Thread Rating:
  • 90 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
#98
 কিন্তু সেদিন একটা কনটেম্পোরারি স্টাইল এ নাচ চলছিল। একটা হিন্দি গানে। বিটস গুলো ভালো ছিল বলে দেখছিলাম। এমন সময়ে প্রশ্ন টা ধেয়ে এল

-     কি বে, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে দেখছিস?
 
                                                          পর্ব চার
আমি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি রাকা। উফ ভয় পেয়ে গেছিলাম। মনে মনে ভাবলাম, যাক মেয়ে দেখছি বলল। মাগী দেখছিস বলে নি আমার বাবার ভাগ্যি। প্রশ্ন টা মাথায় ছিল, যে এতো ভালো ভাষায় কথা তো রাকা বলে না!  উত্তর টাও পেয়ে গেছিলাম কিছু টা ভাবতেই। যে ওখানে হয়ত এমন কোন মেয়ে আছে, যাকে রাকা পছন্দ করে।তাই মাগী টা বলতে পারে নি।  তখন ক্লাস এইট এ পড়ি। কো-এড স্কুল। অনেক কিছুই চলে আশে পাশে। আমি বুঝতেও পারি আর অনেক কিছু জানিও। আমাকে কেউ ঘাঁটায় না কারন আমি ফার্স্ট হতাম। টিচার্স দের প্রিয় ছিলাম। কাজেই অনেকেই এড়িয়ে চলত আমাকে। একমাত্র এই ছেলেটাই, একেবারে, সাধারনের মতন করে মিশত আমার সাথে। তখন বুঝি নি পরে বুঝেছিলাম। আমাকে গুরুত্ব না দেওয়াটাই, আমার ওকে ভালো লাগার কারন ছিল। সে আমাকে জাস্ট বন্ধু ভাবত। কোন ফার্স্ট বয় নয়। আর কিচ্ছু আমাকে ভাবত না ও। জাস্ট একটা বন্ধু।
রাকা যখন বলল মেয়ে দেখছি কিনা। উত্তরে আমি শুধু হেসেছিলাম। বরং চেয়েছিলাম, ও এটা মনে নিয়েই থাকুক আমি মেয়ে দেখছিলাম। আমার নাচের উপরে দুর্বলতা যেন কেউ জানতে না পারে। আমি ওকে সাড়া দিই নি। সাইকেল টা নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। ও কিছু পরেই দেখলাম চলে এসেছে আমার পিছনে।

-     কি বে বললি না, কাকে দেখছিলি?

আমি আবার তাকালাম ওর দিকে। কি বলব? আমার মেয়েদের উপরে কোন ইন্টারেস্ট নেই। সেটা ওকে বলা টা ঠিক হবে না। তাই একটু ঘুরিয়ে ওকে বললাম,
-     আমার কথা ছাড়। তুই মনে হয় অঞ্জনার জন্য আসিস তাই না?

কিছুক্ষন চুপ থেকে প্রায় ঝাঁপিয়ে পরল পিছনে থেকে আমার উপরে। খুব অস্বস্তি হয় আমার , ছেলেরা এই ভাবে গায়ে পরলে। নিজের অস্বস্তি টা রাগের মাধমে দেখালাম আমি। আমি তেড়ে গেলাম ওকে,
-     আরে ধুর ছাড় না। কি সব সময়ে ঝাঁপিয়ে পরিস গায়ের উপরে।
-     কেন বাল? তুই তো একটা ছেলে। না ঝাপানোর কি আছে?
কি বলব? আমার অস্বস্তি হয়। ওকে সেটা বলতে পারলাম না। আমার অস্বস্তি টা আমার কাছেই কয়েদ আছে। কাউকে বলতেও পারি না। আমি আবার বললাম

-     কই বললি না তো। অঞ্জনার জন্য আসিস নাকি?
-     আরে সেই জন্যেই তো ঝাঁপালাম। তাতে তোর সোনার অঙ্গ ক্ষয়ে গেল।
-     মানে সত্যি বলেছি? 
-     হ্যাঁ রে ভাই

রাকার গলায় হতাশার সুর। বুঝলাম পাত্তা দেয় না। মনে মনে ভাবলাম, ওরে সবার কস্ট লাগে পাত্তা না পেলে। কিন্তু কেন ভাবলাম বুঝলাম না। ওকে বললাম,

