Thread Rating:
  • 91 Vote(s) - 3.44 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
আমি না কিছু বুঝতে পারছি না তখন ও। কিন্তু এটা বুঝলাম ওরা রাকার পায়ে মারবে। একটা ছেলের খেলা নিয়ে লোকের কীসের এত সমস্যা কে জানে। আমি জানতাম আমি খুব বড় সমস্যার মধ্যে আছি। রাকার এই সমস্যা টা আমার চোখ খুলে দিল বলতে গেলে। ওর পায়ে মারবে কী? পায়ে কিছু হয়ে গেলে ও খেলবে কি করে? মাথা কাজ করল না। আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ধীর পায়ের এগিয়ে গেলাম। যারা বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা মনে হয় আমার এগিয়ে যাওয়া টা কে গুরুত্ব দিল না। ওদের মারার আগের মুহুর্তে, রনি কে আমি পাশ থেকে মারলাম একটা পাঞ্চ। খট করে আওয়াজ টা হতেই আমি চোখ বুঝে নিয়েছি। ধপ করে একটা আওয়াজ পেতেই মনে হল,

-     যাহ্‌ , রাকা কে বসিয়ে দিলাম না তো। হাত তো আমার কাঁপছিল তখন।
 
                                                           পর্ব ছয়

কনফার্ম হতে চোখ খুললাম। দেখলাম। রনি পরে আছে। আর রাকা ততক্ষনে সামনের একজনের কাছ থেকে একটা বাঁশ কেড়ে নিয়ে ওদের পিছনে তাড়া করেছে। আর আমি পরে থাকা রনির পাশে দাঁড়িয়ে। ভাবচি এ যদি উঠে আবার আমাকে মারতে আসে তাহলেই হয়ে গেল। জীবনে মারামারি না করা আমি, ছেলের শরীরে মেয়ে আমি, আজকে একটা ছেলেকে মেরে শুইয়ে দিলাম? তাও লেট হয়ে গেছে খুব আজকে। জানিনা বাড়িতে কি বকা নাচছে আমার কপালে। মাথায় শত চিন্তা আমার। তার পরে সামনে পরে আছে রনি বলে ছেলেটা। ভয়ে আমার হাঁটু কাঁপছে তখন। রাকা কোথায় চলে গেল কে জানে। আমি সাড়া না দিয়ে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে সাইকেল টা চেপে, যেদিকে রাকা দৌড়েছিল, সেদিকে এগিয়ে গেলাম। রনি পরে রইল পিছনে।

কিছু দূর গিয়েই দেখি রাখা হাতের বাঁশ টা নিয়ে আসছে দৌড়ে আগের জায়গায়। আমাকে দেখেই কেরিয়ার এ চেপে পড়ল। আমি যতটা দ্রুত চালানো যায় চালিয়ে বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে এসে কিছু তা বুকে বল পেলাম আমি। নেমে দাঁড়াতেই দেখলাম রাকা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। ওকে বললাম,

-     এখানে কোন কথা বললে মা শুনে নেবে। দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনি তে। তুই সাইকেল টা নিয়ে চলে যা। কালকে চলে আসিস দশটা নাগাদ। আমি রাতে ফোন করব।
-     আচ্ছা

আচ্ছা বলে রাকা সাইকেল টা ঘুরিয়ে সামনের দিকে প্যাডেল মারতেই বললাম,

-      একটা টেক্সট করে দিস, বাড়িতে পৌঁছে এখন। চিন্তায় থাকব। বাড়ির পিছন দিক দিয়ে ঘুরে যা। ওই রাস্তা টা অনেকেই চেনে না।

রাকা কোন কথা না বলে, সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে গেল। আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম। মা দোতলার ব্যাল্কনি তে দাঁড়িয়ে। হয়ত আমার আসার পথ দেখছিল মা। আমি হাত নাড়তেই মা ঢুকে গেল ঘরে।  

