Thread Rating:
  • 90 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ..

 অনেক দিন পরে আমি আনন্দে ছিলাম কথা বলে। পড়াশোনা নিয়েই বেশি কথা হল। সামনেই নাকি ওর ছোট কাকার বিয়ে, আমাকে আসতেই হবে এমন ও ঠিক হয়ে গেল। যখন মায়ের কাছে এসে শুলাম তখন দেখলাম প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। 
                                                                পর্ব সাত
ডাক্তারের নাম বলছি না। একজন মহিলা ডাক্তার ছিলেন উনি। আমি বাইরে ছিলাম অনেকক্ষণ। উনি মা বাবার সাথে ভিতরে কথা বললেন। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে ওরা তিনজনেই বেরিয়ে এলেন। বাবা মা কে বললেন, আমি একটু ত্র্যম্বকের সাথে একলা কথা বলব। উনি বাপি আর মা কে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিলেন। আর আমাকে নিয়ে গেলেন ভিতরে। খুব সুন্দর সাজানো ছিল ঘর টা। আমাকে যেখানে বসতে দিলেন একটা বিশেষ ধরনের চেয়ার। চেয়ারের সাথে লাগানো অনেক মাইক্রোফোন। বুঝলাম আমার কথা রেকর্ড হবে।
উনি সামনে এগিয়ে এলেন, একেবারে আমার মুখের থেকে হয়ত ফুট দুই দূরে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন

-     হাই ত্র্যম্বক?
-     হেলো ম্যাম।
-     তুমি জান , তুমি এখানে কেন এসেছ?
-     আমি তো আসিনি।

চমকে উঠলেন উনি। তারপরেই স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। ছোট্ট করে জিজ্ঞাসা করলেন।
-     তবে?
-     আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি কেন ভাবব আমি পাগল?

উনি সামান্য হাসলেন আমার দিকে তাকিয়ে। খুব নির্ভরতা ছিল সেই হাসি তে। বললেন
-     ও, তোমাকে কে বলল, এখানে পাগল রাই আসে?
-     ইটস নট রাইট?
-     নট এট অল। এখানে সবাই আসে। নর্ম্যাল মানুষ ও আসে। কেন আসে জান?
-     কেন?
-     কারন হল, আমরা সবাই, এক্সসেপশন কে ভয় পাই। যখন ই কিছু এক্সসেপ্সনাল ঘটে, মানুষ ভয় পেয়ে এখানে চলে আসে। ডিসকাস করে। ভয় টা কাটায়। আবার নর্ম্যাল লাইফ লিড করে।
-     ও, মানে আমার ও কিছু এক্সসেপশনাল হয়েছে?
-     হুম তা একটু বটে। কিন্তু সেটা খারাপ, সেটা তো নাও হতে পারে। বা সেটা নর্ম্যাল ও হতে পারে, যেটা আবার বাকি রা বুঝতে পারছে না।
-     মানে আমার এই ব্যাপার টা নর্ম্যাল ও হতে পারে
-     সেটা আমরা দেখব, বুঝব , একটু একটু করে। বাট আই মাস্ট সে, ইউ আর ব্রিলিয়ান্ট।
-     থ্যাঙ্কস।
-     আচ্ছা, তোমার কেন মনে হয়, তোমার মধ্যে একটা মেয়ে আছে?

আমি চুপ করে গেলাম। কেন মনে হয়, এমন তো ভাবিনি কোন দিন। হয়ত আমি যা ভাবি সেটা বললেই হবে। তাই বললাম
-     মনে হয়েছে, কারন, মেয়েরা যা কাজ করতে পছন্দ করে আমিও তাই কাজ করতে পছন্দ করি।
-     তাই নাকি? কেমন শুনি?

আমি ওনাকে বললাম এক এক করে। আমার ভাল লাগা, মন্দ লাগা। অস্বস্তি সব কিছু। উনি সব কিছু লিখছিলেন, আর রেকর্ড তো হচ্ছিলই। এই সব কথা হয়ে যাবার পরে আমাকে বললেন

-     আচ্ছা, তুমি তো খুব ভালো স্টুডেন্ট শুনলাম। বড় হয়ে কি হবে, কিছু ভেবেছ। সামনের বছরেই তো টেন্থ দেবে না তুমি?
-     হুম। আমি বড় হয়ে টিচার হব। বাপি আর মায়ের কাছে থাকব।
-     কেন ডাক্তার বাঁ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও না
-     না।
-     এই দেখ আমিও তো মেয়ে। কিন্তু ডাক্তার।
-     কিন্তু আপনার মা বাবা আপনার কাছে থাকে?
-     না তা থাকে না , কারন আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।
-     ওই জন্যেই, আমি হতে চাই না। বাইরে যেতে চাই না। বিয়েও করতে চাই না।আমি মা বাপির কাছে থাকতে চাই।

সেদিনের সেশনের পরে আমি অনেক টা হালকা হয়ে গেছিলাম। জানিনা কি হবে কিন্তু ওনাকে আমার সব গুলো মনের কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলার পরে মন টা হালকা হয়ে গেছিল। রাকার কথা মনে পরছিল। ওকে আমি বেকার কিছু বাজে কথা লিখে দিয়েছিলাম। ফোন টা খুলে দেখলাম, ও কিছু লিখেছে কিনা। দেখলাম লেখে নি।

