Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......
ইগর কোন ভাবেই রিস্ক নিল না। পাকিস্তান বলেই হয়ত। হারা যাবে না। ১- ০ তে ভারত জিতল। রাকা ছিল মাঠে ৬৫ মিনিট। ওকে মনে হয় বলে দেওয়া ছিল বেশী ফুল না ফোটাতে। যতদুর খেলা আমি বুঝি, তাতে মনে হলো, ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইং এ রাকা খেলছে। তাই যত টা সম্ভব ওকে লুকিয়ে রাখার প্রচেস্টা। আর হয়ত মাস খানেক আছে। টিম গুলো সব কটা এশিয়া র‍্যাঙ্কিং এ উপরের দিকে।


                                                            পর্ন উনিশ
মনে আমার খুব শান্তি, যেদিন কোয়ালিফাইং এর জন্য ইন্ডিয়া টিম এ রাকা মনোনীত হলো। অনেকক্ষণ কথা বললাম ওর সাথে। কিন্তু সেদিনের ওই সবের পরে আমার আর কিছু কথা বলা হয় নি ওর সাথে, ওই ব্যাপারে। মানে আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। আর মনে মনে চাইছিলাম যেন রাকাও কিছু না বলে। কেমন একটা ভয় লাগত মনে মনে। ভাবছিলাম, ও যেন ভুলে যায় সেই দুটো দিন। এমন না যে আমি চাই না আর অমন দিন আমার জীবনে। আমি চাই খুব চাই। আমি এখন মেয়ে। কিন্তু ছেলেদের উপরে কোন দুর্বলতা নেই আমার, রাকা ছাড়া। যদি ও কোন দিন আমাকে চায়, ওকে ফিরিয়ে দিতে আমার খুব কষ্ট হবে। কিন্তু বাকিদের ফিরিয়ে দিতে আমার এক সেকেন্ড এর বেশী সময় লাগবে না আমি জানি। আমি বুঝেছি রাকা হয়ত উত্তেজনার বশে করে ফেলেছে ওই সব কাজ কর্ম। সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে করে ফেলেছে ও আমি বুঝেছি। এখন ঘেন্না পাচ্ছে ওর। ওর ওরিয়েন্টেশন স্ট্রেট আমি জানি। কত ছোট থেকে অঞ্জনার উপরে ওর ক্রাশ, সে কি আমি জানি না? আর যতই হোক ওর সামনেই আমি ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছি। ওর থেকে ভালো আমাকে আর কে চেনে? কাজেই সেদিনের কাজ টা করে হয়ত আফসোস করছে মনে মনে। আর আমি ওর সব থেকে কাছের হয়ে ওর বিব্রত হওয়া টা বাড়িয়ে দেব, সেদিনের কথা তুলে, সেটা কি হয় নাকি?

আর সত্যি তো আমাকে ফোন করা ও কমিয়ে দিয়েছে সেদিনের পর থেকে। ব্যাপার টা আমাকে ভাবাচ্ছে। আমাকে আবার ওর সাথে আগের মতন ব্যবহার করতে হবে। আমার ই বাড়াবাড়ি। এমন হলো সেদিনে যে মনে হচ্ছিল, ও আমাকে নিজের করেই নিল। আর আন্টি? সব সময়ে আমাকে দেখে মুচকী হাসছেন। আমার ও মনে মনে রাকা কে নিয়েই জাল বোনা শুরু হয়ে গেছিল। কিন্তু ভেবে দেখলাম আমি, সম্ভব না। আমি ওর সাথে, ওর পাশে থাকব সারা জীবন, কিন্তু ওর সঙ্গিনী হয়ে নয়। থাকব ওর বন্ধু হয়ে। শরীর চাইলে দেব। ওকেই দেব। কিন্তু ওকে বিব্রত করে নয়। ওর জীবনের সাথে জুড়ে গিয়ে নয়। ওর অরিয়েন্টেশন বিগড়ে দিয়ে নয়। আমার মতন মনের জোর ওর নেই। ও সহ্য করতে পারবে না চারিপাশের আওয়াজ। এই সব চক্করে, ওর সাথে কথা বলতেই আমার লজ্জা লাগতে শুরু করেছিল। আর সেটা ও বুঝতে পারছিল। নাহ আর নয়। আমাকে এই সব ছাড়িয়ে ওর পাশে দাঁড়াতে হবে। সবে কেরিয়ার শুরু ওর। এখন ওকে এই সব মানসিক চাপে না ফেলাই ভালো। আমাতে ও বন্ধু খোঁজে, বধু নয়।

কিন্তু মাঝে ভারত একটা ম্যাচ খেলল, নিজের থেকে অনেক শক্তিধর উজবেকিস্তানের বিপক্ষে। বস্তুত এই ম্যাচ টা রাকার জীবনে মারাত্মক টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। ১৯৯২ সালে রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে যাবার পরে, এশিয়ান ফুটবল আর্মার এ উজি রা বেশ আগের দিকেই আছে। তার আগে অব্দি উজি দের ন্যাশনাল টিম থাকলেও, রাশিয়ান দের থেকে ১৯৯২ সালে বেরিয়ে আসার পরে, ওদের উত্থান এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন হয়েই হয়েছিল। স্বপ্নের উত্থান। যাই হোক, ওদের খেলা ও ইউরোপ ঘরানার খেলা। আসলে ইজবেকিস্তানের সাথে ম্যাচ টা হবার কথা ছিল, নিউজিল্যান্ড এর। কিন্তু নিউজিল্যান্ড খুব কম সময় আগে জানিয়ে দেয়, ভিতরের কোন সমস্যার কারনে খেলতে পারবে না। ভারত কে অনুরোধ করায় ইগর মানে ভারতের কোচ একেবারে লুফে নিয়েছিল প্রস্তাব টা, নতুন ছেলে গুলো কে ভাল করে দেখে নিতে। ইগর জানত ও টিম বানাচ্ছে পরের বিশকাপের জন্য। কিন্তু কারা দূর অব্দি যেতে পারবে সেটা কোচ হিসাবে ওর দেখে নেওয়া দরকার ছিল। দুবাই তে খেলা হলো। এক গরমের সন্ধ্যা বেলায়। আমরা খেলা দেখলাম বিকাল চারটে তে।

