Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
                                                         পর্ব এগারো

অ্যাঁ। এক ফোঁটা ঘুমোয় নি? আমি তো অবাক হয়ে চেয়ে আছি। মনে মনে ভাবছি, আমার তো এতে বিরক্ত হবার কথা। কিন্তু মনে এমন আনন্দের ঝড় কেন? আমি জানি আমি বাড়ি যেতে পারছি না, কখন পারব তার ও ঠিক নেই। কখন ঘুমাবো সেটাও জানিনা। কিন্তু মনে আনন্দ হচ্ছে। আমার হাত ধরে যে আছে, সেই ছোট ছেলেটার মনে যেন ভয় আমাকে হারিয়ে ফেলার। এই এক ই ভয়ে ভীতু যে আমিও এক সময়ে ছিলাম। হারিয়ে ফেলার সেই কষ্ট আমি তো মেনে নিয়েছি ২৩ ২৪ বছরে। আর মেনে নিতে গিয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিল, সেটা ভাবলে আজকেও আমি শিউরে উঠি। আর ওই টুকু একটা ছোট ছেলের ছোট্ট মনের উপরে কি প্রভাব ফেলবে আমার হারিয়ে যাওয়া? আমি আর ভাবতেও পারলাম না। ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। ওর দিকে পাশ ফিরে ওকে টেনে নিলাম আমার বুকে। বিল্লুর মতন আমার বুকে সেদিয়ে গেল ও।

মা এলো। পিছন পিছন আন্টি ও এল। শিভ ঘুমচ্ছে বলে মা ফিস ফিস করে বলল,

-     কি রে যাবি না? চল ও তো ঘুমিয়ে গেছে। কালকে সকালে আবার আসিস।

আমি হেসে ফেললাম। বললাম,

-     আর ফিস ফিস করে কথা বলতে হবে না। লাইট টা জ্বালাও। দেখ ওকে একবার।

আন্টি লাইট টা জ্বালাতেই শিভ আমার বুক থেকে মুখ বের করে চিত হয়ে গেল স্প্রিং এর মতন। আর ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইল মায়ের দিকে আর আন্টির দিকে। মুখে হাসি। আমিও এক হাতে ভর দিয়ে ওর পাশে শুয়ে, ওকে হাসি মুখে দেখছিলাম। মা আন্টি দুজনাই হাসি মুখে তাকিয়ে একবার আমাকে আর এক বার শিভ কে দেখছে। মা প্রথমে কথা বলল,

-     অ্যাঁ, শিভ এখনো ঘুমোয় নি?

শিভ কোন কথা বলল না, শুধু আমার দিকে সরে এসে একেবারে আমার শরীরের সাথে ঘেঁষে শুলো। আমার টপ এর হাতা টা নিজের হাতে চেপে ধরল। আমি হেসে ফেললাম। বুঝে গেলাম কেন ঘুমোয় নি। শুধু আমি ই না, মা আর আন্টি দুজনাই বুঝে গেল সেটা। আন্টি যেন অপরাধ করে ফেলেছে, এমন ভাবে আমাকে আর মা কে দেখছে। ভাবছে এবারে কি হবে? শিভ যে আজকে ঘুমোবে না এটা শুধু কাকিমা নয়, আমি আর মা ও বুঝতে পারছি। মা কথা বলল,

-      আজকে তোকে ও ছাড়বে না।

আমি মায়ের কথা শুনে ভাবলাম, কি জানি কোন দিন ও ছাড়লে হয় আমাকে। মুখে কিছু বললাম না। শুধু ওকে দেখছি আমি। মা বলে চলে,

-     এখানে তো ঘর নেই আর । শুবি কোথায়?  ওকে নিয়ে চল তবে আমাদের বাড়ি। আর কি করবি। দুষ্টু টা ঘুমোবে না না হলে।

এবারে আমার চমকানোর পালা। অ্যাঁ, মা কি বলছে? একটু আগে আমাদের বাড়িতে মায়ের কথা বার্তা আর এখন মায়ের চালচলন দুটোর মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। কিন্তু এর মাঝে শিভের আমাকে জড়িয়ে ধরা, কাঁদা, আমার খাইয়ে দেওয়ার সময়ে মায়ের আমার দিকে থাকা টা মনে পরতেই আমি বুঝে গেলাম মা কেন বলেছে কথাটা। মা ও মনে হয় ভাবেনি, যে শিভ এতো খানি আমাকে ভালবাসে। বা আমার মধ্যের মাতৃত্ব দেখেও মায়ের ভালো লাগতে পারে। ভেবে দেখলে , এটা আমার কাছে নতুন সমস্যা। আবার কিছু এদিক ওদিক হলে , আমার মতন আমার মা ও কষ্ট পাবে। আর আমাকেও মা বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে অনেক কথা বলতে ছাড়বে না।

মা আমার কিছু বলার ধার ধারল না। আন্টি কে বলল,
-     নিয়ে যাই ওকে? কি বলেন?

