Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
                                                                                           পর্ব চৌদ্দ
তখন আট টা সাড়ে আট টা বাজবে। আমি শিভ কে তুলে হিসু করিয়ে, বাথরুম এ ব্রাশ করিয়ে, কোলে নিয়ে নীচে সোফা তে বসিয়েছি। মা ওর জন্য হেলথ ড্রিঙ্ক বানিয়ে দিয়েছে। আমি চারটে বিস্কুট একটা প্লেটে দিয়ে ওর কাছে বসে আছি। চামচে করে খাইয়ে দিচ্ছি। ও খাচ্ছে। সেই সময়ে বাপি দেখলাম বলছে,

-     আরে এস এস । কত দিন পরে দেখলাম তোমায়। যদিও টিভি তে আমি দেখতেই পাই তোমাকে। তবে সামনা সামনি অনেক দিন পরে দেখলাম।

তাকিয়ে দেখলাম, রাকা আমার গাড়ী টা নিয়ে এসেছে। বাবাকে প্রনাম করল রাকা। বাবা মনে হয় বাইরে ছিল কোন কাজে দাঁড়িয়ে। রাকা কে দেখেইএ একেবারে ভিতরে নিয়ে এসেছে। ওকে আসতে দেখেই আমি শিভ কে কোলে নিয়ে চলে এলাম রান্না ঘরের দিকে। বাবা মনে হয় রাকা কে সোফা তে বসতে দিল। মা বেড়িয়ে গেল রান্না ঘর থেকে বাইরে। আমি রান্না ঘরে ঢুকলাম। ছেলে বাপের গলার আওয়াজ পেয়ে আমাকে বলল
-     পাপা এসেছে।
আমি ওর দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললাম
-     যাবে পাপার কাছে?

এত্তো খানি ঘাড় নেড়ে জবাব দিল ও যাবে। আমি কোল থেকে নামিয়ে দিতেই ও চলে গেল বাপের কাছে। আমার মনে ভিতর টা কেমন করে উঠল। যদি আমার থেকে চলে যায় ও। যে ভাবে ওর বাবার কাছে ছুটে গেল। আমার মতন এক ই ভুল রাকাও করেছিল মনে হয়। নিজের ছেলেকে ও বেড়িয়ে আস্তে দেখে ভেবেছিল, শিভ হয়তো বাবাকে মিস করছে। আমিও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু রাকা যখন ওকে জিজ্ঞাসা করল
-     কি রে যাবি আমার সাথে?

কিছুক্ষন চুপ, তার পরে শিভ সোজা এসে আমার কোলে। একেবারে আঁকার করে ধরে রইল আমাকে। মনে মধ্যে যে ভয় টা আমার এসেছিল, উড়ে গেল। চোখে জল এলেও কিন্তু শিভের উপরে আমার একটা অদ্ভুত ভরসা তৈরি হলো, যে ও আমাকে ছেড়ে যাবে না। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম আমি,

-     কি হলো সোনা? ও শিভ? বাবা কি হয়েছে।
কোন কথা নেই। শুধু একটা কথা বলে আমার কাঁধে মুখ লোকালো
-     আমি কোথাও যাব না।

বুঝলাম ও ওর পাপা কে মিস করছিল না। আমাকে কাছে পেয়ে ও ওর পাপা কে প্রথম বার ভালবাসল। প্রথম বার পাপা এই শব্দ টা কে নিজের করল। ওকে জড়িয়ে ধরে বাইরে গেলাম। মা কেই বললাম, বেশ কড়া ভাবে,

-     মা এখানে এসে ওকে যেন কেউ এই সব জিজ্ঞাসা না করে। ছেলেটা কিন্তু কাঁদলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলব না বলে দিলাম।

রাকা আমার কথা শুনল। আমার দিকে তাকিয়েও রইল খানিক। কিছু বলতে গেল হয়ত, কিন্তু আমার রনচন্ডী মুর্তি দেখে আর কিছু বলল না। একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, মা কে বলল,
-     কাকিমা আমি উঠি। গাড়ি টা দিয়ে গেলাম।
মা বলল
-     সে কী, কোথাও যাবে না । বোস। চা খাও। আমি লুচি ভাজি ,খেয়ে তারপরে যাবে।

আমি মনে মনে ভাবলাম। লুচি করলে তুমি করবে। ওকে লুচি করে খাওয়ানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমার বলার আগেই রাকা বলল
-     না না কিছু করতে হবে না কাকিমা।
মা ও ছাড়ার পাত্রী নয়। বলল
-     কোন কথা শুনব না। কত দিন বাদে এলে বাড়িতে। আমি না খাইয়ে ছাড়বই না।