আমরা ছিলাম কলকাতায় প্রায় কুড়ি দিন। কুড়ি দিনে আমার প্রায় চারটে সেশন হয়েছিল। সেশন গুলো হবার পরে আমার মনে হল, আর কাউকে আমার লুকিয়ে থাকার দরকার নেই। আমি শুনেছিলাম বাপি মা আর ডক্টরের কথা বার্তা।
ডক্টর বাপি আর মা কে বললেন যে,
-     ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত।
মা অবাক হয়ে বলল
-     কীসের জন্য
-     ও প্রস্তুত, মেয়ে হিসাবে বাঁচতে। মানসিক ভাবে তৈরি ও। এখন আপনাদের উপরে নির্ভর করছে আপনারা কি চান। কিন্তু মাথায় রাখুন, ওর চাওয়া আর আপনাদের চাওয়া না মিললে, সমস্যা টা আপনাদের হবে না , হবে ওর।
মা বলে উঠল
-     কিন্তু কি ভাবে ও মেয়ে হয়ে বাঁচবে? ও তো মেয়ে নয়। মানে ওর শরীর তো ছেলেদের।
-     হ্যাঁ আমি জানি। ওর শরীর ছেলেদের। সে এখন কার দিনে অনেক প্রসেস আছে। ওর মেয়ে মনের সাথে মেয়েদের শরীর ও ওকে ডক্টর রা দিতে পারে। কিন্তু তার জন্য আপনাদের প্রিপারেশন দরকার
-     আমাদের?
-     হ্যাঁ আপনাদের। দেখুন আমি সেক্স চেঞ্জ এর কথা বলছি।

বাপি আর দুজনাই একেবারে চমকে গেল। মা কেমন অস্ফুট স্বরে বলল

-     সেক্স চেঞ্জ?
-     হ্যাঁ।  মুলত তিনটে পার্ট এ হয় এই প্রসেস টা। প্রথম পার্ট এ আপনারা এখন আছেন। আমি ওকে গত চারটে সিটিং এ দেখেছি, আর বুঝেছি মেন্টালি আর ফিসিক্যালি, ও তৈরী। অর মেন্টাল কন্ডিশন, প্রেশার, হাইট, ওয়েট, সব পারফেক্ট। আর যত সকাল সকাল করাবেন, পরবর্তী জীবন টা ওর একটু হলেও স্মুদ হবে বলে আমার বিশ্বাস। বিয়ে করতে পারবে। সংসার করতে পারবে। যত দেরী করবেন, তত ওর উপরে মানসিক চাপ বাড়বে।

বাপি আর মা হাঁ করে শুনছিল, ডক্টরের কথা। আমিও শুনছিলাম। বাপি মায়ের কেমন লাগছিল জানি না। তবে আমি বিয়ে আর সংসার টা বাদ দিয়ে , বাকি কথা গুলো খুব আনন্দে শুনলাম। উনি বলে চললেন,

-     এখন আপনাদের ও তৈরি হতে হবে। এর পরের স্টেজ হলো, হরমোন থেরাপি। হরমোন থেরাপী তেই এইট্টি পারসেন্ট কাজ হয়ে যায়। ওর গড়ন, চলন বলন, শরীর ভয়েস, সব কিছুই মেয়েদের মতন হয়ে যাবে। সময় লাগতে পারে তিন থেকে পাঁচ বছর। তারপরে দরকার পরলে, বা ও চাইলে, সার্জারি। সেখানে ভ্যাজাইনোপ্লাসটি করানো দরকার হতে পারে। বা প্রয়োজন পরলে ফেস থেরাপি। আবার হয়ত ওর মনে হলো, যে ও মেয়ে নয় ছেলে হয়ে বাঁচবে। তখন উল্টো থেরাপী তে ওকে আগের অবস্থায় ফিরিয়েও আনা যায়। তাই হরমোন থেরাপীর পরে আমরা কিছু টা সময় দি সার্জারীর আগে।

বাপি আর মা দুজনাই, চুপ করে বসে ছিল অনেকক্ষণ। হয়ত নিজেরাও ভাবছিল। কিন্তু বাপি জিজ্ঞাসা করল ডক্টর কে,

-     কিন্তু এটা এখানে মানে ভারতে হয়?
-     হ্যাঁ খুব হয়।  আপনারা তৈরি হলেই প্রসেস শুরু করা যেতে পারে। পুরো প্রসেস টা তে তিন বছর থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

বাপি বলল,

-     না মানে আমরা কি তৈরি হব? অনেক খরচের কথা বলছেন?
-     না না । খরচ হয়ত বেশি। কিন্তু সেটা টানা তিন বছর ধরে হলে দেখতে গেলে এমন কিছু না। এর পরের পার্ট টা হল, হরমোন থেরাপি। কিন্তু তার আগে, আপনাদের সোসালি প্রিপেয়ার্ড হতে হবে। মানে আপনাদের আত্মীয় স্বজন, ওর বন্ধু বান্ধব, কলেজ, চেনা শোনা সকলকেই জানাতে হবে ব্যাপার টা। যাতে, মেয়ে হবার পরে ওকে সবাই সোসালি এক্সেপ্ট করে।