আমি দেখেছিলাম খেলা টা। আমি অমন খেলা খুব কম দেখেছি। দুটো অসম শক্তির দলের খেলা। উজি রা স্বাভাবিক ভাবেই ভারত কে ধর্তব্যের মধ্যে নেয় নি। লম্বা লম্বা সব ছেলে। হতে পারে ওরা তিরিশ বছরের দল। কিন্তু ওদের ন্যাশনাল টিম ফর্ম করে গেছিল ১৯২২ সালেই। বলতে গেলে ফুটবলের বিশ্বকাপ, ওদের ন্যাশনাল টিম জন্মাতে দেখেছে। ভারত কে পাত্তা দেবেই বা কেন? কিন্তু অপমান করা ঠিক না। ভেবেছিল, হিউমিলিয়েট করবে ভারত কে। বেচারী ইগর। শেখাতে এনেছিল ছেলেগুলো কে। কিন্তু ম্যাচের মাঝামাঝি তে ওকে মনে হয় নিজের চিন্তা বদলাতে হলো। ইগর রাশিয়ান, রাগ টা সেখানে হয়ে গেছিল ওদের। ২-০ এ ভারত পিছিয়ে পরল ৩০ মিনিটেই। ইগর ভেবেছিল, সব কটা নতুন কেই নামাবে এক এক করে। কিন্তু ৩২ মিনিটে একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেল মাঠেই। রাকা তখন সাইড বেঞ্চেই। নামায় নি ওকে কোচ।

৩২ মিনিটে ভারত একটা চান্স পেল। সুনীল বল টা পেয়েছিল, উজিদের বক্সের ডান দিকে, দশ গজ বাইরে। প্রথম চান্স ভারত তৈরি করেছিল সেই ম্যাচ এ। কিন্তু সুনীল এর শট  টা উজবেকিস্তানের এক জন ডিফেন্ডার এর মাথায় লেগে যায়। যথেষ্ট জোর ছিল শট টার। ডিফেন্ডার টার নাম ছিল ফারুখ। ৪ নাম্বার জার্সি পরে খেলছিল। সুনীল চান্স টা মিস করলেও ছুটে গেছিল, ফারুখ এর কাছে। কারন ফারুখ, শট মাথায় নিয়ে পরে গেছিল ফিল্ড এ। সুনীলের সাথে ওখানে থাকা ওখানে থাকা ভারতের রহিম আলি আর সামাদ ও ছুটে গেছিল। ওদের ও রুস্তম আর টর্সুনভ ছুটে এসেছিল। কিন্তু রুস্তম বলে প্লেয়ার টা সুনীলের গলায় হাত দিয়ে ঠেলে ফেলে দিলো মাঠেই। একটা ঝামেলা হলো। কিন্তু খারাপদের সাথে ভালো রাও থাকে মাঠে। তারাই এসে ব্যাপার টা ম্যানেজ করল। ওদের ১০ নাম্বার টা, মাশারিপভ ছুটে এল। দারুন খেলছিল ছেলেটা। যাইক হোক এর পর থেকে রুস্তম সহ বাকি উজি ডিফেন্ডার রা ভারতের প্লেয়ার দের ইচ্ছে করেই ফাউল করতে লাগল। ইংলিশ কমেন্টেটর রা বলছিলেন বারংবার, ফ্রেন্ডলি ম্যাচে এমন হওয়া উচিৎ নয়। হাফ টাইমের আগেই সুনীল কে একটা মারাত্মক ট্যাকেলে নিল উজি ডিফেন্ডার রা।

ততক্ষন রাকা সাইডবেঞ্চ এ বসেই ছিল। হাফ টাইমের পরে রাকা নামল প্রথম থেকেই। সুনীলের জায়গায় কেউ নামল না। ভারত একটা স্ট্রাইকার এ চলে গেল। রাকা কে নামানো হলো, ৩০ নাম্বার জার্সি পরিয়ে। নামানোর আগে দেখছিলাম, ইগর আর বেঙ্কটেশ কে অনেকক্ষণ কথা বলতে রাকার সাথে। রাকা নামার সাথে সাথে, ইগর যে ওকে এতোদিন আটকে রেখেছিল সেটা বোঝা গেল। বল পেতেই এগিয়ে যাচ্ছিল মারাত্মক গতি তে। ওরা অতো টা গুরুত্ব দেয় নি রাকা কে। কিন্তু গুরুত্ব দিতে শুরু করল ৫৪ মিনিটে গোল টার পরে। ভারত বল পেলেই ওরা জোনাল মার্কিং এ চলে যাচ্ছিল। সব থেকে বড় কথা টিপিক্যাল ইউরোপিয়ান ঘরনার খেলায়, গোল মুখ জ্যাম করার প্রবনতা থাকে। কাউন্টার আট্যাক নির্ভর খেলা। ভারতের শক্তি সামর্থ্য কম। আর ওদের অনেক বেশী। তাই ভারত আক্রমন তুললে ভয় লাগছিল আমার, কাউন্টারে গোল না খেয়ে যায়। প্রিতম, শুভাশিস,রাও ভেকে এরা মারাত্মক লোড নিচ্ছিল। কিন্তু লোড টা বেশী হলে আর কতক্ষন টানবে ওরা। কিন্তু রাকা আসার পর থেকে, বল টা ডিফেন্সে কম আর মিডফিল্ডে বেশী থাকছিল। আর এই ব্যালান্স টা থাকা দরকার। না হলে ক্লান্তি চলে আসবে। হ্যাঁ এরা অনেক দৌড়তে পারে। কিন্তু সেটা ক্ষনিকের জন্য। মাঝে দম পেলেই একটু আবার এদের এনার্জি বক্স ফুল হয়ে যায়। আর রাকার কাছে দুজন কে চকিতে ডজ করা কোন ব্যাপার ছিল না। তারপরে পাস কাউকে না কাউকে। রাকা আসার পরে মনে হলো ভারতের ইঞ্জিনে দম চলে এসেছে। কিন্তু রাকার উপরেও লোড বেশী পরবে এবারে। টাচ এ খেলতে লাগল পুরো টিম টা। রাকার সাথে তাল মিলিয়ে জ্যাক্সন, সামাদ আর মার্টিন দারুন খেলতে শুরু করল। রহিম ও নেমে এলো নীচে অল্প। ওয়ান টাচ এ চলতে লাগল ওদের খেলা। মনে হলো, ভারত আর গুটিয়ে নেই। 
  
