Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
বড় একটা সমস্যা তৈরি হল, সেই বারের সরস্বতী পুজোতে। আমরা তখন ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠব। আমাদের স্কুলে বড় করেই পুজো হত। আমি প্রথম হতাম বলে আমার উপরেই দায়িত্ব দেওয়া হল। কিন্তু আমি সযত্নে এড়িয়ে গেলাম ব্যাপার টা। এতোদিন ইচ্ছে ছিল যে, যখন আমাদের সময় আসবে, আমি নিজে হাতে সব দায়িত্ব নেব। কিন্তু আমার মানসিক পরিবর্তনের কারনে, ইচ্ছে করছিল না ব্যাপার টার সাথে জুড়তে।

আগের দিন বিকালে আমাকে রাকা জিজ্ঞাসা করল কথাটা। আমরা সেই জায়গাতেই ছিলাম, তাশি নদীর ধারে, জঙ্গলের সামনে।

-     এতো বড় করে পুজো হচ্ছে আর তোকে দেখলাম না কি ব্যাপার? কি কারনে তোর সমস্যা
আমি হাসলাম। সত্যি আমার সমস্যা ছিল না। কিন্তু আবার ছিল ও। সমস্যা মানসিক। সবাই কে বললে বুঝবেও না। কিন্তু রাকা কে বলা যায়। বললাম
-     আমি থাকতেই চাই না পুজোতে।
-     কেন সেটাই তো জিজ্ঞাসা করছি।
গত বেশ কয়েক মাস ধরে হয়ে চলা আমার মানসিক সমস্যা, সব টাই ওকে খুলে বললাম। ও সব শুনল। কিন্তু চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। তারপরে আমাকে বলল
-     তোর জার্সি বদলাতে সমস্যা হয় আমাকে বলিস নি?
-     কেমন একটা লাগত সেটাও বলতে।
-     তোকে না বলেছি আমাকে সব বলতে।
-     তাই তো বললাম এখন
-     সে তো আমি জিজ্ঞাসা করার পরে বললি রে বাল। তোদের মতন এই পড়াশোনা জানা ছেলে গুলো বড্ড গাঁড় পাকা হয়
আমি চুপ রইলাম। এই গাঁড় পাকা কথা টা আমাকে খুব বলে ও। এখন আর কিছু মনে করি না। থম হয়ে বসে থাকি। যদি এতে কিছু বোঝে তো বুঝুক। কিন্তু ও বোঝে না। কিছু পরে বলল,

-     ঠিক আছে রাগ চোদাতে হবে না।

এই স্ল্যাং টা আমার কাছে নতুন। হয়ত রাকা ও নতুন শিখেছে। কি মানে কে জানে। এটা বুঝলাম, আর রাগ করতে মানা করছে। বড় হচ্ছি সবাই। আমি নতুন নতুন ব্যাপার পড়াশোনা করি। আর ও নতুন গালি শিখে আমাকেই দিচ্ছে। আমি চুপ করেই রইলাম। ও বলল

-     কিরে!  বললাম তো তোকে আর রাগ চোদাস না,কালকে আরেক টা সারপ্রাইজ দেবো তোকে।
আমি শুনে একটু উত্তেজিত হলাম সেটা। কারন ওর সারপ্রাইজ আমাকে এবং আমার মন বেশ ভালো করে দেয়। রাজী হয়ে গেলাম । বললাম
-     ঠিক আছে।
-     কি ঠিক আছে? কিছুই তো শুনলি না। তোর কাছে শ দুয়েক হবে?
-     হ্যাঁ হবে কিন্তু এখন তো নেই। বাড়ি গেলে পাব। কি করবি?
-     লাগবে লাগবে। আচ্ছা ঠিক আছে কাল যখন বাড়িতে আসবি আমাদের, নিয়ে আসবি। আমি ধারে ম্যানেজ করে নেব।  
-     কি করবি?
-     বাল শুনতে পাচ্ছিস না, সারপ্রাইজ। আগে থেকে বলে দিলে কি করে হবে? তুই কখন আসবি কালকে?
-     আমাদের বাড়িতে পুজো শেষ হতে নটা বাজবে। তারপরে খেয়ে দেয়ে বেরোব।
-     মানে সাড়ে নটা বাজবে তাই তো।
-     হ্যাঁ আরাউন্ড সাড়ে নটা।
-     আচ্ছা, তুই না আমাদের বাড়ি ঢুকবি, পিছন দিক দিয়ে। মনে থাকবে? চিনিস তো রাস্তা টা?
-     হ্যাঁ চিনি। কিন্তু কেন?
-     কালকেই দেখবি। এখন চল, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। চালাতে পারবি তো?
-     হ্যাঁ চালাতে কেন পারব না?
-     না ওই যে বলছিলি, কি সব সমস্যা হচ্ছে।
-     বড্ড ফালতু কথা বলিস। চল!

