09-02-2022, 07:07 PM
আগের পর্বের কিছু অংশ......
......... রাকা চালালে মাঝে বসতাম আর রনি চালালে পিছনে বসতাম। সকালে কারোর বাড়িতে আড্ডা। হয় আমার বাড়ি না হলে রাকার বাড়ি তে। বিকালে তাশির ধারে। সন্ধ্যে বেলায় তিন মাথার মোড়ে তিন জনে খাওয়া দাওয়া আর অনেক টা দেরী করে বাড়িতে ঢোকা। কেউ না কেউ খাওয়াত। রাকা কে হাত খরচা টা দিয়ে দিয়েছি শুনে মা আমাকে আরো টাকা দিয়েছিল সেই মাস টা চালানোর জন্য।
পর্ব বারো
মাঝে একদিন সব টাকা এক সাথে জড়ো করে ডিমান্ড ড্রাফট বানিয়ে নিলাম বাপি কে দিয়ে। আমি যাই নি, রাকার বাবা মানে আঙ্কল গেছিল বাপির ব্যাঙ্ক এ।রাকার সাথে কোন ফোন ছিল না। ওদের বাড়িতেই একটা ফোন ছিল মাত্র। সেটাও আন্টির কাছে থাকত।ও চলে গেলে, কি ভাবে কথা বলব ওর সাথে সেই নিয়ে ছিল আমার টেনশন। রনির একটা চেনা দোকান থেকে তিনশো টাকা দিয়ে একটা পুরোন বোতাম টেপা একটা ফোন কিনলাম ধারে। পরের মাসে শোধ করে দিতে পারব আমি জানতাম। আন্টির কাছ থেকে রাকার বাবার আধার কার্ড নিয়ে একটা ফ্রী সিম তুলে নিলাম। তখন পাওয়া যাচ্ছিল ওনেক ফ্রী সিম বাজারে। ফোন টা কে চার্জ দিয়ে , কল থ্রু হচ্ছে কিনা চেক করে নিয়ে রেখে দিলাম নিজের কাছে। ইচ্ছে ছিল স্টেশনে ট্রেনে উঠে ফোন টা ওকে আমি গিফট করব।
যেদিন ও চলে যাবে কলকাতা, আমি, তার আগের দিন সকালে ওর বাড়িতে গিয়ে ওর ব্যাগ গোছালাম আন্টির সাথে বসে। ডিমান্ড ড্রাফট টা ওর ব্যাগে একটা পড়ার বই এর ভিতর রেখে দিলাম। ওকে বলে দিলাম কোন বই এ রেখেছি। সেদিন আমরা সবাই রাকার বাড়িতেই ছিলাম। ওর ট্রেন ছিল পরের দিন সকাল এ। ওর মন খারাপ। আমাকে তিরিশ বার হিটলার বলল। ওকে কলকাতায় থাকতে হবে জানলেও, এই কদিন ও গুরুত্ব দেয় নি ব্যাপার টা। কিন্তু যাবার আগের দিনে এসে ও এবারে ছটফট করছে। আমি জানতাম এই ছটফটানি টা ওর থাকবে না। কারন আমার ও থেরাপি শুরু হবার আগে একটা ছটফটানি ছিল। আমি বুঝে গেছিলাম, এই ব্যাথা টা ওর সাময়িক। রনি যাবে ওর সাথে। ওকে ওখানে এনরোল করে ও ফিরবে।
সেদিনে আমরা, আন্টির কাছেই দুপুরে আর রাতে খাওয়া দাওয়া করলাম। মা কে বলে গেছিলাম, যে আজকে থাকব আমি আর রনি রাকার বাড়িতে সকাল থেকে। আন্টি, দুপুরে চিকেন আর রাতে ডিমের ঝোল ভাত করেছিলেন। দিন টা কি ভাবে কেটে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। রাকার ব্যাগ গোছালাম, আমি রনি রাকা মিলে। মাঝে আন্টি কে হেল্প করলাম রান্নায়। দুপুরে আমাদের সেই পোড় বাড়িতে আড্ডা হলো বিকাল অব্দি। হই হুল্লোর এ কেটে গেল পুরো দিন। ঠিক হলো, আমি সকালে স্টেশন চলে যাব। আর রাকা ওর বাবার স্কুটার নিয়ে রনির বাড়ি যাবে। সেখান থেকে দুজনে স্টেশন এ যাবে। স্কুটার টা থাকবে স্টেশন এ। রনি যখন কলকাতা থেকে ফিরবে স্কুটার টা রাকাদের বাড়ি দিয়ে দেবে।
আমি চলে এলাম বাড়ি। মন টা ভয়ঙ্কর খারাপ। সারা দিনে বুঝিনি, কারন ছিলাম একসাথে আমরা। কিন্তু যতবার ভাবছি ও কাল থেকে থাকবে না এখানে, ততই মনের ভিতর টা কেমন খালি খালি লাগছে। সেই ক্লাস সেভেন থেকে , এমন কোন দিন নেই যে আমাদের দেখা হয় নি। ওর সাথে ঝগড়ার সময়েও, বিকালে দেখা হতো আমাদের মাঠে। মনে মনে ভাবলাম, যাক কথা তো হবে। ফোন টা ভুলে গেলে চলবে না। মা আমাকে যে পার্স টা কিনে দিয়েছিল, সেখানে ফোন টা আর চার্জার টা ভরে নিলাম আমি। যতবার ই মন টা খারাপ লাগছে, ততবার ই আমার মনে হচ্ছে, আর তো দু বছর , তার মধ্যেই ও কোন না কোন বড় ক্লাবে চান্স নিশ্চই পাবে। তখন তো কোন বাধা থাকবে না ওর এখানে আসতে। তখন ও চাইলেই হুশ করে চলে আসতে পারবে। আমার মন খারাপ বললেও কি আসবে না? জিজ্ঞাসা করব বাঁদর টা কে কালকে।
ঘুম তো আসবে না আজকে রাতে আমার আর। যেদিনে ওর ট্রায়ালের রেজাল্ট বেরোনর কথা ছিল সেদিনে আমার এই রকম অবস্থা হয়েছিল। তাও চুল টা আঁচড়ে সবে বিনুনি করে শুতে যাব, আর ফোন এলো আমার। দেখলাম আন্টির নাম্বার। বুঝলাম রাকা ফোন করেছে। তুলে নিলাম,
- কি রে ফোন করলি?
- শুয়ে পড়েছিস নাকি?
- না এই তো চুল বেঁধে শুতে যাচ্ছি। ফোন করলি কেন? সকালে উঠবি, ঘুমোতে পারছিস না?
- না ভালো লাগছে না। তোকে তো একা পেলাম ই না সারাদিন। মা না হলে রনি ছিল সাথে।
মন টা খুব ভাল হয়ে গেল আমার। আমার ও মনে হচ্ছিল, বাড়ি এসেও ওর কথা ভাবছি সারাক্ষন, তার কারন ই হলো, ওকে একা পেলাম না। কত কথা হয় একা থাকলে। বা হয় না কথা। কিন্তু ওর সাথে একা থাকা টা আমি খুব উপভোগ করি। জানিনা ও কেন একা থাকতে চায় আমার সাথে। কিন্তু আমি চাই। ওর গন্ধ, ওর স্পর্শ আমাকে পাগল করে দেয়। জানিনা পরে কি হবে কিন্তু এখন এটা ইস্ট্রোজেনের জন্য হচ্ছে আমি জানি। ওকে বললাম,
- কেন আমার সাথে একা থেকে কি হবে তোর?
- জানিনা তবে ভালো লাগে।
বুঝে গেলাম রাকাও চায় একা থাকতে আমার সাথে। ওকে বললাম
- ঠিক আছে আমি কালকে খুব সকালে চলে যাব তোর বাড়ি। তোকে আসতে হবে না। বাড়ি থেকে বেরোনর দরকার নেই।
- ধুর কালকে অব্দি কে অপেক্ষা করবে?
- মানে । এখন কি করে দেখা করতে যাব? ছেলে থাকার সময়েই মা আমাকে ছাড়ত না এতো রাতে। এখন তো ছাড়বেই না।
- তোকে কে আসতে বলেছে? তুই ছাদে আয় একবার?
চমকে উঠলাম আমি। ও কি চলে এসেছে নাকি? এই এতো রাতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে? প্রায় চিৎকার করে উঠলাম
- তুই এসেছিস কেন নীচে?
