11-02-2022, 01:46 PM
আগের পর্বের কিছু অংশ.....................
ফোন টা রেখে দিলাম আমি। আমার যেন শেষ হচ্ছিল না ওর জন্য জামা প্যান্ট কেনা। কত কাজ এখন আমার। আন্টির বাড়ি থেকে ওর খেলার সরঞ্জাম গুলো আনতে হবে। ওর জার্সি টা ও। ওর বাপ কে বলে শিভের নাম লেখা ইন্ডিয়া জার্সি আনাতে হবে আরো কিছু। ওকে স্পাইক দেওয়া শু পরিয়ে দৌড়ানো অভ্যেস করাতে হবে। একটা দামী স্পাইক শু কিনে নিলাম। এই সব করতে করতে সাত আট টা বড় বড় ব্যাগ হয়ে গেল আমাদের। দুটো থেকে সাড়ে পাঁচটা অব্দি বাজার করলাম আমরা। যখন বেরোলাম, তখন আমাদের সাথে খান সাত ব্যাগ।
পর্ব পনেরো
আমাদের পার্কিং এর সামনে দেখেই মনে হয় গার্ড খবর দিয়েছে রনি কে। দেখলাম বেরিয়ে এলো রনি। কি জানি সেও আছে কিনা ভিতরে এখনো? রনির পিছনেই দেখলাম রাকাও বেরিয়ে এল। আমি মা কে বললাম চাপো তাড়াতাড়ি। শিভ কে সামনে নিলাম আমি। মুখের মাস্ক টা ঠিক করে দিলাম। ওর বাপ এসে ওর মাপের একটা গগলস পরিয়ে দিলো ওকে। দেখলাম রে ব্যানের গগলস। আমি ঠিক করে সেট করিয়ে দিলাম। আঙ্গুল টা কেটে দিলাম। সবাই দেখছে ছেলেটা কে আমার। রনি কে বললাম,
- এর একটা কভার হয়। ছেলেকে দামী জিনিস দিলেই হলো না। যত্ন ও করাতে শেখাতে হবে।
আমার কথা শুনে, রাকা চলে গেল ভিতরে। কিছু পরে একটা প্যাকেট নিয়ে এলো সাথে করে। রনি কে দিতেই আমি রনির হাত থেকে ছিনিয়ে নিলাম। গাড়ির ডিকি তে রেখে দিলাম। এর পরে কথা বলল রাকা । মা কে বলল,
- কাকিমা, এই ব্যাগ গুলো রেখে দিন , আমি দিয়ে আসছি একটু পরে।
- অ্যাঁ, তুমি দিয়ে আসবে?
- হ্যাঁ, কি সমস্যা। গাড়ি আছে দিয়ে আসব। এতে আমার আপত্তি হবার কথা তো নয়।
আমি চুপ করে রইলাম। কিছু তো বলাও যাবে না এই সব ঢঙের উত্তরে। তাহলে মা আমাকে শিভের সামনেই দু ঘা বসিয়ে দেবে। মা খুশী হলো রাকার কথায়। বলল,
- তবে তুমি এস নিয়ে আমরা এগোই? রনি তুই ও আয় কিন্তু। আমি কিছু বানাই বাড়ি গিয়ে।
রাকা বলল মা কে,
- হ্যাঁ হ্যাঁ এগোন কাকিমা।
তারপরে শিভের দিকে চেয়ে বলল
- কি রে আসবি নাকি আমার কাছে কিছুক্ষন। তারপরে দিয়ে আসব তোকে?
ছেলে আমার মুখের দিকে তাকাল। আমি হাসলাম। আমার ইচ্ছে ছিল না। খালি ভয় করে। যদি রাকা আর না নিয়ে যায় আমার কাছে। তাও বুকে পাথর রেখে হাসলাম। ও নেমে গেলো ওর বাপের কাছে। নেমে বলল
- একটু খানি থাকব।
- আচ্ছা আচ্ছা আয়। কেউ তোকে বেশীক্ষন রাখবে না ।
আমি গাড়ি টা স্টার্ট দিয়ে দিলাম। সোজা মা কে নিয়ে বাড়িতে। মন টা খুব বিব্রত। না ছাড়লেই ভালো হত। কিন্তু কিছু করার ও নেই। চিরুনি নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। চুল টা খুলে আঁচড়াচ্ছি। বড় হয়ে গেছে। পার্লার এ যেতাম এ সপ্তাহে। কিন্তু যাওয়া হলো না। কাল থেকে যা চলছে। আধ ঘণ্টা হয়ে গেলো, এখনো এলো না তো ছেলেটা। মা নীচে আছে, একটা ফোন তো করতে পারে রাকা কে। বলতে তো পারে এবারে দিয়ে যেতে। সাত পাঁচ ভাবছি আমি। আমি পিছন দিকে চলে এলাম ছাদের। পিছনের বাগান টা দেখছিলাম ছাদ থেকে। আমি আর বাপি বাগান টা পরিচর্যা করি। এই রবিবার বাপি কে নিয়ে একবার বস্তে হবে বাগানে। একেবারে ঘাসে ভরে গেছে।
ঠিক সেই সময়ে মনে হল শিভ আসছে সিঁড়ি দিয়ে। কারন পায়ের আওয়াজ ছোট ছোট। তাকিয়ে দেখলাম, শিভ এসে গেছে। আমি হাত বাড়াতেই আমার কোলে উঠে পরল। জানিনা এতো দিন বুঝিনি, কিন্তু কাল রাতের পর থেকে মনে হচ্ছে ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমি কিছু বলার আগেই ও বলল,
- মা!!!
চমকে উঠলাম। কি বলল ও? ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখে। দুষ্টু দুষ্টু মিষ্টি মিষ্টি হাসি সারা মুখে ছড়িয়ে আছে। বললাম
- কি বললি?
- মা!!!!
- আমাকে বললি?কি রে আমাকে বললি সোনা?
গলা টা ধরে এলো আমার। ও আবার হাসি মুখে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল। লেপ্টে নিলাম ওকে বুকের মধ্যে আমি। এ কি বললি তুই? এতো ভালো বাসা রাখি কোথায় আমি? ওকে বললাম,
- সব সময়ে বলবি? কিরে ?
- হু
ছোট্ট উত্তর। বললাম
- কে বলল তোকে আমাকে মা বলতে? নীচের ওই দিম্মা টা?
- না
- তবে?