রাকা তো কোন কালেই মায়ের কথার উপরে কথা বলতে পারে নি। কি করবে বসে গেল। ভাই আর বাপিও রাকার সাথে গল্প শুরু করল। আমি শিভ কে কোল থেকে নামিয়ে পায়ে একটা চপ্পল পরিয়ে দিলাম। আমার বোনের মেয়ের ছিল চপ্পল টা। কালকে তো কিছুই আনিনি ও বাড়ি থেকে।আজকে সব কিনব। ওকে বললাম,
-     যা তুই খেল। কেউ তোকে নিয়ে যাবার কথা বলবে না।

কথাটা বেশ জোরেই বললাম আমি। যাতে রাকা শুনতে পায়। পেলে পাক। কিছু মনে করলে করুক। কিচ্ছু যায় আসে না আমার। এখন মা কে বলে দিতে হবে। লুচি আর তরকারি কোন টাই আমি করব না। মা আসতেই মা কে ফিস ফিস করে বললাম,
-     কি দরকার ছিল তোমার? চলে যাচ্ছিল, চলে যাচ্ছিল। উহহ লুচি খেয়ে যাও বাবা!

আমার কথায় মা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল একেবারে,
-     জানোয়ার মেয়ে কোথাকার। ও যদি তোর কথা শুনে উঠে গেছে না শিব!  তোকে আমি বাড়ি থেকে বার করে দোব। শয়তান মেয়ে কোথাকার।

আমি শুনে হেসে ফেললাম, আমাদের পুরো কথাবার্তাই গলা নামিয়ে হচ্ছিল তখন। মা কে বললাম,
-     ও মানে এখন ওর জন্য আমাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেবে তুমি? আর ও যে ছেলেকে নিয়ে যাবার কথা বলল, কই তখন কিছু বললে না তো?

মা রেগে গেছে রীতিমত। আমার কথার জবাব দিতে গিয়ে কথা আটকে যাচ্ছে মায়ের। আর আমার হাসি পাচ্ছে।

-     ও শিভ কে জিজ্ঞাসা করেছে শুধু। নিয়ে যাব বলেছে নাকি। তোর কি ব্যাপার জানিস?  যাকে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা। রাকা ভাবছে আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি। সেই ভেবে বলেছে ছেলেকে। তুই এতো ওর উপরে রেগে যাচ্ছিস কেন?
-     রেগে, যাচ্ছি কে বলল? আমি রেগেই আছি অনেক আগে থেকে। নতুন করে রাগিনি ওর উপরে। ওর হয়ে সাফাই গেও না তো। যত সব পালটি বাজের দল।

মা একেবারে রেগে আগুন হয়ে গেল আমার কথা শুনে। এক জামবাটি ময়দা বের করে আমার দিকে ঠক করে নামিয়ে দিয়ে বলল,

-     চুপচাপ ময়দা মাখবি। না হলে কাউকে মানব না আমি। শিভের সামনেই দু ঘা বসিয়ে দোব বলে দিলাম। বেশ করেছি পালটি খেয়েছি। এতো দিন বাদে এল বাড়িতে। এসেই প্রনাম করল আমাদের। দুটো লুচি করে খাওয়ালে সমস্যা কি?
-     খাওয়াও না আমি কি মানা করেছি? আমি কিচ্ছু করতে পারব না। তুমি ময়দা মাখ তুমি তরকারি কর। আমাকে কিছু বলতে আসবে না।
-     না বলবে না? তিন থাবড়া খাবি এবারে। ওর ছেলেকে এনে আদর করছে, খাওয়াচ্ছে আর ওকে দুটো লুচি করে দিতে গেলে গায়ে জ্বর আসে ওর। ওর ছেলে কে ও নিয়ে যাবে আর তুই রাগ করছিস। ভেবে দেখ তো, তুই কত টা বেশী অধিকার দেখাচ্ছিস শিভের উপরে? শিভের জন্য কি তুই কম আনন্দে আছিস?

চুপ করে গেলাম আমি। মা বলেই চলে,
-     ওরে ছেলের সামনে তার বাবা কে কোন ভাবেই অসম্মান করবি না। তুই কি চাইবি শিভ তার বাবাকে অসম্মান করুক? তোর বাবার সাথে আমার ঝগড়া হয় না? কিন্তু কটা কথা বলেছি তোর সামনে তোর বাবাকে? কোন দিন ও শুনেছিস? বাচ্চাদের ম্যানারস, কথা বলে শেখান যায় না। নিজে সেটা করতে হয় । জানোয়ার মেয়ে। বাচ্চা হলেই হলো? তাকে মানুষ করতে অনেক ইগো বিসর্জন দিতে হয়। বুঝলি? ময়দা মাখবে না? মাখ!!!!!

