Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ...........................
                                        
-     আমার জন্য তোকে ঝাড় খেতে হল তাই না?

-     আরে সে ঠিক আছে। তুই ঠিক আছিস তো। ওদিকে কেউ বুঝতে পারে নি তো?

-     না না এদিকে সব ঠিক আছে। চিন্তা নেই। কালকে স্কুলে আসবি?

-     হ্যাঁ যাবো। তুই কখন আসবি।

-     ওই এগারো টার দিকে ।

-     ওকে সি ইউ দেন।

-     গুড নাইট।
ওকে গুড নাইট করে দিলাম। জানিনা কেমন একটা ভয় সর্বদা। প্রাণ খুলে না বাঁচার ভয় নাকি, সামনে আসতে থাকা অগনিত ঝড়ের ভয় বলতে পারব না।

                                                       পর্ব ছয়

ঝড় ই বটে। ক্লাস নাইন টেন আমার কাছে দুস্বপ্নের মতন কেটেছিল। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করত না। বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করত না। আমার এডোলেশনের সুবাদে শারীরিক পরিবর্তন আমাকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছিল। ছোট্ট একটা সুবিধা হয়েছিল রাকা আমার ক্লাসে চলে এসেছিল। কিন্তু  ডিপ্রেশন এতো মারাত্মক আকার ধারন করেছিল, আমার নাম্বার ডিপ করেছিল এইট পারসেন্ট। না পড়াশোনায় মন দিতে পারতাম, না গীটার এ। ফুটবল খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম একেবারে। কি করে খেলব? রাকা ছাড়া,সবাই আমাকে দেখলেই ছক্কা বলত। আমি কিন্তু চেষ্টা করতাম রিতীমত নিজেকে ঠিক রাখার। কিন্তু পারতাম না। কান্না পেত। আর বেশী কাঁদলেই, ছক্কা কথাটা চারিদিক থেকে ভেসে আসত আমার কানে। উফ দুঃস্বপ্ন ছিল আমার কাছে।
 
শরীরে পরিবর্তন টাই সব থেকে মারাত্মক হল আমার কাছে। সবাই বুঝতে পারত ব্যাপার টা। তাই আমি সবার সামনে কোন কিছু বলা বা করাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ক্লাসে দাঁড়িয়ে উঠে কিছু বলতে গেলেই, কেউ না কেউ মুখ লুকিয়ে আমাকে ছক্কা বা হিজড়া বলে দিত। ছেলেরা শুধু না, মেয়েরাও খেপাত আমাকে হিজড়া বলে। কষ্ট পেতাম যখন ছেলেদের সাথে ক্লাসের টিচার অ হেসে উঠতেন। তারপরে বকাবকি করতেন হয়ত , কিন্তু ততক্ষনে আমি বেঁচে থেকেও মরে যেতাম ক্লাসের মধ্যে। ক্লাসের এক কোনে নিজেকে আটকে নিয়েছিলাম একেবারে। আমার এই শারীরিক পরিবর্তন টা আমাকে শেষ করে দিল। আমার স্কুল, আমার ছোটোবেলা, সব কেড়ে নিল এক লহমায় যেন।

স্কুলে প্রেয়ারের সময় ও আমাকে শুনতে হতো হিজড়া কথা টা। ভাবতাম, কি মারাত্মক অপরাধ এটা। ফার্স্ট বয় কেও ছাড়ত না। আমি ফার্স্ট হতাম সেটা যথেষ্ট ছিল না আমার জন্য। আই অ্যাম নট অ্যা প্রপার ম্যান অর উওম্যান, এটাই আমার পরিচয় হয়ে গেল। মজার ব্যাপার, এই সমস্যা টা, যার হচ্ছে, তার ও বুঝতে সময় লাগে অনেক টা। ততদিনে দেরী হয়ে যায়। কিন্তু আমি তো বুঝতে পেরেছিলাম অনেক ছোট বয়সেই। আমি কেন কাউকে বোঝাতে পারলাম না? বুঝেছিলাম সেদিনে, আমি বুঝলেই হল না। বাকিদের বোঝা টাও সম ভাবে জরুরী। সেদিনে এটাও বুঝেছিলাম, আমার মধ্যে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা আছে বাকিদের মনে। নতুন, আলাদা কেউ কিছু মেনে নিতেই পারে না। সবাই চায়, সবার মতন হোক সবাই। খুব খুব ভয় পেয়ে থাকতাম আমি। কারন বাকিদের ছেড়ে দিলেও আমার ঘরের অবস্থা ছিল আরো মারাত্মক।