- ধুর বকিস না তো। আয় না ছাদে।
- উফ কি যে করিস না! মা জানলে তোকে তো বকবে না , আমাকে বকবে। আর যদি বকুনি খেয়েছি আমি, তোর কি হাল করি দেখবি। দাঁড়া আসছি। উফ আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়েছি আমি।
এতো গুলো কথা ওকে বললাম বটে। কিন্তু কি যে আনন্দ হচ্ছিল মনের ভিতরে বলার না। অনেক রাত হয়েছে , না হলে ওকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম আমি। এখন বাড়িতে আনতে গেলে মা বকাবকি করবে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে হয়ত। জেগেও যাবে। সে এক লজ্জার ব্যাপার হবে। তাছাড়া এই লুকিয়ে দেখা করার মধ্যে যে এমন একটা টান আছে আগে বুঝিনি। আমি পা টিপে টিপে গেলাম ছাদে। ভাগ্যিস দোতলায় কেউ শোয় না। আমি একলাই থাকি। বোন আরেক টু বড় হলে আমার পাশের ঘর টা ও নেবে। এখন খালি পুরো দোতলা টাই। আলতো করে ছাদের ছিটকিনি টা খুলে বেরিয়ে রাস্তার দিকে গেলাম। কই কেউ তো নেই রাস্তায়। তবে কি পিছন দিকে এলো ও। পিছন ফিরতে যাব, আর ধাক্কা খেলাম একজনের সাথে। ভয়ে প্রান টা বেরিয়ে যাবার আগে মা গো বলে চিৎকার করার সময়ে দেখি সামনে সেই ছেলেটা বা লোক টা আমার মুখ টা চেপে ধরেছে সজোরে। যাতে আমি চিৎকার করতে না পারি। ফিস ফিস করে সে বলল
- কি করছিস কি? চিৎকার করছিস কেন? সবাই কে জাগিয়ে দিবি নাকি? কত কষ্ট করে গাছ, সানশেড পাইপ ধরে উঠে এলাম। সব টা মাটি হয়ে যাবে। আর ধরা পরে গেলে আলাদা কেত্তন।
রাকার গলা!! এতো অবাক আর এমন হঠাত পাওয়া আনন্দ পেয়েছি বলে কখনো মনে পরল না আমার। খুব চাইছিলাম ওর সাথে পাশাপাশি কিছুক্ষন থাকতে। ভয় ও পেয়ে গেছিলাম খুব। না কোন লোক আমাকে রেপ করতে পারবে না। কিন্তু চোর ডাকাত তো হতে পারে? কিন্তু ওকে যখন দেখলাম, তখন আর নিজের মধ্যে রইলাম না আমি। জাপটে ধরলাম ওকে। ওর বুকে মাথা লোকালাম। বললাম
- উফ ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। এমনি কেউ করে?
রাকা আমার পিঠে হাত রেখে বলল
- ও তুই খুশী হোসনি?
ওকে জড়িয়ে ধরে আছি। বুকের ধুকপুকুনি তখনো বেশ জোরে জোরে হচ্ছে আমার। ওকে বলি কি করে ভয় ছাপিয়ে আনন্দ আমার সারা মনে ছরিয়ে গেছে। শুধু বললাম
- উম্মম্ম হয়েছি। ভয় পেয়ে গেছিলাম শুধু। এক্সপেক্ট করিনি তোকে এখন এই অবস্থায়।
- হয়েছে এবারে ছাড়।
- না , আরেক টু থাকি।
আরো জোরে চেপে ধরলাম ওকে। বলে বোঝাতে পারব না আমার ভিতরে কি চলছে তখন। নিজের আনন্দ টা ওর সামনে আনতে কেমন লাগছে। আবার ভাবছি ও তো এসেছে। ও যদি ওর কাজে বুঝিয়ে দেয় ও আমাকে কত টা মিস করছিল, আমি কেন ওকে জড়িয়ে ধরে ওকে বোঝাতে পারব না, আমি ওকে কত টা মিস করছিলাম। আরো আঁকড়ে ধরলাম ওকে আমি। ও এবারে অতিস্ট হয়ে উঠল,
- উফ টিপে মেরে ফেলবি তো। আরে মুখ টাই তো দেখতে পাচ্ছি না
- আচ্ছা আচ্ছা সরি।
- কি গায়ে জোর । বাবাহ আমাকে টিপেই মেরে ফেলছিলি একেবারে।
ওকে ছেড়ে দিলাম। হেসে ফেললাম ওর কথায়। অন্ধকার তখন আমার চোখে সয় নি। ওকে দেখতে পাচ্ছি না আমি। সব কেমন কালো কালো লাগছে। ওর কথায় রাগ দেখালাম
- ভালো যা আর কোন দিন ও জড়িয়ে ধরব না তোকে। কোন মেয়ে ধরলে তো ছাড়তিস না!
- আমি কি সেটা বললাম নাকি? আয় চল বসি চিলে কোঠা র ঘরে।
- আলো জ্বালাবি না। একটু থাক, আমি একতলা থেকে দোতলা আসার দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসি। তুই গিয়ে বস ততক্ষন।
- আবার দরজা বন্ধ করতে যাবার কি দরকার?
- না না মা উঠে এসে আমাদের দেখলে জানিনা কি হবে। তার থেকে বন্ধ করে দি। বন্ধ কেন মা জিজ্ঞাসা করলে বলে দেব আমি নাচছিলাম। লজ্জা লাগে তাই সব বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরকম কিছু একটা বলে দেব। আর ততক্ষনে তুই লুকিয়ে পরতে পারবি। বুঝলি? গান্ডু কোথাকার।
আমার খিস্তী তে ও রেগে গেল কিনা দেখার অবকাশ ছিল না আমার। আমি পা টিপে টিপে এসে দোতলা ঢোকার দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে ছাদে চলে এলাম। এসে দেখলাম, ও চিলে কোঠার ঘরে বসে আছে। এতোক্ষনে আমার অন্ধকার টা সয়ে গেছে। ওর মুখ টা দেখতে পাচ্ছি। ওর পাশে বসলাম আমি। যাক বাবা, একটু একা পেলাম ওকে।
আমি পাশে বসতেই বলল
- সারাদিন একাজ সেকাজ করলি। সামান্য সময় ও পেলাম না তোর সাথে একলা কথা বলার।
- কেন কি বলবি একা আমাকে?
আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। জানিনা কি আশা করছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল ও যাই বলুক, যাই ভাবুক, আমার কাছে ও এসেছে এর থেকে বড় পাওনা কিছুই নেই। জানিনা ও কি বলতে এসেছিল আমাকে একা, কিন্তু যেটাই বলতে এসেছিল, সেটা ও আমাকে জড়িয়ে ধরে শুরুতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। ওকে চুপ দেখে আর ঘাঁটালাম না। বললাম
- কোথা দিয়ে এলি ছাদে?
- পিছন দিয়ে। আরে ভাই কাকু কে বলবি, এদিক টা যেন একটু ঠিক করে নেন। যে কেউ উঠে পড়বে ছাদে তোদের।
আমি শুনছিলাম ও না ওর কথা। মারাত্মক ভয় পেলাম। ভাবলাম যদি ও পড়ে যেত? ওকে বললাম
- হ্যাঁ রে তোর বুদ্ধি হবে না? তুই একটা ক্যাম্প এ যাচ্ছিস, কিছু হয়ে গেলে তো সব শেষ হয়ে যেত।
- আরে হলেই হলো না কি? আমি সাবধানে উঠেছি। কিন্তু এটা তুই কি করেছিস মাথায়? এই ভাবে চুল বাঁধে নাকি?
বোঝ , আমি কি ভাবছি আর ও কি বলছে? বললাম
- কেন কি খারাপ?
- না না খুলে দে চুল টা। তোকে খোলা চুলে দারুন লাগে।
এ আবার কি কথা! কেমন অদ্ভুত লাগল আমার। ওর চোখ থেকে চোখ টা সরিয়ে নিলাম। এ আবার কি কথা বলছে ও? এমন তো কথা ছিল না। ও জানে আমি মেয়ে নই ঠিক ঠাক। আমি না হয় ইস্ট্রোজেন নিচ্ছি। কিন্তু ওর আবার কি হলো? উল্ট দিকে মুখ টা ফিরিয়ে নিলাম আমি। এটাকেই কি লজ্জা বলে? কিছুই বলতে পারছি না। ও বলতেই থাকল
- কি রে বেশিক্ষন তো থাকব না। খুলে দে না চুল টা।
উফ এ তো ছাড়বে না দেখছি। আচ্ছা আমার চুলের পিছনে পরেছে তো ! আর আমি পারছিও না করতে ও যেটা বলছে। কারোর জন্য চুল খুলব? আর চুলে কি আছে এতো কে জানে? আচ্ছা ছেলে বাবা! কেমন একটা লাগছে আমার এবারে। ওর নজর টা সহ্য করতে পারছি না আমি। যেন আমাকে ভিতর থেকে জ্বলিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। তখনি মনে পড়ল, কালকে সকালে দেবার থেকে আজকেই ওকে ফোন টা দিয়ে দি।ও যা চাইছে, দিতে পারছিলাম না বলে, অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। ওকে বললাম ওই ভাবেই উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে,
- তুই বস আমি আসছি। তোর জন্য একটা জিনিস আছে। এখনি আসছি।
ও কি বলে তার অপেক্ষাও করলাম না। চলে এলাম ওর কাছ থেকে তাড়াতাড়ি নীচে আমার ঘরে । উফ বাঁচলাম যেন আমি। খুব হাঁপাচ্ছি মনে হচ্ছে আমি। ঘরে এসে বুকে একটা হাত ধরে হাঁপিয়ে নিলাম খানিক। কিছু স্বাভাবিক হলে ফোন আর চার্জার টা নিয়ে নিলাম ব্যাগ থেকে। ঘর থেকে বেরোনর আগে আয়না তে নিজেকে দেখলাম। ইশ সত্যি চুল টা শক্ত করে বিনুনি করে কি বিচ্ছিরি লাগছে আমাকে। খুলে দিলাম বিনুনি টা। ভাগ্যিস একটু আগেই করেছিলাম। সকালে খুললে সাপের মতন ছাড়া ছাড়া হয়ে ঝুলত তিনভাগে। খুলে দিতেই চুল আগের মতন হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি চিরুনি চালিয়ে ঘরের লাইট টা অফ করে চলে এলাম ছাদে। এসেই ধপ করে বসে পড়লাম ওর পাশে।
- এই তো কি সুন্দর লাগছে তোকে এখন। একটা কাজ কর, চুল টা সামনে নিয়ে আয় এবারে।
অদ্ভুত তো ! আমি পারি না এসব, আমি কি মেয়ে নাকি যে এই ছলা কলা পারব? আর আমাকে বলছে এই সব করতে। বললাম
- এই , পারব না রে।
- পারবি না? আচ্ছা আমি করে দিচ্ছি দাঁড়া।
এই বলে আমার পিছনে একটা হাত নিয়ে গিয়ে চুল টা ধরে সামনে নিয়ে এসে রাখল ও।সারা শরীর শিউরে উঠল একেবারে। উফ আচ্ছা ছেলে বাবা, কি দেব সেই সব জিজ্ঞাসা নেই। ও কেন বুঝতে পারছে না এই সব কথা বললে, এই সব কাজ করলে আমার কেমন একটা অন্য রকম ফিল হয়। জানে আমি ইস্ট্রোজেনে আছি তাও এই সব করবে। আমি তাকাতে পারছি না ওর দিকে। চোখের সামনে আসা চুল গুলো, আঙ্গুল দিয়ে কানের পিছনে করে নিলাম আমি। কথা ঘোরালাম। বললাম
- হয়েছে এবারে? এখন ,এই নে ধর
- কি এটা?