বাড়িতে এসে বকাঝকা খাই নি। এসে হাত পা ধুয়ে, খেয়ে নিয়ে পড়তে বসে পড়লাম। পাশে নিলাম ফোন টা। মন পরে আছে রাকার দিকে। প্রায় আধ ঘন্টা পরে আওয়াজ হতেই খুলে দেখলাম লেখা আছে – রিচড। আমার মন পরে আছে কখন রাকা কে রাতে কল করব। পড়ে নিলাম, ঝড়ঝড় করে। মা এখনো আমার পড়া ধরে। আমি আটটায় পড়তে বসে, সাড়ে নটায় পড়া দিয়ে উঠে পরলাম। রাতে অঙ্ক করব। গান চালিয়ে অঙ্ক করতে আমার দারুন লাগে। তাই দোতলার একটা ছোট ঘর আমাকে মা দিয়ে দিয়েছে। আমি শুই ও এখানেই। বছর খানেক আগেও আমি মায়ের কাছে শুয়েছি। কিন্তু এখন আলাদা শুই। আমি বেড়িয়ে এলাম। বাপি দেখলাম বাইরে টিভি দেখছে। আমার বোন পড়ছে, বাপির কাছে। পড়ছে না বললেই চলে।  বাপিও টিভি দেখছে, আর বোন ও তাই। আর আমার ছোট ভাই আমি আসার আগেই পড়ে উঠে পরেছে।  মা রান্না করছে। ইচ্ছে করছে মায়ের কাছে যাই। মা কে হেল্প করি। কিন্তু গেলেই মা বকবে। থাক মুড ভালো আছে মায়ের। মা কে এখন এই সব বলে মূড খারাপ করে দেবার দরকার নেই।

রাতে খেয়ে দেয়ে কল করলাম রাকা কে। কিছুক্ষন রিং হবার পরে ধরল ও। ফিসফিস করে বলল আমাকে
-     দাঁড়া, একটু।
মিনিট খানেক চুপ থাকলাম আমি। তারপরেই ওদিকে থেকে স্বাভাবিক গলায় বলল,
-     হ্যাঁ বল।

আমি আমার দরজার খিল লাগিয়ে দিয়েছি। এমনি তে মানা আছে খিল লাগান ভিতর থেকে। কিন্তু যেহেতু দোতলায় আমি একলা শুই তাই সাহস করে দিয়ে দিলাম। মা যদি জানতে পারে, আমাকে বকাঝকা তো করবেই , আমার একলা শোবার ও বারো টা বাজতে পারে। কিন্তু আমার কথা আছে রাকার সাথে। আজকে বলতে গিয়েও বলা হল না অনেক কথা। আমি খিল দেওয়া টা নিশ্চিত দেখে নিয়ে বললাম,

-     আমার টেনশন হচ্ছিল তুই না পৌঁছানো অব্দি।
-     আরে না না । বেকার ভাবছিলি তুই    - এটাই ওর স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গী। জাস্ট উড়িয়ে দেয়।

বিপদের আঁচ ও করে না। আর আসলে তোয়াক্কা করে না। সেটা, আজকের সন্ধ্যের মতন বিপদ হলেও না, আর পরীক্ষার খাতা হলেও না। ফলাফল নিয়ে ওর কোন টেনশন নেই। তবে ও বলতে থাকল তারপরেও,

-     কিন্তু ভাই তোর পাঞ্চ টা সলিড ছিল। কি করে পারলি ভাই? নাহ, তুই আমাকে প্রতিদিন সারপ্রাইজ দিস।

শুনে বেশ ভালো লাগল। আমার ভালো লেগেছিল, কারন ওকে আমি হেল্প করতে পারলাম। ব্যাপার টা বোঝাতে পারব না ঠিক। আমি যে মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, আর যে অবস্থা থেকে ও আমাকে তুলে এনেছে, তাতে ওর জন্য ওই টুকু করতে পেরে আমার নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছিল। আর এটা সত্যি আমার মনে তখন চলছিল। ওর এই কথাটা সত্যি আমার কাছে অনেক বড়। ও বলেই চলেছে তখন

-     কালকে আমার ম্যাচ আছে। আর কেমন বেদো ভাব?  আমার পায়ে মারতে আসছিল। মেরে দিলে চাপ ছিল আমার। পাঁচশ টাকা অলরেডি নিয়ে নিয়েছি। খেলার পরে আরো পাঁচশ দেবে বুঝলি?

