Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
প্রথম অধ্যায় এর পর্ব আট এর কিছু অংশ......

রনির কথায় আমাকে ছেড়ে দিলো রাকা। আমিও ছেড়ে দিলাম। নেমে এলাম। ট্রেন ছেড়ে দিল। মিলিয়ে গেল। ও আবার আসবে। কিন্তু মনের মধ্যে ভয় টা লাগল যে, যদি ও ট্রায়ালে পাশ করে যায় তাহলে দু বছর ও আসবে না। আসবে হয়ত মাঝে মাঝে, কিন্তু এই যে রোজ দেখতে পাই দুজন দুজন কে সেটা তো হবে না। এতদিন এতো করে টাকা জোগাড় করলাম। যে ওকে পেতেই হবে চান্স। কিন্তু এটা তো ভাবিনি, গত ছয় বছরের এমন অছেদ্য বন্ধুত্ব আমাকে ওকে ছেড়ে থাকার যন্ত্রণা এই ভাবে দেবে। এতদিনে কেউ রাগারাগি করলে, একে অপরের বাড়ি চলে যেতাম। এখন তো সেটার ও উপায় নেই। মন টা উদাস ছিল।

 
 
 -----------------------------------------------------------------------------------------------
                                                                              অধ্যায় ২
                                                                               পর্ব নয়
এই সব কথা আর ভাবতে ভাল লাগে না আমার। আমি আসলে আমার এই জীবনে সেট হয়ে গেছি। স্থির।পাওয়া না পাওয়া সব পিছনে রেখে এসেছি আমি। সবাই বলে এই আঠাশ বছরেই আমার মধ্যে বছর চল্লিশের স্থৈর্য্য। আমি যে স্কুলের ছাত্রী ছিলাম, সেই স্কুলের হেড মিস্ট্রেস আমি। ব্রিলিয়ান্ট কেরিয়ার এর অপশন থাকলেও আমি বাপি আর মায়ের কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই আমার নিজের স্কুলে জয়েন করার সিদ্ধান্ত। আজকে স্কুলে থাকার সময়েই মনে হয়েছিল, কালকে যেখানে গেছিলাম সেখানে আবার যাব। নিজের পুরোন জীবনের কথা ভাবলে অনেকেই খুশী থাকে, আমার হয় উল্টো। যখন যখন মনে পরে মন টা আমার ব্যাথায় ভরে যায়।

বিকাল বেলায় গেলাম আমি আবার সেই জায়গায়। দেরী করেই গেলাম। আমি পৌঁছে দেখি, শিভ আগের থেকে এসে হাজির। আজকে অবশ্য কালো গাড়ি আর ড্রাইভার আগের থেকেই দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। আমাকে দেখেই ড্রাইভার টা মাথা টা ঝোঁকাল। আমিও গ্রিট করলাম উলটে। সামনে দেখি মাঠে, পুচকু টা বল টা নিয়ে বাঁই বাঁই করে দৌড়ে যাচ্ছে। আমাকে দেখেই বলটা ফেলে ছুটে এলো আমার কাছে। আমাকে বলতে গেলে জড়িয়ে ধরল ছুটে এসে। কোলে তুলে নিলাম। তাকিয়ে দেখলাম ওর দিকে। মনে হল অপেক্ষা করে ছিল আমার জন্য। ইশ ফালতু দেরী করলাম। কাল থেকে আরো তাড়াতাড়ি আসব আমি।

সন্ধ্যে অব্দি দুজনে খেললাম। আজকে দেখলাম ফুটবল জার্সি আর স্পাইক শু পরে এসেছে ও। জার্সি তে নাম লেখা, এস এইচ আই ভি। ইন্ডিয়া জার্সি। ভাবলাম বাবা মায়ের পছন্দ আছে। আমি যেমন জাগ্লিং করি বল নিয়ে, দেখলাম সেও চেস্টা করছে।মন টা ভাল হয়ে গেল আমার। আমি জাগল করে বল টা ওকে দিচ্ছিলাম, আর ও নিজে চেষ্টা করছিল বল টা জাগল করতে। ছোট ছেলে, করতে পারছে না। আমি ওকে বলে চলেছি শেখানোর জন্য,

-     শিভ, হোল্ড ইওর টো স্ট্রং। না হলে বল টা উপরে উঠবে না। অ্যান্ড ইউজ ইয়োর মিডল অফ দ্য টো, অ্যান্ড জাগল দি বল। রিল্যাক্স। হলে হবে না হলে না হবে।

