10-02-2022, 03:57 PM
আগের পর্বের কিছু অংশ...
ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম
- নো নো স্যার। হি ডাজন্ট স্টাডি একচুয়ালি। এট লিস্ট ওয়ান মান্থ হি নিডস। কুড ইউ প্লিস হেল্প হিম অন দ্যট স্যার?
- ওহ শিওর। ইউ আর সাচ এ কেয়ারিং বাডি। আই মাস্ট টেক কেয়ার, লেডি।
- থ্যাঙ্কস স্যার।
- ওয়েল কাম । ইউ আর স্টানিং বিউটি মাই ডিয়ার।
পর্ব তেরো
রাকার পড়াশোনার ব্যাপার টা একটু ঠিক না করলে ও পাশ করতে পারত না। জানিনা এখনো পাশ করবে কিনা। যাই হোক আমরা বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে। রাকা ভ্যোম হয়ে আছে। আমার বোন স্টেডিয়াম এ ঢুকে, আনন্দে এদিক ওদিক করছে। বেশী দূরে যায় নি, কাছা কাছি ই আছে। বিকালের আলো কমে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি আর চলতেও কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমি বললাম
- কি রে মুখ গোমড়া কেন তোর?
- ইউ আল স্তানিং বিউতি। দাঁত কেলানে বাঞ্ছারাম কোথাকার।
ভেঙ্গিয়ে রাকা কথা গুলো বলতেই আমি হেসে গড়িয়ে গেলাম প্রায়। ওর কথা বলার ধরনেই আমার হাসি পেল। বললাম
- খেপলি নাকি তুই? কোচ কে কেউ ভেঙ্গায়?
- কেন, অতো স্টানিং বিউটি বলার কি আছে?
- আচ্ছা বেশ আর রাগ করতে হবে না। ওই দিকে চল না?
- কোন দিকে?
আমি আঙ্গুল দেখালাম, ১০ নাম্বার গেট। বেশ অন্ধকার ওই দিক টা। আমার বোন টাও একটু দূরে চলে গেছে আমাদের থেকে। ওই টা এই স্টেডিয়ামের ফার্স্ট ফ্লোর ওঠার বা নামার গেট। ও অবাক হয়ে বলল,
- কেন? ওদিকে অন্ধকার। কোথায় হোঁচট খাবি তার ঠিক আছে।
- ধুর বাবা চল না।
আমি ওকে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম। দেওয়ালের পাশে চলে গেলাম। এমন ই জায়গা টা আমি মুখ বাড়ালেই, এদিকে বোন কে দেখতে পারব কিন্তু বোন আমাদের দেখতে পাবে না। ও দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো। আর আমি ওর সামনে। আমার দিকে ও তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করল,
- এখানে আনলি কেন?
আমি একবার মুখ বাড়িয়ে বোন কে দেখে নিয়ে ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হরমোনাল কারনে ওর এই খেলে আসার পরে ঘামের গন্ধ টা পাগল করে দিচ্ছিল আমাকে। জাপটে ধরলাম ওকে। ওকে যেন বলতেই হলো না। আমাকে ও টেনে নিল নিজের কাছে। আমার কাঁধে মুখ টা রেখে দিল ও। আমার পিঠে হাত বোলাতে লাগল। বলল,
- এই জন্যে এই অন্ধকারে আসার এতো বায়না?
- হুম
- আমি তো বলতে পারছিলাম না তোকে। তাছাড়া ঘেমে ছিলাম। জড়িয়ে ধরলে যদি তোর ড্রেস খারাপ হয়ে যায়?
- হলে হবে।
বলতেই আরো জোরে আমাকে টেনে নিল রাকা। আমার বুক টা পিষে যেতে লাগল ওর বুকের সাথে। এখন ও বুকে খুব ব্যাথা হয় আমার। ও আমাকে আমার কোমর টা ধরে ওর দিকে টানতেই আমার বুক টা লেপ্টে গেলো ওর পুরুষালি বুকের সাথে। টন টন করে উঠল বুক টা আমার। চোখ বুজে রইলাম। কিছুক্ষন পরে আমরা ছেড়ে দিলাম একে অপর কে। বললাম,
- শোন আজকে আমি দেখে নিলাম। কাল থেকে আমি আসব প্রায় ই। তোর অসুবিধা হবে না তো?
আমার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
- কি যে বলিস তুই। তুই এক মাস থাকবি কলকাতায় শুনে আমার মনে হচ্ছিল, আমি রুদ্র পুরে এসেছি। প্লিস কাল থেকে আরো সকাল সকাল আসিস। আরেক টু বেশী সময় কাটানো যাবে বুঝলি?
- কি করে ? তুই তো পাঁচ টার আগে ফ্রী হতে পারবি না।
- সেটা ঠিক। তবে তুই একটু আগে আসিস। যাতে করে ঠিক পাঁচটা থেকেই আমরা দেখা করতে পারি।
- আচ্ছা সেটা আমি দেখব। তোকে এই নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
ওখানেই আমার পার্স থেকে যে পাঁচ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। ওকে দিয়ে দিলাম। বললাম
- রেখে দে তুই।
ও অবাক হয়ে বলল
- কি হবে? আমার কাছে আছে তো টাকা। এখানে খরচা হয় না কিছুই। সব পাওয়া যায়।
- তাও রেখে দে। যদি আন্টির জন্য মন কেমন করে চলে যেতে পারবি বাড়ি এক রাতেই।
বলতে পারলাম না যদি আমার জন্যে মন কেমন করে চলে যাস বাড়ি, বা আমার মন কেমন করলে ডাকলেই চলে যাস।
- এতো লাগবে না।
- আরে লাগবে। সামনের আরো কিছুদিন আমি আসব। আমাকে খাওয়াবি না নাকি? তোর সব বন্ধুদের সামনে আমি তোকে খাওয়াতে পারব না। তুই আমাকে খাওয়াবি। বুঝলি?,
এই বলে আমি পিছন ফিরে চলে আসতে লাগলাম। বোন কে খুঁজতে হবে। বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে। লাইট জ্বলছে বটে। কিন্তু যথেষ্ট নয়। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আর তখনি রাকা এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমিও যেন চাইছিলাম এটাই। মাথাটা হেলিয়ে দিলাম ওর বুকে। একেবারে অন্ধকার এই দিক টা। ও আমার কাঁধে চুলের ভিতরে মুখ টা নিয়ে এদিক ওদিক করছে। আজকে আর ওকে বলতে ইচ্ছে করছে না , শালা ছাড়। থুতু লাগছে গায়ে আমার। উফফফফফফ, আমার গায়ে মুখ ঘষছিস কেন।
মনে হচ্ছিল, এইটার জন্যেই তো আমি এলাম।বুঝতে পারছিলাম, আমার ভিতরের মেয়েটা হয়ত জাগছে। শুধু কি হরমোনাল এফেক্ট। নাকি রাকাকে আমি ভালোবাসছি? মনে সে সব স্থান দিলাম না আমি আর। অনেক ক্ষন ধরে দুজনায় জড়াজড়ির পরে আমাকে ও ছাড়ল, তাও বোন আমাকে ডাকতে ডাকতে ছুটে এল তাই। ওকে যখন বাই করলাম, তখন প্রায় সাত টা বেজে গেছে।
অটো তে আমরাই পরে আছি আর। মানে আমি আর বোন। আর হয়ত মিনিট খানেক লাগবে আমাদের বাড়ি পৌঁছতে। বোন বলল
- তোকে রাকা লাইক করে মারাত্মক।
- হ্যাঁ সে তো করেই। ক্লাস সিক্স থেকে আমরা একসাথে এক ক্লাসে পড়েছি। এক সাথে খেলেছি। এমন কোন দিন যায় নি যে কেউ কাউকে দেখিনি আমরা। প্রায় ছয় মাস পরে আমরা একে অপর কে দেখলাম।
বোন চুপ করে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপরে বলল
- সে ঠিক আছে। কিন্তু রাকা তোকে লাইক করে বলতে, তোকে ভালবাসে।
- হ্য বাসে। আমিও মারাত্মক ভাল বাসি ওকে। নো ডাউট ওন দ্যাট।
- আরে ধুর, আই মিন হি লাভস ইউ এজ হিস গার্ল ফ্রেন্ড,
আমি চমকে উঠলাম। শিখা কে দেখলাম। বুঝতে পারলাম ও ভুল করছে কোথাও। ওকে বললাম
- তুই কি পাগল হলি? আমি কি মেয়ে নাকি যে ও আমাকে গার্ল ফ্রেন্ড করবে?
