20-02-2022, 02:42 AM
ইসলাম ভাই এসে বললো
-মনে কিছু করিসনা অনি, আমি এখানে এসে সব জানলাম। এই প্ল্যানটা বহু দিন থেকে চলছে, এরা সবাই জানে, তোর বন্ধুরা আজ জেনেছে, বড়মা ওদের সব বলেছে, বিশ্বস্ততার সঙ্গে ওরা তা পালন করেছে। এমনকি বাজারে গিয়ে আমি ওদের সঙ্গে কত গল্প করলাম, তাও জানতে পারি নি, ওরা ঠিক তোর মতো তৈরি হয়েছে, বাসুর দোকানে যখন জামা-কাপড় কিনলাম, ও খালি জিজ্ঞাসা করেছিলো কার জন্য, আমি ওকে বলেছিলাম, বাকিটা ও গুছিয়ে দিয়েছে। আমরা আসার আগে এখানে সঞ্জু সব পৌঁছে দিয়েছে, তোর চোখে মুখে সন্দেহের ছাপ দেখেছি, কিন্তু তুই যে বুঝতে পারিস নি, তা জানি। তোকে এই মুহূর্তে আমার দেবার মতো কিছু নেই, তুই এখানে অনেক বড়ো কাজ করার জন্য এসেছিস, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি, এটা রাখ কাজে লাগবে, ইসলাম ভাই পকেট থেকে একটা হাজার টাকার বান্ডিল বার করলো
আমি হাতে নিলাম, তারপর ইসলাম ভাইকে বললাম এটা তোমার কাছে রাখো, প্রয়োজনে চেয়ে নেবো।
-ভুলে যাবি না।
হেসে ফেললাম। ইসলাম ভাই এর বুকে মাথা গুঁজলাম। মিত্রা ইসলাম ভাইকে এই ফাঁকে প্রণাম করলো। ইসলাম ভাই আমাকে ছেড়ে মিত্রাকে কাছে টেনে নিলো। দুই কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো
-ইসলাম ভাই তোর প্রণাম নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে নি। তোর প্রতি অনেক অন্যায় অবিচার হয়েছে, ইসলাম ভাই এবার সেই অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবে, তোকে কথা দিচ্ছি তোর চোখের জল বৃথা যায় নি যাবে না। ইসলাম ভাই মিত্রার কপালে চুমু খেলো।
ওরা সবাই কিছুনা কিছু নিয়ে এসে ছিলো, নীপাও নিয়ে এসেছিলো। সবাই একে একে মিত্রার হাতে তুলে দিলো। অনাদি আমার কাছে এগিয়ে এলো। ওর পেছন পেছন বাসু, সঞ্জু, চিকনা, পচা।
-তোর কাছ থেকে আজ একটা জিনিস শিখলাম, কাউকে বিশ্বাস করবি না, বিশ্বাস করার যোগ্যতা অর্জন করলেই তারপর বিশ্বাস কর, চোখটা আজ খুলে গেলো, তোকে কথা দিলাম, তুই আমাদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছিস তা যত কষ্টই হোক সফল করবো। এটা তুই রাখ, এটাই তোর সেরা অস্ত্র। এটা দিয়ে তুই এককাট লোককে বাঁচাতে পারিস, আবার একটা লোককে নির্দ্বিধায় খুন করে দিতে পারিস। অনাদি আমার হাতে একটা পার্কার পেন তুলে দিলো। আমি হেসে ফেললাম।
শেষে ভজুরাম দুটো অশ্বত্থ পাতা তুলে এনে আমার হাতে একটা আর মিত্রার হাতে একটা দিয়ে বললো
-অনিদা তুমি যে বলেছিলে কোনোদিন বিয়ে করবে না, তাহলে এটা কি হলো!