আমার মা বুঝতে চাইত না। বাপি বুঝত না। শুধু বকা খেতাম আমি। আর মনে হত, কেন আমি এমনি ভাবে জন্ম নিলাম? এটা মারাত্মক সমস্যা । আমি তো ছেলে, বাপি এগিয়ে আসত আমাকে বোঝানোর জন্য। আমি নিতেই পারতাম না সেটা। বাপি নিজের পুরুষত্বের গরিমায় ভরপুর একটা পুরুষ। নিজের পুরুষত্বের কাহিনী আমাকে শুনিয়ে কি হবে। আমি আর ও ঘাবড়ে যেতাম, কুঁকড়ে যেতাম ভয়ে একেবারে। বাপি, সব মিথ্যা বলে আমাকে উড়িয়ে দিত। আর আমি ততই চুপসে যেতাম। ভিতরে কি চলছে বোঝাতেই পারতাম না। বাপির ধারনা ছিল আমি বাপির মতন মনের জোর আর শারীরিক জোর রাখতে পারি না। আর তত আমাকে খেলা ধুলা তে জোর করত বাপি। সেটা আমার পক্ষে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বাপি আমাকে ছেলের মতন ট্রিট করত যা আমি নই, আর আমার মা আমার থেকে দূরে চলে গেছিল কারন মা ভাবত আমি ছেলে, আমার ব্যাপার টা বাপি ই ভালো ভাবে বুঝতে পারবে। সারাদিন এই চলত বাড়িতে। আমার কাজ ওরা কেউ সমর্থন করতই না। কি শাস্তি। আমি চাইতাম মায়ের সাথে কথা বলতে কিন্তু মা কে বাপি সামনেই আসতে দিত না। আমার শারীরিক সমস্যা গুলো সামনে চলে আসাতে এই ব্যাপার টা আরো বেড়ে গেছিল। রাতে একা শুতাম। মাকে চাইতাম সেই সময়ে। বাপি যখন বকা ঝকা করত আমাকে, আমি মায়ের দিকে চেয়ে থেকে শুধু কাঁদতাম। আর তাতেও বকা খেতাম। কি সারাদিন মেয়েদের মতন কাঁদিস?

কেমন চুপ হয়ে গেলাম আমি। একশ টা কথা বললে কেউ আমি একটা কথার উত্তর দিতাম তাও বাধ্য হলে। একটাই বন্ধু ছিল রাকা, তাকেও আসতে আসতে দূরে সরিয়ে দিলাম আমি। ও কিন্তু আমাকে দূরে সরিয়ে দেয় নি। আমি দিয়েছিলাম। ও সারা জীবন আমার পাশে থেকেছে। যখন ক্লাস টেনে উঠলাম আমি। খুব বাজে রেজাল্ট করেছিলাম। প্রথম হতাম, সেখান থেকে থার্ড হয়ে গেলাম। আমি জানতাম এমন হবে। কিন্তু কিছু করতেও পারছিলাম না।

সেদিনে ক্লাসে আমি বসেছিলাম পিছনের দিকেই। রাকা তখনো আসে নি। দেখলাম, রাগিনী আর তার দলবল ক্লাসে এল। রাগিনী কোন দিন আমাকে বিট করতে পারে নি। সব সময়ে সেকেন্ড হতো। আর আমি ওর থেকে প্রায় অনেক টা নাম্বার বেশী পেয়ে প্রথম হতাম। কিন্তু সে বারে আমি থার্ড হয়ে গেছিলাম। ও এসেই সরাসরি আমাকে আক্রমন করল।

-     কি রে এবারে কি মেরিট লিস্ট থেকে বেড়িয়ে যাবি নাকি? যা তোর বন্ধু? তুই যে থার্ড হয়েছিস এই অনেক। কি বল? 

একে বারে আমার পাশে এসে বসল ও। সাথে অনির্বান আর ময়ুর ও ছিল। এরা এতো দিন আমার পাত্তাও পেত না। কিন্তু এখন সব অন্য রকম হয়ে গেছে। আমি সাড়া দিলাম না রাগিনী কে। কোনে সরে গিয়ে বসলাম। ও আমাকে ক্রমাগত হিট করতে থাকল।

-     কি রে? বন্ধু বদলা না হলে তো ফেল করবি । ও বদলাতে পারবি না তাই না? ও বন্ধুই তো? নাকি বয়ফ্রেন্ড তোর?

আমি সাড়া দিলাম না। অনির্বান বলল,

-     রাকার ও কোন টেস্ট নেই। একটা হিজড়ার সাথে লাভ? শেষে ছক্কা?
তারপরেই ময়ূরের দিকে তাকিয়ে বলল
-     কি করে লাভ করে বলত ওরা?

পরক্ষনেই আমার দিকে তাকিয়ে ময়ূর বলল আমাকে। বলা ভালো আমাকে টোন করল,

-      আচ্ছা তুই কি বটম? না বলতে পারিস। আলোচোনা তে তো ক্ষতি নেই, কি বল?

আমি জাস্ট নিতে পারছিলাম না আলোচনা টা। পেন্সিল এর মুখ টা চেপে ধরে ছিলাম আমার আঙ্গুলের মধ্যে। মনে হচ্ছিল এই কথা গুলোর থেকে পেন্সিল আঙ্গুলের চামড়ায় ঢুকে যাবার ব্যাথা টা অনেক কম। ঠিক তখন রাকা এলো। 

সবাই চুপ করে গেল। কিন্তু ময়ুর বলে উঠল
-     বয় ফ্রেন্ড এসে গেছে।
ওরা আমার কাছ থেকে সরে গেল। রাকা আমাকে এসে জিজ্ঞাসা করল।
-     কি হয়েছে রে?