ও চেষ্টা করছিল সেই ভাবেই। খুব মজা পাচ্ছিল করতে। হচ্ছিল না একদম ই। কিন্তু দেখলাম স্পাইক পরে দৌড়োতে পারে। এই ভাবে কিছুক্ষন পর, একটা সময়ে তিনবার চার বার অব্দি জাগল করাতে পারল। মনে মনে ভাবছিলাম, এই সব আমি না শেখালেও একদিন ও শিখে যেত নিজে নিজেই। মারাত্মক ব্রিলিয়ান্ট। কথাটা আমি আরেক জন কে বলতাম। কি জানি, রুদ্রপুরেই কি এই সব ট্যালেন্ট আসে নাকি? ওকে শেখালাম, শট নিতে গেলে টো না, পুরো পায়ের পাতা টা ব্যবহার করতে। আর পায়ের সাইড দিয়ে মারতে। বুটের ডগা দিয়ে যে ও মারছিল সেটা কে আটকালাম আজকে।আর তাতেই কিছু টা পরে ওর শট জোরে আসতে লাগল আমার কাছে। বল টা ছোট, তাই মাঝে মাঝে লিফট করে ফেলছিল, জোরে মেরে। বাহ খুব তাড়াতাড়ি শিখে যায় তো ছেলেটা!!

খেলার শেষে দুজনে কিছুক্ষন বসলাম। আমি বাড়ি থেকে জল নিয়ে গেছিলাম। বোতলের মুখ টা বড়, তাই আমি অল্প অল্প করে খাইয়ে দিলাম ওকে। বাচ্চাদের চকোলেট দেওয়া পছন্দ করি না একদম। তাই কিছু খাবার নয়, দুটো আপেল ছিল ব্যাগে। ওকে একটা দিলাম আমি একটা নিলাম। ওকে ওর আপেল টা ধুয়ে ওর হাতে দিতেই, খেতে শুরু করে দিল। এমন ব্যবহার করছে যেন কত দিন আমাকে চেনে ও। এমনি ই হয় বাচ্চা রা? ওকে বললাম,

-     কালকে আসবে তো তুমি?

এত্তো বড় ঘাড় নাড়াল। মানে আসবে। অনেক টা আপেল মুখে কামড়ে নিয়েছিল। কথা বলতে পারছিল না। ওর এই সব কান্ড কারখানাই আমার মন টা ভালো করে দেয়। বাইট টা শেষ হবার পরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

-     তুমি আসবে তো
-     হ্যাঁ আসবো তো। শিভ বাবু আসবে আর আমি আসব না তাই কি হয়। উম্মম্ম কালকে আমিও স্পাইক শ্যু পরে আসব কেমন, আর জার্সি পরে আসব।
-     ওয়াও!! – কি যে খুশী হয়ে গেলো ছেলেটা! বলল- দারুন হবে
-     হুম হবেই তো। আমি তো জানতাম না , শিভ এতো সেজেগুজে আসবে। জানলে আমি ও সেজেগুজে আসতাম।
-     হিহিহি

সন্ধ্যে বেলায় ওকে গাড়ি তে তুলে দিয়ে যখন বাই করলাম, মনে হলো যাহ আজকেও জানা হলো না ও কার ছেলে। এ রুদ্রপুরে আমি বলতে গেলে সবাইকেই চিনি। আমি না চিনলেও সবাই আমাকে চেনে। যাক কালকে জেনে নেব।
আমি বাড়ি ঢুকে দেখলাম, বাপি আর রাকার বাবা গল্প করছে। রাকার বাবা আমাদের বাড়িতে আসেন প্রায় ই। যে সময়ে আমার সাথে রাকার ঝামেলা হয়েছিল, তখন আমার সব থেকে বড় সাপোর্ট রাকার মা আর বাবাই ছিলেন। ওদের কাছে আমার অনেক ঋণ এই ব্যাপারে। রাকার অঞ্জনা কে বিয়ে করে রুদ্রপুর ছেড়ে ব্যাঙ্গালোর শিফট করা কেউ ই মেনে নিতে পারে নি। কিন্তু রাকা তখন ভারতের সেরা প্লেয়ার। ওকে পাবার জন্য সব বড় বড় ক্লাব পাগলের মতন পিছনে।ও বি এফ সি তে সাইন করে নিয়েছিল। এ টি কে অনেক চেষ্টা করেও ওকে রাখতে পারে নি সেই বছর। রাকার কনফিডেন্স তখন তুঙ্গে। ও চলে গেছিল অঞ্জনা কে বিয়ে করে। না তাতে আমার দুঃখ হয় নি। তার থেকেও বড় দুঃখ পেয়েছিলাম, রাকার বাবা মা একা হয়ে গেছিল সেটাও আমার জন্য। বড় কষ্ট করে মানুষ করেছিলেন, আঙ্কল আন্টি রাকা কে। গত মাস খানেক আমি যাই নি। কারন আন্টি বলেছিলেন রাকা আসতে পারে। মাঝেও ও এসেছিল, আমি সযত্নে এড়িয়ে গেছিলাম আন্টি দের বাড়ি সেই সময়ে। যদিও ও একাই আসত। অঞ্জনা আসত না কোনদিন ই। রাকা আসত ঘন্টা খানেকের জন্য। কিন্তু আমি ওই পসিবল দিন কটা এড়িয়ে থাকতাম। 

আঙ্কল দেখে আমি হাসলাম। দেখলাম মা আঙ্কল কে চা করে দিয়েছে। ঘেমে গেছিলাম আমি। শাওয়ার নিয়ে যখন এলাম ডাইনিং এ দেখলাম কাকু চলে যাবার মুড এ। মা কে বললাম,

-     আঙ্কল কে কিছু খেতে দিয়েছ? ও আঙ্কল তুমি বস না!  