কিন্তু সিটে ওই বসল। আমি সামনের রডে চেপে পিছন থেকে ওর খিক খিক মার্কা হাসি টা শুনতে পেলাম। কিছু বললাম না। ওকে ওর বাড়িতে নামিয়ে আমি চলে এলাম। ভাবছি, কি জানি কি সারপ্রাইজ দেবে আমাকে ওই জানে।
আসলে আমি বেরোতে চাই না পুজোর দিন টা। কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে নিজেকে। সব মেয়েরা সুন্দর করে সেজেগুজে ঘুরে বেড়ায়। ছেলেরাও ঘুরে বেড়ায়। আর আমি কি করব বুঝতে পারি না। আমি পাজামা পাঞ্জাবী পরলে মেয়েরা খুব তাকায়। কিন্তু সেটা আমি এনজয় করতে পারি না। এমন না যে আমি ছেলেদের দৃষ্টি ও পছন্দ করি। সেটা তো কোনদিন ও বুঝিনি আমি। কিন্তু জাস্ট ভালো লাগে না ওই দিন টা আমার।

পরের দিন সকালে, বাবা পুজো করল। আমি ভাই বোন মিলে পুষ্পাঞ্জলী দিলাম। সকাল সকাল পুজো হয়ে গেলো আমাদের। আট টার মধ্যে রেডি আমি। খেয়ে দেয়ে নিলাম। মা কে বললাম,

-     মা আমি বেরোব। ঠাকুর দেখতে যাবো আমি আর রাকা
-     অ্যাঁ?

প্রথম বার আমি এই আবদার করলাম। আসলে ওই দিনে তো কপোত কপোতী রাস্তা ঘাট জুড়ে থাকে। আমার অনুমতি ই ছিল না সেদিনে বাড়ি থেকে বের হবার। স্কুলে থাকার অনুমতি ছিল আমার শুধু। মা আমার অনুরোধ শুনে অবাক হয়ে গেল। বাপির দিকে চাইল। বাপি আমার পিছনে ছিল বলে দেখতে পেলাম না আমি বাপি কি বলল। তবে মা বলল,

-     ঠিক আছে, কিন্তু ফিরে আসতে হবে, দুপুরে খাবারের আগে।
আমি বললাম
-     ঠিক আছে।

বাড়ি থেকে বেরোনর সময়ে মা দেখলাম, ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সোজা চলে এলাম হীরাপুরে। সময় লাগে আসতে। অনেক টা রাস্তা। আমি ওদের বাড়ির সামনের দিকে গেলাম না। চলে এলাম পিছনের দিকে। ওদের জায়গা টা অনেক বড়। পাঁচিল ধরে কিছু টা এসেই দেখলাম, ওর বাবার সবুজ রঙের স্কুটার টা পাঁচিলের বাইরে দাঁড় করানো। ওখানে এসে দেখলাম, ওই জায়গার পাঁচিলে বেশ বড় একটা গর্ত। সেখান দিয়ে দুটো মানুষ গলে যাবে। আমি ওখানে যেতেই দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে পাঁচিলের উল্টো দিকে। আমাকে দেখেই বলল,

-     সাইকেল টা ঢুকিয়ে দিতে হবে।

আমি নেমে সাইকেল টা তুলে ধরতেই ও ভিতর থেকে নিয়ে নিল। আমিও ঢুকে গেলাম গর্ত দিয়ে ওদের বাড়ি। রাস্তা টা বেশ ফাঁকা থাকে। কেউ দেখল ও না। কিন্তু ভয় টা তখন লাগছিল, কেউ দেখে নিলো কিনা। এতো সব করছে যখন সারপ্রাইজ টা দারুন হবে। ও সাইকেল টা নিয়ে চালিয়ে চলে গেলো, পোড়ো বাড়িটার ভিতরে। আমি হেঁটে ঢুকলাম। ঘরে ঢুকে, একটা প্যাকেট দিল আমাকে আবার। জানি কোন ড্রেস হবে। ও কি আজকেও এখানে নাচতে বলবে নাকি? তাতে আমার অসুবিধা নেই। কিন্তু এই ব্যাপার তো আগে আমরা করেছি, সারপ্রাইজ কীসের?দেখলাম, একটা নর্ম্যাল তাঁতের শাড়ি, ব্লাউজ,সায়া। এতে কি হবে জিজ্ঞাসা করতেই, আমাকে বলল,

