06-02-2022, 02:42 PM
দাদারা নিচে চলে গেলেন, আমি দরজা বন্ধ করলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, অনাদিকে ফোন করলাম।
-গুরু সত্যি তুই বড় খেলোয়াড়।
-কেনো।
-যে পুলিশ তোর সঙ্গে কথা বলার আগে আমাকে চমকাচ্ছিল, এখন সে দেখি আমায় ভরপুর তেল দিচ্ছে।
-কেনো।
-জানিনা।
-অমল কি করছে।
-কাল থেকে মাতব্বরি করছিলো, এখন হাওয়া। তোরা কখন রওনা হচ্ছিস?
-সকাল থেকে অনেক টেনসন গেলো, এবার রওনা হবো।
-তোর আবার কিসের টেনসন?
-আছে।
-তুই ছোটো কাজ করে পথ দেখালি, আমি একটা বড় কাজ সেরে ফেললাম।
-নে বাসুর সঙ্গে কথা বল।
-বল বাসু।
-কখন বেরোচ্ছিস?
-এই বেরোবো এবার।
-চিকনাকে খবর দিয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-হ্যাঁরে দেবার বাবা-মা দুজনকে নাকি এ্যারেস্ট করেছে!
-হ্যাঁ।
-দেবার খবর কিছু পেয়েছিস?
-না।
-তুই ওখান থেকে একটু দূরে সরে যা।
-দাঁড়া।
-তুই ফোনটা কাট আমি আমার ফোন থেকে তোকে ডায়াল করছি।
-আচ্ছা।
-হ্যাঁ, বল।
-শুনছি তো অনেক কথা, ও নাকি কলকাতায় কোথায় লুকিয়ে আছে।
-শেলি কি প্রেগনেন্ট ছিলো?
-পুলিশ জানে না, আমরা জানতাম।
-কি করে।
-সামন্ত ডাক্তারের কাছে মাঝে গেছিল দেবা, খালাস করার জন্য।
-তাই।
-হ্যাঁ।
-শেলি রাজি হয় নি। কয়েকদিন ধরেই গন্ডগোল চলছে, অনাদি সমাধান করতে চেয়েছিলো, দেবাকে অমল ব্যাক করলো।
-তাই।
দরজাটা খট খট করে উঠলো।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি গিয়ে শুনবো।
দরজাটা খুললাম, সামনে দাঁড়িয়ে ইসলাম ভাই, ছোটমা। পেছনে মিত্রা, বড়মা তার পেছনে দাঁড়িয়ে ভজু। অমিতাভদা মল্লিকদাকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম তারা ব্যাপারটা জেনেছে।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
-তুই আমাকে ক্ষমা কর অনি।
-কেনো।
-তুই সব জেনেও এতদিন বলিস নি।
-আমি কি জানি বলবে তো আগে।
-আমার সম্বন্ধে।
-তোমার সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না।
-আমায় ভজু এখুনি বললো। তুই বল ভজু সব মিথ্যে বলেছে।
-ভজু তোমায় মিথ্যে বলে নি, আবার সম্পূর্ণ সত্যিও বলেনি। ও যতটুকু লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছিলো সেইটুকু বলেছে।
-তাহলে তুই এতদিন বলিসনি কেনো। আমায় বিশ্বাস করিস না।
-তুমিই তো একদিন বলেছিলে ইসলাম ভাই, ‘অনি বড় হতে গেলে তোর দুটো হাতকেও তুই বিশ্বাস করবি না।’ আমি কি অন্যায় করেছি বলো।
-আমি তোর সঙ্গে পারবো না।
-তুমি তো কোনোদিন হারতে জানো না। তুমিই তো বলেছিলে, পাঠানরা জঙ্গের ময়দানে হয় জেতে না হলে প্রাণ দেয়। তাহলে এই কথা বলছো কেনো।
-তোর মনে আছে।
-হ্যাঁ।
-তুই বললে আমি তোর পায়ে আমার মাথাটা ফেলে দিতে পারি।
-বড়মার তোমাকে দেখার ভীষণ সখ ছিলো। এইভাবে তোমাকে দেখাতে চাই নি, ঘটনাটা ঘটে গেলো, কি করবো বলো।
-তুই আমার বোনকে আর মা বলে ডাকবি না।
-এ কথাও বা তোমাকে কে বললো।
-বোন বলেছে।