মা বলল
-     তোর আঙ্কল খেলেন না। বকে দিলাম তোর আঙ্কল কে। এতো বড় একটা দুর্ঘটনা আর আমাদের কিছু বলেন নি বলে।

আমি চুপ করে গেলাম। আন্টি আমাদের বলেন নি। হয়ত ওনারাও জানতেন না। রাকার সাথে সম্পর্ক তো বিশেষ ছিল না আঙ্কল আন্টির। মা বলল আবার,

-     শুনলাম, তোর আঙ্কল আন্টি ও জানতেন না। রাকা সব মিটিয়েই খবর দিয়েছে।

আমি আর কিছু বললাম না সেই ব্যাপারে। আঙ্কল কে বসতে বললাম। আমারি ভুল হয়েছে না যাওয়া টা। প্রায় একমাস যাই নি আমি। ফোন ও করিনি। মন টা একদম ভালো ছিল না। জানি আন্টি আমাকে চান। কিন্তু যেখানে নিজেই মনকস্টে থাকি, সেখানে অন্য একজনের মনের কষ্ট কি দূর করতে পারব? তাই যাই নি। আমার কথায় আঙ্কল তাড়াতাড়ি বললেন,

-     না রে মা আমার যাবার আছে একটু। আসলে রাকা নেই তো। ওর খেলা আছে কলকাতায়, ইরানের সাথে। ও টিমে আছে। চলে গেছে কালকেই। নাতি টা বাড়িতে আছে। তোর আন্টি ছাড়া কারোর কাছে থাকছে না খাচ্ছে না।

আমি অবাক হলাম। ওর দাদু দিদা মাসী রাও তো আছে। বেশী ইন্টারেস্ট নিলাম না আমি। তাও বললাম
-     ও। কিন্তু ওর মামারবাড়ির লোক জন তো আছে।
-     হ্যাঁ সে আছে। ওরা আসছেও খুব। ও খেলছে ওদের সাথে, কিন্তু থাকছে না। নিয়ে যেতে গেলেই এমন কান্না কাটি করছে বলার না। রাকার মা ও ছাড়তে চাইছে না ওকে। মা মরা ছেলে, তোর আন্টি বুকে করে আগলে রেখেছে। তোর আন্টি ও কাজে যেতে পারছে না। তাই আমাকেই ওভার টাইম করতে হচ্ছে। তোর আন্টি তো রাকার থেকে কিছুই নেবে না বলে পন করেছে। আর আমার হয়েছে বিপদ। 

মনে পড়ল, আন্টি একটা পয়সাও নেন না রাকার থেকে। আমি দিয়ে আসি আমার থেকে। সেটা নেন আন্টি। কিন্তু রাকা র থেকে কিছু নেন না। অদ্ভুত মহিলা। অমন মনের জোর, আর আত্মসম্মানী মহিলা আমি দুটো দেখিনি। যেদিনে রাকা আমাকে অপমান করে ছিল। আন্টি অনেক ঝগড়া করেছিলেন রাকার সাথে। মা ছেলেতে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমার সামনেই হয়েছিল। রাকার তখন নাম যশ ভারতের বাইরেও। রাকা সোজা বেরিয়ে গেছিল বাড়ি থেকে। সেই থেকে আন্টি ও রাকার উপার্জিত কিছু নিতেন না। আর এদিকে আমার টাকা আমার বাপি নেয় না। না না অন্য কোন কারন নেই। বাস ওটা আমার। নিজের মেয়েকে বাবা খাওয়াতে পারবে। আমাকে এখনো হাত খরচা দেয় বাপি। আমাদের তিন ভাই বোন কেই দেয়। আমার মাইনে জমেই যায়। মা জানে আমি দি আন্টি কে। আমাকে নিজের সন্তানের থেকে কম কিছু ভালবাসেন না ওরা।তাই আমার ভালো লাগে ওনাদের জন্য কিছু করতে পেরে। ওদের নিজের বাপি মায়ের মতই আমি সম্মান দি। আন্টি নিতে তো চায় না। কিন্তু আমি জোর করে দিয়ে আসি। আমাকে না বলতে পারেন না আন্টি।