- একটা ফোন।
- কি হবে?
- ওখানে গিয়ে কথা বলবি কি করে সবার সাথে? অত দূরে থাকবি, একটা ফোন নিবি না?
ওকে বলতে পারছি না। আমি অন্য কারোর জন্য দিই নি। নিজে কথা বলার জন্য দিয়েছি। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। বলল,
- কোথায় পেলি?
- জোগাড় করেছি। তবে সিম টা কাকু মানে তোর বাবার নামে আছে।
- কখন করলি এই সব?
- করেছি করেছি। সব তোকে বলতে হবে নাকি আমাকে?
- না কিন্তু সব টাকা তো আমাকে দিয়ে দিলি, ফোন পেলি কোথায়?
- অতো বলতে পারব না তোকে। আর শোন, আমাকে মিসড কল দিবি , আমি ফোন করে নেব। আমার অনেক ফ্রি কল থাকে।
রাকা অবাক হয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বসে রইল। কিছু বাদে ও হাত দুটো ছড়িয়ে দিতেই, আমাকে বলতেও হলো না। ভাবলাম ও না। কোন লজ্জা কাজ করল না আমার মধ্যে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর বুকে। মনে হলো এটাই ও বলতে এসেছিল আমাকে। আর দুবার বলল। দুবার কেন কোটি বার বলুক ও আমাকে এমন কথা। আমিও ওর কাঁধে মাথা রেখে ওকে বলতে দিলাম, যতক্ষন ও চায়। আমার ও ভালো লাগছিল ওর এই কথাটা।
মাথাটা গুঁজে আছে আমার কাঁধে। ওর হাত দুটো আমার পিঠে চলে বেরাচ্ছে। ওর বলা কথা গুলো, যেগুলো ওর নিঃশ্বাস আমার কানে বলছে, ওর হাত আমার পিঠে বলছে, ওর ঠোঁট আমার গ্রীবা কে বলছে, সেই কথা গুলো আমি ভালোই বুঝতে পারছি, পড়তে পারছি। অনেকক্ষণ ছিলাম ওই ভাবেই। তারপরে মনে হলো অনেক রাত হয়েছে, এবারে ওর যাওয়া উচিৎ। সকালে উঠতে হবে ওকে। ওকে বললাম,
- এবারে ছাড়। বাড়ি যা। কালকে সকালে উঠতে হবে। ফোন টা পকেটে নিয়ে নে।
- আরেকটু থাকি এই ভাবে?
ইচ্ছে করছিল না ওকে ছাড়তে। জানিনা আবার কবে আসবে ও। কিন্তু মনের জোর আছে ওকে ডাকলেই ও চলে আসবে। বললাম ওকে আস্তে করে
- হুম থাক। - আরো কিছুক্ষন চুপ রইলাম আমি । তারপরে বললাম- আচ্ছা যখন তুই অনেক বড় প্লেয়ার হবি, আমি ডাকলেই চলে আসতে পারবি হুশ করে?
- হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ। এটা কোন কথাই নয়।
তারপরেও আমাকে চেপে ধরে রইল ওই ভাবে। আমার ও ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না। কি জানি কি হচ্ছে আমার। হরমোনাল এফেক্ট। যাক কেউ তো নেই। কিছু পরে আমাকে ও বলল
- আচ্ছা শোন
- কি?
- কালকে তুই আসিস না স্টেশন এ।
চমকে উঠলাম। বললাম
- কেন? আমি যাবই।
- শোন আমার কথা। কালকে তুই আমার ছাড়তে গেলে আমি আর যেতে পারব না। প্লিস যাস না।
ভয় লাগল। আমিও হয়ত ছাড়তে পারলাম না ওকে। অনেক মারামারি করে তো এই জায়গায় এসেছে ও। না গেলে আমার থেকে বেশী ক্ষতি ওর হবে। কাঁধে মাথা টা রেখে কোমর টা জড়িয়ে ধরলাম আমি ওর। বললাম
- আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাস। আমি কল করব তোকে। আন্টি কালকে খাবার করে দেবে তোকে আর রনি কে।
- চলি এবারে।
- উম্মম্মম
ওকে ছোট ছাদ দিয়ে নীচে নামালাম। বলে দিলাম যাবার আগে। স্কুটার টা বাড়ির পিছনেই যেন স্টার্ট না দেয়। খুব বাজখাই আওয়াজ। বাপি উঠে পরতে পারে। আর বাড়িতে পৌঁছে ফোন করে দিতে বললাম।
পরের দিন সকালে মানে ভোর বেলায় ওকে ফোন করে তুলে দিয়েছিলাম আমি। এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। ওকে তুলে দিয়ে আমি আর ঘুমাই নি। ওর আট টায় ট্রেন ছিল। আমি যখন নীচে এলাম তখন দেখলাম মা চা বসিয়েছে। আমার স্টেশনে যাবার কোন তাড়া ছিল না । সেটা দেখে মা জিজ্ঞাসা করল,
- কি রে যাবি না স্টেশন এ? সেদিনে তো দশ টায় ট্রেন আসার কথা , সাত টায় বাড়ি থেকে বেরোলি। আবার জেন্টস সাইকেল নিয়েই ছুটলি। আজকে কি হলো?
মন টা খারাপ ছিল। আমি তাকালাম মায়ের দিকে। মা বলল
- ও বুঝেছি। ওকে ছাড়তে কষ্ট হবে? হুম স্বাভাবিক। ছ বছর রোজ তোদের দেখা সাক্ষাৎ।
মা কে জড়িয়ে ধরলাম। না বলতেই মায়েরা কত কিছু বুঝে যায়। ইদানীং মা আমাকে বুঝতে পারে। শুধু বললাম
- এবারে শুধু পড়াশোনা।
- আর কি করিস তুই পড়াশোনা ছাড়া? গিটার টাও বাজানো ছেড়ে দিয়েছিস। ফুটবল টা মেনে নিলাম, বুক বেশ ভারী হয়ে গেছে। খেলতে পারবি না। কিন্তু গিটার টা তো বাজাতেই পারিস নাকি?
মাকে জড়িয়ে ধরেই বললাম
- আচ্ছা বাবা বাজাবো। বাপি কে বোল তো স্যার কে বলে রাখতে। এই শনিবার থেকে যাব আমি আবার।
মা আমার দিকে ফিরে, আমার হাতে চায়ের কাপ টা দিয়ে বলল
- সোনা মেয়ে। হ্যাঁ রে চুল খুলে শুয়েছিলি নাকি কালকে? অন্যান্য দিন শক্ত করে বেঁধে শুয়ে থাকিস আজকে খোলা কি ব্যাপার? আবার পরিপাটি করে আঁচড়ানো?
মনে পরে গেল রাকার কথা। কেমন একটা ভাল লাগা ছড়িয়ে পড়ল আমার মনে। মা কে বললাম
- কালকে আর ইচ্ছে করছিল না বাঁধতে।
- হুম, আজ থেকে আমি বেঁধে দেব সন্ধ্যে বেলায়, দাঁড়া!