আন্টি কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। উনি খুশী হলেন না কষ্ট পেলেন সেটাও বুঝতে পারলাম না। আমি চাইনি এটা। যতই আমাকে ভালোবাসুক, ছেলে তো ওদের। মা কে নিয়ে আর পারি না আমি। আন্টির চোখে মনে হয় জল দেখলাম। মা কে বলল আন্টি,

-     হ্যাঁ আমার তো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু দিদি আপনাদের সমস্যা হবে না তো?
-     আমাদের কি সমস্যা? শিব বাড়িতে থাকলে ওই দেখবে, আর ও স্কুলে গেলে আমি দেখব।

অ্যাঁ? মা কি ওকে রেখে দেবার কথা ভাবছে নাকি? মানে আমি যা আশঙ্কা করেছি, মা ও তাই করেছে? আমার তো খুব ইচ্ছে ও আমার কাছে থাকুক কিন্তু আন্টি বা রাকা রাজী হবে না। কিন্তু আন্টির দিক থেকে হ্যাঁ বুঝে এবারে বুক টা ধড়াস ধড়াস করতে লাগল।রাকা না বলে দিলে?

বাইরে আন্টি রাকা কে জিজ্ঞাসা করল
-     হ্যাঁ রে, দিদি বলছে, শিভ কে নিয়ে ওদের বাড়ি যাবে। কি বলব। তুই বাপু ওর বাবা। যা বলবি। এতো আমার ছেলে নয় যে, সকাল থেকে সন্ধ্যে অব্দি শিবের বাড়িতে ছেড়ে রাখব? তোর ছেলে তুই বুঝবি । বল তাহলে ওরা নিয়ে যাবে ওকে। না হলে এখানে ঘুম পারানোর চেষ্টা করবে।

আমি জাস্ট শিভ কে বুকে চেপে ধরে শুয়ে আছি। হ্যাঁ বললে ভালো হয়। ছেলেটা একটু আনন্দে থাকবে। হয়ত আমিও অনেক আনন্দে থাকব। কিন্তু না বললে, আমাকেই যাতায়াত করতে হবে। কিন্তু রাতে আমার কাছে না থাকা টা ওকে কষ্ট দেবে । কিন্তু রাকা চুপ করে রইল। অনেক পরে বলল,

-     কাকিমাদের অসুবিধা হবে না তো?
-     বলছে তো হবে না।
-     বেশ তবে আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি। শিবের গাড়ি টা এখানেই থাকুক। কালকে দিয়ে আসব।

অনেক দিন বাদে ওর মুখে আমার নাম টা শুনে জানিনা কেমন একটা ভালো লাগল আমার। কিন্তু রাকার কথা টা শুনে আমি শিভ কে চটকে দিলাম একটু। উফ কি আদর খেকো ছেলে। আদর করলে কিচ্ছু বিরক্ত হয় না। জাস্ট পরে পরে আদর খায়। 