আঙ্কল এর কথায় আমি সাড়া দিলাম না। চুপ করে রইলাম। আঙ্কল বললেন আমাকে
-     একবার করে যাবি মা? রাকা নেই তাই বলতে এলাম। জানি ও থাকলে তুই যাবি না। তোর আন্টির ভালো লাগবে।

কি বলব এই কথায় আর? আঙ্কল বেশী কথা বলেন না। কারোর কাছে কিছু চাইবার থাকে না আঙ্কল এর। আমাকে বলতে এসেছেন মানে, ব্যাপার গুরুতর। সত্যি বলতে, যেতে তো খুব ইচ্ছে করে, কিন্তু অপমান টা ভুলতে পারি না আমি। ভাবলেই মনে হয় চাবুক এসে পরছে আমার শরীরে। কেটে যাচ্ছে শরীর টা আমার। জ্বালা করে মারত্মক তখন। হুহু করে মন টা। ভাবলাম যাব। আঙ্কল কে বললাম,

-     তুমি অমন করে বোল না আঙ্কল। আমি যাব।যাওয়া হয় নি কিছু দিন। আমি যাব। 

রাতে শুয়ে ভাবছিলাম রাকার বাড়িতে যাবার কথা। যেতে তো খুব ইচ্ছে করছে। এই সময়ে ওর পাশে না দাঁড়ানো টা পাগলামি। আর যতই অপমান করুক আমাকে পরবর্তী জীবনে, একটা সময়ে বুকে করে আগলে রেখেছিল ও। সেটা তো ভুলতে পারি না আমি। আর সত্যি তো আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ওকে আমি দোষ দি না। আমি ই ভেবেছিলাম, এতো সুন্দরী আমি আমাকে না করার সাধ্যি ওর হবে না।একটা অহংকার তো ছিলই ভিতরে। ভাবিনি, পুরোপুরি মেয়ে আমি নই। যতই সুন্দরী হই, আমার পরিচয় তো আমি হিজড়ে।

না ওর দোষ ছিল না। বরং আমার বদলে ও অঞ্জনার প্রেমে সাড়া দিয়েছিল, আমি হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। কারন আমি সর্বতো ভাবে মেয়ে তো নই। আমার তখন ভ্যাজাইনোপ্লাস্টি হয়ে গেলেও, আমার মধ্যে কোন জরায়ু নেই। আর থাকলেও, বাচ্চা ফার্টিলাইজ করার এগ আমি কোথা থেকে আনব? সে সব ভগবান ই পারেন। ডক্টর রা আর যাই হোক, ভগবান নন। আমি কোন দিনেই মা হতে পারব না আমি শিওর ছিলাম। আমাকে রাকা মেনে নিলে অনেক প্রশ্নের সামনে আমাকে পরতে হতো। সেদিক থেকে বেঁচে গেছিলাম আমি। কিন্তু আমাকে যে অপমান টা করেছিল সেটা আমাকে আজকেও কাঁদায়।

আমি জীবনের কোন কথা ওর থেকে গোপন করব না ওকে কথা দিয়েছিলাম। তাই যখন আমার মন বুঝতে পারল আমি রাকা কে ভালোবাসি একটা মেয়ে হিসাবে, তখন মনে হয়েছিল ওকে বলা দরকার কথাটা।আমি ভাবিও নি ও বলবে আমাকে নিয়েই থাকবে। আমি জাস্ট বলতে গেছিলাম আমি ওকে পছন্দ করি একটা মেয়ে হিসাবে। কারন তার আগে অব্দি আমি ছেলেদের উপরে ভালো লাগা টা মানতে পারিনি। তাই যখন আমি মানলাম আর সেটাও ওকে ভাললাগে বা ভালবাসি বুঝতে পারলাম, ছুটে বলতে গেছিলাম। ও পুরো টা শুনলই না। যে কথাটা অন্যে বললেই আমি কষ্ট পেতাম, সেই কথাটা বারংবার, অন্যের সামনে আমাকে বলল। উফফ, ভাবতে পারি না। তাই রাকার কথা মনে পরলে সবার আগেই ওই অপমান টা মনে পরে। সব ভালো সুগন্ধ ছাপিয়ে, ওই দুর্গন্ধ টা নাকে আসে প্রথমেই।

 রাকার ভালো নাম রাখহরি চ্যাটার্জী। জেনেছিলাম প্রথম যেদিন ও আমার জন্য স্কুলের বাইরে মারামারি করেছিল। সেদিনেও আমাকে স্কুলের বাইরে, ময়ুর, অনির্বান আর রাগিনী, সুভদ্রা এই চারজন মিলে উতক্ত্য করছিল। আমি সাইকেল নিতেই ওরা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। আমি কেন জেন্টস সাইকেল নিয়ে ঘুরছি। বা আমি বটম হলেও কত টা বটম। নানান কথা। সাড়া দিচ্ছিলাম না আমি। কিন্তু রাকা কোথা থেকে এসে, হাতের স্কেল দিয়ে এমন মারতে শুরু করল, ওরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাল। ছেলে মেয়ে কাউকেই বাদ দেয় নি ও মারতে। তখন ই ওখানে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করল