-     পাত্তা পাস না?
-     নাহ! সবাই তোদের মতন ছেলেদের পিছনে ঘোরে বুঝলি? আমি পড়াশোনায় ভালো নই। তারপরে তোদের মতন বড়লোক ও নই।
-     বাজে বকিস না। আমরা এমন কিছু বড়লোক নই। আর ভেবে দেখ, তুইও যা পাস আমিও তাই পাই। পড়াশোনা, দু বেলা খাবার আর খেলা ধুলা। কিন্তু তুই পড়াশোনায় ভালো না হলেও, খুব ভালো ফুটবল খেলিস।
-     ছাড়। সে তুই ও ভালো খেলিস। আমি তো জানতাম ই না তুই ই ফার্স্ট হোস। তোর উপরে রাগ আমার কেন ছিল জানিস? আমি জানতাম অঞ্জনার তোর উপরে ক্রাশ আছে নিদারুন। ভাবতাম একটা ছেলে সব দিক থেকে কি ভাবে ভালো হয় এতো?
-     হাহাহাহাহা
-     আবার হাসছিস কেন? আমার মজাকি ওড়াচ্ছিস?
-     আরে না না। তোকে আমি খুব সিরিয়াসলি নি সব সময়ে। বিশেষ করে গত মাসের ম্যাচ টার পরে। আমি জাস্ট তোর ফুটবলের ফ্যান।
-     ওয়াও।
-     আর তুই নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস। এই স্কুলের কোন মেয়ের সাথেই আমার কোন দিন কোন রিলেশন হবে না।
-     কেন? অন্য কোথাও নৌকা ভিড়িয়েছ চাঁদু?
-     কেন? এটাই ভাবিস কেন যে সব সময়ে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের রিলেশন হতেই হবে? আমার অন্য কারন থাকতে পারে না?

চুপ করে গেল একটু রাকা। যেখান টায় আমরা রয়েছি এখন সেটা তাশির একটা দিক। একটা তিন রাস্তার মোড় এটা। আমাদের রুদ্রপুরের খুব গুরুত্বপূর্ন একটা জাংশন। এখানে সন্ধ্যে বেলায় বেশ ভিড় হয়। নদীর ধারে লোক জন থাকে। অনেক লাভ বার্ড ও থাকে। অনেক কিছু খাবার দাবারের দোকান। বিশেষত স্ট্রীট ফুড। দেখলাম অনেক কিছু বিক্রী হচ্ছে। কিছু টাকা ছিল কাছে আমার। ওকে বললাম,
-     কিছু খাবি?
এদিক ওদিক দেখে বলল
-     কি খাবি?
-     চল চাউমিন খাই। একটা কিনব হাফ হাফ করে খাব। কিন্তু কেউ যেন জানতে না পারে। বাড়িতে বকবে।
-     আরে ধুর আমি কাকে বলতে যাব। আমারি বাপ কেলাবে আমাকে, জানলে।
চাউমিন অর্ডার দিয়ে দুজন দাঁড়িয়ে আছি। ও আমাকে বলল
-     তোর আগের কথাটা বুঝলাম না রে। কেন তবে রিলেশন করতে চাইছিস না কেন। দে আর বিউটিফুল ইনডিড।
-     হ্যাঁ সে ঠিক। সবাই খুব সুন্দর। কিন্তু আমার ভালো লাগে না
-     না, মানে তুই পড়াশোনায় অনেক ভালো। হতেই পারে আগে তুই কেরিয়ার এ কন্সেন্ট্রেট করবি। কিন্তু ভালো লাগে না বলিস না। ভালো না লাগার তো কোন কারন নেই তাই না?
-     না সত্যি ভালো লাগে না আমার। র‍্যাদার বলতে পারিস, আমি ভালোবাসি না ব্যাপার টা।
-     বাজে কথা, তবে যে দাঁড়িয়ে ছিলিস বাইরে? এমনি এমনি নাচ দেখছিলি?
-     হ্যাঁ?
-     ঢপ

আমি ওর দিকে তাকালাম। বোঝার চেস্টা করলাম, যে ওকে বলা যায় কিনা। পরে ভাবলাম বলে দেওয়াই যায়। ও ব্রহ্মাণ্ডে কাউকে পাত্তা দেয় না। কারোর সাথে সদ্ভাব নেই। ও আর কাকে বলবে? ততক্ষনে চাউমিন চলে এসেছে। আমরা খেতে শুরু করে দিলাম। ওকে বললাম,

-     সত্যি আমি নাচ দেখতেই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
-     অ্যাঁ
-     হ্যাঁ।
-     মানে তুই নাচ ভালোবাসিস? মানে ওই নাচ?
-     ওই নাচ এই নাচের কি আছে? নাচ তো নাচ ই।
-     না , কিন্তু ও তো মেয়েদের নাচ।
-     ইয়েস। আমার ভালো লাগে। তোকে একটা কথা বলব। আগে বল কাউকে বলবি না ।
-     আরে আমি আর কাকে বলব? আমাকে কেউ ভরসা করে কোন কথাই বলে না ।
-     নাহ থাক।

এক চামচ চাউমিন মুখে পুরে, গরমের চোটে হাউ হাউ করছিল রাকা। বুঝতে পারছি, রেগে গেছে। হাত পা নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিল বলতে, বল দেখি বাপু, নাটক করিস না। কোন রকমে সেটা খেয়ে বলল

-     দ্যার বাবা, এই জন্যেই আমি কারোর সাথে কথা বলি না। এতো রাখ ঢাকের কি আছে ভাই? যা হয়েছে বলবি। বিশ্বাস করলে করব না করলে না করব।