- কেন নয়। ইউ আর মাচ মোর বিউটিফুল দ্যান এনি গার্ল আরাউন্ড । তোর মতন রূপ পেলে আমি তিন চারটে বয় ফ্রেন্ড তো জুটিয়েই নিতাম
- ধ্যাত পাগলী। চল নামি। আমরা বন্ধু। আর আন- কন্ডিশনাল বন্ধু আমরা।
পরের একমাস আমি প্রায় বার কুড়ি ওর কাছে গেছি দেখা করতে। লাস্টের বেশ কিছু দিন পয়সা ছিল না আমার। হেঁটেই যেতাম আর ফিরতাম। বেশি দূরে ছিল না তো। চার কিমি মতন হবে। ঘণ্টা দুয়েক আগে বেরতাম আমি। ওকে জানতে দি ই নি আমি সেটা। জানালেই আমাকে টাকা টা ফেরত দিয়ে দেবে। রুদ্রপুর ফিরে আসার আগের দিন আমার চোখের জল বাগ মানছিল না। কি জানি ইস্ট্রোজেন তো স্টার্ট হয় নি এখনো আমার। সেদিন আমি গেছিলাম বোনের একটা টপ পরে। ইচ্ছে করেই পরে গেছিলাম ওই টপ টা। গলা টা অনেক টা বড় ছিল টপ টার। কাঁধ টা অনেক টা বেরিয়ে থাকত। আমার খোলা কাঁধে মুখ ঘষত রাকা। আমার সব টপ গুলো খুব ছোট গলা। আর সব গুলো টপ কটনের। তাই রাকাকে দেখতাম টানা টানি করছে আমার টপ গুল কে , কাঁধ টা একটু বের করার জন্য। সেদিনে যে টপ টা পরে গেছিলাম, এক তো গলা টা অনেক বড় ছিল আর , ইলাস্টিক ছিল কাপড় টা। স্কিন টাইট কিন্তু নরম।
সেদিনে মনের সুখে কাঁধে মুখ দিয়েছিল ও।লালা তে ভিজিয়ে দিয়েছিল আমার কাঁধ। কিছু বলিনি আমি। ভিতরের মেয়েটা কে মনের সুখে প্রশ্রয় দিয়েছিলাম আমি সেদিন। আমি তো ওর কাঁধে মাথা দিয়ে ছিলাম। কান্না পাচ্ছিল জাস্ট আমার। যখন আমি বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে রাকার চোখ ও ছল ছল করছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, সব হরমোনাল ইফেক্ট। ওকে ভালো বাসি আমি খুব , কিন্তু শারীরিক ব্যাপার টা হরমোন ছাড়া আর কি?
এই ভাবেই চলছিল আমাদের। দু বছরে বার তিনেক ও এসেছিল রুদ্র পুরে। ও এলে ওর সাথে থাকা টা একটা নেশা ছিল আমার। বাবা মা ভাই বোন ঘুরে যেত গাড়ি নিয়ে রাতে। আমার কোন ইন্টারেস্ট ছিল না। আমরা সন্ধ্যে বেলায় ঘুরতাম। আমি রাকা আর রনি। সেই কাকুর স্কুটার এ। আর মা বাবা বেরিয়ে গেলে, রাকা পিছন দিক দিয়ে চলে আসত ছাদে। আমরা গল্প করতাম সাড়া সাড়া রাত বলতে গেলে। বাপি আর মা ফেরার আগে রাকা চলে যেত।
এখানে কোন অন্য কিছু ব্যাপার ছিল না আমাদের। জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কিছুই হতো না। রাকা ইদানিং কাঁধের খলা জায়গায় বা পিঠের খোলা জায়গায় নাক মুখ ঘষত। বা আমার চুলে নাক ঢুকিয়ে থাকত। আর আমি যে এর বেশি খুব একটা পছন্দ করতাম এমন কিছু না। কারন আমাকে আমার মামার মেয়ে বললেও আমি মানতে বা ভাবতে পারি না যে রাকা আর আমি এই সম্পর্কে যাব। কারন আমি তো মেয়েই নই। হ্যাঁ ভালো লাগা আছে খুব বেশী। আর ওকে আমি খুব ভালো ও বাসি। সেই সুত্রে আমার অধিকার আছে ওর উপরে। আর আমি সেটা দেখাই ও। এতে আন্টি আর আমার মায়ের ও প্রশ্রয় ছিল। এর বেশী তো কিছু না। আমি জানি ও একটা ছেলে। কোন দিন কোন মেয়েকেই ও জীবনে আনবে। আর তাতে আমার কোন প্রবলেম নেই। কারন আমাকে জীবনে নিয়ে তো ও চলতে পারবে না।
এখন রুদ্রপুরে অনেকেই আমাকে প্রপোজ করে। যে ব্যাচেই যাই কেন পড়তে, প্রথম প্রপোজ টা আমি ই পাই। একে তো আমি ফার্স্ট হই, তারপরে দেখতে বেশ সুন্দরী আমি। এতে মেয়েদের হিংসার পাত্রী ও হই আমি। আমাকে নিয়ে কথা ও বলে ওরা। আমি যে মেয়ে নই সেটা সবাই কে বলে দেয়। সবাই অবাক হয়ে দেখে তখন আমাকে। মেয়ে অথচ মেয়ে নয়? এটা অনেকেই বুঝতে পারে না বা মানতে পারে না সেটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু যারা জানে তারাও প্রপোজ করে আর যারা জানে না তারাও করে। কিন্তু আমার তো ছেলেদের উপরে কোন কালেই লোভ ছিল না। আমি শুধু মেয়ে হতে চেয়েছিলাম। এর বেশী কিছু চাওয়া আমার জীবনে আমার কাছে ছিল না। কিন্তু কষ্ট লাগে, আমি কি জানার পরে ওই ঘেন্না টা। তখন সে বেচারী না আমার সাথে মিশতে পারে না বেরিয়ে যেতে পারে। কি করব আমি? আমি বলে দিতাম। অতো কিন্তু করার কিছু নেই। আমি জানি আমি কি, তাই প্রপোজাল একসেপ্ট করিনি।
আমার লোভ বা চাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছিল ওই বাঁদর টাই। ওই আমাকে বলেছিল আমি নাকি - মোর ফেমিনাইন দ্যান এনি ফিমেল। ওই আমাকে বলেছিল, আমার ভালো বাসা নাকি শুদ্ধ, পবিত্র। কি করে জানব যখন সময় আসবে, ও আমার অনুভব, আমার হাসি, আমার কান্না, আমার ভালবাসা কে ছিঁড়ে খুড়ে তাশির জলে ফেলে দেবে? কি করে জানব আমার পবিত্র ভালবাসা কে ও এমনি ভাবে ওর স্পাইক দেওয়া বুটের তলায় দলবে? ক্ষত বিক্ষত করবে। জানলে, না তো আমি লোভ করতাম, না ওর কথায় আকাশে উড়তাম।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সারা রাত প্রায় ঘুম হয় নি বললেই চলে। তবুও ক্লান্তি নেই। ভয় তো লাগছিলই। সারা রাত উঠে উঠে দেখেছি। ঠিক আছে তো ছেলে? যতবার ই ওকে ঢাকা টা ঠিক করে দিচ্ছি ততবার আমার কাছে সরে এসে ঘুমোচ্ছে। আর মিনিট পাঁচ যাবার পরেই লাথি মেরে ঢাকা টা কে ফেলে দিচ্ছে। শেষ দিক টা আর ঢাকা দিই নি। আমার স্কার্টের ঝুলের দিক টা দিয়ে ওর পা টা ঢাকা দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার তো ইচ্ছে ছিল, এ সি টা ২৩ ২৪ এ দিয়ে দি। মা ই বলল, ২৬ ২৭ এ দে আর হালকা করে ফ্যান টা চালিয়ে দে। ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে না। তাই করলাম, কিন্তু সারা রাত ই ঢাকা নিয়ে যুদ্ধ চলল ওর।
