Thread Rating:
  • 89 Vote(s) - 3.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
#90
 
আগের পর্বের কিছু টা অংশ-                                                           

বেচারী ম্যাম। ভাবেন নি হয়ত ব্যাপার টা কে মা এই ভাবে আচরণ করবে। দোষ টা ওনার না। এই ব্যাপার টার বীজ আমি পুঁতে রেখেছি বাড়িতে আগে থেকেই। কি বলবেন ম্যাম খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আমার মা কে উনি চেনেন। যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক। আমি প্রথম হতাম। কাজেই সেই সুত্রে মায়ের সাথে ভালই সম্পর্ক ছিল ম্যাম এর। কিন্তু সেদিনে মায়ের মুর্তি দেখে উনি আর কিছু বলতে সাহস পান নি। আমরা দুজনাই, মানে আমি আর ম্যাম, একে অপরের দিকে করুণ চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম মাত্র। কেউ বুঝতে পারিনি, মায়ের এই রকম আচরণের কারন।

 

                                                                   পর্ব  তিন

বাড়িতে এসে বকুনি জোটে নি। কিন্তু তার থেকেও মারাত্মক শাস্তি আমাকে পেতে হয়েছিল। আমার বাপি শোনার পরে রেগে গেছিল যথারীতি। কিন্তু এখানেও মা বাপি কে কন্ট্রোল করেছিল। আর মা মারাত্মক কান্না কাটি করছিল। জানিনা কেন। এতে কান্নার কি আছে সেটা আমি সেদিনে বুঝিনি। কিন্তু আজকে বুঝি। সেদিনে পৃথিবী উলটে যায় নি কিছু। কিন্তু সব কিছু উল্টে যাবার অশনী সংকেত হয়ত মা পেয়েছিল। কিন্তু বাপি কে দিয়ে আমাকে বকুনি খাওয়ায় নি। বাপিও সব শোনার পরে থম মেরে গেছিল। যাই হোক বুদ্ধি বাপি ই বের করেছিল। সেটা আমার পক্ষে খুব বাজে হয়েছিল। বাপি সেদিনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আমাকে আর বাড়িতে অবসর দেওয়া যাবে না। কোন মতেই না। দুজনার কেউ ই সহ্য করতে পারছিল না, বাড়িতে বসে আমার পুতুল খেলার ব্যাপার টা বা মা কাজ করলে মায়ের হাতে হাতে কাজ করে দেওয়া টা।


তাই আমার পড়াশোনার পরে যাতে সময় না পাই সেই জন্য আমাকে ফুটবল কোচিং এ ভর্তি করে দেওয়া হল। ভাবুন একবার, যে কিনা বাড়িতে পুতুল খেলতে ভালোবাসে, মায়ের সাথে কাজ করতে ভালোবাসে, তাকে সোজা ফুটবল কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দেওয়া হল।


শুধু তাই নয়, স্প্যানিশ গীটার এও ভর্তি করানো হল। কারন টা তখন বুঝিনি, এখন বুঝি। বাপি ভেবেছিল, বয়সন্ধি তে, গীটার বাজালে মেয়েরা আমার দিকে আকর্ষিত হবে। আর আমিও হয়ত মেয়েদের উপরে আকর্ষিত হয়ে, নিজের এই মেয়েলি ব্যাপার টার থেকে বেরিয়ে এসে একটা সুস্থ জীবন যাপন করব।


যাই হোক, ফুটবল আর গীটার দুটোই আমি শিখতে লাগলাম মন দিয়ে। আমার একটা ব্যাপার ছিল, সে পড়াশোনাই হোক বা গীটার শেখা, বা খেলা, শেখার জিনিস শিখে যাই বড্ড তাড়াতাড়ি। যখন আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ি, তখন আমি অলরেডি, স্কুল টিম এ খেলছি, আর স্কুলের প্রোগ্রাম এ গীটার ও বাজাচ্ছি। কিন্তু ওতে যে আমার মন লাগত না সেটা আমার কাছে ততদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছিল।


আমাকে ধরে বেঁধে আমাদের গেমস স্যার ফুটবল মাঠে নিয়ে যেতো আর আমার মন পরে থাকত, তার পাশের রুমে, যেখানে মেয়েরা নাচ শিখত। আমি তখন বেশ লম্বা। প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি মতন। সন্ধ্যে হয়ে গেলে দেখতাম ওরা সারা বিকাল যা শিখত এক এক করে পারফর্ম করছে, এক্সট্রা কারিকুলার ম্যাম এর সামনে।