আসলে আমিও সেই জন্যেই রেগে গেছিলাম। ছেলেটা ভাল খেলে, আর সেই খেলার সব থেকে দামী জিনিস টা কে আক্রমন করায় আমিও রেগে গেছিলাম। রাকার ফুটবলের মতন মুগ্ধকর ব্যাপার আর নেই। কেন যে ও সিরিয়াসলি নেয় না ফুটবল টা কে জানে? ওকে বললাম,

-     ও তুই খেপ ও খেলছিস? খেলিস না বাইরে। কোথায় লেগে যাবে। ইনজিওর হয়ে যাবি।
-     হলে হব। আমি আর কোথায় ইন্ডিয়া খেলব? আমার দৌড় এই রুদ্রপুর বুঝলি?
-     কি করে জানলি? হতেও তো পারে তুই আরো দূরে খেলতে গেলি?
-     ছাড় বালের কথা!

এই টা শুনলে আমার মাথা খুব গরম হয়। মনে হয় আমাকে পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু কিছু বললাম না ওকে। ওকে গম্ভীর হয়ে বললাম,

-     তোর কাছে সব ই বাল।
-     আরে রাগিস না ভাই। তবে আজকে তুই আমাকে বাঁচিয়েছিস। তোর হক আছে।
-     বাবাহ, একটু আগেই তো বলছিলি, বেকার ভাবছিলাম আমি
-     না না পরে ভেবে দেখলাম, একদম ঠিক সময়েই দিয়েছিলি পাঞ্চ টা। ওকে তো আমি পরে দেখে নোব তুই দেখিস।
-     না না পরে এই সব আর বাড়াস না বুঝলি।
-     ছাড় তুই এই সব কথা, তখন বলতে গেলি একটা কথা আমাকে, আর ওই তিনটে বাল এসে ঝামেলা করল, আর আমার শোনা হল না । বল এবারে।

বুকের ভিতরে আবার আমার ধুকপুকুনি শুরু হল। তখন মন তৈরি করে নিয়েছিলাম আমি। মেনে নিয়েছিলাম, এটা শোনার পরে ও আমাদের বন্ধুত্ব মানতে নাও পারে। আর মানলে কেন মানবে, তার পিছনে অনেক যুক্তিও সেট করে নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এখন আবার সেই ভয় টা ফিরে এলো। বন্ধুদের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে, যা বন্ধুত্ব কে মজবুত করে। আজকেও একটা ঘটনা ঘটেছে, আর আমার বিশ্বাস এতে আমাদের বন্ধুত্ব, শক্ত হয়েছে কিছু টা হলেও। তাই বলতে ইচ্ছে করছে ওকে আমার মনের কথা গুলো। ওদিক থেকে প্রশ্ন ধেয়ে এল

-     কি রে বল। আবার দেরী করছিস কেন? আরে বল। ভাবিস না অতো আর
বলেই ফেলি। ফোনে আছে তো ও। তখন সামনে সামনে বলতে একটা অস্বস্তি হচ্ছিল আমার। এখন বলেই দি। বললাম,

-     হুম বলছি। আজকে যখন তুই আমাকে ওই ড্রেস টা দিলি, আমার মনে আনন্দের সীমা পরিসীমা ছিল না। বুঝতে পারছিলাম না তোকে কি ভাবে আমি থ্যাঙ্কস জানাবো। তুই ওই ড্রেস টা দিয়ে, আমাকে একেবারে মেল্ট করে দিয়েছিস। তোকে বলে বোঝাতে পারব না আমি, যেন মনে হচ্ছিল, অনেক আনফুলফিলমেন্ট মনের ভিতরে সেটা একটু ফিল্ড আপ হল।

ওদিকে রাকা চুপ। বুঝতে পারছি না, যে ও বুঝছে কিনা ব্যাপার টা।আমি চুপ করে গেলাম একটু। ভাবলাম ওকে জিজ্ঞাসা করি যে ও কথা বলছে না কেন? পরেই ভাবলাম যদি বলে দেয় , ভাল লাগছে না তখন আর আমার বলাই হবে না। ও চুপ ছিল। কিন্তু আমি থামলাম না। বলতে থাকলাম