-     এবারে আমার সাথে কথা বলিস শালা শুয়োরের দল। আর একটা বাজে কথা বলে দেখিস , এই রাখহরি কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। শালা বাঞ্চোত ।

আর ও কত খিস্তী যে মারল, মনেও নেই আমার। কিন্তু সব ছাপিয়ে রাখহরি টা আমার মাথায় গেঁথে গেল। ওকে বললাম

-     থাক থাক, ওরা পালিয়েছে। কই রে?  আর গাল দিতে হবে না, থাম এবারে । কেন ওদের জন্য নিজের মুখ খারাপ করছিস?

আমার দিকে তাকাল ও। তখন ও চোখে রাগ ওর। ঘুরছে চোখের মনি বাঁই বাঁই করে। আবার বললাম,

-     হয়েছে অনেক। হ্যাঁ রে তোর নাম রাখহরি?

তখনো মেজাজ তুঙ্গে ওর। আমাকে ওই ভাবে জবাব দিল
-     হ্যাঁ কেন?
-     না এমনি।

দুম করে ঠান্ডা হয়ে গেল রাকা, বলল
-     বাজে না?
-     হুম। রাকা টাই ভালো।
-     হ্যাঁ কেন যে ওই নাম রাখল বাবা কে জানে?
-     তুই না ১৮ বছরের পরে, এফিডেবিট করিয়ে নিস। রাকা চ্যাটার্জী করে নিস নাম টা। বুঝলি?
-     ভাবছি সেটাই।

সেই দিনেই প্রথম ওর নাম জেনেছিলাম আমি। এই ভাবে হাজার বার আমাকে ও গার্ড করে গেছে। সেই জাগুয়ারের ব্যাপার তো বলেইছি। ওর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। তাই আঙ্কল যখন বলল যাবার কথা, না বলতে পারিনি আমি। কালকে শনিবার, যাব স্কুলের পরে।

পরের দিন স্কুল ছুটির পরে রাকাদের বাড়িতে গেলাম। বাইরে স্কুটি টা দাঁড় করিয়ে যখন ভিতরে ঢুকলাম তখন ভিতরে অনেক লোক। রাকার শশুর শাশুড়ি এসেছে। রাকার শালী ও এসেছে। আমি সবাই কেই চিনি। রাকার শশুর বাদ দিয়ে, রাকার শাশুড়ি আর শালী দুজনাই আমাকে প্রভুত অপমান করেছিল একটা সময়ে। রাকার বাবা ছিলেন না বাড়িতে। আমি ঢোকার সময়েই দাঁড়িয়ে পড়লাম ওদের দেখে। ভাবলাম চলে যাই পরে আসব। আমাকে দেখেই রাকার শাশুড়ি আর শালীর মুখ টা রাগে একেবারে ফেটে পড়ল। একটা ঘেন্না। সেটা বুঝতে পেরেই আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে করল না। মনে মনে ভাবলাম বেকার এলাম। ফোন করে আসলেই ভালো হতো। কালকে আঙ্কল বলে এলেন অতো করে তাই তো এলাম। আমি পিছনে ঘুরে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিতেই, রাকার মা ডাকলেন আমাকে,

-     কি রে শিব, চলে যাচ্ছিস কেন?

কি বলব আমি এর উত্তরে। বললাম আস্তে করে,

-     না পরে আসব ক্ষন। ব্যাস্ত আছ তুমি।
-     একদম ব্যস্ত নেই আমি আয়। কতদিন আসিস নি। জানতে পেরেছিলি রাকা এসেছে, তাই আসিস নি? না হলে তো রোজ ই আসতিস।

বুঝলাম কথা গুলো রাকার শাশুড়ি কে শুনিয়ে বলল আন্টি। আমার আর ভালো লাগছিল না এই সব আলোচনা। রাকার শশুর মুখ টা নামিয়ে আছেন। শাশুড়ি আর শালী আমাকে যেন পুড়িয়ে দেবে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে। বললাম,

-     থাক আন্টি ওই সব আলোচনা। আমি বরং পরে আসব। বিকালে একবার জঙ্গলের ধারে যাই। সন্ধ্যের দিকে আসব আমি তবে।

মাথায় ছিল শিভ এসে অপেক্ষা করেছিল কালকে আমি যেতে দেরী করেছিলাম। আজকে আর ছেলেটা কে অপেক্ষা করাব না। আহা খেলতে ভালোবাসে। কিন্তু আন্টি আমাকে বললেন।

