03-02-2022, 11:04 PM
৩
আগের পর্বের পর......
এবারে আসি রাতের ঘটনায়। সেদিন একটা ফিল্ম দেখছিলাম ফোনে তাই কানে হেডফোন লাগানো ছিল। বেশ ভালো লাগছিলো বইটা তাই আর বন্ধ করতে ইচ্ছা করছিলোনা। শেষ হতেই ফোন রেখে কান থেকে হেডফোন সরাতেই একটা আওয়াজ কানে এলো। কটমট করমর জাতীয় ... যেন কেউ শক্ত কিছু চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। এ আওয়াজ তো আমার... শুধু আমার কেন সবার জানা। মাংসর হাড় চেবালে এমন আওয়াজ আসে।
- কি বলছো গো? মাংস চেবানোর আওয়াজ?
আর নাতো কি? কিন্তু আমি প্রথমে ঠিক করে না বুঝলেও ভালো করে সুনি.... হ্যা... এতো একদম মাংসর হাড় চেবানোর আওয়াজ। এই আওয়াজ শুনে যতটা না ঘাবড়ালাম তার থেকে বেশি ঘাবড়ালাম এটা ভেবে যে ঐ আওয়াজ যেন আসছে...... রান্নাঘর থেকে!
আমি ভীতু মানুষ নই আবার সতর্কও বটে । তেমন একটা বড়ো ব্যাপার না জানি ......তাও কেমন যেন বুকটা হটাৎ কেমন করে উঠলো। একটা ভয় কি পেয়ে বসছে আমাকে? নানা.... তা হলে চলবেনা। আমি তাকালাম একবার পাশে। ছেলে আর বৌ ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে। ওই আবার.... কটমট আওয়াজ। আমি একবার ভাবলাম ধুর হবে কিছু শুয়ে পড়ি.... কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারছিনা আমি। ভয়টা কেমন চেপে বসছে। সেটা হতে দেওয়া উচিত হবেনা। একবার পেয়ে বসলে রাতে একা বাথরুমে যেতেও ভয় লাগবে। সেটা বিট্টুকে মানায়, বিট্টুর বাবাকে নয়।
উঠে পড়লাম আমি। যাই একবার দেখে আসি... বাথরুমও করে আসবো। সাবধানে বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে। খুব সাবধানে ছিটকিনিটা খুলছিলাম যাতে আওয়াজ না হয়। কিন্তু কি হলো জানিনা..... হটাৎ সব থেমে গেলো। একদম নিস্তব্ধ.... শান্ত। যেন কেউ একজন বুঝে গেছে এবারে ওই দরজা খুলে কেউ এদিকে আসবে।
তুই বিশ্বাস করবিনা.... দরজা খুলে ওপাশে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লাম। যেন ভেতর থেকে কেউ মানা করছে সামনে যেতে। হয়তো ভয় এর কারণ। জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে খুলে দিলাম দরজা। কই? কোথায় কি? একদম শান্ত আর অন্ধকার। হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে দিলাম আলো জ্বালিয়ে। অন্ধকার কেটে গেলো। সাথে ভয়টাও। আলোর সামনে যেন মানুষ সাহস ফিরে পায়। তাই আমিও একটুও না ঘাবড়ে এগিয়ে গেলাম সামনে। এদিক ওদিক দেখলাম। না.... কিচ্ছু নেই... শুধু ডাস্টবিনের ঢাকনাটা একটু সরানো। ভেতরে একটা প্লাস্টিক... ওতেই আজকের সব এঁটো গুলো ফেলা হয়েছে।
ও... তাহলে ইঁদুর.... ওই ব্যাটাদের কাজ। এখানে আসার পর পর আমিও দেখেছিলাম কয়েকবার। এ কাজ ওদেরই।