সকালে উঠে মায়ের ঘর থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওকে ঢাকা দিলাম। আজকে খুব পাতলা ঢাকা নিতে হবে রাতে। মোটা ঢাকা নিতে পারছে না ও গায়ে। মায়ের শাড়ি টা ভাজ করে দেবার পরে দেখলাম আর কোন ব্যাপার নেই। আমার মাথার বালিশ টা অন্য দিকে দিয়ে ওর পাশে দিলাম আমি। যাতে পরে না যায়। সারা রাত ঘুরেছে ও। বার বার টেনে টেনে এনে আমার কাছে শুইয়েছি। একবার তো দেখলাম, একটু দূরে চলে গিয়ে ওখানেই আমাকে খুঁজছে ওর পাশে। ঘুম চোখেও হাসি পেয়ে গেছিল আমার। সত্যি মায়েরা কত ভাগ্যবতী হয়। সব সময়েই এই সব লীলা দেখার সুযোগ হয়।
আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকে শোবার ড্রেস টা ছেড়ে বাড়িতে পরার ড্রেস পরে নিয়ে বেরিয়ে আসতে যাব, ভাবলাম ও তো দোতলায় একা। ভাই ঘুমোচ্ছে একদম সিঁড়ির কাছের ঘরে। ওকে কে দেখবে? সিঁড়ি থেকেই মা কে বলে দিলাম, আমার চা এর গরম জল টা নিয়ে উপরে আসতে। আমি বসে রইলাম। ভাবলাম কাল থেকে ওকে আমার সাথেই তুলে দেব ঘুম থেকে। সকাল সকাল ঘুম পারিয়ে দেব। ওকে একা রেখে নীচে যেতে পারব না। যদি ভয় পায়? আচ্ছা সব মায়েরাই কি এই রকম ভয় পায়? নাকি আমি একা পাচ্ছি। ও আমার পেটের ছেলে নয় বলে কি ভয় টা বেশী পাচ্ছি আমি?
দরজা খুলে মা ঢুকল। ঢুকেই আমাকে দেখল, শিভ কে দেখল। বলল
- বাবাহ ওর চারদিকে তো দুর্গ বানিয়ে রেখেছিস বালিশের।
- হিহি, রাতে চক্কর খায় দুষ্টু টা।
- হুম সব বাচ্চারাই চক্কর খায়। তুই ও খেতিস।
ততক্ষনে মা আমার হাতে গরম জলে ভর্তি কাপ টা আমাকে দিয়েছে। আমার ঘরেই থাকে গ্রীন টির শ্যাশে। বের করে ভালো করে ভিজিয়ে নিলাম আমি। মা কে বললাম,
- ভয় নেই বলো ওমনি চক্কর কাটলে?
- না না ভয় কীসের? তোকে পাশে পেতে পেতে এই ভাব টা কেটে যাবে একদিন। তখন দেখবি আর চক্কর কাটছে না।
- কিন্তু মা ও ঘুম থেকে উঠলে কি খেতে দেব? ইশ আন্টি কে ফোন করব?
- কিচ্ছু ফোন করতে হবে না। আমার কাছে আছে গরুর ( গরিমা – মা ওকে এই নামেই ডাকে) মেয়ের হেলথ ড্রিঙ্ক। আজকে ওটাই দে। তারপরে দুপুরে মা বেটি তে বেরোব। অনেক কিছু কিনতে হবে।
- ও, ঠিক আছে। কিন্তু কি কি কিনতে হবে?
- লাগবে তো অনেক কিছুই। যেমন ওর দুটো টাওয়েল, জনসনের পুরো প্যাক টা, সেখানে সাবান শ্যাম্পু পাওডার সব থাকবে। ওর একটা জামা কাপড়ের ওপেন ব্যাগ। ওর খাবার দাবার, ওর খেলার জিনিস, বই পত্র, আঁকার সামগ্রী,ওর ড্রেস কাচার জন্য কোন সফট ওয়াশিং পাওডার, আর ও কত কত আছে।
- ওরে বাবা দাঁড়াও দাঁড়াও আমি লিখে নি।
বলে আমি উঠতে যাচ্ছি, তখন মা আমার হাত ধরে বসিয়ে বলল,
- আমি সাথে থাকব তোর। রনির তাশি ভিলার পাশে যে মল টা হয়েছে ওখানে গেলেই সব পাওয়া যাবে। তোকে কিচ্ছু লিখতে হবে না। কিন্তু তুই ভেবে দেখ। ওর বাবা যদি ওকে নিয়ে যেতে চায় তখন কিন্তু তুই কষ্ট পাবি খুব। কালকে আমি ওকে দেখে সত্যি ই কিছু বলতে পারিনি। আমার কেন জানিনা মনে হলো, ওর তোর উপরে টান টা খুব জেনুইন। তাই আমি চুপ ছিলাম। যে মেয়ে কোন দিন নিজের বোনের বাচ্চাকেও সামলাতে পারে নি, সে একটা এমন দামাল ছেলেকে একেবারে শান্ত করে রেখে দিয়েছে কোলে। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কাজেই জানিনা কেন, তোদের মধ্যে কিছু তো আছে, এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু ভালো করে ভেবে দ্যাখ একবার। যেদিকে চলতে শুরু করেছিস, রাস্তা কিন্তু ভালো না।
আমি চুপ করে রইলাম মায়ের কথায়। আমিও এই কথা গুলো ভাবিনি তা না। কিন্তু ব্যাপার টা কি শুধু আমার মধ্যেই আছে? যে আমি ভেবে দেখলেই সমাধান বেরিয়ে আসবে? আমি তো যেতেও চাইনি। কিন্তু শিভ তো বাচ্চা ছেলে। ওকে কি ভাবে বোঝাবো আমি? মা কে বললাম,
- প্রথমত, তোমার ছোট মেয়ে আমাকে ভরসা করে না তাই তার বাচ্চাকে আমার কাছে দেয় নি। কাজেই সামনালোর প্রশ্নই ছিল না। আর দ্বিতীয়ত, মা আমি কিন্তু বলিনি একবার ও যে আমি আমার জন্য ওকে নিয়ে এসেছি। আমি তো আমার কথা ভাবিও নি একবার ও। না ভেবেছি আমার পুরোন অপমানের কথা, না ভাবছি আমার আসন্ন দুঃখের কথা। সে সব ভাবার অবকাশ আমি কোথায় পেলাম মা? আমি তো ছেলে টা কে নিয়েই ব্যস্ত। দেখলে তো কালকে কি হলো। সেদিনে যখন ওদের বাড়ি গেছিলাম, ও ততক্ষন অব্দি আমার কোল থেকে নামে নি যতক্ষন অঞ্জনার মা আর বোন ছিল সামনে। কি করব বল? রুড হবো? ওই টুকু ছেলের মনে কি হবে বুঝতে পারছ একবার? ওর বাবা আমার সাথে যা করেছে করেছে। কিন্তু ওই টুকু ছেলেকে আমি সেই শাস্তি কি দিতে পারব?