অদ্ভুত তো! কি যুক্তি ! আমি তেড়েফুঁড়ে বললাম
-     সে তুমি আর বাবা স্বামী স্ত্রী। তোমার আচরন মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ও তো আমার কেউ না।
-     না হলেই বা কেউ? তুই ওর ছেলেকে ভালবাসিস না?  যদি সত্যি করেই ভালবাসিস, তবে তুই কোন দিন ও ওকে ছেলের সামনে অসম্মান করতে পারবি না। আর যদি করিস , আমি এটাই ভাবব, তুই প্রতিশোধ নিচ্ছিস রাকার উপরে। ওর ছেলের তোর উপরে ভালোবাসার ফায়দা নিচ্ছিস আর ওর ই ছেলেকে ওর বিরুদ্ধে ওসকাচ্ছিস।

মা রীতিমত ফুঁসছিল রাগে। হাঁপাচ্ছে মা। কিন্তু থামল না, বলতেই থাকল মা,

-      আর ও কেউ নয় ই বা কেন। মাঝে শিভ তো আছে। হতে পারে তোরা নদীর এপারে আর ওপারে আছিস। মাঝে তীব্র মান অভিমান, অবিশ্বাস, ধোঁকা , অশান্তির স্রোত। কিন্তু মাঝে শিভ বলে একটা সেতু আছে সেটা ভুলে যাস না। ভেবে দেখিস, আজকে ছেলে ছোট। একদিন বড় হবে। সেদিন কিন্তু ও পুরো ব্যাপার টাই বুঝবে। আর সেদিনে কিন্তু আজকে যে ভালবাসা পাচ্ছিস ছেলের কাছ থেকে তার কানা কড়িও পাবি না। আর বোঝাতে পারব না। চুপ চাপ ময়দা মেখে আলুর দম টা চাপা প্রেশার কুকারে।

আমাকে তো যা নয় তাই বলে ঝেড়ে দিয়ে মা বাইরে বেরোনর আগেই মুখ টা  হাসি হাসি করে নিল। যাতে বাইরে কেউ বুঝতে না পারে মা রেগে আছে। কিন্তু আমি বুঝলাম মা রেগে, কারন পায়ের আওয়াজে মনে হচ্ছিল বাড়ি কাঁপছে। আমার মধ্যে ঝড় বয়ে গেল। বুক টা কাঁপছে তখনো। ভাবতেই পারি না শিভ আমাকে ভালবাসছে না। তা সেটা জীবনের শেষেই হোক না কেন। না মায়ের কথায় কোন রাগ হচ্ছে না আমার।  আনমনে ময়দায় তেল দিয়ে জল দিলাম আমি। মায়ের কথা গুলো বাজছে আমার কানে। নিজেকে মনে হলো , সত্যি কত কম জানি। যাই হোক আমার আর রাকার মধ্যে, শিভ তো দোষ করে নি। আমাকে যদি ও মা বলে মেনে নেয় তবে রাকা তো ওর বাবা আগে থেকেই। সেখানে আমি বাধ সাধছি কেন। এই অধিকার তো আমার নেই। শিভ কে ওর বাবার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবার কোন ইচ্ছেও আমার ছিল না। আমি চাই ও নি শিভ তার বাবাকে ভুল বুঝে বড় হোক। মায়ের বকুনি টা আমাকে লুচি করতে বলা টা কোন টাই গায়ে লাগছে না আর। মেখে ফেললাম ময়দা টা আমি। উপরে হালকা তেল দিয়ে মাখা ময়দা টা ভিজিয়ে রেখে দিলাম একটা কোনে। ছোট ছোট আলু বেছে রাখলাম রান্না ঘরের মেঝে তে। বটি টা বের করে দ্রুত হাত চালালাম আমি।

কাজ করতে রান্না ঘরে আমি চিরকাল ভালোবাসি। জানিনা আজকে মায়ের জোর করার পরে কাজ করার সময়ে কেমন অন্য রকম ভাল লাগা একটা। মায়ের অতো বকুনি তা সত্বেও আমার মুখে হাসি টা লেগেই আছে। এই বকুনি টা আমার ভাল লাগল । জানিনা এই আনন্দ টা কীসের? শিভের মা আমি আর বাবা রাকা বলে? নাকি রাকার উপরে মায়ের যে রাগ, যে ক্ষোভ ছিল সেটা এখন নেই বলে। না কি আমাকে রাকার জন্য লুচি আলুরদম করতে বলল বলে। বুঝতে পারছি না আমি। শুধু এটাই মনে মধ্যে গেঁথে গেছে শিভ আমাকে ছেড়ে যাবে না বলেছে। ব্যস আর তো কিছু চাই নি আমি। ওর জন্য যদি রাকার পায়েও পরতে হয় আমি পরব, লুচি করা তো সামান্য ব্যাপার। সত্যি তো রাকা না চাইলে আমার ক্ষমতা কি শিভ কে আমার কাছে রাখার? নাহ আমি ভুল ছিলাম। কিন্তু রাগ তো যায় না আমার ওর উপর থেকে কি করব?