আমি তখন ফিরে জার্সি খুলে, স্কুলের জামা প্যান্ট পরে সাইকেল টা নিয়ে বাড়ির দিকে আসতাম। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতাম ওদের নাচ টা দেখা যায় এমন একটা জায়গায়। স্টেপ্স গুলো কে দেখতাম। মনে মধ্যে বড্ড দ্রুত গাঁথা হয়ে যেত। অপেক্ষা করতাম কখন মা থাকবে না বাড়িতে, আর আমি গান চালিয়ে সেই গুলো নাচব। নাচ যে আমার রক্তে ছিল সেটা আমি পরে জেনেছিলাম। আমার মা আমাকে এই নিয়ে দোষ দিতে পারবে না। কারন আমার বোন ও দারুন নাচত। ইভেন আমার ছোট ভাই ও নাচানাচি করত। তবে ও আমার মতন মেয়েলি নাচ নয়।ও ছেলেদের কন্টেম্পোরারি বেশী পছন্দ করত। বাপি রাজী ছিল না বলে ভাই কে পড়াশোনা নিয়েই থাকতে হয়েছিল। তাই ভাই এর জীবন থেকে নাচ টা মুছে গেছিল বলা চলে। কিন্তু পরের দিকে আমি দেখেছি, নাচ টা ওর খুব ন্যাচুর‍্যাল।


একটু পরের দিকে, মানে আমি যখন ক্লাস সেভেন টেভেন পড়ি তখন, বোন কে আনতে যেতাম নাচের ক্লাস থেকে। সেটাও আমার কাছে বিরাট পাওনা ছিল। আজকে আমি দারুন নাচি। কিন্তু তার পিছনে আছে বলতে গেলে, বোন কে নাচের ক্লাস থেকে আনতে যাওয়া আর আমার তীব্র অধ্যাবসায়।


আমার বাপি আর মা একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছিল যে আমার মধ্যে , মেয়েলি ব্যাপার গুলো আর নেই। কারন আমার ফুটবল খেলায় বেশ নাম হয়ে গেছিল। স্কুলের সাথে আমি আমাদের বাড়ির কাছের ক্লাবেও বাবার জোরাজুরি তে খেলতাম। আমার বাপি আর মা আমাকে কোন মতেই বাড়িতে পড়াশোনার সময় ছাড়া আমাকে থাকতে দেবে না। সব সময়ে আমাকে এনগেইজ করে রাখবে এই ছিল উদ্দেশ্য।


সবাই যখন বাপি কে বলত, আরে তোমার ছেলে মারাত্মক ফুটবল খেলে। তখন বাপি আমার সেই ছোটবেলার মতন চুল গুলো কে ঘেটে দিত। খেলে আসার পরে কি খাব না খাব সেই নিয়ে মায়ের চিন্তা থাকত। আজকে সুপ এর সাথে ডিম সিদ্দ, তো পরের দিন চিকেন স্ট্যু। সে অনেক ব্যাপার। কিন্তু আমার মন কোন দিন ই ভালো খেলা বা পড়াশোনার জন্য এই বাড়তি খাতির, মেনে নেয় নি। আমার মন পরে থাকত, মায়ের সাথে কাজ করায়। বা নাচে। 
আমি যা করেছি প্রশংসিত হয়েছি। তা সে পড়াশোনা হোক, বা ফুটবল খেলা, বা স্প্যানিশ গীটার বাজান, বা নাচ। কিন্তু নাচের প্রশংসা কেউ করলে আমি যা খুশী হই, বাকি গুলোতে অতো হই না। কারন ওটা আমার খুব কস্টার্জিত সম্পদ। 

কিন্তু যা খেলতে পছন্দ করতাম না সেই ফুটবল খেলতে গিয়েই রাকা টার সাথে আমার পরিচয়। ও আর আমি এক ক্লাসে ছিলাম কিন্তু সেকশন আলাদা ছিল ওর। তাই আগে দেখিনি কোন দিন। আমি ফার্স্ট হতাম। বলতে গেলে সবাই আমাকে চিনত। এক ক্লাস আগে পিছেও ছেলে মেয়েরা চিনত আমাকে। কিন্তু ওকে আমি চিনতাম না। আর সত্যি বলতে পাত্তাও দিতাম না অতো। আমি ফার্স্ট হতাম, তাই কত ছেলে মেয়ে আমার কাছে ভিড় করত। একটা সত্যি কথা বলি, আমার কোন কালেই মেয়েদের পছন্দ হয়েছে এমন না। বরং না আমি একটু হিংসুটে ছিলাম মেয়েদের প্রতি। ভাবতাম ইশ আমিও যদি হতে পারতাম। এমন করে সাজতে পারতাম। বা ভাবতাম আমি সাজলে এর থেকেও সুন্দর করে সাজতে পারতাম। 

যাক ওই সব কথা নয় এখন। রাকাটার কথা হচ্ছিল। ওই প্রথম যে আমাকে চিনত না আমাদের ক্লাসে। বুঝে গেছিলাম একেবারে পাতে দেবার অযোগ্য। পড়াশোনা করে না তাই আমাকেও চেনে না। কিন্তু টিমে ছিল। আর আমার সাথেই মিডফিল্ডে খেলত। ওর সাথে খেলতে খেলতে ওর ভক্ত হয়ে পরেছিলাম। অবশ্য ওর সাথে বন্ধুত্বের আরেক টা বড় কারন আমি ধীরে ধীরে বলব।

আমি বুদ্ধিমান। সেটা পড়াশোনায় ভালো বলেই শুধু না, ফুটবল টাও আমি মাথা দিয়েই খেলতাম। কিন্তু যেদিন দেখলাম, রাকাও সম পরিমান বা তার থেকেও বেশী বুদ্ধি দিয়ে খেলে, সেদিনে ওর উপরে যে একটা হেলাছেদ্দা ভাব ছিল সেটা আমার কেটে গেছিল। আমাদের স্কুল টিম টা মারাত্মক ছিল। সর্বভারতীয় সাব জুনিয়র অল স্কুল টুর্নামেন্ট এও খেলেছি আমরা, ক্লাস এইট নাইনে পড়্রার সময়ে। ততদিনে অবশ্য আমি খেলা ছেড়ে দিয়েছিলাম। শুধু রাকা খেলত আমাদের ক্লাস থেকে।   
 
বন্ধুত্ব হবার আগে রাকার সাথে খেলার সময়ে ছাড়া অন্য সময়ে কথা বার্তা একদম ই হতো না। আমি পাত্তা দিতাম না। আর দেবোই বা কেন? এতো মুখ খারাপ করত বলার না। কথা মাত্রেই স্ল্যাং বেরিয়ে আসত ওর মুখ দিয়ে। কিন্তু ব্যাপার হলো আমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়, আমি কাউকে পাত্তা দিলাম না, আর ক্লাসের একটা ছেলে সে আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না সেই ব্যাপার টা আমাকে খুব রাগিয়ে দিত। রাকা আমাকে সামান্য পাত্তা ও দিত না। মানে আমাকে যথেষ্ট হেলাছেদ্দা করত। আমাকে বলত

-     ফান্টুস ছেলেদের দিয়ে কি ফুটবল হয় নাকি? স্যার যে কি দেখে তোকে দলে নিয়েছে স্যার ই জানে। এটা ফুটবল। পড়াশোনা নয়।

দেখতে আমি ভালো ছিলাম। লম্বা ওর মতন না হলেও ভালই ছিলাম। চেহারা ভালো ছিল। খেলার সময়ে মেয়েরা আমার জন্য চিয়ার করত। এই সব দেখে আরো জ্বলে যেত যেন ও। তাই আমার ও দরকার ছিল না ওর রেকগ্নিশন এর। কিন্তু ওর পাত্তা না পাওয়া টা পছন্দের ছিল না আমার কোনদিন। রাগে বেশী কিছু বলতে পারতাম না। যদি ঘা কতক বসিয়ে দেয়? কিন্তু ওকে বলে দিয়েছিলাম

-     তুই আমার সাথে একদম কথা বলবি না।

আর ও আমাকে বলত
-     ভারী তুই মাগী রে। যে কথা বলার জন্য আমি একেবারে মরে যাব। বাল আমার , যা ভাগ।

জানোয়ার ছেলে একটা। মুখে সামান্য ভালো ভাষা নেই ওর।একে তো পাত্তা দিত না, তার উপরে মুখের ভাষা।আর এই দুটো ব্যাপার টা আমাকে খুব জ্বালাত। ওই সম্মান টা ওর মতন ফেলু যদি আমাকে না দেয় কেমন লাগে? আর এই মুখ খারাপ আর আমাকে কথায় কথায় অপমান জাস্ট এই দুটোর জন্য ওকে আমি সহ্য করতে পারতাম না। এত মুখ খারাপ করে, মাঝে মাঝে কোচ স্যার ও ওকে বকা ঝকা করে। আমি তো গিয়ে স্ট্রেট রিপোর্ট করতাম স্যার কে।
-     স্যার রাকা প্রচণ্ড স্ল্যাং ইউজ করছে। ডিস্টার্ব হচ্ছে আমার।  

স্যার বকা ঝকা করতেন খানিক ওকে। ও খানিকক্ষণ চুপ থেকে আবার যা কার তাই। দুজনাই স্কিল্ড ছিলাম মারাত্মক। কিন্তু আমার সামর্থ্য কম ছিল। মানে দৈহিক বল। দৌড়তাম খুব জোরে। কিন্তু বল দিয়ে দৌড়ন অন্য ব্যাপার। সেই খানে ওর সাথে তাল মেলাতে পারতাম না। আর মনে হতো এই অন দ্য বল দৌড়ন টা ওর সহজাত। সহ্য করতে পারতাম না ওকে, কিন্তু ও টিমে না থাকলে মনে হতো, টিম টা ছন্নছাড়া খেলছে। কিছুতেই খেলা টা জমাট বাঁধছে না। ওর ভালো খেলা মেনে নিতে আমার অসুবিধা ছিল না কোন। কিন্তু আমি চাইতাম বদলে ও আমাকে একটু পাত্তা দিক। ও পাত্তা দিত না, তাই ওর ভালো খেলা টা আমি কোনদিন সামনা সামনি স্বীকার ও করিনি কারোর কাছে।

কিন্তু ফুটবল স্কিল টা ই দুজনাকে অনেক কাছাকাছি এনে দিল একটা ম্যাচের পরে। সেবারে আমাদের ম্যাচ পরল, সিকিমের একটা স্কুলের সাথে। আমরা তখন এইট এ পড়ি। আর সত্যি বলতে সেটাই আমার লাস্ট ম্যাচ ছিল আমার স্কুলের হয়ে। কারন ততদিনে আমার মধ্যে মেয়ে হবার বেশ কিছু গুন বা দোষ সামনে আসতে লেগেছিল। আমি পেরে উঠছিলাম না আর ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলতে। হয়ত সেটাও পুরোপুরি ঠিক নয়, তবে আমার ভালো না লাগা টা খুব বেশী হয়ে সামনে আসছিল। মনে হচ্ছিল এ খেলা আমার জন্য না।

যাই হোক ম্যাচ এ ফিরি। আমরা দুজনাই খেলতাম মিডফিল্ড এ। আমাদের গ্রাউন্ডেই সেই ম্যাচ টা হয়েছিল। আমার জার্সি নাম্বার ছিল ৮ আর রাকার ৭। স্যার বললেন, সিকিমের ছেলেরা খুব দৌড়োয়। তোমাদের কিন্তু খুব ঠান্ডা হয়ে খেলতে হবে। আমরা যেহেতু মিডফিল্ডে খেলি তাই দায়িত্ব টা আমাদের উপরেই বেশি থাকে, খেলার গতি স্লো বা ফাস্ট করার। আমি যদি পড়াশোনা না করে ফুটবল টা কে কেরিয়ার করতাম, তবে রাকার মতন আমিও বড় দলে খেলতে পারতাম আজকে। সেদিনে ঠিক হল, যদি সিকিম শুরু থেকেই দ্রুত খেলতে শুরু করে, আমাদের কাজ হবে নিজেদের মধ্যে পাস খেলা। আমরাও ছোট খাট টিম ছিলাম না। আগের বছরে আমরাও স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ রানার আপ ছিলাম। আমাদের ও যথেষ্ট ভালো ভালো প্লেয়ার ছিল। পাস খেলে খেলে , খেলার গতি স্লো করানো।  এই ব্যাপার টা সবাই বুঝেছিলাম।

কিন্তু খেলা শুরু একটু আগে স্যার ডাকলেন আমাদের দুজন কে। বললেন,
-     দ্যাখ আমরা ৪ ৪ ২ এ খেলছি। ওদের কে আটকানো সুবিধা হবে বিশেষ। কারন ওরা আট্যাকিং খেলে। মারাত্মক গতি ওদের। গত ম্যাচ এ ওরা ওড়িশার টিম টা কে সাত গোল দিয়ে এসেছে। এটা নক আউট। তাই মনে রাখ, গোল খেলে গোল দিতে হবে। খাবি না সেও আচ্ছা। কিন্তু খেলে গোল দিতে হবে। আমার ইচ্ছা ৪ ৪ ২ চলুক। নিচেই বেশি খেল তোরা। ত্রম্ব্যক তুই ক্যাপ্টেন, এটা তোর দায়িত্ব। যদি গোল খেয়ে যাস , তবে কিন্তু ফর্মেশন ভেঙ্গে, ৫ ২ ৩ চলে যাবি। আর উপরে তিন নাম্বার স্ট্রাইকার এ ত্রম্ব্যক তুই উঠবি। আর ত্র্যম্বক তোকেই নেমে আসতে হবে বাকি দুজনের বলের যোগান দেবার জন্য।

সেই সময়ে রাকা বলে উঠল

-     সব সময়ে এটাকেই আপনি গুরুত্ব দেন। ও পারবে না ফলস নাইন এ খেলতে। আমি যাব।
আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তখন, স্যার কি বলছেন। কারন ফলস নাইন আমি তখন বুঝতেও পারিনি। তিন নাম্বার স্ট্রাইকার তুললে তো হারার চান্স বেশী হবে। মিডফিল্ডে লোক কমে যাবে। কি ভাবে তখন উপরে বল তুলবো?স্ট্রাইকার আর ডিফেন্সের ব্রীজ টাই তো নস্ট হয়ে যাবে তখন।  আর যা বুঝতে পারছি আজকে, ডিফেন্সে ছেলেদের ভাল খেলতে হবে। তাছাড়া, ফলস নাইন ই বা কি? কিন্তু আমার রাগ হয়ে গেলো রাকার কথায় - ও পারবে না। আমি 
কিছু বলার আগেই স্যার বললেন,

-     ও তুই বুঝে গেছিস? গ্রেট! তবে ক্যাপ্টেন কে বুঝিয়ে দে।

চমকে উঠলাম আমি। সাথে রেগেও গেলাম মারাত্মক। অ্যাঁ, আমাকে ও বোঝাবে? আর আমি সেটা বুঝব? মোটেই না। আমি জোর ধরলাম,

-     না না আপনার থেকেই বুঝব স্যার। ও কি জানে যে আমাকে বোঝাবে? আর আমি পারব ফলস নাইন এ খেলতে।

আমি তখন জানি ই না ব্যাপার টা কি। শুধু জেদ, অহংকারে বলে দিলাম আমি জানি। এদিকে স্যার বলে চললেন,

-     তুই স্ট্রাইকার এ চলে যাবি। মাঝে ঢুকবি দুটো স্ট্রাইকারের। তারপরে মিডফিল্ডে নামবি। বুঝলি?

বলতে যাচ্ছিলাম তাতে কি হবে? কিন্তু আবার ইগোর চক্করে চুপ করে গেলাম। এটা কেমন কথা, যে লাস্ট বেঞ্চার বুঝতে পেরে গেলো আর ফার্স্ট বেঞ্চার বুঝল না? মুখে বললাম
-     হুম ওকে।   

খেলা যখন শুরু হল তখন আমাদের স্কুলের চিয়ার আপ এ চারদিক গম গম করছে। আমার বাবা মা ভাই বোন সবাই এসেছে। সবার গার্জেন রা তাদের ছেলেকে কে চিয়ার করছে। আমার ভাই বোন ও করছে। কিন্তু আমার বুকের ভিতরে গুরগুর করছে। কিছুই তো বুঝলাম না। জানিনা কি হবে।

খেলা শুরুর আগে রেফারী বলে দিলেন যে ৩০ মিনিটের একটা হাফ পনের মিনিট হাফ টাইম আর কুড়ি মিনিটের এক্সট্রা টাইম, তাতেও ড্র হলে টাই ব্রেক। খেলা র বাঁশি বাজতেই, আমরা বলের পজেশন বেশী রাখতে শুরু করলাম। মিডফিল্ডে আমরা চার জন খেলছিলাম। আমি, রাকা, রাজীব আর পল। ডিফেন্স এ আছে টনি, পলাশ, সবুজ আর সেলিম। আর গোল এ মুজিব। আর উপরে খেলছে রক্তিম আর নির্ভয়।

খেলা শুরু হলো। মেইনলি আমরা ডিফেন্স আর মিডফিল্ডে বল রাখতে শুরু করলাম। নিজেদের মধ্যে পাস খেলছি অনবরত। ডিফেন্স এ খানিক বল থাকার পরে, ওদের স্ট্রাইকার তাড়া করলে আমার কিম্বা রাকার কাছে আসছিল। আমরা কখন সোজা পাসে, কখনো ক্রস পাসে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করছিলাম। মিনিট দশ যাবার পরে বুঝলাম, ওরা কি মারাত্মক। কি তীব্র গতি ওদের। ওরা প্রচণ্ড দ্রুত বলের পজেশন নেবার চেস্টা করতে লাগল। গায়ের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে আসতে লাগল বল তাড়া করে। আমি নিজে দুবার পড়ে গেলাম। ফাউল হল। কিন্তু এই প্রেশার টা এতো মারাত্মক আকার নিল যে, আমাদের কাছ থেকে বলের পজেশন বেরিয়ে যেতে থাকল।
আর ওদের পায়ে বল গেলেই এতো দ্রুত গোলের দিকে যাচ্ছিল যে আমরা খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। ওরা ফুটবলের সব থেকে সরল নিয়ম টা মেনেই খেলছিল। ধর দেখ আর মার। শুনতে খুব সোজা এই তিনটে শব্দ। কিন্তু ওই তিনটে কাজ করতে গেলে কত কত প্র্যাকটিস করতে হয় সেটা যারা ফুটবল টা খেলে তারাই বোঝে। ওরা দেখলাম, আমাদের মতন অতো ধরে খেলার পক্ষপাতী নয়। বল পেলেই, খুব বেশি চারটে পাসে আমাদের ডি-বক্স এ পৌঁছে যাচ্ছে। ওই সময়ে আমি আর রাকা নেমে আসছিলাম নিজেদের ডিফেন্সে। আমি ডান পায়ের প্লেয়ার। তাই ডান উইং দিয়ে ছিলাম। রাকা ছিল ঠিক আমার পাশেই বাম দিকে। ও বাঁ পায়ের প্লেয়ার। তারপরে পল আর তার পরে রাজীব। আমি আর রাকা নেমে যাবার ফলে এই জায়গা টা এতো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল যে আমাদের পজেশনের সময়ে ওই জায়গা ফিল আপ করা মুশকিল হচ্ছিল। আমাকে আর রাকা কে অনেক খানি দৌড়োতে হচ্ছিল সেটা কে কভার করতে। জানিনা কেন আমার পক্ষে সমস্যার হচ্ছিল সেটা। রাকা ঠিক আছে এখনো। সমস্যা টা বেশী আমার হচ্ছিল।  কিন্তু এই লেভেলের দৌড়ানোর পরে বেশীক্ষন মেয়াদ কারোর থাকবে না। তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোল খাব।

আমরা এই করে দু বার গোল খেতে খেতে বাঁচলাম। একবার তো সেলিম ক্লিয়ার করল । আরেকবার মুজিব নিজে। হাফ টাইমের আগেই বুঝলাম আমরা ভুল খেলছি পুরো টিম টা হাপিয়ে গেছে। আমরা নিজেদের মধ্যে খেলেও ওদের দমের কাছে পিছিয়ে পরছি। ওরা না হাঁপালে আমাদের কোন চান্স নেই। আর ওদের যা দম, হাঁপানোর চান্স আছে বলে তো মনে হয় না। দুটো দলের শক্তির ফারাক দমে। ক্যাপ্টেন হিসাবে, নিজেদের দুর্বলতা টা আমি না বুঝলে কিছু তো করতেও পারব না। একটা সময়ে এসে, পাশে রাকা কে পেয়ে ব্যাপার টা বললাম। 

ও ভেবে বলল
-     একটা কাজ করি, এতে আমরাই হাঁপাচ্ছি। তুই ফলস নাইন এ চলে যা।
-     অ্যাঁ?
-     হ্যাঁ
-     কিন্তু আমরা তো গোল খাই নি এখনো?
-     অপেক্ষা করবি নাকি? এর পরে গোল খেলে , যে হারে হাপিয়ে যাচ্ছি সবাই মিলেও আর শোধ দিতে পারব না।
-     ও। তবে আমি না তুই যা।

কেন জানিনা ওকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল আমার। প্রথমত, ইগোর চক্করে, আমি বুঝিনি, উপরে কি ভাবে খেলতে হবে। আমার সেই ক্যাপ্টেন্সির ইগো সামনে চলে এলো আমার। আমি ক্যাপ্টেন, বুঝতে না পারলে যে বুঝতে পারছে তাকে এগিয়ে দেওয়াই ভাল। আর দ্বিতীয়ত, মনে হল ও কথা টা খারাপ বলছে না। একটা গোল ঠুকে দিতে পারলে, তারপরে এদিক ওদিক করে, দুম দাম মেরে অনেক সময় নষ্ট করে দিতে পারলে, দম টা ফিরে আসবে একটু। আরো একটু সমানে সমানে লড়তে পারব আমরা। আমার কথা শুনে একটু চমকে গেলো ও।

 ও বলল
-     তুই শিওর আমি যাব?

বিরক্ত হলাম আমি
-     হ্যাঁ রে বাবা
-     তবে শোন, যদি দেখিস আমি নেমে আসছি উপর থেকে আর ওদের ডিফেন্ডার কেউ নামছে না, তবে আমাকেই দিবি বলটা। আর যদি দেখিস, ওদের ডিফেন্ডার ডিফেন্স ফাকা করে নেমে আসছে আমার পিছনে তবে, রক্তিম কিম্বা নিভু কে দিবি যে যেমন ফাঁকা থাকবে।
-     আচ্ছা তুই যা। ওদের বলে দে, আমি রাজিব আর পল কে বলে দিচ্ছি।

একটা আমাদের থ্রো ইনের সময়ে আমি পল কে নীচে পাঠিয়ে দিলাম। আর রাজীব কে ব্যাপার টা বলতেই ও ঠিক আছে বলে পজিশন এ চলে গেল। আমাদের নীচে পাঁচ জন হয়ে যাওয়া তে, ওদের স্ট্রাইকার আর মিডফিল্ডের ছেলে গুল আমাদের হাফে নেমে এলো, কারন বলটা আমাদের ছেলে গুলো নিয়ে পাস দেওয়া নেওয়া করছিল নিজেদের মধ্যে। দ্বিগুন জোশে তেড়ে গেল বলের দিকে ওরা। ততক্ষনে আমি একেবারে ডান দিকে চলে এসেছি। প্রায় আউট লাইন আর সেন্টার হাফের জাংশন এ। দেখলাম ওদের ডিফেন্ডার আর আমাদের তিনটে স্ট্রাইকার ও ধীরে ধীরে নেমে আসছে আমাদের দিকে।

 হাফটাইমের কিছু আগে, বলটা রাজীব বাম দিকের হাফ এ পেতেই একটা জোরে উড়িয়ে মারল আমার দিকে। আড়াআড়ি হয়ে বলটা সুইং করে ভেসে এলো আমার কাছে। বলটা আমার কাছে আসতেই, বাম পায়ের থাই এ  রিসিভ করে, ছোট্ট টোকায় হালকা গড়িয়ে দিলাম সামনে। খুঁজছি রাকা কে। আমাদের হাফ থেকে ওদের বাম দিকের উইঙ্গার টা, আরেক জনের সাথে তেড়ে আসছে আমার দিকে। ততক্ষনে দেখলাম রাকা আমাদের দিকে অনেক টাই নেমে গেছে। আমার থেকেও, আমাদের হাফে আরো  ডিপে ওর পজিশন। বুদ্ধি আছে শালার। সামনে টা অনেক টাই ফাঁকা। কারন ও ওর সাথে ওদের দুটো ডিফেন্ডার কেও নামিয়েছে। আমার সামনে টা ক্লিয়ার দেখে আমি সেন্টার থেকে কোনাকুনি দৌড় টা নিলাম সোজাসুজি ওদের গোলের দিকে। বরাবর দৌড়তে আমি দারুন পারি। আমার উদ্দেশ্য ছিল যত টা পারব এগিয়ে যাব ওদের গোলের দিকে। যাতে পরবর্তী পাস টা নিখুঁত ভাবে আরো কাছ থেকে দিতে পারি। আমি বার বার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছি, বাকিরা কে কোথায়। দেখলাম,  আমার সোলো রান টা দেখে রাকা ও স্টার্ট নিয়েছে ধনুকের ছিলার মতন। উফ দেখার মতন ছিল ওর স্টার্ট টা। ওর সাথে লাগা ডিফেন্ডার গুলো ও নিল স্টার্ট কিন্তু মনে হল ওরা দেরী করে ফেলেছে। আর আমার পিছনে ওদের দুটো মিডফিল্ডার সম গতি তে দৌড়চ্ছে।  আমার সোজাসুজি গোলের দিকে দৌড় দেখে, ওদের ডান দিকের ডিফেন্ডার যে রক্তিম কে গার্ড এ ছিল সে এদিকে এলো। বাম দিকের টা ইন্ট্যাক্ট আছে গোল কিপারের সামনে নিজের পজিশন এ। অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আর আমি ওদের বাম দিক দিয়ে কোনাকুনি ভাবে তীব্র গতিতে বল নিয়ে এগোচ্ছি। এতে করে রক্তিমের সামনে তখন মোটামুটি একটা ফাঁকা জায়গা হয়ে গেল, ডেল্টার মতন।কিন্তু দেখলাম উর্ধশ্বাস এ রাকা ও সামনে আসছে। রক্তিম কে পাস দেওয়াই যায়। ওর সামনে অনেক টা জায়গা হয়ে গেছে। কিন্তু  কিন্তু ভাবলাম রক্তিম কে পাস দিলে যা ডিস্ট্যান্স, এদিক ওদিক হলে মিসপাস হতে পারে। লব করলে ওদের ডিফেন্ডার গুল সময় পেয়ে যাবে বল টা ফলো করার। বরং রাকা দুটো ডিফেন্ডার কে একটু পিছনে ফেলে দিয়েছে। ওকে দিলে চান্স বেশী থাকবে। আমি আর রিস্ক নিলাম না। কারন আমার ঘাড়ে তখন নিঃশ্বাস ফেলছিল ওদের দুটো মিডফিল্ডার। আমি রাকার মোটামুটি ফুট কুড়ি সামনে বল টা রাখলাম বাঁ পা দিয়ে। আর নিজে পরে গেলাম। ততক্ষনে রাকা বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে এসে বল টা নিয়েছে। ইতিমধ্যে ওর বাঁ দিকের ডিফেন্ডার টা প্রায় ওকে ধরে ফেলেছে। কারন বল টা আমি ওকে দিয়েছিলাম, ঠিক পজিশনে হয় নি। রাকা কে গতি কমাতে হয়েছে বল টা কে ধরতে। কিন্তু বাঁ দিকের ডিফেন্ডার টা কে ও ধরে রেখে দিয়েছে নিজের কাঁধে। ডিফেন্ডার টা কে বলের ধারে কাছে আসতে দিল না ও। আশ্চর্য্য ক্ষমতা ওর। রাকার সামনে এখন শুধু রক্তিমের সামনে ডিফেন্ডার ছিল, সেই আছে, আর কেউ নেই। আমি ভাবছি হে ঠাকুর ডজ টা যেন ঠিক ঠাক করে রাকা ওকে। বলতে না বলতেই ডিফেন্ডার টার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলিয়ে বেরিয়ে এলো রাকা। শাবাশ!!! এদিকে আমিও দৌড়তে শুরু করেছি আবার উঠে। ততক্ষনে রক্তিম ফাঁকা। কিন্তু যদি মিস করে ও, বল টা কোথাও লেগে ফিরে আসে। নির্ভয় আছে কিন্তু সেও মিস করলে এই সুযোগ টা মিস হয়ে যাবে। নিজের ফলো থ্রু টা রাখতে হবে। আমি ক্যাপ্টেন। এই ভুল টা করলে চলবে না। ততক্ষনে রাকা, হালকা করে বাড়িয়ে দিল বলটা রক্তিম কে। চোখের পলক ও পড়ল না। রক্তিম ও হয়ত আন্দাজ করেছিল পাস টার। না হলে অতো চকিত শট ও নিতে পারত না। তীব্র গতিতে শট নিল গোলে বাঁ পা দিয়ে। হালকা বাঁক নিয়ে ঢুকল গোলে । কোন চান্স রইল না।

চারদিকে চিৎকারের মাঝে দেখলাম আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে রাকা। আমাকে নামালো তখন ওকে বললাম
-     ইউ আর গ্রেট।
ও হেসে বলল
-     সো আর ইউ। তোর ডায়াগোনালি সোলো রান টা ই শেষ করে দিলো ওদের।  
-     থ্যাঙ্কস রে। গোল টা হবার পরে বুঝলাম ফলস নাইন ব্যাপার টা কি। এন্ড আরেক  টা কথা, দ্যাট ওয়াজ এ হিউমিলিয়েটিং ফাইনাল ডজ।
-     তোকেও থ্যাঙ্কস
-     কেন
-     ফর ট্রাস্টিং মি।
আমি তাকিয়ে রইলাম। ও যে আমার রিকগ্নিশন কে এতো টা গুরুত্ব দেয় সেটা দেখে খুব ভালো লাগল আমার। ওকেও বললাম
-     এন্ড সার্টেনলি আই উইল ডু দ সেম নাও অনোয়ার্ডস। এন্ড ওয়েল কাম।

কথাটা হয়ত আমি খেলার পরিপ্রেক্ষী তে বলেছিলাম। কিন্তু সেটা এমন ভাবে জীবনের জন্য সত্য হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। সেই ম্যাচ টা আমারা জিতে ছিলাম পরের হাফ টা বল উড়িয়ে উড়িয়ে খেলে। সেই কারনে প্রায় আট মিনিটের ইনজুরি টাইম খেলতে হয়েছিল। চাবুক টিম ছিল সিকিমের টিম টা। কিন্তু জিতলাম আমরা। আর সব থেকে বড় কথা জিতলাম আমি। রাকা কে।

তার পর থেকে বন্ধুত্ব টা হয়ে গেলো আমাদের। ম্যাচ শেষে আমার বাপি এসে আমাকে কোলে উঠিয়ে নিল। বাপি রাকা কে বলল
-     তুমি দারুন প্লেয়ার।
-     থ্যাঙ্কস আংকল।

রাকার সাথে বাপি কথা বলছিল আর আমার ভয় লাগছিল। মুখ দিয়ে স্ল্যাং না বের করে দেয়। স্ল্যাং বেরোলেই বাপি আমাকে বকবে। কেমন ছেলের সাথে মেশামেশি কর যার ভাষা এতো খারাপ। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু রাকা একটাও স্ল্যাং ইউজ করল না। আবার একবার ইম্প্রেসড হলাম। বাপি মা আমাদের পুরো টিম টা কেই কোচ স্যার সমেত নেমতন্ন করল একদিন খাবার জন্য। আমার এই সবে খুব যে আনন্দ হল তা না। কিন্তু মন টা ভালো ছিল। কি জানি, আমি হয়ত রাকার সাথে এই দুরত্ব টা মানতে পারছিলাম না। ওর ফুটবলের ভক্ত আমি ছিলাম। কিন্তু ওর থার্ড ক্লাস ব্যবহার এর জন্য আমি এগোতে পারছিলাম না। কিন্তু  সেটা আজকে কিছু টা হলেও মিটল তাই হয়ত আনন্দ। আমি ওই ঝগড়া ঝাটি বিশেষ ভালোবাসি না। আমার জীবন দর্শন সিম্পল। ভুল করব না, আর কোন আক্ষেপ ও করব না। মনে হল আজ থেকে হয়ত ও আমাকে গুরুত্ব দেবে। গুরুত্ব না পাওয়া টা আমার কাছে খুব সমস্যার।

ঠিক হল ওরা আসবে খেতে একটা রবিবার। বাপি খুব আনন্দে ছিল। কারন বাপির ধারনা হয়ে গেছিল, আমার মধ্যে আর পুতুল খেলার পোকা টা নেই। কিন্তু সেই পোকা আমার বুদ্ধি আর মন কে কত টা খেয়ে ফেলেছে বাপি আন্দাজ ও করতে পারে নি। মা হয়ত আন্দাজ করছিল। কারন একদিন মা আমার ঘরে একটা ওড়না খুঁজে পেয়েছিল, যেটা আমি নাচের প্র্যাক্টিসের সময়ে পরতাম। কিছু বলে নি। ওড়না টা আমি কিনেছিলাম। কখন সেটা মাথার উষ্ণীষ হত, কখনো বা কোমরে বাঁধতাম আমি।

এমন না যে চাল চলনে বিশেষ কোন ফারাক আমার আসছিল। কিন্তু মা বুঝতে পারছিল সেটা। আমি খুব চেস্টা করতাম স্বাভাবিক থাকতে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেটা সম্ভব হচ্ছিল না আমার জন্য। কিন্তু এই ব্যাপার টা শুরু হয়েছিল আমার ক্লাস নাইন থেকে। সেদিনে আমি প্র্যাক্টিসের পরে বাড়ি ফেরার পথে দাঁড়িয়েছিলাম, আর মেয়েদের নাচ দেখছিলাম। আমি দাঁড়াতাম একটা গাছের নীচে। সেখান থেকে সোজা সুজি জানালা দিয়ে মেয়েদের হল টা দেখা যেত। সব দিন দাঁড়াতাম এমন না। কিন্তু সেদিন একটা কনটেম্পোরারি স্টাইল এ নাচ চলছিল। একটা হিন্দি গানে। বিটস গুলো ভালো ছিল বলে দেখছিলাম। এমন সময়ে প্রশ্ন টা ধেয়ে এল

-     কি বে, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে দেখছিস?
[+] 10 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মন ২ - কাহিনীর নাম - শিবের শিব প্রাপ্তি ( চলছে) পেইজ ৩ - by nandanadasnandana - 01-02-2022, 12:02 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)