15-02-2022, 04:57 PM
আমি হাতমুখ ধুয়ে নিজের ঘরে এলাম, অনাদিরা বললো, আমরা একটু বাজার থেকে ঘুরে আসি, তাড়াতাড়ি আসিস বিকেলে যেতে হবে, বড়মার হুকুম বুঝেছিস তো, বাসু হাসতে হাসতে বললো, মনে থাকবে না মানে, হেডমিস্ট্রেস বলে কথা।
হেসে ফেললাম
-হ্যাঁরে অনি। অনাদি বললো।
-কি।
-মুন্না ভাই বলছিলো আমাদের সঙ্গে যাবে নিয়ে যাবো।
-হ্যাঁ।
-তুই রাগ করবি না।
-না।
-তাহলে মুন্না ভাইকে ডাকি।
-যা।
আমি ওপরে চলে গেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম, জানালার কাছে হেলে বসলাম। সিঁড়ি দিয়ে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম কেউ আসছে। ভজুরাম এসে ঘরে ঢুকলো।
-অনিদা।
-কি হলো রে।
-তোমাকে দাদা একবার নিচে ডাকছে।
-কোথায়?
-নিচে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
আমি নীচে নেমে এলাম। দেখলাম ইসলাম ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
আমায় দেখে বললো, ওদের সঙ্গে যাই, তোদের গ্রামটা একটু ঘুরে আসি।
-হ্যাঁ, নিশ্চই যাবে।
-না যদি কোনো সমস্যা থাকে।
-ওদের সঙ্গে গেলে তোমার কোনো সমস্যা নেই, থাকলে না বলে দিতাম।
-ওটা সঙ্গে নিতে হবে নাকি।
-না দরকার পরবে না। আর একটা কাজ করবে আমার হয়ে।
-বল।
-দাঁড়াও। বাসুকে ইশারায় ডাকলাম, ওরা খামারে দাঁড়িয়ে আছে।
ওরা পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো।
-ওই জায়গাটার ব্যাপারে বলেছিলাম, কথা বলেছিস।
-হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। টাকা দিলেই রেজিষ্ট্রি হয়ে যাবে।
-বাঃ। কতো চাইছে।
-যা বলেছিলাম তোকে তাইই চাইছে, দেওয়ার সময় না হয় একটু কম করে দেওয়া যাবে।
-মুন্না ভাইকে জায়গাটা একটু দেখিয়ে দিস। আমিতো ঝামেলার মধ্যে থাকবো।
-ঠিক আছে।
ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম।
ইসলাম ভাই আমার চোখের ইশারা বুঝে গেলো।
-ভজুকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।
-যাও কিন্তু বাইক চালাবে না, পথঘাট এবড়ো খেবড়ো।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
ওরা চলে গেলো। আমি ওপরে এসে, প্রথমে দাদাকে ফোন করলাম।
-দারুন খবর রে অনি।
-কি।
-নিরঞ্জন ফোন করাতে কাজ হয়েছে।
-কি হয়েছে।
-মেয়েটা বিষ খায় নি। খুন হয়েছে।
-কি করে বলে, হাসপাতাল বলছে বিষ খেয়েছে।
-দূর। সব বাজে কথা।
-তার মানে!
-হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো, ওরা বলে দিয়েছে মরে গেছে। তখন পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যায়। মেয়েটার মুখে বিষ পেয়েছে, কিন্তু গলার নলি থেকে সে বিষ আর পেটে যায় নি।
-বলো কি মারার পর মুখে বিষ ঢেলেছে।
-হবে হয়তো। তবে রিপোর্ট এখনো আসে নি। রাতের দিকে ফ্যাক্স করবে বলেছে।
-ওই দিককার খবর কিছু ফলো আপ করেছো।
-আমি করতে পারিনি। মল্লিক আর সন্দীপ সামলাচ্ছে। তোর বড়মা কেমন আছেরে।
-খুব মজা করছে।
-করুক। কয় বছর পর বাড়ির বাইরে বেরোলো জানিস!
-জানবো কি করে তুমি বলেছো কোনো দিন।
-সে সুযোগ আর হলো কোথায়, এবার হয়তো একটা তৈরি হবে।
-কেনো এতদিন পরপর ভাবতে।
-আমি ভাবি নি তুই ভাবতিস, নিজের চারধারে একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে রাখতিস, একটু ভেবে দেখ।
-অস্বীকার করছি না।
-তাহলে।
-বড়মা ও বাড়িতে নাহলে তোমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতাম।
-আমি পরে ফোন করবো।
-ঠিক আছে, আমি মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। খেয়েছো?