আমি কিছু বললাম না। জানতাম রাকা ওদের সাথে ঝামেলা করবে। আর এই জন্যেই আমি ওকে এড়িয়ে থাকতাম। আমার জীবন টা শেষ হয়ে যাবে বলে আমি ওর জীবন টা কে আমার পিছনে লাগিয়ে দিতে পারি না। ও যেমন আমাকে ভালবেসেছে, আমিও তো ওকে কম বাসিনি। চাইছিলাম ওখান থেকেই উঠে যেতে। আমি রাকার দিকে তাকাতেই ও আমার চোখে জল দেখতে পেল। রেগে তো গেলই তার উপরে চীৎকার শুরু করল,

-     কই এবারে বল কি বলছিলি তোরা। কিন্তু ভাই বলে দিলাম, আমি কিন্তু কোন টিচার কে নালিশ করার ছেলে নই। কোন নালিশ করব না। যা ফয়সালা হবে স্কুলের বাইরে। যদি একজন বলিস, আজকেই ফয়সালা করে দেব। দুজন বললে কাল অব্দি। তিন জন বললে আরেক দিন বেশী লাগবে আমার। কিন্তু ফয়সালা আমি করবই।

এই কথায় কেউ তো কিছু বলল না আর কিন্তু আমি ব্যাপার টা মেনে নিতে পারছিলাম না। যে ক্লাসে একদিন আমি মধ্যমনি ছিলাম, সেই ক্লাসের আমি সব থেকে অবাঞ্ছিত একজন। ভাবতেই পারছিলাম না আমার একটা শারীরিক দুর্বলতা, আমাকেই এতো দুর্বল করে দিয়ে যাবে। সেদিন স্কুল থেকে বেরিয়েও একি ব্যাপার হল। সেখানেও রাকা ছুটে এল কোথা থেকে। কোথায় লুকিয়ে ছিল কে জানে। কারন আমি ওকে এভোয়েড করতে শুরু করে দিয়েছিলাম। সেদিনে আমি বুঝলাম ও আমাকে গার্ড দিচ্ছে অনবরত।

বাড়িতে এসে মন টিকছিল না কিছু তেই। আমি পড়াশোনা করে, বসে ছিলাম নিজের ই ঘরে। আর ভাবছিলাম, এই ভাবে কি বাচা যায় নাকি। সবাই এখানে আমাকে চেনে বাপি কে চেনে। এরা কেউ ই আমাকে আমার মতন করে বাঁচা তো দূর, আমাকে সঠিক ভাবে বাচতেই দেবে না। স্কুলে, বাইরে, বাড়িতে সব জায়গাতেই আমার আলোচনা। এখন বুঝছি কার্তিক কেন আত্মহত্যা করেছিল। আমি তো তাও রাকা কে পেয়েছি। সে বেচারী কাউকেই পায় নি হয়ত। তাই আত্মহত্যা করেছিল
আমি মর্মে মর্মে ওর ব্যাথা টা অনুভব করছি। সত্যি তো না বাবা মাকে আনন্দ দিতে পারছি, না নিজেকে। রাকা টা আমার জন্য সব বাদ দিয়ে আমার পিছনে ঘুরে বেরাচ্ছে। এ জীবনের তো কোন মানেও নেই। কিন্তু মরতে তো আমি জানি না। কি ভাবে মরতে হয় তাও জানিনা আমি। নিশ্চই খুব ব্যাথা পেয়েছিল কার্তিক মরার সময়ে। চোখে জল এলো। এই মাত্র কদিনেই সবাই কেমন দূরে চলে গেল আমার। টিচার্স, বন্ধু বান্ধব, সবাই। বাবা মায়ের কথা মাথায় আসতেই চোখ থেকে জল উপচে এলো আমার। আমার মা , সেও কথা বলে না আর আমার সাথে। কি করেছি আমি? আমি তো কিছু নিজের ইচ্ছে তে করিনি। আমি এমন, তার দোষ কি আমার?

নাহ, আত্মহত্যা আমি করতে পারব না। আচ্ছা পালিয়ে গেলে কেমন হয়? কিন্তু কোথায় পালাব? কোন নতুন জায়গায়? কিন্তু সেখানেও যদি আমাকে সবাই ক্ষেপায়? বুক টা আঁতকে উঠল আমার। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম, সে তো ক্ষেপাবেই। চেনা লোকেরাই ছেড়ে কথা বলছে না আর অচেনা লোকজন আমাকে কি ছেড়ে দেবে? কিন্তু একটা শান্তি, আমি তো ওদের কাউকে চিনি না। তাই আমার দুঃখ টাও হবে না। চেনা মানুষ অচেনা হলে সব থেকে বেশী কস্ট লাগে মনে হয়। আবার বাপি আর মায়ের কথা মনে পরল আমার। এতো টা অচেনা হয়ে গেল ওই দুজনে? আমার সাথে কথা ঠিক করে কেউ বলছে না। আজ থেকে একবছর আগেও, আমার ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে দুজনায় কত চিন্তিত ছিল। কিন্তু আজকে আমি এতোই ঘেন্নার পাত্র হয়ে উঠলাম? বুকের বাঁ দিকে একটা ব্যাথা উঠল মনে হল। চিনচিন করল অল্প।