আমি তাকিয়েই ছিলাম ওর দিকে। একেবারে পাতে দেবার যোগ্য ও নয়। ওই যে অঞ্জনার নাম করছিল। সত্যি খুব বড়লোকের মেয়ে। আমাদের থেকেও অনেক বেশী বড়লোক। রাকা কে জীবনে পাত্তা দিত না ও। কারন রাকা, কালো, দেখতে হয়ত ভালো, কিন্তু পড়াশোনায় ভাল না। এখন থেকেই ওর কেরিয়ার নিয়ে সবাই নিশ্চিত যে ও কিচ্ছু হবে না বড় হয়ে। কিন্তু আমার রাকার এই কথা টা ভালো লাগল। যে রাখ ঢাকের কি আছে। কিন্তু আমার ভয় অন্য জায়গায়। আমার ভয় আমাকে যদি ঘেন্না পায় ও। কারন এটা তো আনিউসুয়াল। ওকে বললাম,

-     আগে বল বন্ধুত্ব রাখবি?

জানিনা কি ভাবে বলে দিয়েছিলাম এই বন্ধুত্ব রাখবি কথাটা। বা কেনই বা বলেছিলাম। এমন কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ছিল না ও জীবনে আমার। তাও মনে হয়েছিল, কেউ ঘেন্না নিয়ে যেন বন্ধুত্ব ত্যাগ না করে। সে যদি আবার সবাই কে বলে বেড়ায় তখন ব্যাপার টা খারাপ হবে আরো। কিন্তু মনে ভিতরে কয়েদ থাকা কিছু ইচ্ছে, যেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না। ইচ্ছে তো করে সেটা কেউ অন্তত জানুক , আমাকে ভুল না বুঝে। ও একটু অবাক হয়ে গেল আমার কথা শুনে। মানে, এমন কি বলবে যাতে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না? অনেক পরে বলল

-     দেখ ভাই, তোর বন্ধুত্ব আমার কাছেও ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু কি করেছিস তুই? কোন অন্যায় করেছিস? সেটা করলেও বলে দে। দুজনে মিলে উপায় বের করব সেখান থেকে উদ্ধারের। কারোর থেকে ক্ষমা চাইতে হলে আমি চেয়ে আসব তোর হয়ে ক্ষমা।  কি করেছিস সেটা তো বল? দ্যাখ যদি লাভ লেটার লিখে থাকিস , আমার নামে চালিয়ে দিবি। তাহলে তোকে কেউ কিছু বলবে না। আর আমাকেও কিছু বলবে না। কারন আমি এমন অনেক করেছি। বড়জোর বাবাকে বলে দেবে। মার ধোর করবে। ম্যানেজ করে নেব। বলে দে ভাই। কারোর বাড়িতে ঢিল ছোঁড়া। মেয়েদের পিছন থেকে সিটি দেওয়া। সব কিছু আমি নিয়ে নেব নিজের  নামে। তুই মাইরি আর টেনশন দিস না তো আমাকে। কি করেছিস বল?

আমি কি বলব। ভাবলাম। এই ছেলেটার সাথে মিছেই আমি দূরে দূরে থাকতাম। এতো ভালো ছেলে। তাও ভয় তো যাচ্ছে না মন থেকে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে এই অপরাধ গুলো হলেই ওর কাছে বেস্ট সলিউশন আছে। আর এই রকম গর্হিত অপরাধ করলেও ও মাফ করে দেবে আমাকে।আর বলছে দুজনে মিলে সল্ভ করবে। মানে আমাকে ফেলে চলে যাবে না।  সাহস টা এলো। তবে বলে দেখি। ততক্ষনে আমাদের খাওয়া হয়ে গেছে। তিরিশ টাকা প্লেটের দাম দিয়ে দুই বন্ধু মিলে আবার হাঁটতে শুরু করলাম সাইকেল নিয়ে। ওর সাইকেল নেই, হেঁটেই ও স্কুলে আসে। কিছু টা এসে বললাম

-     আজকেই প্রথম না । আমি ওখানে মেয়ে দেখতে নয়, নাচ শিখতে যাই। এখানেই না। আমার বোন নাচ শেখে যেখানে, আমিও চলে যাই ওকে আনতে প্রায় ঘন্টা খানেক আগে। ওখানে দাঁড়িয়ে নাচ দেখি, আর সেই নাচ মনে আমার আঁকা হয়ে যায় একেবারে
-     রিয়েলি?

রাকা না অবাক, না বিরক্ত একটা মুখ করে শুনছে আমার কথা। হয়ত ও অবাক হয়েছে। বা হয়নি। বিরক্ত হয়েছে, কিম্বা হয় নি। আমার কাছে সেটা বড় কথা না, আমার কাছে বড় কথা হল একজন শ্রোতা, যে আমার এই ব্যাপার টা শুনছে। বুঝতে চেস্টা করছে। কে বলে আমাদের মতন যাদের ওরিয়েন্টেশন তাদের বন্ধু করতে নেই? একশটার মধ্যে একটা হয়ত জেনুইন বেরোল। যে হয়ত সত্যি করেই বুঝল তাকে? মনের কয়েদ থেকে পাখিটা একজনের কাছে বেরিয়েছে। সে পাখি টা কে খাবার দেবে কি না না দেবে সেটা তার ব্যাপার কিন্তু এই প্রথম বার আমি বের করলাম পাখি টা কে।সেটাই অনেক আমার কাছে। ওকে বললাম,

-     হ্যাঁ রিয়েলি। তুই জানিস, একদম আইডেন্টিক্যাল আমি নেচে দেব ঠিক ওরা যেমন করে নাচে বা নাচবে।

বলতে বলতে আমি খুশী তে প্রায় নেচে উঠলাম। ও আমার দিকে ভ্যাবলার মতই তাকিয়ে আছে। বুঝলাম না সেটা কেন? হয়ত ও ঘাবড়ে গেছে এটা ভেবে যে, এটা কি সেই কথা টাই, যেটার বললে ও বন্ধুত্ব ভেঙ্গে দেবে বলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম? নাকি, আমি নাচি বা নাচতে ইচ্ছে করে সেইটা বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাবার কারন হিসাবে আমি ধরছিলাম। রাকা ভ্যাবলার মতন খানিক চেয়ে থেকে বলল,

-     টেল মি, ইজ দিস রিয়েলি ইম্পর্ট্যান্ট ফর ইউ?

আমি উত্তেজনায় সাইকেলের সিট এ একটা কিল মেরে বললাম
-     ইয়েস।

এটা কি কম বড় কথা নাকি আমার কাছে। মনের ভিতরে কয়েক শো কয়েদি পাখির মধ্যে একটা বের করেছি। আর সেখানে ও জিজ্ঞাসা করছে, সেই পাখি টা কে আমি ভালোবাসি কিনা সত্যি করেই। উত্তেজনা হবে না? খুশী হবে না মনে? এতোটা কেই বা জিজ্ঞাসা করেছে? আমার উত্তেজনা দেখে খুব কনফিউজ হয়ে বলল

-     এটা তো, খুব ভাল। এর জন্য আমি বন্ধুত্ব ভাঙব কেন? আই মিন হোয়াই ইউ থিঙ্ক, ইওর প্যাশন উইল ইঞ্জিওর আওয়ার ফ্রেন্ডশিপ?
-     তুই রাগ করিস নি তো?
-     না একদম না। কে রাগ করে এটা তে?
-     আমার বাবা মা ।
-     কেন?
-     তুই বুঝছিস না। দিজ আর গার্লি থিং। দে ডোন্ট ওয়ান্ট,  আই গেট মাইসেলফ এনগেইজ উইথ অল দিজ।
-     বোগাস। ডোন্ট ওয়ারি। আমি খুব এপ্রিশিয়েট করলাম ব্যাপার টা।

আমি আবার তাকিয়ে রইলাম। আমার এবারে অবাক হবার পালা। প্রতি মুহুর্তেই যেন বন্ধুত্ব টা আর ও নিবিড় করে আমি অনুভব করছি। হয়ত আমার এই ব্যাপার গুলো কে ও প্যাম্পার করছে তাই আমার ভালো লাগছে। কিন্তু তাই বা কম কি? হয়ত আমাকে খুশী করতে চাইছে ও। কিন্ত সেটাও তো বিশাল ব্যাপার আমার কাছে। আমি তো উচ্ছস্বিত হয়ে বলে চলেছি,

-     কত নাচ শিখেছি। কিন্তু কাকে দেখাবো? কেউ দেখেই না। বাবা তো জানলেই রেগে যাবে। আর মাও তাই। তাই শেখা হয়ে আছে। কাউকেই দেখাতে পারি না আমি।

ও শুনে কিছুক্ষন চুপ রইল। তারপরে বলল।
-     আমার বাড়ি হীরাপুরের দিকে। ওখান টা বেশ ফাঁকা। আমাদের বাড়ির পিছন দিকে বাপ দাদুর বেশ অনেক টা জমি আছে। একটা পুরোন বাড়ি আছে। লোকে বলে সেখানে নাকি ভুত আছে। কিন্তু অনেকেই জানে না সেই ভুত টা আমি। দুজনে ওখানে গিয়ে সময় কাটানো যেতে পারে। তোর তো মোবাইল আছে। ওখানে গান গুলো নিয়ে আসিস। আমার বাড়িতে জুগাড়ু এমপ্লিফায়ার আছে। চালিয়ে তুই নাচবি আর আমি দেখব।

আমার ব্যাপার টা শুনে মনে হল, খুশী তে পাগল হয়ে যাব আমি। মানে যে পাখী টা বের করেছিলাম কয়েদ খানা থেকে, তাকে অন্য কেউ আদর করছে, খেতে দিচ্ছে, ভালোবাসছে? কিন্তু বাড়ি থেকে বের হবো কেমন করে? কিন্তু ওর প্রস্তাব টা মাথায় আমার গেঁথে গেল।ওর দিকে তাকিয়েই ছিলাম আমি। কেমন একটা সব পাওয়ার মতন ব্যাপার। কিন্তু সমস্যা টা ওকে বললাম আমি,

-     দ্যাখ, আমার যে কত ইচ্ছে তোর এই প্রস্তাবে, তোকে বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু মা কে আর বাপি কে ম্যানেজ করতে হবে বুঝলি? তোর নাম্বার দিয়ে দে আমাকে। ফোনে কথা বলে নেব।
-     এই রে আমার তো ফোন নেই। মায়ের নাম্বার দিয়ে দি?
-     আন্টি কিছু মনে করবে না?
-     আরে না না । আমার মা হল , দ্য বেস্ট । আমাকে বাপের থেকে মা বেশী কেলায়। কিন্তু আমার জন্য মা প্রাণ পাত করে দিতে পারে। আমি আমার মা কে সব বলি। ঠিক করলেও বলি , ভুল করলেও বলি। কিন্তু ভয় পাই মা কেই সব থেকে বেশী।

ইশ এই সাহস টা আমার নেই। সত্যি মানুষের সাথে না মিশলে, কত ভুল বুঝে থাকে মানুষ। কি সাহসী আর একটা ভাল ছেলে। কিন্তু শুধু পড়াশোনা করে না বলে মেয়েরা ওকে ভুল বোঝে। আমি জানি আমার মধ্যে ছেলের মন নেই। আমার কিন্তু সেই মেয়ে মন টা ওকে মেনে নিয়েছে মন থেকেই। আর যে সত্যি কথা স্বীকার করতে ভয় পায় না আমার চোখে সেই সাহসী। আমি বললাম,

-     ওকে। তবে তোকে যদি আমি আদার টাইমে ফোন করি প্রব্লেম নেই তো?
-     ভাই এরকম বলিস না। আমি কি তোর মতন সারাদিন বই মুখে পরে থাকি? এনি টাইম ব্রো।

ততক্ষনে আমরা হাঁটতে হাঁটতে, আমাদের বাড়ির গেটের কাছে চলে এসেছি। ওকে বাই বাই করে মনে পড়ল, আরে ও তো অনেক দূর যাবে। স্কুল থেকে ওর বাড়ি আর আমার বাড়ি সমান দুরত্ব। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে প্রায় দশ কিমি। এখন বেজে গেছে প্রায় সন্ধ্যে আট টা।   ওকে আমার সাইকেল টা বললাম নিতে।

-     হীরাপুর অনেক দূর। আমি তো জানতাম না তুই ওই দিকে থাকিস। তাহলে স্কুলের আশে পাশেই কোথাও গল্প করতাম।
-     আরে না না । বন্ধুর জন্য ঠিক আছে এসব। দেখবি কোন দিন তোকেও আমার বাড়ি নিয়ে চলে যাব।
-     সে যাস। কিন্তু আজকে আমার সাইকেল টা নিয়ে যা।
-     কালকে তুই স্কুল যাবি কি করে? আমার হাঁটা অভ্যেস আছে। আমি চলে যাব।
আমি রেগে গেলাম। কি বোকা রে বাবা। ওকে বললাম,
-     কালকে তুই সকালে আসবি এসে আমাকে নিয়ে স্কুলে যাবি। এটাও একটা সলিউশন তাই না?
বোকা বোকা মুখ করে খানিক তাকিয়ে রইল আমার দিকে রাকা। তারপরে বলল
-     ও হ্যাঁ ।গুড প্রপোজাল। এই জন্যেই তুই ফার্স্ট হোস । চল ফির গুড নাইট।
-     গুড নাইট
 
বাড়িতে এসে দেখলাম বাপি চলে এসেছে। বাপির মনে সামান্য সন্দেহ ও নেই যে আমি কি করছি বাইরে আর কি করছি না। সেদিনের খেলা দেখার পর থেকে বাপির মনে এই ধারণা হয়ে গেছে যে আমি আর আগের মতন নেই। কিন্তু আমার ভিতরে আমার ইচ্ছের কয়েদ খানা আসতে আসতে ভর্তি হচ্ছে ইচ্ছে পাখি দিয়ে। আর তারা অনবরত বাইরে মুক্ত আকাশের জন্য আমার ভিতরে কিচিরমিচির করছে, আমায় উৎপাত করছে,  সেটা বাপি বা মা কেউ ই বুঝতে পারে নি। কিন্তু রাকার সাথে বন্ধুত্ব টা বাবা মা দুজনাই বেশ ভাল ভাবেই নিয়েছিল। আর না নেবার কিছু নেই। দুজনাই ছেলে। কিন্তু ও মাঝে মাঝেই ঝাঁপিয়ে পরত পিছন থেকে সেটা আমার কাছে শুরু থেকেই একটা অস্বস্তি ছিল। এ ছাড়া ওর সাথে আমার কোন অস্বস্তি কাজ করত না। কোন দিন করেও নি।

পরের দিন সকালে, নটার মধ্যে রাকা এসে হাজির। আমি তখন সবে পড়ে উঠেছি। স্নান ও করিনি। বাবা অফিস বেড়িয়ে গেছে। আর ভাই স্কুলে। ভাই এর সকালে স্কুল থাকে। আর বোন কে মা দিয়ে আসে। আমাদের স্কুলেই পড়ে বোন। মা ওকে দেখেই বসতে বল সোফা তে। আমি স্নান করে ড্রেস পরে খেতে এসে ওকে দেখলাম। বসে আছে সোফার উপরে ভালো ছেলের মতন। ভাবলাম, কত এক্টিং করতে হচ্ছে। এতো ভালো তুই নোস বাপু। ওকে দেখে কেন জানিনা মনে হল ও কিছু খেয়ে আসে নি। এতো সকাল সকাল আসার ই বা কি দরকার ছিল কে জানে।

-     মা রাকা কেও খেতে দেবে?

আমার মা লাখে এক টা হয়। সাথেই সাথেই রাকা কে ডেকে বসিয়ে আমাদের দুজন কে ভর পেট ভাত মাছের ঝোল খাইয়ে দিল। 

এই ভাবে রাকার সাথে আমার বন্ধুত্ব টা শুরু হল। আর তার ইন্টেন্সিটি, মারাত্মক জায়গায় পৌঁছে গেছিল কিছু দিনের মধ্যেই। ও যতই আমার ভিতরের মেয়েটা কে প্যাম্পার করছে ততই আমি ওর উপরে নেশা গ্রস্তের মতন হয়ে পড়ছি। একটা রবিবার ওরা সবাই মানে আমার পুরো টিম এলো। বাপি নেমতন্ন করেছিল। বাড়ির পিছনের বাগানে রান্না বান্না হল। সেদিনে আমার টিমের ছেলেরা আমার রুম এ এলো। আমার রুম এ আমি একাই থাকি। কিছু দিন আগেও আমি মা বাবার সাথে শুয়েছি। কিন্তু গত এক বছর একলাই শুই। রাতে পড়াশোনা ও করতে হয়। সবাই অনেক ক্ষন ছিল। মা কোল্ড্রিঙ্ক আমার ঘরে সবাই থাকা কালিন ই দিয়ে গেল। সবাই চলে গেলে আমাকে রাকা বলল,

-     এই শনিবারে কোন কিছু আছে তোর?
-     না কেন রে।
-     এই শনিবার স্কুলের পরে আমাদের বাড়ি চল। পিছনের বাগানে যাব। তুই মোবাইলে গান গুলো নিয়ে নিস।
-     মাকে বল তবে । আমি বলতে পারব না। ভয় করে
-     কি ছেলেরে? আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়া।
চলে গেল বলতে মা কে। কিছুক্ষন বাদে ফিরে এলো। বলল কাকিমা রাজি হয়েছে। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। বললাম
-      কি বললি মা কে?
-     বললাম, কাকিমা এই শনিবার একটু ওকে নিয়ে যাই। আমাকে একটু পরা বুঝিয়েও দেবে , না হলে ফেল করব একেবারে।
-     মা কি বলল?
-     বলল, ঠিক আছে, কিন্তু রাত যেন না হয়। ওর বাপি আসার আগে যেন চলে আসে।
-     ওয়াও। ইউ আর গ্রেট।

সেই থেকে শুরু হল প্রতি শনিবার ওর বাড়ি যাওয়া। আর ওর কাছেই আমার ভিতরে লুকিয়ে থাকা মেয়েটার যাবতীয় ইচ্ছে পূরণের শুরু। এমন নয় যে ও কোন কিছু মোহে বা লোভে পরে আমার সাথে জড়িয়ে গেছিল। ও আমাকে নিখাদ ভালোবেসে এগুল করত। যাতে আমি আনন্দে থাকি। আমার মনের মধ্যে কোন রকম আবেগ লুকিয়ে না থাকে। তখন বুঝিনি। অনেক পরে আমাকে বলেছিল একটা গল্প। যেটাতে বুঝেছিলাম , কেন ও আমাকে খুশী তে রাখতে চাইত। কেন আমাকে সর্বদা আগলে রাখত। তাতে সেটা খেলার মাঠেই হোক স্কুলের প্রাঙ্গনে। আর ওর মা তো একেবারে নিখাদ একটা ভালোমানুষ। একেবারে আমার মায়ের মতন। শুধু রাকা কে কথায় কথায় হাতা খুন্তী দিয়ে মার ধোর করে । আবার রাকার কোন কথা আন্টি ফেলেও দেয় না। রাকা হয়ত ওই বয়সেই বুঝিয়ে দিয়েছিল ওর মা কে, যে ওর চাওয়া কত গুরুত্বপূর্ণ। যেটা হয়ত আমি পারিনি বোঝাতে আমার মা কে। কি জানি আমি তো চাইতেই পারিনি কোনদিন। রাকা কিন্তু চেয়ে নিত। যেমন মা আজকে শিব খাবে, মাংশ করবে কিন্তু। শুরু তে হয়ত তেড়ে গেল আন্টি আমার সামনেই,