বললাম শিভ কে
-     আমাদের বাড়ি গিয়ে আমার সাথে থাকবি?
এবারেও কোন কথা নেই। আমাকে চেপে জড়িয়ে ধরে ওর উত্তর আমাকে দিয়ে দিলো ও।   
একটা বিশাল গাড়ি। কালো রঙের। আমি আর মা পিছনে বসে আছি। আমার পাশেই শিভ। আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। শিভের হাত আমার হাতে। আঙ্গুল গুলো কে নিয়ে খেলছি আমি ওর। মাঝে মাঝেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। শিভের পা দুটো আমার মায়ের কোলে। আর রাকা গাড়ি চালাচ্ছে। চুপ করে ছিল রাকা। আমি আর মা কোন কথা বলতে পারছি না রাকার সামনে। তাই আমরাও চুপ। রাকা বলল প্রথম কথা মা কে,
-     কাকিমা, ছোট বেলায় আমি জ্বালিয়েছি আপনাকে, আর এখন আমার ছেলে জ্বালাচ্ছে।
মা হাসল,
-     না তুমি জ্বালিয়েছিলে, না তোমার ছেলে জ্বালাচ্ছে। ও ছোট ছেলে। ও কেন জ্বালাবে? আর ও জ্বালালে শিব কে জ্বালাবে। ওই টুকু জ্বলন না হলে বাড়িতে বাচ্চা ছেলে থাকার কি মানে হয়?
আমি সাড়া দিচ্ছি না। আমার ইচ্ছেও করছে না ওই সব নাটুকে কথার উত্তর দিতে। জাস্ট সহ্য হয় না আমার ওকে। হ্যাঁ প্রথমে দেখে মন টা ভিজে গেলেও এখন আবার শক্ত হয়ে গেছি। নেহাত ছেলেটা কে আনার জন্য হ্যাঁ বলল তাই ওর গাড়িতে এলাম। না হলে মরে গেলেও উঠতাম না। আর এই শেষ বার আমি উঠলাম। আর জীবনে উঠব ও না।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। রাস্তায় কোন লোক নেই। না কোন গাড়ী। শুধু রাস্তার ধারে ধারে লাইট গুলো জ্বলছে উঁচু পোস্টে। তাশি তে সেই আলোর খেলা দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলাম আমাদের তিন মাথার মোড়। বুকের বাম দিক টা মোচড় দিয়ে উঠল একটু।
শিভ মনে হয় বুঝে গেছিল যে আমি আর ওকে আজ রাতে ছেড়ে যাব না। মানে এই গাড়ি করে যাতায়াত রাতের বেলায় এই কর্ম কান্ডে ও বুঝে গেছিল, ও আমার কাছেই থাকবে। তাই কোলে শুয়ে প্রায় ঘুমিয়ে গেছিল বললেই চলে। তাই যখন নামলাম বাড়ির সামনে, তখন ও প্রায় ঘুমের দেশে। ওকে নামানোর সময়ে রাকা দেখলাম আমার দিকের দরজা টা খুলে শিভ কে কোলে নিতে এলো। হয়ত ভেবেছে আমি কোলে নিয়ে উঠতে পারব না। গা টা জ্বলে গেলো ওকে সামনে দেখে। মা উল্ট দিকের দরজা দিয়ে নেমে দাড়িয়েছিল। 
সামনে রাকা তবু জোর দিয়ে মা কেই বললাম,
-     মা!!!!  আমি নিজেই পারব। তুমি গিয়ে বাড়ির দরজা টা খোল। আমার কারোর হেল্প লাগবে না। ব্যাঙের ভরসায় পুকুর কাটি না আমি।

আমার ক্যাঁটক্যাঁটে কথা মা শুনতে পেলেও সাড়া দিল না। রাকা আর কিছু না বলে দরজা টা খুলে দাঁড়িয়ে রইল, যাতে আমি নামার সময়ে গাড়ির দরজা টা বন্ধ না হয়ে যায়। শিভ কে কোলে নিয়ে বেরিয়ে ওর মাথায় কিছু একটা চাপা দেব বলে আমার ছোট ওড়না টা বের করতে গিয়ে দেখি, সিট এর ফাঁকে আটকে আছে। সেটা দেখে আবার রাকা এগিয়ে গেল আনতে। কিন্তু আমি ওড়নার একটা দিকে ধরে সজোরে টানলাম আর দাঁতে দাঁত চেপে বললাম
-     আমি এটাও পারি। হেল্প নট নিডেড।

আমি যেন ওর সামনে থেকে পালাতে পারলে ও সামনে আসলেই থর থর করে কাঁপি আমি। আবার প্রচণ্ড রাগ হয় আমার। রাগেই কাঁপি মনে হয় । বা হয়ত উত্তেজনা কিম্বা ভয়। টানতে গিয়ে আমার ওড়না টা ছিঁড়ে গেল। প্রচন্ড রাগ হল। মনে হলো শালা অনামুখো। যখন থাকে সামনে আমার কিছু না কিছু ক্ষতি হয়। রাগ টা দেখালাম না। ও আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেটাও যেন মানতে পারছিলাম না আমি। ছেঁড়া ওড়না টাই শিভের মাথায় হালকা করে চাপিয়ে দিয়ে আমি বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

ভাই খুলতে এসেছে দরজা। আমাকে শিভ কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল। আজব ঝামেলা তো! মাথা গরম ছিল আমার, খেঁকিয়ে উঠলাম ভাই কে,
-     এই সর! সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?  ইল ম্যানারড কোথাকার।  
-     যা বাব্বা
আমি পাত্তাও দিলাম না ভাই এর কথায়। আমি পাশ কাটিয়ে নিচের ডাইনিং এ ঢুকে আমার ঘরের যাবার জন্য সিঁড়ি তে উঠতে যাচ্ছি, শুনতে পেলাম মা বলছে রাকা কে,

-     এস বাড়িতে।
-     না কাকীমা আজকে আর না। অনেক রাত হলো। আপনারাও ঘুমোবেন।

আমি এক পা এক পা করে সিঁড়ি তে উঠছি। শুনতে পাচ্ছি, ভাই অবাক ভাব কাটিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে রাকার দিকে গেল
-     আরে রাকা দা! প্লিস এস বাড়িতে। কতদিন পরে দেখলাম তোমাকে।
-     পিনি? কেমন আছিস ভাই? কত বড় হয়ে গেছিস?
-     এস এস বাড়িতে এস। বাপির সাথে দেখা করে যাও। বাপি একটু দেখুক তোমাকে?
-     আরে না না আজকে আর না। কালকে আসব শিবের গাড়ি টা দিতে। তখন যাব, যদি শিব আলাউ করে।
মা একেবারে খ্যাঁক করে উঠল,