আমি আবার লেগে পড়লাম পড়াশোনায়। গীটারে মন দিলাম। ইতিমধ্যে দুবার কলকাতাও গেছি থেরাপী র জন্য। কিছু টেস্ট করানোর ছিল। পার্মানাইজেশন অফ হরমোন ইফেক্টস। গত এক বছরে যা হরমোন ইনটেক করেছি তার ৭০ পারসেন্ট পার্মানেন্ট ইফেক্ট করেছে। আরো এক বছর চালাতে হবে বা আর একটু বেশী। আমার মেল হরমোন অনেক কিছু ব্লকড। কারন দ্বিতীয় বার যখন গেছিলাম আমি এক মাস ছিলাম ওখানে। ওরা এস্ট্রাডিওল প্রসেস বন্ধ রেখেছিল। শুধু মেল হরমোন ব্লকেজ টেস্ট করতে।
কিন্তু এখনো আমার মাসলস রিক্রিয়েটেড হচ্ছে। এটা ক্লাস টেন অব্দি , অল্প সল্প ফুটবল খেলার এফেক্ট। বলল আরো এক বছর এন্টি এন্ড্রোজেন চললে এই গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এটা স্বাভাবিক। যে কোন মেয়েও অতিরক্ত ওয়ার্ক আউট করলে, এন্ড্রোজেন সিক্রেশনে, মাসলস ক্রিয়েটেড হয়। মোটের উপরে রেজাল্ট ভালো। ওই সময়ে মানে দ্বিতীয় বার যখন গেছিলাম তখন রাকার সাথে দেখা করে এসেছিলাম। আমার বড় মামার বাড়ি থেকে আর বি স্টেডিয়াম খুব দূর না। একটা অটো তে যাওয়া যায়। ইন ফ্যাক্ট আমার বড় মামাই রাকার লোকাল গার্জেন ছিল। আমি আর মামার মেয়ে মিলে যেতাম রাকার সাথে দেখা করতে।
ও ছয় মাস বাড়ি যায় নি। আমি আমার হাত খরচা থেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। সব টাই নিয়েছিলাম এবারে আমি সাথে করে। কি জানি মনে হতো হয়ত ও টাকা নেই বলে বাড়ি ফিরতে পারছে না। আর সেটা অনেক টা সত্যিও ও। এক সাথে খেলা, আর পড়াশোনা চালানো মুখে কথা নয়। রাকার বাবা মা টাকা পাঠায়, কিন্তু খাওয়া দাওয়া আছে, পড়াশোনার খরচা আছে। তাই আমি টাকা টা নিয়ে এলাম। আর ওকে আমি চিনি, দরকার না পরলে খরচ ও করে না। তাই এবারে কলকাতা এসেই ওকে ফোন করলাম।
প্রথম প্রথম ও যখন গেছিল কলকাতা, আমাদের টাইমিং মিসম্যাচ হতো। ওর প্র্যাকটিস শেষ হত বিকাল পাঁচটার দিকে। আমি তখন প্রাইভেট পড়তে যেতাম। ও ফিরে মিসড দিত। কিন্তু আমি ধরতে পারতাম না, কারন পড়তাম ব্যাচ এ। বাইরে বেরিয়ে ফোন করতাম তখন বেচারী প্রায় ঘুমিয়ে পড়ত। স্বাভাবিক, ভোর চারটে তে উঠে, সাড়া দিন প্র্যাকটিস করতে হয়। কতক্ষন মেয়াদ থাকবে। তাই আমি আমার পড়ার সময় বদলে নিলাম। পরের ব্যাচ টায় ভর্তি হয়ে গেলাম। যাতে পাঁচটা থেকে ছ টা আমি খালি থাকি। আমার দেখা দেখি, আমাদের আর অন্য কলেজের ভালো ছেলে মেয়ে গুলো আমার ব্যাচ এ চলে এল।
ওই পাঁচটা থেকে ছ টা আমরা কথা বলতাম। কোন দিন রনি থাকত আমার সাথে রনিও কথা বলত না হলে আমরা দুজনেই কথা বলতাম। গত ছ মাসে তার কোন ব্যেতিক্রম হয় নি। এবারে কলকাতা এসে ওকে ফোন করে বললাম আমি আর আমার মামার মেয়ে আসব ওর কাছে। ও মামার মেয়ের নাম জেনে নিল। কারন ওকে গেট পাস করাতে হবে। যা দেখা সাক্ষাৎ সবাই করে, পাঁচটার পরে।
আমরা গেলাম ওর কাছে। আমার মা ও বলছিল যাবে আমাদের সাথে। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল না মা যাক। ওখানে পৌঁছে খানিক অপেক্ষা করার পরে দেখলাম ও এলো। লম্বা হয়েছে। চেহারা বেড়েছে। বুঝতে পারছি ট্রেনিং এর ইফেক্ট। আমাকে দেখে এগিয়ে আসতেই আমি ছুটে গেলাম। পরে ভাবলাম বোন আছে। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাকে বল চল ভিতরে। মাঠে গল্প করব। আমার বোন ও এগিয়ে এল। আমার সাথে মামার মেয়ের বয়সের ফারাক এমন কিছু নেই। তাও ও আমাকে মাঝে মাঝে দিদি বলে এখন, না হলে শিব বলে। আগে তো শিব ই বলত। আমাকে প্রায় টানতে টানতে রাকা ভিতরে নিয়ে গেল। আর আমি আমার মামার মেয়েকে টানছিলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি এলাহি ব্যাপার। বিশাল মাঠ। মাঠের পিছন দিকে নিয়ে গেলো আমাদের কে ও। পিছনে বিশাল হোস্টেল। ট্রেনিং হান্ট ক্যাম্প এখানেই চলছে। এখানে ট্রেনিং এর পরে যে সিনিয়র টিমের ট্রায়ালে ভালো ফল করবে তাকে ক্লাব, বেচবে বা নিজেদের কাছে রেখে দেবে। শুরুতেই তিরিশ চল্লিশ লাখের নীচে কেউ পায় না। তার পরে ইন্ডিয়া খেলতে পারলে তো কথাই নেই। সি গ্রেডেই ষাট সত্তর লাখের প্যাকেজ থাকে। আরো অনেক ফেসিলিটি।
আমার বোন একটু দূরে গেলেই আমি ওর গায়ে একেবারে সেঁটে যাচ্ছি। ইচ্ছে করছে ও সেদিনের মতন আমাকে জড়িয়ে ধরুক। কি জানি এখন তো হরমোন বন্ধ আছে তাও ভালো লাগছে ওর গায়ে সেঁটে থাকতে। বোন এদিকে তাকালেই আমি সরে আসছি ওর কাছ থেকে। ভয় লাগছে, কি জানি যদি মা কে বলে দেয়? বা মামা কিম্বা মামি কে বলে বাড়ি গিয়ে?
ধুর এতো লোক এখানে, যে জড়িয়ে ধরতে পারবে না। মন টাই খারাপ হয়ে গেল আমার। ওর জন্য চুল কাটিনি আমি। খুলে এসেছিলাম। না হলে হয়ত সবার সামনেই বলবে , খুলে রাখতে পারিস না চুল টা? সে এক লজ্জার ব্যাপার হবে। কিন্তু এক দিকে অনেক ছেলে এদিক ওদিক করছে। কেউ প্র্যাকটিস থেকে হস্টেলে ফিরছে, তো কারোর ভিসিটর এসেছে আমাদের ই মত। কেউ জিম থেকে বেরোচ্ছে তো কেউ ঢুকছে। ফাকা তো হতেই পারছি না আমরা। একদম ভালো লাগছে না। ছ মাস পরে ওকে দেখলাম আমি। এখনো সেই রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকার আস্বাদ আমার মনে। কিন্তু আজ কে মনে হচ্ছে হবে না।
সেই সময়ে একটা ছেলে দৌড়ে এলো আমাদের কাছে। হাঁপাচ্ছিল। কারন মাঠের ও প্রান্ত থেকে আসতে গেলে অনেক টা পথ। এসেই বলল
- রাকা, ভাই তুঝে না কোচ স্যার বুলা রাহা হ্যায়।
- মুঝে? কিউ?
- ক্যায়া পাতা। কাল সিনিয়র টিম কে সাথ ম্যাচ হ্যায়, তু শায়দ টিম ম্যায় হ্যায়। জলদি চল।
আমি আর বোন ও গেলাম ওর সাথে। ওর সাথে কোচের কথা হবার পরে আমাদের কে ডাকল রাকা ওখানে। সবাই দেখছে আমাদের। কোচ যিনি ছিলেন, তিনি কোন বিদেশী। ভালই ইংরাজী বলে। ই পি এল এ খেলতেন, তাই ইংরাজী টা জানেন ভালই। পর্তুগাল ন্যাশনাল টিমেও খেলেছেন বেশ কিছু বছর। আমাদের দেখেই গ্রিট করলেন। আমিও বললাম
- হাই স্যার।
- হেলো ইয়োং লেডী। এভরিথিং গুড?
- ইয়েস স্যার। হোপ ইউ আরে অলসো ফাইন হিয়ার।
- ওহ থ্যাঙ্কস। ইয়া ইয়া আই এম গুড। আই এম ইলিয়ানো কোস্টা। সোউ ইউ আর ফ্রেইন্ড অফ রাকা?
আমি নাম শুনে বুঝলাম, এর খেলা আমি দেখেছি। বয়েস বেশি নয়। হয়ত পয়ত্রিশ ছত্রিশ হবে। নাম ইলিয়ানো কোস্টা। আমি এনাকে উলভস এর হয়ে খেলতে দেখেছি। ওখানে মিডফিল্ডে খেলতেন উনি আর পর্তুগালের হয়ে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে। আমি ই পি এল আর লা লিগার পোকা। আমি বললাম,
- ইয়েস স্যার, আই এম শিবানী। এন্ড শি ইস মাই কাজিন শিখা। আই নো ইউ স্যার।
- নাইস নাইস। হাও ডু ইউ নো মি?
- ওয়েল, ইফ আই এম নট রং, ইউ লাস্ট প্লেড ইন সাইড অফ উল্ভস এজ মিডফিল্ডার, অ্যান্ড ফর পর্তুগাল ইউ প্লেড এজ, সি ডি এম।
- ওয়াও। আই এম ইম্প্রেসড। ইউ অ্যান্ড রাকা, বোথ আর ফ্রম সেম সিটি?
- ইয়েস অ্যান্ড উই বোথ স্টাডি ইন সেইম ক্লাস। উই আর গোইং টু পারস্যু টুয়েলথ ফাইনাল কামিং ইয়ার। অ্যান্ড উই হ্যাভ ওনলি সেভেন মান্থ লেফট।
- ওহ ইজ দ্যাট? সোউ রাকা, আর ইউ ওকে উইথ ইওর স্টাডি।
ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম
- নো নো স্যার। হি ডাজন্ট স্টাডি একচুয়ালি। এট লিস্ট ওয়ান মান্থ হি নিডস। কুড ইউ প্লিস হেল্প হিম অন দ্যট স্যার?