শুধু খাবার সময়ে ছাড়া আমি বাইরে বেরোন বন্ধ করে দিলাম। স্কুলে যাই, চলে আসি কোন রকমে ক্লাস কটা করে। বাড়িতে মায়ের সাথে কথা বলতে চাই , কিন্তু মা কথা বলছে না। জানিনা কি শাস্তি দিচ্ছে আমাকে আমার মা। বাপির সাথে কথা বলতে গেলেই পুরুষত্বের গল্প শুনছি। আর ভালো লাগছে না। পালিয়ে যাওয়া টা আমি এক প্রকার স্থির করেই ফেললাম। ভাবলাম যা হয় হবে। পালাই। এই মানসিক যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না আমি। কিন্তু পালাব যে টাকার দরকার তো। যে দিন পালাব সেদিন খেয়ে দেয়ে উপরের আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে নিলাম আমি। জানিও না কত নিতে হবে। একটা পাঁচশ টাকার থোক ছিল বের করে নিলাম। স্কুল ব্যাগ এ কিছু জামাকাপড় নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। পিছন দিকে জানালার শেড গুলো নামার পক্ষে ঠিক ছিল। কারন দুপুরে আমি ভাল করে দেখে নিয়েছিলাম। একটা সাদা ধুতি ছিল সেটা কে রেলিং এর সাথে বেঁধে, ধীরে ধীরে নেমে, আমগাছের ডাল টা পেয়ে যেতেই তরতর করে নেমে এলাম আমি। ওটা আমার অভ্যেস ছিল ভালই। অনেক বার আম গাছে উঠেছি নেমেছি। রাত বলে সমস্যা হয় নি। কারন পিছনের গেটের আলো টা জ্বলছিল।

ওখান থেকে হেঁটে তিনমাথার মোড় এসে, একটা দূর পাল্লার বাস পেলাম, যেটা রুদ্রপুর স্ট্যান্ড যাচ্ছিল। উঠে পরলাম আমি ওতে। ইচ্ছে ছিল রুদ্রপুর থেকে শিলিগুড়ি যাবো। ওখান থেকে কলকাতা ট্রেন। জানিনা কি হবে। এখন তো বেড়িয়ে পরেছি আমি। উপায় নেই ফেরার। এমনি তেই ভয় পেয়েছিলাম আমি। বাসে উঠে আরো মারাত্মক ভয় করছিল আমার। বাসের অনেক লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছি, এরা নিশ্চই ভাবছে , এই রাতে এতো ছোট একটা ছেলে কোথায় যাচ্ছে? আর আমার অতো ভয় করতে লাগল। রুদ্রপুর স্ট্যান্ড এ এসে আমি শিলিগুড়ির বাসের খোঁজ করতেই জানলাম, ভোড় চারটের আগে কোন বাস নেই। আর এখান দিয়ে যা ট্রেন যায় কোন টাই দাঁড়ায় না রাতের বেলা। সব মেল ট্রেন। লোকাল সকাল ছটার আগে নেই। তাই  ভাবলাম, যদি সাতটার আগে বাস ধরে পৌঁছে যাই শিলিগুড়ি তবে দার্জিলিং মেল পেয়ে যাবো আমি কলকাতা যাবার।

অতো ভাবিনি কলকাতা গিয়ে কি করব আমি। সেই সময়ে ভাবার পরিস্থিতিও ছিল না। বয়েস অল্প ছিল। শুধু মনে হয়েছিল পালিয়ে গেলে হয়ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বুঝিনি শত্রু বাইরে নেই আছে ভিতরেই। যাক সে কথা। টিকিট কেটে, বসে গেলাম একটা বেঞ্চ এ। মনে পরতে লাগল বাড়ির কথা। মায়ের কথা বাপির কথা। চোখে জল। যখন আমি নীচে নামলাম, বাপি আর মা তখনো ঘুমোয় নি হয়ত। আলো জ্বলছিল, নীচে ডাইনিং এ।

কত রকম লোক এখানে। কেউ কেউ তো কেমন ভাবে একটা দেখছে আমাকে। বাড়ি থেকে বেরোনর সময়ে যে মনের জোর টা ছিল, এখন আর নেই সেটা। তখন বাসে আসতে আসতে অর্ধেক টা চলে গেছিল, এখন আশে পাশের লোক জন দেখে বাকি টাও হাওয়া হয়ে গেল আমার। ভয় লাগছে কেউ যদি আমাকে তুলে নিয়ে যায়। শুনেছি বিদেশে বাচ্চা বিক্রীও হয়। মনে হচ্ছে কেউ যদি টাকার জন্য আমাকে মেরে ফেলে। বুকের ভিতরে ভয় টা দম ধরে বসে গেল একেবারে। তাও মনে হচ্ছে ফেরার উপায় নেই। অনেক টাকা চুরি করে পালিয়ে এসেছি। বাপি কি আর আমাকে আস্ত রাখবে নাকি? মা কি আমাকে ছেড়ে কথা বলবে? নাহ ফেরা যাবে না আর। যা হয় হোক।
জানিনা কতক্ষন কেটেছে। চিন্তা আসে, আর চোখ জলে ভরে যায়। আবার মুছে ফেলি আমি। কিছুক্ষণ পরে আবার চিন্তা ভিড় করে মন জুড়ে। ভাবছি আর পারছি না, এবারে চারটে বেজে যাক। বাস টা ছেড়ে দিক। ঠিক তখনি, পিছন থেকে একটা হাত আমার কাঁধে পরল।

-     মা গো!