বাপি আর মা চুপ করে রইল। এর পরেও কিছুক্ষন কথা বার্তা হল ওদের মধ্যে। কেন জানিনা আমার মধ্যেকার অনেক দ্বিধা কেটে গেছিল এই সিটিং গুলোর পরেই। আজকে যেন আরো বেশী মুক্ত লাগছিল নিজেকে। রাকার কথা মনে পড়ল। ওকে উলটো পালটা লিখেছিলাম আমি অনেক। আজকে রাতে কল করব ওকে। এসে থেকে রাগে আমি কথা বলিনি ওর সাথে। মন টা খারাপ ও লাগছিল একটু। কি জানি, কি করছে? মারামারি করছে হয়ত।
ফেরার পথে , যখন আমরা বড় মামার বাড়ি থেকে স্টেশন আসছিলাম। সেটা ছিল সকাল বেলা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ধরব। আসার সময়ে ময়দানে দেখলাম, কত ছেলে ফুটবল খেলছে। রাকার কথা আবার মনে পড়ল আমার। মনে হলো ও যদি এখানে কোচিং নিতে পারত ভালো হত। ওখানে থেকে মারামারি করে সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বলতে হবে কলকাতায় আসতে। টেন্থ টা দিক। তারপরে বলব। ততদিনে আমার ও হরমোন থেরাপী হয়ত শুরু হয়ে যাবে।

বাড়ি তে আসার পরে আমার আর কোন দ্বিধা ছিল না। নেহাত টেন্থ এর সময় তাই আমি পড়াশোনা তে মন দিলাম। কলেজে যেতে থাকলাম নিয়মিত। রাকা আমার পাশেই বসত। হরমোন থেরাপী শুরু হবার আগে মা আর বাপি রোজ আসত কলেজে। টিচার্স, প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে কথা বলত। আমাদের ক্লাসে ও আসত। টিফিনে আমার ক্লাসের ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলত। ততদিনে আমার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবার কাহিনী রাষ্ট্র হয়ে গেছিল রুদ্রপুরে।

কলকাতা থেকে ফেরার পরে রাকাকে ফোন করেও পাই নি। চলে গেছিলাম ওর বাড়ি। ছিল না বাড়িতে। আন্টি ছিলেন। আমাকে দেখে আনন্দ পেলেন খুব। কি হলো কলকাতায় আমি সব বললাম আন্টি কে। আমার আগে থেকেই মনে হয়েছিল আন্টি খুব ভালো বাসেন আমাকে। আন্টি চিন্তিত ছিলেন আমাকে নিয়ে বোঝাই যাচ্ছিল। ব্যাপার টা শুনে, কেমন হবে সেটা না বুঝতে পারলেও, আমাকে বার বার বললেন, আগের বারের মতন কোন ভুল পথ যেন আমি না বাছি, সমস্যা হলে ওনার কাছে চলে আসতে বললেন আমাকে বারং বার।

আমার মনে হয় পালিয়ে যেতে গিয়ে আমি ভুল করেছিলাম। আসলে তখন মা আর বাপির ওই ঔদাসীনতা আমি মানতে পারিনি। এখন বাপি আর মা মেনে নিয়েছে। ওরা আমার জন্য ভাবছে। আর এই ব্যাপার টাই আমাকে অনেক টা হাল্কা করে দিয়েছে। মনের মধ্যে অনেক ভয় এখনো, কিন্তু তাও এখন যেন চারপাশ টা আমি অনুভব করতে পারছি যেটা তখন পারতাম না। কিছু বাদেই রাকা এল বাড়িতে। আমাকে দেখেই গম্ভীর হয়ে গেল। বুঝলাম আমার মেসেজ টা দেখে কস্ট পেয়েছে।

আমাকে শুনিয়েই বলল আন্টি কে,
-     মা আমাদের বাড়ি তে কি কোন পাগল এসেছে নাকি? কই আমি তো দেখছি না। মনে তো হচ্ছে, শিব এসেছে। কিন্তু আমি এসে থেকে পাগল টা কেই খুঁজছি। পেলে ঘর থেকে বার করে দোব।

আমি হেসে ফেললাম। ওর উপরে রাগ করে থাকা যায় না। জানি ও না বললে আমার বাপি আমাকে কলকাতায় নিয়ে যেত না। আর আমার জীবন টা বদলে যাবার শুরুতে চলে আসত না। ওকে থ্যাঙ্কস বলতেই আসা আজকে। যবে থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে, আমাকে সব সময়েই ও দিয়ে গেছে। পড়াশোনায় হেল্প করা ছাড়া আমি ওকে কি দিয়েছি আর। আমি তো কিছুই দিতে পারিনি ওকে। এমন কি কলকাতা যাবার আগেও ওকে আমি ভুল ভাল অনেক কিছু লিখেছিলাম। এখন খারাপ লাগছে আমার। আর মনে হচ্ছে, জানিনা এই খারাপ লাগা টা কে আমি কি করে ঠিক করব?