-     হ্যাঁ রে, বাপের জমিদারি দেখেছিস শয়তান ছেলে।

আমার খুব লজ্জা করত। রেগে যেতাম রাকার উপরে। এই ভাবে কেউ বলে? নাকি আমি খেতে চেয়েছি? কিন্তু পরক্ষনেই আন্টি আমাকে বলতেন,

-     তুমি কিছু মনে কোর না বাবা। ওকে দেখলেই আমার রাগ ধরে। পড়াশোনা করে না, সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়ায় পিছনের বাগানে। কত ভালো খেলে, সেদিকেও মন নেই।

আবার খেতে বসে দেখতাম ঠিক মাংস করেছেন আন্টি। অদ্ভুত লাগত রাকা আর আন্টির সম্পর্ক টা। মা ছেলে হয়েও কত অন্য রকম। আর উল্ট দিকে আমি তো মাকে বলতেই পারি না, আমি কি চাই? কেন চাই সে বলা তো দূর অস্ত। আঙ্কল মানে রাকার বাবাকে কে দেখতাম না কোন দিন। এ টুকু বুঝেছিলাম, আঙ্কল তেমন কোন জব করতেন না, যেমন আমার বাবা করে। কিন্তু ওদের অভাব ও ছিল না। যা যা বই আমার ছিল। সেই সেই বই ও রাকার ছিল। ও শুধু ইন্টারেস্ট পেতো না পড়াশোনায়।

প্রথম যখন ওর বাড়ি গিয়ে পিছনের বাগানে গেলাম। মনে হল, কি দারুন একটা জায়গা। এই জায়গার অনেক শরিক। তাই নাকি আঙ্কল বিক্রি করতে পারছে না। কিন্তু কম করে হলেও বিঘে কুড়ি জায়গা। আমাদের গ্রামে জায়গা আছে। মাপ একটু আধটু বুঝি। এ মাথা ও মাথা দেখা যায় না বললেও চলে। মাঝে একটা দিঘির মতন আছে। রাকা বল্লল মাছ ও হয় ভালই। পুকুর পেরিয়ে উল্টো পারে দেখলাম একটা পোড় বাড়ি। ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম একটা ঘর একেবারে সাফ সুতরা করে রাখা। বুঝলাম এখানে রাকা নিজের সাম্রাজ্য পেতেছে। আমার ও বেশ ভালো লাগল।

এর পর থেকে এই জায়গাই হয়ে গেল শনিবারে আমাদের ঠিকানা। যতক্ষন সুর্যের আলো থাকত, আমি ওখানে মোবাইল এ গান চালিয়ে নাচতাম। মনের মধ্যে যে ভার টা ছিল আমার সেটা নেমে যেতে থাকল ধীরে ধীরে। নিজেকে। আর ও দেখত আমাকে। ওর ভালো লাগত না হয়ত। আর ভাল লাগলে সেটা আমার জন্য বাড়াবাড়ি হয়ে যেত। কিন্তু আমি নাচতে পারতাম, মন খুলে সেটাই আমার জন্যে অনেক বড় ব্যাপার ছিল।

এই ব্যাপার টা আমাকে অনেক টা মুক্ত করে দিয়েছিল। সত্যি বলতে আমার মনে হতো আমি জেল খানায় বন্দী। আমি তো আমি নই। মানে ধরুন আপনার নিজের ঘরে থাকার জায়গায় অন্য ঘরে আছেন। আর সেখান থেকে আপনি বেরোতে পারছেন না। সেই ভাবেই আমার আত্মা টা একটা মেয়ের। আর আছি একটা ছেলের শরীরে। কয়েদ খানা হল না? এতো খানি গভীর ভাবে আলোচনা আমি কারোর সাথেই করিনি। কাউকেই বলতে ভরসা পাই না। কিন্তু রাকা যখন আমাকে এই ব্যাপার টা তে এগিয়ে নিয়ে এলো, সেদিনে আমি ভেবেছিলাম ওকে বলব পুরো ব্যাপার টাই। কিন্তু সে সময় এখনো আসে নি।

নাচ হয়ে গেলে ওর সাথে কথা বলতাম। মুলত তিনটে কাজ ছিল আমার। এক আমার নাচ। দুই রাকার পড়াশোনা। আমি জানতাম ও বুদ্ধিমান। শুধু পড়াশোনা করে না। কাজেই ওর জন্য আমি কিছু প্রশ্নের ব্যাঙ্ক তৈরি করেছিলাম, যেটা পরলে ও সিংহ ভাগ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। আর তিন নম্বর হল ওর ফুটবল টা চালানো দরকার। ও ফুটবল টা এলিট লেভেলের খেলে। আমি খেলেছি তাই বুঝতাম ব্যাপার টা।

যতই আমি ওর সামনে নাচ করতাম, ভিতরের আমি টা বেরিয়ে আসতে চাইত। একটা মেয়ে যে শুধু ছেলেদের শরীরে থাকত। আসতে আসতে শারীরিক পরিবর্তন ও হতে শুরু করল। আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতে পারতাম সেটা। খুব সন্তপর্নে সেগুলো কে চেপে রেখে দিতাম আমি। ওই বয়সে রাকার হালকা গোঁফ দাড়ি হয়ে গেছিল। আমাদের ক্লাসের অনেক ছেলের ই হয়ে গেছিল। বিশ্বাস করুন আমার শেষ আশা ছিল আমার দাড়ি গোঁফ।যে বয়সে আপার লিপ্স বা গালে লোম বেরোলে ছেলেরা বিব্রত হয়, আমার বেরোচ্ছে না বলে ভয় লাগত। আমার বাবা মায়ের আশা কি ছিল, আমি যে জানতাম। ওরা কোন দিন ও চায় নি আমি প্রথম হই। চেয়েছিল আমি যেন পুরুষ হই।

সবার মনে একটা গরিমা থাকে। যেমন আমার বাবা। বাবা একজন পুরুষ। বাবার মনে সেই গরিমা ছিল যে বাবা পুরুষ। আমার মা, একজন নারী। মা সেই গরিমা নিয়েই বাঁচত। দুজনে যখন সাংসারিক ঝগড়া করত, ব্যাপার টা সামনে চলে আসত দারুন ভাবে। বাবা বলত

-     পুরুষের কস্ট তুমি বুঝবে না। থাক তো বাড়িতে বসে, ছেলে মানুষ কর। তুমি কি বুঝবে?

মা তার থেকেও গর্বের সাথে বলত,

-     হ্যাঁ ওই টাই তো জানো। শুধু দুটো পয়সা রোজগার। এর বেশী তো একটা কাজ কর না বাড়িতে। কুটো নেড়ে দুটো কর না। আমি কি করি বুঝতে গেলে মন দরকার। তোমার মতন একটা মন হীন মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব না।
-     হ্যাঁ সব ই তুমি কর। আমার চিন্তা নেই আমার সংসারের। আমি তোমাকে দেখি না, ভালো বাসি না, তাই না? আমার আমার বাচ্চাদের উপরে কোন কর্তব্য নেই, তাই না?
-     না আমি তো সেটা বলিনি। আমি বললাম তুমি তোমার টা দেখছ , শুধু। আমার টা কোন দিন ই বুঝবে না।

চলতে থাকত ওদের ঝগড়া। আমার ভাই টা আর বোন টা তখন আমার কাছে থাকত। ওরা ভয় পেয়ে থাকত। আমি কিন্তু তখন বড় হয়ে গেছি। ক্লাস এইট এ পড়ছি। ভয় করত না। জানতাম এটা সাময়িক। আমার ভাই বোনের বয়সে আমিও ভয় পেতাম। বাবা আর মা ঝগড়া করলে কোন বাচ্চার না মন খারাপ করে?

রাতে খাবারের টেবিলে আসতে আসতে ওদের ঝগড়া মিটে যেত। তখন দেখতাম মা বাপি কে বলছে
-     তোমার জন্য দুপুরে এই ছোটমাছের ঝাল টা বানিয়ে রাখলাম। ভাবলাম কত ভালোবাস তুমি। আর সন্ধ্যে থেকে আমার সাথে ঝগড়া করলে।

মায়ের গলায় অভিমানের সুর থাকত। আর বাপি ও একশবার সরি বলত মা কে। আমরাও তিন ভাই বোনে খুশ। ওদের মেজাজ ঠিক থাকলে আমারাও খুব আনন্দে থাকতাম। আমাদের ও বয়স অনুযায়ী প্যাম্পার করা হত। কিন্তু একটা ব্যাপার মনে দাগ কাটত সেটা হল, এই যে বাপি, নিজের নিয়ে কত গর্ব করে। মা গর্ব করে নিজের ইনভল্ভমেন্ট , বা আমাদের মানুষ করা নিয়ে। ওদিকে রাকা ও বার বার বলে, শালা মর্দ হতে পারছিস না। এই টুকু তেই কাহিল হয়ে পড়লি।সেও নিজের মর্দাংগির প্রত্যক্ষ গর্বে মশগুল। বা মায়ের সামান্য হাত কেটে গেলে বঁটি তে, বাপি আঙ্গুল চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করত আর মা বলত,- ছাড়ো তো, মেয়েদের এমন অনেক হয়। অতো ধরলে কি চলে নাকি? মানে সবাই জানে তাদের গরিমা, তাদের ক্ষমতা, তাদের সহ্য শক্তি, তাদের ইমোশন। কিন্তু কই আমার তো কোন দিন ছেলে হওয়া নিয়ে গর্ব বোধ আসে নি? কেন আমার মনে হয়েছে, এই শরীর, এই পোশাক, এই গর্ব আমার না, গর্ব এই ছেলে শরীর টার। তার ভিতরে কি আছে কে আছে, কে মাথা ঘামাচ্ছে?
[+] 11 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি ( চলছে) পেইজ ৩ - by nandanadasnandana - 01-02-2022, 05:54 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)