- ওহ শিওর। ইউ আর সাচ এ কেয়ারিং বাডি। আই মাস্ট টেক কেয়ার, লেডি।
- থ্যাঙ্কস স্যার।
- ওয়েল কাম । ইউ আর স্টানিং বিউটি মাই ডিয়ার।
......... রাকা চালালে মাঝে বসতাম আর রনি চালালে পিছনে বসতাম। সকালে কারোর বাড়িতে আড্ডা। হয় আমার বাড়ি না হলে রাকার বাড়ি তে। বিকালে তাশির ধারে। সন্ধ্যে বেলায় তিন মাথার মোড়ে তিন জনে খাওয়া দাওয়া আর অনেক টা দেরী করে বাড়িতে ঢোকা। কেউ না কেউ খাওয়াত। রাকা কে হাত খরচা টা দিয়ে দিয়েছি শুনে মা আমাকে আরো টাকা দিয়েছিল সেই মাস টা চালানোর জন্য।
পর্ব বারো
মাঝে একদিন সব টাকা এক সাথে জড়ো করে ডিমান্ড ড্রাফট বানিয়ে নিলাম বাপি কে দিয়ে। আমি যাই নি, রাকার বাবা মানে আঙ্কল গেছিল বাপির ব্যাঙ্ক এ।রাকার সাথে কোন ফোন ছিল না। ওদের বাড়িতেই একটা ফোন ছিল মাত্র। সেটাও আন্টির কাছে থাকত।ও চলে গেলে, কি ভাবে কথা বলব ওর সাথে সেই নিয়ে ছিল আমার টেনশন। রনির একটা চেনা দোকান থেকে তিনশো টাকা দিয়ে একটা পুরোন বোতাম টেপা একটা ফোন কিনলাম ধারে। পরের মাসে শোধ করে দিতে পারব আমি জানতাম। আন্টির কাছ থেকে রাকার বাবার আধার কার্ড নিয়ে একটা ফ্রী সিম তুলে নিলাম। তখন পাওয়া যাচ্ছিল ওনেক ফ্রী সিম বাজারে। ফোন টা কে চার্জ দিয়ে , কল থ্রু হচ্ছে কিনা চেক করে নিয়ে রেখে দিলাম নিজের কাছে। ইচ্ছে ছিল স্টেশনে ট্রেনে উঠে ফোন টা ওকে আমি গিফট করব।
যেদিন ও চলে যাবে কলকাতা, আমি, তার আগের দিন সকালে ওর বাড়িতে গিয়ে ওর ব্যাগ গোছালাম আন্টির সাথে বসে। ডিমান্ড ড্রাফট টা ওর ব্যাগে একটা পড়ার বই এর ভিতর রেখে দিলাম। ওকে বলে দিলাম কোন বই এ রেখেছি। সেদিন আমরা সবাই রাকার বাড়িতেই ছিলাম। ওর ট্রেন ছিল পরের দিন সকাল এ। ওর মন খারাপ। আমাকে তিরিশ বার হিটলার বলল। ওকে কলকাতায় থাকতে হবে জানলেও, এই কদিন ও গুরুত্ব দেয় নি ব্যাপার টা। কিন্তু যাবার আগের দিনে এসে ও এবারে ছটফট করছে। আমি জানতাম এই ছটফটানি টা ওর থাকবে না। কারন আমার ও থেরাপি শুরু হবার আগে একটা ছটফটানি ছিল। আমি বুঝে গেছিলাম, এই ব্যাথা টা ওর সাময়িক। রনি যাবে ওর সাথে। ওকে ওখানে এনরোল করে ও ফিরবে।
সেদিনে আমরা, আন্টির কাছেই দুপুরে আর রাতে খাওয়া দাওয়া করলাম। মা কে বলে গেছিলাম, যে আজকে থাকব আমি আর রনি রাকার বাড়িতে সকাল থেকে। আন্টি, দুপুরে চিকেন আর রাতে ডিমের ঝোল ভাত করেছিলেন। দিন টা কি ভাবে কেটে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। রাকার ব্যাগ গোছালাম, আমি রনি রাকা মিলে। মাঝে আন্টি কে হেল্প করলাম রান্নায়। দুপুরে আমাদের সেই পোড় বাড়িতে আড্ডা হলো বিকাল অব্দি। হই হুল্লোর এ কেটে গেল পুরো দিন। ঠিক হলো, আমি সকালে স্টেশন চলে যাব। আর রাকা ওর বাবার স্কুটার নিয়ে রনির বাড়ি যাবে। সেখান থেকে দুজনে স্টেশন এ যাবে। স্কুটার টা থাকবে স্টেশন এ। রনি যখন কলকাতা থেকে ফিরবে স্কুটার টা রাকাদের বাড়ি দিয়ে দেবে।
আমি চলে এলাম বাড়ি। মন টা ভয়ঙ্কর খারাপ। সারা দিনে বুঝিনি, কারন ছিলাম একসাথে আমরা। কিন্তু যতবার ভাবছি ও কাল থেকে থাকবে না এখানে, ততই মনের ভিতর টা কেমন খালি খালি লাগছে। সেই ক্লাস সেভেন থেকে , এমন কোন দিন নেই যে আমাদের দেখা হয় নি। ওর সাথে ঝগড়ার সময়েও, বিকালে দেখা হতো আমাদের মাঠে। মনে মনে ভাবলাম, যাক কথা তো হবে। ফোন টা ভুলে গেলে চলবে না। মা আমাকে যে পার্স টা কিনে দিয়েছিল, সেখানে ফোন টা আর চার্জার টা ভরে নিলাম আমি। যতবার ই মন টা খারাপ লাগছে, ততবার ই আমার মনে হচ্ছে, আর তো দু বছর , তার মধ্যেই ও কোন না কোন বড় ক্লাবে চান্স নিশ্চই পাবে। তখন তো কোন বাধা থাকবে না ওর এখানে আসতে। তখন ও চাইলেই হুশ করে চলে আসতে পারবে। আমার মন খারাপ বললেও কি আসবে না? জিজ্ঞাসা করব বাঁদর টা কে কালকে।
ঘুম তো আসবে না আজকে রাতে আমার আর। যেদিনে ওর ট্রায়ালের রেজাল্ট বেরোনর কথা ছিল সেদিনে আমার এই রকম অবস্থা হয়েছিল। তাও চুল টা আঁচড়ে সবে বিনুনি করে শুতে যাব, আর ফোন এলো আমার। দেখলাম আন্টির নাম্বার। বুঝলাম রাকা ফোন করেছে। তুলে নিলাম,
- কি রে ফোন করলি?
- শুয়ে পড়েছিস নাকি?
- না এই তো চুল বেঁধে শুতে যাচ্ছি। ফোন করলি কেন? সকালে উঠবি, ঘুমোতে পারছিস না?
- না ভালো লাগছে না। তোকে তো একা পেলাম ই না সারাদিন। মা না হলে রনি ছিল সাথে।
মন টা খুব ভাল হয়ে গেল আমার। আমার ও মনে হচ্ছিল, বাড়ি এসেও ওর কথা ভাবছি সারাক্ষন, তার কারন ই হলো, ওকে একা পেলাম না। কত কথা হয় একা থাকলে। বা হয় না কথা। কিন্তু ওর সাথে একা থাকা টা আমি খুব উপভোগ করি। জানিনা ও কেন একা থাকতে চায় আমার সাথে। কিন্তু আমি চাই। ওর গন্ধ, ওর স্পর্শ আমাকে পাগল করে দেয়। জানিনা পরে কি হবে কিন্তু এখন এটা ইস্ট্রোজেনের জন্য হচ্ছে আমি জানি। ওকে বললাম,
- কেন আমার সাথে একা থেকে কি হবে তোর?
- জানিনা তবে ভালো লাগে।
বুঝে গেলাম রাকাও চায় একা থাকতে আমার সাথে। ওকে বললাম
- ঠিক আছে আমি কালকে খুব সকালে চলে যাব তোর বাড়ি। তোকে আসতে হবে না। বাড়ি থেকে বেরোনর দরকার নেই।
- ধুর কালকে অব্দি কে অপেক্ষা করবে?
- মানে । এখন কি করে দেখা করতে যাব? ছেলে থাকার সময়েই মা আমাকে ছাড়ত না এতো রাতে। এখন তো ছাড়বেই না।
- তোকে কে আসতে বলেছে? তুই ছাদে আয় একবার?
চমকে উঠলাম আমি। ও কি চলে এসেছে নাকি? এই এতো রাতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে? প্রায় চিৎকার করে উঠলাম
- তুই এসেছিস কেন নীচে?