-     তুই পর তো আগে।

আমি শাড়ি পরতে জানতাম না। তাও ইন্টারেস্ট ছিল বলে, মনে করে করে পরে নিলাম শাড়ি টা। একটা ঘাড় অব্দি চুলের উইগ। ছোট কানের এনেছে দেখলাম, ম্যাগনেট দেওয়া। কানের ফুটো নেই আমার। পরে নিলাম সেগুলো। আমাকে যখন ও আয়না দেখালো, আমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিলাম না। আমার আনন্দ হয় নি এমন না। ষোলোয়ানা পরে পাওয়ার মতন ব্যাপার। কিন্তু সারপ্রাইজ টা অপেক্ষা করছিল তখন যখন ও আমাকে বলল

-     এখন তুই আর আমি , আমার বাবার স্কুটারে চেপে ঠাকুর দেখতে বেরোব।
-     অ্যাঁ?
-     হ্যাঁ

আমার মনে ভয় ধরে গেল। এতদিন যা করেছি বন্ধ ঘরে। কিন্তু এই সব পরে বাইরে বেরোলে, আর লোকে দেখলে তো চারদিকে ঢি ঢি পরে যাবে। আমি ওকে বললাম,

-     কি বলছিস? পাগল হলি নাকি। কেউ দেখলে কি হবে?
-     আরে দেখে কেউ চিনলে তো। দাঁড়া তোকে ছবি তুলে দেখাই।

ছবি তুলে আমাকে দেখানোর পরেও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না এটা আমি। মনে হচ্ছিল ক্লাস এইট নাইনে পরা কোন মেয়ে। নিজের লোভ বেড়ে গেল। ভিতরের মেয়েটা যেন চাইল বেড়িয়ে আসতে খুব তীব্র ভাবে। রাকার কথায় কোন সারা না দিয়ে বললাম,

-     চল তবে। কিন্তু আমাকে তো না হয় কেউ চেনে না। তোকে তো দেখবে আমার সাথে। তোর বাড়িতে বলে দিলে?
-     আরে সে দেখা যাবে। চল তো এখন।
আমরা দুজনে বেরোলাম পিছন দিক দিয়ে। ও স্কুটারে স্টার্ট দিয়ে বলল বসতে। কিন্তু আমি তো একদিকে বসতেই জানি না। সাইকেলে বসা এক ব্যাপার আর স্কুটারে বসা অন্য ব্যাপার। ওকে বলতেই বলল
-     বস না আমাকে ধরে ভালো করে। চাপ আগে, তারপরে বলে দিচ্ছি
-     উঠব?
-     হ্যাঁ।

খুব ই কস্টকর ব্যাপার। আমার উঠতেই সময় লাগল মিনিট পাঁচ। খালি মনে হচ্ছে উঠতে গিয়ে সামনের দিকে পরে যাবো। বার তিনেক এমনি করার পরেই, রাকা স্কুটার টা ডাবল স্ট্যান্ড এ করে আমাকে চাপাল আগে, তারপরে নিজে চেপে স্টার্ট দিল। আমাকে বলল,

-     ডান হাত টা দিয়ে আমার কাঁধ টা ধর আর বাম হাত টা পিছনে হোল্ডার টা ধর।

আমি তাই করলাম। ঠিক লাগল ব্যপারটা । ও স্কুটার চালাতে শুরু করল। পিছনে বসে আমি। চোখে মুখে হাওয়ার ধাক্কা। কিন্তু মনের ভিতরে থাকা পাখি গুলো আর ভিতরে কিচির মিচির করছে না। মন থেকে একটা ভারী পাথর আমার নেমে যাচ্ছে। শক্ত করে ধরলাম রাকার কাঁধ টা আমি। সবাই দেখছে আমাদের। রাকাকে দেখছে। কেউ পিছনে বসা আমাকেও দেখছে। শীতকাল, আমি মাথায় একটা মাফলার জড়িয়ে নিয়েছি। যাতে চুলের উইগ টা উড়ে না যায়।