একটা অস্থিরতা এলো উজি দের মধ্যে। দুই গোলে এগিয়ে আছে ওরা। দরকার ছিল না অস্থিরতা দেখানোর। কিন্তু ভারত কে পাত্তা দিলো না ওরা। ওরা ভেবেছিল ছিঁড়ে ফেলবে ভারত কে। আরো বেশী গোল চাইছিল ওরা। নিউজিল্যান্ড কে দেখানোর ছিল যে ওরা ভয়ে খেলতে আসে নি। কিন্তু ৫৪ মিনিটে, বল টা এক প্রস্থ ঘুরে রাকার কাছে আসতেই, দেখলাম রাকা কে হাফ লাইন থেকে গতি তুলতে। ভারতের টিম টা ততক্ষনে একটা কনফিডেন্স পেয়ে গেছে। রাকার সাথে পাশে মিডফিল্ডার গুলো ও গতি তুলল সামনে দিকে, নিজেদের জায়গা বানিয়ে রেখে। রাকা গতি তুলতেই, রুস্তম বলে ডিফেন্ডার টা এগিয়ে এলো, কিন্তু রাকা শুধু বাঁ পায়ের ফলস মুভমেন্ট আর রাবারের মতন কোমরের মুড়কিতেই ওকে বোকা বানিয়ে ফেলল, বলে পা না দিয়েই। রুস্তম কেটে গিয়েই পিছন ফিরে রাকা কে তাড়া করল। কিন্তু অফ দ্য বলের থেকেও দেখলাম অন দ্য বল বেশী বিপজ্জনক। তীব্র গতি তে রুস্তম পাত্তাই পেল না। সামনে দুজন আসছে আর ও। দুজনায় দুদিক দিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে কাবাডি খেলার ভঙ্গী তে রাকার দিকে। রাকা বাঁ দিকের টা কে বাছল। ৫ নাম্বার জার্সি পরেছিল টর্সুনভ। রাকা নিজের বাঁ দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছে। এতো বড় পা ফাঁক করেছিল টর্সুনভ। প্রপার নাট্মেগ করে রাকা ছোট্ট একটা জাম্প করে ওকে পেরিয়ে গিয়েই মাথা নিচু করল। মাথা নিচু করছে কেন ও? ওখান থেকেই শট নেবে নাকি? রাকা না না না না না। এতো সুন্দর আক্রমন টা ভেস্তে যাবে রাকা। সামনে অনেক ডিফেন্ডার ওদের । আর একটু এগো। রাকা!!!  কিন্তু… শুনতেই পেল সবাই আওয়াজ টা। বাঁ পায়ে, পায়ের পাতার উপর দিকে শট টা নিল ও। বুঝলাম স্যুইং চাইছে না ও। গুপ করে আওয়াজ টা হলো। প্রায় তিরিশ গজ দূর থেকে শট টা নিল ও, মুখ টা মাটির দিকে প্রায় গুঁজে। রকেটের মতন গতিতে গিয়ে উজিদের ডান দিকের জালে, উপরের কোন দিয়ে ঢুকল বলটা। পারফেক্ট লিফট পারফেক্ট পাওয়ার। আর গোলে ঢোকার আগে হালকা আউট স্যুইং করল বলটা। ওদের গোলকিপার এল্ডোরবেক শূন্যে ঝাঁপিয়েও কোন কিনারা করতে পারল না। পারফেক্ট স্যুইং।

বাপরে!!! এতো জোর শট? কে বলবে ওই টিংটিং এ ঠ্যাঙে এতো জোর ওর?  দুবাই তে অনেক ভারতীয় থাকেন। স্টেডিয়াম একেবারে গর্জে উঠল ওই গোলে। ইগরের মুখ টা কঠিন হয়ে গেলো আরো। চোয়াল টা যেন ফুলে উঠেছে ইগরের। উচ্ছ্বাস নেই ওর কোন। রাকাও কোন উচ্ছ্বাস করল না। ওর ট্রেডমার্ক উচ্ছ্বাস, ডান হাত টা মুঠো করে দুবার ঝাঁকানো। কিচ্ছু নেই। রহিম বল টাকে গোল থেকে তুলে নিয়ে চলে এলো সেন্টার লাইন এ। আর আমার ভাই জলের বোতল উলটে ফেলল। বাপি চায়ের কাপ চলকে , চা ফেলে দিল লুঙ্গি তে নিজের। আর আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারছি না কি হয়ে গেল একটু আগে। এর পরে লোকে দেখল এক নতুন ভারত কে। আমাদের ডিফেন্ডার গুলো যেন প্রান দিয়ে দেবে এমন ভাবেই খেলছিল। রাকার এবিলিটি আর এজিলিটি সেদিনে পুরো এশিয়া দেখল আর দেখল উজবেক রা। সত্তর মিনিটে, জ্যাক্সন এর ক্রসে রহিম আলির বলটা জালে জড়াতেই আবার একবার মনে হলো ভুমিকম্প হচ্ছে স্টেডিয়াম এ। উফ কি যে আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না আমি। রাকার পা থেকেই বলটা আমাদের জ্যাক্সনের কাছে গেছিল, জ্যাক্সন ক্রস টা তোলার আগে।