-     থাক কোথাও যাবি না এখন। এসেছিস যখন থাক আমার কাছে।  আমাদের যা ক্ষতি হলো রে মা। ছেলেটার জীবন শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল আমার।

রাকার মা মুখে আঁচল টা চাপা দিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম। রাকার মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করতেই চোখে আমার ও জল এলো। রাকা আর অঞ্জনা কেউ আমার অপ্রিয় ছিল না। মন টা খারাপ তো ছিলই গতকাল থেকে, এখন আন্টি কে কাঁদতে দেখে চোখের জল সামলাতে পারলাম না আমি। কিন্তু রাকার শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সামনে কাঁদব না এই পন নিয়ে ছিলাম আমি। কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারছি না। এখন মনে হয় ইস্ট্রোজেনের একটু বেশি প্রভাব আমার শরীরে পরেছে। রাকার শাশুড়ি প্রায় রুখে এলো এবারে। আমাকে বলল,

-     এই যে, তুমি এখানে কেন?

আমি জবাব দিলাম না। কারন আমি তো মানতাম আমার আসা ঠিক হয় নি। আর এই ভয় টাই আমি পাচ্ছিলাম। আমি কেন ওখানে, এর উত্তর তো নেই আমার কাছে। কোন দিন ও থাকবেও না। কিন্তু উত্তর দিল আন্টি। আন্টির এই ব্যাপার টা আমার ভাল লাগে। মানে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। এই কাঁদে। আবার দরকারে পরক্ষনেই চন্ডী হয়ে যায়, একেবারে আমার মায়ের মতন। আন্টি আচলে চোখ টা মুছে রেগেই উত্তর দিলেন,

-     এই বাড়িটা, রাকার বাবার। আর আমার ও। আমার বাড়িতে কে আসবে না আসবে, সেটাও কি আপনি ঠিক করবেন বেয়ান? সে আপনি আপনার জামাই এর বাড়িতে যা করার করতেন। আমার ছেলেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা তো আমার বাড়ি। আর আমি আমার ছেলের মতন অতো ভালো নই। দেখুন, আপনারা তো, আপনাদের জগত খ্যাত জামাই কে নিয়ে ছিলেন গত বেশ কয়েক বছর। আমাদের মনে হয় মনেও পরে নি আপনাদের। কিন্তু এই মেয়েটা, রোজ আসত আমাদের কাছে। আমাদের দেখা শোনা, বিপদ আপদ, সবেতেই শিবানী আমার মেয়ের মতই থেকেছে আমার কাছে। কাজেই ওর সাথে এ বাড়িতে, আমার সামনে ,সম্মানের সাথে কথা বলবেন, এইটা আমার আশা। এই কথা টা আপনাকে আমি আগেও বলেছি। আবার ও বলছি, আমার বাড়িতে রাকার থেকেও শিবানীর মূল্য অনেক বেশি। মনে রাখতে পারেন ভালো আর তা না হলে মনে হয়, আমিও কারোর সম্মান রাখতে পারব না।

আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। আন্টির দিকে চেয়ে রইলাম। মনে হলো, আমার মা হলেও এই ভাবে আমার সম্মান বাঁচাত। আমার সম্মানের জন্য, নিজের ছেলের সাথেও আন্টি লড়তে দ্বিধা করেন নি। আমি বললাম,

-     আন্টি থাক এই সব কথা। ওনাদের ও মন ঠিক নেই। ওনারা নিজেদের মেয়েকে হারিয়েছেন। থাক এই সব কথা এখন।

ততক্ষনে রাকার বাবা বাড়িতে এলেন। আমাকে দেখে খুব খুশী হলেন। কোন সাড়া না দিয়ে চলে গেলেন ভিতরে। হয়ত রান্না ঘরে বা বাথরুম এ। এতক্ষনে, রাকার শশুর কথা বললেন। রাকার শাশুড়ি কে বললেন,

-     তুমি কেন এই সব নিয়ে কথা বলছ। শিবানী এখানে এলে তোমার কি সমস্যা? আর সত্যি তো, কেন তুমি পুরোন কথা মাথায় নিয়ে বসে আছ? আর তুমি ভুলে যাচ্ছ, অনা ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল। তাই ওর ছেলের নাম, শিবানীর নামে রেখেছিল। কেন তুমি পুরোন কথা মনে করছ, আজকের দিনেও।

তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন উনি
-     কিছু মনে কোর না মা, অনার মায়ের মাথার ঠিক নেই। মাফ করে দিও।

অঞ্জনা কে বাড়িতে অনা বলত আমি জানতাম। অনা আর সোনা, দুই বোন ওরা। ওর নাম টা সামনে আসতেই আমি কেঁদে ফেললাম। আহা মেয়েটার তো কোন দোষ ছিল না। আমার মতই সেও ভালো বেসেছিল রাকা কে। ভগবান ওকে এতো অল্প সুখ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সেটা কেই বা বুঝতে পেরেছিল। সামনে তাকিয়ে দেখলাম রাকার শাশুড়ি আর শালির চোখে জল। মেয়ের মৃত্যু কেই বা মানতে পারে?কিন্তু আমার নামে ছেলের নাম? তবে কি?......