আগে ও আমার উপরে অনেক বার পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বন্ধু রা যেমন করে থাকে। কিন্তু সেদিনে আমার সব অস্বস্তি উপেক্ষা করে, পিছন থেকে হালুম করে ঝাঁপিয়ে পরলাম ওর উপরে। ওকে চটকাতে থাকলাম আমি। বললাম

-     খুব বলছিস না আমাকে? আমার জায়গায় থাকলে বুঝতিস। আমাকে বার করে দিবি বাড়ি থেকে? খুব সাহস তোর। বল বল, আর বলবি?

ওকে উল্ট পালটা লিখে গেছিলাম, ব্যাপার টা মানতে পারছিলাম না আমি। প্রবল অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছিলাম আমি। তাই সেটার ভরপাই কি ভাবে করব বুঝতে পারছিলাম না। তাই পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পরে কখনো কাতুকুতু দিয়ে কখনো ঘাড়ে চেপে ওকে উতক্ত্য করে, ওর মন থেকে ব্যাপার টা হালকা করে দেওয়া আর কি। ও একেবারে চেঁচিয়ে উঠল।
-     আরে ঘাড় থেকে নাম না। উফ কি ঝামেলা! একে তো উল্ট পালটা বলবে, আবার ঘাড়ে উঠে আমাকেই মারবে। আবার নিজে এসেছে! কথা ছিল আমি গেলেও নাকি কথা বলবি না। আমি নাকি শত্রু।

ততক্ষনে আমাকে ঘাড়ের উপরে নিয়ে ও পিছনের বাগানে চলে এসেছিল। ওর কথা গুলো আমাকে একেবারে বিঁধছিল। সত্যি তো ও যদি বাপি কে না বলত এই ব্যাপার টা সম্পর্কে, আমরা জানতাম ও না যে এই পুরো ব্যাপার টার একটা সমাধান ও আছে। আমি জানতাম না, যে এই সবের আগে সাইকোলজিস্ট এর সাজেশান লাগে। কিন্তু ও জানত। আর ও জানত বলে, এটাও বুঝেছিল, ডক্টরের সাথে কথা বলার পরে আমার মত বদলে যাবে ওর সম্পর্কে। তাই উত্তর ও দেয় নি আমাকে। অপেক্ষা করছিল, কবে দেখা হবে আর আমাকে সামনা সামনি কথা শোনাবে। শালা বেদ ছেলে । আমি তখনো ওর ঘাড়ে। ওর শেষের কথা গুলো আমাকে বাধ্য করল বলতে,

-     সরি। আমি বুঝতে পারিনি তখন। তুই না থাকলে এতো দিনে আমি সুইসাইড করতাম।
ও আমাকে নামিয়ে দিল ঘাড় থেকে। আমাকে বলল
-     ফালতু কথা ভাববিও না একদম। বলেছিলাম, আমাকে সব বলতে।
-     এবার থেকে সব বলব।
-     মনে থাকবে?
-     হুম
-     গুড গার্ল। তবে যা করেছিস তোকে এর পানিশমেন্ট পেতে হবে।

মন টা ভালো হয়ে গেল, গুড গার্ল টা শুনে। কি হবে জানিনা। কত জন আমাকে মেয়ে হিসাবে এক্সেপ্ট করবে। কিন্তু শুরু টা সব থেকে প্রিয় বন্ধু কে দিয়েই হোক না ক্ষতি কি? ওকে বললাম,

-     বল কি পানিশমেন্ট দিবি।
-     বলব পরে। পয়েন্ট তোলা রইল।
-     আচ্ছা ঠিক আছে। এনিথিং। যা বলবি

প্রায় তিন মাস যাবার পরে হরমোন থেরাপি শুরু হবার সময় এসে গেল। সামনেই ছিল আমার  প্রি ফাইনাল এক্সাম। তখন দিন রাত আমি পড়াশোনা করছি। কিন্তু অবশ্যই আমাকে কলকাতা যেতে হবে প্রথম বার টা। পরের বার গুলো আমাকে না গেলেও চলবে। বা যেতে হতেও পারে। ডক্টর রা প্রোগ্রেস বুঝতে চাইলে আমাকে যেতে হতেই পারে। আমাকেও বুঝে নিতে হবে সব নিয়ম কানুন। সাইড ইফেক্টস। সব আমাকেই জানতে হবে। কারন ডক্টর ফোনে বলছিলেন, সাইড ইফেক্টস এ অনেক সময়ে মেন্টাল স্ট্রেস আসে। সেই গুলো জানার পরেই, একটা ফাইনাল এগ্রিমেন্ট পেপার এ সাইন করতে হবে। কিন্তু আমি ঠিক করে নিয়েছি, অর্ধেক জীবন বাচার থেকে কস্ট পেয়ে ও পুরো জীবন আমি বাঁচব। যত কস্টই হোক আমি এই থেরাপি করাবই।