- পাপা
চমকে গেলাম আমি। কিন্তু ওকে সেটা বুঝতে দিলাম না। বললাম
- কোথায় তোর পাপা?
- নীচে আমাকে নামিয়ে দিল।
বুঝলাম ব্যাগ গুলো দিতে এসেছে। আমি বাড়ির সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম, নীচে রাকা দাঁড়িয়ে আছে। শিভ রাকা কে দেখেই হাত নাড়তে লাগল। আর রাকাও হাত নাড়তে শুরু করল। মনে তো হল আমাকে হাত নাড়াচ্ছে। কিন্তু আমি সাড়া দিলাম না। ও গাড়ি তে উঠে বেরিয়ে গেল। আমি শিভ কে চুমু খেয়ে ওকে কোলে নিয়ে নেমে এলাম নীচে। মন টা খুশী। শিভ আমাকে মা বললে আমিও সবার সামনে বলতে গর্ব করে বলতে পারব ও আমার ছেলে। কেমন একটা মারাত্মক অধিকার বোধ জন্মে গেল মুহুর্ত থেকেই শিভের উপরে। মাথা থেকে বেরিয়ে গেল এই টা রাকার দৌলতে সম্ভব হলো। ওই আমাকে অধিকারটা দিলো আজকে।
সন্ধ্যে বেলায় বাপি ভাই চলে এসেছে। দুজনাই ডাইনিং এ বসে, শিভের জন্য কেনা ব্যাগ গুলোর থেকে সব বের করছে আর সাজিয়ে রাখছে। ভাই মাঝে মাঝেই শিভ কে ডেকে, ওর জামা প্যান্ট গুলো কে গায়ের উপরে চাপিয়ে দেখে নিচ্ছে। আমি রান্না ঘরে মায়ের সাথে পাটি সাপটা বানাচ্ছি। মা ও দুটো কে আসতে বলেছে। প্রায় খান কুড়ি হয়ে যাবার পরে আমি বেরিয়ে এলাম রান্না ঘর থেকে। টিভি তে অ্যাড এর মত ভাই আর বাপি মিলে ওকে কেনা জামা গুলো পরিয়ে দিচ্ছে আর ও সেগুলো পরে র্যাম্প এ হাঁটার মতন খানিক হেঁটে আবার খুলে দিচ্ছে। ভাবছি বাড়ির লোক গুলো সব পাগল হয়ে গেল নাকি?
রাকা আর রনি এলো। বাপি গিয়ে খুলে দিল দরজা। আমি শিভের ট্রাই করা জামা গুলো কে ফের গুছিয়ে ভরে রাখছিলাম, প্যাকেট এ। রাকা ঢুকেই এতো জামা প্যান্ট দেখে অবাক হয়ে গেল। ততক্ষনে আমার মা ও বেরিয়ে এসেছে রান্না ঘর থেকে। রাকা আর রনি কে দেখে মা বস্তে বলল। ওরা বসল। কিন্তু দুজনাই অবাক এতো জামা প্যান্ট দেখে। রাকা মা কে বলল,
- কাকিমা এতো কি হবে?
মা সাড়া দিলো না। মা আমাকে মানা করেছিল না কিনতে। কিন্তু আমার পোষাচ্ছিল না। রাতে র পোশাক, বাড়িতে পড়ার পোশাক, বাইরে বেরোনোর পোশাক, কোন অনুষ্ঠানে যাবার পোশাক, কত কিছু আছে। ছেলেকে কি আন স্মার্ট করে নিয়ে যাব নাকি আমি কোথাও? পারব না । যে যাই বলুক, আমি কিনেছি ব্যস। কালকে সারা রাত ঘুমোয় নি একটা মোটা কটনের জামা পরে ছিল। এসব তো কেউ দেখে না। ততক্ষনে মা আমার দিকে তাকিয়ে রাকা কে বলল
- সে শিব জানে। আমি মানা করেছিলাম, কিন্তু সবার সামনে আমাকে খেঁকিয়ে এসেছিল মলের মধ্যে।
রাকা আর রনি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছিল না। আমি ওদের কে দেখলাম। বাপি ভাই দুজনাই একেবারে মুখে তালা দিয়ে বসে আছে। কি বলব বুঝতে পারলাম না। থাক কিছু বলে দরকার নেই। রাকা বলল
- না ঠিক আছে তবে , ওর আরো জামা কাপড় ও বাড়িতে ছিল। নিয়ে এলাম। ওই কালো ব্যাগ টায় আছে।
আমি তাকিয়ে দেখলাম একটা বেশ বড় চামড়ার কালো ব্যাগ ভর্তি করা আমাদের ডাইনিং এর এক পাশে রাখা। ওখানে ওকে এই দিন পনের ধরে আমার কিনে দেওয়া ড্রেস গুলো ও আছে। বাহ। বললাম
- ঠিক আছে থাক। ওগুলো ও লাগবে।
রাকা রনি দুজনাই অবাক হলো
- অ্যাঁ?
মারাত্মক রাগ হলো রনির উপরে। একজনের উপরে তো রাগ দেখাতে পারব না আমি মায়ের সামনে, ছেলের সামনে, তাই রনির উপরেই ফেটে পরলাম একেবারে।
- অ্যাঁ এর কি আছে। যে গুলো বাড়িতে পড়বে, সব সময়ে পড়বে সে গুলো পরেই কোথাও ঘুরতে যাবে নাকি? তুলে রাখতে হবে না কিছু ড্রেস? কিছু জানিস না ফোড়ন কাটিস কেন?