- ধুর বকিস না তো। আয় না ছাদে।
- উফ কি যে করিস না! মা জানলে তোকে তো বকবে না , আমাকে বকবে। আর যদি বকুনি খেয়েছি আমি, তোর কি হাল করি দেখবি। দাঁড়া আসছি। উফ আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়েছি আমি।
এতো গুলো কথা ওকে বললাম বটে। কিন্তু কি যে আনন্দ হচ্ছিল মনের ভিতরে বলার না। অনেক রাত হয়েছে , না হলে ওকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম আমি। এখন বাড়িতে আনতে গেলে মা বকাবকি করবে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে হয়ত। জেগেও যাবে। সে এক লজ্জার ব্যাপার হবে। তাছাড়া এই লুকিয়ে দেখা করার মধ্যে যে এমন একটা টান আছে আগে বুঝিনি। আমি পা টিপে টিপে গেলাম ছাদে। ভাগ্যিস দোতলায় কেউ শোয় না। আমি একলাই থাকি। বোন আরেক টু বড় হলে আমার পাশের ঘর টা ও নেবে। এখন খালি পুরো দোতলা টাই। আলতো করে ছাদের ছিটকিনি টা খুলে বেরিয়ে রাস্তার দিকে গেলাম। কই কেউ তো নেই রাস্তায়। তবে কি পিছন দিকে এলো ও। পিছন ফিরতে যাব, আর ধাক্কা খেলাম একজনের সাথে। ভয়ে প্রান টা বেরিয়ে যাবার আগে মা গো বলে চিৎকার করার সময়ে দেখি সামনে সেই ছেলেটা বা লোক টা আমার মুখ টা চেপে ধরেছে সজোরে। যাতে আমি চিৎকার করতে না পারি। ফিস ফিস করে সে বলল
- কি করছিস কি? চিৎকার করছিস কেন? সবাই কে জাগিয়ে দিবি নাকি? কত কষ্ট করে গাছ, সানশেড পাইপ ধরে উঠে এলাম। সব টা মাটি হয়ে যাবে। আর ধরা পরে গেলে আলাদা কেত্তন।
রাকার গলা!! এতো অবাক আর এমন হঠাত পাওয়া আনন্দ পেয়েছি বলে কখনো মনে পরল না আমার। খুব চাইছিলাম ওর সাথে পাশাপাশি কিছুক্ষন থাকতে। ভয় ও পেয়ে গেছিলাম খুব। না কোন লোক আমাকে রেপ করতে পারবে না। কিন্তু চোর ডাকাত তো হতে পারে? কিন্তু ওকে যখন দেখলাম, তখন আর নিজের মধ্যে রইলাম না আমি। জাপটে ধরলাম ওকে। ওর বুকে মাথা লোকালাম। বললাম
- উফ ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। এমনি কেউ করে?
রাকা আমার পিঠে হাত রেখে বলল
- ও তুই খুশী হোসনি?
ওকে জড়িয়ে ধরে আছি। বুকের ধুকপুকুনি তখনো বেশ জোরে জোরে হচ্ছে আমার। ওকে বলি কি করে ভয় ছাপিয়ে আনন্দ আমার সারা মনে ছরিয়ে গেছে। শুধু বললাম
- উম্মম্ম হয়েছি। ভয় পেয়ে গেছিলাম শুধু। এক্সপেক্ট করিনি তোকে এখন এই অবস্থায়।
- হয়েছে এবারে ছাড়।
- না , আরেক টু থাকি।
আরো জোরে চেপে ধরলাম ওকে। বলে বোঝাতে পারব না আমার ভিতরে কি চলছে তখন। নিজের আনন্দ টা ওর সামনে আনতে কেমন লাগছে। আবার ভাবছি ও তো এসেছে। ও যদি ওর কাজে বুঝিয়ে দেয় ও আমাকে কত টা মিস করছিল, আমি কেন ওকে জড়িয়ে ধরে ওকে বোঝাতে পারব না, আমি ওকে কত টা মিস করছিলাম। আরো আঁকড়ে ধরলাম ওকে আমি। ও এবারে অতিস্ট হয়ে উঠল,
- উফ টিপে মেরে ফেলবি তো। আরে মুখ টাই তো দেখতে পাচ্ছি না
- আচ্ছা আচ্ছা সরি।
- কি গায়ে জোর । বাবাহ আমাকে টিপেই মেরে ফেলছিলি একেবারে।
ওকে ছেড়ে দিলাম। হেসে ফেললাম ওর কথায়। অন্ধকার তখন আমার চোখে সয় নি। ওকে দেখতে পাচ্ছি না আমি। সব কেমন কালো কালো লাগছে। ওর কথায় রাগ দেখালাম
- ভালো যা আর কোন দিন ও জড়িয়ে ধরব না তোকে। কোন মেয়ে ধরলে তো ছাড়তিস না!
- আমি কি সেটা বললাম নাকি? আয় চল বসি চিলে কোঠা র ঘরে।
- আলো জ্বালাবি না। একটু থাক, আমি একতলা থেকে দোতলা আসার দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসি। তুই গিয়ে বস ততক্ষন।
- আবার দরজা বন্ধ করতে যাবার কি দরকার?
- না না মা উঠে এসে আমাদের দেখলে জানিনা কি হবে। তার থেকে বন্ধ করে দি। বন্ধ কেন মা জিজ্ঞাসা করলে বলে দেব আমি নাচছিলাম। লজ্জা লাগে তাই সব বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরকম কিছু একটা বলে দেব। আর ততক্ষনে তুই লুকিয়ে পরতে পারবি। বুঝলি? গান্ডু কোথাকার।
আমার খিস্তী তে ও রেগে গেল কিনা দেখার অবকাশ ছিল না আমার। আমি পা টিপে টিপে এসে দোতলা ঢোকার দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে ছাদে চলে এলাম। এসে দেখলাম, ও চিলে কোঠার ঘরে বসে আছে। এতোক্ষনে আমার অন্ধকার টা সয়ে গেছে। ওর মুখ টা দেখতে পাচ্ছি। ওর পাশে বসলাম আমি। যাক বাবা, একটু একা পেলাম ওকে।
আমি পাশে বসতেই বলল
- সারাদিন একাজ সেকাজ করলি। সামান্য সময় ও পেলাম না তোর সাথে একলা কথা বলার।
- কেন কি বলবি একা আমাকে?
আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। জানিনা কি আশা করছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল ও যাই বলুক, যাই ভাবুক, আমার কাছে ও এসেছে এর থেকে বড় পাওনা কিছুই নেই। জানিনা ও কি বলতে এসেছিল আমাকে একা, কিন্তু যেটাই বলতে এসেছিল, সেটা ও আমাকে জড়িয়ে ধরে শুরুতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। ওকে চুপ দেখে আর ঘাঁটালাম না। বললাম
- কোথা দিয়ে এলি ছাদে?
- পিছন দিয়ে। আরে ভাই কাকু কে বলবি, এদিক টা যেন একটু ঠিক করে নেন। যে কেউ উঠে পড়বে ছাদে তোদের।
আমি শুনছিলাম ও না ওর কথা। মারাত্মক ভয় পেলাম। ভাবলাম যদি ও পড়ে যেত? ওকে বললাম
- হ্যাঁ রে তোর বুদ্ধি হবে না? তুই একটা ক্যাম্প এ যাচ্ছিস, কিছু হয়ে গেলে তো সব শেষ হয়ে যেত।
- আরে হলেই হলো না কি? আমি সাবধানে উঠেছি। কিন্তু এটা তুই কি করেছিস মাথায়? এই ভাবে চুল বাঁধে নাকি?
বোঝ , আমি কি ভাবছি আর ও কি বলছে? বললাম
- কেন কি খারাপ?
- না না খুলে দে চুল টা। তোকে খোলা চুলে দারুন লাগে।
এ আবার কি কথা! কেমন অদ্ভুত লাগল আমার। ওর চোখ থেকে চোখ টা সরিয়ে নিলাম। এ আবার কি কথা বলছে ও? এমন তো কথা ছিল না। ও জানে আমি মেয়ে নই ঠিক ঠাক। আমি না হয় ইস্ট্রোজেন নিচ্ছি। কিন্তু ওর আবার কি হলো? উল্ট দিকে মুখ টা ফিরিয়ে নিলাম আমি। এটাকেই কি লজ্জা বলে? কিছুই বলতে পারছি না। ও বলতেই থাকল
- কি রে বেশিক্ষন তো থাকব না। খুলে দে না চুল টা।
উফ এ তো ছাড়বে না দেখছি। আচ্ছা আমার চুলের পিছনে পরেছে তো ! আর আমি পারছিও না করতে ও যেটা বলছে। কারোর জন্য চুল খুলব? আর চুলে কি আছে এতো কে জানে? আচ্ছা ছেলে বাবা! কেমন একটা লাগছে আমার এবারে। ওর নজর টা সহ্য করতে পারছি না আমি। যেন আমাকে ভিতর থেকে জ্বলিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। তখনি মনে পড়ল, কালকে সকালে দেবার থেকে আজকেই ওকে ফোন টা দিয়ে দি।ও যা চাইছে, দিতে পারছিলাম না বলে, অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। ওকে বললাম ওই ভাবেই উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে,
- তুই বস আমি আসছি। তোর জন্য একটা জিনিস আছে। এখনি আসছি।
ও কি বলে তার অপেক্ষাও করলাম না। চলে এলাম ওর কাছ থেকে তাড়াতাড়ি নীচে আমার ঘরে । উফ বাঁচলাম যেন আমি। খুব হাঁপাচ্ছি মনে হচ্ছে আমি। ঘরে এসে বুকে একটা হাত ধরে হাঁপিয়ে নিলাম খানিক। কিছু স্বাভাবিক হলে ফোন আর চার্জার টা নিয়ে নিলাম ব্যাগ থেকে। ঘর থেকে বেরোনর আগে আয়না তে নিজেকে দেখলাম। ইশ সত্যি চুল টা শক্ত করে বিনুনি করে কি বিচ্ছিরি লাগছে আমাকে। খুলে দিলাম বিনুনি টা। ভাগ্যিস একটু আগেই করেছিলাম। সকালে খুললে সাপের মতন ছাড়া ছাড়া হয়ে ঝুলত তিনভাগে। খুলে দিতেই চুল আগের মতন হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি চিরুনি চালিয়ে ঘরের লাইট টা অফ করে চলে এলাম ছাদে। এসেই ধপ করে বসে পড়লাম ওর পাশে।
- এই তো কি সুন্দর লাগছে তোকে এখন। একটা কাজ কর, চুল টা সামনে নিয়ে আয় এবারে।
অদ্ভুত তো ! আমি পারি না এসব, আমি কি মেয়ে নাকি যে এই ছলা কলা পারব? আর আমাকে বলছে এই সব করতে। বললাম
- এই , পারব না রে।
- পারবি না? আচ্ছা আমি করে দিচ্ছি দাঁড়া।
এই বলে আমার পিছনে একটা হাত নিয়ে গিয়ে চুল টা ধরে সামনে নিয়ে এসে রাখল ও।সারা শরীর শিউরে উঠল একেবারে। উফ আচ্ছা ছেলে বাবা, কি দেব সেই সব জিজ্ঞাসা নেই। ও কেন বুঝতে পারছে না এই সব কথা বললে, এই সব কাজ করলে আমার কেমন একটা অন্য রকম ফিল হয়। জানে আমি ইস্ট্রোজেনে আছি তাও এই সব করবে। আমি তাকাতে পারছি না ওর দিকে। চোখের সামনে আসা চুল গুলো, আঙ্গুল দিয়ে কানের পিছনে করে নিলাম আমি। কথা ঘোরালাম। বললাম
- হয়েছে এবারে? এখন ,এই নে ধর
- কি এটা?