আমি অবাক হয়ে বললাম - ইঁদুর? কিন্তু... ইঁদুর ঢাকনা খুললো কিকরে?। সুভাষ দা দু আঙুলের মাঝে সিগারেটের শেষটুকু ধরে বুড়ো আঙুলের সাহায্য নিয়ে ওটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো - আমি ওতো ভাবিনি.... বা বলা উচিত ভাবতে চাইনি রে.... ব্রেন হয়তো তখন একটা লজিক খুঁজে পেয়ে আর অন্য কিছু ভাবতেই চাইছিলো না। হয়তো একটু ফাক করাই ছিল... ইঁদুর ওটায় উঠে আরও ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে খাচ্ছিলো... দরজা খোলার হালকা আওয়াজই কেটে পরে। যাইহোক....শেষমেষ বাথরুম করে আবার ফিরে আসলাম. লাইট নিভিয়ে দরজা লাগিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম।
সকালে যখন অফিসের জন্য বেরোচ্ছি তখন বাড়ির মালিক অনিমেষ কাকুর সাথে দেখা। উনি বোধহয় বাজারে যাচ্ছেন। আমায় দেখে হেসে এগিয়ে এসে বললেন - কি সব ঠিকঠাক আছে তো? কোনো অসুবিধা নেই তো.... কিচ্ছু হলে বলবেন কিন্তু। আমিও ভদ্রতার খাতিরে দাঁত কেলিয়ে হেসে নানা কাকু সব ঠিকাছে.... এতো সুন্দর একটা বাড়ি পেয়েছি... অসুবিধা কেন হবে? এসব বলে ওনার সাথেই গল্প করতে করতে বেরিয়ে গেলাম। তোর মনে আছে? সেদিন আমাদের মালের পারচেস নিয়ে মিটিং শেষ করে আমরা কজন ওখানেই কিছুক্ষন বসে গল্প করছিলাম আর আমার একটা ফোন আসাতে বেরিয়ে গেলাম... মনে আছে তোর?
- হ্যা হ্যা.... তুমি একটু পরেই ফিরে এলে..... আমি তো জিজ্ঞেস করেছিলাম বাড়ি থেকে? তুমি জাস্ট হ্যা বলেছিলে। সেদিন আমার তেমন কিছু মনে না হলেও ভেবেছিলাম বৌদি তো এখন ফোন করেনা তাহলে হটাৎ? অবশ্য তুমি এসে আবার আমাদের জয়েন করায় ভেবেছিলাম এমনিই ফোন করেছিল.... সিরিয়াস কিছু নয়।
সুভাষ দা বললো - চল নিচে যাই.... বাকিটা নিচে যেতে যেতে বলি।
আমরা নেমে আসতে লাগলাম। হাত ধুয়ে এসে নিজের জায়গায় এসে আবার বসলাম আমরা। সুভাষ দা মাউস টা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই বললো -
- সিরিয়াস বলতে তুই যা ভাবিস তেমন কিছু না হলেও.... যা হবার শুরু হয়ে গেছিলো।
- কি দাদা?
- সেদিন বাবা ব্যাংকে গেছিল। বেশ লাইন ছিল বলে ফিরতে কিছুটা দেরী হয়। বাবা ফিরে এসে স্নান করতে যাচ্ছিলো। তোকে তো বললামই যে রান্না ঘর ক্রস করে ওদিকে যেতে হয়। বাবা লাইট না জ্বালিয়েই সোজা বাথরুমের দিকে যাচ্ছিলো। সেই সময়ই কি একটা কাজে ছন্দা ওদিকে যাচ্ছিলো। ওর সামনেই বাবা নাকি প্রায় ছিটকে সামনের দিকে পড়তে যাচ্ছিলো। বাবা ভাগ্গিস হাত বাড়িয়ে সামনের দেয়ালে হাত রেখেছিল নইলে ভালোই লাগতো হয়তো। ছন্দা তো দৌড়ে যায় বাবার দিকে। বাবাকে এনে বসায় ঘরে। বৌমার চিৎকার শুনে তার শাশুড়িও আসে ছুটে। কিন্তু বাবা ব্যাপারটা সামলে