দুজনাই চুপ করে গেল আমার মুর্তি দেখে। মা হাসছিল তখন। বলল
- তাহলেই বোঝ কি গেছে আমার উপর দিয়ে, মলের মধ্যে।
আমি সাড়া দিলাম না মা কে। মা আমাকে বলল
- যা পাটিসাপটা গুলো দিয়ে দে।
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
- মা প্লিস তুমি দাও। আমি ছেলেকে পড়তে বসাব একটু। প্লিস মা প্লিস
মা কিছু বলল না কিন্তু রনি ফোড়ন কাটল
- আরে আজকে পড়াতে হবে না আর ওকে। বোস না একটু।
মাথা টা আবার গরম হলো। রাগ হলো শিভের বাপের উপরে। ছেলেকে পড়াতে বসাবো, আর রনির কথায় কিছু বলল না? বলবে কেন? নিজেও তো ফেলু ছিল। রাগে চেঁচিয়ে বললাম,
- হ্যাঁ রে, তোদের মতন আমার ছেলেও ফেল করবে নাকি? তুই তো কলেজ যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি। আরেক জন তো টুয়েলথ টা দু বারে টপকেছে। আমি কি আমার ছেলেকে তোদের মতন করে রাখব নাকি? জানোয়ার সব। যেমন নিজে তেমন ই তো সবাই কে ভাববি।
দুজনাই একেবারে চুপ করে গেল আমার মুর্তি দেখে। শিভের জামা গুলো কে গুছিয়ে রেখে, ওকে কোলে তুলে নিলাম। প্লেটে একটা পাটিসাপটা নিয়ে, ওকে কোলে করে উপরে চলে এলাম। পড়াতে পড়াতে খাইয়ে দেব। দেখলাম ছেলে বেশ চটপটে। যা যা পড়ালাম তাড়াতাড়ি পড়ে নিল। আধ ঘন্টার মধ্যে হয়ে গেল। ছেড়ে দিলাম ওকে। একটা নরম বল দিয়ে দিলাম। ও নিয়ে নীচে চলে গেল। আমিও বাথরুম করে নীচে এসে দেখলাম, বাপি ভাই আর রনি রাকা মিলে কেরম খেলছে। আমি রান্না ঘরে গিয়ে মা কে বললাম,
- সকালে, সন্ধ্যে খাওয়ালে, রাত টা বাকি থাকে কেন?
মা অখুশী হলো না কথা টা তে। বলল তবে কি করবি? আমি বললাম
- চিকেন আছে। চিকেন কষা করে দি। আর ভাত রুটি যে যা খাবে। তুমি বরং রনি কে জিজ্ঞাসা কর। ওর বউ আছে এখানে। ওর কোন প্ল্যান থাকতে পারে।
মা গিয়ে বলতেই রনি বলল, ওর প্ল্যান আছে ওর হবু বউ এর সাথে একটু পরেই। রাকা সাড়া দিল না। বুঝলাম ও থাকতে চাইছে। জানি আমার সাথে ও নতুন করে আগে জায়গায় ফিরতে চাইছে। কিন্তু আমার আর কোন লোভ নেই। আমি শুধু মাত্র ওর সাথে কথা বলছি বা আছি কারন শিভ ওর ছেলে। মা রাকাকেও জিজ্ঞাসা করল। রাকা বলল,
- না না কাকিমা, আজকে আপনাকে খুব উতপাত করলাম। আবার কেন?
কথাটা তে মাথা গরম হয়ে গেল। ওকে আমার থেকে ভালো করে কেউ চেনে না। চাইছে থাকতে, এখানে খেতে। তবু নাটক করবে হারামী টা। বাইরে বেরিয়ে গেলাম। বললাম,
- কেন মা, আরেক জনের ও কি কোন প্ল্যান আছে অন্য কারোর সাথে?
রাকা ঘাবড়ে গেল আমার কথায়। ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। রাকার কিছু বলার আগেই মা আমার দিকে তেড়ে এল
- ও কি বলল সে কথা? এতো কথা বলিস কেন? যা তুই চাপা রান্না।
মায়ের চোখে সকালের আগুন। পালিয়ে এলাম রান্না ঘরে। নাটকের অন্ত নেই। আর আমি ই বা কেমন। নিজেই তো বললাম ওর এখানে রাতে খাবারের কথা। এখন নিজেই পাগলামো করছি। আমিও কি চাইছি ও থাক এখানে? উফ কি যে হচ্ছে? সেই সাত আট বছর আগের তেস্টা টা আমার মনে জাঁকিয়ে বসছে। মা রান্না ঘরে এসে পিয়াজ কাটতে বসল। ওরা কেরম খেলছে। শিভ মাঝে মাঝেই ওদের কারোর কোলে গিয়ে বসছে, আবার নিজের বল নিয়ে এদিক সেদিক দৌড়ে বেরাচ্ছে।
রনি চলে গেলো কিছু পরেই। ওদের কেরম খেলা ভঙ্গ হলো। শিভ, ওর পাপা কে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল। রাকা নিশ্চয়ই ভাবছিল,
- তুই আর কি দেখাবি আমাকে? কত রাত বিরাতে আমি এসেছি এই বাড়িতে। এই বাড়ি আমি হাতের তালুর মতন চিনি।
তাও দেখলাম রাকা বেশ অবাক হয়েই দেখছে ছেলের সাথে। ও যত অবাক হচ্ছে, ছেলেও আমার তত খুশী হচ্ছে। আর আমি রান্না ঘর থেকে মাঝে মাঝেই দেখছিলাম ওদের দুটোকে মুগ্ধ হয়ে। মা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আমি খেয়াল করিনি। খেয়াল করতেই লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। আর মায়ের মুখে মুচকি হাসি টা লেগে রইল। আন্টি ফোন করেছিল আমার ফোনে। মা কথা বলল অনেকক্ষণ। হেসে হেসে কত কি বলল দুজনে আমি শুনতে যাই নি। মাংস টা রাঁধছিলাম আমি। ততক্ষনে রাকা আর ছেলে নীচে চলে এসেছে। বাবা টিভি দেখছে। ভাই মনে হয় ছাদে। হবু বউ এর সাথে ফোনে আছে শিওর।