-     এমন একটা আনফুলফিলমেন্ট, যে তোকে বোঝাতে পারছি না। আমার না ছেলেদের মতন থাকতেই ভাল লাগে না। আমি ফিল করি, আমার ভিতরে যে আছে সে ছেলে নয় , সে মেয়ে। তুই বুঝতে পারছিস? মানে ধর, এই যে আমি ফুটবল খেলতাম, কোন কালেই আমার সেটা ভালো লাগে নি। আবার, নাচ করতে আমার ভালো লাগে।
 আবার যেমন ধর, আমি যে গীটার শিখি, সেটা কোন দিন আমার ভালো লাগে নি। বরং আমি স্প্যানিশ এর বদলে হাওয়াইয়ান গীটার শিখতে বেশী আগ্রহী ছিলাম, আবার ধর আমার মেয়েদের মতন ড্রেস পরতে, বা ওদের মতন সাজতে ইচ্ছে করে। এই যে যেমন তুই, মারামারি করিস, ঝগড়া হলে এগিয়ে যাস, এটা তোর ভালো লাগে, কিন্তু আমার ভাল লাগে না। মানে আমি মনে করি , আমি একটা মেয়ে , কিন্তু আছি ছেলেদের শরীরে। তাই যখন তুই আমাকে দিলি ড্রেস টা , খুব খুব আনন্দ হয়েছিল।  কি রে বুঝলি? সাড়া দিচ্ছিস না কেন? কি রে?

ওদিক থেকে উত্তর আসছিল না কোন। একটা শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ পাচ্ছিলাম মাত্র। আমি খুব টেনশন এ ছিলাম। কি জানি? কি বুঝল ও। বা আদৌ বুঝল কি না। বা বুঝল কিন্তু আমাকে উইয়ার্ড ভাবল। বা ঘেন্না করল। সবাই তাই করবে। কারন আমার কার্তিকের কথা মাথায় ঘোরে। তখন বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝেছি ওর একা হয়ে যাবার কারন। সেও হয়ত কোন রাকা কে বলেছিল মনে কথা। সে বোঝেনি। কার্তিক চেস্টা করেনি এমন না। কিন্তু হয়ত সে চেস্টা বিফলে গেছিল। আমার প্রচণ্ড ভয় লাগল এবারে। রাকা চুপ করে আছে একেবারে। মনে হল, আমি মনে হয় এবারে শেষ। এবার রাকা কাউকে বলে দিলে ব্যাপার টা চারদিকে ছড়িয়ে পরবে দাবানলের মতন। আমি আর একবার বললাম

-     কি রে? শুনতে পাচ্ছিস?

উত্তর এলো না। আমি ভয়ে কেটে দিলাম ফোন টা। মনের মধ্যে কি যে ভয় বোঝাতে পারব না। রাকার পক্ষে আমার ব্যাপার টা মেনে নেওয়া সম্ভব হয় নি, সেটা আমি বুঝে গেছি। কিন্তু ভয় টা চেপে ধরল যখন মনে হল, ও কাল থেকে আর আমার সাথে মিশবে না। আমি জানি আমাদের সবার থেকে ওর চিন্তা ভাবনা আলাদা। বা ও হয়ত চিন্তাই করে না। ওর কাছে ওর মনের কথাই সব। জানিনা কি হবে কালকে। শুয়ে পরলাম আমি। কেমন একটা শীত শীত করছে। খুব ভয় পেলে শীত করে কি? কি জানি।

ফোন বেজে উঠল কানের পাশেই। রাকা করেছে ফোন টা। ঘুমিয়ে তো যাই নি। হারিয়ে গেছিলাম চিন্তায়। সময় দেখলাম প্রায় একটা। তাড়াতাড়ি ধরে নিলাম ফোন টা। বললাম

-     কি হল, ফোন করলি আবার?

ওদিক থেকে খেঁকিয়ে উঠল আমার উপরে ,

-     ফোন টা কেটে দিলি কেন? যাক ভালই হল কেটে দিয়েছিলি, আমি একটু অন্য চিন্তায় চলে গেছিলাম।
-     তুই আবার চিন্তা ও করিস? আর তুই সাড়া দিচ্ছিলি না, কি করব আমি। ভাবলাম তুই পছন্দ করছিস না।
-     গাঁড় পাকামো করিস না তো। এবারে বল।
-     না আবার কি বলব? বললাম তো কত কথা। তুই না শুনলে আমি কি করব। আর বলব না
-     আরে সেগুলো আমি শুনেছি। বেশী রাগ মারাস না। শোন না, তুই না এগুলো আর কাউকে বলবি না বুঝলি?