-     এ বাড়ি আমার, শিবের নয়। ও কি আলাউ করবে? তুমি যখন খুশী আসবে। তোমার ছেলে আছে এ বাড়িতে। কোন কিন্তু করবে না কিন্তু বলে দিলাম।

রাকা কোন সাড়া দিল না। কিন্তু আমার রাগের মাত্রা বেড়ে গেল। জানোয়ার ছেলে। এখন এটিকেট দেখাচ্ছে! আমি আর শুনলাম না ওদের কথা। নিজের ঘরে চলে গেলাম আমি। বিছানা আমার সব সময়েই পরিপাটি থাকে। একটা বালিশে শুই আমি। শিভ কে আমার বালিশে শুইয়ে দিয়ে আমি পাশের ঘর থেকে আরেক টা বালিশ নিয়ে এলাম। ততক্ষনে মা দেখলাম উপরে উঠে এসেছে। আমি মা কে জিজ্ঞাসা করলাম,

-     মা বাড়িতে পাশ বালিশ আছে?
-     হ্যাঁ আছে। দাঁড়া এনে দিচ্ছি।

রাতে আমি বাথ্রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে পোশাক ছেড়ে নিজের ঘরে এলাম মা বসে ছিল বিছানায়। মা বেটির অনেক কথা আছে। কিন্তু আজ আর না। এবারে শুতে হবে আমাকে। শিভ ঘুমচ্ছে নিশ্চিন্তে। মা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আমি সারা জীবন অন্ধকারে শুই। সামান্য আলো তেও আমি ঘুমোতে পারি না। কিন্তু আজকে ঘরের নাইট ল্যাম্প টা জ্বেলে দিলাম। ভাবলাম কি জানি, রাতে শিভ যদি অন্ধকারে ভয় পায়? ওর ওদিকে পাশ বালিশ টা দিয়ে এদিকে আমি শুয়ে পরলাম। মন আমার একেবারে শান্ত। কি মিস্টি মুখ টা। নিজের হাতের উপরে মাথাটা ভর দিয়ে, ওকে দেখছিলাম। জানি ঘুমিয়ে গেছে। তাও মনের কথা বলতে ইচ্ছে হলো ওর সাথে। ঘুমন্ত ছেলের কপালে মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে বললাম,
-     এই দুষ্টু, আমাকে ছাড়া শুবি না কেন রে? আমি কি তোর মা, যে আমাকে ছাড়া শুতে পারবি না তুই?

ওমা, কথা শেষ হতে না হতেই, মুখে হালকা হাসি এনে আমার দিকে ফিরে জড়িয়ে ধরে শুলো। ওর নিঃশ্বাসে বুঝছি, ও এখন গভীর ঘুমে। ও হয়ত আমার মতই ভাবছে। নিজের মনেই বলছে হয়ত- আমাকে এতো ভাল বাস কেন তুমি, আমি কি তোমার ছেলে?
জড়িয়ে ধরলাম ওকে আমি। ওর কাল্পনিক প্রশ্নের উত্তর মনে মনে দিলাম,
-     হ্যাঁ আমি তোরই মা ।
ঘুমোতেই তো ইচ্ছে করছিল। কিন্তু এতো ঘটনা আজকে ঘটল, যে ঘুম এলো না। শিভের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে চলে গেলাম আবার সেই ছোট বেলায়।
------------------------------------------------------------------------------------- 
আমি খুব টেনশন এ ছিলাম। রাকার ট্রায়ালের রেজাল্ট কি হবে সেই নিয়ে। স্কুলে যাই নি ইচ্ছে করে যেদিনে ওর ট্রায়াল ছিল। বাড়িতে বসে খালি ঘর আর বার করছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল, চান্স না পেলে এখানেই ওর জীবন টা শেষ হয়ে যাবে। তবে এবারে না পেলেও পরের বার আবার দেওয়াবো ওকে ট্রায়াল। বিকালের পর থেকে আমি অপেক্ষা করছি পাগলের মতন। ফোন টা নিয়ে কখনো ছাদে, কখনো ব্যালকনি তে, বা কখনো নিজের বিছানায় শুয়ে ছিলাম। ছটফট করছি অনবরত। আমার মা খানিক আমাকে বকে দিয়ে চলে গেলো আমার ছটফটানি তে বিরক্ত হয়ে। কম করে পঞ্চাশ বার আন্টি মানে রাকার মা কে কল করেছি। ভাবছিলাম হয়ত হয়ে গেছে। আমি তো জোর করে পাঠিয়েছিলাম ওকে। তাই আমার উপরে রাগ করে আমাকে খবর দেয় নি। শেষ মেশ আন্টি আমাকে বলেই দিল,
-     ওরে সে কি আর তোকে ছেড়ে আমাকে আগে কল করবে রে? তাও যদি আমাকে করে আগে, আমি তোকে জানাব। আমরাও তো টেনশন এ আছি।