মা হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখে ময়দা মাখা হয়ে গেছে আলু কেটে আমি প্রেশার এ ভরে দাঁড়িয়ে আছি সিটির অপেক্ষায়। মা দেখেই আমার দিকে তাকাল। এক মুখ হাসি। সেই হাসি দেখে আমা গা জ্বলে গেল। হাতে বেলনা টা ছিল আমার। বেলনা উঁচিয়ে মা কে বললাম,

-     আমি সব করে দিচ্ছি। কিন্তু ওর সামনে সাত কাহন করে বলার দরকার নেই , সব আমার শিব করেছে। ওকে ইম্প্রেস করার কোন ইচ্ছে আমার নেই কিন্তু বলে দিলাম মা।

মা শুনে হেসে ফেলল। আমার চিবুক ধরে হামু খেয়ে বলল
-     ওমা তা বলব না? আমার মেয়ে এতো সুন্দর রান্না করতে পারে সেটা বলতে হবে না?

আমি দেখলাম বিপদ।মা বলে দিলে আমার প্রেস্টিজ বলে আর কিচ্ছু থাকবে না রাকার কাছে। আমি একদম চাইছি না ও জানুক, ওর জন্যে আমার মনে কি চলে আজকেও। ও শুধু জানবে আমি ওকে ঘেন্না করি। ব্যস। আমার দুর্বলতার অনেক সুযোগ নিয়েছে ও। আমি মায়ের হাতে পায়ে ধরে নিলাম,

-     ও মা প্লিস বোল না প্লিস মা । যা বলবে আমি করব। প্লিস তুমি বোল না। আমার প্রেস্টিজ আছে একটা কিন্তু মা।
-     আচ্ছা আচ্ছা। তবে বল, ও এলে আর কোন দিন ছেলের সামনে এই সব ঝামেলা করবি না?
-     ঠিক আছে। কিন্তু ছেলে সামনে না থাকলে কি করব বলতে পারছি না।
-     সে দেখা যাবে।

মা চলে গেল। বাইরে গল্প করছে রাকার সাথে সবাই মিলে। ছেলেটাও এদিক ওদিক করছে। কখনো আসছে আমার কাছে। একবার দেখে নিচ্ছে আমাকে। আমি লুচি ভাজতে ভাজতে একটা প্লেটে একটা লুচি নিয়ে ওকে দিলাম। ও সেটা নিয়ে খুশী হয়ে চলে গেল বাইরে। ওকে দেবার আগে লুচির উপরে ফোলা অংশ টা আমি হাত দিয়ে ভেঙ্গে দিলাম। ওর কচি হাত গরম ভাপ লেগে যেতে পারে।

আলুর দম টা বানিয়ে উপরে ধনে পাতা কুচিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে মা কে ডাক দিলাম। মা এসে তিনটে প্লেট আর তিনটে বাটিতে লুচি বেরে ফেলল। দুটো প্লেট নিল হাতে আর তিন নম্বর টা বলল আমাকে নিয়ে আসতে। আমি যাব না কথাটা বলার আগেই মা বেরিয়ে গেলো রান্না ঘর থেকে। আমি জানি ইচ্ছে করেই মা করল এটা। আর আমি এটাও বুঝেছি, মায়ের প্লেট দুটো মা ভাই আর বাপি কে দেবে আর তিন নম্বর টা আমাকে বলবে রাকা কে দিতে। জানিনা কেন মা আমাকে আর রাকা কে কাছে নিয়ে আসতে চাইছে। এই সব করে কি কাছে আসা যায়? আমি আর ভাবলাম না, কারন ততক্ষনে মা বাইরে থেকে আমার ডাকছে- শিভ নিয়ে আয়।

আমি প্লেট টা হাতে করে নিয়ে গেলাম বাইরে। ইশ কি লজ্জা। সবাই মিলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে বাপি আর ভাই। রাকার দেখে ফুরোচ্ছে না আমাকে। মা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। আমি কোন রকমে গেলাম রাকার হাত টা খালি ছিল। ওর প্লেট টা সামনের টেবিলে রাখার আগেই ও হাত বাড়ালো। কি আর করব। ওর হাতে দিলাম। চোখে চোখ পরল। ওর চোখে মুগ্ধতা। জানিনা আমার চোখে কি ছিল, হয়ত ভালো লাগা। এক্টিং করতে গেলে আমাকে ভাবতে হয়। সেই সময়ে ভাবার অবকাশ ছিল না আমার। ওকে প্লেট দিয়ে ঘুরে দেখলাম শিভের প্লেট খালি। 
প্লেট সুদ্দু ওকে কোলে তুলে নিলাম আমি। রান্না ঘরের দিকে নিয়ে এলাম ওকে। বললাম,
-     আরেক টা নেবে লুচি? একটা আলুও দি কেমন? খাও পাপা আর দাদু র সাথে বসে যেমন খাচ্ছে সবাই?
-     বাটিতে দাও।
হেসে ফেললাম।
-     ও আলু টা বাটিতে দেব?
-     হুম
-     আচ্ছা বেশ।