আমি হাসলাম
- বিয়ে করলাম কোথায়? তোর দিদিমনির সঙ্গে একসঙ্গে থাকার অধিকার অর্জন করলাম।
-ও। বিয়ে না।
-না।
-তাই সিঁদুর পরালে না। না।
-হ্যাঁ।
ভজু হাঁটতে হাঁটতে আপন মনে পুকুরের ওপারে ট্রলির দিকে চলে গেলো। আকাশের দিকে তাকালাম অশ্বত্থ গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে গাছের তলায় পরেছে। চারিদিকে আলোয় আলো, কি ঘটলো ব্যাপারটা, সত্যি কি এটা বিয়ে না ভালবাসার মিলন। পৃথিবীতে কোনটা সত্য বিয়ে না ভালোবাসা। বিয়ের মৃত্যু হয়, ভালোবাসার কোনো মৃত্যু নেই, নেই তার কোনো কেমেস্ট্রি। কোনো বৈজ্ঞানিক আজ পযর্ন্ত এর ব্যাখ্যা সঠিক ভাবে দিতে পারে নি। বড়মা এটা কি করতে চাইলো। বেঁচে থাকা, আশা, হোপ। মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রা নম্বরটা দেখে বড়মার হাতে এগিয়ে দিলো। দাদার গলা। ভয়েজ অন করা আছে।
-কাজ শেষ হলো।
-হ্যাঁ।
-কোনো ঝামেলা করে নি তো।
-না।
-ওটা নিয়েই আমার একটু টেনসন ছিলো। বড্ড মুডি।
-ও সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-দাও দাও।
বড়মা আমার হাতে ফোনটা দিলো।
-তোর কাজ ঠিক ঠিক করে দিয়েছি।
-তাই।
-কালকের কাগজটা দেখিস। সব এডিসনেই ফার্স্ট পেজটা চেঞ্জ করলাম না, ভীতরের পেজগুলো এ্যাডিসন, অল্টারেসন করলাম। তারপর বল।
-তুমি বলবে আমি আজ শুনবো।
-কেনোরে! আমি কি করলাম, আমি বলবো আর তুই শুনবি। এতকাল তুই বললি আমি শুনলাম। আজ আবার কি হলো।
-কি করো নি।
-আমি কিছু করিনি, তোর বড়মা আর মল্লিক।
-বড়মা আর মল্লিকদাকে প্ল্যানটা কে দিয়েছিলো।
-সেটা তুই বলতে পারিস, জানিস নিরঞ্জনকে তোর ব্যাপারটা যখন খোলাখুলি বলি ও আমাকে সাবধান করলো, বললো তুই নাকি রাইজিং সান, আমি পুড়ে যেতে পারি, শেষে ডাক্তার যখন বললো বুঝলে এডিটর খাঁটি ইস্পাত খুব সাবধান, হাত কেটে যেতে পারে। তখনই তোর বড়মাকে বলে ব্যাপারটা ঠিক করলাম।
-তুমি আমার কথা এতটা ভাবো।
-দূর পাগল, মন খারাপ করিস না। মানুষের বুক আর মুখ এক নয়, তুই তো আমার মুখ দেখেছিস, বুকটা দেখার চেষ্টা করিস নি। দে দে তোর বড়মাকে দে।
আমি বড়মার হাতে ফোনটা তুলে দিলাম।
-আমারটা ওকে দিয়েছো।
-না বাড়িতে গিয়ে দেবো।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। এইবারে মরণ বললে নাতো।
-যাঃ।
-একবার মরণ বলো। তোমার মুখে মরণ কথাটা শুনতে দারুণ লাগে।
-ধ্যুস।
-প্লিজ, প্লিজ।
-মরণ।
-থ্যাঙ্ক ইউ।
বড়মার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরলো। আমি বড়মার আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিলাম। বড়মা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিত্রার ফোনটা আবার বেজে উঠলো। বড়মা বললেন তোর সাথে কথা বলতে চায়, আমায় ফোনটা দিলেন।
দেখলাম মল্লিকদা। রিসিভ করলাম।
-কি গুরু পাটালি, জিলিপি একলাই খাবে।
-কোথায় খেলাম।
-তার মানে।
সঙ্গে সঙ্গে অনাদি চেঁচিয়ে উঠলো
-সত্যি তো, পচা নিয়ে আয় নিয়ে আয়। বিজয়ের ব্যাগে আছে। ওদেরও ডেকে আনিস।
-কি রে চেঁচামিচি কিসের?