নেয়। নইলে মা আবার একটুতেই চিন্তায় পড়ে যায়। কিন্তু আবার যখন বাবা স্নান করার জন্য যাচ্ছিলো তখন বাবা ছন্দাকে বলেছিলো যে সে পায়ে পা লেগে পড়ছিলোনা... আর ওদিকে কোনো কাপড়ও পড়ে নেই যে ওতে পা আটকে বা স্লিপ খাবে.... বাবার মনে হল একটা পা কে যেন..... হটাৎ মনে হলো কেউ যেন বাঁ পাটা ধরে নিয়েছিল তাই সামলাতে না পেরে হুড়মুড় করে সামনের দিকে এগিয়ে গেছিলো বাবা। সেটা ছন্দাও দেখেছে কিন্তু ওতো তখন ওর মাথাতেই আসেনি। সেটাই ও তখন ফোনে জানায়। আমিও তখন অফিসে.... তাই ওকে যতটা সামলানোর জন্য বলা যায় সেই আশ্বাস দিয়ে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছিলাম... বলতে পারিস হয়তো নিজেও ঠিক মানতে চাইছিলাম না ওসব। বাড়ি ফিরে আমিও বাবাকে সব জিজ্ঞাসা করি.... ওই একই কথা বাবা বলে... তার মনে হয়েছিল কেউ যেন পা ধরে নিয়েছিল।
- কি বলছো গো? একটা বড়ো দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারতো সেদিন! ভাগ্গিস ওনার হাত দেয়ালে ঠেকেছিল আর বৌদিও ধরে ফেলেছিলো।
- হুমমমম... জানিস এর আগেও একবার আমাদের নিজেদের বাড়িতে বাবা একবার পড়ে গেছিলো.... সেটায় বাবার পায়ে একটু লেগেছিলো কিন্তু সেটা স্লিপ খেয়ে পড়েছিল বাবা.... ওটাও দুর্ঘটনা... কিন্তু ওটা ন্যাচারাল ছিল.... হতেই পারে সেটা কিন্তু...... কিন্তু এটা যেন কেমন অদ্ভুত তাইনা? অবশ্য পা কোনো কারণে ফলস হতেই পারে... কিন্তু তাও.....সে যাইহোক সেই ঝামেলা তো কাটলো। এরপর ঘটলো মায়ের সাথে আরেক কান্ড।
- কাকিমার আবার কিছু......!!
সুভাষ দা হালকা হেসে বললো - আরে নানা... ওসব তুই যা ভাবছিস তেমন কিছু নয়, এটা পরশুর ঘটনা। মায়ের আবার একটু পেটের প্রব্লেম আছে... ওই যা হয় আরকি.. মাঝে মাঝেই যেতে হয় বাথরুমে। তো পরশু সন্ধ্যাবেলায় ওই মায়ের ফেভারিট সিরিয়াল শুরুর আগের ব্যাপার এটা। মা গেছিলো টয়লেটে। আমি ছেলেকে নিয়ে আমাদের ঘরে, ছন্দা বোধহয় টিভির ঘরেই ছিল আর বাবা বেরিয়েছিল..... জেঠুর বাড়ি গেছিলো।
ছেলেকে অংক করাচ্ছি এমন সময় সুনি মায়ের আওয়াজ বাথরুম থেকে। মা কি কিছু বলছে? আমাদের কাউকে ডাকছে? বিট্টু ঠাম্মির ডাক শুনে অমনি নেমে দৌড়ে গেলো বাথরুমের দিকে। আমিও গেলাম তখনই। কদিন আগেই বাবার সাথে যা হল তাই একটা ভয় তো ছিলই..... আমিও এগিয়ে গেলাম ঐদিকে। দেখি বিট্টু বাইরে থেকে চিল্লিয়ে বলছে - কি হলো ঠাম্মি? কিছু বলছো?
মা ভেতর থেকে বলছে - এই দুস্টু ছেলে.... বারবার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিলি কেন?
ছেলে তো অবাক, সাথে আমিও। মা আবার বলল - আমি ইয়েতে এসেছি আর তুই দরজায় হালকা হালকা ধাক্কা দিচ্ছিস? দুস্টু... ঠাম্মিকে ভয় দেখানো?