আমার কোলেই রইল ও। আরেক টা লুচি আর একটা ছোট বাটিতে ওকে আলু আর একটা চামচ দিয়ে, সোফায় বসিয়ে দিয়ে এলাম। এখনো বুঝলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। ইশ কি লজ্জা। রান্না ঘরে এসে রীতিমত হাঁপাচ্ছি আমি। উত্তেজনায়। বাইরে শিভের হাব ভাবে সবাই হাসছে আর কথা বলছে। রাকা বলল,
-     কাকিমা? ও তো একেবারে জাঁকিয়ে বসেছে এ বাড়িতে

সবাই হেসে উঠল। বাপি বলল
-     বাচ্চাদের এই গুন টাই তো আসল রাকা। এই জন্যেই তো ওরা ভগবান। সকালে শিবের মায়ের সাথে আমার ঘরে গিয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলল। আমি জিজ্ঞেস করতে বলল, আমি নাকি একটা দাদু। তুমি আসার আগে শিব ওর খাবার করছিল, ততক্ষনে পুরো বাড়ি টাই ওর ঘুরে দেখা ও হয়ে গেল।

মা বলল
-     ওই বা কি করে? তিন তিনটে দাদু ওর। তুমি তাদের মধ্যে একটা সেটাই ও বুঝিয়েছে।

আবার সবাই হাসল। আমার মনের মধ্যে পাথর টা কিন্তু চাপছে আসতে আসতে। রাকা যেন ওকে নিয়ে যাবার কথা না বলে আবার। মা রাকা কে বলল,
-      তুমি বাবা ওকে নিয়ে আর চিন্তা কোর না। শিব ওকে দেখছে।

রাকা বলল
-     না না কাকিমা আমি চিন্তায় নেই একদম ই। আমি ভাবলাম আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে নাকি? তাই জানলাম ও যাবে কিনা আমার সাথে। কিন্তু ওর তো যাবার ইচ্ছেই নেই এ বাড়ি ছেড়ে।
-     এ বাড়ি টা ওর কাছে তেমন কিছু নয় বাবা। শিব কে ছেড়ে ও যাবে না। শিব ও ভয়ে মরে যাচ্ছে তুমি হয়ত ওকে নিয়ে চলে যাবে ।

মা একবারে বোম টা ফেলল রাকার সামনে। রাকা চুপ করে রইল । সবাই চুপ। আমার বুক ধড়াস ধড়াস করছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে একেবারে। মনে হচ্ছে অনেক অনেক দৌড়েছি আমি। নিঃশ্বাস আটকে যাবে এবারে আমার। অনেকক্ষন পরে খুব ধীরে ধীরে বলল,

-     ওকে ভয় পেতে মানা করবেন কাকিমা। আমি বহু বহু অংশে কৃতজ্ঞ ওর কাছে। এই পর্যায়ে এসেও এতো আমার জন্য করবে সেটা ভাবতে পারিনি। তাই বলে ছিলাম যে শিভ যাবে নাকি আমার সাথে? এখনো ও আমার কষ্ট লাঘব করছে, আমার থেকে বড় ভাগ্যবান কে আছে বলুন কাকিমা। ওই টুকু ছেলে, মা চলে গেলো ওকে ছেড়ে। গতকাল অব্দি সকালে ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, ও ওর মাকে মিস করছে। কিন্তু আজকে সকালে যে ভাবে আমার দিকে ছুটে এল, বুঝলাম, ও একেবারে চাঙ্গা মানসিক ভাবে। ও ওর মাকে মিস করছে না একদম ই। আমি কেন ওকে নিয়ে যাব। নিজের ভাল পাগলেও বোঝে। আর আমি ওর ভালো বুঝব না?
-     না না একী বলছ তুমি? শিব কি ওকে ভালো বাসে না? আর সেই ভয় টাই ওর মনে কাজ করছিল।

মা আরো কত কি বলছিল। কানে আসছিল না আমার। রান্না ঘরে দরজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম আমি। রাকার কথা গুলো তীরের মতন এসে বুকে বিঁধল আর বুকের পাথর টা কে খন্ড বিখন্ড করে ভেঙ্গে দিয়ে গেল। চোখের জল বাঁধ মানল না আর। বেরিয়ে এলো গাল বেয়ে। এতো তো আমাকে বুঝিস তুই, সেদিনে কি হয়েছিল তোর? এতো অপমান কেন করেছিলি? কেন আমাকে শেষ করে দিয়ে গেছিলি? তুই দশ টা বিয়ে করতিস। আমার তো আপত্তি ছিল না। কেবল আমি তোর ই থাকতাম। সব সময়ে। সেই ভাগ্য টাও আমাকে দিলি না তুই। আমাকে একেবারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলি। শুধু আমি হিজড়ে বলে? রাগ চড়ে গেলো মাথায়। আজকে ছেলের জন্য এতো কিছু বলছিস না? যাক আমি বুঝে গেছি, ভয় নেই তোর। তোর ছেলে তোর ই থাকবে। শুধু ভালোবাসি বলে শিভ কে, না হলে আমার মরন ছিল না তোর জন্য এতো কিছু করার। আর কোন ইন্টারেস্ট নেই তোর উপরে।