নব্বই মিনিট  ২-২ এ ছিল ম্যাচ টা। ততক্ষনে উজবেক রা বুঝে গেছে, ভারত কে গুরুত্ব না দেবার প্রতিফল। কিন্তু বাকি ছিলো আর ও কিছু।ইনজুরি টাইমে রহিম কে ফাউল করল ওরা। উজি বক্সের বাঁ দিকে প্রায় তিন চার গজ দূরে ফ্রী কিক টা ভারত পেল। জ্যাক্সন ১০ নাম্বার প্লেয়ার। ওই নিত ফ্রী কিক গুলো। ভাবলাম ওই নেবে। ততক্ষনে উজবেক রা একটা ওয়াল তুলেছে ৫ প্লেয়ার এর। গোলকিপার নিজে দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের বাঁ দিকে। কারন ওই দিকের দূরত্ব সব থেকে কম। কাজেই সব গোলকিপার ই ইজি দিক টা গার্ড নেবে। ছেড়ে রাখবে সেই দিক টা যেদিক টা কঠিন। ওদের ওয়ালের পিছনেও দুটো গার্ড। গোলকিপারের সেকেন্ড বারে একটা জন মোতায়েন। ওদের প্ল্যানিং হয়ে গেলে দেখলাম, টিভি তে দেখাচ্ছে, জ্যাক্সন রাকার মাথায় চুমু খাচ্ছে। মানে রাকা নেবে ফ্রী কিক টা। যাক তাহলে সুযোগ আছে। ওর বাঁ পা তো ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী।

হুইসল বাজতেই, সেকেন্ড চারেক থম মেরে গেল স্টেডিয়াম। আমি মনে হচ্ছে নিজের নখেই নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলব এবারে। নাহ নখ কেটে ফেলতে হবে আমাকে রাকার খেলা থাকলে। একেবারে শান্ত মুখ। দ্বিতীয় কেউ নেই রাকার পাশে, মানে হলো রাকাই নেবে ক্রস টা। গোলের মুখ গিজ গিজ করছে একেবারে। আমাদের হাফে শুধু প্রীতম আর শুভাশিস। দুই অতন্দ্র প্রহরী। বাঁ পা যে কারোর এতো বড় ঘাতক হয়, সেটা আমরা মারাদোনা আর মেসি দেখেই জানি। আর ইউরোপের ইউসেবিও, হাজি, স্তোইচকভ। আজকে এশিয়া দেখল ওদের ও বাঁ পায়ের জাদুকর চলে এসেছে। বাঁ পায়ের পাতার একেবারে নীচের সেকশন দিয়ে বল টা লিফট করালো রাকা। শুরু থেকেই বল টা তে ও রোটেশন দিল।  উফ…… মনে হলো বল টা বেরিয়ে চলে যাবে। ওয়াল টা কে হালকা ডান দিয়ে রেখে বল তা ওয়াল টা ক্রস করেই, রোটেশনের চক্করে স্যুয়িং নিতে শুরু করল। মাঝে ডিফেন্ডার গুল ওদের আর আমাদের প্ল্যেয়ার গুলো মাথা ছোয়ানোর বৃথা চেষ্টা করল। বল টা ততক্ষন অব্দি স্যুইং নিল যতক্ষন না ডান দিকের বারের কোনা টা পায়। ওদিকে গোলকিপারের কিচ্ছু করার ছিলো নি। বেচারী দেখল, নিরীহ একটা ভারতীয়র, একটা নিরীহ শট কত খানি গরল উগরে দিতে পারে। আমি আর দেখতেই পেলাম না কিছু। ভাই আর বাপি মিলে এমন লাফালাফি শুরু করল টিভি টাই গার্ড হয়ে গেল। আমার মা পড়িমরি করে ছুটে এলো।

ইশ ততক্ষনে ছেলেটা কে সবাই একেবারে চেপে ধরে গায়ে উঠে পরেছে। উফ লেগে যাবে তো ওর!!!  ওমনি ভাবে কেউ ওর উপরে চেপে পরে নাকি? আহা রে, মুখু টা দেখ, যেন কিচ্ছু করে নি? শয়তান একটা।
এদিকে আমার পড়াশোনার চাপ বাড়ছে। আমি ততই পড়াশোনায় বেশী ডুবেও যাচ্ছি। রনি মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। মাঝে মাঝে রনির সাথেও বেরোই তবে সেটা অনেক কম। রাকা নাকি রনি কে দেওয়া টাকা টা ফেরত দিতে গেছিল। রনি নেয় নি। সে ওদের বন্ধু দের ব্যাপার। আমি আর কি বলব? সে বছরেই আমার ফাইনাল ইয়ার ছিল। খুব পড়তাম আর আমি আর রনি তাশীর তিন মাথার মোড়ে, আমাদের চেনা দোকানে বিকালে গিয়ে বসতাম।আড্ডা দিতাম আমি আর রনি। রনির কিছু বন্ধু ও আসত। আমার পরিচিতি বাড়ছিল। কিন্তু আমার মন পরে থাকত ওই উজবুক টার কাছে। মনে হতো কবে আসবে ও।