কেটে দিলাম ফোন টা আমি। সত্যি তো, এখনো কেন করছে না ফোন। তখন মনে হয় আট টা সাড়ে আট টা বাজবে। একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। ঝপ করে ধরে নিলাম ফোন টা।
-     রাকা?
-      শাবাস, কি করে জানলি আমি এটা?
-     আমার মন বলছিল এটা তুই ই হবি
-     কি হলো ওদিকে।
-     হয় নি।
-     অ্যাঁ?
মন টা আমার ভেঙ্গে গেলো। মনে হলো ইশ আরেক টু ছেলেটা প্র্যাক্টিস করলে পেয়ে যেত। নাহ এবারে আর ছাড়ব না ওকে। টাকার জোগার হয়ে গেছে। আমি এবারে ওকে সকাল থেকে নিয়ে এমন ছোটাব ও বুঝতেও পারছে না। ওদিকে থেকে রাকা বলছে,

-     শিব, ওই শিব। কি হলো। আরে? কথা তো বল? আরে কি হলো?

আমি কিছু বলতেও পারছি না। মনে টা ভেঙ্গে গেছে একেবারে। শুধু বললাম,
-     না, আমি শুনছি। ঠিক আছে হয় নি তো হয় নি। পরের বারে আরো প্র্যাক্টিস করে যাবি। চলে আয়। সাবধানে আসিস। আর হ্যাঁ রাতে খেয়ে নিস।
রাকা হেসে উঠল আর সাথে একটা গালিও দিল আমাকে,
-     শালা তবু আমাকে কলকাতায় পাঠিয়েই ছাড়বে। হিটলার সালা। হয়ে গেছে আমার এখানে। শুনতে পেয়েছিস হিটলার!!!!!!!!!!!!
-     অ্যাঁ? সত্যি?
-     হ্যাঁ সত্যি।
আমি আনন্দে নেচে উঠলাম একেবারে। মনে হলো। ও চান্স না পেলে আর কেউ পেত না।
-     লাভ ইউ। আন্টি কে জানিয়েছিস?
-     উঁহু। আগে তোকে বললাম।
-     বেশ শোন আন্টি কে জানা আগে। তারপরে আমাকে ফোন কর।
-     আজ্ঞে না। এটা আমার ফোন নয়। তুই মা কে বলে দে। আর কালকে সকাল দশ টায় আমি পৌঁছে যাব।
-     আচ্ছা আমি যাব স্টেশন এ আনতে তোকে।
-     তুই আসবি কেন?
-     বেশ করব। অতো কৈফিয়ত তোকে দেব নাকি আমি?
-     উফ। হিটলার কি আর এমনি বলি?
-     সাবধানে আয়। ট্রেনে উঠেছিস?
-     হ্যাঁ বসে আছি। সেই জন্যেই তো ফোন করতে পারিনি তোকে। তাড়াতাড়ি এসে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে একেবারে তোকে ফোন করলাম একজনের থেকে নিয়ে। রাখছি এখন।
মনে হলো রাকাকে সামনে পেলে একেবারে চটকে দিতাম।আমি তো আনন্দে খানিক লাফিয়ে নিলাম। নাহ আন্টি কে ফোন টা করে দি। আন্টি কে বলতেই আন্টিও আনন্দ পেল খুব। আমি নিচে এসে রান্না ঘরে মা কে ধরলাম। খুব খুব লাফাতে লাফাতে মা কে বললাম,
-     ও মা রাকা ট্রায়ালে পাশ করে গেছে
-     বলিস কি রে?
-     হ্যাঁ গোঁ মা। তুমি ওই টাকাটার ব্যবস্থা করে রেখ, পরের সপ্তাহেই ওর লাগবে।

আমি চলে এলাম নিজের ঘরে। জাস্ট আনন্দে আমি পাগল হয়ে যাব মনে হচ্ছে। রনি কে খবর টা দিতে হবে। রনি কেও ফোন করে দিলাম আমি। রনি বলল ও নেই এখন। ওর কোন এক বন্ধুর সাথে বেরাতে গেছে মাসীর বাড়ি। কালকে বিকালে ফিরে ও আসবে বলল। রনি ফোনেই খানিক আনন্দ করে নিল আমার সাথে। আমার সত্যি করেই, নিজের আনন্দ আর ধরে রাখতে পারছি না। মনে হচ্ছে, দু বছর পরে ও কত বড় প্লেয়ার হবে। ইন্ডিয়া খেলবে। কত বড় ক্লাবে খেলবে। ছেলেটা র জায়গা এই রুদ্রপুর, আমি কোন কালেই বিশ্বাস করিনি।