-দেখো ইসলাম ভাই, ছোটোমা যেদিন আমাকে জোর করে বলেছিলো, তুই আমার সম্বন্ধে জানতে চাইবি না, জানতে চাইলে আমার থেকে কেউ বেশি কষ্ট পাবে না। সেদিন থেকে আমি ওই চ্যাপ্টারটা ক্লোজ করে দিয়েছি। যেহেতু আমার ছোটো মা। মাকে কোনোদিন আমি কষ্ট দিতে পারবো না।
ছোটোমা আমাকে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
-ছোটো মা আমার এখানের কাজ শেষ, এবার বেরোতে হবে।
-না আমি যাবো না।
-যেতে তোমাকে হবে ছোটোমা।
আমার গলার কাঠিন্যে কেউ যেন ওদের গালে একটা কষে থাপ্পর কষালো। আমার দিকে সবাই অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে, তোমাকে তার সাক্ষী থাকতে হবে। তোমরা চেয়েছিলে অনি তোমাদের বলে সব কাজ করুক, তোমাদেরও কিছু বলার থাকতে পারে।
-তোর কাছ থেকে আমি কোনোদিন আর কিছু জানতে চাইবো না।
-কেনো জানতে চাইবে না, তাহলে তুমি আমাকে তোমার ছেলে হিসাবে স্বীকার করছো না। যাও তোমরা নিচে যাও আমি ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে কিছু কথা বলে নিচে যাচ্ছি, দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে যাবো। কচুরি, জিলিপি তরকারি নিয়ে নেবে, গাড়িতে বসে খাবো।
ওরা নিচে চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করলাম।
ইসলাম ভাই আমার পা জড়িয়ে ধরলো
-জানিস অনি তোর জন্য আমার বোনকে আমি ৩০ বছর পর ফিরে পেলাম। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।
আমি ইসলাম ভাইকে হাত ধরে তুললাম, ইসলাম ভাই আমার থেকেও এক হাত লম্বা।
-বল তুই আমায় কি করতে হবে।
-আমার কাজ শেষ তোমার কাজ শুরু করতে হবে।
-আমি দাদার মুখ থেকে নিচে সব শুনলাম, আমার জন্য কিছু বাকি রাখিসনি তুই।
-আছে। তোমাকে তিনটে অপশন দিচ্ছি তুমি বেছে নাও।
-বল।
-এক তুমি কলকাতা ছেড়ে এখুনি চলে যাও, দুই তুমি আমার সঙ্গে এখুনি চলো, তিন তুমি দামিনী মাসির কাছে গিয়ে থাকো।
-কেনো বল।
-মল তোমাকে ছাড়বে না। ও রাজস্থানী। একটা মরণ কামড় দেবে, সেটাও আজকের মধ্যে।
মনে হচ্ছে আজকে প্রথম ইসলাম ভাই-এর পা দুটো একটু কেঁপে উঠছে।
-ও তোমার এ্যান্টি অবতারকে ফিট করতে পারে।
-তোর কথা মানছি। অবতার এ কাজ করতে ভয় পাবে।
-তুমি ভাবছো কি করে। আমি যদি বড়ে দিয়ে রাজা খেতে পারি ও পারবেনা কেনো, সকাল থেকে তুমি কোনো রেসপন্স করো নি। যদিও খেলা শুরু হয়ে গেছে।
-এ খেলার পরও তুই বলছিস ও করবে।
-শেষ ঝুঁকিটা ও নেবে। আমাকে আরও সাতদিন তোমায় সময় দিতে হবে।
-তুই বল কি করবো।
-আমার কাছে থাকাটা তোমার সবচেয়ে বেশি সেফটি।
-তুই কি তোর সঙ্গে আমায় যেতে বলছিস।
-হ্যাঁ।
-একটা মেশিন ছাড়া, আমি কিছু নিয়ে আসি নি।
-আমি তোমাকে এই মুহূর্তে ছাড়তে চাইছি না।
-আমাকে পনেরো মিনিট সময় দে।
-ঠিক আছে। বাড়ির বাইরে যাবে না। এখানে পৌঁছে দিতে বলো। যে ভাবে তুমি এসেছো সেই ভাবে।
-ভজুকে নিয়ে চল।
-তাই হবে। তোমার রাজত্ব কে সামলাবে।
-রতনকে বলেছি।
-তোমার ফোন।
-এটা আমার পার্সোনাল ফোন। কাজেরটা রতনের কাছে আছে।
-দেরি করবো না, বেরিয়ে পরতে হবে।
-ঠিক আছে। তুই যা বললি তাই হবে।