07-02-2022, 02:38 PM
নিচে চলে এলাম। দাদাকে সব বললাম, দাদা বললো তোকে চিন্তা করতে হবে না, তুই যা। মল্লিকদা আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। অপরাধী অপরাধী মুখ করে বসে আছে। আমি কাছে গেলাম।
-ভেটকি মাছের মতো বসে আছো কেনো।
আমার দিকে তাকিয়ে মরা হাসি হাসলো।
-তুমি কি ছোটো মাকে ছাড়তে চাইছো না।
-না না তুই নিয়ে যা। সারা জীবন অনেক কষ্ট পেয়েছে, ওকে আমি কিছু দিতে পারি নি।
-তুমি দিতে না পারো তার ছেলে তো দিয়েছে, তুমি তাতে খুশী নও।
মল্লিকদা আমায় জড়িয়ে ধরলেন।
-জানিস অনি আজ সকাল থেকে তোর লড়াইটা আমাকে অনেকটা বেঁচে থাকার ইন্সপিরেশন দিয়েছে। কালকে এক জায়গায় গেছিলাম, তুইতো গেলি না।
-আবার বক বক করে, পেটে কিছু কথা থাকে না। বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো।
মিত্রা হাসলো। ছোটোমা গম্ভীর।
-আমি জানি।
-তুই জানিস।
-তোমাদেরটা না, আর একজনেরটা। সে বলেনি, বলেছে যার যারটা সে বলবে।
বড়মা মিত্রার দিকে তাকালো।
-না গো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে, বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
-ঠিক আছে আর দেরি করা যাবে না, পৌনে নটা বাজলো।
রবীন সব গোছগাছ করে নিয়েছে। ঝাক্কাস একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। স্করপিও। ইসলাম ভাই তার কাজ এরই মধ্যে সেরে ফেলেছে, সবাই উঠে বসলাম। দাদাকে প্রণাম করে আমি সামনের সিটে বড়মারা মাঝের সিটে, পেছনে ইসলাম ভাই, ভজু।
সবাই চুপচাপ, ভেতরে হাল্কা এসি চলছে, বম্বে রোডে এসে আমি বললাম, বড় মা।
-বল।
-আমার কচুরী।
-মিত্রাকে জিজ্ঞাসা কর।
-রাক্ষুসী সব খেয়ে নিয়েছে।
-যাঃ ও কথা বলতে হয়। ছোটো মা বললো।
ভিউইং গ্লাস দিয়ে দেখতে পাচ্ছি, ইসলাম ভাই মুখে কাপড় চাপা দিয়েছে।
-তুই আজ নির্ঘাত পায়খানা করবি। কাল থেকে খেয়ে যাচ্ছিস। চারটে কচুরী তাও লোভ সামলাতে পারলি না।
-চারটে না দশটা।
-এ্যাঁ বলিস কি। আমি পিছন ফিরলাম। তোর একটুও লজ্জা করে না।
-তুই সকাল থেকে খুন-জখম, মল নিয়ে পরে রইলি ভাবলাম ধাবায় বসে বেশ জমপেশ করে খাবো, তা না বড়মা কচুরী জিলিপি আনো তো। খিদে পেয়েছে খেয়ে নিয়েছি।
-তোর একটুও মনে হলো না, অনি খায় নি ওর জন্য এ্যাটলিস্ট দুটো রাখি।
-খাওয়ার সময় মনে ছিলো না। খাওয়া শেষ হতে মনে পরলো, তুই খাস নি।
এবার কেউ আর চুপ থাকতে পারলো না, হো হো করে হেসে ফেললো।
-আমি একা খেয়েছি নাকি, তুই ছাড়া সবাই খেয়েছে।
-তোর মতো।
-না সবাই একটা একটা খেলো। ভজুকে বল না কিপ্টার মতো নিয়ে এসেছিলো কেনো।
-নাগো অনিদা বড়মা ৫০টা আনতে বলেছিলো আমি এনেছি।
-৫০টার মধ্যে তুই ১০ পিস। মানে ২০ পাসের্ন্ট। খেমা দে। সত্যি তোর পেট।
-কয়েকদিন হলো বুঝলি খিদেটা বেড়ে গেছে।
-বুঝেছি।
-আর বক বক করতে হবে না, তুই এই বিস্কুটের প্যাকেটটা নে। বড়মা বললো।
-বড়মা পুরোটা। অনি তুই কি ভালো ছেলেরে, তুইতো সবাইকে দিয়ে খাস তাই না, তুই একলা খেতে পারিস না। দে আমাকে, সবাইকে ভাগ করে দিচ্ছি।
সবাই হাসছে।
-বড়মা।
-বল।
-একটা কাজ করবে।
-বল।
-নিরঞ্জনবাবুকে একটা ফোন করো, বলো আমাদের সঙ্গে যেন আজকে যায়। তোমার ফোন থেকে করো। আর বিস্কুটের প্যাকেট আর আছে।