-এখন সবার মনে পরেছে।
-সত্যি, তোর ছোটোমা টা একটা ঘটোৎকচ।
-কেনো।
-পই পই করে বললাম, ওটা অনির ফেবারিট জিনিস।
আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম। ছোটোমা মুচকি মুচকি হাসছে।
-তা গুরু কি রকম খেললাম বলো।
-আমি একটা গোল খেলে দুটো দিই।
-সে হবে না, এখন আমরা দলে ভারী, পাঁচজন, তুই একা। লড়তে পারবি না। বড়ে দিয়ে তোকে কিস্তি মাত করে দেবো।
-বুঝেছি।
-আমার জন্য একটু পাটালি আর জিলিপি নিয়ে আসিস।
-হবে না।
-কেনো।
-যার জন্য স্কীম করেছো, সে সব খেয়ে নেবে।
-না গো মল্লিকদা, মিথ্যে কথা বলছে। মিত্রা বললো।
-কিরে ভয়েজ অন নাকি।
-হ্যাঁ। এটাও তো তোমার স্কিম।
-যাঃ কি যে বলিস। আছে নাকি ধারে কাছে।
-থাকবে না মানে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
ছোটোমা চোখের ইশারায় না বলছে, আমি ভয়েজ অফ করে ছোটোমার হাতে দিলাম। ছোটোমা মল্লিকদার সাথে কথা বলতে শুরু করে দিলো। ওরা জিলিপি, পাটালি নিয়ে এসেছে, বার করার আগেই মিত্রা গিয়ে খাবলা মারলো। একটা নিয়ে এসে বড়মাকে হাঁ করতে বলে মুখে পুরে দিলো। আর একটা নিয়ে ছোটোমার মুখে তারপর নিরঞ্জনদার মুখে তারপর ইসলাম ভাই-এর মুখে গুঁজে দিয়ে, আবার ছুটে চলে গেলো খাবলা মারতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-চলে আয় না হলে এখুনি শেষ হয়ে যাবে।
হাসলাম।
-তুই এনে দে। বড়মা বললো।
-বয়ে গেছে। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
-সে কি রে।
-তুমি রাখোতো, আগে নিজে প্রাণ ভরে খাই তারপর। ও অনেক খেয়েছে, না খেলেও চলবে। বাসু, বুবুনের ভাগটা আমায় দিয়ে যাও।
বাসু হাসছে। একটা পাটালির টুকরো আর জিলিপি আমায় দিলো। মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো।
-তেল ভাত খেয়েছিস দুপুরে, খাস নি! বদ হজম হবে।
বড়মা আর হাসি চাপতে পারলো না, হো হো করে হেসে উঠলো।
মল্লিকদা নিশ্চই কিছু বলেছে, তাই ছোটোমা বললো
-আবার কে মিত্রা। সেই কাল রাত থেকে শুরু করেছে।
বাসু সবাইকে হাতে হাতে এসে দিয়ে গেলো।
নিরঞ্জনদা, ইসলাম ভাই হাসছে।
ওদিকে সঞ্জু আর চিকনার মধ্যে প্রায় হাতাহাতি হওয়ার জোগাড়, পচা সামলাচ্ছে।
মিত্রা ওদের দিকে এগিয়ে গেলো, পচা চেঁচিয়ে উঠলো
-ম্যাডাম আপনি আসবেন না যতক্ষণ থাকবে চলবে, শেষ হলে থেমে যাবে।
-আর নেই!