মা বলে কি? এবারে আমি চিল্লিয়ে বললাম - কি হয়েছে মা? কি বলছো?
তোর ছেলে ঠাম্মিকে ভয় দেখাচ্ছে... উফফফ আমি কাজ করছি আর উনি দরজায় খসখস করে আওয়াজ করছে, ধাক্কা দিচ্ছে.... আমাকে ভয় দেখাচ্ছে দুস্টুটা।
মা ইয়ার্কি মেরে এসব বললেও আমার মুখে হাসি ফুটলোনা। কারণ সেই যখন মা বাথরুম গেছে তার আগে থেকেই আমি ওকে পড়াচ্ছি আর একবারের জন্যও বিট্টু উঠে কোথাও যায়নি আর বিট্টুর মাও তো টিভির ঘরে। তাহলে মা এসব কি বলছে? যদিও আমি তখন কিচ্ছু বলিনি আর বিট্টুকেও কিছু বলতে বারণ করেছিলাম। আমিই পরে মাকে বুঝিয়ে বলি। মা তো অবাক.... সে নাকি স্পষ্ট শুনেছে বাইরে থেকে কেউ হালকা করে ধাক্কা দিচ্ছে আর দরজায় যেন নখ ঘষছে। তাই তো তখন মা বিট্টু ভেবে ঐভাবে উচ্চস্বরে বলছিল যেটা আমরা আমাদের ঘর থেকে শুনতে পেয়েছিলাম। মা ভাবছিল নিজের নাতিকে বলছে..... কিন্তু বাইরে তো তখন কেউ ছিলোনা।
- কিন্তু তুমি যেদিন এসেছিলে সেদিন কিচ্ছু ফিল করোনি এসব?
- নারে.... প্রথম দুদিন ভালোই কেটেছে..... তিনদিনও ধরতে পারিস.... কিন্তু তারপর থেকেই... কেমন যেন.... আর ব্যাপারটা এমন যে.... মানতেও মন চায়না আবার এড়াতেও পারছিনা। মালিক অনিমেষ কাকুর সাথে কথা বলার ফাঁকে চালাকি করে অনেক কিছু জানার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু সেইভাবে কিছুই জানতে পারিনি। আর উনি যে কিছু লুকিয়ে যাচ্ছেন সেটাও তো মনে হলোনা। একা মানুষ, স্ত্রী বেশ অনেকদিন হলো নেই... ছেলেও কলকাতায় থাকেন, মাঝে মাঝে আসেন... এক কাজের লোক আর রান্নার লোক অবশ্য আছেন... এই নিয়েই থাকেন তিনি। পাড়ায় আড্ডা দেন, বাবার সাথেও দু একবার আড্ডা দিয়ে গেছেন... আমার তো বেশ ভালোই লেগেছে ওনাকে।
- আহা ভদ্র মনে হয়েছে মানেই যে...... যাইহোক... আমি তো আর দেখিনি... তাই বলাটা উচিত নয়.... তো তারপরে?
- ছোটবেলায় গল্পে পড়েছি, ঠাকুমার কাছেও শুনেছিলাম জন্তু জানোয়ার নাকি আমাদের থেকে একটু বেশিই দেখতে পায়.. ওদের ইন্দ্রিয় অনেক শক্তিশালী।
আমি জিজ্ঞেস করলাম - হ্যা সেতো জানি... কুকুরের ঘ্রান শক্তি তো সবাই জানি.... কিন্তু হটাৎ এই কথা বলছো কেন?