বড্ড মন খারাপ করত তখন রাকা টার জন্য। এতদিন বের হতে পারতাম না বাড়ি থেকে ভ্যাজাইনোপ্লাস্টি র কারনে। তখন মন খারাপ হলেও সেটা অন্য রকম ছিল। এখন বেরোচ্ছি। সেই সেই জায়গা গুলো দেখতে পাচ্ছি যেখানে গত নয় বছর আমরা নানান পরিস্থিতি তে, নানান সময়ে সময় কাটিয়েছি। কিছু ছেলে ছিলাম তখন কাটিয়েছি, কিছু মেয়ে হবার পরে কাটিয়েছি। সেই জায়গা গুলো দেখছি আর মন টা হুহু করছে শয়তান টার জন্য। ফোনে তো কথা বলি, কিন্তু এ ব্যাথা অন্য ব্যাথা। সেটা রাকা বা রনি কেউ বুঝবে না।

সন্ধ্যে হয়ে গেলে রনি চলে যেত নিজের ধান্দায়, আর আমি চলে জেতাম রাকার বাড়ি। আন্টি ততক্ষনে ফিরে যেতেন কাজের থেকে। বসতাম বেশ কিছুক্ষন। আন্টির সাথে কথা বলতাম। রাকাদের বাড়ী টা হচ্ছিল তখন। না জানলেও খানিক তদারকি করতাম। জোর করেই এক প্রকার, বাড়ির ভিতরে আমি একটা টয়লেট আর ওয়াশরুম বানিয়েছিলাম। খরচার কথা বলতেন আন্টি। আমি বকে দিতাম আন্টি কে। ছেলে এতো রোজগার করছে, আর একটা ভালো করে বাড়ি বানালে কি ক্ষতি? আমি রাতে রাকা ফোন করলে ঝেড়ে দিতাম বেশ করে ওকে। বেচারী চুপ চাপ ঝাড় শুনে পরের দিন আঙ্কল এর একাউন্ট এ বেশ কিছু টাকা পাঠিয়ে দিত।নিজের মা কে এতো ভয় পায় যে বলার না। আর আন্টীও কিছু বলে না।তারপরে, একটু দেরী তে আঙ্কল ফিরতেন অফিস থেকে। সেই সময়ে কোন দিন আন্টি ব্যস্ত থাকলে, আঙ্কল কে চা জল দিতাম। বা কিছু সন্ধ্যের খাবার বানিয়ে খেয়ে দেয়ে বাড়ি ফিরতাম।

বাড়িতে ফিরে মা কে হেল্প করে দিতাম। বাপির সাথে কিছু খুনসুটি করতাম। ভাই তখন টেন্থ দেবে আর গরু মানে আমার বোন ফার্স্ট ইয়ার। তাই ভাই কে নিয়ে বসতাম, ওর দরকারে ওকে হেল্প করে দিতাম। তারপরে রাতে রাকার সাথে কথা বলে খেয়ে দেয়ে পড়তে বসতাম। রাকা না থাকলে ভোরে ওঠা হত না আমার। কাজেই রাত অব্দি পড়ে, সকাল টা ঘুমোতাম। প্রিমিয়ার লীগের মাস দুয়েক আগে একবার রাকা রুদ্রপুরে এলো। বেশীদিনের জন্য না। ওই দিন সাত আটেকের জন্য। তখন অবশ্য ওকে এ টি কে নিয়ে নিয়েছে। প্রায় কোটির কাছে ওর প্যাকেজ ছিল। তার আগে একদিন আমরা রাকার বাড়িতে ছিলাম। নতুন বাড়ি হবার সময়ে, আমাদের পুরোন আড্ডা র জায়গা, সেই পোড় বাড়ি টা অল্প সংস্করণ করে দিয়েছিলেন, আঙ্কল। ওখানে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি আর রনি। আন্টি পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আঙ্কল অনেক ফুল আর সব্জি গাছ লাগিয়েছিলেন। তাতে জল দিচ্ছিলেন আন্টি, পুকুর থেকে তুলে। রনির তো স্থির বিশ্বাস আমরা প্রেম করছি। মানে আমি আর রাকা। ওকে বোঝাতে পারছিলাম না যে সেটা সত্যি না। আর সত্যি হলে সেটা সবার আগে ওই জানবে। তাও তর্ক করছিল গান্ডূ টা আমার সাথে। বলছিল,

-     আমি তো দেখতে পাচ্ছি, এই বাড়ি আর তোর বাড়ির সামনে এক দিনেই দুটো বড় গেট হয়েছে, আর সেখানে লেখা আছে , রাকা ওয়েডস শিব।

মনে মনে সেই ইচ্ছে ছিল না সেরকম নয়। বা কোন দিন সেই স্বপ্ন দেখিনি সে রকম ও নয়। ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে কত কিছু স্বপ্ন দেখেছি তার কি ইয়ত্ত্বা আছে নাকি? আমি চুপ করেই ছিলাম তখন। হয়ত ওর বলা কথা আর আমার মনে ইচ্ছা রেজোনেট করে গেছিল। আমি চুপ করে আছি দেখে বলল ও,

-     রাকা তোকে মারাত্মক পছন্দ করে। আর তোর কথা ছেড়ে দে, তুই তো মনে হয় ওকে ফোন করে জল টাও খাইয়ে দিস।