বাপি কে ডিসট্রিক্ট ম্যাজিশট্রেটের কাছ থেকে একটা ডিক্লারেশনের সাইন অফ দরকার ছিল। সেদিনে বাপি শিলিগুরি গেছিল সে জন্য। আর হরমোন থেরাপি শুরু করার আগে, ক্রস ড্রেসিং এর একটা রুটিন প্রসেস আছে। মানে নিজেকে, পরিবার কে, এবং আশ পাশ কে হিন্ট দিয়ে রাখা, কি হতে চলেছে। বা নিজের লজ্জা, পরিবার এবং আশে পাশের মানসিক বাধা টা কাটানো। সাইকোলজিস্ট সেই ভাবে প্রেসক্রিপশন করে ছিলেন। আমি তখন বাড়িতে, স্কার্ট আর টপ পরে থাকতাম। লজ্জায় বেরোতাম না তেমন কিন্তু বাড়িতে পরেই থাকতাম। মা আমাকে দেখত, আর ক্ষনে ক্ষনেই রান্না ঘরে গিয়ে চোখের জল মুছত। বাপি তো তাকাতোই না আমার দিকে। কিন্তু আমি মন থেকে মেনেই নিয়েছিলাম যে আমি এখন একটা মেয়ে। যেদিন মা আমার জন্য বেশ কিছু মেয়েদের ড্রেস কিনে আনল, আমি আনন্দে পাগল হয়ে গেছিলাম।

প্রথমে নিজের ঘর, তারপরে ঘরের বাইরে বেরোতে শুরু করেছিলাম। পড়াশোনা হয়ে গেলে মাঝে মাঝে ওই পোশাক পরেই ভাই কে আর বোন কে পড়াতাম। ওরা আমাকে হা করে দেখত। কিন্তু কিছুদিন পরে ওদের অবাক হবার ভাব টা আর রইল না। তখন আমি আর ওদের কাছে কোন অদ্ভুত জীব রইলাম না।

আমার পড়াশোনার পুরোন ব্যাপার টা কাউন্সেলিং এর পরেই ফিরে এসেছিল। আবার প্রথম হলাম আমি পর পর দুটো পরীক্ষা তে। আবার সেই কনফিডেন্স ফিরে এলো আমার। কে কি ভাবল আর আমি দেখতাম না। কলেজে মেয়েদের ড্রেস পরেই যেতাম। রাকার পাশেই বসতাম। তখন আমি আবার ফার্স্ট বয় বা গার্ল যাই বলি না কেন। লোকের হাসি, আড়াল আবডাল থেকে  হিজড়ে বলা , রাকার গার্লফ্রেন্ড বলা , ছক্কা বলা, কিছুই আর মাথায় ঢুকত না। যে যাই বলত তাতেই আমি কনফিডেন্স পেয়ে যেতাম। রাকার সাপোর্ট আমাকে খুব খুব উদ্দীপ্ত করত সেই সময়ে। ও আমাকে বুঝিয়েছিল আর মাত্র দু বছর । তারপরেই আমি পুরো দস্তুর মেয়ে হয়ে যাব। কিন্তু এই সময় টা পাব না আর ফিরে।

রোজ সন্ধ্যে বেলায় কোন দিন রাকার বাড়িতে, কোন দিন আমার বাড়িতে ওকে নিয়ে পড়তে বসতাম। আমার কাছে এটা চ্যালেঞ্জ ছিল, ওকে একটা ভালো রেজাল্ট করাতেই হবে। ওকে রিতিমতন বকাঝকা করতাম আমি। আর মিথ্যে বলব না। ওই শেষ বছর টা ও আমাকে সময় দিত, পড়াশোনার জন্য। তাই ফাইনাল এ রেজাল্ট ও ভালো করেছিল।

যেদিন বাবা প্রথমবার শিলিগুড়ি গেছিল, সেদিনে প্রথমবার আমি গেছিলাম রাকার বাড়ি, একটা ফ্রক পরে। প্রথমবার বেড়িয়েছিলাম বাড়ির বাইরে ক্রস ড্রেস এ মায়ের অনুমতি নিয়ে। মা আমাকে সাজিয়ে দিয়েছিল। গত ছয় মাস আমি চুল কাটিনি। বড় হয়ে গেছিল চুল আমার মেয়েদের মতন। ঘাড়ের নিচে চলে এসেছিল। আমি তো পছন্দই করতাম আমার লম্বা চুল। বাইরে বেরোব বলে নেল পালিশ পড়ার ইচ্ছে ছিল। মাকে বলতে মা পরিয়ে দিয়েছিল। কলেজে নেল পলিশ আলাউড না তাই কলেজ কি ভাবে যাব জিজ্ঞাসা করতে বলেছিল, রিমোভার ও হয়। লিপস্টিক লাগিয়েছিলাম হালকা। সব ই মায়ের থেকে নিয়ে। মা বলেছিল, হরমোন থেরাপি শুরু হলে আমার নিজের সব কিছু মা কিনে দেবে। আমি এক্সাইটেড ছিলাম খুব। 

আর আমার মুখে সামান্য দাড়ি গোঁফের বালাই গন্ধ ছিল না। রাকা ও দাড়ি গোফ ছিল তবে হালকা। কিন্তু ওর চোখে মুখে একটা পুরুষালি ভাব ছিল যেটা আমার ছিল না। তবে, হালকা গোঁফ আর জুলপি থেকে দাড়ি ওর বেরোচ্ছিল। ও তো ওর বাবার রেজার দিয়ে চেঁচে দিত যাতে তাড়াতাড়ি দারী গোঁফ ওর বেরিয়ে আসে। ওর স্কুটার এ চেপে গেছিলাম সেদিনে। বাড়ি পৌঁছনর পরে একটা ব্যাপার হলো।