সুভাষ দা একবার আমার দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবার কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অমনোযোগ মনে বললো -
- কারণ আছে বলেই তো বললাম... কালকে রাতের দিকে জানিস একটা বেড়াল ওই সামনের গ্রিলের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে এসেছিলো কিন্তু মা ওটাকে হ্যাট হ্যাট করাতেই আবার বেরিয়ে যায়। বোধহয় বাড়িতে খাবারের গন্ধ পেয়ে ঢুকে পড়েছিল। আমি কালকের ওই মিটিং এর ব্যাপারেই একবার তোকে ফোন করার পর রাজীবকে ফোন করছিলাম... ওর সাথে কথা বলতে বলতে আমি হাঁটতে হাঁটতে বাইরে আমাদের বারান্দার দিকে চলে আসি। দেখি ছেলে ওখানে নিচু হয়ে বসে কি যেন করছে। আমি কথা বলা শেষে এগিয়ে গিয়ে সামনে যেতেই দেখি বিট্টুর সামনেই একটা বিড়াল.... হয়তো ওটাই যেটা ঘরে ঢুকে পড়েছিল আর ওটার সামনে কয়েকটা বিস্কুট ভাঙা.... ওটা চিবিয়ে খাচ্ছে।
আমার ছেলেটা আবার বিড়াল কুকুর খুব ভালোবাসে..... তাই ঠাম্মি তাড়িয়ে দিলেও ও আবার ওটাকে ডেকে এনে খাওয়াচ্ছে। আর বেড়ালটাও দেখি নিশ্চিন্তে ওর একদমই সামনে বসে খেতে ব্যাস্ত। ওরাও বোধহয় মানুষ চিনতে পারে। আমি এগিয়ে যেতে ওটা কয়েক পা পিছিয়ে গেল কিন্তু আবার সাহস করে এগিয়ে এসে বিস্কুট খেতে লাগলো। আমি ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে ওটার বিস্কুট খাওয়া দেখছি। বিট্টুটা আমার মতোই হয়েছে... আমিও আগে এদেরকে খাওয়াতাম.... আমি যখন বিট্টুর বয়সী ছিলাম বাড়িতে রোজ কয়েকটা বিড়াল আসতো, ঘরে ঢুকে বসে থাকতো.... পোষা হয়ে গেছিলো। মা আবার এসব পছন্দ না করলেও আমার জন্য তাড়াতেও পারতোনা। সে যাই হোক..... নিজের অতীত বলে আর লাভ নেই... যেটা বলছিলাম....... বিট্টু বেড়ালটার সামনে বসে ওটাকে আরেকটা বিস্কুট দিতে যাচ্ছিলো কিন্তু তখনি ওর মা ওকে ডাক দিলো... পড়তে বসার জন্য হয়তো.... বিট্টু উঠে দাঁড়িয়ে ওই বিস্কুটটা আমার হাতে দিয়ে বললো আমি যেন ছোট ছোট করে ভেঙে বেড়ালটাকে দিয়ে দি....এইবলেই সে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। আমিও মুচকি হেসে ওটার সামনে ঝুঁকে বিস্কুটটা ভেঙে ওর সামনে ফেলতে যাবো এমন সময় দেখি...... বেড়ালটা আমায় দেখছে.... একদম একদৃষ্টিতে.... চোখ দুটো চেরা আর নেই... পুরো গোল হয়ে গেছে...... আমায় অমন বড়ো বড়ো চোখ করে দেখছে কেন বেড়ালটা বুঝলাম না ঠিক..... এইতো একটু আগেও আমায় পাত্তাই না দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছিলো। তাহলে কি আমি ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিলাম বলে ও ভাবছে ওকে মারতে গেছি?
আমি - আহা.... এ একটা জংলী বিড়াল... এ কি পোষা নাকি যে পায়ে নিজের গা ঘষে মিউ মিউ করবে? ওটা তোমাকেই ভয় পেয়ে হয়তো.......
আমি আরও কিছু হয়তো বলতাম কিন্তু সুভাষ দা মাথা নাড়িয়ে বললো - উহু..... তা নয় রে.... ব্যাপারটা ঠিক অতটাও সরল নয়। আমার একটা ভুল হয়েছিল...
- ভুল? কি ভুল?