মা ডাকল, শিব লুচি নিয়ে আয়। মায়ের উপরে রাগ টাও আর নেই আমার। শিভের জন্য মা রাকার সাথে কথা গুল বলার পরেই মায়ের উপর থেকে রাগ টা আমার চলে গেছিল একেবারে। চোখের জল টা মুছে, একটা বড় বাটিতে খান দশেক লুচি নিয়ে গেলাম আমি। রাকা কে দিলাম চারটে। কিছু বলল না নিয়ে নিল। বাপি দুটো নিল আর ভাই চারটে। তখনো সবাই দেখছে আমাকে। আমার চোখ ফোলা আর লাল। রাকা তখন ও অবাক হয়ে দেখছে আমাকে। আমি পাত্তা দিলাম না। কোন রকমে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম আমি,

-     কি রে আর একটা নিবি লুচি?

নীচের দিকে তাকিয়ে চামচ দিয়ে আলু টা বাগে আনতে আনতে ঘাড় নেড়ে আমাকে না বলে দিল। আমি চলে এলাম রান্না ঘরে আবার।

রাকা বলল,
-     কাকিমা শিব কাঁদছে কেন? আমার কি সামর্থ্য আছে, শিভ কে শিবের থেকে আলাদা করে নেবার? নেই। কত দিন পরে মা আজকে খুশী। আমার সাথে কথা বলল ভালো করে একটু।

মা চুপ রইল অনেকক্ষণ। বাপি বলল মা কে
-     তুমি শিব কে বল কান্না কাটি না করতে। শিভ দেখলে কষ্ট পাবে তো।

মা সাড়া দিল না বাপির কথায়। শুধু রাকা কে বলল
-     এটা কেটে যাবে ধীরে ধীরে রাকা। তুমি ভেব না। আসলে ওর ভয় ছিল তোমাকে নিয়ে আর তোমার শশুর বাড়ি নিয়ে।

রাকা বলল বেশ ভারিক্কী হয়ে।
-     কাকিমা আমার ছেলে কি ভাবে থাকবে আমি বুঝব। আর শিভ তো ওদের সাথে থাকতেই চায় না। আমি তো চেষ্টা করেছিলাম। আমি কথা বলে নেব অঞ্জনার ড্যাড এর সাথে। এ নিয়ে ভাববেন না।

মায়ের কথার উত্তর রাকা যে এই ভাবে দিয়ে দেবে মা ভাবতেই পারে নি। মা কে স্বার্থপর মনে হচ্ছিল। কিন্তু রাকার উত্তরে মনে হলো, মা আমার থেকেও বেশি শিভের কথা ভাবছে। পরক্ষনেই রাকা বলল,
-     আমি জানি , ওনারা শিব কে অপমান করেছিলেন অনেক। রনি বলেছে আমাকে সব। হয়ত আপনাদের ও অপমান করেছে। কিন্তু কাকিমা আপনার পায়ে পড়ছি, আর সে সব মনে রাখবেন না। আমার ছেলেটা যেন ওদের মা বেটির মতন না হয় সেটা দেখবেন একটু। আমি আর আসব না শিব কে বিরক্ত করতে।

ধরে এল রাকার গলা টা। বুকের ভিতর টা আমার উথাল পাথাল করছে। কাঁদতে দেখিনি আমি ওকে কোন দিন। ওর সামান্য কষ্ট যাতে না হয় আমি সেই চেষ্টা করেছি সারা জীবন। হ্যাঁ শেষ বছর সাত আমি ওর সাথে কোন ভাবেই ছিলাম না। কিন্তু ওর কষ্ট কামনা করিনি আমি কোন দিন। আর আমি ছাড়া ও কষ্ট পাচ্ছে এটা তো ভাবতেই পারি না। চিরকাল ওকে নিজের অধিকার ভেবে এসেছি। ওর উপরে হম্বি তম্বি করেছি। যাতে ওর ভাল হয় সেই কাজ করেছি, নিজের কষ্ট হলেও। চিরকাল ভেবেছি ও কষ্ট পেলে আমার থেকে পাক, কারন সেই কষ্ট লাঘব করার উপায় আমি জানি। কত দিন ও রেগে গেছে আমি গিয়ে রাগ ভাঙ্গিয়েছি। ও আবার হেসেছে আমাকে হিটলার বলেছে। আমাকে মেরেছে, আমার চুল ধরে টেনেছে। কিন্তু ও কাঁদছে এটা আমি ভাবতেও পারিনি কোন দিন।

নীচে তাকিয়ে দেখলাম শিভ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কোমরের কাছে। আমি বসলাম ওর সামনে। দেখলাম ও আমাকে দেখছে। আমি চোখের জল মুছে নিলাম। আমাকে কাঁদতে দেখে শিভের চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে এলো। আমি চোখ দুটো মুছে দিলাম ওর। বুকে টেনে নিলাম। আমি কি শিভের চোখ দিয়েই রাকা কে কাঁদতে দেখলাম? ওকে বললাম,
-     আমার শিভ কাঁদছে কেন?