সেদিনে আঙ্কল মানে রাকার বাবা বাড়িতে ছিলেন। আমি যেতেই কাকু আমাকে দেখতে লাগলেন খুব খুঁটিয়ে। কিছু বললেন না উনি চলে গেলেন তখনকার মতন। আন্টি আমি গেছি বলে, মিস্টি আর কিছু হয়ত আনতে দিয়েছিলেন। আমাকে দেখে আন্টি একেবারে খুশী তে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

-     কি সুন্দর দেখতে লাগছে তোকে, শিব! না তোকে শিব না, আমি শিবানী বলে ডাকব।

বাহ খুব সুন্দর নাম টা তো। ঠিক করে নিলাম এই নাম টাই আমি রাখব মেয়ে হবার পরে। কাকিমার প্রশংশা শুনে আমার তো দারুন লাগল। মনে হলো আমি মাটিতে না আকাশে উড়ছি। মেয়ে হয়ে কেমন লাগব, এই প্রশ্ন টা মাথায় আমার খুব ঘোরে। কিন্তু আন্টির প্রশংসা শুনে মনে হলো মন্দ লাগবে না আমাকে। হ্যা মেয়েদের থেকে আমার হাইট অনেক বেশী। ঠিক আছে। সেটা খারাপ না। কি জানি কি মনে হলো, মনে হলো আন্টি কে প্রনাম করি। আন্টির কথার পরে আমি আন্টি কে প্রনাম করতেই, আন্টি আমাকে আদর করে দিলেন। আমার রাকার বাড়িতে এসে সব সময়েই মন ভালো হয়ে যায়। আন্টি এতো ভালো যে কথা বললে, কাছে থাকলেই মন ভালো হয়ে যায়।

সেই সময়ে আঙ্কল ঢুকলেন বাড়িতে। আমাকে কিন্তু উনি আবার ভালো করে দেখে আন্টি কে নিয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরে। আমি আর রাকা রাকার ঘরে গেলাম। রাকা কাকিমার ফোন টা এনে আমার অনেক গুলো ছবি তুলে নিল। আমিও একটু পোজ দিয়ে ছবি তুললাম। সেই সময়ে আন্টি রান্না ঘর থেকে জোরে হেসে উঠতেই আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি, আঙ্কল বোকার মতন দাঁড়িয়ে, আর আন্টি হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। আমি আর রাকা কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেকক্ষণ হাসার পরে আন্টি বললেন,

-     রাকা, সেদিনে তুই শিব কে নিয়ে বেড়িয়েছিলি সরস্বতী পুজোর দিনে?

রাকা বুঝল ধরা পরে গেছে। মাথা নিচু করে বলল
-     হ্যাঁ।
-     আমাদের বলবি তো? জানিস শিব, সেদিনে রাকার বাবা তোকে আর রাকা কে দেখে, ভেবেছে ওর ছেলে ক্লাস নাইন থেকেই প্রেম করছে।

আবার হেসে গড়িয়ে পরলেন আন্টি। আমরাও হেসে ফেললাম। আঙ্কল ও বোকার মতন দাঁড়িয়ে রইলেন।
 
সেদিনেও আমরা পিছনের পোড় বাড়িতে গিয়ে অনেকক্ষন গল্প করলাম। সন্ধ্যে হতে ও আমাকে নিয়ে বাড়ি নিয়ে এলো। সন্ধ্যা বেলা আমার সাথে পড়াশোনা করল। রাতে খাইয়ে ওকে মা ছাড়ল। এটা আমাদের রুটিন ছিল। আমি যেদিন কলকাতা যাব তার আগের দিন ওকে ফোন করলাম রাতে। ভয় করছিল। যদিও আমার মেডিক্যাল টেস্ট হয়েছে। লিভার, কিডনি, হার্ট, লাং, হাই প্রেশার, কোন থ্রম্বোটিক প্রবলেম, হরমোনাল প্রবলেম যা হেরিডিটি তে আছে, সব রকম টেস্ট আমার হয়েছিল। আমার বাবা মায়ের আলাদা করে টেস্ট হয়েছিল, মেডিক্যাল হিস্টোরি রেকর্ড এর জন্য। সবেতেই ঠিক রেজাল্ট এর পরেই আমার হরমোন থেরাপি শুরু হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও ভয় লাগছিল প্রচন্ড। যদি হরমোন কোন উল্ট এফেক্ট করে? নানা চিন্তা। তাও আমি রেডী হয়ে গেছিলাম। রাতে প্রায় ঘুমোই নি আমি। রাকা কে দশ বার ফোন করেছি। চিন্তা হচ্ছিল, সাথে ভয়, যদি মরে যাই?