বলে ভয়ে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখি রাকা। বলে বোঝাতে পারব না, ওকে দেখে মনে হল, এতো খুশী কোনদিন ও আমি হইনি। বুকের মাঝে যে ভয় টা জমে ছিল, বেড়িয়ে গেলো ওকে দেখেই। কিন্তু সেটা ক্ষণিকের জন্যে। পরক্ষনেই মনে হল এ আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে। বাপি মা এর কাছে গেলে শুধুই বকা জুটবে আমার। আমি ততক্ষনে সাহস পেয়ে গেছি। আর তাতেই বুকে এক রাশ অভিমান চলে এলো কোথা থেকে। ওকে বললাম,

-     তুই এখানে কি করছিস?

ও আমার কথার উত্তর দিল না। বলল,

-     তুই পালিয়েছিস কেন বাড়ি থেকে?
-     আমার ইচ্ছে। জানিস না নাকি আমার কি অবস্থা এখন?
-     তোকে না বলেছিলাম, মনে মধ্যে যা চলবে আমাকে বলবি?
-     বলিনি আমার ইচ্ছে। সারাজীবন কি তুই আমাকে এই ভাবে গার্ড করতে পারবি নাকি?  তুই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এলি কেন? আমি তোর সাথে ফিরবই বা কেন? তুই যা।
-     আমি একা এসেছি কে বলল তোকে? ওই দ্যাখ।

ওর আঙ্গুল বরাবর তাকিয়ে দেখি আমার মা আর বাপি দাঁড়িয়ে আছে। সাথে, রাকার বাবা ও। পাশের বাড়ির চন্দন কাকু ও এসেছে। ওদের দেখেই আমার লজ্জায় ,কস্টে মরে যেতে ইচ্ছে হল। আমি ততক্ষনে ভবিষ্যৎ দেখে নিয়েছি। এরা সবাই জানবে আমি পালিয়েছি। আর সেটা জানলে, এটাও জানবে আমি কেন পালিয়েছি। সেই কেনর উত্তর আমার বাপি আর মা সহ্য করতে পারবে না। আমার হয়ত আজকে কপালে মার জুটবে। ইশ কেন আগেই চলে গেলাম না অন্য কোন বাস ধরে। আমি তাকিয়ে রইলাম সামনের দিকে। আমার মা এক পা এক পা করে আমার কাছে এল। বসল আমার সামনে।মাকে দেখে,  আমার না আর কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। মায়ের বুকে মাথা দিয়ে কেঁদে উঠলাম ফুঁপিয়ে। বকুনি খাবার থেকেও যেটা আমাকে কাঁদাল সেটা হলো প্রায় আট মাস পরে আমি মায়ের বুকে মাথা দিলাম।  

মা আমাকে তার থেকেও বেশি আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠল জোরে। আশে পাশের নিশ্চই সবাই ভাবছে এদের মা ছেলের হল কি? কতক্ষন ছিলাম জানিনা মায়ের বুকে। বাপির গলা শুনে আমার ভয় টা বেড়ে গেল। বাপি এগিয়ে আসছিল। মা কে বলল,

-     সর আমাকে কথা বলতে দাও ওর সাথে।

বাপির গলায় কোন রাগ বা গম্ভীরতা ছিল না। বাপির গলা তেও আমার জন্য আদর ই ঝরে পরছিল। আমি তাও নিতে পারলাম না। মাকে আরো জড়িয়ে ধরলাম আমি। যেন বলতে চাইলাম মা কে- না মা তুমি থাক আমার কাছে। প্লিস।

মা হয়ত অনেক আগেই বুঝে গেছিল। বাপির কথায় আমাকে ওই ভাবে আঁকড়ে ধরেই, জোরে বাপি কে বলে উঠল,

-     খবরদার, আমি আছি তো? কিচ্ছু দেখতে হবে না তোমাকে ওর ব্যাপারে আর। কোন কথা বলতে হবে না তোমাকে। গত আট মাস তো আমি ওর সাথে কোন কথাই বলিনি, তোমার কথায়। কি হল? ছেলেটা আমার চলে যাচ্ছিল। কি যে হত, রাকা ওকে খুঁজে না বার করলে কে জানে। ইউ স্টে আওয়ে ফ্রম দিস। তোমাকে আর কিচ্ছু করতে হবে না।

মা আমার পিঠে মাথায় খুব আদর করছে আর মাথায় চুমু খাচ্ছে। আর আমি মাকে আঁকড়ে আঁকড়ে ধরছি আর ফুঁপিয়ে কাঁদছি। আর মা বলে চলেছে বাপি কে।