আমি ভাবছি তোকেই কোন দিন বলব কিনা আর তার নেই ঠিক, আবার অন্য কাউকে? কিন্তু বললাম,

-     কেন বললে কি হবে?
-     কি হবে মানে? তুই কি কাউকে বলেছিস আমি ছাড়া?
-     আরে না না। তোকে বলতেই আমার ঘাম ছুটে গেছে।
-     ও, হ্যাঁ কাউকেই বলিস না। কেউ বুঝবে না, তোকে রাগাবে।
-     হুম। বলব না ।
-     আচ্ছা আজকে রাখি ,কালকে আমার একটা থেকে খেলা আছে। ঘুমোতে হবে। তুই বরং কালকে কলেজের পরে, আমাদের খেলার মাঠের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকিস। আমার তিনটের মধ্যে খেলা হয়ে যাবে। তারপরে আমি ওখানে চলে আসব।
-     কেন?
-     কারন আছে, একটা যায়গায় নিয়ে যাবো কালকে তোকে।
-     বাড়িতে বলে যাবো না?
-     দরকার নেই। এখন রাখলাম। কালকে অপেক্ষা করিস, বাড়ি চলে যাস না কলেজ থেকে, বুঝলি?
-     আচ্ছা ঠিক আছে।

ফোন টা রেখে মন টা ভালো হয়ে গেল। যাক ও বন্ধুত্ব ত্যাগ করে নি। আমি আমার তরফ থেকে কথা গুলো বলতে পেরেই খুশী হয়ে গেছিলাম। আর তো কিছু চাই নি। ও বরং কালকে একটা জায়গায় আমাকে নিয়ে যাবে বলল। যদিও ওর দেখানো বা চিনিয়ে দেওয়া জায়গা গুলো, সব কটা দারুন। সারা দিন এখানে সেখান ঘুরে বেড়ায়। ও মনে হয় পুরো রুদ্রপুর টাই চেনে। ঘুমোতে সময় নিলাম না আমি।

পরের দিন কলেজ ছুটির পরে আমি আমাদের মাঠে গেছিলাম। মা কে বলেই এসেছিলাম। মাঠে যাবো। মা মানা করেনি আমাকে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম মাঠের পিছন দিকে সাইকেল টা নিয়ে। পিছনেই তাশি নদী। আমরা কিন্তু এই রাস্তা টা আগে কোন দিন নি ই নি। পিছনে রাকার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম আর নদীর দিকে চেয়েছিলাম। বর্ষা কাল ছাড়া তাশি কোন দিন ই, হাঁটুর বেশী জল নিয়ে চলে না। মাঝে মাঝেই ছোট বড় আকারের পাথরের টুকরো। পুরো নদীর জল, তিন চার ভাগ হয়ে বয়ে চলেছে। ওই দিকে ছোট ছোট পাহাড়ের সমাহার। আর এদিকে রুদ্রপুর। জমজমাট একটা শহর। শহরের দিকে নদীর ধার বরাবর ছোট বড় নানা গাছের সারি। কোন বাধ নেই। তবে নদী কোন দিন আমাদের রুদ্রপুর কে ডোবায় ও নি। হয়ত একটু জল বাড়ল, কিন্তু ঘন্টা আট দশের মধ্যে জল নেমেও যায় শহর থেকে।

তখন ও রোদ। পাথরের ছায়া নদীর জলে পরে আসতে আসতে বড় হচ্ছে, সূর্য ঢলে পয়রার সাথে সাথে। ডান দিকে নদীর স্রোত বরাবর গেলে রুদ্রপুরের জঙ্গল। আজকে ভালো লাগছে। তাকিয়ে আছি সামনের দিকে। এক সময়ে রাকা এল। এসেই বলল চল চল , দেরী করা যাবে না বিশেষ। আমি দেখলাম, প্লেয়িং কিট ব্যাগ নেই ওর সাথে। মানে কলেজের বাঙ্কারে রেখে দিয়ে এসেছে। কলেজের ড্রেস টা পরে আছে। ওকে দেখেই বললাম,