বলের আওয়াজে বুঝলাম, বাপ বেটা তে বল নিয়ে খেলা চলছে।নরম বল টা নয়। আসল ছোট ফুটবল টা নিয়ে খেলছে দুজনে। অন্য সময় হলে মা কুরুক্ষেত্র করত। কিন্তু আজকে মা চুপ। জানে রাকা আছে। শিভ জোরে মারে না। আর রাকা তো বলের সাথে ঘুমোয় খায়। বল ওর কথা শোনে। শিভের বাপ মনে হয় বল টা নাচাচ্ছে পায়ে। শিভ হাততালি দিচ্ছে। আমি মাংশ টা কষছি। আওয়াজ পাচ্ছি এক পায়ে জাগল করলে যে আওয়াজ টা হয় সেই আওয়াজ। এক সময়ে ছেলে আমার উত্তেজনা ধরে রাখতে পারল না। মা!!! দেখে যাও বলে ডাক দিল। আমি বেরিয়ে গেলাম। দেখলাম রাকা বাম পায়ে জাগল করেই চলেছে। আমি দেখলাম ছেলে আমার তিড়িং বিরিং করে লাফাচ্ছে আর হাততালি দিচ্ছে। মা বাপি সবাই দেখছে হাঁ করে রাকার বল নিয়ে কেরামতি। ভাই ও দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে থ হয়ে গেছে সিঁড়িতেই।
আমি ছেলের আনন্দ দেখে, একবার হেসে, রান্না ঘরে ঢুকে আসব, ঠিক তখন ই রাকা আমার দিকে বল টা দিল একটু উঁচু করে। আমার মা বাবা সবাই আঁতকে উঠল প্রায়। ডাইনিং এ একোয়ারিয়াম আছে , কোনে ফিলটার আছে, পুরোন টিভি টা রয়েছে, একটা টেবিল এ আমার দাদু আর ঠাকুমার ছবি আছে। ওই বল যে কোন একটায় লাগলে সেটা ভেঙ্গে যাবে। বল টা ঠিক আমার ডান দিক বরাবর আসতেই , আমার অভ্যেসে ক্রস রিসিভ করে নিলাম বাঁ পা দিয়ে, ডান পায়ের ব্যাক হিলে বল টা হালকা টোকা মেরে তুলে সামনে নিয়ে এলাম নিলাম আমি। হাতে খুন্তী নিয়েই দুবার নাচিয়ে আবার গড়িয়ে আমার ছেলের দিকে বল টা ঠেলে দিলাম আমি। রাকার দিকে ইচ্ছে করেই দিলাম না। আবার না ভেবে বসে আমি ওর সাথে পুরোন বন্ধুত্ব টা চাইছি।
চলে এলাম রান্না ঘরে। মাংশ টা নাড়তে। ততক্ষনে ভাই হাত তালি দিতে দিতে নেমে এল। শিভ তো পাগলের মতন লাফাচ্ছে আনন্দে। ভাই আমাকে খেলতে দেখলেও মনে নেই হয়ত ওর। ওই একটু বেশি অবাক হয়েছে মনে হল। কারন ছেলেও জানে আমি বল নিয়ে খুব ভাল জাগল করি। আর বাপি মা তো জানেই। রাকার কথা ছেড়েই দিলাম। আমি মেয়ে হবার পরেও বহুবার বলেছে আমাকে আমার খেলা চালু করতে। রাকার গলা পেলাম,
- অবাক হোস না পিনি। তোর দিদি ফুটবল টা আমার থেকেও ভালো খেলত।
হু। আর আমাকে এই নিয়ে ও এক রাতে ফোনে কম অপমান করেনি। আজকে নাকি আমি ওর থেকেও ভালো খেলতাম। চুপ রইলাম। তাই তো আছি কাল থেকে আমি। ভাই বলল,
- তাই তো দেখছি। মা বাপি, কই আমাকে তো বলনি কোনদিন, দি ভাই এতো সুন্দর ফুটবল খেলে।
সবাই হাসল। আমার ছেলে কিন্তু রাকা কে বলেই চলেছে আবার খেলতে হবে। ভাবলাম এদের খেলার চক্করে কিছু না কিছু ভাংবেই আজকে। দরকার নেই। আমি বাইরে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম
- একটু চিকেন খাবে? মা বানাচ্ছে?
ও কি বলল তার অপেক্ষা না করে রান্না ঘরে নিয়ে এসে একটা বাটি তে এক পিস চিকেন দিয়ে ওকে বসিয়ে দিলাম আমি ডাইনিং এ। দুষ্টু টার সর্বক্ষন এটেনশন চাই। খা বসে এখন এটা কে। হয়ে গেলে, আমি জল দিলাম মাংশ তে আর বাইরে এসে মা কে বললাম,
- শিভের জন্য দুপিস তুলে রেখে ঝাল দিয়ে দাও মা। আমি লঙ্কা মিক্সি তে গ্রাইন্ড করে রেখেছি।
মা হেসে চলে গেল রান্না ঘরে। আমি বসলাম একটু সোফা তে। ভাই এখন অবাক হয়ে দেখছে। আমি বললাম
- এই কি হয়েছে রে তোর। ওমনি করে দেখছিস কেন?
- বেচারী তোকে তো দেখেনি সে ভাবে খেলতে। ওর মনে হয় মনেও নেই। থাকলেও আবছা।
বাপির কথায় ভাই বলল
- খুব আবছা, কিন্তু খেলা মনে পরে না। বরং আমি যখন ক্লাস সিক্স এ পরি রাকা দা কে খেলতে দেখেছি, রুদ্রপুর ক্লাবের হয়ে। মনে আছে সেই খেলা এখনো আমার
রাকা বলল
- হ্যাঁ হয়েছিল, বহরমপুরের একটা ক্লাবের সাথে। আমি তখন কলকাতায় থাকতাম। তোর দিদি আমাকে বলতে গেলে কেঁদে কেটে ডেকে এনে খেলিয়েছিল। বলেছিল ইজ্জতের প্রশ্ন। ম্যাচ টা আমরা জিতেছিলাম ২- ১ এ।
আমি রাকার দিকে তাকালাম। যেন সেই পুরোন রাকা। ওর মনে আছে সেটা? ওর আসার সমস্যা ছিল। আমি অনেক কিছু বলেছিলাম ও আসবে না বলেছিল বলে। তাতে বলেছিল, আসবে তবে আমার সাথে সারা রাত ছাদে থাকতে দিলে ও আসবে। খেলায় ওর কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমি বলেছিলাম জিতলে তবেই আমি রাজী না হলে না। আর খেলার পরে সারা রাত বদমাশি করেছিল আমার সাথে ছাদে। আমিও ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে নিজেকে মেয়েই ভাবতে শুরু করেছিলাম ওর কাছে। ভাবতেই গা টা শিউরে উঠল আমার। ওর দিকে আর তাকাতে পারছি না। হয়ত ওর ও মনে পরেছে সেই রাতের কথা। আমি ছেলেকে হাড় থেকে মাংশ টা ছাড়িয়ে দিতে লাগলাম। ছয় বছর পরে ওকে দেখলাম ভালো করে। এতো টুকু বদলায় নি। তেমন ই সরল চাউনি। নির্লিপ্ত চোখ। হাসি টা ঠোঁটের কোনায় লেগে। যেদিন আমাকে অপমানে মেরে ফেলেছিল, সেদিনে সেটা একটা অন্য রাকা ছিল। মুখ টা নামিয়ে নিলাম আমি।