-     আট মাস ধরে তুমি ওকে বকলে। কোন দিন ওর কথা শুনলে না অব্দি। একবার যদি শুনতে ছেলেটা আমার এই আট মাস মন গুমরে থাকত না। আজকে আমাকে ছেড়ে চলে যাবার কথাও ভাবত না। ভাগ্যিস আজকে তোমাকে লুকিয়ে আমি ওর সাথে কথা বলতে গেছিলাম , তাই তো জানলাম ও বাড়িতে নেই। কিচ্ছু দেখতে হবে না তোমাকে। কিচ্ছু না। আমার ছেলে আমাকে বুঝতে দাও।

যখন আমি উঠলাম বাড়ি ফিরব বলে তখন উঠতে গিয়ে দেখি, রাকা আমার হাত টা ধরে রেখে দিয়েছে শক্ত করে। আমি তাকাতেই বলল,

-     কাকিমা আপনারা গাড়ি করে যান। আমার বাবাকে নিয়ে নিন। আমি ওকে নিয়ে আসছি।

মা যেন আমাকে ছাড়তে চাইছিল না। তারপরে হয়ত ভাবল, রাকার জন্যেই তো আমাকে খুঁজে পেয়েছে, তাই বলল,
-     শিওর?
-     হ্যাঁ কাকিমা। আমি নিয়ে আসছি ওকে। ওর সাথে হিসাব কিছু বাকি আছে।
আমার মা হেসে বলল
-     আচ্ছা তুমি ওকে নিয়ে এস।
 
বাপি মা, রাকার বাবা, আর চন্দন কাকু , আমাদের বড় গাড়ি টায় চলে গেল। আমি রাকার সাথে স্কুটার এ বসে পরলাম। ও চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছে। আমার ভয় লাগছে ওকে এবারে। বকবে ও। খিস্তি দেবে অনেক। আমি আগেই সারেন্ডার করলা্‌

-     আর বকিস না আমাকে প্লিস।

আমার কথা টা শুনে ও বাড়ির একটু আগে গাড়ি টা দাঁড় করাল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-     গান্ডু তোকে না বলেছিলাম আমাকে বলতে?
-     তোকে বললে তো আমাকে তুই আটকে দিতিস। আর তুই কত দিন আমাকে গার্ড দিবি।
-     দরকারে সারা জীবন দোব।
-     তাই হয় নাকি। তোর ও তো জীবন আছে। তোকে ও ভালো খেলতে হবে।
-     যখন চলে যাচ্ছিলি, তখন খেয়াল ছিল না তোর?

ওর কথা টা আমাকে একেবারে মরমে মেরে ফেলল। সত্যি তো, চলে গেলে সব শেষ হয়েই যেত। আর আমি জানি এই খচ্চর ছেলেকে চেপে না ধরলে পড়বেও না খেলবেও না। বললাম,

-     আচ্ছা আচ্ছা ভুল হয়েছে আমার।
-     বাল। আমাকে ভরসা তুই করিস না আমি জানি
-     কেন আবার ওই সব বলছিস?
-     ঠিক ই বলেছি। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।
-     সরি আর এমন করব না। এবার থেকে তোকে কথা দিলাম আমি, যা মনে আসবে তোকে বলব।
-     মনে থাকবে?
-     হ্যাঁ চল এবারে
 
বাড়ি পৌঁছে দেখলাম, রাকার মা ও এসেছে। আমার ভাই বোন কে রাকার মায়ের জিম্মায় দিয়ে আমার মা আর বাপি বেরিয়ে পড়েছিল। চন্দন কাকু চলে গেল। আমার বাপি থম হয়ে আছে। কোন কথা বলছে না, মা বাপি কে ওই সব বলার পরে। রাকার বাবা মা চলে যেতে চাইল। মা যেতে দিল না। বলল,

-     অনেক রাত হয়েছে। আমি চা করি। খান। দিয়ে এখানেই গড়িয়ে নিন। সকালে যাবেন।

রাজী হচ্ছিল না ওরা। কিন্তু রাকা কে দরকার বলে ওনারা রাজী হয়ে গেলেন। মা ওনাদের উপরের ঘরে শোবার ব্যবস্থা করে দিল। আমাকে মা এক গ্লাস কমপ্লান দিয়েছে আমি খাচ্ছি। রাকা কেও দিয়েছে মা। আমি খাচ্ছি না শুধু দেখছি আর সোফার উপরে বসে আছি। রাকা খেয়ে দেয়ে উপরে উঠতে যাবে, মা রাকাকে বলল,

-     রাকা তুই থাক।

বাপি আমার উল্টো দিকের সোফায় বসে আছে একেবারে স্ট্যাচু হয়ে। রাকা রয়ে গেল। আমার সোফা তেই একটু দূরে বসল। মা আমাকে জিজ্ঞাসা করল,

-     শিব, এবারে বলত সোনা , কি হয়েছে তোর। কি সমস্যায় আছিস তুই। আমাকে বল। বাপির ভয় পাস না। আমি আছি বল সোনা।