কলকাতায় গিয়ে আমি যেদিনে গেলাম হাসপাতালে, সেদিনে আমাকে শুধু বোঝানোই হলো অনেক কিছু। আমাকেই না, আমার বাপি কে আর মা কেও। বলা হলো, ফেমিনাইজিং হরমোন থেরাপির দুটো পার্ট হবে। একটা এন্টি এন্ড্রোজেন থেরাপি আর একটা এস্ট্রাডিওল। এন্টি এণ্ড্রোজেন ট্রিট্মেন্ট আমার মেল হরমোন ব্লক করবে। আর এস্ট্রাডিওল আমার মেয়েলি  হরমোন বাড়াবে আর বাইরে থেকে শরীরের ভিতরের ইস্ট্রোজেন সিক্রেশন কে ক্যাটালাইজড করবে।

এন্টি এন্ড্রোজেন থেরাপি তে আমার, পুরুষালি পেশীর শক্তি এবং শেপ কমে আসবে। পেনিস বাড়বে না , যদিও বেশ ছোট ছিল আমার। পুরুষালি লোম হবে না। আর পেনিস ইরেকশন একেবারে হবেই না। আর এস্ট্রাডিওল ট্রিটমেন্ট হবে একসাথেই। সেখানে, আমার স্কিন অনেক নরম আর সফট হবে। ব্রেস্ট বেড়ে যাবে মেয়েদের মতন, মানে আমার বয়সের জন্য ফুল ব্রেস্ট ফর্ম হবে।  কোমর পাছা আর মুখে চর্বি রিএসোশিয়েট করবে। আর মেয়েদের মতন চিন্তা , মুড বদল এই গুলো ইনিশিয়েট করবে, যা একটা মেয়েদের মন পেতে সাহায্য করবে আমাকে। একটা রেকর্ড কপি দেওয়া হলো আমাদের, যেখানে ট্রিট্মেন্ট চালু হবার পরে, আমার শরীরের মাপ এবং সুবিধা অসুবিধা প্রতি দিন রেকর্ড করে রাখা হবে। আর প্রতিমাসে আমাকে দেখিয়ে আসতে হবে কলকাতায়। আর এই প্রসেস বন্ধ করা হবে দু বছর পরে। তারপরে দেখা হবে যে আমার শরীরে কত খানি স্থায়ী ছাপ ফেলেছে হরমোন থেরাপি। সে রকম হলে আবার শুরু করা হবে। তাতে স্থায়ী পরিবর্তন হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অনেকের প্রথমবারেই স্থায়ী পরিবর্তন আসে। কারোর আসে না।

ট্রিট্মেন্ট শুরু হলো আমার। কিছু ইঞ্জেকশন আর কিছু খাবার হরমোন। আর সেই হরমোন জনিত সাইড ইফেক্ট মিনিমাইজ করতে কিছু মেডিসিন। মাস দুয়েক যেতে না যেতেই আমি বুঝতে পারছিলাম আমার পরিবর্তন। শারীরিক পরিবর্তন। মোটা হয়ে গেলাম হালকা আমি। ব্রেস্ট ভারী হচ্ছিল ধীরে ধীরে। মাঝে মাঝেই বিরক্তি ভাব আসত। মাথার যন্ত্রণা হতো। কিন্তু যা চেয়েছিলাম, সেই হতে পারার খুশী তে আমার এসবের কথা মাথাতেই আসত না। সব রকম অসুবিধা আমি মেনে নিয়েছিলাম। হ্যাঁ আমার গলা আগের থেকেও সফট হয়ে গেছিল। আমি নিজেই একটু সফট করে বলতাম। তারপরে আরো সফট হয়ে যাওয়ায়, মেয়েদের মতই লাগত আমার গলা তখন। মা কে বলতাম শারীরিক অসুবিধা গুলো। মা খুব আদর করত আমাকে সেই সময়ে। অনেক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম মা এসে শুয়ে আছে আমার পাশে।

মা, মেয়ে হতে গেলে কি কি হাইজিন মেন্টেন করতে হয়, সে সব নিয়ে আমাকে শেখাল। নিজেকে পরিষ্কার রাখা ছিল সব থেকে বড় একটা ব্যাপার। যদিও তখন আমার জেনিটাল স্ট্যাটাস এ পেনিস ই ছিল। কিন্তু আমি মায়ের কাছ থেকে সব কিছুই শিখে নিলাম। স্নানের সময়ে কি কি পরিস্কার করার দরকার। কি ভাবে লম্বা চুল সামলানো যায়, কি ভাবে ড্রেস করার দরকার। কোন কোন জায়গা ঢেকে রাখার প্রয়োজন, শাড়ি পরা সব কিছুই। একদিন বাজারে গিয়ে বেশ কিছু ব্রা কিনে দিলো মা। সাথে প্যান্টি ও। সব কিছুই শিখলাম আমি। বুঝলাম, মেয়ে হওয়া শুধু মনের খেলা নয়। যদিও আমার এই খেলা খেলতে মন্দ লাগছিল না। আমি ধৈর্য্য ধরেই সব শিখলাম। এই সবের মাঝেই ছিল আমার ফাইনাল টেন্থ এক্সাম। সাথে পুরো দমে আমার পড়াশোনা চলছিল।