এই মণ্ডপ থেকে সেই মন্ডপে আমরা যাচ্ছি। ঠাকুর দেখছি। আমার মনে কোন ভয় নেই আর। কেউ চিনতে পারে নি। কেউ না। আমার মেয়েদের সাজগোজ দেখে আর কস্ট ও হচ্ছে না। এই সামান্য ব্যাপার টাতে আমার জন্য এতো আনন্দ লুকিয়ে ছিল আমি তো ভাবতেও পারিনি। সামনে রাকা চালাচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে ওকে জরিয়েই ধরি। কিন্তু ভয় লাগে। ও আমাকে এতো সাহায্য করছে, এই সব করলে হয়ত রেগে যাবে। তাশির পাশ দিয়ে বেশ জোরেই ও স্কুটার চালাচ্ছে। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,

-     কোথায় পেলি এই সব কস্টিউম?
-     ভাড়া করেছি। দুশ তিরিশ টাকা নিয়েছে।
-     তুই তো দুশ বললি।
-     তিরিশ আমি দিয়ে দিয়েছি। আর বিকালে ওকে দুশ দিয়ে দেব। তুই এনেছিস তো?
-     হ্যাঁ কিন্তু তোর বাড়িতে আছে আমার প্যান্টের পকেটে।
-     ঠিক আছে, যাবার সময়ে দিয়ে যাস।
-     আচ্ছা।

রাকার সব অনেক চেনা শোনা প্রতি মোড়েই রয়েছে দেখলাম। নানা রকম টোন টিটকিরি। কি রে কবে পটালি। দারুন দেখতে কিন্তু রাকা, চালিয়ে যা। একেবারে ঝাক্কাস রাকা। নানা রকম মন্তব্য। শুনে বুকে ভয় লাগলেও, নিজেকে তখন আমার মেয়েই মনে হচ্ছিল। প্রতিটা মুহুর্ত, প্রতিটা টোন্ডিং আমি এনজয় করছিলাম আর মনে হচ্ছিল আমি রাকার গার্লফ্রেন্ড। অদ্ভুত!!! রাকার কাঁধ টা একটু চেপেই ধরলাম আমি। এগিয়ে যাবো আরেকটু? নাহ থাক।

প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ঘোরার পরে, আমি রাকাকে বাড়ি ফেরার কথা বললাম। রাকা ও দ্বিরুক্তি না করে, আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল ওদের বাড়িতে। আমি সব কিছু ছেড়ে নিজের পাঞ্জাবী আর প্যান্ট পরে নিলাম। লিপস্টিক মুছে, সব অর্নামেন্ট খুলে দিলাম। রাকা কে টাকা টা দিয়ে দিলাম আমি। অনেক কস্ট করে জমিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে যা আমি আনন্দ পেয়েছি তার জন্য জমানো অনেক টাকা আমি দিতে রাজি আছি। সাইকেল নিয়ে বাড়ি এলাম তখন বেজে গেছে দুপুর দুটো।

 সারা দিনটা আমি উড়লাম। জাস্ট উড়ে বেরালাম। কাউকে বোঝাতে পারছি না আমি কত টা খুশী আজকে। কাউকে বলতে পারছি না, কি অসম্ভব, একটা যন্ত্রণা থেকে আমি মুক্তি পেয়েছি আজকে। আমার কাছে, মেয়েদের পোশাক পরা টা গুরুত্বপূর্ন না। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন হল অনুভব টা। মেয়ে হবার অনুভব টা। যেটা সামনে থেকে কেউ রেকগ্নাইজ করে না। কেউ মেনে নিতে চায় না এই ছেলে শরীর টার ভিতরে একটা মেয়ে আছে। তাই এই পোশাক। তাই সবাই কে বুঝিয়ে দেওয়া দেখ আমি মেয়ে। কেউ তোমরা খুঁজে পেতে না একে। কিন্তু আজকে সে বেরিয়েছিল।