মা শিভের মাথার চুলে হাত বোলাচ্ছিল। আর আমি পায়ের দিকে বসেছিলাম শিভের। ছোট ছোট পা দুটোকে মাঝে মাঝেই নিজের হাতে নিচ্ছি আমি আর মায়ের সাথে কথা বলছি। মা শিভ কে আদর করতে করতেই বলল,
- না আমি কখনোই বলছি না তুই এই বাচ্চা টা কে শাস্তি দে। সে তুই পারবি না আমি জানি। কিন্তু যদি ওর বাবা ওকে নিয়ে যেতে চায়। বা ওর মামার বাড়ির দাদু দিদা নিয়ে যেতে চায়। তখন কি হবে?
ওর মামার বাড়ির কথা আমি ভাবিনি। শুনেই আঁতকে উঠলাম আমি। চুপ করে রইলাম বেশ কিছুক্ষন। তারপরে মা কে বললাম,
- আচ্ছা মা, আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে ওরা কি এই বাচ্চা টা কেই কষ্ট দিয়ে বসবে না? ওর বাবা কি এতো টা রুড হবে? ওর বাবা কি বুঝবে না, এই টুকু বাচ্চা কে আমার থেকে ছিনিয়ে নিলে বাচ্চা টার ই ক্ষতি হবে? হ্যাঁ ও নিজে থেকে যেতে চাইলে যাক। হয়ত আমার কষ্ট হবে, কিন্তু আমি তো অনেক বড় হবার পরে সেই কষ্ট সামলেছি মা। এই টুকু ছোট ছেলের জীবনে সেই কষ্টের কল্পনা নাই বা করলাম ।
- হ্যাঁ এটা একটা কথা বলেছিস যেটা খারাপ না। আমার চিন্তা তোকে নিয়ে। আর কত কষ্ট পাবি তুই? ভেবেছিলাম তোর বিয়ে দেব। বয়েস ও পেরিয়ে যাচ্ছে তুই ও বিয়ে করছিস না। বিয়ে করবি না তো মেয়ে হলি কেন?
আমার মায়ের কথায় হাসি পেয়ে গেল। রাগ করতেই পারলাম না। মা কে বললাম,
- ও মা ! তুমি কি ভেবেছিলে, আমি বিয়ে করার জন্য, ছেলেদের সাথে শোবার জন্য মেয়ে হয়েছি?
- আবার ফালতু কথা বলে?
- সত্যি গো মা। আমি ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করব বলে মেয়ে হইনি। আমি মেয়ে হয়েছি কারন আমি মেয়ে তাই। আমার মন টা মেয়ের ছিল, আর কয়েদ ছিল একটা ছেলেদের শরীরে। তাই সেই কয়েদ খানা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন তুমি বল, কোন ছেলে আমাকে মেনে নেবে, যখন সে জানবে আমি কোন দিন মা হতে পারব না?
- অনেক ছেলেই মানবে। কত লোকে সম্বন্ধ নিয়ে আসে আমার কাছে তুই জানিস?
- ইসশহহ আমার একদম ভালো লাগে না কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক। বিশ্বাস কর। ঘেন্না লাগে। রনি আমাকে যেদিন লাস্ট প্রপোজ করেছিল, সেদিনে আমি একটু টলে গেছিলাম। কিন্তু ভাবলাম, আজকে রনি আমাকে ভালোবাসে, বিয়ে করবে। শারীরিক সুখে ও মত্ত থাকবে আগামি চার পাঁচ বছর। তারপরে? এই শারীরিক মোহ টা তো কেটে যাবে মা। তখন তো স্বামী স্ত্রীর মূল বন্ধন হয়ে যায় তাদের বাচ্চা। তাদের শরীরের অংশ। সেইটা যখন থাকবে না তখন সেই ভালবাসা, গাছে লেগে থাকা লেগে থাকা হলুদ পাতার মতন হয়ে থাকবে। না শুকিয়ে যাবে, আর না সেটা আগের মতন সজীব হবে। আর সেইটা আমার সহ্য হবে না। তাই আমি এই বিয়ের সম্পর্ক টা কে এড়িয়ে যাই। কেন মা তোমাদের কাছে আছি, তোমাদের খারাপ লাগে?
- - এক থাপ্পড় খাবি জানোয়ার মেয়ে।
মা চুপ করে গেল আমাকে থাপ্পড়ের ভয় দেখিয়ে। তারপরে আমার দিকে চেয়ে বলল,
- আমার শিব এতো ভাবনা চিন্তা করে , আমি তো জানতাম ই না। আর তুই আমাদের কাছে কত বড় বল ভরসা সেটা আর কি বলব। যে বাপি একদিন মেনে নেয় নি তোর মেয়ে হওয়া, সেই বাপি ই বলে, শিবের থেকে আমার শিবানী টা ভাল।মায়ের কথা শুনে আমার মুখের হাসি যেন চওড়া হলো আরো। আমি জানি আমার বাপি আমাকে চোখে হারায়। মা বলে চলে,
- আমি জানি তুই লাখে এক। ছাড় এসব কথা। ওকে তোল এবারে?
- না না ঘুমোক আরো আধ ঘন্টা। কালকে ঘুমিয়েছে প্রায় বারোটার পরে। আধ ঘন্টা ঘুমোক আরো।
- আচ্ছা তবে তুই বোস ওর কাছে। আমি যাই অনেক কাজ পরে আছে। ও উঠলে আমাকে বলে দিস উপর থেকে। আমি বানিয়ে রাখছি খাবার।
আমি বললাম
- না না আমি ই বানাবো। আমাকে তো শিখতে হবে নাকি?
- আচ্ছা তবে তুই আয় ওকে নিয়ে একটু পরে। দেখি তোর বাপ কে তুলি। তোর ভাই এর কি হলো আজকে অফিস যাবে না নাকি?
মা বেরিয়ে গেল কথা বলতে বলতে। আমি শিভের দিকে ফিরে প্রায় ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। ঘুমন্ত ছেলে কে বললাম
- কি গো কুটুস? আরো একটু ঘুমোবে নাকি?
একবার চোখ দুটো খুলে আমাকে দেখে নিল ও, তারপরেই আর আমার গলা টা দুটো হাতে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমের দেশে প্রত্যাবর্তন করল মনে হলো। এটা আমিও করতাম। দেখে নিতাম মা ই কিনা। মা কে দেখে নিশ্চিন্ত লাগত আরো। আবার ঘুমিয়ে পরতাম মা কে জড়িয়ে ধরে। আমিও জড়িয়ে ধরলাম শিভ কে।
ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম
- নো নো স্যার। হি ডাজন্ট স্টাডি একচুয়ালি। এট লিস্ট ওয়ান মান্থ হি নিডস। কুড ইউ প্লিস হেল্প হিম অন দ্যট স্যার?