-হ্যাঁ, হরি ক্যান্টিন থেকে মাছ ভাত এনে দিয়েছিলো আমার আর মল্লিকের জন্য।
-আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিয়েই মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
-কি বস কেমন আছো।
-বস কে তুমি না আমি।
-তুই।
-বয়সে আমার থেকে বড়ো কে।
-আমি।
-তাহলে ওই যোগ্যতা কার পাওয়া উচিত।
-উঃ তোর সঙ্গে পারা যাবে না।
-মাছ-ভাত তো ভালোই সাঁটালে।
-কেনো তুই যে সরষের তেল মেখে ভাত, পেঁয়াজ কুচি চিংড়ি ভাজা দিয়ে সাঁটিয়েছিস সেটা বললি নাতো।
-ও খবর হয়ে গেছে।
-আর কি নিয়ে থাকবো বল। জীবনে এইটুকুতো সম্বল আমার।
-একথা বলছো কেনো।
-তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে।
-কথার বাইরের কথা।
-ঠিক। তোর কাছে আমাকে কনফেস করতে হবে।
-কেনো।
-তোকে আমার অনেক কথা গোপন করেছি, বলা হয় নি।
-যে কথা অগোচরে আছে থাকনা, তাকে গোচরে ডেকে আনছো কেনো, সে বেদনাদায়ক।
-বেদনার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পেতে হবেরে অনি।
-ছোটোমাকে কেমন বুঝলে।
-দারুন খুশি। তোর নদী পেরনোর গল্প বললো। সত্যি তুই পারিস।
-বাবা তোমাকেতো পুরো ব্রিফ দিয়ে দিয়েছে।
-তা বলতে পারিস।
-এতো প্রেম ভালো নয়, মনে রাখবে উনি আমার ছোটোমা।
-আমি অস্বীকার করছি না।
এ-বার থেকে প্রেম-টেম একটু কম করবে।
-তোর ছোটোমাকে কথাটা বলি।
-সত্যি তুমি উজবুক আছো তো।
-তাহলে বললি কেনো।
-ঠিক আছে উইথড্র।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-খবর কি বলো।
-তোর কথা মতো কাজ হচ্ছে, সকাল থেকে ব্যানার্জী বার পাঁচেক ফোন করেছিলো। দাদাকে প্রথম করেছিলো, দাদা বলে দিয়েছে ও ব্যাপারটা মল্লিক কন্ট্রোল করছে, তারপর থেকে আমাকে ফোন। একবার একটু সময় দিন। আমি বলে দিয়েছি আজ তো নয়ই কাল করুন দেখা যাবে। কালকে নিউজ ছাপা হচ্ছে কিনা। আমি বলে দিয়েছি, সেটা অফিসের কনফিডেনসিয়াল ব্যাপার, আপনাকে জানাতে যাবো কেনো।
-তুমি কি ভাবছো ও জানতে পারছে না। আরো দুচারটে ফোঁড়ে আছে। আমি পরশুদিন যাই তারপর দেখাবো মজা।
-হ্যাঁরে, আমার শালাটা কোথায়?
-ঘুরতে গেছে।
-ছেলেটাকে জীবনে কোনোদিন দেখিনি, আজ প্রথম দেখলাম। তোর ইসলাম ভাই যে আমার শালা কি করে জানবো।
-দূর ছাই আমিও কি জানতাম। সকাল বেলা সব কেমন যেন গুলিয়ে গেলো।
-তোর ছোটোমা বলতো বটে, আমি গা করতাম না।
-ছোটোমাকে তুমি পেলে কোথায়।
-সে এক উপন্যাসরে অনি, এখন ও ছাড়া আমার জীবনে আর আপন বলতে কেউ নেই, তারপর তুই, দাদা বৌদি।
মল্লিকদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
-তারপর বলো।
-অফিসে আজ বাইরের লোক আসা একদম বন্ধ, দাদার ঘরে আমি সন্দীপ আর তোর চেলা দুটো ছাড়া সনাতনবাবুর প্রবেশের অধিকার আছে। তুই যদি হরিদাকে আজ দেখতিস।
-কেনো।
-কমান্ডোরের কমান্ডো।
-অফিসের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, ম্যায় চম্পকদা সকালে একবার দেখা করতে গেছিলো বলেছে, দাদা ব্যস্ত আছে, আজকে বিরক্ত করা যাবে না।
-বলো কি।
-তাহলে তোকে বলছি কি।
হাসলাম।
-তোর লেখাটা সবে প্রুফ দেখে দাদার টেবিলে পাঠালাম, দারুন নামিয়েছিস। এখন কিছুটা হাল্কা, সন্দীপ হেবি লোড নিয়েছে, তোর চেলুয়াদুটোও।
-কেমন মনে হচ্ছে।
-খুব শার্প। ধরতে পারে।
-তুমি তোমার অভিজ্ঞতা দিয়ে আর দুটো অনিকে তৈরি করে দাও।
-অনি একটাই হয়, দুটো তিনটে হয় না।
-সকাল থেকে অনেক টেনসন গেলো, একটু রেস্ট নাও, আর ওই ছেলেদুটোকে বলো ফলোআপ করতে।
-ওরা কন্টিনিউ করে যাচ্ছে।
-আচ্ছা।
ফোনটা সুইচ অফ করলাম। চোখটা ঘুমে জড়িয়ে আসছে। দুতিনটে বড় বড় হাই উঠলো। আমি বালিশটা টেনে নিয়ে মুখের ওপর নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।