ফোন টা রেখে দিলাম আমি। আমার যেন শেষ হচ্ছিল না ওর জন্য জামা প্যান্ট কেনা। কত কাজ এখন আমার। আন্টির বাড়ি থেকে ওর খেলার সরঞ্জাম গুলো আনতে হবে। ওর জার্সি টা ও। ওর বাপ কে বলে শিভের নাম লেখা ইন্ডিয়া জার্সি আনাতে হবে আরো কিছু। ওকে স্পাইক দেওয়া শু পরিয়ে দৌড়ানো অভ্যেস করাতে হবে। একটা দামী স্পাইক শু কিনে নিলাম। এই সব করতে করতে সাত আট টা বড় বড় ব্যাগ হয়ে গেল আমাদের। দুটো থেকে সাড়ে পাঁচটা অব্দি বাজার করলাম আমরা। যখন বেরোলাম, তখন আমাদের সাথে খান সাত ব্যাগ।
পর্ব পনেরো
আমাদের পার্কিং এর সামনে দেখেই মনে হয় গার্ড খবর দিয়েছে রনি কে। দেখলাম বেরিয়ে এলো রনি। কি জানি সেও আছে কিনা ভিতরে এখনো? রনির পিছনেই দেখলাম রাকাও বেরিয়ে এল। আমি মা কে বললাম চাপো তাড়াতাড়ি। শিভ কে সামনে নিলাম আমি। মুখের মাস্ক টা ঠিক করে দিলাম। ওর বাপ এসে ওর মাপের একটা গগলস পরিয়ে দিলো ওকে। দেখলাম রে ব্যানের গগলস। আমি ঠিক করে সেট করিয়ে দিলাম। আঙ্গুল টা কেটে দিলাম। সবাই দেখছে ছেলেটা কে আমার। রনি কে বললাম,
- এর একটা কভার হয়। ছেলেকে দামী জিনিস দিলেই হলো না। যত্ন ও করাতে শেখাতে হবে।
আমার কথা শুনে, রাকা চলে গেল ভিতরে। কিছু পরে একটা প্যাকেট নিয়ে এলো সাথে করে। রনি কে দিতেই আমি রনির হাত থেকে ছিনিয়ে নিলাম। গাড়ির ডিকি তে রেখে দিলাম। এর পরে কথা বলল রাকা । মা কে বলল,
- কাকিমা, এই ব্যাগ গুলো রেখে দিন , আমি দিয়ে আসছি একটু পরে।
- অ্যাঁ, তুমি দিয়ে আসবে?
- হ্যাঁ, কি সমস্যা। গাড়ি আছে দিয়ে আসব। এতে আমার আপত্তি হবার কথা তো নয়।
আমি চুপ করে রইলাম। কিছু তো বলাও যাবে না এই সব ঢঙের উত্তরে। তাহলে মা আমাকে শিভের সামনেই দু ঘা বসিয়ে দেবে। মা খুশী হলো রাকার কথায়। বলল,
- তবে তুমি এস নিয়ে আমরা এগোই? রনি তুই ও আয় কিন্তু। আমি কিছু বানাই বাড়ি গিয়ে।
রাকা বলল মা কে,
- হ্যাঁ হ্যাঁ এগোন কাকিমা।
তারপরে শিভের দিকে চেয়ে বলল
- কি রে আসবি নাকি আমার কাছে কিছুক্ষন। তারপরে দিয়ে আসব তোকে?
ছেলে আমার মুখের দিকে তাকাল। আমি হাসলাম। আমার ইচ্ছে ছিল না। খালি ভয় করে। যদি রাকা আর না নিয়ে যায় আমার কাছে। তাও বুকে পাথর রেখে হাসলাম। ও নেমে গেলো ওর বাপের কাছে। নেমে বলল
- একটু খানি থাকব।
- আচ্ছা আচ্ছা আয়। কেউ তোকে বেশীক্ষন রাখবে না ।
আমি গাড়ি টা স্টার্ট দিয়ে দিলাম। সোজা মা কে নিয়ে বাড়িতে। মন টা খুব বিব্রত। না ছাড়লেই ভালো হত। কিন্তু কিছু করার ও নেই। চিরুনি নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। চুল টা খুলে আঁচড়াচ্ছি। বড় হয়ে গেছে। পার্লার এ যেতাম এ সপ্তাহে। কিন্তু যাওয়া হলো না। কাল থেকে যা চলছে। আধ ঘণ্টা হয়ে গেলো, এখনো এলো না তো ছেলেটা। মা নীচে আছে, একটা ফোন তো করতে পারে রাকা কে। বলতে তো পারে এবারে দিয়ে যেতে। সাত পাঁচ ভাবছি আমি। আমি পিছন দিকে চলে এলাম ছাদের। পিছনের বাগান টা দেখছিলাম ছাদ থেকে। আমি আর বাপি বাগান টা পরিচর্যা করি। এই রবিবার বাপি কে নিয়ে একবার বস্তে হবে বাগানে। একেবারে ঘাসে ভরে গেছে।
ঠিক সেই সময়ে মনে হল শিভ আসছে সিঁড়ি দিয়ে। কারন পায়ের আওয়াজ ছোট ছোট। তাকিয়ে দেখলাম, শিভ এসে গেছে। আমি হাত বাড়াতেই আমার কোলে উঠে পরল। জানিনা এতো দিন বুঝিনি, কিন্তু কাল রাতের পর থেকে মনে হচ্ছে ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমি কিছু বলার আগেই ও বলল,
- মা!!!
চমকে উঠলাম। কি বলল ও? ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখে। দুষ্টু দুষ্টু মিষ্টি মিষ্টি হাসি সারা মুখে ছড়িয়ে আছে। বললাম
- কি বললি?
- মা!!!!
- আমাকে বললি?কি রে আমাকে বললি সোনা?
গলা টা ধরে এলো আমার। ও আবার হাসি মুখে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল। লেপ্টে নিলাম ওকে বুকের মধ্যে আমি। এ কি বললি তুই? এতো ভালো বাসা রাখি কোথায় আমি? ওকে বললাম,
- সব সময়ে বলবি? কিরে ?
- হু
ছোট্ট উত্তর। বললাম
- কে বলল তোকে আমাকে মা বলতে? নীচের ওই দিম্মা টা?
- না
- তবে?