রাকা প্রায় ই আসত। আমাকে লক্ষ্য করত খুব। আমার বদলে যাওয়া টা ওর কাছে আশ্চর্য্য ছিল হয়ত। কিন্তু প্রায় ই দেখতাম, পড়তে পড়তে ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে তো কোন জিনিস লোকাতাম না আমি। কিন্তু আমার ওকে ওই ভাবে দেখলেই একটা অস্বস্তি হতো। যদিও আমার মা কোন দিন ই ওর সাথে মেলামেশায় বাধা দেয় নি। কিন্তু একদিন আমাকে বকা ঝকা করে দিল মা। এটা আমার এক্সাম শুরুর দিন পনের আগের ঘটনা। আমার মা বাপি কোন দিন ই চায় নি আমি বিশাল পড়াশোনা করে , বিশাল রেজাল্ট করে সবাই কে চমকে দি। কিন্তু সেটা আমার এমনি ই হতো। কাজেই সারা রাত জেগে পড়াশোনা করলে মা রেগেই যেত।

একে তো আমার ট্রিট্মেন্ট চলছিল, তারপরে রাত জাগা, আমার একটু ইরিটেটিং লাগত প্রায় ই। রাকা পড়ত আমার সাথে। আমি নিজের মতন পড়তাম, আর রাকা কে যেগুলো পড়তে বলতাম সেই গুলো ও পড়ত। আমাদের বাড়িতেই খেত। সকাল থেকে রাত অব্দি ও থাকত। আমার ততদিনে সাড়ে তিন মাস হরমোন নেওয়া চলছে। রেজাল্ট বেশ ভালো। আমার সাইড ইফেক্ট গুলো একটু আলাদা করে নোটিং করতে বলেছিল ডক্টর রা। ব্রেস্ট বেশ বড় হয়ে গেছিল। তাই রাকা এলে বা বাপি থাকলে ,মা আমাকে ব্রা পরে নিতে বলত। আমি পরেও নিতাম। পড়তে পড়তে আমার ভালো না লাগলে, ছাদে চলে যেতাম আমি। বা ব্যাল্কনি তে বসে থাকতাম। রাকা হয়ত পড়ত তখন বা সেও চলে আসত আমার পিছনে পিছনে। কোন দিন দেখতাম, মা হেলথ ড্রিঙ্ক বানিয়ে পাঠিয়েছে ওর হাত দিয়ে দুজনের জন্য।

এই রকম ই একদিন, আমরা ছাদে ছিলাম। জানিনা সেদিনে আমার কি হয়েছিল, কিন্তু আমি রাকার সাথে উপরে সঙ্গ টা কে খুব উপভোগ করছিলাম। কথা বলতে বলতে আমাকে রাকা বলল,

-     তোকে আর চেনা যায় না। মনে হয় তুই একটা মেয়েই। আমার দেখা যে কোন মেয়ের থেকে তুই সুন্দরী।
-     সত্যি?
-     হুম।
-     তবে একটু মোটা হয়েছিস।
-     হুম , হরমোন চলছে যে। আমি রোজ সকালে উঠে দৌড়ব। ফাইনাল টা হয়ে যাক।
-     হ্যাঁ সেটা ভাল। আমিও চলে আসব। রোজ আট কিমি দৌড়লে তুই আবার আগের মতন হয়ে যাবি।
-     তুই কিন্তু এখন খেলতে যাস না। এক্সাম টা হয়ে যাক।
-     না যাচ্ছি না। মাইরি এই এক্সাম টা মিটলে বাঁচি।
-     আচ্ছা তুই আর খিস্তী মারিস না তো?
-     কেন মারব? তখন ছেলে ছিলি দিতাম গালি। এখন তুই মেয়ে। মেয়েদের সামনে কেউ গালি দেয়?

ইচ্ছে করছিল সামনে থেকেই ঝাঁপিয়ে ওর গায়ে উঠে পরি। আর গাল দুটো কে চটকে দি। কিন্তু লজ্জা লাগল। বললাম,

-     কিন্তু সেই রাকা টাই ভালো ছিল। তুই আগের মতন না হলে আমার কেমন লাগছে। আমি মন খুলে মিশতে পারছি না।
-     আচ্ছা আচ্ছা সে দেখা যাবে। সব আসতে আসতে হবে বুঝলি?

ভাবলাম ও সেই জন্যে ও অনেক দিন থেকে আমার সামনে গালি দেয় না? রাকা শেষ কথাটা  বলে খাওয়া হয়ে যাওয়া কাপ টা, ছাদের মাঝে একটা পিলারে রেখে এগিয়ে গেল সামনে দিকে। আমি ওকে দেখছিলাম। আমি ছুটে গিয়ে লাফ মেরে ওর পিঠে চেপে পরলাম।

-     আরে কি করছিস? নাম নাম।

আমি ধরে রেখেছিলাম ওকে। ছাড়ছিলাম না । কিন্তু সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা আসছে। আমাদের দেখে মা থমকে গেল। পরক্ষনেই সামলে নিল। আমি মা কে দেখে নেমে পরলাম। রাকা বেচারী ভ্যাবলাম মতন তাকিয়ে রইল। মা একবার দেখে নিল চারিদিক। কেন কে জানে?
[+] 7 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি ( চলছে) পেইজ ৩ - by nandanadasnandana - 05-02-2022, 11:27 AM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)