- একটা ফোন।
- কি হবে?
- ওখানে গিয়ে কথা বলবি কি করে সবার সাথে? অত দূরে থাকবি, একটা ফোন নিবি না?
ওকে বলতে পারছি না। আমি অন্য কারোর জন্য দিই নি। নিজে কথা বলার জন্য দিয়েছি। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। বলল,
- কোথায় পেলি?
- জোগাড় করেছি। তবে সিম টা কাকু মানে তোর বাবার নামে আছে।
- কখন করলি এই সব?
- করেছি করেছি। সব তোকে বলতে হবে নাকি আমাকে?
- না কিন্তু সব টাকা তো আমাকে দিয়ে দিলি, ফোন পেলি কোথায়?
- অতো বলতে পারব না তোকে। আর শোন, আমাকে মিসড কল দিবি , আমি ফোন করে নেব। আমার অনেক ফ্রি কল থাকে।
রাকা অবাক হয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বসে রইল। কিছু বাদে ও হাত দুটো ছড়িয়ে দিতেই, আমাকে বলতেও হলো না। ভাবলাম ও না। কোন লজ্জা কাজ করল না আমার মধ্যে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর বুকে। মনে হলো এটাই ও বলতে এসেছিল আমাকে। আর দুবার বলল। দুবার কেন কোটি বার বলুক ও আমাকে এমন কথা। আমিও ওর কাঁধে মাথা রেখে ওকে বলতে দিলাম, যতক্ষন ও চায়। আমার ও ভালো লাগছিল ওর এই কথাটা।
মাথাটা গুঁজে আছে আমার কাঁধে। ওর হাত দুটো আমার পিঠে চলে বেরাচ্ছে। ওর বলা কথা গুলো, যেগুলো ওর নিঃশ্বাস আমার কানে বলছে, ওর হাত আমার পিঠে বলছে, ওর ঠোঁট আমার গ্রীবা কে বলছে, সেই কথা গুলো আমি ভালোই বুঝতে পারছি, পড়তে পারছি। অনেকক্ষণ ছিলাম ওই ভাবেই। তারপরে মনে হলো অনেক রাত হয়েছে, এবারে ওর যাওয়া উচিৎ। সকালে উঠতে হবে ওকে। ওকে বললাম,
- এবারে ছাড়। বাড়ি যা। কালকে সকালে উঠতে হবে। ফোন টা পকেটে নিয়ে নে।
- আরেকটু থাকি এই ভাবে?
ইচ্ছে করছিল না ওকে ছাড়তে। জানিনা আবার কবে আসবে ও। কিন্তু মনের জোর আছে ওকে ডাকলেই ও চলে আসবে। বললাম ওকে আস্তে করে
- হুম থাক। - আরো কিছুক্ষন চুপ রইলাম আমি । তারপরে বললাম- আচ্ছা যখন তুই অনেক বড় প্লেয়ার হবি, আমি ডাকলেই চলে আসতে পারবি হুশ করে?
- হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ। এটা কোন কথাই নয়।
তারপরেও আমাকে চেপে ধরে রইল ওই ভাবে। আমার ও ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না। কি জানি কি হচ্ছে আমার। হরমোনাল এফেক্ট। যাক কেউ তো নেই। কিছু পরে আমাকে ও বলল
- আচ্ছা শোন
- কি?
- কালকে তুই আসিস না স্টেশন এ।
চমকে উঠলাম। বললাম
- কেন? আমি যাবই।
- শোন আমার কথা। কালকে তুই আমার ছাড়তে গেলে আমি আর যেতে পারব না। প্লিস যাস না।
ভয় লাগল। আমিও হয়ত ছাড়তে পারলাম না ওকে। অনেক মারামারি করে তো এই জায়গায় এসেছে ও। না গেলে আমার থেকে বেশী ক্ষতি ওর হবে। কাঁধে মাথা টা রেখে কোমর টা জড়িয়ে ধরলাম আমি ওর। বললাম
- আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাস। আমি কল করব তোকে। আন্টি কালকে খাবার করে দেবে তোকে আর রনি কে।
- চলি এবারে।
- উম্মম্মম
ওকে ছোট ছাদ দিয়ে নীচে নামালাম। বলে দিলাম যাবার আগে। স্কুটার টা বাড়ির পিছনেই যেন স্টার্ট না দেয়। খুব বাজখাই আওয়াজ। বাপি উঠে পরতে পারে। আর বাড়িতে পৌঁছে ফোন করে দিতে বললাম।
পরের দিন সকালে মানে ভোর বেলায় ওকে ফোন করে তুলে দিয়েছিলাম আমি। এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। ওকে তুলে দিয়ে আমি আর ঘুমাই নি। ওর আট টায় ট্রেন ছিল। আমি যখন নীচে এলাম তখন দেখলাম মা চা বসিয়েছে। আমার স্টেশনে যাবার কোন তাড়া ছিল না । সেটা দেখে মা জিজ্ঞাসা করল,
- কি রে যাবি না স্টেশন এ? সেদিনে তো দশ টায় ট্রেন আসার কথা , সাত টায় বাড়ি থেকে বেরোলি। আবার জেন্টস সাইকেল নিয়েই ছুটলি। আজকে কি হলো?
মন টা খারাপ ছিল। আমি তাকালাম মায়ের দিকে। মা বলল
- ও বুঝেছি। ওকে ছাড়তে কষ্ট হবে? হুম স্বাভাবিক। ছ বছর রোজ তোদের দেখা সাক্ষাৎ।
মা কে জড়িয়ে ধরলাম। না বলতেই মায়েরা কত কিছু বুঝে যায়। ইদানীং মা আমাকে বুঝতে পারে। শুধু বললাম
- এবারে শুধু পড়াশোনা।
- আর কি করিস তুই পড়াশোনা ছাড়া? গিটার টাও বাজানো ছেড়ে দিয়েছিস। ফুটবল টা মেনে নিলাম, বুক বেশ ভারী হয়ে গেছে। খেলতে পারবি না। কিন্তু গিটার টা তো বাজাতেই পারিস নাকি?
মাকে জড়িয়ে ধরেই বললাম
- আচ্ছা বাবা বাজাবো। বাপি কে বোল তো স্যার কে বলে রাখতে। এই শনিবার থেকে যাব আমি আবার।
মা আমার দিকে ফিরে, আমার হাতে চায়ের কাপ টা দিয়ে বলল
- সোনা মেয়ে। হ্যাঁ রে চুল খুলে শুয়েছিলি নাকি কালকে? অন্যান্য দিন শক্ত করে বেঁধে শুয়ে থাকিস আজকে খোলা কি ব্যাপার? আবার পরিপাটি করে আঁচড়ানো?
মনে পরে গেল রাকার কথা। কেমন একটা ভাল লাগা ছড়িয়ে পড়ল আমার মনে। মা কে বললাম
- কালকে আর ইচ্ছে করছিল না বাঁধতে।
- হুম, আজ থেকে আমি বেঁধে দেব সন্ধ্যে বেলায়, দাঁড়া!