-     কি রে কেমন খেলা হল আজ।
-     হল মোটামুটি।
-     ও। কেন ভালো খেলিস নি?
ও ততক্ষনে সিটে চেপে পরেছে সাইকেলের। আর আমাকে ইশারায় সামনে বসতে বলল। আমি সামনের রডে চেপে বসতেই বলল
-     হ্যাঁ খেললাম। ভালই খেলেছি।
-     জিতেছিস তো?
-     হ্যাঁ।
-     তুই গোল করালি?
-     হ্যাঁ একটা করালাম , একটা দিয়েওছি।
-     ওয়াও। জানতাম রে। ইউ মাস্ট ক্যারি ইওর প্রফেশন অন ফুটবল।
-     তুই ও ব্যাপক খেলিস, তুই কি হতে চাস?

আমি তো জানি আমার দৌড় কত টা। আমি জানিও না, আর বছর চার পরে আমার শারীরিক অবস্থা কেমন হবে। কারন আমি পড়াশোনা করে যত টা বুঝেছি, হয়ত আর কিছু দিনের মধ্যেই আমার শারীরিক পরিবর্তন আসবে, এডোলেশনের সময়েই, আমাকে আলাদা করে আইডেন্টিফাই করা যাবে। আমি যে ছেলেদের মতন নই, সেটা অনেকেই বুঝে যাবে। আমি তাই বললাম

-     আমি টিচার হতে চাই।
ও খানিক চুপ থাকল। জোরে জোরে প্যাডেল করছে সাইকেল। আমরা এখন যেখান টা যাচ্ছি, সেখান টা চড়াই একটু, হাঁপাচ্ছে ও বেশ। ওই ভাবেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলল আমাকে
-     ধুর তুই ফার্স্ট হোস। তোর মতন স্টুডেন্ট রা, ডক্টর বা ইঞ্জিনিয়ার হয়।
আমার ও ইচ্ছে ছিল না এমন না। কিন্তু আমি এটাও বুঝতে পারি না আমি কত খানি পড়াশোনা করতে পারব। বা ওই রকম একটা প্রাইম টাইম এ আমি কেমন থাকব সেটাও একটা প্রশ্ন চিহ্ন। তাই অনেক ভেবেই ঠিক করেছিলাম, টিচার হলে সব দিক ঠিক ঠাক থাকবে। ওকে বললাম
-     সবাই যা হবে, আমাকেও কি তাই হতে হবে? আবার ধর ওই সব হতে গেলে, আমাকে রুদ্রপুর ছেড়ে যেতে হবে। আমি সেটা চাই না।
-     হ্যাঁ সেটা ঠিক বলেছিস। আমার ও ভালো লাগে না এই জায়গা ছেড়ে।
-     হুম।

ততক্ষনে ও একটা জায়গায় এনে দাঁড় করালো সাইকেল টা। একটা অদ্ভুত সুন্দর জায়গা। আমি জানতাম ও না, আমাদের রুদ্রপুরে এতো সুন্দর ও একটা জায়গা আছে বলে। আমি দাঁড়িয়ে আছি একটা প্রকান্ড সবুজ মাঠের মাঝে । আর এখানে দাঁড়িয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে  মনে হচ্ছে, তাশি যেন নিজের বপু বাড়িয়ে সামনের আকাশ কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। বলছে যেন, দেখ আমিও তোমার মতম বিশাল আর মুক্ত হতে জানি। নদীর মাঝে ছড়িয়ে থাকা পাথর গুলো, যেন আরো বড় জায়গা পেয়ে খেলায় মত্ত একে অপরের সাথে। ওই দিকের পাহাড় মনে হচ্ছে ঝুঁকে চুমু খাচ্ছে তাশি কে। আর এদিকে, বিশাল সবুজ প্রান্তর। ওই প্রান্তরের শেষে রুদ্রপুরের জঙ্গল যেন সহসা রঙ বদলে কালো হয়ে গেছে, আর বিশাল বৃক্ষ গুলো , প্রকান্ড হাতির শুঁড়ের মতন দুলে দুলে ডাকছে আমাকে- আয় আয়।