- ওহ শিওর। ইউ আর সাচ এ কেয়ারিং বাডি। আই মাস্ট টেক কেয়ার, লেডি।
- থ্যাঙ্কস স্যার।
- ওয়েল কাম । ইউ আর স্টানিং বিউটি মাই ডিয়ার।
পর্ব তেরো
রাকার পড়াশোনার ব্যাপার টা একটু ঠিক না করলে ও পাশ করতে পারত না। জানিনা এখনো পাশ করবে কিনা। যাই হোক আমরা বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে। রাকা ভ্যোম হয়ে আছে। আমার বোন স্টেডিয়াম এ ঢুকে, আনন্দে এদিক ওদিক করছে। বেশী দূরে যায় নি, কাছা কাছি ই আছে। বিকালের আলো কমে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি আর চলতেও কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমি বললাম
- কি রে মুখ গোমড়া কেন তোর?
- ইউ আল স্তানিং বিউতি। দাঁত কেলানে বাঞ্ছারাম কোথাকার।
ভেঙ্গিয়ে রাকা কথা গুলো বলতেই আমি হেসে গড়িয়ে গেলাম প্রায়। ওর কথা বলার ধরনেই আমার হাসি পেল। বললাম
- খেপলি নাকি তুই? কোচ কে কেউ ভেঙ্গায়?
- কেন, অতো স্টানিং বিউটি বলার কি আছে?
- আচ্ছা বেশ আর রাগ করতে হবে না। ওই দিকে চল না?
- কোন দিকে?
আমি আঙ্গুল দেখালাম, ১০ নাম্বার গেট। বেশ অন্ধকার ওই দিক টা। আমার বোন টাও একটু দূরে চলে গেছে আমাদের থেকে। ওই টা এই স্টেডিয়ামের ফার্স্ট ফ্লোর ওঠার বা নামার গেট। ও অবাক হয়ে বলল,
- কেন? ওদিকে অন্ধকার। কোথায় হোঁচট খাবি তার ঠিক আছে।
- ধুর বাবা চল না।
আমি ওকে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম। দেওয়ালের পাশে চলে গেলাম। এমন ই জায়গা টা আমি মুখ বাড়ালেই, এদিকে বোন কে দেখতে পারব কিন্তু বোন আমাদের দেখতে পাবে না। ও দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো। আর আমি ওর সামনে। আমার দিকে ও তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করল,
- এখানে আনলি কেন?
আমি একবার মুখ বাড়িয়ে বোন কে দেখে নিয়ে ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হরমোনাল কারনে ওর এই খেলে আসার পরে ঘামের গন্ধ টা পাগল করে দিচ্ছিল আমাকে। জাপটে ধরলাম ওকে। ওকে যেন বলতেই হলো না। আমাকে ও টেনে নিল নিজের কাছে। আমার কাঁধে মুখ টা রেখে দিল ও। আমার পিঠে হাত বোলাতে লাগল। বলল,
- এই জন্যে এই অন্ধকারে আসার এতো বায়না?
- হুম
- আমি তো বলতে পারছিলাম না তোকে। তাছাড়া ঘেমে ছিলাম। জড়িয়ে ধরলে যদি তোর ড্রেস খারাপ হয়ে যায়?
- হলে হবে।
বলতেই আরো জোরে আমাকে টেনে নিল রাকা। আমার বুক টা পিষে যেতে লাগল ওর বুকের সাথে। এখন ও বুকে খুব ব্যাথা হয় আমার। ও আমাকে আমার কোমর টা ধরে ওর দিকে টানতেই আমার বুক টা লেপ্টে গেলো ওর পুরুষালি বুকের সাথে। টন টন করে উঠল বুক টা আমার। চোখ বুজে রইলাম। কিছুক্ষন পরে আমরা ছেড়ে দিলাম একে অপর কে। বললাম,
- শোন আজকে আমি দেখে নিলাম। কাল থেকে আমি আসব প্রায় ই। তোর অসুবিধা হবে না তো?
আমার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
- কি যে বলিস তুই। তুই এক মাস থাকবি কলকাতায় শুনে আমার মনে হচ্ছিল, আমি রুদ্র পুরে এসেছি। প্লিস কাল থেকে আরো সকাল সকাল আসিস। আরেক টু বেশী সময় কাটানো যাবে বুঝলি?
- কি করে ? তুই তো পাঁচ টার আগে ফ্রী হতে পারবি না।
- সেটা ঠিক। তবে তুই একটু আগে আসিস। যাতে করে ঠিক পাঁচটা থেকেই আমরা দেখা করতে পারি।
- আচ্ছা সেটা আমি দেখব। তোকে এই নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
ওখানেই আমার পার্স থেকে যে পাঁচ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। ওকে দিয়ে দিলাম। বললাম
- রেখে দে তুই।
ও অবাক হয়ে বলল
- কি হবে? আমার কাছে আছে তো টাকা। এখানে খরচা হয় না কিছুই। সব পাওয়া যায়।
- তাও রেখে দে। যদি আন্টির জন্য মন কেমন করে চলে যেতে পারবি বাড়ি এক রাতেই।
বলতে পারলাম না যদি আমার জন্যে মন কেমন করে চলে যাস বাড়ি, বা আমার মন কেমন করলে ডাকলেই চলে যাস।
- এতো লাগবে না।
- আরে লাগবে। সামনের আরো কিছুদিন আমি আসব। আমাকে খাওয়াবি না নাকি? তোর সব বন্ধুদের সামনে আমি তোকে খাওয়াতে পারব না। তুই আমাকে খাওয়াবি। বুঝলি?,
এই বলে আমি পিছন ফিরে চলে আসতে লাগলাম। বোন কে খুঁজতে হবে। বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে। লাইট জ্বলছে বটে। কিন্তু যথেষ্ট নয়। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আর তখনি রাকা এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমিও যেন চাইছিলাম এটাই। মাথাটা হেলিয়ে দিলাম ওর বুকে। একেবারে অন্ধকার এই দিক টা। ও আমার কাঁধে চুলের ভিতরে মুখ টা নিয়ে এদিক ওদিক করছে। আজকে আর ওকে বলতে ইচ্ছে করছে না , শালা ছাড়। থুতু লাগছে গায়ে আমার। উফফফফফফ, আমার গায়ে মুখ ঘষছিস কেন।
মনে হচ্ছিল, এইটার জন্যেই তো আমি এলাম।বুঝতে পারছিলাম, আমার ভিতরের মেয়েটা হয়ত জাগছে। শুধু কি হরমোনাল এফেক্ট। নাকি রাকাকে আমি ভালোবাসছি? মনে সে সব স্থান দিলাম না আমি আর। অনেক ক্ষন ধরে দুজনায় জড়াজড়ির পরে আমাকে ও ছাড়ল, তাও বোন আমাকে ডাকতে ডাকতে ছুটে এল তাই। ওকে যখন বাই করলাম, তখন প্রায় সাত টা বেজে গেছে।
অটো তে আমরাই পরে আছি আর। মানে আমি আর বোন। আর হয়ত মিনিট খানেক লাগবে আমাদের বাড়ি পৌঁছতে। বোন বলল
- তোকে রাকা লাইক করে মারাত্মক।
- হ্যাঁ সে তো করেই। ক্লাস সিক্স থেকে আমরা একসাথে এক ক্লাসে পড়েছি। এক সাথে খেলেছি। এমন কোন দিন যায় নি যে কেউ কাউকে দেখিনি আমরা। প্রায় ছয় মাস পরে আমরা একে অপর কে দেখলাম।
বোন চুপ করে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপরে বলল
- সে ঠিক আছে। কিন্তু রাকা তোকে লাইক করে বলতে, তোকে ভালবাসে।
- হ্য বাসে। আমিও মারাত্মক ভাল বাসি ওকে। নো ডাউট ওন দ্যাট।
- আরে ধুর, আই মিন হি লাভস ইউ এজ হিস গার্ল ফ্রেন্ড,
আমি চমকে উঠলাম। শিখা কে দেখলাম। বুঝতে পারলাম ও ভুল করছে কোথাও। ওকে বললাম
- তুই কি পাগল হলি? আমি কি মেয়ে নাকি যে ও আমাকে গার্ল ফ্রেন্ড করবে?