আমি আরো কুঁকড়ে গেলাম। ইচ্ছে করছিল মা কে আবার জড়িয়ে ধরি আমি। আর মা সব টা বুঝে নিক নিজেই। যেমন বুঝে গেল বাস স্ট্যান্ড এ। মা মনে হয় বুঝল। এসে ঠিক আমার পাশে, সোফার মোটা হাতলে মা বসল। আমি মা কে জড়িয়ে ধরলাম। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। মা বলল আমাকে,

-     না না কাঁদে না। কাঁদে না সোনা। তুমি তো আমাদের গর্ব। কান্না কীসের? কটা মায়ের ছেলে ফার্স্ট হয়? কটা মায়ের ছেলে এমন লক্ষী সোনা হয়? কান্না কেন? কাঁদে না একদম কাঁদে না।

মা আমার চোখের জল মোছাতে লাগল নিজের আঁচল দিয়ে। আমার কাঁধে রাকার হাত পেলাম। বুঝলাম আমাকে ও বলতেই বলছে। মা আমাকে স্বাভাবিক করার চেস্টা করল। বলল,

-     জানিস আমাদের কি অবস্থা হয়েছিল? আমার মনে হচ্ছিল আমি আর বাঁচব না তোকে দেখতে না পেলে।

আমি আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।মাকে আঁকার করে ধরলাম আমি।  কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,

-     তবে আমার সাথে কথা বলতে না কেন? আমি কত কস্ট পেয়েছি এই আট মাস। আমার উপরে কত কিছু হয়ে গেছে এই আট মাসে। কেন তুমি আমার কাছে আসনি?
 
মা চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। মা ও কাঁদছে। ফোঁপাচ্ছে না মা কিন্তু গলা শুনলেই আমি বুঝতে পারছি মা কাঁদছে। তারপরে বলল,

-     ভুল করেছি সোনা। এমন ভুল আর কোন দিন ও করব না। আর কেউ আমাকে তোর থেকে দূরে রাখতে পারবে না। কিন্তু তুমিও কথা দাও, সব বলবে আমাকে? আমাদের ছেড়ে যাবার কথা কোন দিন ও ভাববে না আর?

আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদছিলাম। আর ওই ভাবে ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম – আমি এমন ভাবনা আর ভাবব না। মা আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছিল পাগলের মতন। মা আমার ঘাড় নাড়ানো দেখে বলল

-     এই তো সোনা আমার। ভাগ্যিস আমি বুদ্ধি করে রাকা কে ফোন করলাম। বেচারী তো একেবারে পড়ি মরি করে ছুটে এসেছে এই রাতে। ওকে যে আমি কি বলব? ভাব কত ভালবাসে তোকে ও। কত ভালোবাসে আন্টি আঙ্কল। রাকাই এদিক ওদিক ভেবে বলল আমাদের সবার আগে বাস স্ট্যান্ড এ যাওয়া উচিৎ। ওখানে গার্ড করে রাখলে আমরা ওকে ওখানেই পাব।পাশের বাড়ির চন্দন কাকু কে বলতেও লাগে নি। নিজেই এসে জিজ্ঞাসা করল। আমরা বলতেই একেবারে পাগলের মতন দৌড়ে এল। আর তুই সব ছেড়ে চলে যাচ্ছিলি। হ্যাঁ রে মায়ের কথা মনে পরে নি?

আমি আবার ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললাম, মায়ের কোলে মাথা টা গুঁজে রেখেই। মনে মনে ভাবলাম, ওই খচ্চর ছেলে, ফুটবল বুদ্ধি লাগিয়েছে আমাকে খুজে বের করতে। আমার ঘাড় নাড়ানো দেখে মা বলল,

-     পাগল। দ্যাখ তোর বাপি কত কাঁদছে। তুই নেই দেখে তোর বাপি ওখানেই কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিল।

আমি আবার থমকে গেলাম। বাপির নাম শুনেই কেমন ভয় টা বেড়ে গেল। মা হয়ত বুঝল সেটা। বাপি কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-     কি গো তুমি এসো না এখানে। ছেলেটা ভয় পাচ্ছে তো?

আমি আরো ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম একেবারে। মাকে আরো আঁকাড় করে ধরলাম আমি। কিছু পরেই মাথাতে হাত পেলাম আমি। সেটা বাপির বুঝতে পারলাম। কোন অভিমান নেই সেই আদরে। সেই ছোট বেলায় ঘুম থেকে তোলার সময়ে যেমন আদর করত বাপি তেমন। মুখ তুলে চাইলাম আমি। তাকিয়ে দেখলাম বাপির চোখে জল। কোন দিন ও দেখিনি আমি জ্ঞান হয়ে থেকে। সেই দেখে কি কোন ছেলে থাকতে পারে? বাপিকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। বাপিও আমাকে জড়িয়ে ধরল। যত কান্না বাপি কাঁদছে, তত আমি কাঁদছি।