খুব জটিল ব্যাপার। অনেকেই তেড়ে আসবেন আমার দিকে। মেয়েদের পরিচয় কি শুধুই পোশাকে? নাকি মেয়েদের পরিচয় শুধু মাত্র নাচে? বা মায়ের সাথে রান্না ঘরে কাজ করায়? বা সন্তান ধারনে? বা সংসার পালনে, বা মমত্বে? সবার আগে তো সে মানুষ নাকি! আমি সব ই বুঝি, কিন্তু কর্ম, খেলা ধূলা, পোশাক আশাক, মায়া মমতা, এই সব দিয়ে মেয়েকে আলাদা তো আমি করিনি? আর আলাদা বলেই, আমার মতন যারা ট্রান্স, যারা ভাবে, তাদের এটা সঠিক শরীর নয়, তাদের সমস্যা। আজকে ছেলে মেয়ে আলাদা না হলে, যারা ট্রান্স ওদের কে যে কোন একটা, জেন্ডার খুঁজে বেড়াতে হতো না। হয় ছেলে না হয় মেয়ে। মাঝের জনেদের তো কেউ মানুষ বলেই মনে করে না। সমাজের কীট তারা। যতই এগিয়ে যাওয়া সমাজ দাবি করুক, সবাই সমান, কিন্তু ভিতরে যে চোরা স্রোত চলে, সেই স্রোতে ভেসে যায় আমাদের মতন কীট পতঙ্গ।

ভেবেছিলাম, এই ব্যাপার টা আমরা করতে থাকব। কিন্তু সেই ঘটনার পরে অনেক কিছু ঘটে গেল আমার জীবনে একসাথে। কি ভাবে নিতে পেরেছিলাম সে আমি জানি আর আমার পরিবার জানে। রাকাও এই আগুনের আঁচ থেকে বাঁচতে পারে নি। সেদিনে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের কেউ চিনতে পারে নি। আমরা ভুল ছিলাম। সবার আগে সমস্যা হয়েছিল রাকার। সেদিনে রাতে রাকা আমাকে ফোন করল

-     বল? কি হল, ফোন করলি?
-     আরে আজকে বাওয়াল হয়ে গেছে।
আমার ভয় লাগল। ভাবছিলাম, কেউ দেখে ফেলল নাকি? জিজ্ঞাসা করলাম ভয়ে ভয়ে
-     কেন, কেউ দেখেছে আমাদের বা বুঝতে পেরেছে নাকি?
-     দেখেছে তো বটেই। বুঝতে হয়ত পারে নি তোকে। কিন্তু দেখেছে।
-     কে?
-     আমার বাবা? বাড়িতে মা কেলাল খুব?
আমি হেসে ফেললাম। বললাম
-     সে তো রোজ ই খাস
-     না রে আজকের টা অন্য রকম ছিল। মা কান্না কাটি করছিল।
-     কান্নাকাটি? কেন?
-     বাবা দেখেছে আমাদের। স্কুটার চিনেছে আগে, তারপরে আমাকে দেখেছে। তোকে চিনতে পারে নি । কিন্তু এই বয়সে স্কুটারে মেয়ে নিয়ে ঘোরার অপরাধে বাবা মা দুজনেই খুব ঝেড়েছে আমাকে। আমি তো বলতে পারছি না যে তুই ছিলি ওটা। সেও বলে দেওয়া যেত, কিন্তু বললাম না।

হয়ত অনেকেই এই রকম মজা করে। মেয়ে সেজে রাস্তায় বেরোয়। কিন্তু আমার ভয় লাগে এই জন্য, কারন আমার কাছে সেটা তো নিছক সাজা নয়। আমি ওই সময় টা, মেয়ে হওয়া টা উপভোগ করি। আর তাই ভয় করে যদি কেউ বুঝে যায়। হয়ত অনেকেই এটা মজা হিসাবেই নেবে, কিন্তু ভয় লাগে আমার বাবা মা জানলে ওদের কাছে এটা মজা থাকবে না আর। কারন ওদের কাছে আমার এই ব্যাপার টার আঁশটে গন্ধ অনেক আগে থেকেই আছে। আমি সাড়া দিলাম না ওই ব্যাপারে, শুধু ওকে বললাম,

-     আমার জন্য তোকে ঝাড় খেতে হল তাই না?
-     আরে সে ঠিক আছে। তুই ঠিক আছিস তো। ওদিকে কেউ বুঝতে পারে নি তো?
-     না না এদিকে সব ঠিক আছে। চিন্তা নেই। কালকে স্কুলে আসবি?
-     হ্যাঁ যাবো। তুই কখন আসবি।
-     ওই এগারো টার দিকে ।
-     ওকে সি ইউ দেন।
-     গুড নাইট।
ওকে গুড নাইট করে দিলাম। জানিনা কেমন একটা ভয় সর্বদা। প্রাণ খুলে না বাঁচার ভয় নাকি, সামনে আসতে থাকা অগনিত ঝড়ের ভয় বলতে পারব না।
[+] 6 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি ( চলছে) পেইজ ৩ - by nandanadasnandana - 03-02-2022, 08:33 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)