- পাপা
চমকে গেলাম আমি। কিন্তু ওকে সেটা বুঝতে দিলাম না। বললাম
- কোথায় তোর পাপা?
- নীচে আমাকে নামিয়ে দিল।
বুঝলাম ব্যাগ গুলো দিতে এসেছে। আমি বাড়ির সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম, নীচে রাকা দাঁড়িয়ে আছে। শিভ রাকা কে দেখেই হাত নাড়তে লাগল। আর রাকাও হাত নাড়তে শুরু করল। মনে তো হল আমাকে হাত নাড়াচ্ছে। কিন্তু আমি সাড়া দিলাম না। ও গাড়ি তে উঠে বেরিয়ে গেল। আমি শিভ কে চুমু খেয়ে ওকে কোলে নিয়ে নেমে এলাম নীচে। মন টা খুশী। শিভ আমাকে মা বললে আমিও সবার সামনে বলতে গর্ব করে বলতে পারব ও আমার ছেলে। কেমন একটা মারাত্মক অধিকার বোধ জন্মে গেল মুহুর্ত থেকেই শিভের উপরে। মাথা থেকে বেরিয়ে গেল এই টা রাকার দৌলতে সম্ভব হলো। ওই আমাকে অধিকারটা দিলো আজকে।
সন্ধ্যে বেলায় বাপি ভাই চলে এসেছে। দুজনাই ডাইনিং এ বসে, শিভের জন্য কেনা ব্যাগ গুলোর থেকে সব বের করছে আর সাজিয়ে রাখছে। ভাই মাঝে মাঝেই শিভ কে ডেকে, ওর জামা প্যান্ট গুলো কে গায়ের উপরে চাপিয়ে দেখে নিচ্ছে। আমি রান্না ঘরে মায়ের সাথে পাটি সাপটা বানাচ্ছি। মা ও দুটো কে আসতে বলেছে। প্রায় খান কুড়ি হয়ে যাবার পরে আমি বেরিয়ে এলাম রান্না ঘর থেকে। টিভি তে অ্যাড এর মত ভাই আর বাপি মিলে ওকে কেনা জামা গুলো পরিয়ে দিচ্ছে আর ও সেগুলো পরে র্যাম্প এ হাঁটার মতন খানিক হেঁটে আবার খুলে দিচ্ছে। ভাবছি বাড়ির লোক গুলো সব পাগল হয়ে গেল নাকি?
রাকা আর রনি এলো। বাপি গিয়ে খুলে দিল দরজা। আমি শিভের ট্রাই করা জামা গুলো কে ফের গুছিয়ে ভরে রাখছিলাম, প্যাকেট এ। রাকা ঢুকেই এতো জামা প্যান্ট দেখে অবাক হয়ে গেল। ততক্ষনে আমার মা ও বেরিয়ে এসেছে রান্না ঘর থেকে। রাকা আর রনি কে দেখে মা বস্তে বলল। ওরা বসল। কিন্তু দুজনাই অবাক এতো জামা প্যান্ট দেখে। রাকা মা কে বলল,
- কাকিমা এতো কি হবে?
মা সাড়া দিলো না। মা আমাকে মানা করেছিল না কিনতে। কিন্তু আমার পোষাচ্ছিল না। রাতে র পোশাক, বাড়িতে পড়ার পোশাক, বাইরে বেরোনোর পোশাক, কোন অনুষ্ঠানে যাবার পোশাক, কত কিছু আছে। ছেলেকে কি আন স্মার্ট করে নিয়ে যাব নাকি আমি কোথাও? পারব না । যে যাই বলুক, আমি কিনেছি ব্যস। কালকে সারা রাত ঘুমোয় নি একটা মোটা কটনের জামা পরে ছিল। এসব তো কেউ দেখে না। ততক্ষনে মা আমার দিকে তাকিয়ে রাকা কে বলল
- সে শিব জানে। আমি মানা করেছিলাম, কিন্তু সবার সামনে আমাকে খেঁকিয়ে এসেছিল মলের মধ্যে।
রাকা আর রনি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছিল না। আমি ওদের কে দেখলাম। বাপি ভাই দুজনাই একেবারে মুখে তালা দিয়ে বসে আছে। কি বলব বুঝতে পারলাম না। থাক কিছু বলে দরকার নেই। রাকা বলল
- না ঠিক আছে তবে , ওর আরো জামা কাপড় ও বাড়িতে ছিল। নিয়ে এলাম। ওই কালো ব্যাগ টায় আছে।
আমি তাকিয়ে দেখলাম একটা বেশ বড় চামড়ার কালো ব্যাগ ভর্তি করা আমাদের ডাইনিং এর এক পাশে রাখা। ওখানে ওকে এই দিন পনের ধরে আমার কিনে দেওয়া ড্রেস গুলো ও আছে। বাহ। বললাম
- ঠিক আছে থাক। ওগুলো ও লাগবে।
রাকা রনি দুজনাই অবাক হলো
- অ্যাঁ?
মারাত্মক রাগ হলো রনির উপরে। একজনের উপরে তো রাগ দেখাতে পারব না আমি মায়ের সামনে, ছেলের সামনে, তাই রনির উপরেই ফেটে পরলাম একেবারে।
- অ্যাঁ এর কি আছে। যে গুলো বাড়িতে পড়বে, সব সময়ে পড়বে সে গুলো পরেই কোথাও ঘুরতে যাবে নাকি? তুলে রাখতে হবে না কিছু ড্রেস? কিছু জানিস না ফোড়ন কাটিস কেন?