ফোঁপাচ্ছে ও বুকের মধ্যে। বলল
-      তুমি কাঁদছ কেন? পাপা কাঁদছে কেন?
-     ও এই ব্যাপার? শিব তো আনন্দে কাঁদছে। এই যে পাপা রাজি হলো, আমার শিভ আমার কাছে থাকবে। তাই তো আনন্দে কাঁদছি। তুমি বরং পাপার কাছে যাও। গিয়ে পাপাকে বল যেন আর না কাঁদে পাপা কেমন? পাপা কাঁদলে শিভের কি ভালো লাগবে?

বুকে থেকেই ঘাড় নেড়ে জবাব দিলো, ওর ভালো লাগবে না। ওর মুখ টা তুলে গালে চুমু খেয়ে বললাম,
-     যাও পাপার কাছে। গিয়ে বল না কাঁদতে। যাও। সোনা ছেলে আমার।

ও রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার সময়ে আমাকে একটু জোরেই বলতে হল,
-     বলে এখানে এসো, আরেক টা লুচি তোমাকে খেতে হবে।
-     আচ্ছা

বলে দৌড়ে চলে গেলো ওর পাপার কাছে।আমি দেখছি না । কিন্তু ওদের কথা শুনতে পাচ্ছি। ও গিয়ে পুটুরপুটুর করছে ওর পাপার সাথে,

-     আরে, শিব তো কাঁদছে, আনন্দে, তুমি আমাকে নিয়ে যাবে না তাই। তুমি কাঁদছ কেন? প্লিস ডোন্ট ক্রাই। আই নট লাইক দিস।

ও আমাকে শিব বলে শুধু। আমি বাধা দিই নি কারন আন্টি বলা একদম পছন্দ নয় আমার। বরং ছেলের মুখে শিব টা শুনলে আরো ভালো লাগে আমার। ক্ষতি কি যদি ও জানে মায়ের মানে আর শিবের মানে এক ই!

আমি উঁকি দিলাম। উফ এই ছেলেটা না? এতো কথা বলতে তোকে কে বলেছে ওখানে? তুই শুধু কাঁদতে মানা কর ওকে। আমার মা বাপি ভাই সবাই অবাক হয়ে দেখছে বাপ ছেলেকে। মা বলল,
-     শুনলে তো রাকা। আর কেঁদো না। ছেলের সামনে চোখের জল ফেলো না। যা হয়েছে ভুলে গেছি আমরাও, তুমিও আর মনে রেখ না। আমি শিব কে বলব যেন ও ভুলতে পারে সব কিছু, তুমি আর চোখের জল ফেলো না বাবা।

রাকা সাড়া দিলো না মা কে। বরং শিভের দিকে তাকিয়ে আদর করার স্বরে বলল,
-     আমিও কষ্টে কাঁদি নি শিভ। আমার ও তো আনন্দ হচ্ছে নাকি? যে আমার শিভ টা কত আনন্দে আছে। এ বাড়িতে রাজত্ব করছে। অ্যাঁ। হাহা। পাপা কাঁদে নি সোনা।
-     গুড

বলে এক দৌড়ে আমার কাছে। সবাই হেসে উঠল। ও আসতেই আমি ওকে আরেক টা প্লেটে লুচি আর আলু দিয়ে দিলাম। ও চলে গেলো সেটা নিয়ে খেতে সোফা তে।
 
রাকা খেয়ে দেয়ে চলে গেল বাড়ি। আমি স্নান করে নিলাম। অনেক টা মুক্ত আমি আজকে । কিন্তু আজকে স্কুলে যাওয়া হলো না। ভেবে ছিলাম যাব একবার সেকেন্ড হাফ এ। কিছু সাইন করার আছে। কিন্তু হবে না কাজ আছে আজকে। যাক কালকে সকাল সকাল যাব। তৃনা কে বলে দেব কালকে সকাল সকাল এসে সাইন গুলো করিয়ে নিতে। আমি স্নান করে ভিজে চুল টা ঝেড়ে, শিভের সুপ টা প্রেশারে বসিয়ে দিলাম। শিভ কে স্নান করিয়ে দিয়েছি আগেই। তাড়াতাড়ি করালাম, কারন খেয়ে দেয়ে আমি আর মা বেরোব একবার শিভ কে নিয়ে। অনেক কেনাকাটি আছে। 
বিনস, গাজর, বিট, পটল , ঢেঁড়স, বাধাকপি কুচি অল্প, দুটো ছোট ফুলকপির টুকরো, চার কুচো ছোট করে কাটা চিকেন, পেঁয়াজ, এক কোয়া রসুন, সামান্য বাটার , নুন আর হালকা দু ফোঁটা লেবুর রস একেবারে দিয়ে চাপিয়ে দিলাম শিভের সুপ টা। একটু খানি গোল মরিচ ছড়িয়ে দেব খাবার আগে। এটা খাওয়াব রোজ আর বাকি ও যা খায় খাবে আমাদের খাবার থেকে। সন্ধ্যে বেলায় একবার বই এর দোকানে যাব।বই কিনব কিছু। আমাকেও বই এর একটা র‍্যাক বানাতে হবে। আমার অজস্র বই এদিক ওদিকে ছড়িয়ে আছে। এতো দিন পাত্তা দিই নি। এখন দিতে হবে। ওকে যত্ন করা শেখাতে হবে । ওকে ভর্তি করে দেব আমার স্কুলেই। একবার মা কে বলব ওর বাপ কে জিজ্ঞাসা করে নিতে। কি জানি ওর বাপ কি বলবে? ওর বাপ তো বড়লোক।