চমক ভাঙল রনির কথায়। কুত্তা টা কে না থামালে ভৌ ভৌ করেই যাবে। তাও তো জানে না রাকাদের গ্রামে কি হয়েছিল। সে সব জানলে, মনে হয় টেনে নিয়ে চাতনা তলায় বসিয়েই ফেলত নিজের কল্পনা তে। থামাতে হবে কুত্তা টা কে। খেঁকিয়ে গেলাম ওকে
-     হ্যাঁ রে তুই দেখতে গেছিলি? আরে ওই সব কিছু না। তুই বুঝবি না। আমি ভালবাসি ওকে সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার সাথে ও প্রেম করবে তুই এটা ভাবলি কি করে?
-     কেন না করার কি আছে? দেখতে তুই তো ডানাকাটা পরী। রাকাও ভাল দেখতে। তারপরে ও এখন নামী প্লেয়ার। একে অপর কে পছন্দ না করার তো কিছু নেই।
এই জন্যে খিস্তী খায় গান্ডু টা। ভাবে না কিছুই। ওকে আমাকে প্রথম থেকে বোঝাতে হবে। ওকে বললাম
-     তুই কি জানিস না আমি ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছি?
-     হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে?
গান্ডু টা এবারেও ভাবল না। খেঁকিয়ে গেলাম
-     তাতে কি হয়েছে? ভেবে বলিস না তাই না? আমি মেয়ে ঠিক ই কিন্তু মেয়ে হওয়াই কি যথেষ্ট নাকি বিয়ের জন্য? আমি কি মা হতে পারব?
-     পারবি না?

উল্টো দিকে মুখ করে, বেশ জোরের সাথেই বললাম আমি ,
-     না

খানিক দমে গেলো রনি। তারপরেই প্রায় তেড়ে এল
-     মা হতে পারবি না, তো পারবি না। এটা এমন কি? কত মেয়ের তো বাচ্চা হয় না। এই তো আমার কাকির বাচ্চা হয় নি। তাতে কি হল? দুজনের ভালবাসা টা ম্যাটার করে না?

বুঝলাম পুরুষ ইগো। পুরুষ দের কাছে ভালবাসি, ভাল লাগে মানে পেতেই হবে। ভাবল না, একসাথে থাকা শুধু দুটো মানুষের নয়, দুটো পরিবারের। তাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সংসার হয়। জানিনা এই সব জ্ঞান আমি কোথা থেকে পেয়েছি। কিন্তু মনে হয়েছে আমার, রাকা আমাকে বিয়ে করলে, দশ বছর বাদে আন্টি কি করবে একটা নাতি না পেলে? আমার মা না হয় জানে, কিছু মনেও আনবে না, কিন্তু আন্টির তো মনে হতেই পারে, এই হিজড়ে কে বিয়ে না করে একটা মেয়েকে করলে নাতির মুখ দেখতেন আন্টি। আর রাকা? সে হয়ত কুড়ি বছর বাদে ভাবল, কই ওর বংশ তো বাড়ল না? সেদিনে ও আন্টির মতন কিছু ভাবলে, তখন আমি কোথায় যাব? তখন তো সব শেষ হয়ে যাবে। জানি রাকাও যদি আমাকে পেতে চায় সেও একি রকম ভাববে যেমন রনি ভাবছে। কি আর বোঝাবো এই গান্ডু কে? চুপ করে গেলাম। রনি ভাবল ওই জিতে গেল। আমাকে বলল,

-     কি রে বল, ভালোবাসা টা ম্যাটার করে না?

বলতে বাধ্য হলাম তখন
-     হ্যাঁ অবশ্যই করে। ভালবাসা না থাকলে বিয়ের কোন মানে নেই। কিন্তু তার সাথে অনেক কিছুও ম্যাটার করে। আচ্ছা বল, তোর কাকির বাচ্চা হয় নি, সেই জন্য তোর কাকি কি সুখে আছে?

ও চুপ করে গেল। জানি ও এখন ভাবছে অনেক কিছু। কিম্বা হয়ত ভাবছে না। এই শুয়োর ভাবে বলে তো আমার মনে হয় না। যে ভাবে তার মন এতো পরিষ্কার হয় না। আমি জানি রাকাও ভাবে না একদম ই। আমি রনির দিকে তাকিয়েই ছিলাম। পিছনে আন্টি পুকুর থেকে তখনো জল তুলছেন। মাঝে মাঝেই দেখতে পাচ্ছি আমি আন্টি কে। ভাবলাম রনি মনে হয় আর কিছু বলবে না। কিন্তু বলল ও,

-     না কাকি কান্না কাটি করে। আমার ঠাকুমা কথা শোনায়। কাকু আর কাকিমা দুজনাই বড্ড চুপচাপ থাকে এখন।
-     তবে? তাও জানবি, কেউ কাউকে দোষারোপ করতে পারে না। কারন কেউ জানে না, বা জানত না বিয়ের আগে, সমস্যা টা কার তরফ থেকে। কিন্তু ভাব, আমাদের ক্ষেত্রে সবাই জানে, সমস্যা টা আমার। আর একদিন যদি রাকা আমাকে দোষারোপ করে আমার কি সমস্যা হবে তুই ভেবে দ্যাখ। তাই যার ভবিষ্যৎ আমি জানি, যেটা তে ভাল কিছু হবে না আমি বুঝতে পারছি, সেখানে আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু কে জড়িয়ে আমার কি লাভ বলত? জেনেও যদি আমি সেই ভুল করি, নিজেকেও আমি ক্ষমা করতে পারব না। বুঝলি?
-     আর ও যদি জেদ ধরে থাকে, যে তোকেই বিয়ে করবে ও। তখনো তুই ওকে বিয়ে করবি না?
-     আরে ধুর, প্রথমত, ওকে চাইতে হবে। ও আমার প্রিয়তম মানুষ, ও যদি চায়ও, ওকে সত্যি টা বলা বা দেখানো আমার দায়িত্ব। আমি খুব শিওর ওর মনে আমার জন্য তেমন কোন জায়গা নেই। আর সত্যি বলব, এর জন্য আমি কষ্ট ও পাব না। মানে কষ্ট পেলেও তার থেকে আনন্দ বেশী পাব, যদি ও কোন সুস্থ স্বাভাবিক মেয়েকে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যায়।