দুজনাই চুপ করে গেল আমার মুর্তি দেখে। মা হাসছিল তখন। বলল
- তাহলেই বোঝ কি গেছে আমার উপর দিয়ে, মলের মধ্যে।
আমি সাড়া দিলাম না মা কে। মা আমাকে বলল
- যা পাটিসাপটা গুলো দিয়ে দে।
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
- মা প্লিস তুমি দাও। আমি ছেলেকে পড়তে বসাব একটু। প্লিস মা প্লিস
মা কিছু বলল না কিন্তু রনি ফোড়ন কাটল
- আরে আজকে পড়াতে হবে না আর ওকে। বোস না একটু।
মাথা টা আবার গরম হলো। রাগ হলো শিভের বাপের উপরে। ছেলেকে পড়াতে বসাবো, আর রনির কথায় কিছু বলল না? বলবে কেন? নিজেও তো ফেলু ছিল। রাগে চেঁচিয়ে বললাম,
- হ্যাঁ রে, তোদের মতন আমার ছেলেও ফেল করবে নাকি? তুই তো কলেজ যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি। আরেক জন তো টুয়েলথ টা দু বারে টপকেছে। আমি কি আমার ছেলেকে তোদের মতন করে রাখব নাকি? জানোয়ার সব। যেমন নিজে তেমন ই তো সবাই কে ভাববি।
দুজনাই একেবারে চুপ করে গেল আমার মুর্তি দেখে। শিভের জামা গুলো কে গুছিয়ে রেখে, ওকে কোলে তুলে নিলাম। প্লেটে একটা পাটিসাপটা নিয়ে, ওকে কোলে করে উপরে চলে এলাম। পড়াতে পড়াতে খাইয়ে দেব। দেখলাম ছেলে বেশ চটপটে। যা যা পড়ালাম তাড়াতাড়ি পড়ে নিল। আধ ঘন্টার মধ্যে হয়ে গেল। ছেড়ে দিলাম ওকে। একটা নরম বল দিয়ে দিলাম। ও নিয়ে নীচে চলে গেল। আমিও বাথরুম করে নীচে এসে দেখলাম, বাপি ভাই আর রনি রাকা মিলে কেরম খেলছে। আমি রান্না ঘরে গিয়ে মা কে বললাম,
- সকালে, সন্ধ্যে খাওয়ালে, রাত টা বাকি থাকে কেন?
মা অখুশী হলো না কথা টা তে। বলল তবে কি করবি? আমি বললাম
- চিকেন আছে। চিকেন কষা করে দি। আর ভাত রুটি যে যা খাবে। তুমি বরং রনি কে জিজ্ঞাসা কর। ওর বউ আছে এখানে। ওর কোন প্ল্যান থাকতে পারে।
মা গিয়ে বলতেই রনি বলল, ওর প্ল্যান আছে ওর হবু বউ এর সাথে একটু পরেই। রাকা সাড়া দিল না। বুঝলাম ও থাকতে চাইছে। জানি আমার সাথে ও নতুন করে আগে জায়গায় ফিরতে চাইছে। কিন্তু আমার আর কোন লোভ নেই। আমি শুধু মাত্র ওর সাথে কথা বলছি বা আছি কারন শিভ ওর ছেলে। মা রাকাকেও জিজ্ঞাসা করল। রাকা বলল,
- না না কাকিমা, আজকে আপনাকে খুব উতপাত করলাম। আবার কেন?
কথাটা তে মাথা গরম হয়ে গেল। ওকে আমার থেকে ভালো করে কেউ চেনে না। চাইছে থাকতে, এখানে খেতে। তবু নাটক করবে হারামী টা। বাইরে বেরিয়ে গেলাম। বললাম,
- কেন মা, আরেক জনের ও কি কোন প্ল্যান আছে অন্য কারোর সাথে?
রাকা ঘাবড়ে গেল আমার কথায়। ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। রাকার কিছু বলার আগেই মা আমার দিকে তেড়ে এল
- ও কি বলল সে কথা? এতো কথা বলিস কেন? যা তুই চাপা রান্না।
মায়ের চোখে সকালের আগুন। পালিয়ে এলাম রান্না ঘরে। নাটকের অন্ত নেই। আর আমি ই বা কেমন। নিজেই তো বললাম ওর এখানে রাতে খাবারের কথা। এখন নিজেই পাগলামো করছি। আমিও কি চাইছি ও থাক এখানে? উফ কি যে হচ্ছে? সেই সাত আট বছর আগের তেস্টা টা আমার মনে জাঁকিয়ে বসছে। মা রান্না ঘরে এসে পিয়াজ কাটতে বসল। ওরা কেরম খেলছে। শিভ মাঝে মাঝেই ওদের কারোর কোলে গিয়ে বসছে, আবার নিজের বল নিয়ে এদিক সেদিক দৌড়ে বেরাচ্ছে।
রনি চলে গেলো কিছু পরেই। ওদের কেরম খেলা ভঙ্গ হলো। শিভ, ওর পাপা কে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল। রাকা নিশ্চয়ই ভাবছিল,
- তুই আর কি দেখাবি আমাকে? কত রাত বিরাতে আমি এসেছি এই বাড়িতে। এই বাড়ি আমি হাতের তালুর মতন চিনি।
তাও দেখলাম রাকা বেশ অবাক হয়েই দেখছে ছেলের সাথে। ও যত অবাক হচ্ছে, ছেলেও আমার তত খুশী হচ্ছে। আর আমি রান্না ঘর থেকে মাঝে মাঝেই দেখছিলাম ওদের দুটোকে মুগ্ধ হয়ে। মা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আমি খেয়াল করিনি। খেয়াল করতেই লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। আর মায়ের মুখে মুচকি হাসি টা লেগে রইল। আন্টি ফোন করেছিল আমার ফোনে। মা কথা বলল অনেকক্ষণ। হেসে হেসে কত কি বলল দুজনে আমি শুনতে যাই নি। মাংস টা রাঁধছিলাম আমি। ততক্ষনে রাকা আর ছেলে নীচে চলে এসেছে। বাবা টিভি দেখছে। ভাই মনে হয় ছাদে। হবু বউ এর সাথে ফোনে আছে শিওর।