- কেন নয়। ইউ আর মাচ মোর বিউটিফুল দ্যান এনি গার্ল আরাউন্ড । তোর মতন রূপ পেলে আমি তিন চারটে বয় ফ্রেন্ড তো জুটিয়েই নিতাম
- ধ্যাত পাগলী। চল নামি। আমরা বন্ধু। আর আন- কন্ডিশনাল বন্ধু আমরা।
পরের একমাস আমি প্রায় বার কুড়ি ওর কাছে গেছি দেখা করতে। লাস্টের বেশ কিছু দিন পয়সা ছিল না আমার। হেঁটেই যেতাম আর ফিরতাম। বেশি দূরে ছিল না তো। চার কিমি মতন হবে। ঘণ্টা দুয়েক আগে বেরতাম আমি। ওকে জানতে দি ই নি আমি সেটা। জানালেই আমাকে টাকা টা ফেরত দিয়ে দেবে। রুদ্রপুর ফিরে আসার আগের দিন আমার চোখের জল বাগ মানছিল না। কি জানি ইস্ট্রোজেন তো স্টার্ট হয় নি এখনো আমার। সেদিন আমি গেছিলাম বোনের একটা টপ পরে। ইচ্ছে করেই পরে গেছিলাম ওই টপ টা। গলা টা অনেক টা বড় ছিল টপ টার। কাঁধ টা অনেক টা বেরিয়ে থাকত। আমার খোলা কাঁধে মুখ ঘষত রাকা। আমার সব টপ গুলো খুব ছোট গলা। আর সব গুলো টপ কটনের। তাই রাকাকে দেখতাম টানা টানি করছে আমার টপ গুল কে , কাঁধ টা একটু বের করার জন্য। সেদিনে যে টপ টা পরে গেছিলাম, এক তো গলা টা অনেক বড় ছিল আর , ইলাস্টিক ছিল কাপড় টা। স্কিন টাইট কিন্তু নরম।
সেদিনে মনের সুখে কাঁধে মুখ দিয়েছিল ও।লালা তে ভিজিয়ে দিয়েছিল আমার কাঁধ। কিছু বলিনি আমি। ভিতরের মেয়েটা কে মনের সুখে প্রশ্রয় দিয়েছিলাম আমি সেদিন। আমি তো ওর কাঁধে মাথা দিয়ে ছিলাম। কান্না পাচ্ছিল জাস্ট আমার। যখন আমি বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে রাকার চোখ ও ছল ছল করছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, সব হরমোনাল ইফেক্ট। ওকে ভালো বাসি আমি খুব , কিন্তু শারীরিক ব্যাপার টা হরমোন ছাড়া আর কি?
এই ভাবেই চলছিল আমাদের। দু বছরে বার তিনেক ও এসেছিল রুদ্র পুরে। ও এলে ওর সাথে থাকা টা একটা নেশা ছিল আমার। বাবা মা ভাই বোন ঘুরে যেত গাড়ি নিয়ে রাতে। আমার কোন ইন্টারেস্ট ছিল না। আমরা সন্ধ্যে বেলায় ঘুরতাম। আমি রাকা আর রনি। সেই কাকুর স্কুটার এ। আর মা বাবা বেরিয়ে গেলে, রাকা পিছন দিক দিয়ে চলে আসত ছাদে। আমরা গল্প করতাম সাড়া সাড়া রাত বলতে গেলে। বাপি আর মা ফেরার আগে রাকা চলে যেত।
এখানে কোন অন্য কিছু ব্যাপার ছিল না আমাদের। জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কিছুই হতো না। রাকা ইদানিং কাঁধের খলা জায়গায় বা পিঠের খোলা জায়গায় নাক মুখ ঘষত। বা আমার চুলে নাক ঢুকিয়ে থাকত। আর আমি যে এর বেশি খুব একটা পছন্দ করতাম এমন কিছু না। কারন আমাকে আমার মামার মেয়ে বললেও আমি মানতে বা ভাবতে পারি না যে রাকা আর আমি এই সম্পর্কে যাব। কারন আমি তো মেয়েই নই। হ্যাঁ ভালো লাগা আছে খুব বেশী। আর ওকে আমি খুব ভালো ও বাসি। সেই সুত্রে আমার অধিকার আছে ওর উপরে। আর আমি সেটা দেখাই ও। এতে আন্টি আর আমার মায়ের ও প্রশ্রয় ছিল। এর বেশী তো কিছু না। আমি জানি ও একটা ছেলে। কোন দিন কোন মেয়েকেই ও জীবনে আনবে। আর তাতে আমার কোন প্রবলেম নেই। কারন আমাকে জীবনে নিয়ে তো ও চলতে পারবে না।
এখন রুদ্রপুরে অনেকেই আমাকে প্রপোজ করে। যে ব্যাচেই যাই কেন পড়তে, প্রথম প্রপোজ টা আমি ই পাই। একে তো আমি ফার্স্ট হই, তারপরে দেখতে বেশ সুন্দরী আমি। এতে মেয়েদের হিংসার পাত্রী ও হই আমি। আমাকে নিয়ে কথা ও বলে ওরা। আমি যে মেয়ে নই সেটা সবাই কে বলে দেয়। সবাই অবাক হয়ে দেখে তখন আমাকে। মেয়ে অথচ মেয়ে নয়? এটা অনেকেই বুঝতে পারে না বা মানতে পারে না সেটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু যারা জানে তারাও প্রপোজ করে আর যারা জানে না তারাও করে। কিন্তু আমার তো ছেলেদের উপরে কোন কালেই লোভ ছিল না। আমি শুধু মেয়ে হতে চেয়েছিলাম। এর বেশী কিছু চাওয়া আমার জীবনে আমার কাছে ছিল না। কিন্তু কষ্ট লাগে, আমি কি জানার পরে ওই ঘেন্না টা। তখন সে বেচারী না আমার সাথে মিশতে পারে না বেরিয়ে যেতে পারে। কি করব আমি? আমি বলে দিতাম। অতো কিন্তু করার কিছু নেই। আমি জানি আমি কি, তাই প্রপোজাল একসেপ্ট করিনি।
আমার লোভ বা চাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছিল ওই বাঁদর টাই। ওই আমাকে বলেছিল আমি নাকি - মোর ফেমিনাইন দ্যান এনি ফিমেল। ওই আমাকে বলেছিল, আমার ভালো বাসা নাকি শুদ্ধ, পবিত্র। কি করে জানব যখন সময় আসবে, ও আমার অনুভব, আমার হাসি, আমার কান্না, আমার ভালবাসা কে ছিঁড়ে খুড়ে তাশির জলে ফেলে দেবে? কি করে জানব আমার পবিত্র ভালবাসা কে ও এমনি ভাবে ওর স্পাইক দেওয়া বুটের তলায় দলবে? ক্ষত বিক্ষত করবে। জানলে, না তো আমি লোভ করতাম, না ওর কথায় আকাশে উড়তাম।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সারা রাত প্রায় ঘুম হয় নি বললেই চলে। তবুও ক্লান্তি নেই। ভয় তো লাগছিলই। সারা রাত উঠে উঠে দেখেছি। ঠিক আছে তো ছেলে? যতবার ই ওকে ঢাকা টা ঠিক করে দিচ্ছি ততবার আমার কাছে সরে এসে ঘুমোচ্ছে। আর মিনিট পাঁচ যাবার পরেই লাথি মেরে ঢাকা টা কে ফেলে দিচ্ছে। শেষ দিক টা আর ঢাকা দিই নি। আমার স্কার্টের ঝুলের দিক টা দিয়ে ওর পা টা ঢাকা দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার তো ইচ্ছে ছিল, এ সি টা ২৩ ২৪ এ দিয়ে দি। মা ই বলল, ২৬ ২৭ এ দে আর হালকা করে ফ্যান টা চালিয়ে দে। ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে না। তাই করলাম, কিন্তু সারা রাত ই ঢাকা নিয়ে যুদ্ধ চলল ওর।