- আমিও তখন তোর মতোই ভাবছিলাম যে রাস্তার বেড়াল... খুবই সতর্ক এরা..... তাই আমাকেই হয়তো ভয় পাচ্ছে কিন্তু..... কিন্তু আমি তখন ভালো করে একটা জিনিস লক্ষ করলাম। বারান্দায় আলো ছিলোনা ঠিকই কিন্তু বাইরের ওই ল্যাম্পপোস্ট এর আলো কিছুটা বারান্দায় পড়েছিল.... তাতেই ভালো করে লক্ষ করলাম বেড়ালটার দিকে। এতক্ষন যে ভাবছিলাম ওটা আমার দিকে ঐভাবে তাকিয়ে...... সেটা ঠিক নয়, ওটা আমার দিকে তাকিয়ে নেই..... বরং ওর নজর ঠিক আমার কাঁধ বরাবর পেছনে!
তাহলে কি... কেউ এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে? এইভাবে আমি পেছনে তাকাতেই...... কিচ্ছু দেখতে পেলাম না। ঐ একটু দূরেই খোলা দরজা দুই আলো এসে সামনেটায় পড়েছে, পর্দাটা হালকা উড়ছে.. ব্যাস। আমি আবার তাকালাম বেড়ালটার দিকে কিন্তু ওটার নজর সেই একদিকে... আমার ঠিক পেছনে... তবে এবারে বেড়ালটা আর আগের জায়গায় নেই... কিছু পিছিয়ে গ্রিলের কাছে চলে গেছে.. আর ওখান থেকে দেখছে সে। আমি আয় আয় করে ডেকে এগিয়ে গিয়ে ওটার সামনে একটা বিস্কুটের টুকরো ফেললাম... কিন্তু বেড়ালটা সেটা পুরোপুরি অগ্ৰাহ করে ওই একভাবে তাকিয়ে রইলো... না শুধু তাকিয়েই রইলো না.. এবার সে মুখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই একটা গোঁ গোঁ করে হুঙ্কার দিতে লাগলো যেন কিছু একটা জিনিসকে সতর্ক করছে সে.. হুমকি দিচ্ছে.. ঠিক যেমন একটা হুলো আরেকটাকে দেখলে দেয়।
আমি আবার তাকালাম পেছনে... কই? কি দেখছে বেড়ালটা? পেছনের দেয়ালে একটা টিকটিকি থাকলেও হয়তো ভাবতাম ওটাকে দেখে অমন করছে বেড়ালটা... জানি সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয় কিন্তু তাওতো কিছু একটা দেখতে পেতাম আমি..... কিন্তু কিছুই তো নেই। আমি এবারে সামনে তাকিয়ে দেখি.... বেড়ালটা আর ঘরের ভেতরেই নেই... গ্রিল টপকে বাইরে গিয়ে রাস্তার সামনে থেকে সেই একভাবে তাকিয়ে... কিন্তু এবারে ওটার নজর ঠিক আমার মাথার ওপর.... সেটা থেমে নেই... বরং বেড়ালটা আরও মাথা তুলছে ওপরের দিকে.... অর্থাৎ কিছু একটা কি তাহলে আমার মাথার ওপরের দেয়ালে অনবরত উঠে যাচ্ছে?
উফফফফফ.... সেদিন আমি ফিল করেছিলাম ভাই ভয় কি জিনিস..... আমার মতো একটা মানুষ... এক ছেলের বাবা আমি.... সেই আমি কিনা সেদিন নিজেই ঘোল খেয়ে গেছি। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি ওখানে.... বিস্কুটের বাকিটা দূরে বেড়ালটার দিকে ছুঁড়ে আমি ঐভাবেই পেছন না ফিরে হাঁটতে হাঁটতে ঘরে এসেছিলাম.... কেন জানিনা মনে হচ্ছিলো আমার এই সময় আর পেছনে ফেরা বা ওপরের দিকে তাকানো উচিত হবেনা... তাই ঐভাবেই ফিরে আসি। পরে অবশ্য রাতে দরজা লাগানোর সময় ভালো করে বারান্দা চেক করে ছিলাম... না... আমাদের আনা পেটি আর কয়েকটা কয়েকটা জিনিস বাদে কিছুই চোখে পড়েনি। কিন্তু তাহলে বেড়ালটা.... কি দেখছিলো আমার পেছনে?
পরের পর্বে সমাপ্ত
কেমন লাগলো এই পর্ব
জানাবেন বন্ধুরা