রাত যেন পোহাচ্ছে না আমার। মনে হচ্ছে কখন কালকে সকাল আট টা বাজবে আর আমি স্টেশনে চলে যাব। দাঁড়াব স্টেশন এ ঘণ্টা দুয়েক। কিন্তু বাড়িতে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না একদম। সারা রাত ঘুম টাই হলো না আমার। কাক ভোরে উঠে ছাদে উঠে অপেক্ষা করতে লাগলাম, কখন তাশির ওদিক থেকে সুর্য উঠবে।অপেক্ষা ও যে এতো মধুর হয় আমি জানতাম না। জানিনা কেন আমার ইচ্ছে হলো, সব থেকে ভালো ফ্রকটা পরে যাই রাকার কাছে। আমার মা একটা লাল সাদা টিপ টিপ ফ্রক কিনে দিয়েছিল আমাকে। সেইটা পরে নিলাম। একটা লাল ব্যান্ড চুলে লাগিয়ে নিলাম। খুব সামান্য লিপস্টিক লাগালাম আমি। নিজেকে একটু সুন্দরী করে রাকার সামনে নিয়ে যেতে ইচ্ছে হলো। সাইকেল টা নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাড়াহুড়ো তে আমার আগের সাইকেল টা নিয়ে চলে এসেছি। মানে জেন্টস সাইকেল টা। সবাই আমাকে দেখছে অবাক হয়ে। এতো ফুটফুটে একটা মেয়ে আর জেন্টস সাইকেল নিয়ে কেন দাঁড়িয়ে

ভাবুক গে। বার বার স্টেশনের সামনের বিশাল ঘড়ি টা দেখছি আমি। দু ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা মুখের কথা না। কিন্তু কেটে গেল। রাকা দেখতে পেলাম, পিঠে ব্যাগ টা নিয়ে এগিয়ে আসছে আর এদিক ওদিক দেখছে। আমি হাত নাড়াতেই আমাকে দেখতে পেয়ে ছুটে এল আমার কাছে। এসে আমাকে দেখেই বড় বড় চোখ করে আমাকে দেখতে লাগল। ওর চোখে একটা মুগ্ধতা ছিল। কারন ক্লাস এইট নাইনে এ পড়ার সময় অঞ্জনা কে দেখার সময়েও ও এই ভাবেই দেখত। লজ্জা তো পেলাম না। কারন আমি তখনো লজ্জা পেতে শিখিনি। কিন্তু কেমন একটা অন্য রকম ভালো লাগা আমাকেও পেয়ে বসল।

আমি সামনে বসে পরলাম সাইকেলের। ও চালাতে লাগল। রাস্তায় অনেকেই দেখছে আমাদের। আমার কোন দিকেই খেয়াল নেই যেন। শুধু মনে হচ্ছে, যাক বাবা ও চান্স তো পেল।
-     তুই জেন্টস সাইকেল নিয়ে কেন এলি? তবে ভালই করেছিস। আমার টানতে সুবিধা হচ্ছে।
পিছনে ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-     হিহি, ভুল করে নিয়ে চলে এসেছি, তর সইছিল না আমার এখানে আসতে। তুই যে কি আনন্দ দিয়েছিস রাকা আমাকে বলার না।
-     কেমন আনন্দ তোকে দিতে পারলাম, একটু শুনি?
-     উম্মম্মম্মম্ম……………… ধরে নে, এতো আনন্দ আমার টেন্থ রেজাল্ট এও আমি পাই নি।
-     তুই পাগল। তুই মন প্রাণহীন হিটলার। জানিস আমি থাকব না এর পরে, তার পরেও আনন্দ করিস কি করে?
আমি চুপ করে গেলাম একটু। এতোক্ষন মাথা তেই ছিল না ব্যাপার টা। কিন্তু আমি ওকে দেখালাম না সেটা। বললাম,
-     তুই যাই বলিস এটা তোকে করতেই হবে। দ্যাখ আমি তো একটা একটা চাকরী পাবই, কারন আমি পড়াশোনা করি। কিন্তু তুই তো পড়াশোনা করবি না। তোর ধাতে নেই সে সব। তোকে তো সেটাই করতে হবে যেটা তুই ভালো পারিস। তুই না বড় হলে তোর সংসারের হাল কে ধরবে?
-     থাম তো। পোঁদপাকা একেবারে। সবে ক্লাস ১২ এ উঠব, এখন থেকেই সংসারের চিন্তা?
-     হ্যাঁ সে তো বলবি ই
-     কিন্তু তোকে অনেক থ্যাঙ্কস।
-     কেন রে?
-     জানিস কালকে বাইচুং, ভিজয়ন , কার্লোস এর মতন প্লেয়ার ট্রায়াল নিল। বিদেশী ছিল দু জন। আমি তো দেখে পাগল হয়ে গেছিলাম ওদের। ওরা আগামী দু বছর এই ট্রেনিং হান্ট এ আমাদের শেখাবে অনেক কিছু।