ঠিক সেই সময়েই একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি ঝুঁকে গেলাম সামনের দিকে। একেবারে জাপটে ধরেছে এসে। আমি চমকে উঠলাম একেবারে। শুধু আমি ই না, বাড়ির সবাই অবাক। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। মাথাটা গুঁজে আছে আমার পেটে। জাপটে ধরে আছে আমাকে। বুক টা ধড়াস ধড়াস করছিল আমার। মুখ টা দেখতেও কি মারাত্মক উত্তেজনা হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না আমি। আমি আরো ঝুঁকে বাচ্চা টা কে কোলে তুলে নিলাম। মুখ টা দেখেই , আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল,

-     শিভ!!!!!

চোখে জলের বাঁধ মানল না আর। ওকে বুকে নিয়ে নিলাম আমি। চারদিকে সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। এটা কি হলো কেউ বুঝতেও পারছে না। আমিও কি ছাই বুঝছি কিছু। তবে মিলিয়ে নিলাম ব্যাপার টা। হয়ত ভগবান ই আমাকে ওর সাথে দেখা করিয়ে দিয়েছে। একটা মা মরা ছেলে কে বুকে পেয়ে আর যেন ছাড়তেই ইচ্ছে করছিল না আমার। জানিনা কেন প্রথম দিন থেকেই ও আমাকে ওর কাছে এক্সেপ্ট করে নিয়েছে। ঘটনা টা তে সবাই এতোক্ষন চুপ করেই ছিল। রাকার মা কথা বললেন প্রথম,

-     দাদুভাই তুমি চেন আন্টি কে? কই বলনি তো?
এতোক্ষনে, শিভ কথা বলল। কি মিস্টি করে যে বলল
-     হ্যাঁ চিনি তো। আমরা ফুটবল খেলি রোজ।

সবাই সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল। আমি কিছু বললাম না কাউকে। শুধু রাকার শালী ছুটে এসে শিভ কে আমার কোল থেকে নামিয়ে নিতে যেতেই শিভ কেঁদে উঠল। যাবে না আমার কোল থেকে ও। আর সুমনা মানে রাকার শালী টেনে ওকে নামানোর চেস্টা করতে লাগল। বুক টা আমার ফেটে যাবে মনে হলো। এ কি দুর্বিপাকে পড়লাম আমি।  ওদের ছেলে ওরা আমার বুক থেকে শিভ কে নিয়ে যাচ্ছে আমি বলার কে? কিন্তু ইচ্ছে করছে না ছাড়তে শিভ কে আমার থেকে। মনে হচ্ছে পায়ে পরে যাই সুমনার, আর বলি- দোহাই তোর, একটু থাকুক আমার কাছে।

আমাকে বলতে হলো না কিছু। রাকার শশুর বলল সুমনা কে
-     সোনা! বিহেভ ইয়োরসেলফ। শিভ বাচ্চা ছেলে। ওর যাকে পছন্দ হবে, যেখানে ও কম্ফর্টেবল, ও তো সেখানেই যাবে। টেন না ওকে।

সুমনা একটা কঠিন দৃস্টি তে আমাকে দেখে ছেড়ে দিল শিভ কে। শিভ আমার কোলেই রয়ে গেল। ততক্ষনে, রাকার শশুর শাশুড়ি চলে যাবার উদ্যোগ করল। বুঝলাম যেটা আমি আসার আগেই ওনারা উঠছিলেন। রোজ ই আসেন। নাতি কে নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে। ওনারা উচ্চবিত্ত মানুষ। রাকাও তাই। কাজেই তার ছেলে একটু অন্যরকম ভাবে মানুষ হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু শিভের গোঁ, ও ঠাম্মির কাছেই থাকবে। প্রথমবার ঠাম্মি কে দেখেছে ও। কিন্তু তাতেই ও ঠাম্মি কে ছেড়ে থাকবে না। রাকার শশুরবাড়ি মেনে নিতে না পারলেও, শিভের জন্য মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।

রাকার মা কে ওনারা নিজেদের বাড়ি তেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যে মা ছেলের টাকা পয়সায় হাত ও লাগায় না, সে যাবে ছেলের শশুরবাড়ি থাকতে? তাই যেমন পারবেন তেমন ভাবেই শিভের খেয়াল রাখবেন । রাকাও চায় নি ছেলে মামার বাড়ি তে গিয়ে থাকুক। তাই কেউ আর জোর করে নি শিভ কে। শিভ রাকার মায়ের কাছেই আছে। কারন মা হীন ছেলে কোথায় থাকবে, কি ভাবে থাকবে কিছুই ঠিক হয় নি এখনো।

