে এটা একটা মনে রাখিস।
ও হাতে করে ফাইলটা নিয়ে পাশে রাখলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 21-02-2022, 12:00 PM



Users browsing this thread: