24-12-2018, 04:09 PM
৭।।
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায় পৃথা... বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো কিচেন থেকে পাত্র এনে ঢেলে গুছিয়ে রাখে ফ্রিজের মধ্যে। খাবার নষ্ট করা একদম পোষায় না তার। মাংস যা বেঁচেছে, মোটামুটি তার একার পক্ষে আরো দিন দুয়েক চলে যাবে... ভাবে পৃথা... রাতের দিকে বাইরে থেকে রুটি কিনে এনে এই মাংস দিয়ে চালিয়ে নেবে’খন... আর সকালে তো সাধারণতঃ বাইরেই লাঞ্চ করে নেয় সে... রান্না করার ঝক্কিটাও বাঁচবে তাহলে। মনে মনে খুশিই হয় একটু। ন্যাকড়া ভিজিয়ে এনে মুছতে থাকে ডাইনিং টেবিলটাকে ভালো করে... গুনগুন করে গান করে আপন মনে।
স্নান করতে ঢুকে চুল ভেজায় না পৃথা... রাতে চুল ভেজালে শুকোবে না, আর এখন যে ভাবে বর্ষা চলছে, ঠান্ডা লেগে সর্দি জ্বর হওয়া বিচিত্র নয়... মা তো পইপই করে বারণ করে দিয়েছে রাতে স্নান না করতে। আরে! রাতে একবার গায়ে জল না ঢাললে হয় নাকি? চিরদিনের স্বভাব রাতে স্নান করে ঘুমাতে যাওয়া... একবার গায়ে জল না পড়লে ঘুমই আসবে না। চুল না ভেজালেই হল। নগ্ন শরীরে ঠান্ডা জলের স্পর্শে সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিমেশে চলে যায়। চোখ বন্ধ করে পীঠের ওপরে শাওয়ারের জল নেয় সে, সামনের দেওয়ালে হাত দুটোকে রেখে, সামান্য ঝুঁকে। শাওয়ারের জল তার পীঠের ওপরে পড়ে, গড়িয়ে নেবে যায় সুঠাম দেহের নীচের পানে... নিতম্বের কোমল দুটো ঢেউয়ের ওপর দিয়ে।
গা ভালো করে মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে পৃথা... নগ্ন শরীরেই ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাটের সমস্ত আলোগুলো এক এক করে নিভিয়ে ঢোকে বেডরুমে... সুইচ টিপে আলো জ্বালে ঘরের। বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটার কাছে এগিয়ে যায়... হাতের একটা আঙুল তুলে নিজের ঠোঁটে ছোঁয়ায় তারপর সেই আঙুলটাকে এগিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে ছোঁয়া দেয় ছবির লোকটির ঠোঁটের ওপরে... ‘হাই...’ ফিসিফিসিয়ে ওঠে লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে।
বিছানার বেডকভারটাকে তুলে ঘরের মধ্যে রাখা চেয়ারটার ওপরে রেখে দিয়ে ঘরের কোন থেকে বিছানা ঝাড়ার প্লাস্টিকের ঝাড়ুটা এনে ভালো করে ঝাড়ে বিছানার ওপরটাকে... তারপর ঝাড়ুটাকে ফের যথাস্থানে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে আবার বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। কিচেনে গিয়ে একটা কাঁচের গ্লাস হাতে নিয়ে ফিরে আসে বসার ঘরে। কাবার্ডের মধ্যে রাখা ওয়াইনের বোতলটাকে বের করে নিয়ে খানিকটা ওয়াইন মাপ করে ঢেলে নেয় গ্লাসে, তারপর গ্লাসটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে ছিপি টাইট করে আটকায় বোতলটায়... ফিরিয়ে রেখে দেয় কাবার্ডের মধ্যে। টেবিল থেকে গ্লাসটা তুলে নিয়ে ফিরে আসে বেডরুমের মধ্যে... দেওয়ালের কাছে গিয়ে সুইচ টিপে বড় আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে শুধু নাইট ল্যাম্পটা জ্বেলে দেয়... আজ যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ঘরের এসি আর চালাতে ইচ্ছা করে না... বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে, গা ধোয়ার পর সেই চ্যাটচ্যাটে ব্যাপারটাও আর নেই... ফ্যানের রেগুলেটর ঘুরিয়ে স্পিডটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে গ্লাস হাতে উঠে আসে বিছানায়... বালিসটাকে খাটের হেডবোর্ডের ওপরে রেখে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে ছোট একটা সিপ দেয় গ্লাসের তরলে... আআআহ্... চোখ বন্ধ করে জিভের ওপরে স্বাদ নেয় দামী ওয়াইনের।
গ্লাসের ওয়াইনে সিপ করতে করতে ভাবতে থাকে পৃথা - দেখতে দেখতে বেশ অনেক কটা দিনই এই ফ্ল্যাটটায় কেটে গেল... ভাগ্গিস পাওয়া গিয়েছিল ফ্ল্যাটটা... সুশান্তকে সত্যিই অশেষ ধন্যবাদ... ও না খুজে দিলে যে কি হত... দূর... ওই ক’টা দিন মহুয়ার বাড়ি পিজি থাকতে হয়েছিল বটে, কিন্তু একদম ইচ্ছা করছিল না থাকতে... ভালো লাগে নাকি কারুর সাথে বিছানা শেয়ার করতে? বরাবরই একা শুয়ে অভ্যস্ত... বাড়িতে থাকতো রানীর মত... বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে... নিজস্ব একটা ঘর... সেখানে যদি আর কারুর সাথে বিছানা শেয়ার করতে হয়... ভালো লাগে? বিছানা হবে এই রকম... ইশশশ... কি সুন্দর বিছানাটা... ঠিক বাড়িরটার মত –
ভাবতে ভাবতে চোখ খুলে বাঁ হাতটা নিয়ে বিছানার ওপরে বোলায়... ঘরের স্বল্প নিলাভো আলোয় কেমন মায়াবী লাগে তার বিছানাটাকে... সাদা বেডশীটটা নীল আলোয় কেমন যেন স্বপ্নিল মনে হয় পৃথার... গ্লাস থেকে আরো খানিকটা তরলে সিপ করে... গলার মধ্যে দিয়ে নামে যাবার সময় দেহটা খানিকটা উষ্ণ হয়ে ওঠে যেন তার... শরীরটা আরো খানিকটা ঘসটিয়ে নামিয়ে দেয় নীচের পানে... দেহটাকে এলিয়ে দেয় বিছানার ওপরে আধশোয়া ভঙ্গিতে, মাথাটা থাকে হেডবোর্ডের ওপরে, বালিশ ছুঁয়ে... সিলিংএর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ভাবতে থাকে সারাদিনটার কথা।
কি যেন মনে পড়তে হটাৎ করে উঠে বসে বিছানায়... হাতের গ্লাসটার থেকে আরো খানিকটা ওয়াইন একটা বড় চুমুকে শেষ করে রেখে দেয় সেটা পাশে, বিছানার ওপরেই... তারপর হাত বাড়িয়ে তুলে নিয়ে আসে পাশের টেবিলে রাখা ছবিটাকে। ঘরের কম আলোয় অস্পষ্ট ছবির মুখ গুলো... তাতে তার কিছু যায় আসে না... ওই অস্পষ্ট মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকে পৃথা... আজকাল এটা ওর একটা নতুন নেশা বলা যেতে পারে... রাতে শোবার সময় ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ছবিটাকে টেনে নেয় নিজের কাছে... সারাদিনের সমস্ত কথাগুলো শোনায় ছবির চরিত্রটিকে... একবার না বলতে পারলে যেন স্বস্তি পায় না পৃথা। কথা বলে লোকটির সাথে... অনেক সময় পরামর্শও নেয় সে... অবস্যই সেটা নিজের মনেই... সত্যি সত্যি উত্তরই বা পাবে কি করে সে... তাও... তাতেই যেন খুশি সে। ঘরের আলো কম থাকলে লোকটির স্ত্রীর মুখটা স্পষ্ট হয় না বলে যেন সেও একটু খুশি হয়... নয়তো তার স্ত্রীর সামনে এই ভাবে বিবাহিত একটা লোকের সাথে মন খুলে কথাই বা বলে কি করে? তাই না?
গ্লাসটা হাতে তুলে তলানির শেষটুকু গলায় ঢেলে দেয়... তারপর গ্লাসটাকে ফের রেখে দিয়ে তাকায় ছবির দিকে... ‘জানো... আজ সুশান্ত আর ওর হবু বৌকে ডেকেছিলাম ডিনারে... তোমাকে তো বললাম কাল রাতে যে ওদের ডাকবো... বেশ ভালো লাগলো বউটাকে... কেমন বাচ্ছা বাচ্ছা... খুব মিষ্টি... আর জানো... উফফফফ... তোমাকে কি বলবো... কি বকবকটাই না করতে পারে... সারাটা’খন তো শুধু বলতে গেলে ওই বকে গেলো... এই জানো... তোমার পৃথাকে মৌসুমীর না খুব ভালো লেগেছে... হ্যা গো... খালি আমার কথা শুনতে চায়... ইশশশ... বাবুর হিংসা হচ্ছে বুঝি?... না না... তুমি হিংসা করবে কেন? তুমি তো আমার সোনাটা... মুউউউআআআআ...’ ছবিটাকে তুলে চুমু খায় পৃথা আধো অন্ধকারে লোকটির ঠোঁটটাকে আন্দাজ করে। তারপর নামিয়ে ফের বলতে শুরু করে... ‘উফফফফ... ওই আর এক হয়েছে তোমাদের অলোকবাবু... মালটা এত আলুবাজ যে কি বলবো... আজকেও ওদের এগিয়ে দিতে বেরিয়েছি... ব্যাটা ঠিক বেরিয়ে এসেছে... হে হে... জানো... আমি না যেই কাকিমার কথা জিজ্ঞাসা করেছি, ব্যাটা সুরসুর করে ঘরে ঢুকে গেছে... হি হি... ভালো করেছি না?’
একটু ভেবে চিন্তান্বিত গলায় বলতে থাকে... ‘তোমাকে না একটা কথা বলবো বলবো করে বলাই হয় নি... অবস্য আমিও একেবারে যে নিশ্চিত তা নই... তবুও... একটা ব্যাপার আমার একদম ভালো লাগছে না জানো...’ বলতে বলতে পাশে রাখা গ্লাসটা তুলে ঢালতে যায় গলায়... কিন্তু ফাঁকা গ্লাস থেকে কিছুই পড়ে না... ছবিটাকে বিছানায় রেখে বলে, ‘দাঁড়াও... একটু অপেক্ষা করো... এটাকে ভরে এনে বলছি...’ বলে উঠে যায় ঘরের বাইরে।
কাবার্ড খুলে বোতল বের করে খানিকটা তরল ঢেলে নেয় গ্লাসে... তারপর বোতলটাকে আর ফিরিয়ে রাখে না কাবার্ডের মধ্যে... গ্লাস আর বোতল, দুটোকেই দুই হাতে নিয়ে ফিরে আসে বিছানায়... বোতলটাকে এক সাইডে রেখে দিয়ে ভালো করে বালিশে হেলান দিয়ে আবার বসে সে... তারপর গ্লাস থেকে একটা বড় চুমুক দিয়ে বাঁ হাতে তুলে নেয় ছবিটাকে...
‘আজকাল একা থেকে এটা বেশ একটা অভ্যাস হয়েছে জানো তো... একটু আধটু খেলে মন্দ লাগে না... সারাদিনের খাটাখাটনির পর বেশ রিফ্রেশিং লাগে যা হোক... কি বলো? আচ্ছা? তুমি খেতে? উহঃ... খেতো না আবার... আমি জানি... বেশ ভালোই খেতে... কি ঠিক বলিনি? অবস্য তোমাদের মত অত কড়া আমি খেতে পারি না, আমার বাবা এই ওয়াইনই ভালো... একটু আধটু খেলে খারাপ কি?’
গ্লাস তুলে আরো একটু সিপ করে পৃথা... ঠোঁটের ওপরে গ্লাসের কিনারা লাগিয়ে জিভ বোলায়... তারপর গ্লাসটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ঠেকায় ছবির গায়ে... ‘উহহহ... দেখ... মদের গন্ধ পেয়েই কেমন চোখগুলো চকচক করে উঠল... এই... পাশে তোমার বউ আছে না? ও কিন্তু দেখতে পাচ্ছে... বলে দেবো, বউদিকে? হু? ওর বর মদ খেতে চাইছে?’ আরো খানিকটা ওয়াইন কথায় কথায় পৃথার গলা দিয়ে নেবে যায়।
গ্লাসটাকে পাশে রেখে দিয়ে বলে ওঠে... ‘ওই দেখো... কথায় কথায় যেটা বলতে যাচ্ছিলাম, সেটাই তো বলা হলো না তোমাকে... আরে... আশ্চর্য লোক তো... মনে করাবে তো... নাকি... সব শুধু আমার দায়... হুঁ?’ বলতে বলতে মাথাটা পেছন দিকে হেলায় পৃথা... বেশ ভার লাগে মাথার মধ্যেটায়... ইতিমধ্যেই প্রায় অনেকটা ওয়াইনই পেটে চলে গিয়েছে... খানিক চোখ বন্ধ করে থেকে আবার মাথা সোজা করে তাকায় আবছায়া ছবিটার দিকে... ছবি ধরা হাতের বুড়ো আঙুলটাকে ঠেকায় লোকটির গালের ওপরে... একটু বুলিয়ে নেয় সেখানে... তারপর সিরিয়াস মুখ করে বলে সে... ‘জানো... আমার না সুশান্তর ইদানিং কালের ব্যবহারটা ঠিক ভালো লাগছে না... ওর মধ্যে আগের সেই বন্ধুত্বটা যেন নেই... তার বদলে ও আরো কিছু চাইছে আমার থেকে... এটা কি ঠিক? বলো? আরে বাবা, তোর সাথে একটা মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়ে রয়েছে... সেখানে আমার দিকে ঢলিস কেন? সত্যি বলছি... এই তোমার গা ছুয়ে... বিশ্বাস কর... আমার মনে কিন্তু ওর প্রতি এতটুকুও কোন ওই ধরণের অনুভূতি নেই... সিরিয়াসলি... আমি কক্ষনো ভাবি নি এই সব নিয়ে... কিন্তু ও কেন এই রকম করছে বলো তো?’
গ্লাস তুলে আরো খানিকটা তরলে চুমুক দেয় পৃথা... গ্লাসটাকে বিছানার ওপরে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে বলতে থাকে... ‘তুমি বলবে আমি হটাৎ কেন এই সব কথা বুঝতে পারলাম... আরে বাবা, ও তোমরা বুঝবে না... এই, আমরা মেয়েরা না, ছেলেদের চোখ দেখলেই বুঝতে পারি কি মনের মধ্যে চলছে। ও কিন্তু সরাসরি কিছু বলে নি আমাকে, কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি... তা নয়তো তুমিই বলো... ওকে যখন বললাম যে ওর হবু বউকে নিয়ে আসতে, শুনে প্রথমেই কেন না বলল? বললো যে ও একা আসবে, বউকে আনবে না। কিন্তু কিইইইই ভালো মেয়েটা, জানো... ভিষন মিষ্টি... শুধু যা একটু বেশিই বকে... বাব্বা... কি বলবো তোমায়... বকবক করে করে আমার ভেজা একেবারে ফ্রাই করে দিয়েছিল... হা হা হা হা... তবে একটা কথা আমি ভেবেই রেখেছি জানো... কিইইইই বলোতোওওওওও... আঃ হাঃ... বলতে পারলে না তো... জানি পারবে না... বুদ্ধু একটা... কিচ্ছু বোঝে না... এই বলো না... বলো না... তুমি বুঝতে পারো নি? এ বাবা... কি বোকা লোক একটা... এই সামান্য কথাটাও বোঝোনি? ইশশশশ... একদম গুড ফর নাথিং... এর সাথেই না কি আমি... দেখ দেখ... কেমন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে জানার জন্য... আচ্ছা... দাঁড়াও... আগে একটা সিগারেট ধরাই... মুখটা কেমন হয়ে রয়েছে’। বলে ছবিটাকে বিছানায় রেখে নেমে দাঁড়ায় খাট থেকে পৃথা... উঠে দাঁড়াতেই মাথাটা টলে যায় একটু... ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে আবার... ফিরে ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে... ‘হি হি... মনে হচ্ছে একটু একটু হয়েছে, জানো তো?’ বলে আবার উঠে দাঁড়ায়... এবারে আর টাল খায় না... হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সেন্টার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়... বেডরুমের আলো বাইরের ঘরে পড়ে জায়গাটা মোটামুটি দৃষ্টিগোচর হয়ে রয়েছে... টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা তুলে নিয়ে ভেতর থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে লাগায়... পাকেটটা ছুঁড়ে টেবিলের ওপরে ফেলে দিয়ে লাইটারটা তুলে সিগারেটটা জ্বালিয়ে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে ওপর দিকে তাকিয়ে... তারপর লাইটারটা টেবিলের ওপরে রেখে ফিরে যায় আবার ঘরের মধ্যে। দেওয়ালের কাছে রাখা টেবিলের থেকে অ্যাশট্রেটা হাতে তুলে নিয়ে ফিরে আসে বিছানার কাছে... সামনের দিকে ঝুঁকে গ্লাসটা বিছানার থেকে তুলে নিয়ে একটা চুমুক দেয় গ্লাসের তরলে... তারপর সেটাকে আবার আগের জায়গায় রেখে সাবধানে উঠে পড়ে বিছানায়... ফিরে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে ছবিটাকে ফের তুলে নেয় হাতের মধ্যে... অন্য হাতে ধরা সিগারেটে টান দেয় একটা... মুখ তুলে ধোঁয়া ছাড়ে চোখ বন্ধ করে... কিছু চিন্তা করতে থাকে চুপ করে।
আসতে আসতে মাথা নামিয়ে তাকায় ছবির দিকে চোখ সরু করে... তাকিয়েই থাকে চুপ করে বেশ খানিকক্ষন... মাঝে মাঝে টান দেয় সিগারেটে... তারপর এক সময় অ্যাশট্রেতে সিগারেটের মাথায় জমে ওঠা ছাইটা ঝেড়ে মৃদু গলায় প্রশ্ন করে ছবিটার দিকে লক্ষ্য করে... ‘আমাকে ভালো লাগে?’
প্রশ্নটা করে চুপ করে থাকে সে... যেন উত্তরের আশায় অপেক্ষা করে। তারপর বলে, ‘বলো না... আমায় ভালো লাগে?’ তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পৃথা... ‘হুমমম...’ বলে, ‘জানি... বলবেই বা কি করে? তুমি তো ছবি... তুমি শোনো... কিন্তু উত্তর দিতে পারো না... নাঃ... তাতে আমার কোন আক্ষেপ নেই জানো... তুমি কিছু বলো না তো কি হয়েছে... আমি কিন্তু তোমার মনের সব কথা বুঝতে পারি... আমি জানি তুমিও আমাকে পছন্দ কর... তাই না? বলো...’
ছবিটাকে হাঁটুর ওপরে ব্যালেন্স করে রেখে গ্লাসটা তুলে আরো একবার চুমুক দেয়, তারপর সেটাকে রেখে সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলে ফের, ‘জানি না তুমি আমাকে পছন্দ কর কি না... কিন্তু একটা কথা সত্যি, আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি... ভিষন... আর তুমি জানো? তোমাকে তো বলাই হয় নি... আজ কথায় কথায় সুশান্তকে জানিয়ে দিয়েছি এক ফাঁকে, যে আমি কমিটেড... শুনে ওর মনটা যে একটু খারাপ হয়ে গেল, সেটা বুঝতেই পেরেছিলাম, খুব জানতে চাইছিল, কে?... আমি শুধু বলেছি যে ও আছে একজন... মনে মনে তোমার কথা বলেছিলাম। ঠিক করেছি না? তুমি হয়তো আমার এটাকে পাগলামী ভাববে... যে নেই তাকে কি করে এই ভাবে ভালোবাসছি... না গো... সত্যি... সব জেনে বুঝেও নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না... এটা নিয়ে আমিও অনেক ভেবেছি... কিন্তু... না, না, ভেবো না যে আমি নেশার ঘোরে এই সব কথা বলছি... একটুও না... আমি একদম ভেবে চিন্তেই কথাটা বললাম... আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি... বিশ্বাস করো। জানি তুমি বলবে তোমাকে চিনিনা, জানি না, নামটাও জানি না এখনও... তাও... একটুও বাড়িয়ে বলছি না... আই লাভ ইউ...’ বলতে বলতে ছবিটাকে মুখের কাছে তুলে আনে পৃথা... নিজের ভেজা ঠোঁটটা চেপে ধরে ছবির ওপরে... তারপর চেপে ধরেই থাকে... মিনিটের পর মিনিট... বেশ অনেকক্ষন কেটে গেলে আস্তে আস্তে ছবিটাকে নামায় মুখের ওপর থেকে... গাঢ় চোখে তাকিয়ে থাকে খানিক... তারপর ফিসফিসিয়ে পুণরাবৃত্তি করে কথাটার... ‘আই লাভ ইউ... লাভ ইউ... লাভ ইউ... লাভ ইউ...’ বলতে বলতে মাথাটাকে হেলিয়ে দেয় বিছানার হেডবোর্ডের ওপরে... হাতে ধরা সিগারেটটা মুখের কাছে এনে টান দেয় একটা... ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে উঠে বসে চেপে গুঁজে দেয় সিগারেটের জ্বলন্ত অংশটাকে অ্যাশট্রের মধ্যে।
গ্লাসটাকে ঠোঁটের কাছে তুলে সিপ করে... তারপর সেটাকে হাতের মধ্যে ধরে রেখেই ছবির দিকে তাকিয়ে গাঢ় স্বরে বলে ওঠে পৃথা... ‘আই ওয়ান্ট টু কনফেস আ থিং টু ইউ...’ বলে, চুপ করে থাকে খানিক। বোঝা যায় তার মনের মধ্যে একটা প্রবল ঝড় চলছে... একটা দ্বিধা... একটা দ্বন্দ...
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায় পৃথা... বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো কিচেন থেকে পাত্র এনে ঢেলে গুছিয়ে রাখে ফ্রিজের মধ্যে। খাবার নষ্ট করা একদম পোষায় না তার। মাংস যা বেঁচেছে, মোটামুটি তার একার পক্ষে আরো দিন দুয়েক চলে যাবে... ভাবে পৃথা... রাতের দিকে বাইরে থেকে রুটি কিনে এনে এই মাংস দিয়ে চালিয়ে নেবে’খন... আর সকালে তো সাধারণতঃ বাইরেই লাঞ্চ করে নেয় সে... রান্না করার ঝক্কিটাও বাঁচবে তাহলে। মনে মনে খুশিই হয় একটু। ন্যাকড়া ভিজিয়ে এনে মুছতে থাকে ডাইনিং টেবিলটাকে ভালো করে... গুনগুন করে গান করে আপন মনে।
স্নান করতে ঢুকে চুল ভেজায় না পৃথা... রাতে চুল ভেজালে শুকোবে না, আর এখন যে ভাবে বর্ষা চলছে, ঠান্ডা লেগে সর্দি জ্বর হওয়া বিচিত্র নয়... মা তো পইপই করে বারণ করে দিয়েছে রাতে স্নান না করতে। আরে! রাতে একবার গায়ে জল না ঢাললে হয় নাকি? চিরদিনের স্বভাব রাতে স্নান করে ঘুমাতে যাওয়া... একবার গায়ে জল না পড়লে ঘুমই আসবে না। চুল না ভেজালেই হল। নগ্ন শরীরে ঠান্ডা জলের স্পর্শে সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিমেশে চলে যায়। চোখ বন্ধ করে পীঠের ওপরে শাওয়ারের জল নেয় সে, সামনের দেওয়ালে হাত দুটোকে রেখে, সামান্য ঝুঁকে। শাওয়ারের জল তার পীঠের ওপরে পড়ে, গড়িয়ে নেবে যায় সুঠাম দেহের নীচের পানে... নিতম্বের কোমল দুটো ঢেউয়ের ওপর দিয়ে।
গা ভালো করে মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে পৃথা... নগ্ন শরীরেই ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাটের সমস্ত আলোগুলো এক এক করে নিভিয়ে ঢোকে বেডরুমে... সুইচ টিপে আলো জ্বালে ঘরের। বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটার কাছে এগিয়ে যায়... হাতের একটা আঙুল তুলে নিজের ঠোঁটে ছোঁয়ায় তারপর সেই আঙুলটাকে এগিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে ছোঁয়া দেয় ছবির লোকটির ঠোঁটের ওপরে... ‘হাই...’ ফিসিফিসিয়ে ওঠে লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে।
বিছানার বেডকভারটাকে তুলে ঘরের মধ্যে রাখা চেয়ারটার ওপরে রেখে দিয়ে ঘরের কোন থেকে বিছানা ঝাড়ার প্লাস্টিকের ঝাড়ুটা এনে ভালো করে ঝাড়ে বিছানার ওপরটাকে... তারপর ঝাড়ুটাকে ফের যথাস্থানে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে আবার বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। কিচেনে গিয়ে একটা কাঁচের গ্লাস হাতে নিয়ে ফিরে আসে বসার ঘরে। কাবার্ডের মধ্যে রাখা ওয়াইনের বোতলটাকে বের করে নিয়ে খানিকটা ওয়াইন মাপ করে ঢেলে নেয় গ্লাসে, তারপর গ্লাসটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে ছিপি টাইট করে আটকায় বোতলটায়... ফিরিয়ে রেখে দেয় কাবার্ডের মধ্যে। টেবিল থেকে গ্লাসটা তুলে নিয়ে ফিরে আসে বেডরুমের মধ্যে... দেওয়ালের কাছে গিয়ে সুইচ টিপে বড় আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে শুধু নাইট ল্যাম্পটা জ্বেলে দেয়... আজ যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ঘরের এসি আর চালাতে ইচ্ছা করে না... বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে, গা ধোয়ার পর সেই চ্যাটচ্যাটে ব্যাপারটাও আর নেই... ফ্যানের রেগুলেটর ঘুরিয়ে স্পিডটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে গ্লাস হাতে উঠে আসে বিছানায়... বালিসটাকে খাটের হেডবোর্ডের ওপরে রেখে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে ছোট একটা সিপ দেয় গ্লাসের তরলে... আআআহ্... চোখ বন্ধ করে জিভের ওপরে স্বাদ নেয় দামী ওয়াইনের।
গ্লাসের ওয়াইনে সিপ করতে করতে ভাবতে থাকে পৃথা - দেখতে দেখতে বেশ অনেক কটা দিনই এই ফ্ল্যাটটায় কেটে গেল... ভাগ্গিস পাওয়া গিয়েছিল ফ্ল্যাটটা... সুশান্তকে সত্যিই অশেষ ধন্যবাদ... ও না খুজে দিলে যে কি হত... দূর... ওই ক’টা দিন মহুয়ার বাড়ি পিজি থাকতে হয়েছিল বটে, কিন্তু একদম ইচ্ছা করছিল না থাকতে... ভালো লাগে নাকি কারুর সাথে বিছানা শেয়ার করতে? বরাবরই একা শুয়ে অভ্যস্ত... বাড়িতে থাকতো রানীর মত... বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে... নিজস্ব একটা ঘর... সেখানে যদি আর কারুর সাথে বিছানা শেয়ার করতে হয়... ভালো লাগে? বিছানা হবে এই রকম... ইশশশ... কি সুন্দর বিছানাটা... ঠিক বাড়িরটার মত –
ভাবতে ভাবতে চোখ খুলে বাঁ হাতটা নিয়ে বিছানার ওপরে বোলায়... ঘরের স্বল্প নিলাভো আলোয় কেমন মায়াবী লাগে তার বিছানাটাকে... সাদা বেডশীটটা নীল আলোয় কেমন যেন স্বপ্নিল মনে হয় পৃথার... গ্লাস থেকে আরো খানিকটা তরলে সিপ করে... গলার মধ্যে দিয়ে নামে যাবার সময় দেহটা খানিকটা উষ্ণ হয়ে ওঠে যেন তার... শরীরটা আরো খানিকটা ঘসটিয়ে নামিয়ে দেয় নীচের পানে... দেহটাকে এলিয়ে দেয় বিছানার ওপরে আধশোয়া ভঙ্গিতে, মাথাটা থাকে হেডবোর্ডের ওপরে, বালিশ ছুঁয়ে... সিলিংএর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ভাবতে থাকে সারাদিনটার কথা।
কি যেন মনে পড়তে হটাৎ করে উঠে বসে বিছানায়... হাতের গ্লাসটার থেকে আরো খানিকটা ওয়াইন একটা বড় চুমুকে শেষ করে রেখে দেয় সেটা পাশে, বিছানার ওপরেই... তারপর হাত বাড়িয়ে তুলে নিয়ে আসে পাশের টেবিলে রাখা ছবিটাকে। ঘরের কম আলোয় অস্পষ্ট ছবির মুখ গুলো... তাতে তার কিছু যায় আসে না... ওই অস্পষ্ট মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকে পৃথা... আজকাল এটা ওর একটা নতুন নেশা বলা যেতে পারে... রাতে শোবার সময় ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ছবিটাকে টেনে নেয় নিজের কাছে... সারাদিনের সমস্ত কথাগুলো শোনায় ছবির চরিত্রটিকে... একবার না বলতে পারলে যেন স্বস্তি পায় না পৃথা। কথা বলে লোকটির সাথে... অনেক সময় পরামর্শও নেয় সে... অবস্যই সেটা নিজের মনেই... সত্যি সত্যি উত্তরই বা পাবে কি করে সে... তাও... তাতেই যেন খুশি সে। ঘরের আলো কম থাকলে লোকটির স্ত্রীর মুখটা স্পষ্ট হয় না বলে যেন সেও একটু খুশি হয়... নয়তো তার স্ত্রীর সামনে এই ভাবে বিবাহিত একটা লোকের সাথে মন খুলে কথাই বা বলে কি করে? তাই না?
গ্লাসটা হাতে তুলে তলানির শেষটুকু গলায় ঢেলে দেয়... তারপর গ্লাসটাকে ফের রেখে দিয়ে তাকায় ছবির দিকে... ‘জানো... আজ সুশান্ত আর ওর হবু বৌকে ডেকেছিলাম ডিনারে... তোমাকে তো বললাম কাল রাতে যে ওদের ডাকবো... বেশ ভালো লাগলো বউটাকে... কেমন বাচ্ছা বাচ্ছা... খুব মিষ্টি... আর জানো... উফফফফ... তোমাকে কি বলবো... কি বকবকটাই না করতে পারে... সারাটা’খন তো শুধু বলতে গেলে ওই বকে গেলো... এই জানো... তোমার পৃথাকে মৌসুমীর না খুব ভালো লেগেছে... হ্যা গো... খালি আমার কথা শুনতে চায়... ইশশশ... বাবুর হিংসা হচ্ছে বুঝি?... না না... তুমি হিংসা করবে কেন? তুমি তো আমার সোনাটা... মুউউউআআআআ...’ ছবিটাকে তুলে চুমু খায় পৃথা আধো অন্ধকারে লোকটির ঠোঁটটাকে আন্দাজ করে। তারপর নামিয়ে ফের বলতে শুরু করে... ‘উফফফফ... ওই আর এক হয়েছে তোমাদের অলোকবাবু... মালটা এত আলুবাজ যে কি বলবো... আজকেও ওদের এগিয়ে দিতে বেরিয়েছি... ব্যাটা ঠিক বেরিয়ে এসেছে... হে হে... জানো... আমি না যেই কাকিমার কথা জিজ্ঞাসা করেছি, ব্যাটা সুরসুর করে ঘরে ঢুকে গেছে... হি হি... ভালো করেছি না?’
একটু ভেবে চিন্তান্বিত গলায় বলতে থাকে... ‘তোমাকে না একটা কথা বলবো বলবো করে বলাই হয় নি... অবস্য আমিও একেবারে যে নিশ্চিত তা নই... তবুও... একটা ব্যাপার আমার একদম ভালো লাগছে না জানো...’ বলতে বলতে পাশে রাখা গ্লাসটা তুলে ঢালতে যায় গলায়... কিন্তু ফাঁকা গ্লাস থেকে কিছুই পড়ে না... ছবিটাকে বিছানায় রেখে বলে, ‘দাঁড়াও... একটু অপেক্ষা করো... এটাকে ভরে এনে বলছি...’ বলে উঠে যায় ঘরের বাইরে।
কাবার্ড খুলে বোতল বের করে খানিকটা তরল ঢেলে নেয় গ্লাসে... তারপর বোতলটাকে আর ফিরিয়ে রাখে না কাবার্ডের মধ্যে... গ্লাস আর বোতল, দুটোকেই দুই হাতে নিয়ে ফিরে আসে বিছানায়... বোতলটাকে এক সাইডে রেখে দিয়ে ভালো করে বালিশে হেলান দিয়ে আবার বসে সে... তারপর গ্লাস থেকে একটা বড় চুমুক দিয়ে বাঁ হাতে তুলে নেয় ছবিটাকে...