কান্না কাটি হয়ে গেলে আমি একটু স্বাভাবিক হলাম। বলতে হবে আমাকে আজ। রাকার হাত টা ধরলাম আমি। শুরু থেকে বলতে শুরু করলাম আমি। আমার ভাবনা, আমার চিন্তা। গত আট মাসে আমার শারীরিক পরিবর্তন জনিত সমস্যা। স্কুলের সমস্যা। ঘরের সমস্যা। রাকার মারামারি আমাকে নিয়ে। সব কিছু। বলা সহজ ছিল না আমার কাছে। কিন্তু বললাম মা কে। শুধু আমার মেয়ে সাজার ঘটনা গুল এড়িয়ে গেলাম মায়ের কাছ থেকে। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে রইল। হয়ত বোঝার চেষ্টা করছিল মা আমার ভিতরের কস্ট টা।

আমি বলার পর, অনেকক্ষণ চুপ ছিল সবাই। মা ও চুপ বাপিও তাই। কেউ হয়ত বুঝে উঠতে পারছে না কি করা উচিৎ আমাকে নিয়ে। তবে প্রথম কথা বলল রাকা। ও মা কে বলল,

-     কাকিমা, আমার মনে হয় ওকে কলকাতা নিয়ে যান আপনারা। কোন সাইকোলজিস্ট  দেখান প্রথমে।
-     কেন? সাইকোলজিস্ট কেন?
-     আমি জানি বলেই বলছি। কি ভাবে জানি জিজ্ঞাসা করবেন না। কিন্তু বড় কিছু হবার আগে শুরু টা সাইকোলজিস্ট দিয়ে করানো উচিৎ।

মা কি ভাবছে জানিনা। কিন্তু আমার রাগ ধরছে রাকা কে। আমি কি পাগল নাকি? এতোদিন আমার সাথে মিশে ওর এটা মনে হয়েছে? মনে একটা কেমন কস্ট হল। কিছু বলতেও পারছি না। আমি কিছু বলার আগেই বাপি বলল রাকা কে,

-     কেন ও কি পাগল বলে তোমার মনে হয়? কি বলছ তুমি? তুমি না ওর বন্ধু।
আমার শুনে বেশ লাগল কথা টা। আমাকে পাগল ভাবে ও কোন সাহসে? কিন্তু আমি অপেক্ষা করে রইলাম রাকা কি বলে। ও বাপি কে বলল,

-     কাকু আমি এর অনেক টা অংশ দেখেছি, তাই বলছি। পাগল হলেই সাইকোলজিস্ট দেখায় এমন না। ওরাই বুঝতে পারবে ওর মধ্যে কতখানি জেন্ডার ডিসোর্ডার আছে।
-     জেন্ডার ডিসোর্ডার? সেটা কি?
-     বলতে পারব না কাকু। কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি বলতে পারছি না কি ভাবে জানলাম, কিন্তু আপনি আর দেরী করবেন না।
-     অ্যাঁ?
-     হ্যাঁ কাকু। আপনি ওকে নিয়ে কলকাতা চলে যান।

আমি তখনো বুঝতে পারছি না রাকা কি বলছে। আমার মা ও চুপ। হয়ত রাকার কথা ভাবছে। আমি কি তবে পাগল? নিজেকে মেয়ে ভাবছি? আমি সত্যি পাগল হয়ে গেলাম? না না এতো ভাবতেও পারছি না। এতো দিন রাকা আমার পাগলামো তে সাথ দিচ্ছিল মাত্র? এ কি ভাবে হয়?

চার পাঁচ দিন পরে আমাদের কলকাতা যাবার ঠিক হল। আমার মনে অনেক ঝড়। নিজেকে পাগল জানতে বা ভাবতে কার ভালো লাগে? রাকার সাথে রাগে আমি কথাও বলিনি এই কদিন। বাইরে তো বেরোই ই নি। যেদিন কলকাতা গেলাম সেদিনে ওকে মেসেজ দিয়ে গেলাম ফোনে,

-     চললাম, পাগলের ডাক্তার এর কাছে ট্রিট্মেন্ট এর জন্য।  আমাকে পাগলা গারদে রেখে দিয়ে আসতে বলিস আমার বাবাকে। তাতেই তো তোর আনন্দ। তাই পা। আর কোন দিন কথা বলব না তোর সাথে। কোন দিন কথা বলতে আসবি না আমার সাথে। তোকে বন্ধু জানতাম। আজ থেকে আর জানলাম তুই আমার বন্ধু নোস। আমার শত্রু।


আমি দেখিও নি ও কি লিখেছে। আমার বড় মামা থাকে কলকাতায়। ওখানেই উঠলাম। মা নিশ্চই কিছু বলেছে বড় মামা কে। ওখানে গিয়ে বুঝলাম না সেটা। মামার মেয়ে টিনা আমার ই সমবয়সী। পরের দিন আমার এপয়েন্টমেন্ট ছিল। আমি সাড়া সন্ধ্যে, আর প্রায় রাত বারোটা অব্দি ওর সাথে গল্প করলাম। অনেক দিন পরে আমি আনন্দে ছিলাম কথা বলে। পড়াশোনা নিয়েই বেশি কথা হল। সামনেই নাকি ওর ছোট কাকার বিয়ে, আমাকে আসতেই হবে এমন ও ঠিক হয়ে গেল। যখন মায়ের কাছে এসে শুলাম তখন দেখলাম প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে।
[+] 9 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি ( চলছে) পেইজ ৩ - by nandanadasnandana - 04-02-2022, 11:28 AM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)