আমি অভিভুত হয়ে পরেছিলাম। আমি নেমে পরেছিলাম, সাইকেল থেকে। ধীর পায়ে এগোচ্ছিলাম নদীর দিকে। পিছনে রাকা। এবারে উচ্ছস্বিত হয়ে পরলাম আমি। নিজেই নেচে নিলাম একটু। এতো সুন্দর জায়গা হয় আমি জানতাম না। রাকার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-     তোকে কত আর থ্যাঙ্কস দি ই বলতো?
-     তোর বালের থ্যাঙ্কস শুনতে আমি তোকে এখানে আনিনি, বুঝলি?

মাথাটা আবার গরম হল। আমার থ্যাঙ্কস এর ও কোন গুরুত্ব নেই ওর কাছে। আর তারপরে স্ল্যাং। নেহাত বন্ধু তাই। কিন্তু এই জায়গা টা দেখার পরে, মাথার গরম টা দেখালাম না বা প্রকাশ করলাম না। রেগেই বললাম,

-     কেন আনলি?
-     হ্যাঁ সেটাই বলব। চল ওখানে বসি।

বলে একেবারে নদীর ধারে এলাম আমরা। সেখানে নদীর জল আর নদীর পার মিশে গেছে একে অপরের সাথে। মনে হচ্ছে নদীর পার, নদী কে সম্মান দেখিয়ে ঝুঁকেছে। আর জল নদিপারের আদর খেতে ঝেইপ্যে উঠে এসেছে সেখানে। একটা প্রায় চৌকোনা বোল্ডার এ আমরা বসলাম। সাইকেল টা স্ট্যান্ড দেওয়া পিছনে। আমরা পাশা পাশি বসে। বসে কিছুক্ষন পরে, আমার দিকে ফিরে বলল,

-     এই জায়গা টা তোকে দেখালাম কারন, যখন যখন তোর মনে হবে, মানে কালকের বলা কথা গুলোর কন্টেক্সট এ বলছি আরকি, তুই আমাকে বলবি। তোর যেমন ইচ্ছে হবে, যা করতে ইচ্ছে হবে, আমাকে বলবি। এখানে এসে আমরা সেই গুলো নিয়ে ডিসকাস করব। কিন্তু তুই কোন দিন ও এই কথা কাউকে বলবি না আমাকে ছাড়া। বুঝলি?

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কালকের ভয় টা ধারে কাছে নেই আমার। মনে হল খেলার মাঠে বলা কথা গুলো আমাকে সারা জীবন রাখতেই হবে। ওকে বিশ্বাস না করা টা অন্যায়। আমার বলা কথা টা ও আমার থেকেও বেশী মনে নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ওকে বললাম

-     তুই এই জন্য আমাকে নিয়ে এলি?
-     হ্যাঁ। র‍্যাদার তুই একটা স্পেস পাবি এখানে। কালকে বলছিলি, তুই কয়েদ খানায় আছিস। এখানে এসে একটু ফ্রি হয়ে বাঁচবি। তোর যেমন করে কথা বলতে ইচ্ছে করবে, যা কথা বলতে ইচ্ছে করবে আমাকে বলবি। পোকা গুলো কে মাথায় চড়তে দিস না। এখানে এসে বের করে দিবি। ওই পোকা গুলো ভাল না।
-     তুই কি ভাবে জানলি এতো কিছু।
-     জানি আমি। কি ভাবে জানি তোকে অতো বলতে পারব না।

শেষের কথা টা আমার কানেও ঢুকল না। মিছেই ওর স্ল্যাং এ আমি রেগে যাই। ফালতু রাগ করি ও কত কথায় আমার পাত্তা দেয় না বলে। কিন্তু আজকে বুঝলাম, আমাকে ও অনেক বেশী গুরুত্ব দেয়। হয়ত আমার বাবা মা আমাকে যা গুরুত্ব দেয়, তার থেকে অনেক বেশী দেয়। আমি কোন কথা বললাম না। নিজের ভিতরের মেয়ে টা জেগে উঠল। মনে হল, একটু কাছে ঘেঁসে বসলে কেমন হয়। কিন্তু মনে হল, না থাক। আমার ভালো লাগল বলে রাকার ও ভালো লাগবে এমন কিছু না