সকালে উঠে মায়ের ঘর থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওকে ঢাকা দিলাম। আজকে খুব পাতলা ঢাকা নিতে হবে রাতে। মোটা ঢাকা নিতে পারছে না ও গায়ে। মায়ের শাড়ি টা ভাজ করে দেবার পরে দেখলাম আর কোন ব্যাপার নেই। আমার মাথার বালিশ টা অন্য দিকে দিয়ে ওর পাশে দিলাম আমি। যাতে পরে না যায়। সারা রাত ঘুরেছে ও। বার বার টেনে টেনে এনে আমার কাছে শুইয়েছি। একবার তো দেখলাম, একটু দূরে চলে গিয়ে ওখানেই আমাকে খুঁজছে ওর পাশে। ঘুম চোখেও হাসি পেয়ে গেছিল আমার। সত্যি মায়েরা কত ভাগ্যবতী হয়। সব সময়েই এই সব লীলা দেখার সুযোগ হয়।
আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকে শোবার ড্রেস টা ছেড়ে বাড়িতে পরার ড্রেস পরে নিয়ে বেরিয়ে আসতে যাব, ভাবলাম ও তো দোতলায় একা। ভাই ঘুমোচ্ছে একদম সিঁড়ির কাছের ঘরে। ওকে কে দেখবে? সিঁড়ি থেকেই মা কে বলে দিলাম, আমার চা এর গরম জল টা নিয়ে উপরে আসতে। আমি বসে রইলাম। ভাবলাম কাল থেকে ওকে আমার সাথেই তুলে দেব ঘুম থেকে। সকাল সকাল ঘুম পারিয়ে দেব। ওকে একা রেখে নীচে যেতে পারব না। যদি ভয় পায়? আচ্ছা সব মায়েরাই কি এই রকম ভয় পায়? নাকি আমি একা পাচ্ছি। ও আমার পেটের ছেলে নয় বলে কি ভয় টা বেশী পাচ্ছি আমি?
দরজা খুলে মা ঢুকল। ঢুকেই আমাকে দেখল, শিভ কে দেখল। বলল
- বাবাহ ওর চারদিকে তো দুর্গ বানিয়ে রেখেছিস বালিশের।
- হিহি, রাতে চক্কর খায় দুষ্টু টা।
- হুম সব বাচ্চারাই চক্কর খায়। তুই ও খেতিস।
ততক্ষনে মা আমার হাতে গরম জলে ভর্তি কাপ টা আমাকে দিয়েছে। আমার ঘরেই থাকে গ্রীন টির শ্যাশে। বের করে ভালো করে ভিজিয়ে নিলাম আমি। মা কে বললাম,
- ভয় নেই বলো ওমনি চক্কর কাটলে?
- না না ভয় কীসের? তোকে পাশে পেতে পেতে এই ভাব টা কেটে যাবে একদিন। তখন দেখবি আর চক্কর কাটছে না।
- কিন্তু মা ও ঘুম থেকে উঠলে কি খেতে দেব? ইশ আন্টি কে ফোন করব?
- কিচ্ছু ফোন করতে হবে না। আমার কাছে আছে গরুর ( গরিমা – মা ওকে এই নামেই ডাকে) মেয়ের হেলথ ড্রিঙ্ক। আজকে ওটাই দে। তারপরে দুপুরে মা বেটি তে বেরোব। অনেক কিছু কিনতে হবে।
- ও, ঠিক আছে। কিন্তু কি কি কিনতে হবে?
- লাগবে তো অনেক কিছুই। যেমন ওর দুটো টাওয়েল, জনসনের পুরো প্যাক টা, সেখানে সাবান শ্যাম্পু পাওডার সব থাকবে। ওর একটা জামা কাপড়ের ওপেন ব্যাগ। ওর খাবার দাবার, ওর খেলার জিনিস, বই পত্র, আঁকার সামগ্রী,ওর ড্রেস কাচার জন্য কোন সফট ওয়াশিং পাওডার, আর ও কত কত আছে।
- ওরে বাবা দাঁড়াও দাঁড়াও আমি লিখে নি।
বলে আমি উঠতে যাচ্ছি, তখন মা আমার হাত ধরে বসিয়ে বলল,
- আমি সাথে থাকব তোর। রনির তাশি ভিলার পাশে যে মল টা হয়েছে ওখানে গেলেই সব পাওয়া যাবে। তোকে কিচ্ছু লিখতে হবে না। কিন্তু তুই ভেবে দেখ। ওর বাবা যদি ওকে নিয়ে যেতে চায় তখন কিন্তু তুই কষ্ট পাবি খুব। কালকে আমি ওকে দেখে সত্যি ই কিছু বলতে পারিনি। আমার কেন জানিনা মনে হলো, ওর তোর উপরে টান টা খুব জেনুইন। তাই আমি চুপ ছিলাম। যে মেয়ে কোন দিন নিজের বোনের বাচ্চাকেও সামলাতে পারে নি, সে একটা এমন দামাল ছেলেকে একেবারে শান্ত করে রেখে দিয়েছে কোলে। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কাজেই জানিনা কেন, তোদের মধ্যে কিছু তো আছে, এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু ভালো করে ভেবে দ্যাখ একবার। যেদিকে চলতে শুরু করেছিস, রাস্তা কিন্তু ভালো না।
আমি চুপ করে রইলাম মায়ের কথায়। আমিও এই কথা গুলো ভাবিনি তা না। কিন্তু ব্যাপার টা কি শুধু আমার মধ্যেই আছে? যে আমি ভেবে দেখলেই সমাধান বেরিয়ে আসবে? আমি তো যেতেও চাইনি। কিন্তু শিভ তো বাচ্চা ছেলে। ওকে কি ভাবে বোঝাবো আমি? মা কে বললাম,
- প্রথমত, তোমার ছোট মেয়ে আমাকে ভরসা করে না তাই তার বাচ্চাকে আমার কাছে দেয় নি। কাজেই সামনালোর প্রশ্নই ছিল না। আর দ্বিতীয়ত, মা আমি কিন্তু বলিনি একবার ও যে আমি আমার জন্য ওকে নিয়ে এসেছি। আমি তো আমার কথা ভাবিও নি একবার ও। না ভেবেছি আমার পুরোন অপমানের কথা, না ভাবছি আমার আসন্ন দুঃখের কথা। সে সব ভাবার অবকাশ আমি কোথায় পেলাম মা? আমি তো ছেলে টা কে নিয়েই ব্যস্ত। দেখলে তো কালকে কি হলো। সেদিনে যখন ওদের বাড়ি গেছিলাম, ও ততক্ষন অব্দি আমার কোল থেকে নামে নি যতক্ষন অঞ্জনার মা আর বোন ছিল সামনে। কি করব বল? রুড হবো? ওই টুকু ছেলের মনে কি হবে বুঝতে পারছ একবার? ওর বাবা আমার সাথে যা করেছে করেছে। কিন্তু ওই টুকু ছেলেকে আমি সেই শাস্তি কি দিতে পারব?