আমি পিছন ফিরে ঘাড় টা ঘুরিয়ে উপরে দিকে মুখ করে ওকে দেখছিলাম। ওর সারা মুখে একটা খুশীর ঝলক বার বার আসছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। মুখে হাসি। আমার সেটাই ভালো লাগল। ভালো লাগল এই জন্য যে, এই প্রথম কিছু তে ও ইন্টারেস্ট পেল। ও বলেই বলেছে,
-     তোকে থ্যাঙ্কস। অনেক অনেক অনেক। ইউ গিফটেড মি দ্য বেস্ট।

আমার ভালো লাগছিল ওর কথা। কিন্তু বার বার আমাকে থ্যাঙ্কস দিচ্ছিল ও। সেটা ভালো লাগছিল না আমার। কথা ঘোরালাম,
-     হ্যাঁ রে কুত্তা, আমাকে কালকে প্রথমে বললি কেন, হয় নি তোর?
-     কি রে তুই। যখন ছেলে ছিলি, তখন কোন দিন গালাগালি দিস নি। আর এখন সুন্দরী মেয়ে হয়ে উঠছিস একটা, আর মুখ খারাপ করছিস?
-     এই বেশ করেছি। তুই আগে বল কেন আমাকে ঢপ দিলি?

রাকা কথা আর মাঝে মাঝেই প্যাডেল করার সময়ে মাথা টা ওঠাচ্ছে নামাচ্ছে। ওর মুখ আমার চুলে লাগছে। আমার গা টা শির শির করে উঠছে। জানিনা ওটা ওর হয়ে যাচ্ছে না কি ইচ্ছে করে করছে। মাঝে মাঝে অনেক টা সময় আমার চুলে ও মুখ টা গুঁজে থাকছে। আমার ভালো লাগছে। কিন্তু ভয় লাগছে, রাস্তায় এতো লোক যাচ্ছে যদি কেউ কিছু ভাবে। কিন্তু শেষ কথাটা শুনে ও ইচ্ছে করেই আমার চুলে মুখ টা একেবারে গুঁজে দিল। আর বলল,
-     তোকে একটু জ্বলাতে ইচ্ছে হলো।
-     হ্যাঁ রে বাঞ্চোত আমাকে জ্বালাবি না? উফ কি করছিস ঘাড়ে। আমার কাতুকুতু লাগছে তো।  জানিস কালকে সারাদিন আমি না খেয়েছি, না ঘুমিয়েছি আর না পড়াশোনা করেছি। উফফ চুলে মুখ দিবি না হারামী । থুতু লেগে যাবে কিন্তু বলে দিলাম। আমি কালকেই শাম্পু করেছি। আজকে কিছু মাথায় চান করব না।  
-     ইশ আবার এই খিস্তী মারলি? নাহ তুই ছেলে অবস্থাতেই অনেক বেশী ভদ্র ছিলি। এখন যত দিন যাচ্ছে অভদ্র হচ্ছিস। আমি তোর সামনে খিস্তি দি না আর তুই আমাকে খিস্তি দিচ্ছিস? তাও ওই রকম দুটো বাজে খিস্তি?

মনে মনে ভাবলাম, তোকে তো মানা করিনি খিস্তী দিতে? মুখে বললাম,
-     বেশ করেছি। তোর বাড়ি চল। আগে আন্টি তোকে দেখুক।
-     হুম চল। কিন্তু তুই রোজ চান করিস না? কই আগে তো এমনি ছিলিস না? রোজ চান করতিস।

একে কি বোঝাব? বললাম,
-     মাথায় চান- বললাম তো আমি তোকে। শুধু চানের কথা বলিনি। মাথায় চান মানে চুল ভেজান। এখন চুল লম্বা না! রোজ মাথায় জল দিলে ঠান্ডা লেগে যাবে না? কোন মেয়েই যাদের লম্বা চুল কেউ রোজ মাথায় চান করে না। কিন্তু চান রোজ ই করতে হয়। মানে গায়ে জল ঢালা সাবান মাখা এই সব। বুঝলি গান্ডু?
-     আবার খিস্তী? আবার মাথার পোকা নড়েছে?
-     বেশ করেছি। 
-     হুম এখন লম্বা চুল তোর। বেশ ভালো লাগে তোকে। কিন্তু যেহেতু তুই রোজ চান করিস না তাই তোকে আমি নাম দিলাম শিবু ডোম।
-     হারামী। তুই ডোম দেখগা। এখন চল তাড়াতাড়ি।