কথা গুলো আমি কনফিডেন্টলি বললাম। কারন আমি ততদিনে বুঝে গেছিলাম, রাকাদের গ্রামে হওয়া, ঘটনা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। ক্ষনিকের উত্তেজনায় হয়ে যাওয়া একটা ব্যাপার। আর দোষ তো রাকার ছিল না। ও তো জোর করেনি আমাকে। আমিও সম পরিমান দায়ী ছিলাম, ওই টার জন্য। জানিনা কেন আমি করেছিলাম। আমি তো ঘেন্না পাই। তাও যে কেন করে ফেলেছিলাম কে জানে? যদিও এই অরগ্যানোপ্লাস্টির পরে আমার এস্ট্রাডিওল প্রসেস আর একবার শুরু হয়েছিল, আমার ভ্যাজাইনা কে কানেক্ট করার জন্য। হতে পারে সেই হরমোনাল প্রভাব। এখন যেমন সেই ঘেন্না টা আবার ফেরত এসেছে। কিন্তু রাকা টানা হেঁচড়া করলে কি হবে আমি সত্যি জানিনা। কিন্তু তারপরে রাকা যেভাবে এই ব্যাপার টা নিয়ে একেবারে চুপ করে গেছিল, আমি কনফিডেন্ট ছিলাম, ওটা একটা উত্তেজনার বশে করে ফেলা ব্যাপার। রনির কথায় চমক ভাঙল আমার,

-     কিন্তু তুই যে ভাবে আন্টি আর আঙ্কল এর কেয়ার করিস, সেটা দেখে আমার মনে হয় যে তুই রাকা কে ভালোবাসিস, আর আন্টি আঙ্কল কে সেই চোখেই দেখিস, যেমন একটা মেয়ে দেখে তার বয় ফ্রেন্ড এর বাবা মা কে।

এ যে কার সাথে কি জুড়ে দেয় নিজেই জানে না। বুঝি না এদের এতো ভাবতে কে বলে? ভাবার ক্ষমতা নেই তাও ভাববে। ওকে বললাম
-     এর সাথে আঙ্কল আন্টির কি সম্পর্ক। রাকা অন্য কাউকে যখন বিয়ে করবে, তখন কি আঙ্কল আন্টি কে আমি ছেড়ে দেব নাকি? আঙ্কল আন্টি আমার কাছে অনেক বেশী কিছু। তুই বুঝবি না। রাকার সাথে আমার যে রিলেশন তুই ভাবছিস, সেটা হোক বা না হোক, আঙ্কল আন্টি আমার কাছে এই রকম ই থাকবেন, যেমন এখন আছেন।
-     ও।

ও টা বলে খানিক চুপ রইল রনি। তারপর বলল
-     এবারে আমি যাব। তুই যাবি?  তা হলে বাড়ি নামিয়ে দেব তোকে।
-     নাহ তুই যা, আমি একটু থাকি সন্ধ্যে বেলায় আন্টির কাছে। আমি চলে যাব, দেরী হলে আঙ্কল আমাকে পৌঁছে দেন। তুই যা। সাবধানে যাস।

চলে গেলো রনি। আন্টি তখন ও ফুল গাছের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি যেতেই আমাকে নিয়ে বাড়ি তে এলেন। ছিলাম সেদিন অনেকক্ষণ। পরের দিন রাকা আসবে, তাই ওর ঘর টা একটু পরিষ্কার করে দিচ্ছিলাম। একেবারে নোংরা। মায়ের কথায় যবন। আঙ্কল আমাকে পৌঁছে দেবেন, তাই তাড়াতাড়ি করছিলাম। বেরোনর মুখে আন্টি আমাকে ডেকে, আমার চিবুক ধরে চুমু খেলেন। কি জানি কেন? মাঝে মাঝে এমন কান্ড করেন আন্টি আমি জানি। তাই কিছু মাথায় নিলাম না আর।

পরের দিন রাকা এলো। সারাদিন ই আমি ওদের বাড়িতে ছিলাম। আন্টির সাথে রান্না করলাম। যা যা রাকা ভালবাসে। আমি তো জানতাম না রান্না। মানে জোগাড়ে হিসাবে আরকি। শিখতে তো পারলাম। জানলাম কি কি ভালবাসে খেতে। জানতাম কিছু, সেদিনে আর ও জানলাম। রনিও ছিল। রাকা থাকবে না বেশী দিন, তাই বলল একদিন আমাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। আমিও রাজী হয়ে গেছিলাম। শাড়ি আমি পরতাম না। কিন্তু সেদিনে শাড়ি পরেছিলাম একটা। মায়ের পুরোন শাড়ি। কারন আমি শাড়ি পরতাম না বলে কিনিও নি কোন দিন। একটা লাল শাড়ি।শাড়ি তাও কালো লাইনার দেওয়া। ম্যাচিং কালো লাইনার দেওয়া ব্লাউজ। মায়ের ই ব্লাউজ। একটু আনফিট হল। মায়ের থেকে আমি স্লিম তাই অনেক টা সেলাই করতে হলো খাওয়া দাওয়ার আগে আমাকে। যাই হোক কোন রকমে ম্যানেজ করলাম। মা ই আমাকে সাজিয়ে দিল। নিজেকে দেখেই চিনতে পারছিলাম না। চুল টা লম্বা হয়ে গেছিল, কোমর অব্দি। মা বলল খুলেই রাখতে। সমস্যা একটাই হতো সামলাতে পারতাম না আমি। আমার চুল স্ট্রেট ছিল না। ঈষৎ কোঁকড়া ছিল।তাই শাম্প্যু করলে ফেঁপে থাকত পারফেক্টলি। খুলে রাখলে সেটা কে সামলানো একটা বড় কাজ ছিল আমার। সারাক্ষন হয় চোখের সামনে আসা চুল গুলো কে সরাতে হতো না হলে একদিকে নিয়ে রাখতে হতো। আমার অভ্যেস ছিল না একদম। মেয়ে রূপের এতো ঝামেলা আগে বুঝিনি। আর রাকার সামনে খোলা চুলে যেতেও লজ্জা লাগত। চুল পাগল ও।  