পচা বিস্মিত হয়ে বলে ফেললো, আরো লাগবে।
-থাকলে ভালো হতো।
-খেমা দেন, কাল সকালে এনে দেবো।
পচার কথায় আমরা হাসাহাসি করছি, নীপা মিত্রাকে সাহায্য করছে কাড়াকাড়ির জন্য।
বাসু ছোটোমার হাতে দিলো, ভজু এসব দেখে একবার নাচে একবার হাসে, আমার কাছে এসে বলে গেলো,
-অনিদা জিলিপির থেকে পাটালিটা দারুন। আমি ভজুর মাথায় একটা চাঁটি মারলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো শেষে মিত্রা নীপা দুজনে মিলে পাতা চেটে তার রস খেলো, তারপর নেমে গেলে পুকুরে হাত ধুতে, আমরা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম, ওরা সবাই গিয়ে ট্রলিতে বসলো, আমি মিত্রার কানে কানে বললাম, এখানে দাঁড়িয়ে কিছু চেয়ে নে পেয়ে যাবি।
ও আমার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে উত্তর দিলো, আমি নীচু হয়ে একটু মাটির গুঁড়ো তুলে ওর কপালে টিপ পরিয়ে দিলাম।
সবাই এগিয়ে চললাম, পেছনে আজকের এই মিলনের স্বাক্ষী থাকলো পীর বাবার থান।
রাস্তায় হৈ হৈ করতে করতে সবাই বাড়ি চলে এলাম। আসার সময় নিরঞ্জনদাকে বললাম
-রাতে একবার তোমার সঙ্গে বসবো, একটু দরকার আছে।
নিরঞ্জনদা বললো ঠিক আছে।
বাড়িতে আজ চারিদিকে লাইট জলছে। সঞ্জু কথা রেখেছে। আমি ঢোকার সময় কাকাকে প্রণাম করে সব বললাম, মিত্রা পাশে দাঁড়িয়েছিলো। কাকা হাসতে হাসতে বললো
-তোর বড়মা যাওয়ার সময় সব বলে গেলো, আমি গেলে তুই যদি বুঝতে পারিস তাই নিয়ে গেলো না। আজ খুব তোর বাবা-মার কথা মনে পড়ছে রে। কাকার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। যা ভেতরে যা।
আমি ভেতরে এলাম, দেখলাম রান্নার আয়োজন খুব একটা খারাপ নয়, লতা কাঞ্চন পাঁচু রান্নাঘরে কাকীমা সুরমাসিকে সাহায্য করছে। আমি দেখে হেসে ফেললাম। প্রিপ্ল্যান্ড সব ব্যাপার। খালি আমি বুঝতে পারলাম না। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে
-বল কি রকম দিলাম তোকে।
-রাতে আমার কাছে থাকবি এটা মনে রাখিস। সুদে আসলে তুলে নেবো।
মিত্রা নিঃশব্দে আমার কোমরে চিমটি কাটলো।
আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করলাম, কোনো আওয়াজ করলাম না।
মিত্রা দাঁত চিপে বললো ছোটোমা দেখছে।
আমি ছোটোমার দিকে তাকাতেই ছোটোমা হেসে ফেললো।
-খিদে পাচ্ছে।
-সব্বনাশ।
মিত্রা ছুটে গিয়ে বড়মাকে হির হির করে টেনে আনলো।
-ওরে কি বলবি তো বয়স হয়েছে কোথায় পরে মরবো।
আমার কাছে নিয়ে এসে দাঁড় করালো।
-বল।
-কি বলবো।
-এই যে এখুনি বললি।
-খিদে পেয়েছে।
শুনলে তোমার ছেলের কথা। কানটা ঠিক আছে তো।
ছোটোমা এগিয়ে এলো।
-তুই ওরকম ঝগড়া করছিস কেনো।
-ছোটোমাকে একবার শুনিয়ে দে।
বড়মা হাসছে। কোনো কথা বলতে পারছে না।
-মিত্রা বললে রাক্ষুসী, অনি বললে রাক্ষস হয় না, তাই না। ওর তো কোনো দিন খিদে পায় না। হাওয়া খেয়ে থাকে।
ছোটোমা এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে, হাসতে হাসতে মাটির সঙ্গে মিশে যাবার দশা।
নীপা চারটে রসগোল্লা নিয়ে এলো প্লেটে করে।
-একবারে দিবি না। আগে আমার জন্য আন, তারপর।
-আচ্ছা আচ্ছা তোকে দিচ্ছে।
-না আগে আনুক তারপর ও খাবে।
আমার প্লেট থেকে একটা নিয়ে মুখে পুরে দিলো।
নীপা আসার আগেই তিনটে সাবার।
-কিগো অনিদা এরই মধ্যে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে। কথা বলো না রসগোল্লার রসে বিষম লেগে যাবে।
খাওয়া শেষ করে নীপার হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে কোঁত কোঁত করে জল খেলো।
-ওঃ কিছুটা কমলো।
-কি কমলো। ছোটোমা বললো।
-যা খিদে পেয়েছিলো। আমি হাসতে হাসতে চিকনা, অনাদিদের ঘরে গেলাম