-পেছনে দিতে বলছিস তো।
-হ্যাঁ।
-দিয়েছি। মিত্রাকেও দিয়েছি একটা প্যাকেট। ছোটো নিরঞ্জনকে ফোনটা ধরে দেতো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ বন্ধ করে দুষ্টুমির ইশারা করলো।
আমি হাসলাম।
-তুই কিন্তু আমার সামনে বসে আছিস দেবো চুলের মুঠি ধরে।
-দাঁড়া বাপু তোরা।
-কেরে নিরঞ্জন। শোন আমি এখন…..কোথায় রে অনি…..তুই আমাদের সঙ্গে আজ যাবি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আয়…..শোন যা বলছি কর……ঠিক আছে…..মেরুন কালারের গাড়ি……দাঁড়া বাপু দিচ্ছি…… বলে দিচ্ছে।
ছোটোমা রবীনকে ফোনটা দিল রবীন গাড়ির নম্বরটা বলে দিলো।
-কটা বাজে বলতো।
-দেখ সামনের দিকে ঘড়ি আছে, তুই কানা।
সত্যি ঘড়ি আছে, দেখলাম, ১০টা বাজে।
ইসলাম ভাই-এর ফোনটা বেজে উঠলো।
আমি তাকালাম।
-আসসালামু আলাইকুম……..এ্যাঁ কি বলছিস…….তুই ওখানে সেঁটে যা…….আমাকে টাইম টু টাইম খবর দিবি……
-রবিন সাইড কর গাড়ি।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম, মিত্রাকে বললাম, তুই ফ্রন্ট সিটে যা। আমি পেছনে গিয়ে বসলাম। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালো।
-তোর কথাই ঠিক হলো। সাতদিন টাইম চেয়েছিলি। হলো না। নিজে সুইসাইড করেছে। তোর ছেলেপুলেরা পাক্কা কাজ করছে। সত্যি অনি মাথা থেকে একটা বোঝা নামিয়ে দিলি তুই।
ইসলাম ভাই আমার হাতটা ধরলো, ছোটোমা পেছন দিকে তাকালো, হাসলো কিন্তু প্রাণ নেই। খুব আস্তে কথা হচ্ছে, বড়মা পযর্ন্ত শোনা যাবে। বড়মার ফোনটা বেজে উঠলো।
-দেখতো ছোটো কি বলে, মরন ফোন করার আর সময় পেলে না।
-আঃ বড়মা গাল দিও না আমি দাদাকে বলেছি তোমার ফোনে ফোন করতে।
-সেটা আগে বলবি তো।
-হ্যাঁ, বলো।
-শোন তোর সেই মিঃ মুখার্জী ফোন করেছিলো।
-কি বললো।
-কাজ হয়ে গেছে।
-দু বাড়িতেই।
-হ্যাঁ। ওদের এ্যারেস্ট করেছে।
-আর।
-একটা বাজে ব্যাপার হয়ে গেলো।
-কি।
-মল নাকি সুইসাইড করেছে।
-এটা তোমায় কে বললো, মিঃ মুখার্জী না অন্য কেউ।
-আমাদের ওই বাচ্চা ছেলেটা, যাকে তুই পাঠালি।
-মনে হচ্ছে ঠিক খবর পায় নি, আমি তোমায় একটু পরে ফোন করবো।
-লেখাটার এ্যাঙ্গেল তাহলে বদলাতে হবে।
-একটু দাঁড়াও পরে বলছি।
-ঠিক আছে, আমি তোর বড়মার ফোনেই তাহলে ফোন করবো।
-ঠিক আছে, মল্লিকদা ঠিক আছে।
-খবর শুনে খুব খুশি।
-আমাকে ফোন করে একটা থ্যাঙ্কস দিতে বলো।
-নে কথা বল।
-কি গুরু কেমন বুঝছো।
-একখানা গেরো উদ্ধার হলো।
-হ্যাঁ। আর একটা গেরো আছে। সেটা বলে আসি নি, তোমার তখন মন ভালো ছিল না।
-হ্যাঁরে, সকাল থেকে কি সব ঘটে গেলো।
-তুমি বলো, আমি যা করেছি ভুল করেছি।
-একেবারে নয়, আমি তোকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করি। কি বলছিলি বল।
-এটা তোমার দায়িত্বে দিচ্ছি, তুমি পালন করবে, দাদা পারবে না।
-বল।
-আজ অনেকে দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আগে তোমার সঙ্গে তারা কথা বলবে, তারপর বুঝলে, দাদার কাছে পাঠাবে। নিচে বলে দাও, আজ তোমরা ব্যস্ত। সন্দীপকেও এ কথা বলে দাও। আর একটা কথা।
-বল।
-মিঃ ব্যানার্জী আজ দাদার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
মিত্রা ছোটোমা বড়মা পেছন ফিরে তাকালো। ওরা গোগ্রাসে আমার কথা গিলছে।
-কেনো!