‘আজকাল একা থেকে এটা বেশ একটা অভ্যাস হয়েছে জানো তো... একটু আধটু খেলে মন্দ লাগে না... সারাদিনের খাটাখাটনির পর বেশ রিফ্রেশিং লাগে যা হোক... কি বলো? আচ্ছা? তুমি খেতে? উহঃ... খেতো না আবার... আমি জানি... বেশ ভালোই খেতে... কি ঠিক বলিনি? অবস্য তোমাদের মত অত কড়া আমি খেতে পারি না, আমার বাবা এই ওয়াইনই ভালো... একটু আধটু খেলে খারাপ কি?’
গ্লাস তুলে আরো একটু সিপ করে পৃথা... ঠোঁটের ওপরে গ্লাসের কিনারা লাগিয়ে জিভ বোলায়... তারপর গ্লাসটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ঠেকায় ছবির গায়ে... ‘উহহহ... দেখ... মদের গন্ধ পেয়েই কেমন চোখগুলো চকচক করে উঠল... এই... পাশে তোমার বউ আছে না? ও কিন্তু দেখতে পাচ্ছে... বলে দেবো, বউদিকে? হু? ওর বর মদ খেতে চাইছে?’ আরো খানিকটা ওয়াইন কথায় কথায় পৃথার গলা দিয়ে নেবে যায়।
গ্লাসটাকে পাশে রেখে দিয়ে বলে ওঠে... ‘ওই দেখো... কথায় কথায় যেটা বলতে যাচ্ছিলাম, সেটাই তো বলা হলো না তোমাকে... আরে... আশ্চর্য লোক তো... মনে করাবে তো... নাকি... সব শুধু আমার দায়... হুঁ?’ বলতে বলতে মাথাটা পেছন দিকে হেলায় পৃথা... বেশ ভার লাগে মাথার মধ্যেটায়... ইতিমধ্যেই প্রায় অনেকটা ওয়াইনই পেটে চলে গিয়েছে... খানিক চোখ বন্ধ করে থেকে আবার মাথা সোজা করে তাকায় আবছায়া ছবিটার দিকে... ছবি ধরা হাতের বুড়ো আঙুলটাকে ঠেকায় লোকটির গালের ওপরে... একটু বুলিয়ে নেয় সেখানে... তারপর সিরিয়াস মুখ করে বলে সে... ‘জানো... আমার না সুশান্তর ইদানিং কালের ব্যবহারটা ঠিক ভালো লাগছে না... ওর মধ্যে আগের সেই বন্ধুত্বটা যেন নেই... তার বদলে ও আরো কিছু চাইছে আমার থেকে... এটা কি ঠিক? বলো? আরে বাবা, তোর সাথে একটা মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়ে রয়েছে... সেখানে আমার দিকে ঢলিস কেন? সত্যি বলছি... এই তোমার গা ছুয়ে... বিশ্বাস কর... আমার মনে কিন্তু ওর প্রতি এতটুকুও কোন ওই ধরণের অনুভূতি নেই... সিরিয়াসলি... আমি কক্ষনো ভাবি নি এই সব নিয়ে... কিন্তু ও কেন এই রকম করছে বলো তো?’
গ্লাস তুলে আরো খানিকটা তরলে চুমুক দেয় পৃথা... গ্লাসটাকে বিছানার ওপরে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে বলতে থাকে... ‘তুমি বলবে আমি হটাৎ কেন এই সব কথা বুঝতে পারলাম... আরে বাবা, ও তোমরা বুঝবে না... এই, আমরা মেয়েরা না, ছেলেদের চোখ দেখলেই বুঝতে পারি কি মনের মধ্যে চলছে। ও কিন্তু সরাসরি কিছু বলে নি আমাকে, কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি... তা নয়তো তুমিই বলো... ওকে যখন বললাম যে ওর হবু বউকে নিয়ে আসতে, শুনে প্রথমেই কেন না বলল? বললো যে ও একা আসবে, বউকে আনবে না। কিন্তু কিইইইই ভালো মেয়েটা, জানো... ভিষন মিষ্টি... শুধু যা একটু বেশিই বকে... বাব্বা... কি বলবো তোমায়... বকবক করে করে আমার ভেজা একেবারে ফ্রাই করে দিয়েছিল... হা হা হা হা... তবে একটা কথা আমি ভেবেই রেখেছি জানো... কিইইইই বলোতোওওওওও... আঃ হাঃ... বলতে পারলে না তো... জানি পারবে না... বুদ্ধু একটা... কিচ্ছু বোঝে না... এই বলো না... বলো না... তুমি বুঝতে পারো নি? এ বাবা... কি বোকা লোক একটা... এই সামান্য কথাটাও বোঝোনি? ইশশশশ... একদম গুড ফর নাথিং... এর সাথেই না কি আমি... দেখ দেখ... কেমন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে জানার জন্য... আচ্ছা... দাঁড়াও... আগে একটা সিগারেট ধরাই... মুখটা কেমন হয়ে রয়েছে’। বলে ছবিটাকে বিছানায় রেখে নেমে দাঁড়ায় খাট থেকে পৃথা... উঠে দাঁড়াতেই মাথাটা টলে যায় একটু... ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে আবার... ফিরে ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে... ‘হি হি... মনে হচ্ছে একটু একটু হয়েছে, জানো তো?’ বলে আবার উঠে দাঁড়ায়... এবারে আর টাল খায় না... হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সেন্টার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়... বেডরুমের আলো বাইরের ঘরে পড়ে জায়গাটা মোটামুটি দৃষ্টিগোচর হয়ে রয়েছে... টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা তুলে নিয়ে ভেতর থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে লাগায়... পাকেটটা ছুঁড়ে টেবিলের ওপরে ফেলে দিয়ে লাইটারটা তুলে সিগারেটটা জ্বালিয়ে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে ওপর দিকে তাকিয়ে... তারপর লাইটারটা টেবিলের ওপরে রেখে ফিরে যায় আবার ঘরের মধ্যে। দেওয়ালের কাছে রাখা টেবিলের থেকে অ্যাশট্রেটা হাতে তুলে নিয়ে ফিরে আসে বিছানার কাছে... সামনের দিকে ঝুঁকে গ্লাসটা বিছানার থেকে তুলে নিয়ে একটা চুমুক দেয় গ্লাসের তরলে... তারপর সেটাকে আবার আগের জায়গায় রেখে সাবধানে উঠে পড়ে বিছানায়... ফিরে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে ছবিটাকে ফের তুলে নেয় হাতের মধ্যে... অন্য হাতে ধরা সিগারেটে টান দেয় একটা... মুখ তুলে ধোঁয়া ছাড়ে চোখ বন্ধ করে... কিছু চিন্তা করতে থাকে চুপ করে।
আসতে আসতে মাথা নামিয়ে তাকায় ছবির দিকে চোখ সরু করে... তাকিয়েই থাকে চুপ করে বেশ খানিকক্ষন... মাঝে মাঝে টান দেয় সিগারেটে... তারপর এক সময় অ্যাশট্রেতে সিগারেটের মাথায় জমে ওঠা ছাইটা ঝেড়ে মৃদু গলায় প্রশ্ন করে ছবিটার দিকে লক্ষ্য করে... ‘আমাকে ভালো লাগে?’
প্রশ্নটা করে চুপ করে থাকে সে... যেন উত্তরের আশায় অপেক্ষা করে। তারপর বলে, ‘বলো না... আমায় ভালো লাগে?’ তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পৃথা... ‘হুমমম...’ বলে, ‘জানি... বলবেই বা কি করে? তুমি তো ছবি... তুমি শোনো... কিন্তু উত্তর দিতে পারো না... নাঃ... তাতে আমার কোন আক্ষেপ নেই জানো... তুমি কিছু বলো না তো কি হয়েছে... আমি কিন্তু তোমার মনের সব কথা বুঝতে পারি... আমি জানি তুমিও আমাকে পছন্দ কর... তাই না? বলো...’
ছবিটাকে হাঁটুর ওপরে ব্যালেন্স করে রেখে গ্লাসটা তুলে আরো একবার চুমুক দেয়, তারপর সেটাকে রেখে সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলে ফের, ‘জানি না তুমি আমাকে পছন্দ কর কি না... কিন্তু একটা কথা সত্যি, আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি... ভিষন... আর তুমি জানো? তোমাকে তো বলাই হয় নি... আজ কথায় কথায় সুশান্তকে জানিয়ে দিয়েছি এক ফাঁকে, যে আমি কমিটেড... শুনে ওর মনটা যে একটু খারাপ হয়ে গেল, সেটা বুঝতেই পেরেছিলাম, খুব জানতে চাইছিল, কে?... আমি শুধু বলেছি যে ও আছে একজন... মনে মনে তোমার কথা বলেছিলাম। ঠিক করেছি না? তুমি হয়তো আমার এটাকে পাগলামী ভাববে... যে নেই তাকে কি করে এই ভাবে ভালোবাসছি... না গো... সত্যি... সব জেনে বুঝেও নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না... এটা নিয়ে আমিও অনেক ভেবেছি... কিন্তু... না, না, ভেবো না যে আমি নেশার ঘোরে এই সব কথা বলছি... একটুও না... আমি একদম ভেবে চিন্তেই কথাটা বললাম... আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি... বিশ্বাস করো। জানি তুমি বলবে তোমাকে চিনিনা, জানি না, নামটাও জানি না এখনও... তাও... একটুও বাড়িয়ে বলছি না... আই লাভ ইউ...’ বলতে বলতে ছবিটাকে মুখের কাছে তুলে আনে পৃথা... নিজের ভেজা ঠোঁটটা চেপে ধরে ছবির ওপরে... তারপর চেপে ধরেই থাকে... মিনিটের পর মিনিট... বেশ অনেকক্ষন কেটে গেলে আস্তে আস্তে ছবিটাকে নামায় মুখের ওপর থেকে... গাঢ় চোখে তাকিয়ে থাকে খানিক... তারপর ফিসফিসিয়ে পুণরাবৃত্তি করে কথাটার... ‘আই লাভ ইউ... লাভ ইউ... লাভ ইউ... লাভ ইউ...’ বলতে বলতে মাথাটাকে হেলিয়ে দেয় বিছানার হেডবোর্ডের ওপরে... হাতে ধরা সিগারেটটা মুখের কাছে এনে টান দেয় একটা... ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে উঠে বসে চেপে গুঁজে দেয় সিগারেটের জ্বলন্ত অংশটাকে অ্যাশট্রের মধ্যে।
গ্লাসটাকে ঠোঁটের কাছে তুলে সিপ করে... তারপর সেটাকে হাতের মধ্যে ধরে রেখেই ছবির দিকে তাকিয়ে গাঢ় স্বরে বলে ওঠে পৃথা... ‘আই ওয়ান্ট টু কনফেস আ থিং টু ইউ...’ বলে, চুপ করে থাকে খানিক। বোঝা যায় তার মনের মধ্যে একটা প্রবল ঝড় চলছে... একটা দ্বিধা... একটা দ্বন্দ...