দুপুরে শিভ কে একটা মাস্ক পরিয়ে নিলাম। ভাবলাম, মল এ যাব অনেক লোক থাকবে। কে কোথায় হাঁচছে, কাশছে। মাস্ক পরানোই ভাল। মা তো হেসেই বাঁচে না আমার কান্ড দেখে।
-     হেসো না তো। কত লোক থাকবে বল তো মল এ?  মাস্ক না পরালে হয়?
-     না না কিছু বলিনি। শুধু দেখছি আমি।

আমি স্কুটি টা বের করে শিভ কে সামনে দাঁড় করিয়ে নিলাম আর মা পিছনে বসল। মল এর পাশেই রনির রেস্টুরেন্ট তাশি ভিলা। নাম দিয়েছিল তাশি ভিলা,কারন পিছনেই তাশি নদী। আমি শিভ কে মায়ের কাছে দিয়ে আমার স্কুটি টা তাশি ভিলার পার্কিং এ পার্ক করলাম। রনির যত রেস্টুরেন্ট আছে সবার কর্মচারী, গার্ড আমাকে চেনে। আমাকে দেখে সিকিউরিটি টা হাসল। আমি স্কুটি টা পার্ক করে চলে এলাম মলের সামনে। তিনজনে মলে গেলাম। যা যা কেনার সব কিনলাম এক এক করে। এক জায়গায় দেখলাম, বিছানায় বসে পড়াশোনা করার জন্য হাইট এডজাস্ট করা যায় এমন একটা টেবিলের মতন। ভাবলাম এটা নিলে শিভ বসে পড়াশোনা করতে পারবে। কিনে নিলাম। ফুটবলের জায়গায় এসে শিভ ঠিক করতে পারছে না ঠিক কত গুলো বল হলে ওর ভালো হয়। যাই হোক শেষ মেশ দুটো ও নিল। ওখান থেকেই আমি কিছু খাতা পেন্সিল ইরেজার , ড্রইং সরঞ্জাম সব কিনলাম। ওর বেশ কিছু রাতে পরার ড্রেস কিনলাম। অনেক অনেক জামা প্যান্ট কিনলাম।

এই সময়ে রনির কল এলো আমার কাছে। সময় ছিল না আমার তাও ধরলাম ওর কল টা। ওকে বললাম
-     সময় নেই বল তাড়াতাড়ি। কাজে আছি
-     হ্যাঁ রে বাবা জানি। তোকে দেখলাম। আমার সিকিউরিটি খবর দিল, শিবানী মেডাম আসিয়েছে। ছেলের জন্য বাজার করছিস নিশ্চই
লজ্জা লাগল ছেলের জন্য কথা টা তে। বললাম ওকে
-     হুম। তোর কি রে শয়তান?
-     আরে আমার তো ভালোই। ছেলের বাপ আমার দোকানে বসে তাই ভাবলাম তোকে কল করি একটা।
-     ও তবে রাখলাম আমি। আমাকে আর একদম কল করবি না তুই। রাখ ফোন!!!!

ফোন টা রেখে দিলাম আমি। আমার যেন শেষ হচ্ছিল না ওর জন্য জামা প্যান্ট কেনা। কত কাজ এখন আমার। আন্টির বাড়ি থেকে ওর খেলার সরঞ্জাম গুলো আনতে হবে। ওর জার্সি টা ও। ওর বাপ কে বলে শিভের নাম লেখা ইন্ডিয়া জার্সি আনাতে হবে আরো কিছু। ওকে স্পাইক দেওয়া শু পরিয়ে দৌড়ানো অভ্যেস করাতে হবে। একটা দামী স্পাইক শু কিনে নিলাম। এই সব করতে করতে সাত আট টা বড় বড় ব্যাগ হয়ে গেল আমাদের। দুটো থেকে সাড়ে পাঁচটা অব্দি বাজার করলাম আমরা। যখন বেরোলাম, তখন আমাদের সাথে খান সাত ব্যাগ।
[+] 11 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি নতুন পর্ব ১২ - by nandanadasnandana - 10-02-2022, 04:06 PM



Users browsing this thread: কুয়াশা, 2 Guest(s)