মা শিভের মাথার চুলে হাত বোলাচ্ছিল। আর আমি পায়ের দিকে বসেছিলাম শিভের। ছোট ছোট পা দুটোকে মাঝে মাঝেই নিজের হাতে নিচ্ছি আমি আর মায়ের সাথে কথা বলছি। মা শিভ কে আদর করতে করতেই বলল,
- না আমি কখনোই বলছি না তুই এই বাচ্চা টা কে শাস্তি দে। সে তুই পারবি না আমি জানি। কিন্তু যদি ওর বাবা ওকে নিয়ে যেতে চায়। বা ওর মামার বাড়ির দাদু দিদা নিয়ে যেতে চায়। তখন কি হবে?
ওর মামার বাড়ির কথা আমি ভাবিনি। শুনেই আঁতকে উঠলাম আমি। চুপ করে রইলাম বেশ কিছুক্ষন। তারপরে মা কে বললাম,
- আচ্ছা মা, আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে ওরা কি এই বাচ্চা টা কেই কষ্ট দিয়ে বসবে না? ওর বাবা কি এতো টা রুড হবে? ওর বাবা কি বুঝবে না, এই টুকু বাচ্চা কে আমার থেকে ছিনিয়ে নিলে বাচ্চা টার ই ক্ষতি হবে? হ্যাঁ ও নিজে থেকে যেতে চাইলে যাক। হয়ত আমার কষ্ট হবে, কিন্তু আমি তো অনেক বড় হবার পরে সেই কষ্ট সামলেছি মা। এই টুকু ছোট ছেলের জীবনে সেই কষ্টের কল্পনা নাই বা করলাম ।
- হ্যাঁ এটা একটা কথা বলেছিস যেটা খারাপ না। আমার চিন্তা তোকে নিয়ে। আর কত কষ্ট পাবি তুই? ভেবেছিলাম তোর বিয়ে দেব। বয়েস ও পেরিয়ে যাচ্ছে তুই ও বিয়ে করছিস না। বিয়ে করবি না তো মেয়ে হলি কেন?
আমার মায়ের কথায় হাসি পেয়ে গেল। রাগ করতেই পারলাম না। মা কে বললাম,
- ও মা ! তুমি কি ভেবেছিলে, আমি বিয়ে করার জন্য, ছেলেদের সাথে শোবার জন্য মেয়ে হয়েছি?
- আবার ফালতু কথা বলে?
- সত্যি গো মা। আমি ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করব বলে মেয়ে হইনি। আমি মেয়ে হয়েছি কারন আমি মেয়ে তাই। আমার মন টা মেয়ের ছিল, আর কয়েদ ছিল একটা ছেলেদের শরীরে। তাই সেই কয়েদ খানা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন তুমি বল, কোন ছেলে আমাকে মেনে নেবে, যখন সে জানবে আমি কোন দিন মা হতে পারব না?
- অনেক ছেলেই মানবে। কত লোকে সম্বন্ধ নিয়ে আসে আমার কাছে তুই জানিস?
- ইসশহহ আমার একদম ভালো লাগে না কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক। বিশ্বাস কর। ঘেন্না লাগে। রনি আমাকে যেদিন লাস্ট প্রপোজ করেছিল, সেদিনে আমি একটু টলে গেছিলাম। কিন্তু ভাবলাম, আজকে রনি আমাকে ভালোবাসে, বিয়ে করবে। শারীরিক সুখে ও মত্ত থাকবে আগামি চার পাঁচ বছর। তারপরে? এই শারীরিক মোহ টা তো কেটে যাবে মা। তখন তো স্বামী স্ত্রীর মূল বন্ধন হয়ে যায় তাদের বাচ্চা। তাদের শরীরের অংশ। সেইটা যখন থাকবে না তখন সেই ভালবাসা, গাছে লেগে থাকা লেগে থাকা হলুদ পাতার মতন হয়ে থাকবে। না শুকিয়ে যাবে, আর না সেটা আগের মতন সজীব হবে। আর সেইটা আমার সহ্য হবে না। তাই আমি এই বিয়ের সম্পর্ক টা কে এড়িয়ে যাই। কেন মা তোমাদের কাছে আছি, তোমাদের খারাপ লাগে?
- - এক থাপ্পড় খাবি জানোয়ার মেয়ে।
মা চুপ করে গেল আমাকে থাপ্পড়ের ভয় দেখিয়ে। তারপরে আমার দিকে চেয়ে বলল,
- আমার শিব এতো ভাবনা চিন্তা করে , আমি তো জানতাম ই না। আর তুই আমাদের কাছে কত বড় বল ভরসা সেটা আর কি বলব। যে বাপি একদিন মেনে নেয় নি তোর মেয়ে হওয়া, সেই বাপি ই বলে, শিবের থেকে আমার শিবানী টা ভাল।মায়ের কথা শুনে আমার মুখের হাসি যেন চওড়া হলো আরো। আমি জানি আমার বাপি আমাকে চোখে হারায়। মা বলে চলে,
- আমি জানি তুই লাখে এক। ছাড় এসব কথা। ওকে তোল এবারে?
- না না ঘুমোক আরো আধ ঘন্টা। কালকে ঘুমিয়েছে প্রায় বারোটার পরে। আধ ঘন্টা ঘুমোক আরো।
- আচ্ছা তবে তুই বোস ওর কাছে। আমি যাই অনেক কাজ পরে আছে। ও উঠলে আমাকে বলে দিস উপর থেকে। আমি বানিয়ে রাখছি খাবার।
আমি বললাম
- না না আমি ই বানাবো। আমাকে তো শিখতে হবে নাকি?
- আচ্ছা তবে তুই আয় ওকে নিয়ে একটু পরে। দেখি তোর বাপ কে তুলি। তোর ভাই এর কি হলো আজকে অফিস যাবে না নাকি?
মা বেরিয়ে গেল কথা বলতে বলতে। আমি শিভের দিকে ফিরে প্রায় ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। ঘুমন্ত ছেলে কে বললাম
- কি গো কুটুস? আরো একটু ঘুমোবে নাকি?
একবার চোখ দুটো খুলে আমাকে দেখে নিল ও, তারপরেই আর আমার গলা টা দুটো হাতে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমের দেশে প্রত্যাবর্তন করল মনে হলো। এটা আমিও করতাম। দেখে নিতাম মা ই কিনা। মা কে দেখে নিশ্চিন্ত লাগত আরো। আবার ঘুমিয়ে পরতাম মা কে জড়িয়ে ধরে। আমিও জড়িয়ে ধরলাম শিভ কে।