মনের মধ্যের অনেক কিন্তুর অবসান ঘটিয়ে দিয়েছে রাকা। আমার ভিতরে পাখী গুল কিচির মিচির করলেই, রাকা কে ফোন করি। অবশ্যই ওর খেলা আর পড়ার সময় বাদ দিয়ে। মাঝে মাঝে ওর বাড়িতে গিয়ে নাচি, আবার মাঝে মাঝে চলে যাই তাশির ধারে। সময় টা ভালই কাটছিল। কেউ কিছু বুঝতে পারছিল না। কিন্তু সমস্যা আমার হচ্ছিল শারীরিক ভাবে। এইট এর ফাইনালের এর সময়েই আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার মধ্যে মেয়ে সুলভ ব্যাপার, যেগুলো বাইরে প্রকাশ পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, সেই গুলো আসতে আসতে সামনে আসছে।

প্রথম ছিল মুখ গালে কোন লোম না আসা। অনেকের ই আসে না ওই বয়সেও। কিন্তু আমার যেন একেবারে প্লেন। যেন মনে হতো কোন শিশুর মুখ। আমি সেটা বুঝতে পারতাম। লম্বা হয়ে গেছিলাম অনেক টা, কিন্তু হাতের আঙ্গুল এ কোন ছেলেদের মতন ব্যাপার ছিল না, বরং গোল গোল লম্বা হয়ে গেছিল। আমার গীটার বাজানোর জন্য, হাতের তলা দিকের থেকে উপর দিক টা বেশী নরম ছিল। পাছা অল্প ভারি হচ্ছিল। বুকের কিছু টের পাচ্ছিলাম না কিন্তু , আরেক টু ছোট বয়সে ছেলেদের মতন যে খাঁজ টা ছিল আমার সেটা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল আর একটা সফট ভাব চলে এসেছিল। এই সব গুলোই চট করে চোখে পরে না , কিন্তু ভিতরের বদল, আমি টের পাচ্ছিলাম ভালো মতন।

সব থেকে বড় কথা, আমার মানসিকতা মেয়েদের মতন হয়ে যাচ্ছিল। আমি কারোর সাথে কথা বলতাম না অন্য ব্যাপার, কিন্তু, কথা বার্তা বলতে গেলে মেয়েদের সাথে বেশী কম্ফর্টেবল ছিলাম ছেলেদের থেকে। রাকার সাথে সারাক্ষণ থাকতাম তাই ওর কথা আলাদা। কিন্তু ওর সাথেও অনেক ব্যাপারে সাছন্দ্য ছিলাম না। যেমন ওর হুড়ুম করে গায়ে ঝাঁপিয়ে পরার ব্যাপার টা তে খুব অস্বস্তি হতো। তারপরে মাঝে মাঝেই ফুটবল খেলার সময়ে, জামা বদলে জার্সি পরার মাঝখানে অস্বস্তি হতো। জামা খুলে গেঞ্জি পরে, জার্সি চেঞ্জ করার সময়ে খুব খুব বাজে লাগত। বললাম না শারীরিক থেকেও সমস্যা টা আমার মনে বেশী ছিল।বাড়িতেও আমি স্নান করতে গেলে একেবারে জামা নিয়ে যেতাম। মা বলত,

-     তুই চান করে আয় , ততক্ষনে আমি তোকে জামা বের করে দিচ্ছি বা আয়রন করে দিচ্ছি।

কিন্তু আমি মানতাম না। আমি একেবারে নিয়ে যেতাম সাথে করে। বাড়িতেও খালি গায়ে থাকা একদম অস্বস্তি কর ছিল আমার। আমার শরীর টা ছেলের, তাই কত সময়ে ছোট বেলায় খেলতে খেলতে খালি গায়ে বাপির সাথে খেলেছি। কিন্তু এখন সমস্যা হয়। বাড়ির সামনের গেটের কাছে খেলাই বন্ধ করে দিলাম আমি ভয়ে। হয়ত মা আমাকে নোটিস করত। সেটা আমাকে মা পরে বলেও ছিল।
[+] 6 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি ( চলছে) পেইজ ৩ - by nandanadasnandana - 03-02-2022, 08:32 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)