সেদিনে ওকে আমি বেরোতে মানা করেছিলাম। রাতে ট্রেনে এসেছে বলেছিলাম বাড়িতে রেস্ট নিতে। আমি বিকালে গেছিলাম। কিন্তু পরের দিন সকালেই রাকা চলে এল আমাদের বাড়িতে। মনে হয় ব্রাশ করেই চলে এসেছে আমার বাপি আর মায়ের সাথে দেখা করতে। তখন ও বাপি ঘুম থেকে ওঠে নি। আমি উঠে পরতাম সকাল সকাল। মায়ের সাথে কাজ কর্মে বরাবর ই ঝোঁক ছিল আমার। এখন আমি উঠে পরি তাই মাকে চা করে দি। মা বাপি কে তোলে চা দিয়ে। নিজে খায়। আমিও আর হেলথ ড্রিঙ্ক খাই না। মায়ের সাথে চা খাই। আমি তখন সবে চায়ের জল নিয়েছি, মা দরজা খুলে দেখে রাকা।
-     এ কিরে এতো সকালে?

মা কে ঝপ করে প্রনাম ঠুকে ফেলল রাকা। বলল,
-     কাকিমা, চান্স পেয়ে গেলাম। আপনাদের আশীর্ব্বাদ এ আর শিবের কল্যানে।

মা হেসে ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা টা লাগিয়ে বলল
-     হ্যাঁ আমি তো কালকেই শুনেছি।
-     আমি আসতাম কাকিমা কালকেই। শিব বলল কোথাও বেরোবি না আজকে। ঘুমোস নি ঘুমোবি। মা কে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়ে এল। আমাকে আর বেরোতেই দিল না মা। শিব টা একেবারে হিটলার।

মা শুনে হাসল। বলল,
-     ভালো করেছিস। পর পর দুরাত ট্রেন জার্নি, রেস্ট তো নিতেই হবে। বস। চা খা। তারপরে নটার দিকে জলখাবার করব।
আমি ততক্ষনে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি রাকা। বললাম,
-     কি রে এতো সকালে এসেছিস কেন?

ঝপাং করে সোফা তে বসে পরল ও। বলল
-     সেই সন্ধ্যে থেকে ঘুমোচ্ছি ভাই। কত ঘুমোব? ভাবলাম, কাকিমা কাকু কে প্রনাম করে আসি। কাকু ওঠে নি ঘুম থেকে?

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-     কটা বাজে দ্যাখ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাকা। সকাল ছটা পনের বাজছে। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-     অনেক সকালে চলে এসেছি না? ঠিক আছে পরে আসছি।

মা আমাকে তেড়ে এল এবারে।
-     কেন পিছনে লাগছিস ওর। যা চা এ আরেক কাপ জল নে।

আমি চলে গেলাম রান্না ঘরে। রাকা এসেছে আমার আনন্দ কম হচ্ছে না। কিন্তু যেহেতু এই ভালো লাগা টা বন্ধুত্বের ভাল লাগাই, কিন্তু মা যদি অন্য কিছু ভাবে?  তাই মায়ের সামনে রাকা কে একটু বকা ঝকা করছি যাতে মা অন্য কিছু না ভাবে। ছোট ছিলাম বুঝিনি তখন, মা আমাদের এই বয়েস অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে। আমি চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম। মা বাবার চা নিয়ে গেল আর আমি রাকা কে চা দিলাম। নিজেও নিলাম। বিস্কুট দিলাম ওকে।
এই ব্যাপার টা রোজ ই হতে থাকল। ও সকালেই চলে আসত আমার বাড়িতে। মা কে বলেছিলাম, মা আর সাত দিন ও থাকবে। আমি ঠিক পড়া গুছিয়ে নেব। এই সাত দিন মা যেন কিছু না বলে, আমরা ঘুরলে। মা কোন কালেই আমার পড়াশোনা নিয়ে অতো চিন্তিত ছিল না। কাজেই মা আপত্তি করে নি। আমি রনি আর আর রাকা মিলে ঘুরে বেরাতাম সারা দিন। রাকার বাবার স্কুটার নিয়ে। রাকা কিম্বা রনি চালাত। রাকা চালালে মাঝে বসতাম আর রনি চালালে পিছনে বসতাম। সকালে কারোর বাড়িতে আড্ডা। হয় আমার বাড়ি না হলে রাকার বাড়ি তে। বিকালে তাশির ধারে। সন্ধ্যে বেলায় তিন মাথার মোড়ে তিন জনে খাওয়া দাওয়া আর অনেক টা দেরী করে বাড়িতে ঢোকা। কেউ না কেউ খাওয়াত। রাকা কে হাত খরচা টা দিয়ে দিয়েছি শুনে মা আমাকে আরো টাকা দিয়েছিল সেই মাস টা চালানোর জন্য।
[+] 10 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি নতুন পর্ব ৮-৯-১০ - by nandanadasnandana - 08-02-2022, 08:23 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)