ভর দুপুরে চোখে গগলস আর মাথায় হুড দেওয়া একটা ব্ল্যাক টি শার্ট পড়ে যখন আমাকে নিতে এলো ওকে দেখতে লাগছিল একেবারে গুন্ডাদের মতন। আমাকে ওই সাজে, হাঁ করে খানিক দেখে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। কাকুর সেই পুরোন স্কুটার টাই এনেছিল ও। ওই ভাবে একা বেরোলে হয়ত ওকে কেউ চিনত না, কিন্তু আমার সাথে দেখলে, এই কালো গগলস আর হুড ওকে বাঁচাতে পারবে না। সবাই চিনে যাবে। ভাবছিলাম, কত কম সময়ের ব্যবধানে সত্যি হলো এই ঘটনা। একদিন শাড়ি পরে ক্রসড্রেস করে ওর পিছনে ঘুরেছিলাম। আজকে মেয়ে হয়ে ওর স্কুটারের পিছনে চেপে সিনেমা দেখতে যাচ্ছি।

যাই হোক আমাদের এখানে একটাই মাল্টিপ্লেক্স ছিল। আমরা পৌঁছুলাম তখন সিনেমা স্টার্ট হতে মিনিট দুয়েক বাকি ছিল। দাঁড়িয়েছিলাম একটা বিশাল থামের পিছনেই। আমাকে আর রাকা কে লোকে হাঁ করেই দেখছিল। কেউ কেউ তো দেখে যাচ্ছিল পিছন দিকে এসে। রাকা চুপ ই ছিল, কিন্তু কোন ছেলে এসে দেখে গেলেই রেগে যাচ্ছিল,

-     মেয়ে যেন কোন দিন দেখেনি শালা গান্ডুর দল।

আমার মজা লাগে। ও যখন আমার ব্যাপারে এই রকম পজেসিভ হয়ে যায়, ব্যাপার টা খুব এঞ্জয় করি আমি। এটা আজকে বলে না, সেই ছোট থেকে। সেখান থেকে যখন ঢুকতে যাচ্ছি আমি ভিতরে, তখন রাকা কে দেখলাম সামনে কাউকে দেখতে। আমিও তাকিয়ে দেখি, অঞ্জনা আর তার বোন, ওদের মায়ের সাথে সিনেমা দেখতে এসেছে।

আমি রাকার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ও কেমন একটা চাতক পাখীর মতন হয়ে অঞ্জনা কে দেখছে। কত যুগের তৃষ্ণার্ত হলে ওমনি ভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে আমি বুঝি। কারন আমিও যে দেখি বাঁদর টা কে মাঝে মাঝে ওই ভাবেই। মনে হলো মুখের ভিতরে একসাথে অনেক কিছু ঢুকে পরবে, যত বড় হাঁ করেছিল ও। আমি ওকে টানছি হলের ভিতরে আর ও চেয়েই আছে, পিছন দিকে, যেখানে অঞ্জনা ছিল। আমার খারাপ লাগে নি এমন না। কিন্তু মন শান্তি পেল এই ভেবে যে, রনির কথাটা সত্যি হবে না কোন দিন। আমাকে আমার সাথে লড়াই করতে হবে না। রাকা যদি আমাকে সেই ভাবে পছন্দ করে তবে তো নিজেকেই লড়তে হবে নিজের সাথে। আমার যে দুটো সত্ত্বা। একটা শিবানী। নিজের রূপের অহঙ্কারে গরবিনী ,উচ্ছ্বল, যৌবনে ভরপুর, রাকার পাগল প্রেমিকা। আর একটা শিব, যে ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছে, বয়বৃদ্ধ মনন, ছলাকলা না জানা, রাকার পুরুষালি চাহিদা মেটাতে না পারা, রাকার সব থেকে কাছের বন্ধু। যাই হোক এই দুই সত্ত্বার মধ্যে, যুদ্ধ বা শান্তি যাই হোক, ক্ষতি আমার ই হবে। এই দুই জনের শত্রুতাতে আমিই ফালাফালা হবো, আর এই দুই জনের বন্ধুত্ব ও সম্ভব না।

রাকাকে টেনে এনে বসালাম। একেবারে পিছনে কোনের সিট নিয়েছিল রাকা। আমাকেই যথারীতি কোনে বসতে হলো। আমি ওর বাঁ পাশে বসেছিলাম। পাশে বসেই ও মনে হয় ভুলে গেছিল যে কিছুক্ষন আগেই ও অঞ্জনা হাঁ করে দেখছিল আমারি সামনে। রাগ আমার হচ্ছিল খুব ই। কিন্তু সিনেমা দেখতে এসেছি, রাগ দেখালে তো চলে না। আহা ও এসেছে সাত দিনের জন্য। ঝগড়া না হয় নাই বা করলাম আমি। মনে মনে ভেবেছিলাম, হয়ত ও তাকিয়েছিল অঞ্জনার দিকে, তারপরে আবার আমার রূপে, ও অঞ্জনা কে ভুলে গেছে।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি অধ্যায় তিন- নতুন পর্ব ১৭- ১৮ - by nandanadasnandana - 14-02-2022, 02:09 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)