বলের আওয়াজে বুঝলাম, বাপ বেটা তে বল নিয়ে খেলা চলছে।নরম বল টা নয়। আসল ছোট ফুটবল টা নিয়ে খেলছে দুজনে। অন্য সময় হলে মা কুরুক্ষেত্র করত। কিন্তু আজকে মা চুপ। জানে রাকা আছে। শিভ জোরে মারে না। আর রাকা তো বলের সাথে ঘুমোয় খায়। বল ওর কথা শোনে। শিভের বাপ মনে হয় বল টা নাচাচ্ছে পায়ে। শিভ হাততালি দিচ্ছে। আমি মাংশ টা কষছি। আওয়াজ পাচ্ছি এক পায়ে জাগল করলে যে আওয়াজ টা হয় সেই আওয়াজ। এক সময়ে ছেলে আমার উত্তেজনা ধরে রাখতে পারল না। মা!!! দেখে যাও বলে ডাক দিল। আমি বেরিয়ে গেলাম। দেখলাম রাকা বাম পায়ে জাগল করেই চলেছে। আমি দেখলাম ছেলে আমার তিড়িং বিরিং করে লাফাচ্ছে আর হাততালি দিচ্ছে। মা বাপি সবাই দেখছে হাঁ করে রাকার বল নিয়ে কেরামতি। ভাই ও দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে থ হয়ে গেছে সিঁড়িতেই।
আমি ছেলের আনন্দ দেখে, একবার হেসে, রান্না ঘরে ঢুকে আসব, ঠিক তখন ই রাকা আমার দিকে বল টা দিল একটু উঁচু করে। আমার মা বাবা সবাই আঁতকে উঠল প্রায়। ডাইনিং এ একোয়ারিয়াম আছে , কোনে ফিলটার আছে, পুরোন টিভি টা রয়েছে, একটা টেবিল এ আমার দাদু আর ঠাকুমার ছবি আছে। ওই বল যে কোন একটায় লাগলে সেটা ভেঙ্গে যাবে। বল টা ঠিক আমার ডান দিক বরাবর আসতেই , আমার অভ্যেসে ক্রস রিসিভ করে নিলাম বাঁ পা দিয়ে, ডান পায়ের ব্যাক হিলে বল টা হালকা টোকা মেরে তুলে সামনে নিয়ে এলাম নিলাম আমি। হাতে খুন্তী নিয়েই দুবার নাচিয়ে আবার গড়িয়ে আমার ছেলের দিকে বল টা ঠেলে দিলাম আমি। রাকার দিকে ইচ্ছে করেই দিলাম না। আবার না ভেবে বসে আমি ওর সাথে পুরোন বন্ধুত্ব টা চাইছি।
চলে এলাম রান্না ঘরে। মাংশ টা নাড়তে। ততক্ষনে ভাই হাত তালি দিতে দিতে নেমে এল। শিভ তো পাগলের মতন লাফাচ্ছে আনন্দে। ভাই আমাকে খেলতে দেখলেও মনে নেই হয়ত ওর। ওই একটু বেশি অবাক হয়েছে মনে হল। কারন ছেলেও জানে আমি বল নিয়ে খুব ভাল জাগল করি। আর বাপি মা তো জানেই। রাকার কথা ছেড়েই দিলাম। আমি মেয়ে হবার পরেও বহুবার বলেছে আমাকে আমার খেলা চালু করতে। রাকার গলা পেলাম,
- অবাক হোস না পিনি। তোর দিদি ফুটবল টা আমার থেকেও ভালো খেলত।
হু। আর আমাকে এই নিয়ে ও এক রাতে ফোনে কম অপমান করেনি। আজকে নাকি আমি ওর থেকেও ভালো খেলতাম। চুপ রইলাম। তাই তো আছি কাল থেকে আমি। ভাই বলল,
- তাই তো দেখছি। মা বাপি, কই আমাকে তো বলনি কোনদিন, দি ভাই এতো সুন্দর ফুটবল খেলে।
সবাই হাসল। আমার ছেলে কিন্তু রাকা কে বলেই চলেছে আবার খেলতে হবে। ভাবলাম এদের খেলার চক্করে কিছু না কিছু ভাংবেই আজকে। দরকার নেই। আমি বাইরে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম
- একটু চিকেন খাবে? মা বানাচ্ছে?
ও কি বলল তার অপেক্ষা না করে রান্না ঘরে নিয়ে এসে একটা বাটি তে এক পিস চিকেন দিয়ে ওকে বসিয়ে দিলাম আমি ডাইনিং এ। দুষ্টু টার সর্বক্ষন এটেনশন চাই। খা বসে এখন এটা কে। হয়ে গেলে, আমি জল দিলাম মাংশ তে আর বাইরে এসে মা কে বললাম,
- শিভের জন্য দুপিস তুলে রেখে ঝাল দিয়ে দাও মা। আমি লঙ্কা মিক্সি তে গ্রাইন্ড করে রেখেছি।
মা হেসে চলে গেল রান্না ঘরে। আমি বসলাম একটু সোফা তে। ভাই এখন অবাক হয়ে দেখছে। আমি বললাম
- এই কি হয়েছে রে তোর। ওমনি করে দেখছিস কেন?
- বেচারী তোকে তো দেখেনি সে ভাবে খেলতে। ওর মনে হয় মনেও নেই। থাকলেও আবছা।
বাপির কথায় ভাই বলল
- খুব আবছা, কিন্তু খেলা মনে পরে না। বরং আমি যখন ক্লাস সিক্স এ পরি রাকা দা কে খেলতে দেখেছি, রুদ্রপুর ক্লাবের হয়ে। মনে আছে সেই খেলা এখনো আমার
রাকা বলল
- হ্যাঁ হয়েছিল, বহরমপুরের একটা ক্লাবের সাথে। আমি তখন কলকাতায় থাকতাম। তোর দিদি আমাকে বলতে গেলে কেঁদে কেটে ডেকে এনে খেলিয়েছিল। বলেছিল ইজ্জতের প্রশ্ন। ম্যাচ টা আমরা জিতেছিলাম ২- ১ এ।
আমি রাকার দিকে তাকালাম। যেন সেই পুরোন রাকা। ওর মনে আছে সেটা? ওর আসার সমস্যা ছিল। আমি অনেক কিছু বলেছিলাম ও আসবে না বলেছিল বলে। তাতে বলেছিল, আসবে তবে আমার সাথে সারা রাত ছাদে থাকতে দিলে ও আসবে। খেলায় ওর কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমি বলেছিলাম জিতলে তবেই আমি রাজী না হলে না। আর খেলার পরে সারা রাত বদমাশি করেছিল আমার সাথে ছাদে। আমিও ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে নিজেকে মেয়েই ভাবতে শুরু করেছিলাম ওর কাছে। ভাবতেই গা টা শিউরে উঠল আমার। ওর দিকে আর তাকাতে পারছি না। হয়ত ওর ও মনে পরেছে সেই রাতের কথা। আমি ছেলেকে হাড় থেকে মাংশ টা ছাড়িয়ে দিতে লাগলাম। ছয় বছর পরে ওকে দেখলাম ভালো করে। এতো টুকু বদলায় নি। তেমন ই সরল চাউনি। নির্লিপ্ত চোখ। হাসি টা ঠোঁটের কোনায় লেগে। যেদিন আমাকে অপমানে মেরে ফেলেছিল, সেদিনে সেটা একটা অন্য রাকা ছিল। মুখ টা নামিয়ে নিলাম আমি।