আমি আবার লেগে পড়লাম পড়াশোনায়। গীটারে মন দিলাম। ইতিমধ্যে দুবার কলকাতাও গেছি থেরাপী র জন্য। কিছু টেস্ট করানোর ছিল। পার্মানাইজেশন অফ হরমোন ইফেক্টস। গত এক বছরে যা হরমোন ইনটেক করেছি তার ৭০ পারসেন্ট পার্মানেন্ট ইফেক্ট করেছে। আরো এক বছর চালাতে হবে বা আর একটু বেশী। আমার মেল হরমোন অনেক কিছু ব্লকড। কারন দ্বিতীয় বার যখন গেছিলাম আমি এক মাস ছিলাম ওখানে। ওরা এস্ট্রাডিওল প্রসেস বন্ধ রেখেছিল। শুধু মেল হরমোন ব্লকেজ টেস্ট করতে।
কিন্তু এখনো আমার মাসলস রিক্রিয়েটেড হচ্ছে। এটা ক্লাস টেন অব্দি , অল্প সল্প ফুটবল খেলার এফেক্ট। বলল আরো এক বছর এন্টি এন্ড্রোজেন চললে এই গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এটা স্বাভাবিক। যে কোন মেয়েও অতিরক্ত ওয়ার্ক আউট করলে, এন্ড্রোজেন সিক্রেশনে, মাসলস ক্রিয়েটেড হয়। মোটের উপরে রেজাল্ট ভালো। ওই সময়ে মানে দ্বিতীয় বার যখন গেছিলাম তখন রাকার সাথে দেখা করে এসেছিলাম। আমার বড় মামার বাড়ি থেকে আর বি স্টেডিয়াম খুব দূর না। একটা অটো তে যাওয়া যায়। ইন ফ্যাক্ট আমার বড় মামাই রাকার লোকাল গার্জেন ছিল। আমি আর মামার মেয়ে মিলে যেতাম রাকার সাথে দেখা করতে।
ও ছয় মাস বাড়ি যায় নি। আমি আমার হাত খরচা থেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। সব টাই নিয়েছিলাম এবারে আমি সাথে করে। কি জানি মনে হতো হয়ত ও টাকা নেই বলে বাড়ি ফিরতে পারছে না। আর সেটা অনেক টা সত্যিও ও। এক সাথে খেলা, আর পড়াশোনা চালানো মুখে কথা নয়। রাকার বাবা মা টাকা পাঠায়, কিন্তু খাওয়া দাওয়া আছে, পড়াশোনার খরচা আছে। তাই আমি টাকা টা নিয়ে এলাম। আর ওকে আমি চিনি, দরকার না পরলে খরচ ও করে না। তাই এবারে কলকাতা এসেই ওকে ফোন করলাম।
প্রথম প্রথম ও যখন গেছিল কলকাতা, আমাদের টাইমিং মিসম্যাচ হতো। ওর প্র্যাকটিস শেষ হত বিকাল পাঁচটার দিকে। আমি তখন প্রাইভেট পড়তে যেতাম। ও ফিরে মিসড দিত। কিন্তু আমি ধরতে পারতাম না, কারন পড়তাম ব্যাচ এ। বাইরে বেরিয়ে ফোন করতাম তখন বেচারী প্রায় ঘুমিয়ে পড়ত। স্বাভাবিক, ভোর চারটে তে উঠে, সাড়া দিন প্র্যাকটিস করতে হয়। কতক্ষন মেয়াদ থাকবে। তাই আমি আমার পড়ার সময় বদলে নিলাম। পরের ব্যাচ টায় ভর্তি হয়ে গেলাম। যাতে পাঁচটা থেকে ছ টা আমি খালি থাকি। আমার দেখা দেখি, আমাদের আর অন্য কলেজের ভালো ছেলে মেয়ে গুলো আমার ব্যাচ এ চলে এল।
ওই পাঁচটা থেকে ছ টা আমরা কথা বলতাম। কোন দিন রনি থাকত আমার সাথে রনিও কথা বলত না হলে আমরা দুজনেই কথা বলতাম। গত ছ মাসে তার কোন ব্যেতিক্রম হয় নি। এবারে কলকাতা এসে ওকে ফোন করে বললাম আমি আর আমার মামার মেয়ে আসব ওর কাছে। ও মামার মেয়ের নাম জেনে নিল। কারন ওকে গেট পাস করাতে হবে। যা দেখা সাক্ষাৎ সবাই করে, পাঁচটার পরে।
আমরা গেলাম ওর কাছে। আমার মা ও বলছিল যাবে আমাদের সাথে। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল না মা যাক। ওখানে পৌঁছে খানিক অপেক্ষা করার পরে দেখলাম ও এলো। লম্বা হয়েছে। চেহারা বেড়েছে। বুঝতে পারছি ট্রেনিং এর ইফেক্ট। আমাকে দেখে এগিয়ে আসতেই আমি ছুটে গেলাম। পরে ভাবলাম বোন আছে। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাকে বল চল ভিতরে। মাঠে গল্প করব। আমার বোন ও এগিয়ে এল। আমার সাথে মামার মেয়ের বয়সের ফারাক এমন কিছু নেই। তাও ও আমাকে মাঝে মাঝে দিদি বলে এখন, না হলে শিব বলে। আগে তো শিব ই বলত। আমাকে প্রায় টানতে টানতে রাকা ভিতরে নিয়ে গেল। আর আমি আমার মামার মেয়েকে টানছিলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি এলাহি ব্যাপার। বিশাল মাঠ। মাঠের পিছন দিকে নিয়ে গেলো আমাদের কে ও। পিছনে বিশাল হোস্টেল। ট্রেনিং হান্ট ক্যাম্প এখানেই চলছে। এখানে ট্রেনিং এর পরে যে সিনিয়র টিমের ট্রায়ালে ভালো ফল করবে তাকে ক্লাব, বেচবে বা নিজেদের কাছে রেখে দেবে। শুরুতেই তিরিশ চল্লিশ লাখের নীচে কেউ পায় না। তার পরে ইন্ডিয়া খেলতে পারলে তো কথাই নেই। সি গ্রেডেই ষাট সত্তর লাখের প্যাকেজ থাকে। আরো অনেক ফেসিলিটি।
আমার বোন একটু দূরে গেলেই আমি ওর গায়ে একেবারে সেঁটে যাচ্ছি। ইচ্ছে করছে ও সেদিনের মতন আমাকে জড়িয়ে ধরুক। কি জানি এখন তো হরমোন বন্ধ আছে তাও ভালো লাগছে ওর গায়ে সেঁটে থাকতে। বোন এদিকে তাকালেই আমি সরে আসছি ওর কাছ থেকে। ভয় লাগছে, কি জানি যদি মা কে বলে দেয়? বা মামা কিম্বা মামি কে বলে বাড়ি গিয়ে?
ধুর এতো লোক এখানে, যে জড়িয়ে ধরতে পারবে না। মন টাই খারাপ হয়ে গেল আমার। ওর জন্য চুল কাটিনি আমি। খুলে এসেছিলাম। না হলে হয়ত সবার সামনেই বলবে , খুলে রাখতে পারিস না চুল টা? সে এক লজ্জার ব্যাপার হবে। কিন্তু এক দিকে অনেক ছেলে এদিক ওদিক করছে। কেউ প্র্যাকটিস থেকে হস্টেলে ফিরছে, তো কারোর ভিসিটর এসেছে আমাদের ই মত। কেউ জিম থেকে বেরোচ্ছে তো কেউ ঢুকছে। ফাকা তো হতেই পারছি না আমরা। একদম ভালো লাগছে না। ছ মাস পরে ওকে দেখলাম আমি। এখনো সেই রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকার আস্বাদ আমার মনে। কিন্তু আজ কে মনে হচ্ছে হবে না।
সেই সময়ে একটা ছেলে দৌড়ে এলো আমাদের কাছে। হাঁপাচ্ছিল। কারন মাঠের ও প্রান্ত থেকে আসতে গেলে অনেক টা পথ। এসেই বলল
- রাকা, ভাই তুঝে না কোচ স্যার বুলা রাহা হ্যায়।
- মুঝে? কিউ?
- ক্যায়া পাতা। কাল সিনিয়র টিম কে সাথ ম্যাচ হ্যায়, তু শায়দ টিম ম্যায় হ্যায়। জলদি চল।
আমি আর বোন ও গেলাম ওর সাথে। ওর সাথে কোচের কথা হবার পরে আমাদের কে ডাকল রাকা ওখানে। সবাই দেখছে আমাদের। কোচ যিনি ছিলেন, তিনি কোন বিদেশী। ভালই ইংরাজী বলে। ই পি এল এ খেলতেন, তাই ইংরাজী টা জানেন ভালই। পর্তুগাল ন্যাশনাল টিমেও খেলেছেন বেশ কিছু বছর। আমাদের দেখেই গ্রিট করলেন। আমিও বললাম
- হাই স্যার।
- হেলো ইয়োং লেডী। এভরিথিং গুড?
- ইয়েস স্যার। হোপ ইউ আরে অলসো ফাইন হিয়ার।
- ওহ থ্যাঙ্কস। ইয়া ইয়া আই এম গুড। আই এম ইলিয়ানো কোস্টা। সোউ ইউ আর ফ্রেইন্ড অফ রাকা?
আমি নাম শুনে বুঝলাম, এর খেলা আমি দেখেছি। বয়েস বেশি নয়। হয়ত পয়ত্রিশ ছত্রিশ হবে। নাম ইলিয়ানো কোস্টা। আমি এনাকে উলভস এর হয়ে খেলতে দেখেছি। ওখানে মিডফিল্ডে খেলতেন উনি আর পর্তুগালের হয়ে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে। আমি ই পি এল আর লা লিগার পোকা। আমি বললাম,
- ইয়েস স্যার, আই এম শিবানী। এন্ড শি ইস মাই কাজিন শিখা। আই নো ইউ স্যার।
- নাইস নাইস। হাও ডু ইউ নো মি?
- ওয়েল, ইফ আই এম নট রং, ইউ লাস্ট প্লেড ইন সাইড অফ উল্ভস এজ মিডফিল্ডার, অ্যান্ড ফর পর্তুগাল ইউ প্লেড এজ, সি ডি এম।
- ওয়াও। আই এম ইম্প্রেসড। ইউ অ্যান্ড রাকা, বোথ আর ফ্রম সেম সিটি?
- ইয়েস অ্যান্ড উই বোথ স্টাডি ইন সেইম ক্লাস। উই আর গোইং টু পারস্যু টুয়েলথ ফাইনাল কামিং ইয়ার। অ্যান্ড উই হ্যাভ ওনলি সেভেন মান্থ লেফট।
- ওহ ইজ দ্যাট? সোউ রাকা, আর ইউ ওকে উইথ ইওর স্টাডি।
ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম
- নো নো স্যার। হি ডাজন্ট স্টাডি একচুয়ালি। এট লিস্ট ওয়ান মান্থ হি নিডস। কুড ইউ প্লিস হেল্প হিম অন দ্যট স্যার?
- ওহ শিওর। ইউ আর সাচ এ কেয়ারিং বাডি। আই মাস্ট টেক কেয়ার, লেডি।
- থ্যাঙ্কস স্যার।
- ওয়েল কাম । ইউ আর স্টানিং বিউটি মাই ডিয়ার।