যতক্ষন সুমনা ছিল, শিভ আমার কোল থেকে নামা তো দূর, আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল একেবারে। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর ভিতরের ভয় টা। আমিও ধরে ছিলাম ওকে জাপটে। যেই ওরা চলে গেল, শিভ আমার কোল থেকে নেমে, আমাকে টানতে টানতে পিছনের বাগানে নিয়ে এল। ওরা চলে যেতেই আন্টিও পিছনে পিছনে এলেন। বল খেলতে হবে আমাকে এখন। ওর সাথেই খেলতে খেলতে আমি আন্টি কে বললাম, গত দুদিন ওর সাথে তাশির ধারে ফুটবল খেলার কথা। আন্টি খুব খুশী হলেন মনে হলো।

আমরা খেলছি। বল দেওয়া নেওয়া করছি। আর আন্টি বসে রইলেন রান্না ঘরের সামনে। আমাদের দেখছিলেন। আমাকে বললেন,

-     ওরা শিভ কে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল। আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম, ছেলে নিজের থেকে যেতে চাইলে যাক। কিন্তু জোর করে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তোর বন্ধু অবশ্য বলেছে ওর শশুর শাশুড়ি কে, যে শিভের যেখানে ইচ্ছে হবে সেখানেই থাকবে। কেউ যেন জোর না করে।

মনে মনে ভাবলাম, বালের বন্ধু আমার ও। কিন্তু আমি আর কি বলব। মনের মধ্যে একটা ব্যাপার চলছিল, আহা ছোট ছেলে, কত ল্যাভিশলি থাকে হয়ত। আমি ঠিক করে নিলাম, আমি রোজ যাব আসব এবারে। আন্টি তো আমার টাকা নেন। শিভের যেন কিছু কমতি না থাকে। কারন আমি জানতাম আন্টি যেমন কষ্ট করে রাকা কে মানুষ করে ছিলেন, শিভের ও কোন কমতি হবে না। কিন্তু আমাদের ছোট বেলা আর এখন কার ছোট বেলার মধ্যে অনেক ফারাক। এখন স্কুলের মাইনে ই কত বেড়ে গেছে তার কি ঠিক আছে? আর আন্টি তো শিভের থেকে কিছুই নেবেন না।

তারপর থেকে রোজ ই যাই আমি। শিভের জন্য। সে ও যেন কেমন জড়িয়ে গেল। এতো দিন ঠাম্মি ছিল ,এখন আমাকে আঁকড়ে ধরল। আমি ওর জন্য কেনাকাটি করতাম। সে খাবার দাবার ই হোক বা জামা কাপড়। কেমন একটা নেশার মতন হয়ে গেল আমার কাছে ও।  প্রথম দিকে আমিও কোন ভাবনা চিন্তা করিনি। সকালে বিকালে চলে যাই ওর কাছে। সকাল হবার অপেক্ষা করি কখন যাব ওর কাছে। আর বিকালে স্কুল ছুটির অপেক্ষা তে থাকি। স্কুল ছুটির পরে সোজা ওর কাছে। ওকে খাওয়াই, সাজিয়ে দি, খেলি ওর সাথে ফুটবল। সেই রাত্রি নটা অব্দি থেকে, ওকে খাইয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরি।  রবিবার টা প্রায় সারাদিন ই ওর সাথে কাটাই।

মাঝে একদিন শিভের জ্বর হলো। ছিল না বেশি দিন। কিন্তু আমি রয়ে গেলাম ও বাড়িতে। কারন আমাকে ও ছাড়ল না রাতে। আর জ্বর বেশ বেড়েছিল। আন্টি আঙ্কল সামলাতে পারবে না ভেবেই আমি রয়ে গেছিলাম। দুদিনেই ছেলে একেবারে ঠিক হয়ে গেল। তারপরে থাকতাম রাত অব্দি কিন্তু রাতে থাকতাম না। কারন মা রাগ করত। কাকু আমাকে রাতে পৌঁছে দিয়ে আসতেন বাড়ী। ভাগ্যিস রাকা ছিল না। তাহলে সমস্যার অন্ত থাকত না। ও প্রায় হপ্তা দুয়েক নেই। খেলা শুরু হয় নি জানি। ইরানের সাথে ভারতের তিন ম্যাচের ট্যুর চলছে শুনলাম। ইরানের মতন টিমের সাথে খেলতে গেলে অন্তত পনের দিনের প্র্যাকটিস তো লাগবেই।  তাই শিভ কে পৌঁছে দিয়ে, দু দিন থেকেই চলে গেছে।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি নতুন পর্ব ৮ - by nandanadasnandana - 06-02-2022, 07:22 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)