-ও একটা মিউচুয়ালের অফার নিয়ে আসবে।
-কি বলছিস তুই।
-হ্যাঁ। পরের কোপটা ওর ওপর পরবে, ও সেটা জানে, বহুত শেয়ানা লোক, গন্ধ পেয়ে যাবে। কি বলে শুনে যাও। তোমার কাছে অতটা জোরাজুরি করতে পারবে না, দাদার পায়ে হাতে ধরে ফেলবে, উনি সব পারেন।
-কি বলবো।
-দিন পনেরো সময় নেবে, অনির সঙ্গে আগে কথা বলি তারপর, কাটিয়ে দাও। নাও ছোটর সঙ্গে কথা বলে মন ভালো করো।
ছোটকে ফোনটা দিলাম। ছোট বাঁকা ভ্রু করে আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ ফোনে কথা হলো হাসাহাসি হলো। বড়মাকে ফোনটা দিলো।
-হ্যাঁরে অনি, ডাক্তার এর মধ্যে এলো কি করে। বড়মা বললো।
-ছিলোই তো।
-এটা তো তুই আগে বলিসনি।
-দিদিগো ও একটা জিনিস, পাইথন আগে শিকারটা ধরে শিকারের মুখটা মুখে পুরে নেয় তারপর ধীরে ধীরে গিলে খায়। ইসলাম ভাই বললো।
-ঠিক বলেছো ভাই। হ্যাঁরে তোর এই মিশনে আর কটা আছে।
-জানিনা।
-ন্যাকামো করিসনা। তুই সব জানিস।
-বিশ্বাস করো।
-দিদি তুমি ওর পেট থেকে বার করতে পারবে না, দেখলে না আজ থেকে আট বছর আগের কথা আমি আজ জানলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন, তুই এখানে এসে বোস।
-কেনো।
-বোসনা, দরকার আছে।
আমি পেছনের সিট থেকে টপকে মাঝের সিটে গিয়ে দুজনের মাঝখানে বসলাম। মিত্রা একবার পেছন ফিরে তাকালো। আমি হাসলাম।
-রবিন সামনে ধাবা পরবে জানিস তো।
-হ্যাঁ।
-ক্ষিদে লাগেছে দাঁড় করাস।
-তুই কি ভালো রে।
-খারাপ কোনদিন ছিলাম।
আমার দিকে তাকালো, কি খাওয়াবি।
-আমার পকেটে পয়সা নেই, তোর কাজ করলাম, খাওয়াবি তুই।
-হুঁ। মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
বড়মার দিকে হেলে পরলাম।
-বল তোমার প্রশ্নটা কি।
-ডাক্তার এর মধ্যে ভিড়লো কি করে।
-ডাক্তার তো ভিড়েই ছিলো, মিত্রা সব বলেছে নাকি তোমায়, আমাকেও বলে নি, উদ্ধার করতে হচ্ছে। এরা সব লতায় পাতায় জড়িয়ে রয়েছে। আগাছাও কিছু আছে।
বড়মা আমার দিকে তাকালো, চোখে চোখ মনিদুটো স্থির। সকাল থেকে বড়মাকে অনেক বেশি বোঝদার মনে হচ্ছে, ঝটপট সব ধরে ফেলছে। আগে কখনো বড়মার পারফরমেন্স এরকম দেখি নি।
-তুই ঠিক বলছিস।
-তোমাকে অন্ততঃ ভুল বলবো না।
-কি করবি।
-সেটা তোমায় বলবো না কাজ শেষ হলে জানতে পারবে।
-ঠিক আছে।
বড়মা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরলাম
-তুমি রাগ কোরো না, এখনো সময় হয় নি, সময় হলেই তোমাকে জানাবো।
-দাদা ধাবায় ঢুকবো তো।
-হ্যাঁ রে।
-আমরা এসে গেছি।
-তাহলে ঢোকা।
আমরা সবাই একে একে নামলাম।